ভয়ঙ্কর মুখ

ফ্রান্সে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ভবিষ্যৎ এক দুর্ঘটনার সংকেত পেয়েছিলেন। যদিও কেবল একটা ইংগিত ছিল ওটা, তবে আসলে এর মধ্যেই লুকিয়ে ছিল ভবিষ্যতের একটি মর্মান্তিক ঘটনার কাহিনি। অশুভ সংকেত দেওয়া চেহারাটা এতই ভয়ঙ্কর ছিল যে তা ভুলতে পারেননি রাষ্ট্রদূত। আর এটাই জীবন বাঁচিয়ে দেয় তার।

১৮৭৯ সাল। ফ্রান্সে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত লর্ড ডাফেরিন এক বন্ধুর সঙ্গে ছুটি কাটাচ্ছেন। তাঁর বন্ধু থাকেন আয়ারল্যাণ্ডে।

এক রাতে হঠাৎ গভীর ঘুম ভেঙে জেগে উঠলেন ডাফেরিন। স্বপ্নে অস্বাভাবিক কিছু একটা দেখেছেন। তবে ঘুম থেকে জেগে ওঠার অন্য কোনো একটা কারণ আছে। অস্বস্তি নিয়ে কিছুটা সময় বিছানায় বসে রইলেন। তারপর বিছানা থেকে উঠে লন আর ফুল বাগনের দিকে মুখ-করা জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। চাঁদের আলোয় স্পষ্ট দেখলেন একজন লোক পিঠে একটা কফিন নিয়ে হেঁটে চলেছে।

লর্ড ডাফেরিন দুঃসাহসী মানুষ। বেরিয়ে এসে লোকটাকে থামিয়ে জানতে চাইলেন, কফিনের ভিতরে কী?

মুখ তুলে তাঁকে দেখল লোকটা। গা কাঁটা দিয়ে উঠল ডাফেরিনের। ভয়ঙ্কর একটা চেহারা। চোখের নীচের হাড় ঠেলে বেরিয়ে এসেছে। মুখ আর শরীরের চামড়া মনে হচ্ছে বহু পুরানো আর শুকনো, খসখসে। যেন একটা কংকালের শরীরে চামড়া লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রথমে আতংকে জমে গেলেন লর্ড ডাফেরিন। তবে সাহস সঞ্চয় করে আবার লোকটার কাছে জানতে চাইলেন, এত রাতে কফিনটা কোথায় নিয়ে যাচ্ছ তুমি?

জবাবে লোকটা তার দিকে এগিয়ে এল। তারপরই ডাফেরিনের ভিতর দিয়েই যেন গলে বেরিয়ে গেল এবং অদৃশ্য হলো।

সকালে এখানকার বন্ধুদের ঘটনাটি খুলে বললেন ডাফেরিন। ভুতুড়ে বিয়য়ে ভাল জানাশোনা আছে এমন কয়েকজন লোকের সঙ্গে কথা বললেন। তবে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের এই রাতের অভিজ্ঞতার ব্যাখ্যা দিতে পারলেন না কেউই। ধীরে-ধীরে ঘটনাটি মুছে গেল সবার মন থেকে।

চার বছর পরের ঘটনা। লর্ড ডাফেরিনের নিজের মনেও সেই রাতের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার স্মৃতি ফিকে হতে শুরু করেছে। প্যারিসের গ্র্যাণ্ড হোটেলে এক আমন্ত্রণে গিয়েছেন লর্ড।

তাঁর সেক্রেটারি, সহকারি আর ব্যক্তিগত পরিচারকও সঙ্গে গিয়েছেন। লিফটে ঢোকার মুহূর্তে স্থির হয়ে গেলেন লর্ড। হঠাৎই তার মনের পর্দায় ভেসে উঠল চার বছর আগের এক রাতে আয়ারল্যাণ্ডে দেখা লর্ড ডাফেরিন সেই অশুভ মুখটার কথা। লিফটম্যান ওই একই ব্যক্তি। কোনো সন্দেহ নেই তাঁর।

সেক্রেটারি আর সহকারীকে সে রাতের ঘটনা বর্ণনা শুরু করলেন। ইতোমধ্যে লিফটটা তাদের রেখেই চলে গেছে। লর্ড তখনও ভয়ঙ্কর সেই অভিজ্ঞতা বলা শেষ করেননি। এমন সময় চড়া একটা শব্দ হলো। পুরো হোটেলে হৈচৈ পড়ে গেল। লিফটটা যখন পঁচতলায় পৌঁছে তখন দড়ি ছিঁড়ে যায় ওটার, আর নীচে পড়ে ধপাস করে। লিফটে যে কয়েকজন লোক ছিলেন মারা গিয়েছেন সবাই। লর্ড ডাফেরিন দেখলেন হোটেলের কর্মচারীরা মৃত লোকদের সরিয়ে নিচ্ছে লিফটের ধ্বংস্তুপ থেকে। তবে যার কারণে তার লিফটে ওঠা হয় নি, সেই লোকটাকে দেখা গেল না লিফটে।

পরে লর্ড জনতে পারলেন সেদিন হোটেলের লিফটম্যান ডিউটিতেই আসেনি। তবে এই লোকটা এল কোথা থেকে? তার পরিচয়ই বা কী? এই কাহিনিটি লিপিবদ্ধ আছে ব্রিটিশ সোসাইটি অভ সাইকিক রিসার্চ বইয়ে। তবে সেখানে একে দেখানো হয়েছে অমীমাংসিত এক রহস্য হিসাবে। এমনকী এর কোনো সম্ভাব্য ব্যাখ্যাও দেয়া হয়নি।

<

Super User