শেষ বাস (প্রথম পর্ব)
সিংগাপুরের চাঙ্গির দিকে যাওয়া শেষ বাস এটি। তানাহ মেরাহর দিকে রাস্তাটা বিপজ্জনক সব বাঁকে ভরা। তবে গাড়ির চালক খুব ওস্তাদ লোক। বেশ দ্রুতগতিতে একটার পর একটা বাঁক পেরিয়ে যাচ্ছে। তারপরই হঠাৎ বাস দাঁড় করাতে হলো তাকে। কারণ, তার নজরে পড়েছে রাস্তায় দাঁড়ানো সাদা জিন্স পরা একটা মেয়ে গাড়ি থামানোর ইশারা করছে। গাড়ির মাঝখানে দাঁড়ানো কণ্ডাক্টর আর একটু হলে হুমড়ি খেয়ে পড়ত মেঝেতে।
বাসে উঠে পড়ল মেয়েটি। চালক আর কণ্ডাক্টর কৌতূহল নিয়ে জানতে চাইল এই রাতে একা একা কী করছে সে। কিন্তু মেয়েটা কেবল ভাড়া দিল, কোনো জবাব না। কণ্ডাক্টর তাকে একটা টিকেট ধরিয়ে দিল। তারপর তার প্রতি মনোযোগ হারাল। কারণ পুরো দিনের হিসাব-কিতাব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সে।
এদিকে মনের সুখে গাড়ি উড়িয়ে নিয়ে চলেছে চালক।
বাস যখন শেষ স্টেশনের কাছাকাছি চলে এল তখন কণ্ডাক্টরের মনে হলো মেয়েটা এখনও গাড়ি থেকে নামেনি। উঠেই বাসের পিছনের দিকে চলে গিয়েছিল সে। মেয়েটা কোথায় নামতে চায় জানার জন্য পিছন দিকে ঘুরল সে।
কিন্তু বাসের পিছনে কেউ নেই।
ভয় পেয়ে গেল সে। দৌড়ে গিয়ে চালককে জানাল কী ঘটেছে। অবিশ্বাসভরা দৃষ্টিতে পিছনে তাকাল চালক। কিন্তু কণ্ডাক্টরের মতই সেখানে কাউকে দেখতে পেল না সে-ও।
বাসটা যখন দাঁড় করাল চালক, তখন কণ্ডাক্টর মেয়েটার দেওয়া কয়েনগুলো বের করার জন্য মানিব্যাগে হাত পুরল। কিন্তু মানিব্যাগের মধ্যে তার হাতে অদ্ভুত কিছু একটা ঠেকল। আর যখন বের করল, আঁতকে উঠে সঙ্গে-সঙ্গে ফেলে দিল। কী হয়েছে দেখার জন্য ঘুরল চালক। কণ্ডাক্টরের চোখ যেন গাড়ির মেঝেতে আটকে আছে। তবে তার আসন থেকে কিছু নজরে এল না চালকের।
ওটা কী? জানতে চাইল সে।
যখন কথা বলার অবস্থায় পৌঁছল কণ্ডাক্টর, সে বলল, একটা হাড়। সে বাসের ভাড়া মিটিয়েছে আঙুলের একটা হাড় দিয়ে।
শেষ বাস (দ্বিতীয় পর্ব)
সিংগাপুরের দুই বন্ধু শেষ বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল। তবে মনে-মনে তাদের আশংকা ছিল ওটা চলে গেছে আগেই। কারণ এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে তাদের। যে বাস স্টপে দাঁড়িয়ে আছে এর সামনের রাস্তা দিয়ে কোনো গাড়ি যাচ্ছে না। আশপাশে কোনো ফোনও নেই। ( কাহিনিটি যখনকার তখনও মোবাইল জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি)। বেশ চিন্তায় পড়ে গেল দুজনে। তারা এখন কী করবে?
তারপরেই দেখল একটা বাস ধীরে-ধীরে এগিয়ে আসছে এদিকে। ওহ! শেষ বাস। যাক তাহলে ওটা চলে যায়নি, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল দুই বন্ধু।
কাহিনিটা অনেক দিন আগের। তখন বাসের মাঝখানে একটা দরজা থাকত কেবল। বাসটা থামতেই হুড়মুড় করে ভিতরে ঢুকে পড়ল দুই তরুণ।
তারপর আবার চলতে শুরু করল বাসটা। কয়েক মিনিট পরে দুই বন্ধু বুঝতে পারল কোথাও বড় ধরনের একটা গোলমাল আছে।
প্রথম কথা, বাসটা চলছে খুব ধীরে। দ্বিতীয় কথা, ভাড়া নেওয়ার জন্য কোনো কণ্ডাক্টর নেই বাসে। তারপরই আবিষ্কার করল বাসে কোনো চালকই নেই।
আতংকে খাড়া হয়ে গেল দুজনের চুল। হৃৎপিণ্ড যেন গলার কাছে উঠে এসেছে। দুজন দুজনের দিকে তাকাল অবাক বিস্ময়ে, আতংকে চেঁচিয়ে উঠল।
তারপরই বাসটা থেমে গেল।
গাড়ির চালক আর কণ্ডাক্টর পিছন থেকে এসে হাজির হলো। তারা দুজনে নষ্ট বাসটাকে ঠেলছিল। এখন দেখতে এসেছে কী কাণ্ড ঘটেছে।
<