শুক্রবার দিন আবসার রীমাকে নিয়ে একটা বেবী করে আরিফের বাসায় রওয়ানা দিল। রীমা বেবীতে বসে চাচাতো ভাইয়ের ঘটনাটা সংক্ষেপে বলে বলল, তুমি সেদিন যখন দূরে থাকার কথা বললে তখন সেই কথা মনে করে তোমার সঙ্গে এ রকম দুর্ব্যবহার করে ফেলি। সেদিন তুমি চলে যাবার পর লজ্জায় আমার মরে যেতে ইচ্ছে হয়েছিল। তারপর চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে আবসারের একটা হাত ধরে বলল, তুমি যদি এখন আমার গালে চড় মেরে প্রতিশোধ নিতে, তাহলে হয়তো মনে শান্তি পেতাম।
আবসার বলল, মারবার আগেই তো কাঁদছ, মারলে তো জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে। তারপর তার চোখের পানি মুছে দেবার সময় বলল, অনুশোচনার মারটাই বড় মার, তোমার গালে চড় মারব, কথাটা ভাবতে পারলে কি করে? ওসব কথা এখন থাক, যে বন্ধুর কাছে নিয়ে যাচ্ছি তার কথা বলছি শোন। সে প্রথম জীবনে বড় দুরন্ত ছিল। তারপর কেমন করে কি জানি তার পরিবর্তন হয়। ছেলেটা যেমন পড়াশুনায় ভাল তেমনি সব দিক দিয়ে জিনিয়াস। আমি তো ধর্মকর্ম সম্বন্ধে কিছুই জানতাম না এবং মানতাম না। ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব হবার পর, ধর্ম সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করি এবং যতটা পারি মেনে চলতে চেষ্টা করি। সে যদি কিছু জিজ্ঞেস করে খুব বুঝে-সুজে উত্তর দিয়ো।
রীমা বলল, তার সঙ্গে তোমার বন্ধুত্ব হল কি করে?
আমিও খুব দুরন্ত ছিলাম। ভার্সিটিতে পড়ার সময় পার্টি করতাম এবং একবার ইলেকসনের সময় অন্য পার্টির ছেলেরা আমাকে একা পেয়ে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাচ্ছিল, সে সময় আমি বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করেছিলাম। তারপর তারা আমার মাথায় কি দিয়ে যেন আঘাত করে। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। যখন জ্ঞান ফিরল দেখি আমি একটা ক্লিনিকে। আর আরিফ আমার পাশে। আরিফ খুব ধুরন্ধর ছেলে। সে কথা অর্সিটির সব ছেলেমেয়েরা জানত। আমিও জানতাম। কিন্তু সে কোন পার্টি করত না। তাকে দেখে বুঝতে পারলাম, সেই আমাকে তাদের হাত থেকে রক্ষা করেছে। তারপর থেকে আমি ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব করি। আমাদের আর্থিক অবস্থার কথা জানতে পেরে অনেক সময় টাকা-পয়সা দিয়ে আমাকে সাহায্য করেছে। কয়েক দিন আগে দেশে যাবে বলেছিল। তার মায়ের অসুখ, ফিরেছে কিনা কে জানে।
রীমা আর কিছু না বলে চুপ করে রইল।
আরিফের বাসার কাছে এসে বেবি বিদায় করে আসার গেটে নক করল। একটা পাড়াগাঁয়ের আটপৌরে শাড়ী পরা আধবয়সী মেয়ে দরজা খুলে বলল, কাকে চান?
আবসার জানে এই বাসায় আরিফ একা থাকে। তাকে দেখাশোনা ও রান্না করে খাওয়ার জন্য তাদের দেশের একজন বয়স্ক লোক থাকে। আরিফ তাকে ওমর চাচা বলে ডাকে। আজ একটা মেয়েকে দেখে বেশ অবাক হয়ে বলল, তুমি কে? ওমর চাচা নেই?
মেয়েটা বলল, সে বাজারে গেছে। আমি বেগম সাহেবের সঙ্গে এসেছি। আপনি কাকে চান? ওমরের বৌ আনোয়ারাকে সুফিয়া বেগম ও গোফরান সাহেব যখন ঢাকায় আসেন তখন সঙ্গে নিয়ে আসেন।
আবসার বলল, আমরা আরিফের কাছে এসেছি। সে কোথায়?
মেয়েটি বলল, ছোট সাহেব বেগম সাহেবের সঙ্গে কথা বলছেন। আপনারা ভিতরে এসে বসুন, ডেকে দিচ্ছি। কথা শেষ করে সে চলে গেল।
মেয়েটি চলে যাবার পর আবসার রীমাকে বলল, এস, বসা যাক। বসার পর বলল, মনে হয় ওর মা এসেছেন।
একটু পরে আরিফ এসে সালাম বিনিময় করে বলল, কিরে আকার, কেমন আছিস? তারপর রীমার দিকে এক পলক চেয়ে নিয়ে আবসার বলল, আমি যেতে পারিনি বলে ওকে সাথে করে নিয়ে এসে পড়েছিস, তাই না? ভালই করেছিস। আম্মা এসেছে, আব্বাও দুএকদিনের মধ্যে আসবে। আমি নাকি শুধু পড়াশুনা করি, খাওয়া-দাওয়ার দিকে লক্ষ্য রাখি না। তাই পরীক্ষা না হওয়া পর্যন্ত আম্মা এখানে থাকবে। তা তোদের বাসার খবর সব ভাল?
আবসার বলল, আল্লাহ পাকের রহমতে ভাল। তোর আম্মার অসুখ বলেছিলি, এখন কেমন আছেন?
আরিফ বলল, অসুখ হয়েছিল, তবে আমি যাবার আগে ভাল হয়ে গেছে। বস, আম্মাকে ডেকে নিয়ে আসি। তোর কথা মাকে অনেক বলেছি।
আবসার বলল, মাকে পরে ডাকি, তার আগে রীমার সঙ্গে তোর পরিচয় করিয়ে দিই।
আরিফ বলল, তার আর দরকার নেই। দেখেই বুঝতে পেরেছি। তারপর রীমার দিকে চেয়ে বলল, আপনার নাম রীমা জানতে পারলাম। আর আমার নাম যে আরিফ তা নিশ্চয় ওর কাছে শুনেছেন? এর পর আর পরিচয় হবার কি কিছু বাকি আছে? আপনারা দুজন দুজনকে পছন্দ করেন এবং খুব শিগগিরই বিয়ে করার কথাও হয়তো দুজনে বলাবলি করেছেন।
আরিফের কথা শুনে রীমার তখন আবসারের কথা মনে পড়ল। ছেলেটার মধ্যে এমন একটা ক্ষমতা আছে, যার ফলে সে আগাম অনেক কিছু জানতে পারে। রীমা বলল, এত কিছু যখন বললেন তখন এর ফলাফলটা বললে খুব খুশি হতাম।
আরিফ হেসে উঠে বলল, সে খবর আল্লাহ পাক জানেন। মানুষ জানতে পারবে কেমন করে। তবে দোওয়া করি আল্লাহ আপনাদের ভবিষ্যৎ জীবন সুখের ও শান্তির
রীমা বলল, আমার কিন্তু বেশ ভয় ভয় করছে। আমার মত অসুন্দর মেয়েকে বিয়ে করে আপনার বন্ধু তার আত্মীয়স্বজনের কাছে হাস্যাস্পদ না হয়।
আরিফ আবার হেসে উঠে বলল, তা হয়তো প্রথম দিকে হতে পারে। তবে পরে যখন তারা তাদের ভুল বুঝতে পারবে তখন বরং সকলে ওকে দেখে হিংসা করবে।
রীমা বেশ অবাক হয়ে বলল, আপনি এসব কথা জানতে পারলেন কেমন করে?
আরিফ হাসতে হাসতে বলল, সব অনুমান করে বললাম, তবে আমার অনুমান বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সত্য হয়। এখন এসব কথা থাক, আমাকে ডেকে নিয়ে আসি। তারপর সে ভিতরে চলে গেল।
একটু পরে আরিফ মাকে নিয়ে ফিরে এল।
আবসার সালাম দিয়ে এগিয়ে এসে কদমবুসি করে বলল, আমি আরিফের বন্ধু।
তার দেখাদেখি রীমাও ওনাকে কদমবুসি করতে এলে সুফিয়া বেগম তার হাত ধরে পাশে বসিয়ে বললেন, বেচে থাক মা, আল্লাহ তোমাদেরকে সুখী করুক। তোমাদের কথা আরিফের কাছে শুনেছি। এমন সময় ওমরের বৌ আনোয়ারা চা-নাস্তা নিয়ে এলে সুফিয়া বেগম বললেন, তোমরা নাস্তা খেয়ে গল্প কর, আমি আসছি। তারপর তিনি চলে গেলেন।
নাস্তা খাওয়ার পর আনোয়ারা কাপ প্লেট নিয়ে চলে যাবার পর আরিফ রীমাকে উদ্দেশ্য করে বলল, আপনাকে কয়েকটা কথা বলব, কথাগুলো শুনে কিছু মাইন্ড করতে পারেন, তাই অনুমতি চাচ্ছি।
রীমা বলল, আপনি নিশ্চিন্তে বলুন, আমি কিছু মাইন্ড করব না।
আরিফ বলল, আপনি নিশ্চয় নামাজ-কালাম পড়েন?
হ্যাঁ পড়ি।
কেন পড়েন বলুন তো?
রীমা কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বলল, এগুলো করার জন্য আল্লাহ পাক কোরআনে মানুষকে হুকুম করেছেন।
আরিফ বলল, আপনি ঠিক কথা বলেছেন। কিন্তু আল্লাহ পাক কোরআনে পুরুষদের পোশাক সম্বন্ধে ডাইরেক্ট কিছু না বললেও মেয়েদের পোশাক সম্বন্ধে অনেক কিছু বলেছেন। যেমন- তাদেরকে বাইরে বেরোবার সময় আলাদা কাপড় দিয়ে সমস্ত শরীর ঢেকে বের হতে বলেছেন। যাতে করে মেয়েদের সৌন্দর্য যেন পুরুষের নজরে না পড়ে। আল্লাহ পাকের এই হুকুম কেন মেয়েরা মেনে চলে না বলতে পারেন? আপনি মেয়ে বলে জানার জন্য প্রশ্নটা করলাম। আপনাকে অপমান করার জন্য করিনি।
রীমা সালওয়ার কামিজ পরে বুকের উপর শুধু সরু একটা ওড়না ঝুলিয়ে রেখেছে।
আরিফের কথা শুনে লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে রইল। কোন কথা বলতে পারল না।
তাই দেখে আরিফ বলল, আমার কথা শুনে আপনি খুব লজ্জা পেয়েছেন মনে হচ্ছে। আপনাকে লজ্জা দেবার জন্য আমি কথাটা কিন্তু বলিনি। আমি শুধু জানতে চাই, মেয়েরা আল্লাহর হুকুম মোতাবেক নামাজ পড়ে, কোরআন পড়ে, রোজা রাখে, অথচ যেভাবে তাদেরকে পোশাক-পরিচ্ছদ পরতে বলা হয়েছে তা পরে না। এর কারণ আমি ভেবে পাই না। অথচ তাদের জানা উচিত ঐ সব পোশাক পরা যেমন শরীয়তে নিষিদ্ধ তেমনি ঐ রকম পোশাক পরে কোন ইবাদত করলেও তা কবুল হয় না। বিশেষ করে আজকাল মেয়েরা মাথায় কাপড় বা রুমাল দিয়ে ঢেকে রাখতে চায় না। মাথার চুল পর পুরুষকে দেখানও শরীয়তে নিষেধ। এই কথাটা উচ্চ ফ্যামিলির মেয়েরা অনেকে জানে। কিন্তু তাদের অনেকে এবং মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির মেয়েরা জেনেও মানে না। এর কারণ আপনি বলতে পারলেও লজ্জায় হয়তো বলতে পারছেন না। অথবা আপনার জানা নেই। তাই আমি যা মনে করি বলছি শুনুন, আজকাল অনেক মেয়ে মাথায় কাপড় দেওয়া বা রুমাল দিয়ে চুল ঢেকে রাখতে বা মুখমন্ডল ঢেকে রাখতে মজা বোধ করে। তারা ভাবে-এটা করলে লোকে তাদেরকে আনকালচাঙ অববে। এগুলো অশিক্ষিত মেয়েদের ব্যাপার। অথচ তারা মাথা উক্ত রেখে নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ করতে চায়। আবার অনেকে ভাবে বিয়ের পর মেয়েদের মাথায় কাপড় দিতে হয়, কিন্তু আজকাল বিয়ের পরও মেয়েরা মাথায় তো কাপড় দেয় না বরং এমন পোশাকে বাইরে বেরোয়, তাতে করে তারা নিজেদেরকে কুমারী মেয়ে বলে পুরুষদের কাছে অবহিত হতে চায়। এটা শরীয়তের দৃষ্টিতে সরাসরি হারাম। শরীয়তে কুমারী বা বিবাহিতা সব বালেগ মেয়েদেরকে বাইরে বেরোবার সময় সারা শরীর ঢেকে নিতে আদেশ করেছে। আসলে শিক্ষিত শ্রেণীর বা উচ্চ ফ্যামিলির মেয়েরা বিধর্মীদেরকে বেশি অনুসরণ করে তাদের সভ্যতা গ্রহণ করছে। তাদের জানা উচিত, এটা ইসলামের দৃষ্টিতে সরাসরি নিষিদ্ধ। তাদের আর দোষ দেব কি। তাদের বাবা-মা বা স্বামীরা এর জন্য বেশি দায়ী। তারা হাদিসের আইন-কানুন না জেনে বিধর্মীদের সবকিছু দেখে ভাল মনে করে। নিজেদেরকে ও তাদের ছেলেমেয়েদেরকে সেই রকমভাবে গড়ে তুলছে। ফলে ইসলাম তাদেরকে কি পোশাক পরতে বলেছে তা তারা জানে না। এবং জানতেও চেষ্টা করে না। আসল কথা কি জানেন, এর ফলে তাদের দেখা-দেখি নিন শ্রেণীর সমাজের মেয়েরাও তাদেরকে অনুসরণ করছে। যার ফলে সব শ্রেণীর মেয়েরা আজকাল তাদের দেহবরী দেখিয়ে নিজেদের সৌন্দর্য জাহির করছে। এতে করে যে সমাজের অবক্ষয় হচ্ছে, সে দিকে কেউ লক্ষ্য করছে না। মেয়েদের সঙ্গে সনে হেলেরাও বিদেশী সভ্যতার দিকে ঝুকে পড়ছে। আর আমাদের মুসলমান সমাজের অবক্ষয়ের প্রধান কারণ হল, ছেলেমেয়েদের অবাধ মেলামেশা। স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি এবং অফিস আদালতে যেভাবে ছেলেমেয়েদের অবাধ মেলামেশা চলহে এটা ইসলামে একেবারে নিষেধ। তাই বলে ইসলাম মেয়েদেরকে চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি করে রাখতে বলেনি। আল্লাহপাক তাদেরকে যে স্বাধীনতা দিয়েছে, তা জেনে যদি তারা সেইরকমভাবে স্কুল, কলেজ, ভাসিটি বা অফিস-আদালতে যাতায়াত করত, তাহলে আমাদের সমাজের এত অবক্ষয় হত না। একটা জিনিস বোধ হয় সবাই বুঝতে পেরেছে, মেয়েদের অবাধ স্বাধীনতার ফলে এবং তাদের স্বেচ্ছাচারিতার ফলে তারা পুরুষ কর্তৃক বেশি ধর্ষিতা ও নাতি হচ্ছে। আমরা অনেকে বলে থাকি- মেয়েদের শিক্ষিত করে তুলতে এবং তাদেরকে সাবলখী করে তুললে, তারা পুরুষ কর্তৃক এত ধর্ষিতা ও লাতাি হত না। কথাটা কিছুটা সত্য হলেও বাস্তবে তার নজীর খুব কম পাওয়া যায়। কারণ বহু শিক্ষিত ফ্যামিলিতে বামী-লীর মধ্যে সুখ-শান্তি বলতে কিছুই নেই। অথচ তারা দুজনেই উপার্জন করে। ইসলাম মেয়েদেরকে প্রয়োজনের তাগিদে উপার্জনের কথা বলেছে। বড় লোক হবার জন্য বা আয়েশ আরামে থাকার জন্য অথবা ভোগবিলাসে মত্ত থাকার জন্য অনুমতি দেয়নি। যে দেশে লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত যুবক চাকরি না পেয়ে হতাশায় ভুগছে, ড্রাগ নিচ্ছে, মা-বোনের ভরণ-পোষণে ব্যর্থ হয়ে অকাজ-কুকাজ করছে, আহননের পথ বেছে নি, আর সে দেশে সচ্ছল পরিবারের মেয়েরা চাকরি করে ভোগবিলাসে মত্ত রয়েছে। কি করে তারা আরো ধনী হবে, সেই চো করছে। আমার কথাগুলো হয়তো সবার কাছে ভাল লাগবে না : কিন্তু তাদেরকে একটু চিন্তা করে দেখার অনুরোধ করব এবং এ সম্বন্ধে কোরআন-হাদিসে কি আছে তা জানার জন্যও অনুরোধ করব। এক মুসলমান আর এক মুসলমানের ভাই। এটা কোরআনের কথা। আমি মুসলমান হয়ে যদি নিজে ভোগবিলাসের জন্যে, অন্য মুসলমানের ডালভাতের দিকেও লক্ষ্য না রাখি, তাহলে আমরা মুসলমান থাকতে পারি না। শুধু ঐ সব মেয়েদেরকে উপার্জনের অনুমতি ইসলাম দিয়েছে, যারা উপার্জন না করলে তাদের পরিবারের সবাই না খেয়ে থাকবে। অথবা ছেলেমেয়েদেরকে মানুষ করার জন্য অথবা মান-সম্মান বজায় রেখে বেঁচে থাকার নয়। সেখানেও বিধি-নিষেধ দেওয়া হয়েছে, কিভাবে তারা উপার্জন করবে। যাই হোক এবার আপনাদের দুজনকে আর একটা কথা বলে আমি ইতি টানব। জীবন সঙ্গী বা সঙ্গিনী পছন্দ করা খুব দুরূহ ব্যাপার। আপাতদৃষ্টিতে আমরা যা ভাল মনে করি, তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মন্দ হয়। তবে মেয়েরা যদি স্বামীকে তার প্রাপ্য সম্মান দেয়, তাহলে তাদের দাম্পত্য জীবন খুব সুখের হয়। অবশ্য স্বামীকেও তার স্ত্রীর প্রাপ্য সম্মান দিতে হবে। কারণ একজনের দ্বারা কোন কাজ সুভাবে সম্পন্ন হয় না। হাদিসে আছে, স্বামী স্ত্রীর অর্ধেক আর স্ত্রী স্বামীর অর্ধেক। দুজনে মিলে পূর্ণ এক হয়। হাদিসে আরো আছে, স্বামীর প্রতি যতটা স্ত্রীর হক আছে, স্ত্রীর প্রতি স্বামীরও ততটা হক আছে। আজকাল স্বামী স্ত্রী সে সব হকের কথা জানে না বলে দাম্পত্য জীবনের সুখ-শান্তি থেকে তারা উভয়ে বঞ্চিত হচ্ছে এবং সংসার জীবন অশান্তিময় হয়ে উঠছে। কেউ কারো কথা মেনে চলতে চাচ্ছে না। এটা হওয়ার একমাত্র কারণ ধর্মীয় জ্ঞানের ও তার অনুশীলনের অভাব এবং দূষিত পরিবেশের ফলাফল। আপনারা দুজন সংসার জীবনে প্রবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একে অপরের ছোটখাট দোষত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। এবং কোন বিষয়ে মতবিরোধ হলে দুজনে রাগারাগি না করে মিলেমিশে তার সমাধান করার চেষ্টা করবেন। যদি তা পারেন, তাহলে দেখবেন আপনাদের দাম্পত্য জীবন কত শান্তির হবে। আমি আর বেশি কিছু বলব না, আমার কথা শুনে বিরক্ত হলে ক্ষমা করবেন।
আবসার বলল, তোর কথাগুলো খুব দামী, তবে তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে, তুই যেন কতকাল দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করেছিস। এসব জ্ঞান তুই কোথায় পেলি বলবি?
আরিফ বলল, তোর মাথায় ঘিলু বলতে কিছু নেই, সমাজের দিকে একটু ভাল করে লক্ষ্য করলে অনেক কিছু জানা যায়। অবশ্য সেই সঙ্গে কোরআন-হাদিসের ব্যাখ্যাও পড়তে হবে। তোরা তো শুধু দুনিয়াদারীর জ্ঞান অর্জন করে মনে করেছিস, শিক্ষিত হয়ে গেছিস। সেই সঙ্গে যদি ধীয় বই পুস্তক পড়তিস, তাহলে ঐ কথা বলতিস না।
রীমা বলল, আম আরিফ ভাই, আপনি তো আগাম অনেক কিছু বলতে পারেন, আমরা ভবিষ্যতে সুখী হব কিনা একটু বলবেন?
আরিফ একটু রেগে গিয়ে আবসারকে বলল, তুই নিশ্চয় ওকে এই কথা বলেছিস? তোকে কতবার বলেছি না, একথা বলা হারাম। আল্লাহ পাক ছাড়া ভবিষ্যতের কথা কেউ জানে না, আর কেউ যদি বলে থাকে, তবে সে কথা বিশ্বাস করলে ঈমান থাকবে না। তারপর রীমাকে বলল, এরকম কথা আর কাউকে জিজ্ঞেস করবেন না। কারণ জিজ্ঞেস করাও কঠিন গোনাহ।
রীমা বলল, তাহলে অনেকে যে হাত দেখে অনেক কিছু বলতে পারে আর সেগুলোর অনেক সত্যও হয়।
আরিফ বলল, হাত দেখা বিদ্যা আছে। তা সব সত্য না হলেও কিছু কিছু সত্য হয়। তবে ইসলামে এটা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হাদিসে আছে, রসুলুল্লাহ (দঃ) বলিয়াছেন, যে হাত দেখে এবং যে হাত দেখায় তাদের দুজনের উপর আল্লাহর লানত। হাদিসে আরো আছে, মসলাহ (দঃ) বলিয়াছেনঃ ভবিষ্যৎ বাগণের নিকট যে ব্যক্তি কিছু জানার জন্য জিজ্ঞাসা করে, তার ৪০ দিনের নামাজ কবুল হয় না। শুধু যেকোন বিদ্যা কেন, এমন কোন কথা বা কাজ যা মানুষের কাছে ভাল মনে হলেও যদি ইসলামে সে সব নিষেধ থাকে, তাহলে সেসব বলা বা করা হারাম, এটা হাদিসের কথা। আল্লাহপাক কোরআন পাকে বলেছেন, গায়েবের কথা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানে না। আমরা মুসলমান হিসেবে মানুষের কথা যত ভাল হোক না কেন তা বিশ্বাস না করে আল্লাহপাকের কথা বিশ্বাস করব। নচেৎ মুসলমান থেকে বাদ হয়ে যাব। তবে যারা আল্লাহপাকের খাসবান্দা তাদেরকে আল্লাহপাক ইলহামের দ্বারা অথবা এমন কিছু এলেম দান করেন, যার দ্বারা ভবিষ্যতের অনেক কিছু জানতে পারেন। সেরকম নেক বান্দা দুনিয়াতে খুব কম আছেন। তারা মানুষকে সাবধান করার জন্য সে সবের কিছু কিছু বলে থাকেন। আর আমার কথা যা শুনেছেন, তা আমি অনুমান করে বলি। তার মধ্যে হয়তো দুএকটা ঠিক হয়ে যায়। এরকম অনেকে বলতে পারে। সেই অনুমানের উপর নির্ভর করে বলতে পারি আপনাদের ভবিষ্যৎ জীবন একরকম সুখের হবে। তবে সে জন্য আপনাদের দুজনকে অনেক সহ-সময় করে চলতে হবে। এবার এসব কথা থাক। তারপর আবসারকে বলল, কিরে তোদের বিয়ে তাহলে কবে হচ্ছে?
আবসার বলল, আমি তো তাড়াতাড়ি আশা করছি। ভাবছি দুএকদিনের মধ্যে আব্বা-আম্মাকে বলব।
আরিফ বলল, তাই বল।
এমন সময় সুফিয়া বেগম এসে বললেন, তোমরা গল্প কর। দুপুরে খাবার খেয়ে যাবে।
আবসার বলল, এখানে এসেছি আমাদের বাড়ীর কেউ জানে না, সবাই চিন্তা করবে। পরে আর একদিন এসে খাব। এখন আমরা আসি। তারপর তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এল।
ফেরার পথে আবসার রীমাকে বলল, ওদেরকে কেমন মনে হল?
রীমা বলল, আরিফ ভাই খুব ধার্মিক ও এক্সট্রা অর্ডিনারী ছেলে। আর ওর আম্মাও খুব ভাল মানুষ। আমার কি মনে হয় জান, আরিফ ভাইয়ের মধ্যে এমন কিছু জিনিস আছে, যা সাধারণ কোন ছেলের মধ্যে নেই।
আবসার বলল, সে কথা তো আমি আগেই তোমাকে বলেছি।
রীমা বলল, তুমি বিয়ের ব্যাপারটা তাড়াতাড়ি করছ কেন?
কেন, তোমার কি কোন আপত্তি আছে?
: না আপত্তি নেই তবে একটু চিন্তার বিষয় আছে।
: যেমন?
ও তোমাকে তো বলেছি, আমার উপার্জনে সংসার চলছে। আমার বিয়ে হয়ে গেলে আব্বার সংসার চালাতে খুব অসুবিধে হবে।
সে ভাবনা তুমি আমার উপর ছেড়ে দাও। আমি কি এমনই অমানুষ যে, সে বিষয়ে চিন্তা করব না? তা ছাড়া আল্লাহপাক একটা না একটা কিছু ব্যবস্থা করে দেবেন। রীমা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, তোমার কথা অবশ্য ঠিক। আচ্ছ, বিয়ের পর তুমি কি আমাকে চাকরি করার অনুমতি দিবে?
আবসার বলল, না দেব না। বললাম তো, তোমার বাবা-মার সংসারে যাতে অসুবিধে না হয়, সে দিকে লক্ষ্য রাখব। ওসব নিয়ে তুমি চিন্তা করো না।
রীমা বলল, বেশ, তুমি যা ভাল বুঝবে করো। তাতে আমার কোন আপত্তি নেই।
সেদিন বাড়ীতে এসে আবসার মাকে বলল, তোমরা তো আমার বিয়ে দিতে চাচ্ছো, তোমাদের যদি কোন মেয়ে দেখা না হয়ে থাকে, তাহলে আমি একটা মেয়ের ঠিকানা। দিচ্ছি, সেখানে খোঁজখবর নিয়ে দেখতে পার।
আকলিমা বেগম আনন্দিত হয়ে বললেন, ঠিক আছে ঠিকানা দে, তোর আবার সঙ্গে আমিও দেখতে যাব।
আবসার ঠিকানা লিখে মায়ের হাতে দিয়ে বলল, মেয়েটা দেখতে তেমন ভাল নয়, তোমাদের পছন্দ নাও হতে পারে।
আকলিমা বেগম বেশ অবাক হয়ে বললেন, তাহলে আমাদেরকে দেখতে যেতে বললি কেন?
আবসার বলল, আচ্ছা মা, নানা কি খুব বোকা ছিলেন?
এ কথায় তাকে টানছিস কেন? বোকা না চালাক, সে কথা আমার চেয়ে তুই বেশি জানিস।
জানি বলেই তো মাথায় ঢুকছে না। যিনি সব দিকে জুয়েল, তার মেয়ে এত বোকা হলে কি করে?
আকলিমা বেগম ব্যাপারটি বুঝতে পেরে হেসে উঠে বললেন, আমি বোকা মেয়ে তো কি হয়েছে, আমার পেটের ছেলে তো তার নানার মত জুয়েল হয়েছে।
আবার মাকে জড়িয়ে ধরে বলল, দেখতে ভাল না হলেও মেয়েটার অনেক গুণ আছে।
আকলিমা বেগম বলেন, মেয়েদের ত রূপ থাকলেই সংসারে শান্তি আসে না, সেই সঙ্গে গুণও থাকতে হয়। দুনিয়াতে রূপ ও গুণ দুটোই আছে, এমন মেয়ে খুব কম হয়। যাক তুই বলে ভালই করলি, তোর বাবার অপছন্দ হলে তাকে তোর কথা বলব।
বাবা যদি আমাকে অন্যরকম ভাবে?
না রে না, তুই কি আমাদের সে রকম ছেলে? তোর প্রতি তার বাবার অগাধ বিশ্বাস। ও নিয়ে তুই ভাবিস না, তোর যখন পছন্দ তখন আমাদের অপছন্দ হবার কথাই উঠে না। আমি কিন্তু দুএক মাসের মধ্যে বৌ ঘরে আনার কথা তোর বাবাকে বলব। তাতে তোর কোন আপত্তি নেই তো?
আবার লজ্জা পেয়ে মাকে ছেড়ে দিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে যেতে বলল, তোমরা যা ভাল বুক কর, আমার আপত্তি নেই।
আকলিমা বেগম সেই দিনই ঠিকানাটা স্বামীর হাতে দিয়ে ছেলের কথা বললেন।
খায়ের সাহেব শুনে বললেন, আমি তোমার শরীরের কথা ভেবে ওর জন্য মেয়ের খোঁজ করছিলাম। যাক, ও যখন নিজেই পছন্দ করেছে তখন আর দেরি করব না। দুএক মাসের মধ্যে ব্যবস্থা করব।
আকলিমা বেগম বললেন, আমারও ইচ্ছা তাই।
পরের দিন আবার অফিসে যাবার পথে রীমার সঙ্গে দেখা হতে সালাম বিনিময় করে বলল, আজ অফিস স্থাটির পর এখানে অপেক্ষা করবে কিছু কথা আছে।
রীমা বলল, এখন বললে হয় না?
হয়, তবে বলব না। কারণ কথাগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া বেশ সময় লাগবে।
ঠিক আছে, তাই হবে।
আবসার বাস আসতে দেখে বলল, এখন তাহলে আসি? ঠিক সাড়ে চারটের সময় আসব। ভুলে যেয়ো না যেন। তারপর সালাম বিনিময় করে বাসে উঠল।
রীমার দুটি সাড়ে চারটেয়। অফিস থেকে বেরিয়ে বাস স্ট্যান্ডের কাছে এসে আবসারকে দেখতে পেল না। ভাবল, কোন কারণে হয়তো দেরি হয়ে। আধঘন্টা পার হয়ে যাবার পরও যখন আবার এল না তখন ভাবল, অফিসের কাজে হয়তো আটকে পড়েছে, আজ আর আসতে পারবে না। তবু আরো দশ মিনিট অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিল। কারো জন্য অপেক্ষা করা যে কত কঠিন, তা অনেকে জানেন; কিন্তু একজন যুবতী মেয়ের পক্ষে রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা যে আরো বেশি কঠিন, তা ভুক্ত ভোগীরা ছাড়া অন্য কেউ জানে না। তাও আবার অফিস ছুটির সময়। সবাই যেন তাকে গিলে খেয়ে ফেলতে চায়। আরিফ যেদিন মেয়েদের পোশাক সম্বন্ধে আলোচনা করেছিল, সেদিন থেকে রীমা একটা বড় ওড়না দিয়ে শরীর ঢেকে রাখে এবং মাথার চুল রুমাল দিয়ে বেঁধে রাখে। তবু পথিকদের লোলুপ দৃষ্টি থেকে রেহাই পাচ্ছে না। দুতিনটে যুবক পাশ থেকে যাবার সময় একজন সাথীদের বলল, মেয়েটা বোধ হয় কলগার্ল। চাল নিয়ে দেখব নাকি? এই কথায় হেসে উঠে তাদের একজন বলল, সাহস থাকলে চেষ্টা করে দেখ। তবে মনে রাখিস, যদি তোর অনুমান মিথ্যে হয়, তাহলে মেয়েটা পায়ের জুতো দিয়ে তোর মুখ পালিশ করে দেবে। দেখছিস না, মেয়েটার গায়ে মাথায় ওড়না রয়েছে। তাদের কথা শুনে রীমার ঠোঁটে মৃদু হাসি খেলে গেল। ভাবল, দ্বিতীয় যুবকটার কথাই ঠিক। কেউ ঐরকম বলতে এলে, সত্যি সত্যি পায়ের জুতো খুলে তার মুখ পালিশ করে দিতাম। এমন সময় আমাকে বাস থেকে নামতে দেখে রাগ করে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে রইল।
আবসার কাছে এসে সালাম দিয়ে বলল, আমি খুব দুঃখিত। বড় সাহেব মিটিংকল করেছিলেন। অনেক কষ্টে ম্যানেজ করে বেরিয়ে এসেছি। তাই দেরি হয়ে গেল।
তার কথা শুনে রীমার রাগ পড়ে গেল। তবু মুখ ভার করে সালামের উত্তর দিয়ে বলল, এদিকে অপেক্ষা করতে করতে যেমন পা ব্যথা হয়ে গেছে, তেমনি লোকজন আমাকে গিলে ফেলতে চাচ্ছে।
আবসার বলল, অনিচ্ছাকৃত অপরাধের জন্য ক্ষমা চাইছি।
রীমা বলল, অনিচ্ছাকৃত যখন, তখন আর কি করা যাবে। তবে ইচ্ছাকৃত হলে করতাম না।
: তাই নাকি?
হ্যাঁ তাই।
: ঠিক আছে, চল ঐ সামনের ছোটলে গিয়ে বসা যাক, নাস্তা খেতে খেতে আলাপ করা যাবে।
হোটেলে এসে নাস্তা খাবার সময় রীমা বলল, এবার বল, কি তোমার গুরুত্বপূর্ণ কথা,
জানতে খুব ইচ্ছা করছে বুঝি?
গুরুত্বপূর্ণ কথা জানতে তো ই হবেই।
কথাটা গুরুত্বপূর্ণ হলেও আসলে সুখবর।
যাই হোক না কেন, তুমি বল।
বলব তো বটেই; কিন্তু সুখবর শুনে কি উপহার দেবে বল?
আগে শুনি, তারপর উপহার দেবার কথা চিন্তা করব।
গতকাল মাকে তোমার কথা বলেছি। কয়েক দিনের মধ্যে হয়তো মা-বাবা তোমাদের বাসায় যাবে।
রীমা কয়েক সেকেও চুপ করে থেকে বলল, আমার যেন কেমন ভয় ভয় করছে। ওরা যদি আমাকে দেখে অপছন্দ করেন?
তোমাকে সেদিনও বলেছি আবার আজও বলছি, তারা তোমাকে অপছন্দ করলেও বিয়েতে অমত করবে না। মা আমার মনের কথা বুঝতে পেরেছে। তার অমতের প্রশ্নই উঠে না। বাবা অমত করতে পারে। মা তাকে ম্যানেজ করবে বলেছে। ওসব নিয়ে চিন্তা করার কোন কারণ নেই। এত বড় সুখবর দিলাম, কিছু প্রেজেন্ট করবে না?
রীমা ভিজে গলায় বলল, করতে তো মন চাইছে; কিন্তু দেবার মত এখন আমার কিছুই নেই। আল্লাহ যদি সে দিন দেন, তাহলে… বলে থেমে গেল।
: কি হল থেমে গেলে কেন? তাহলে কি?
সময় হলে জানতে পারবে।
আমি কিন্তু তোমার কাছে শুধু একটা জিনিস পেতে চাই। সেটা ছাড়া অন্য কোন কিছুতে আমি খুশি হব না।
বল সেটা কি? নিশ্চয় তা দেব।
ভালবাসা। লোকে ভালবাসা করে বিয়ে করে। বিয়ের কিছুদিন পর সংসারের যাতাকলে সেই ভালবাসা নিষ্পেষিত হয়ে মরে যায়। আমরা বিয়ের পর দুজন দুজনকে এমন ভালবাসব, যা সংসারের যাতাকলে নিষ্পেষিত হয়েও মরে যাবে না, বরং সেই ভালবাসা আরো গভীর থেকে গভীরতর হবে।
রীমা আবসারের মুখে অকল্পনীয় ভালবাসার কথা শুনে খুব অবাক হয়ে ডিজে গলায় বলল, আল্লাহপাক আমার ভাগ্যে কি এত সুখ রেখেছেন? আমি যে চিন্তাশক্তি হারিয়ে ফেলেছি।
ভাগ্যের কথা আল্লাহপাক জানেন। তোমার কাছে যা চাইলাম, তা যদি তুমি দিতে পার, তাহলে মনে করব, আমার থেকে সারা পৃথিবীতে আর কেউ সৌভাগ্যবান নেই।
রীমা চোখ মুছে ভিজে গলায় বলল, আল্লাহপাক আমাকে যতটুকু ভালবাসার জ্ঞান দিয়েছেন, তা সব উজাড় করে তোমাকে দেব। জানি না তাতে তুমি খুশি হবে কিনা।
আবসার আলহামদুলিল্লাহ বলে বলল, ব্যাস, তোমার মুখ থেকে যা শুনতে চেয়েছিলাম, আল্লাহপাক তাই শোনালেন। নাস্তা খাওয়া আগেই শেষ হয়েছিল, বলল, চল এবার উঠা যাক।
রীমা বলল, হ্যাঁ তাই চল।
আবার রীমাদের বাসা পর্যন্ত একসঙ্গে এল, তারপর সালাম বিনিময় করে নিজেদের বাসার দিকে রওয়ানা দিল।
কয়েক দিন পর আবার যখন অফিসে যাওয়ার আগে নাস্তা খালি তখন আকলিমা বেগম তাকে বললেন, তুই যে মেয়েটার কথা বলেছিলি, তার কথা তোর বাবাকে বলেছিলাম। কাল অফিস বন্ধ। আমি ও তোর বাবা মেয়েটাকে দেখতে যাব। তুই ওদের বাসায় খবরটা দিস।
আবসার বলল, ঠিক আছে দেব।
অফিসে যাবার পথে রীমাকে বলল, কাল মা ও বাবা তোমাকে দেখতে আসবে। খবরটা তোমার মা-বাবাকে জানিয়ে দিলো।
রীমা বলল, কিন্তু নিজের বিয়ের সম্বন্ধের কথা মা-বাবাকে বলব কি করে?
তাহলে আমি না হয় তাদেরকে বলব, আপনাদের মেয়ের সঙ্গে আমার বিয়ের সম্বন্ধ করার জন্য বাবা-মা আসবেন।
রীমা হেসে ফেলে বলল, ইয়ার্কি রাখ। কিভাবে জানাব একটা বুদ্ধি বের কর।
আবসার বলল, তুমি শিক্ষিত ও চাকরিজীবী মেয়ে, বুদ্ধি করে কিছু একটা বলো।
তা ছাড়া আর উপায় কি!তোমার বুদ্ধিতে যখন কুলাচ্ছে না তখন আমাকেই ম্যানেজ করতে হবে। এখন তাড়াতাড়ি চল, নচেৎ লেট লতিফের খাতায় নাম উঠবে।
সেদিন অফিস থেকে বাসায় ফিরে রীমা মাকে বলল, একটা ছেলের সঙ্গে বেশ কি দিন আগে থেকে আলাপ-পরিচয় আছে। কাল সকালের দিকে তার মা-বাবা আমাকে দেখতে আসবেন। তুমি বাবাকে বলো। সেই
মেয়ের কথা শুনে ফজিলা খাতুন অবাক হলেও মনে মনে খুশি হলেন। বললেন, ছেলেটার খোঁজখবর ভাল করে নিয়েছিস?
রীমা কথাটা বলে লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ছিল। সেই অবস্থাতেই বলল, আমি যতটুকু নেবার নিয়েছি, এবার তোমরা নিবে।
ফজিলা খাতুন বললেন, ঠিক আছে, তুই এখন কাপড় পাটে হাত-মুখ দুয়ে নাস্তা খেয়ে নে। তারপর স্বামীকে কথাটা জানালেন।
স্ত্রীর কথা শুনে আব্দুর রহমানও কম অবাক হলেন না। বললেন, আল্লাহপাকের যা মর্জি তাই হবে। ওরা আগে আসুক তারপর অবস্থা বুঝে কথাবার্তা বলা যাবে।
পরের দিন খায়ের সাহেব ও আকলিমা বেগম রীমাদের বাসায় এলেন।
আব্দুর রহমান ও ফজিলা খাতুন সাধ্যমত খাতির-যত্ন করলেন। রীমাই তাদেরকে খাওয়া-দাওয়া করালো। তাকে দেখে দুজনের কারো পছন্দ হল না। তাছাড়া এদের সামাজিক স্ট্যাটাস অনেক নিম্ন শ্রেণীর মনে হল। সে কথা খায়ের সাহেব এক ফাঁকে স্ত্রীকে বললেন।
আকলিমা বেগম স্বামীর মনোভাব বুঝতে পেরে বললেন, আমি তা বুঝেছি। কিন্তু আবসার এই মেয়েকেই বিয়ে করতে চায়। আমার কি মনে হয় জান, ওরা আজকালের হেলে-মেয়ে তো, হয়তো দুজন দুজনকে ভালবাসে।
খায়ের সাহেব বললেন, তাই বলে আমাদের সমাজের বাইরের একটা অসুন্দর মেয়েকে আমরা বৌ করতে পারি না!
তোমার কথা ঠিক; তবে আমি ভাবছি, আমরা অমত করলে আবসার অন্য মেয়েকে এখন বিয়ে করতে চাইবে না। শেষে হয়তো ওরা কাজী অফিসে নিজেরা বিয়ে করে ফেলবে।
আবসার সেরকম কিছু তোমাকে বলেছে নাকি?
অতটা বলেনি; তবে যেটুকু বলেছে তাতেই আমার এই রকম মনে হয়েছে। এমন। সময় আব্বুর রহমানকে আসতে দেখে তারা চুপ করে গেল।
খায়ের সাহেব ও আকলিমা বেগম পরে সবকিছু জানাবেন বলে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। বিদায় হতে রীমা তাদেরকে কদমবুসি করতে ওরা আড়াইশো করে পাচশো টাকা তার হাতে দিয়ে বললেন, বেঁচে থাক মা, সুখী হও।
বাসায় ফিরে এসে খায়ের সাহেব ছেলেকে ডেকে বললেন, তুমি বড় হয়েছ, লেখাপড়া শিখে, ভালমন্দ বুঝার জ্ঞানও হয়েছে; কিন্তু আমি খুব অবাক হচ্ছি, গার্মেন্টসে চাকরি করা নিম্ন সমাজের একটা অসুন্দর মেয়েকে তুমি পছন্দ করলে কি করে? তোমার কাছ থেকে এটা আমরা আশা করিনি।
আবসার জানে রীমাকে বাবা-মা পছন্দ করবে না। তাই কোন কথা না বলে চুপ করে রইল।
খায়ের সাহেব রাগের সঙ্গে বললেন, কিছু বলছ না কেন?
আমার যা কিছু বলার আগেই মাকে বলেছি।
তার মানে, ঐ মেয়েকেই তুমি বিয়ে করতে চাও?
হ্যাঁ বাবা।
খায়ের সাহেব আরো বেশি রেগে গিয়ে বললেন, আমরা যদি ঐ মেয়েকে ঘরে না তুলি?
আবসার ধীর-স্থির স্বরে বলল, বাবা তুমি রেগে যাচ্ছ কেন? রীমা দেখতে হয়তো সুন্দর নয়; কিন্তু তাকে আমি পছন্দ করি এবং ভালবাসি। আমি আমার জ্ঞানের অনুভূতিতে বুঝতে পেরেছি, ওকে পেলে সুখী হব। সুন্দরের মধ্যে অনেক অসুন্দর লুকিয়ে থাকে। আবার অসুন্দরের মধ্যেও সুন্দর লুকিয়ে থাকে। আমি রীমার মধ্যে এমন অনেক সুন্দরের প্রমাণ পেয়েছি, যা অনেক সুন্দরী মেয়ের মধ্যে নেই। আর তুমি যে নিম্ন সমাজের কথা বলছ, সেটা ঠিক হলেও আমরা তো ঐ সমাজে মেয়ে দিচ্ছি না যে, আমাদের মেয়ে অ্যাডজাস্ট করতে পারবে না। সারণাদায় অনেক সময় গোলাপ ফুল ফুটে। মানুষ ঐ নোংরা জায়গায় সব সময় যাতায়াত না করলেও ফুল তুলতে যায়। আমরা না হয় রীমাকে নিয়ে এসে ঐ সমাজে যাতায়াত করব না।
খায়ের সাহেব ছেলের কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর গভীর স্বরে বললেন, তুমি এখন যাও।
আবসার মাথা নিচু করে চলে এল।
সেখানে আকলিমা বেগমও ছিলেন। হেলে চলে যাবার পর বললেন, আমি তোমাকে আগেই বলেছি না, আবার ঐ মেয়েকেই বিয়ে করবে।
: তোমার কথা শুনে মনে হয়ে, তুমি ছেলের পক্ষে।
পক্ষে ঠিক নয়, তবে তুমি যা কিছু বল না কেন, আবসারের কথাগুলো অনেকটা সত্য। মেয়েটার মুখের শী খারাপ হলেও দেহের গড়ন ভাল। মেয়ের মায়ের মুখে শুনলাম, মেয়েটা খুব কঠি। আমাদের সংসারে ঐ রকম মেয়েই দরকার। সুন্দরী মেয়েদের দেমাগ বেশি। তাছাড়া আবার যখন তাকে পছন্দ করে ভালবেসেছে তখন আমাদের অমত করা কি ঠিক হবে?
খায়ের সাহেব গভীর হয়ে বললেন, চিন্তা করে দেখি কি করা যায়।
পরের দিন অফিসে যাবার পথে আবসার রীমার সঙ্গে সালাম বিনিময় করে বলল, মা-বাবাকে কেমন দেখলে?
রীমা ম্লানমুখে বলল, ভাল।
আমাদের বিয়ের ব্যাপারে কোন কথাবার্তা বলতে শুনেছ নাকি?
না। তবে ওঁরা পরে জানাবেন, শুধু এতটুকু শুনেছি।
আবসার রীমার ম্লান মুখ দেখে বুঝতে পারল, সে অনিশ্চয়তায় ভুগছে। পথ আগলে তার মুখের দিকে চেয়ে বলল, আমার চোখের দিকে চেয়ে দেখ তো, কিছু বুঝতে পার কিনা?
রীমা কয়েক সেকেণ্ড চেয়ে থেকে বুঝতে পারল, সেখানে আশ্বাসের ইশারা রয়েছে। দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে বলল, কিন্তু…..।
আবসার তার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বলল, কোন কিন্তু নয়, আমি আমার সিদ্ধান্ত থেকে এতটুকু নড়ব না। তোমার কাছে একান্ত অনুরোধ, তুমি আমাকে অবিশ্বাস করো না।
রীমা ভিজে গলায় বলল, ঠিক আছে তাই হবে। এবার চল, নচেৎ রোজ রোজ লেট লতিফ হলে দুজনেরই চাকরি থাকবে কিনা সন্দেহ।
আবসার বলল, তুমি ঠিক কথাই বলে।
এক ছুটির দিন আবসার আরিফের সঙ্গে দেখা করে বলল, রীমার ব্যাপারে মা রাজি থাকলেও বাবা রাজি নয়। তুই যদি বাবাকে বলিস, তাহলে নিশ্চয় রাজি হবে।
আরিফ হেসে উঠে বলল, চিন্তা করিস না এ বিয়ে তোদের হবেই।
তবু তুই বাবার সঙ্গে দেখা কর।
ঠিক আছে চল, এক্ষুনি তোর সঙ্গে যাই।
বাসার কাছে এসে আবসার বলল, তুই গিয়ে বাবার সঙ্গে আলাপ কর, আমি বাইরে তোর জন্য অপেক্ষা করছি।
আরিফ ওদের বাসায় ঘরের ছেলের মত যাতায়াত করে। বাসায় ঢুকে খায়ের সাহেবকে দেখতে পেয়ে সালাম দিয়ে কুশল জিজ্ঞেস করল।
খায়ের সাহেব সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, ভাল আছি বাবা। এস, বস। তা তুমি ভাল আই তো? অনেক দিন আসনি কেন?
জী ভাল আছি। একটা কাজে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম, পরীক্ষা নিয়েও বেশ ঝামেলা চলছে, তাই আসতে পারিনি। আজ আমি আপনার সঙ্গে কিছু আলাপ করতে এসেছি।
বেশ তো বল, কি আলাপ করতে চাও। তারপর একটু জোরে ছেলেমেয়েদের উদ্দেশ্যে বললেন, এই কে আছিস, আরিফ এসেছে, কিছু নাস্তা নিয়ে আয়।
আপনি ব্যস্ত হবেন না। আমি বলছিলাম, আবসার যে মেয়েকে পছন্দ করেছে তাকে আমি দেখেছি। তার সঙ্গে আলাপও করেছি। মেয়েটা দেখতে খারাপ হলেও তার অনেক গুণ আছে। আমি তাকে যতটুকু জেনেছি, তাতে করে বলতে পারি, মেয়েটা আপনাদের সবাইকে ইনশাআল্লাহ সুখী করতে পারবে।
খায়ের সাহেব আরিফকে খুব স্নেহ করেন। ভার্সিটিতে পড়ার সময় যে আরিফ আবসারকে শক্রর কবল থেকে উদ্ধার করেছে। যার সংস্পর্শে এসে আবসারের চরিত্রের পরিবর্তন হয়েছে এবং ধর্মের দিকে খুঁকে পড়েছে, সেই আরিফ যখন ভাল হবে বলছে তখন আর না করতে পারলেন না। বললেন, তুমি যখন বলছ তখন আর অমত করব না।
আরিফ মনে মনে আল্লাহপাকের শুকরিয়া আদায় করল। এমন সময় আকলিমা বেগমকে না নিয়ে আসতে দেখে সালাম দিয়ে বলল, আপনি আবার এসব আনতে গেলেন কেন? আমি তো নাস্তা খেয়ে এসেছি।
আকলিমা বেগম বললেন, তাতে কি হয়েছে? ছেলে মায়ের কাছে এলে, মা কি কিছু না খাইয়ে ছাড়ে।
আরিফ নাস্তা খেতে শুরু করলে খায়ের সাহেব বীকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আবসার যে মেয়েকে পছন্দ করেছে, তাকে আরিফেরও পছন্দ।
আকলিমা বেগম বললেন, তাহলে তুমি তো আর অমত করতে পারবে না।
আরিফ নাস্তা খেয়ে তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এল। রাস্তায় এসে আবসারকে দেখে বলল, দুয়াকাত শোকরানার নামাজ পড়িস। কেল্লা ফতে করে এলাম।
আবসার শোকর আলহামদুলিই বলে বলল, নিশ্চয় পড়ব।
আরিফ বলল, পুরস্কার পাওনা রইল, এখন চলি। তারপর সালাম বিনিময় করে চলে
ঐদিন রাতে মায়ের সাহেব আবসারকে বললেন, আরি সকালে এসেছিল। সে ঐ মেয়েটিকে চিনে এবং তার সময়ে কিছু ভাল কমেন্ট করেছে, তাই আমি এই কাজ করব। তবু তোমাকে কয়েকটা কথা বলছি মন দিয়ে শোন, মেয়ের বাবার আর্থিক অবস্থা তুমি নিশ্চয় দান। বিয়েতে মেয়ে জামাইকে যে কিছুই দিতে পারবেন না, তাও নিশ্চয় জান। কোন দিন সে ব্যাপারে বৌমাকে কোন খোচা দিতে পারবে না। বা-বাব নিয়ে কোন দিন শুরবাড়ি যেতে পারবে না। আমরা বৌমাকে কোন দিন তার বাবা মার কাছে পাঠাব না। তুমি মাঝে-মধ্যে বৌমাকে সঙ্গে করে তার বাবা-মাকে দেখিয়ে আনতে পারবে। বিয়ের কথাবার্তা পাকা হার পর বৌমা আর চাকরি করবে না, এই সব তুমি যদি মেনে নাও, তাহলে আমরা তোমার কথায় রাজি হতে পারি।
আবসার বলল, তাই হবে বাবা।
তারপর মাসখানেকের মধ্যে খায়ের সাহেব রীমাকে পুত্রবধু করে ঘরে নিয়ে
রীমা গার্মেন্টসে চাকরি করলেও কাটিং শিখেছি। মীর ঘরে এসে কিছু দিনের মধ্যে সবার মন জয় করে নিল। তারপর স্বামী ও শ্বশুরের সহায়তায় বাসাতেই মেয়েদের সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলে ভাল টাকা রোজগার করতে লাগল। বছর খানেকের মধ্যে সংসারে উন্নতি দেখে শুর-শাশুড়ীর খুব প্রিয়পাত্র হয়ে উঠল। রীমা যে শুধু প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নিয়ে ব্যস্ত থাকত তা নয়, সেই সঙ্গে সংসারের সব কাজ ও শ্বশুর-শাশুড়ীর সেবা যত্নের দিকে খুব লক্ষ্য রাখত। অবশ্য সংসারে অন্যান্য কাজের জন্য একজন মেয়ে রেখেছে। যে সব আত্মীয়-সনের বৌ দেখে ছিঃ ছিঃ করেছিল, বৌ-এর গুণের পরিচয় পেয়ে এখন তারা তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। রীমা স্বামীর সংসারে এত ব্যস্ত থাকলেও নিজের মা-বাবার কথা ভুলেনি। স্বামীর সঙ্গে পরামর্শ করে তাদেরকে মাসিক বেশ কিছু টাকা সাহায্য করছে।
<