হ্যাটারের র‍্যাঞ্চে গতকাল সময়টা বেননের ভাল কাটেনি। প্রথমে গুলি করতে যাচ্ছিল ব্যাঙ্কার। তারপর প্রায় খেদিয়েই দিল ডেইজি। তবু এখন র‍্যাঞ্চ বাড়িটা চোখে পড়তেই খুশি হয়ে উঠল বেনন। সারারাত উত্তেজনার পর বাড়িটা দেখে ওর মনে হলো ঘুমের স্বর্গ। হ্যাঁ, ওখানে আছে আরামের সমস্ত উপকরণ। খাওয়া, গোসল আর বিছানা। একবার বিছানায় গিয়ে পড়তে পারলে আঠারো ঘণ্টার আগে ঘুম থেকে উঠবে না ও।

বেননের মত অতটা খুশি দেখাচ্ছে না ব্র্যান্ডনকে। দেখে মনে হচ্ছে র‍্যাঞ্চে না যেতে হলেই ভাল হত। কিছুটা যেন অনিচ্ছুক একটা ভাব চেহারায়।

কৌতূহল বোধ করল বেনন।

ডেইজির দিকে তাকাল ব্র্যান্ডন। পাশে ঘোড়া ছোটাচ্ছে মেয়েটা। আচ্ছা, ডেইজি, কালকে রাতে আমি যখন আসি ঘুমিয়ে ছিল হ্যাটার। এখন নিশ্চয়ই ঘুম ভেঙেছে তার? রেল রোডের লোক আমি, যদি দেখে খেপে ওঠে? গুলি করে দেয় যদি

কুঁচকে তাকাল ডেইজি। দু’চোখে খেলা করছে কৌতুক।

গুলি করলে আমি অবাক হব না, বলল ও। তুমি সারারাত আমাকে নিয়ে বাইরে কাটিয়েছ। বাবা চাইবে তুমি আমাকে বিয়ে করো।

লজ্জা পেল এঞ্জিনিয়ার। কথা বলতে গিয়ে তোতলামিতে পেয়ে বসল। দেখো, আ…আ…ডেইজি..ইচ্ছে করে…আমি… ভাবিনি…আহহা, আমি বলতে চাইছি…তো…তোমাকে…আমি… ধূর! আমি বলতে চাই তোমাকে বিয়ে করার জন্যে আমার পিঠে কারও শটগান ধরতে হবে না।

থাক, তোমার মিথ্যে না বললেও চলবে। মুখ ঝামটা দিল ডেইজি।

মিথ্যে নয় মিথ্যে নয়, প্রায় হাহাকার করে উঠল ব্র্যান্ডন। চুপ করে থাকল ডেইজি।

বেনন বলল, হ্যাটারকে নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। স্পারটা এখন আমার পকেটে। আমাদের মাথায় তুলে নাচবে সে। স্পারটা বের করে তালুতে রেখে দেখল বেনন। সূর্যের আলো পড়ে চকচক করছে রূপোর স্পার। গায়ে সূক্ষ্ম কারুকাজ করা। মেক্সিকান কারিগরের তৈরি যত্নের জিনিস। হিল-ব্র্যান্ডে অদ্ভুত একটা নক্সা আঁকা। এতই সুন্দর, একবার নক্সাটা দেখলে মনে থাকবে যে-কারও।

সবার মনোযোগ স্পারের ওপর, না তাকিয়েও বুঝতে পারছে বেনন। ঘাড় ফিরিয়ে দেখছে ব্র্যান্ডন। ঘোড়াটা আরও কাছে সরিয়ে এনেছে ডেইজি।

এটাই তাহলে সেই স্পার যেটার জন্যে হন্যে হয়ে ঘুরছে অনেকে! হ্যারি হুলাহানের কাছে পঞ্চাশ হাজার টাকা দাবি করেছে ওয়াং এটারই জন্যে! কি রহস্য লুকিয়ে আছে স্পারটার মধ্যে? উল্টেপাল্টে জিনিসটা দেখল বেনন। মাথামুণ্ডু কিছু বুঝতে পারল না। নক্সাটা ছুটন্ত বুনো মহিষের না হয়ে মানচিত্র জাতীয় কিছু হলেও না হয় ধরে নেয়া যেত গুপ্তধনের হদিস আছে বা আর কিছু? খুঁত খুঁত করছে বেননের মন। কি যেন একটা দৃষ্টি এড়িয়ে যাচ্ছে!

তুমিই তাহলে চুরি করেছিলে ওটা! অগ্নিদৃষ্টিতে বেননকে দেখল ডেইজি।

ভুল বুঝছ। মেয়েটা দৃষ্টি নামিয়ে নিতে বাধ্য হওয়ার আগ পর্যন্ত চোখে চোখে তাকিয়ে থাকল বেনন। তারপর বলল, কালকে রাতে ডক্টর ওয়াঙের কাছ থেকে এটা উদ্ধার করেছি। সে-ই চুরি করেছিল মিস অ্যানা হ্যাটারের কাছ থেকে।

তোমার সম্বন্ধে আমার ধারণাটা বোধহয় ভুল ছিল, অকপটে স্বীকার করল ডেইজি।

ব্র্যান্ডন বলল, তারপরও নিশ্চিত হচ্ছি কি করে যে আমাদের দেখা মাত্র হ্যাটার গুলি করবে না?

আগে যাই তো, তারপর দেখা যাবে। স্পারটা পকেটে পুরল বেনন।

আধঘণ্টার মধ্যে র‍্যাঞ্চের উঠানে পৌঁছে গেল ওরা। আস্তাবলের সামনে ঘোড়া থেকে নামল। সকাল হয়ে গেছে, বাঙ্ক হাউজ আর কুক শ্যাকে লোকজনের সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে। কারা এসেছে দেখতে বেরিয়ে এলো কয়েকজন কাউহ্যান্ড। ডেইজি সঙ্গে থাকায় কেউ কিছু বলল না। যে চৌবাচ্চায় বেনন হ্যারি হুলাহানকে চুবিয়েছিল সেটাকে পাশ কাটিয়ে বাড়ির বারান্দায় উঠল ওরা।

ঘরে ঢুকে অবাক হলো বেনন। একটা সোফায় আরাম করে বসে আছে ব্যাঙ্কার!

লোকটাকে দেখেই সরে দাঁড়াল বেনন। হাত চলে গেল হোলস্টারের পাশে। একবার লোকটাকে অবহেলা করে বিপদে পড়েছে; সেই একই ভুল আবারও করতে চায় না। ওর সতর্ক হয়ে ওঠা ব্যাঙ্কারের নজর এড়াল না। হাত তুলল লোকটা, নরম গলায় বলল, তোমার সঙ্গে আমার কোন শত্রুতা নেই, বেনন। তোমাকে ভুল ভেবেছিলাম আমি।

তোমার সেই ভুল ধারণা পাল্টাল কি করে? জানতে চাইল বেনন। একবিন্দু বিশ্বাস করে না ও লোকটাকে। অনেকগুলো প্রশ্ন ভীড় করে আসছে ওর মনে। সবগুলো প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর পেলে হুলাহানের বদলে ছোবল দিতে উদ্যত কোন র‍্যাটল স্নেককে বেশি বিশ্বাস করবে ও।

জিমি নর্টনের মুখে তোমার ব্যাপারে খারাপ মন্তব্য শুনেই আমি ভুল বুঝেছিলাম, বলল হুলাহান। তারপর কাল রাতে, তোমাকে যখন ওয়াঙের ক্যাম্পে দেখলাম তখন আরও নিশ্চিত হয়ে গেলাম যে তুমি আসলে রেল রোডের শত্রু। কিন্তু যখন তুমি লড়তে লাগলে, আমার চোখ খুলে গেল। বুঝলাম তুমি আমাদেরই একজন। তখনই আড়ালে সরে এসে কয়েকটা গুলি ছুঁড়লাম যাতে তোমার সুবিধে হয়। আমি আমার সাধ্য মত করেছি।

চিন্তিত চোখে লোকটাকে দেখল বেনন। ওয়াঙকে কোথায় পাওয়া যাবে জানলে কি করে?

জানতাম না। ওর লোকগুলোকে ট্রেইল করে ওখানে পৌঁছাই।

কোন সাহসে তুমি ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালে সেটা আমার জানার কৌতূহল হচ্ছে।

লোকটাকে আমি অনেক বছর ধরে চিনি। আগেও এই এলাকায় কিছুদিন ঘুরঘুর করে গেছে। নিজের পরিচয় দেয় প্যালান্টোলজিস্ট বলে, তবে আমার ধারণা লোকটা সাধারণ মাপের একটা প্রতারক ছাড়া আর কিছুই নয়। শুনেছি টাকা দিয়ে লোকটাকে কেনা যায়।

সেজন্যেই ওর কাছ থেকে স্পারটা কিনতে চেয়েছিলে?

আমি চেয়েছিলাম ওটা হ্যাটারকে ফিরিয়ে দিতে। বলতে লজ্জা নেই, ভেবেছিলাম স্পারটা পেলে হ্যাটার খুশি হবে, রেল রোডের ব্যাপারে ওকে রাজি করাতে পারলে আমারও লাভ হবে। হাসল ব্যাঙ্কার। উকিলের মত একের পর এক প্রশ্ন করছ কেন? এবার আমার প্রশ্নের জবাব দাও; স্পারটা পেয়েছ?

হ্যাঁ।

কি ব্যাপার, কি নিয়ে কথা হচ্ছে এখানে? শোবার ঘরের দরজার কাছ থেকে জানতে চাইল হাটার। সবার অলক্ষে এসে দাঁড়িয়েছে সে কখন যেন। লোকটার দৃষ্টি এক এক করে সবাইকে ছুঁয়ে যাচ্ছে। ব্র্যান্ডনকে দেখে ভ্ৰ কুঁচকে উঠল। বেনন দেখল আড়ষ্ট হয়ে গেছে ডেইজি। আশঙ্কা করছে এক্ষুণি বিস্ফোরিত হবে হ্যাটার। কিন্তু কিছু বলল না র‍্যাঞ্চার। সবার শেষে হলো বেননের ওপর।

এই যে এটা তোমার জিনিস। তাড়াতাড়ি করে স্পারটা বের করে হ্যাটারের দিকে বাড়িয়ে দিল বেনন। পাগলের সঙ্গে চালিয়াতি চলে না। ঝুঁকি নেয় শুধু নির্বোধরা। ওর অভিজ্ঞতা বলে তেড়ে আসা উন্মাদের চেয়ে শান্ত পাগল বেশি বিপজ্জনক।

স্পারটা নিয়ে শূন্য দৃষ্টিতে উল্টেপাল্টে দেখল হ্যাটার। চেহারা দেখে বোঝা যায় তাকিয়েই আছে শুধু; দেখছে না কিছুই। বিড় বিড় করে কি যেন বলল। তলিয়ে গেছে ভাবনার অতলে। কপালে গভীর কয়েকটা ভাঁজ পড়েছে। আশেপাশে কারও উপস্থিতি সম্বন্ধে যেন সচেতন নয়; বুটের কাছে স্পারটা ধরে দেখল কেমন মানাবে। তারপর সবাইকে অবাক করে দিয়ে একটা কথাও না বলে ফিরে গেল নিজের শোবার ঘরে।

দীর্ঘশ্বাস ফেলল হ্যারি হুলাহান। নিস্তব্ধতায় আওয়াজটা স্পষ্ট শুনতে পেল সবাই।

যাই, তোমাদের নাস্তার জোগাড় করি গে। কিচেনের দিকে পা বাড়াল ডেইজি।

বিশ মিনিট পর টেবিলে বসল সবাই। বেনন, ব্র্যান্ডন, ডেইজি আর হ্যারি হুলাহান। নাস্তার পর ডেইজি চলে গেল হ্যাটারের ঘরে। ফিরল একটু পরেই। ভীত আর চিন্তিত দেখাচ্ছে মেয়েটাকে। বলল, কিছুই বলছে না বাবা। স্পারটা হাতে নিয়ে শুধু পায়চারি করছে। মাঝে মাঝে এমন হয়। তখন পাগলামি শুরু করে বাবা।

আবার এসে লিভিং রুমে বসল ওরা। করার কিছু নেই, কাজেই স্টকম্যানস জার্নাল নিয়ে পড়তে লাগল বেনন। ব্র্যান্ডন আর হ্যারি হুলাহানও যে যার ভাবনায় ডুবে চুপ করে বসে আছে। পাশের ঘর থেকে শোনা যাচ্ছে পায়চারিরত হ্যাটারের বুটের আওয়াজ। একই ছন্দে হাঁটছে র‍্যাঞ্চার। গতির কোন বাড়া-কমা নেই। কাঠের মেঝেতে ঠকঠক শব্দ করছে বুট জুতো। এতই একঘেয়ে যে বিরক্তি লেগে যায়।

অনেকক্ষণ পর হাতঘড়িতে সময় দেখল ব্র্যান্ডন। ক্যাম্পে ফিরে যাওয়া উচিত। যাওয়ার আগে হ্যাটারের সঙ্গে কথা বলতে পারলে ভাল হত।

মাথা নাড়ল ডেইজি। বাবাকে এখন বিরক্ত না করাই ভাল।

এতক্ষণে ওয়াঙের দল পালিয়েছে, নাহলে ক্যাম্প থেকে লোক নিয়ে শয়তানগুলোকে ধরা যেত, আপনমনে বলল ব্র্যান্ডন।

দরকার থাকলে চলে যেতে পারো তুমি, বলল ব্যাঙ্কার, আমি থাকছি, হ্যাটারের মনমেজাজ ভাল দেখলে কোম্পানির হয়ে আলোচনাটা সেরে নেব।

আমিও অপেক্ষা করে দেখি কিছুক্ষণ। একটা স্টকম্যানস জার্নাল কোলের ওপর টেনে নিল ব্র্যান্ডন।

বেড রূমের বন্ধ দরজার দিকে তাকাল বেনন। এখনও পায়চারি করছে লোকটা। হাটার স্পারটা পেয়েই চিন্তায় পড়ে গেছে, বলল ও। আমার ধারণা সে বেরিয়ে এলেই সমস্ত রহস্যের সমাধান হয়ে যাবে।

কিন্তু বেলা গড়িয়ে গেল হ্যাটার আর বের হয় না। অপেক্ষা জিনিসটা মানুষের মাঝে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। একেকটা মিনিট যেন একেকটা বছর। পরিবেশটা ধীরে ধীরে হয়ে উঠল ধনুকের ছিলার মত টানটান। কৌতূহল এমন দুর্বার যে কেউ ঘর ছেড়ে নড়ছে না। চলে যাবার কথা আর একবারও বলেনি ব্র্যান্ডন। স্পারটাকে ঘিরে যে রহস্য তৈরি হয়েছে সেটা ভেদ করতে পারে একমাত্র পাগলা হ্যাটার। কি আছে লোকটার অসুস্থ মনে সেটা জানার ইচ্ছে সময়ের সঙ্গে প্রবল হয়ে উঠছে সবার।

সন্ধে নামতে ঘরে বাতি জ্বালতে গেল ডেইজি। ফিরেও এলো। এখনও ঘরের মধ্যে বিরামহীন হাঁটছে হ্যাটার। আমি সাপার তৈরি করতে গেলাম, একসময় অধৈর্য হয়ে বলল ডেইজি।

আমরা বরং কুকশ্যাকে গিয়ে কাউহ্যান্ডদের সঙ্গে খেয়ে নেব, দ্রতা করে বলল ব্র্যান্ডন।

নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্যেই সাপারটা বানাব আমি। মুখ ঝামটা দিয়ে চলে গেল ডেইজি।

বিয়ের পর বউয়ের বকা শুনতে শুনতেই জীবনটা কাটবে ব্র্যান্ডনের, ভাবল বেনন।

একটু পরেই চুলায় হাঁড়ি-কড়াইয়ের শব্দ উঠল। কাচকোচ করে প্রতিবাদ জানাল বেসিনের পাম্প। কিচেনের দরজা দিয়ে ভাজা স্টেকের সুগন্ধ ভেসে আসতে লাগল। গন্ধটা নাকে আসতেই হঠাৎ করে বেনন অনুভব করল ভীষণ খিদে পেয়েছে ওর।

আধঘণ্টা বাদে আবার কিচেনে হাজির হলো সবাই।

দেখি বাবা কিছু খাবে কিনা। ওদেরকে টেবিলে বসিয়ে দিয়ে দরজার দিকে এগোল ডেইজি। ফিরে এসে ওদের সঙ্গে খেতে বসল। আগের চেয়ে কম চিন্তিত দেখাচ্ছে, এখন তাকে। বলল, বাবাকে দেখে মনে হলো আজ সারাদিন খুব কষ্টে কেটেছে। বোধহয় অনেক আগের টুকরো টুকরো স্মৃতি মনে পড়ছে। বলল সবাইকে থাকতে। কি যেন বলতে চায়; মনের মধ্যে সাজিয়ে গুছিয়ে নিচ্ছে, তারপর বলবে।

সাপার সেরে লিভিং রূমে ফিরে এলো ওরা। এখনও দেখা নেই পাগলা হ্যাটারের। হাঁটছে তো হাঁটছেই লোকটা। খামোকা। ঘরের মধ্যে হাঁটাহাঁটি না করে যে কোন একদিকে রওয়ানা হয়ে গেলে এতক্ষণে এই কাউন্টি ছাড়িয়ে যেত, ভাবল বিরক্ত বেনন।

এক ঘণ্টা পেরিয়ে গেল। অস্থির হয়ে ঘরের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে অধৈর্য ব্র্যান্ডন। নির্বিকার চেহারায় বসে আছে ডেইজি। বেনন লক্ষ করল মাঝে মাঝেই দু’হাত মুঠো করছে মেয়েটা। যত চেষ্টাই করুক উদ্বেগ লুকাতে পারছে না। ব্যাঙ্কার একটা সিগার ধরিয়ে ঘর আর বারান্দা করছে। লোকটা বারান্দায় গিয়ে দাড়ালেও সিগারের সুগন্ধি ধোয়া ভেসে আসছে দরজা দিয়ে।

হঠাৎ করেই ওদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার ইতি ঘটল। চমকে গেল সবাই। বাইরে গুলির প্রচণ্ড আওয়াজ! প্রথম গুলির জবাবে আরও কয়েকবার গুলি হলো। লাফ দিয়ে সোফা ছাড়ল বেনন। বুঝতে পারছে বাইরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে গুলি করছে ব্যাঙ্কার। গুলির ফাঁকে চেঁচিয়ে ওদের নাম ধরে ডাকছে লোকটা। এদিকে পাশের ঘরে হ্যাটারেব পায়চারি থেমে গেছে। ধপ করে কি যেন একটা পড়ার শব্দ হলো।

বারান্দায় যাওয়ার দরজার কাছে একই সঙ্গে পৌঁছল বেনন আর ব্র্যান্ডন। কাঁধে কাঁধ ঠেকে গেল দু’জনের। ধাক্কা দিয়ে এঞ্জিনিয়ারকে সরিয়ে দিয়ে বেরিয়ে এলো বেনন। দেখল রেলিং টপকে অন্ধকারে ধেয়ে যাচ্ছে হ্যারি হুলাহান। দরজা খোলার শব্দে ঘাড় ফেরাল লোকটা। ওদেরকে হাতের ইশারা করে চেঁচাল। ওয়াং! তাড়াতাড়ি আসো, এখানেই লুকিয়েছে ওয়াং!

আমাদের বোঝা উচিত ছিল স্পার হারিয়ে এত সহজে হাল ছেড়ে দেবে না লোকটা, দাঁতের ফাঁকে বলল ব্র্যান্ডন।

তুমি ওর সঙ্গে যাও। অপসৃয়মান ব্যাঙ্কারকে দেখাল বেনন। আমি ভেতরে যাচ্ছি হ্যাটারের অবস্থা দেখতে।

দৌড়ে লিভিং রূমে ফিরে এলো বেনন। হ্যাটারের দরজায় দাঁড়িয়ে মনে মনে প্রার্থনা করল যাতে তালা মারা না থাকে। উইলো কাঠের পুরু দরজাটা ভাঙতে হলে কুঠার লাগবে। ধাক্কা দিতেই খুলে গেল দরজা। ভেতরে ঢুকে বেনন দেখল মাটিতে হাত-পা ছড়িয়ে পড়ে আছে পাগলা হ্যাটার। হাতে এখনও সেই স্পার। অজ্ঞান হয়ে গেছে র‍্যাঞ্চার। সাদা দাড়িতে লেগে আছে ছোপ ছোপ রক্ত। বেননের পেছনে দাঁড়িয়ে জানালার দিকে তাকাল ডেইজি। জানালার কাঁচে নিখুঁত একটা গোল গর্ত।

আমাকে একটু সাহায্য করো, বলল বেনন। ওর কথায় চমক কাটিয়ে উঠল ডেইজি। বেননের সঙ্গে হাত লাগাল। দু’জন মিলে ওরা হ্যাটারকে তুলে শুইয়ে দিল বিছানায়। আহত লোকটার বুকে কান রেখে দেখল বেনন হৃৎস্পন্দন আছে। শ্বাস নিচ্ছে। ভাগ্যিস হুলাহান বারান্দায় ছিল। জানালা দিয়ে ভেতরে ঢুকে স্পারটা নেয়ার সুযোগ পায়নি ওয়াং। ডেইজির দিকে তাকাল বেনন। তাড়াতাড়ি ব্যান্ডেজ আর গরম পানির ব্যবস্থা করো।

বাবার জ্ঞান ফিরছে, ফিসফিস করে বলল ডেইজি।

তাকাল বেনন। চোখ মেলে ছাদের দিকে চেয়ে আছে র‍্যাঞ্চার। ঘোলা দৃষ্টিতে ভাবের কোন প্রকাশ নেই। এটাই হয়তো অন্তিম মুহূর্ত! হ্যাটারের ওপর ঝুঁকে পড়ল বেনন। শেষ চেষ্টা করে দেখবে কিছু জানা যায় কিনা।

স্পারটা, হ্যাটার। ওটা অত মূল্যবান কেন?

ঠোঁট নড়ল র‍্যাঞ্চারের। অস্পষ্ট আওয়াজ বেরল। ভাল মত বোঝা গেল না কথা। তারপরই চোখ বুজল হ্যাটার।

কি বলল বাবা? শ্বাস আটকে জানতে চাইল ডেইজি।

মাথা নাড়ল হতাশ বেনন। যদি ভুল শুনে না থাকি তো বলেছে সোবার সুয়েড। বুঝলাম না কি বলতে চায়।

<

Super User