বেশ দেরিতে নাশতা সারলো ওরা, এত বেলায় নাশতা ফোর্বস র‍্যাঞ্চের ইতিহাসে নেই। ওরা যখন রান্নাঘরে নাশতার টেবিলে এসে বসলো তার দু’ঘণ্টা আগেই সূর্য উঠে গেছে। এতক্ষণ একটানা ঘুমিয়েছে কলিন, ঘুম থেকে ওঠার পরও ক্লান্তি কাটেনি ওর, কিন্তু হ্যারল্ড। লেভিটের কাছ থেকে সবকিছু বিস্তারিত জানার জন্যে উদগ্রীব।

কাজে লাগতে পারে তেমন তথ্য এখন পর্যন্ত মেলেনি। নিখোঁজ তিন রাইডারের সন্ধানে স্প্রীংগারভিল আর তার আশপাশ চষে বেড়িয়েছে ওরা।

খুব বেশি দূর এগোতে পারিনি আমরা, গম্ভীর কণ্ঠে বললো ইনডো। তবু তোমার আসার অপেক্ষা করছিলাম।

হনডো, মাঝ বয়সী, কঠিন চেহারা তার, অন্যদের মতোই ফোর্বস র‍্যাঞ্চের পুরোনো লোক। বেসিনের আদি বাসিন্দা এরা, এদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব একটা জগৎ আছে, সংসার আছে, একটা লক্ষ্য সামনে রেখে কাজ করে, কিন্তু ওদেরকে এই রাঞ্চের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবেই দেখে কলিন

লিনডা ওয়ারেনের কাছে শুনেছি আমাদের আটজন রাইডারের একজনও রেহাই পায়নি, ওদের জানালো ও, তারপর লিনডাকে স্টেজ পর্যন্ত পৌঁছুনোর কারণ ব্যাখ্যা করলো।

তোমার কাজটা ড্যানিয়েলের সেই স্ট্যামপিডের মতো, বললো হ্যারলড। তোমার বাবা জানতো ওয়ারেন আমাদের লোকদের হত্যা করেছে, কিন্তু তা প্রমাণ করার উপায় ছিলো না, তাই একমাত্র বিকল্প পথটাই বেছে নিয়েছে ও, পাল্টা আঘাত হেনেছে এবং আঘাতটা ওয়ারেনের আঁতেই লেগেছে।

কিন্তু এভাবে তো কোনো ফয়সালা হচ্ছে না, বললো কলিন, স্প্রীংগারভিল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ওয়ারেনকে জড়ানো যায় কিভাবে?

কেউ জবাব দিলো না। স্প্রীংগারভিলের হত্যাকাণ্ড আর গরু ছিনতাইয়ের ঘটনা অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গে ধামাচাপা দেয়া হয়েছে। স্প্রীংগারভিলের কাছে খুঁজে পাওয়া কবরগুলোর দিকে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা যেতে পারে প্রমাণ করা যায় স্ত্রীংগারভিলে যারা গরু বিক্রি করেছে তারা ফোর্বস ব্ল্যাঞ্চ রাইডার ছিলো না। কিন্তু তার। যে ওয়ারেনের লোক সেটা কিভাবে বোঝাবে? ড্যানিয়েল ফোর্বস যেভাবে রহস্যের মীমাংসা করেছে আদালত তা মানবে না।

প্রশ্নের ধরন বদলালো কলিন। অ্যারন হেলারকে, বললো ও, তো তোমরা সবাই চেনো, না? ওয়ারেনের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক আছে?

হেলার ওয়ারেনের অ্যাটর্নি, বললো হ্যারলড লেভিট, অবশ্য উপত্যকার সবাই আইনের ব্যাপারে ওর কাছেই সাহায্যের জন্যে যায়।

ওর সঙ্গে বাবার সম্পর্ক কেমন ছিলো?

ভালোই–তবে আমার বিশ্বাস তোমার বাবা ওকে ঠিক ভালো চোখে দেখতে না-বিশ্বাসও করতো না।

কিন্তু হেলারের স্প্রীংগারভিলে যাওয়ার একশো একটা কারণ থাকতে পারে।

ঠিক। কিন্তু ওখানে তার যাতায়াত খুবই কম।

আচ্ছা, লোকটা বিয়ে সাদী করেনি?

না। বছর কয়েক আগে একবার গুজব রটলো পুবের কোন এক মেয়েকে নাকি বিয়ে করতে যাচ্ছে, ম্যাকমিলান র‍্যাঞ্চটাও কেনার তোড়জোড় শুরু করেছিলো সে তখন, ওকালতি ছেড়ে দিয়ে রাঞ্চিং করবে। পরে অবশ্য তেমন কিছু ঘটেনি। তারপর ওয়ারেন এলো, সে-ই কিনলো ম্যাকমিলান র‍্যাঞ্চ–এবং শুরু হলো আমাদের ঝামেলা!

চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চোখ বুজলো কলিন। ভাবছে। হেলা য়ের চিঠি সতর্ক করার উসিলায় ওকে এখানে আসতে চ্যালেঞ্জ করেছে। এখানে আসার পর ডাক্তার মারভিনের বাড়িতে ওকে হামলা করতে গেল ওয়ারেন রাইডাররা। কলিন মারভিনের ওখানে যাচ্ছে হেলার ছাড়া কেউ জানতো না। কলিন ওখানে যেতে পারে অনুমান করে আগে থেকেই ওরা ওত পেতেছিলো–হেলারের এই ব্যাখ্যা খুবই দুর্বল।

হেলারের আরেকটা আচরণ বেশ রহস্যজনক। শুরু থেকেই ওকে ওয়ারেনের বিরুদ্ধে খেপিয়ে দিতে চাইছে সে, কেন? ওয়ারেনকে কেন ঘৃণা করে সে? সত্যিই কি ঘৃণা করে? ছিনতাই করা গরু বিক্রি করার সময় কেন স্প্রিংগারভিলে গিয়েছিলো সে? ঘটনাটা কাকতালীয়? হতে পারে। কিন্তু–

সোজা হয়ে বসলো কলিন। আমার ইচ্ছেটা কি শুনবে? বললো ও, হেলারকে এখানে ধরে এনে দুটো কথা বলা। হয়তো নতুন কিছু জানা যেতে পারে।

হেসে ফেললো হ্যারলড লেভিট। নিশ্চয়ই। আমরা যে-কেউ দুজনই পিছলে ওয়াগোনারে ঢুকে ওকে দাওয়াত করে নিয়ে আসতে পারি। দাওয়াত নিতে সে আপত্তি তুলতে পারে, তখন জোরাজুরি করবো, অসুবিধে কি!

দরকার হলে পিঠে হাত বুলিয়ে দেবো, বললো ইনডো।

আরেকটা কাজ করা যায়, বললো কলিন, আমাদের গরু ছিন তাইকারী যে কোনো একজনকে তুলে আনতে পারি। সেদিন ক্লাইভ কাসলারের ছয় সঙ্গীর নাম লিনডা আমাকে বলেছে, এদের মধ্যে চাক কনারস মারা গেছে, বাকি আছে বিল ওয়ারেন, লুইস প্যাটেন, পিটার রাইট, এরিক মেইন, আর হেনরী রয়েস। কে সবার আগে মুখ খুলতে পারে বলে তোমাদের ধারণা?

বিল ওয়ারেন, বললে টেরি জেলারম্যান। সায় দিলো হ্যারলড। কোনো সন্দেহ নেই। ওকে কাবু করা কোনো ব্যাপারই নয়।

কিন্তু ধরবে কিভাবে?

যে কোনো দিন বেলিনডা গ্রেবারের র‍্যাঞ্চ থেকে তুলে আনা যায়, আবার শহরে এলেন হডসন বা বেথ মেয়রসের বাড়ি থেকেও পাকড়াও করা যেতে পারে। শহরে গেলেই স্যালুনে বসে কয়েক গ্লাস গলায় ঢেলে সোজা ওদের কোনো একজনের বাড়ি হাজির হয় সে। তা, কলিন, আজই যাবে নাকি ওয়াগোনারে? নীল নকশা

মাথা দোলালো কলিন। এছাড়া আর কোনো উপায় দেখা যাচ্ছে না।

কিভাবে কি করতে হবে শোনো, বললো ও, আমরা–

উঠোনে পাহারায় ছিলো আরথার শেরিডান, দ্রুত এসে ঢুকলো সে, থামতে বাধ্য হলো কলিন।

সাত আটজনের একটা দল, বললে শেরিডান, এদিকে আসছে!

ওয়ারেন?

হতে পারে।

উঠে দাঁড়ালো কলিন। পিট আছে না ওঘরে?

আছে।

ওর সঙ্গে দুটো কথা বলা যাক, বললে কলিন। ওয়ারেনরাই যদি আসে ওদের বিদেয় করতে হবে, পিঠে পিস্তলের নল ঠেকানো থাকলে সম্ভবত সহায়তা করতে আপত্তি তুলবে না। পিট। এসো।

সব মিলিয়ে আটজন ঘোড়সওয়ার ঢুকলো উঠোনে। চারজনকে চিনতে পারলো কলিন–ওয়ারেন, লুইস প্যাটেন, এরিক মেইন এবং ক্লাইভ কাসলার–ওয়ারেনের পাশে লম্বা ছিপছিপে পাথরের মতো কঠিন চেহারার লোকটা কাসলার না হয়ে যায় না।

আধখোলা দরজার একটু বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে ডার্ক পিট, অবসন্ন দৃষ্টিতে ঘোড়সওয়ারদের দিকে তাকাচ্ছে, মেদ স্বর্বস্ব বিশাল শরীর তার, সারারাত নিঘুম কেটেছে, তারপর এখন আবার পিঠে ঠেকে রয়েছে কলিনের পিস্তল, আত্মারাম খাঁচাছাড়া অবস্থা!

সব ঠিক আছে? স্বভাবসুলভ চড়া গলায় জানতে চাইলে ওয়ারেন।

ওপর-নিচ ওঠানামা করলো ডার্ক পিটের মাথা।

রাতে কেউ এসেছিলো?

নাহ।

বার্ন-এ গিয়েছিলে সকালে?

খামোকা কেন যাবো?

ক্লাইভ, জো, হেনরী–যাও, বার্ন-এ ঢু মেরে এসো। নির্দেশ দিল ওয়ারেন। সম্ভাবনা কম, তবু এখানে এসে লুকিয়ে থাকতে পারে হারামীটা!

কলিনের অনুমান ঠিক, লম্বা লোকটাই ক্লাইভ কাসলার, অন্য দু’জনকে নিয়ে বার্ন-এর দিকে গেল সে। স্যাডল থেকে নেমে হোলসটারের পিস্তল বের করলো, ঢুকে পড়লো ভেতরে। স্যাড়লে নড়েচড়ে বসলো ওয়ারেন। ক্লান্ত দেখাচ্ছে তাকে, চোখজোড়া ফোলা ফোলা, আরো গাঢ় হয়েছে কপালের দাগগুলো।

এখনো প্রচুর টাকা পাওয়ার সুযোগ আছে তোমার, পিট, ভারি গলায় বললো সে। কাল রাতে প্যসিকে ফাঁকি দিয়ে কেটে পড়েছে কলিন ফোর্বস। কোন দিকে যে গেল। বৃষ্টিতে ট্রেইল মুছে সাফ। এদিকে এসে থাকতে পারে।

এখানে আসতে যাবে কেন?

যেখান থেকেই হোক খাবার জোগাড় করতে হবে তাকে, বললে। ওয়ারেন। নজর খোলা রেখো, পিট। যদি এখানে আসে, ঘায়েল করতে পারলে পাঁচশো পাবে। টাকার দরকার আছে না তোমার?

তা আছে, নিষ্প্রাণ কণ্ঠে বললো ডার্ক পিট।

দুই সঙ্গীসহ বার্ন থেকে বেরিয়ে এলো ক্লাইভ কাসলার, পিস্তল হোলসটারে ঢোকালো। কেউ নেই, জানালো সে। আমার মতে শহরে নয়তো আরেকটা র‍্যাঞ্চ আছে ওখানে পাওয়া যাবে শালাকে।

আরেকটা র‍্যাঞ্চ? কোন্ র‍্যাঞ্চ? জিজ্ঞেস করলো ওয়ারেন।

ক্রুর হাসি ফুটে উঠলো কাসলারের ঠোঁটে। আমার সন্দেহ সত্যি নাও হতে পারে, নিজেই পরীক্ষা করে দেখতে চাই আমি, তার আগে এখান থেকে কফির পালাটা চুকিয়ে নিলে কেমন হয়?

পিটের পেছনে ঘাপটি মেরে আছে কলিন, ওর পিস্তলের নল পিটের পিঠ স্পর্শ করেছে, রুদ্ধশ্বাসে ওয়ারেনের জবাবের অপেক্ষায় বইলো ও।

সময় নেই হাতে, বললো ওয়ারেন, আরো অনেক জায়গায় যেতে হবে! চলে। কথাটা মনে রেখো, পিট। পাঁচশ। অনেক টাকা।

মনে থাকবে, দুর্বল গলায় বললো পিট।

একটু পর বিদেয় হলো ওয়ারেন, রেডফিলডের র্যাঞ্চ ওদের গন্তব্য, আন্দাজ করলো কলিন।

পিস্তলটা খাপে ঢোকালো ও, সোজা হয়ে দাড়িয়ে বানোনা বের করে মুখ মুছলো, তারপর বললো, চমৎকার দেখিয়েছে, পিট, কয়েকটা দিন আয়ু বাড়লো তোমার।

কামরায় ফিরে এলো পিট, থরথর করে কাঁপছে। আমার ওপর অযথা অত্যাচার করছে। তোমরা, বললো সে। আমি নিরপেক্ষ মানুষ, অাদালতই আমাকে এখানে পাঠিয়েছে।

আবার বেঁধে ফেলো ওকে, বললো কলিন।

জানালার কাছে এসে বাইরে তাকালো কলিন। কি বোঝাতে চাইলো তখন কাসলার? নিজেই পরীক্ষা করে দেখতে চায় মানে কি? বেলিনডার দিকে ইঙ্গিত করেনি তো? সম্ভব। সেরাতে ওয়ারেনের আস্তাবল থেকে পালানোর পর বেলিনডার র‍্যাঞ্চে গিয়ে ছিলো ও, কথাটা নিশ্চয়ই আগে শুনেছে সে, বিলই বলেছে। এক বার সাহায্যের জন্যে বেলিনডার কাছে গেছে, আবারও নিশ্চয়ই যাবে। মহা ধূর্ত লোক কাসলার।

বিকেলের দিকে ওয়াগোনারের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়লো ওরা কলিন, হ্যারলড, টেরি জেলারম্যান এবং ইনডো। অনিচ্ছা সত্ত্বেও পিটকে পাহারা দিতে র‍্যাঞ্চে থাকতে বাধ্য হলে আরথার শেরিডান।

দিনের আলোয় খোলা প্রান্তর দিয়ে এগোনো বিপজ্জনক, জানে কলিন, কিন্তু বিপদের মধ্যেই তো আছে ওরা, তাছাড়া সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনিয়ে আসার আগেই পৌঁছুতে চায় ও। শহরের দক্ষিণে স্টোনি রিভারের দিকে কোণাকুণিভাবে এগোলে। ওরা, গোধূলির দিকে পৌঁছুলো ওখানে।

শহরের পুব দিকে একটা আস্তাবল অাছে, ঘোড়াগুলো ওখানে লুকিয়ে রাখা যায়, বললো হ্যারলড, অনেকদিন ধরে পরিত্যক্ত ওটা, খোদ মালিক ফ্রেড হাইলস, সে-ই কখনো ধারেকাছে যায় কিনা সন্দেহ।

মাথা দোলালো কলিন। নদীর তীরে গাছপালার মাঝে ঘোড়া লুকোনোর চেয়ে ভালো হবে সেটা। এই জায়গায় আবার শেরিফের মুখোমুখি হতে চায় না ও।

শহরে ঢুকে আগে আমি একবার রেকি করে আসবে, বললো হ্যারলড। তোমার জন্যে অপেক্ষা করার সময় এখানকার অন্ধি সন্ধি চেনা হয়ে গেছে। এবার আর আগের মতো ভুল করে ধরা পড়বে না।

অন্ধকার আরো গাঢ় হলো। পুব দিক থেকে শহরে ঢুকবে বলে ঘুরপথে এগোলে ওরা। হ্যারলড পথ দেখিয়ে ফ্রেড হাইলসের পরিত্যক্ত আস্তাবলে নিয়ে এলো ওদের, তারপর অদৃশ্য হয়ে গেল।

আধ ঘণ্টা কাটলো।

অবশেষে গম্ভীর চেহারায় ফিরে এলো হ্যারলড।

ভালো দিনই বেছে নিয়েছি, বললো সে, ওয়ারেন এখন শহরে। বিল, এরিক মেইন আর লুইস প্যাটেনকেও পলকের জন্যে দেখলাম, ওরা ছাড়াও ওয়ারেনের বেশ কয়েকজন রাইডার এখন এখানে। রাস্তায় টহল দিচ্ছে জেফরি আরচার। চার্লস মুসেলমান আর ডেনিস স্মিথকেও দেখেছি। মনে হচ্ছে বেসিনের অর্ধেকের বেশি লোক এখন ভিড় জমিয়েছে এখানে। এর মানে হেলারের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছুনো সহজ হবে না। ওখানেই আগে যেতে চাও?

ভাবলো কলিন। হেলার আর বিলকে অপহরণ করা সম্ভব হলেও লাভ হবে শেষ পর্যন্ত। প্রীংগারভিল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে হেলারের হয়তো কোনো সম্পর্ক নেই, যদি থাকেও, চতুর লোক সে, ওর কাছ থেকে আত্মঘাতী কোনো বিবৃতি আদায় করা সহজ হবে না।

বিল ওয়ারেন হয়তো শেষ পর্যন্ত মুখ খুলবে, কিন্তু ওর স্বীকারোক্তি আদালতে প্রতিষ্ঠা করবে কিভাবে? ওর পক্ষের উকিলের সামান্য বুদ্ধি থাকলেই সে দাবি করে বসবে যে মৃত্যু ভয়ে মিথ্যে জবানবন্দী দিতে বাধ্য হয়েছিলো বিল। কিন্তু আর কোনো পথ কি আছে? অনন্তকাল ধরে ওদের পক্ষে আত্মগোপন করে থাকা সম্ভব নয়। কিছুদিন প্যসিকে ফাঁকি দেয়া যাবে, কিন্তু শোডাউনের পালা আসবে যখন? আউট-লদের মতো গ্রেপ্তারে বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠবে ওদের বিরুদ্ধে, নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করার কোনো উপায় থাকবে না–সোজা কথায় কোনো সুযোগই দেয়া হবে না।

সুতরাং এখন প্রাণ ছাড়া হারাবার মতো আর কিছুই নেই।

আগে হেলারের ওখানেই যাবার চেষ্টা করবো, মৃদু কণ্ঠে বললো কলিন।

তোমরা তিনজন ওকে সামলাতে পারবে? জিজ্ঞেস করলে। হ্যারলড, তাহলে আমি বিলের দিকে নজর রাখতে যেতে পারতাম।

ঠিক আছে, হ্যারলড, সেটাই করো, কিন্তু দেখো ধরা পড়ে যেয়ো না যেন! তাহলে আর রেহাই পেতে হবে না!

আস্তাবল থেকে বেরিয়ে এলো ওরা, শহরের প্রধান সড়কের দিকে এগোলো। স্টেজ স্টেশনের কাছে আসার পর প্রথমে রাস্তা পার হলো কলিন, তারপর টেরি জেলারম্যান, সবশেষে হনডো হ্যারলড রয়ে গেল পেছনে। স্টেজ স্টেশনের পেছন থেকে কোণা কুণিভাবে হেলারের বাড়ির দিকে এগোলেতিনজন। অ্যাটনির বাড়ির জানালায় আলোর আভাস।

এবার? সোজা গিয়ে ধরে আনবো ব্যাটাকে? জিজ্ঞেস করলো এনডো।

না, বলল কলিন, আগে কিছু কথা আছে ওর সঙ্গে।

বাইরে কারো পাহারায় থাকার দরকার নেই?

না। সবাই একসঙ্গে থাকবো আমরা। সাক্ষী যত বেশি হবে আমার জন্যে তত ভালো। এসো।

হেলারের বাড়ির দিকে এগিয়ে গেল ওরা, দরজায় টোকা দিলে কলিন।

প্রায় সাথে সাথে দরজা খুলে ধরলো হেলার, ওদের দেখে এক সঙ্গে বিচিত্র ভাবের খেলা চললো তার চেহারায়, একেবারে পাথরের মতো দাড়িয়ে রইলো, যেন মৃত্যুদণ্ড শোনার অপেক্ষা করছে কোনো আসামী।

টেরি জেলারম্যান আর হনডো স্টার্ন, বললে কলিন। ফোর্বস র‍্যাঞ্চ রাইডার, চেনো বোধ হয়?

হ্যাঁ, বললে হেলার। কিন্তু আমি তো জানতাম–মানে শুনেছি ওরা বেসিন ছেড়ে চলে গেছে।

ঠিকই শুনেছিলে, কিন্তু আবার ফিরে এসেছে, বললে কলিন। কিছুক্ষণের জন্যে ভেতরে আসতে পারি?

জবাবের অপেক্ষা করলো না কলিন, সামনে পা বাড়ালো, ফলে পিছু হটতে বাধ্য হলো অ্যাটর্নি।

দরজা বন্ধ করে কাটে ঠেস দিয়ে দাড়ালো ইনডো। কলিন আর অ্যাটর্নির পিছু পিছু কামরার ভেতর দিকে এগোলে জেলার ম্যান। ওরা থামলে একপাশে সরে গেল সে, ফাইল কেবিনেটের সঙ্গে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে থাকলো। নিজের টেবিলের কাছে গিয়ে দাড়ালো হেলার, পেশাদারি একটা ভাব চেহারায়।

লোকজন তোমার নামে কি সব বলাবলি করছে জানো নিশ্চয়ই? শুরু করলো সে।

মাথা দোলালো কলিন।

কোথায় ও?

লিনডা?

         হ্যাঁ, লিনডা ওয়ারেন। ওকে পালাতে সাহায্য করার মতো নিরেট বোকামি করতে গেলে কেন?

ওর জন্যে আমার খারাপ লাগছিলো, হয়তো সেজন্যে।

কোথায় ও?

শেষ খবর, প্রীংগারভিলে দেখা গেছে ওকে। তবে এতদিনে বোধ হয় ক্যানসাস সিটির দিকে রওনা হয়ে গেছে।

প্রমাণ করা গেলেই হয়, কলিন। কিংবা সময় থাকতেই যদি ওকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়–

সময় থাকতে মানে? কি বলছো?

নইলে ফাঁসির দড়ি থেকে গলা বাঁচাতে পারবে না। লোকে বলছে ওকে অপহরণ করে তারপর হত্যা করেছে তুমি।

গাল চুলকালো কলিন। মনে হয় এখনো স্প্রীংগারভিলেই আছে লিনডা। ওখানে পরিচিত কেউ নেই তোমার, যাকে চিঠি লিখে খোঁজ নিতে পারো?

পরিচিত কয়েকজনই আছে, বললো হেলার, তবে কারো সঙ্গেই তেমন ঘনিষ্ঠতা নেই। বছরখানেক ওদিকে যাওয়া হয় না।

পাইপ বের করার জন্যে পকেটে হাত ঢোকালে কলিন। শেরিডানের কাছে ধার করা তামাক ভরলে ওটায়। এই একটা মিথ্যে কথা কিছুই প্রমাণ করে না, ভাবলো, কিন্তু মিথ্যে বললো কেন? দু মাস আগেও স্প্রীংগারভিলে গিয়েছিলো সে, অথচ এখন বলছে বছর খানেক যাওয়া হয় না, কেন?

পাইপ ধরালো কলিন। হেলার, বললো ও, সেদিন বলেছিলে ওয়ারেনের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়, আমাদের গরু বিক্রির পঁচিশ হাজার ডলার দিয়ে তাহলে সে কি করেছে? হ্যারলডের কাছে শোনা ঘটনা বলে জানতে চাইলো ও।

কোথাও লুকিয়ে রেখেছে হয়তো, এসব আমার জানার কথা নয়।

তাহলে তো ওয়ারেনের অবস্থা খারাপ বলা যায় না?

তা যায় না।

দু’মাস আগে, বাবা যখন স্প্রীংগারভিলে গরু চালান দিলো, ওয়ারেন গিয়েছিলো নাকি ওখানে?

না, আমি যদ্দূর জানি, না। গেলে বোকামি করতো।

তার মানে কাসলারকে বিশ্বাস করে সে?

কেন করবে না?

পঁচিশ হাজার ডলার সামান্য ব্যাপার নয়। কাসলার টাকা নিয়ে সটকে পড়লে কি করার থাকতে ওয়ারেনের? আমাদের লোকদের হত্যার দায় স্বীকার করা না করে কি আইনের সাহায্য নিতে পারতো? এতটাকা নিয়ে পালিয়ে যাবার সুযোগ জীবনে হাজার বার মেলে না।

বুদ্ধিটা বোধ হয় কাসলারের মাথায় খেলেনি।

বটে। আসলে কি ঘটেছিলো আমার কাছে শোনো। কাসলার কে ভারমুক্ত করার জন্যে ঠিক সেই সময় আরো একজন ছিলো প্রীংগারভিলে। ওয়ারেনের, বিশ্বাসভাজন একজন? কে হতে পারে?

ওর ছেলে?

বিল? আমার মনে হয় না। কাসলারকে সামলানোর সাধ্য ওর নেই। অন্য কেউ। কে হতে পারে? ভাবো, মাথা খাটাও।

পাতলা চুলে হাত চালালো হেলার, হনডো অর জেলারম্যানের দিকে তাকালো সে, পেশাদারি ভাব খসে পড়েছে চেহারা থেকে। ধেত্তের, কলিন, বললো সে। সব কথা জানা কি আমার পক্ষে সম্ভব, চিন্তা করলে হয়তো বুঝতে পারবো, কিন্তু —

তাহলে এক কাজ করে। আজ আমরা কিছু তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চালাবো। কপাল ভালো হলে হয়তো এমন কাউকে পেয়ে যাব যে সব কিছু জানে, জেরা করতে র‍্যাঞ্চে নিয়ে যাব তাকে, আসবে আমাদের সঙ্গে? ওর জবানবন্দীর একজন নিরপেক্ষ সাক্ষী দরকার হবে।

তার মানে আরো একজনকে অপহরণ করবে?

কথাটা অবশ্য এভাবেও বলা যায়।

তারপর ওকে র‍্যাঞ্চে নিয়ে যাবে-ফোর্বস র‍্যাঞ্চে?

ঠিক।

মাথা নাড়লে অ্যাটনি। কাল সকালে প্রথমেই ওখানে হামলা চালাবে প্যসি। সেরকমই সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তার আগেই সত্যি কথাটা জানতে পারবো আশা করি।

কিন্তু তাতে খুব একটা কাজ হবে না। কোনো কিছু শোনার মুডে নেই এখন ওয়ারেন।

শেরিফ, শুনবে।

তা শুনতে পারে। কিন্তু ওকে শোনানোর সুযোগ পাবে না। তারচেয়ে লোকটাকে এখানে নিয়ে এসো, আজই।

শহর আমাদের জন্যে নিরাপদ নয়, বললো কলিন, ভাবছি র‍্যাঞ্চেই সুযোগটা নেবো। যাবে আমাদের সঙ্গে?

ভুরু কোঁচকালো হেলার। ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই, সকালে ব্যাঙ্কে জরুরী একটা মিটিং আছে।

মিটিং পরে করলেও চলবে।

তা কি করে সম্ভব?

কিন্তু উপায় নেই, হেলার।

সন্ত্রস্ত চেহারায় এদিক ওদিক তাকালো হেলার, এক পা পিছিয়ে গেল।

এসব কি বলছো? নিশ্চয়ই—

এভাবে বলা যায় কথাটা, বললে কলিন, আমাদের সঙ্গে আজ ফোর্বস র‍্যাঞ্চে যাচ্ছো তুমি, ইচ্ছেয় অথবা অনিচ্ছায়। যে কোনো একটা বেছে নাও।

আরেক পা পিছিয়ে গেল হেলার। হাঁপাচ্ছে। ঘনঘন নজর বোলাচ্ছে কামরার চারপাশে, অদৃশ্য কোনো শক্তি বুঝি সাহায্য করতে আসবে ওকে! আচমকা পেছন দরজার দিকে দৌড় দিলো সে।

দরজার কাছে পৌঁছানোর আগেই তাকে ধরে ফেললো টেরি জেলারম্যান, একটা ঝলকের মতো ওঠানামা করলো ওর পিস্তলটা। হাড়ের সঙ্গে ইস্পাতের সংঘর্ষের বিশ্রী শব্দ শোনা গেল, মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো হেলার, বেহুশ।

ব্যাটা আস্ত ইবলিস, বললো জেলারম্যান, যেভাবেই হোক ও-ও আমাদের শত্রু।

মাথা দোলালো কলিন। কাঁধে তুলে নাও ওকে, পেছন দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাবে আমরা।

<

Super User