ঠিক সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে আক্রমণ চালাল কীথ এবং পিছু হটতে বাধ্য হলো। দুজন লোক হারাতে হলো তাকে। তবে হামলার ফলে একটা লাভ হলো-খাদের কথা জানা হয়ে গেল। গিরিখাদের কাছে ক্যানিয়নের মুখে একটা দেয়ালের আড়ালে আসন পেতে বসে আছে ডরনি শ। একেবারে সহজ হয়ে গেল কাজটা, বলল সে। এখনও প্রচুর ডিনামাইট আছে আমাদের কাছে!

মুখ তুলে তাকাল কীথ, ওর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে ডরনি শ, চোখজোড়া জ্বলজ্বল করছে। নাকি সেটা আবার তোমার নীতিতে বাধবে, কর্নেল? ডিনামাইটের গোটা দশেক কাঠি ফেলে দিলেই কিন্তু বারউইকের চাহিদা পূরণ হত-লাশের চিহ্ন থাকত না কোথাও!

খাদের ভেতর দিকে গুহাটুহা থাকলে, আপত্তি জানাল লরেন কীথ, জ্যান্ত কবর হয়ে যাবে সবার! জবাব দিল না কেউ। সবার ওপর দৃষ্টি বোলাল কীথ, মাটির দিকে তাকিয়ে আছে ওরা। দায়দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা। একমাত্র রনি শয়ের মধ্যেই প্রবল উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। আতঙ্কে সারা শরীর শিউরে উঠল কীথের। এদের সঙ্গে জড়িয়ে কী ভুলটাই না করেছে!

পাথরে খুরের ঘষা খাওয়ার শব্দ উঠল। একসঙ্গে ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল সবাই। ঘোড়াটা দেখা গেল না। স্যাডলের সঙ্গে কাপড়ের ঘষা খাওয়ার আওয়াজ ভেসে এল। ঝুনঝুন শোনা গেল স্পরের! আঁধার ফুড়ে সামনে এসে দাঁড়াল অ্যাল্টন বারউইক।

ঝট করে দাঁড়িয়ে পড়ল কর্নেল লরেন কীথ। দ্রুত পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করল। চুপচাপ শুনে, গেল বারউইক, মাঝে মাঝে মাথা দুলিয়ে সায় জানাল। কীথের বক্তব্য শেষ হলে বলল, ডিনামাইট চালাও। সকালে সবার আগে এ কাজটাই সারবে। ব্যস, তা হলেই জীবনের জন্যে মিটে যাবে ঝামেলা।

পকেট থেকে সিগার বের করে কামড়ে গোড়া কাটল বারউইক। আজ একটা টেলিগ্রাম এসেছে। শিগগিরই তদন্ত কমিটি আসছে, হপ্তা দুএকের, মধ্যেই। কিন্তু ততদিনে এই ঘটনার কথা ভুলে যাবে সবাই। অন্য ব্যাপারে ব্যস্ত হয়ে পড়বে।

ঘোড়ার দিকে পা বাড়াল বারউইক, মাঝপথে থেমে ডরনি শর দিকে, তাকিয়ে মাথা দুলিয়ে ডাকল ওকে।

আগুনের পাশ থেকে উঠে দাঁড়াল ডরনি শ, অনুসরণ করল তাকে। মুখ ভেঙচে ওদের দিকে তাকিয়ে রইল লরেন কীথ। এর মানে? ওকে বাদ দিয়ে কোনও ফন্দি আঁটছে না তো ব্যাটারা?

আগুনের নাগালের বাইরে, কেউ ওর কথা শুনবে না এমন দূরত্বে পৌঁছে দাঁড়িয়ে পড়ল বারউইক। ডরনি, শ এগিয়ে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করল। চমৎকার কাজ দেখাচ্ছ তুমি, ডরনি। মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা দুজন হলে আর কাউকে লাগে না।

হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকাল ডরনি। আমিও তাই বলি!

হুম, সিগারেটে টান দিল অ্যাল্টন বারউইক। আমার একজন ভালো সঙ্গী সত্যি দরকার। গুন্টার মারা যাবার পর তার জায়গাটা তো খালি রয়ে গেছে!

তোমাদের কোম্পানিতে, ফিসফিস করে কথা বলছে ডরনি শ, এমনিতেও লোকজন বেশি-মামে পার্টনারের কথা বলছি।

হ্যাঁ, শান্ত কণ্ঠে বলল বারউইক, অন্তত এখনও তাই।

ঠিক আছে। নেড়েচেড়ে পিস্তলজোড়া জায়গামতো বৃসিয়ে নিল ডরনি শ। দুই তিন দিন পর তোমার সঙ্গে দেখা করতে আসব।

ঘুরে হাঁটতে শুরু করল বারউইক। সহজ ভঙ্গিতে স্যাডলে চাপল। যেখানে ছিল সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল শ। অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে আছে। ঘোড়ার খুরের ক্রমশ মিলিয়ে যাওয়া শব্দ কানে আসছে। অদ্ভুত শব্দ-বড়ই অদ্ভুত।

 শিস বাজাতে বাজাতে আগুনের কাছে ফিরে এল ডরনি।

.

ভোরে ফের হামলা চালাল কর্নেল লরেন কীথ। কোম্পানির পক্ষে প্রায় বিশ জন লোক, ডিনামাইটের বাক্স ছিল দুজনের কাছে। এই হামলাতেই চিরদিনের জন্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবার কথা স্কোয়াটারদের।

বারউইক ক্যাম্পে আসার আগে ফেসেনডেনকে নিয়ে রিমের ওপর থেকে খুঁটিয়ে ক্যানিয়ন জরিপ করেছে ডরনি আর লরেন কীথ। যার পর নাই খুশি হয়েছে ওরা। গহ্বরের অবস্থান ফাস হবার পর পরিষ্কার হয়ে গেছে, ওটার মুখ থেকে একসঙ্গে দুজনের বেশি লোক কোনও অবস্থাতেই গুলি ছুড়তে পারবে না; অন্যদিকে আক্রমণকারীরা ছড়ানো ছিটানো বোল্ডারের আড়ালে গা ঢাকা দেয়ার প্রচুর সুযোগ পাবে, অনায়াসে ডিনামাইট ছোড়ার মতো দূরত্বে পৌঁছুনো যাবে। দুএক মুহূর্তের চেয়ে বেশি সময় প্রতিপক্ষের নজরে পড়তে হবে না। মাটির কাছাকাছি থাকায় এবং সামনে বোল্ডারের স্তূপ আছে বলে ওদের গুলির আওতা হবে ক্ষুদ্র।

সুষ্ঠুভাবেই শুরু হলো আক্রমণটা। একসঙ্গে এগিয়ে গেল ওরা। বিদ্যুৎ গতিতে ক্যানিয়নের প্রায় বিশফুট ভেতরে ঢুকে পড়ল। মেসার চূড়া থেকে অতীতে কোনও এক সময় একটা বড়সড় পাথরের টুকরো গড়িয়ে পড়েছিল, এটার সামনে এসে পৌঁছুল। এবং এখানেই সমাপ্তি ঘটল আক্রমণের।

আচমকা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল ওরা। রাইফেলের প্রচণ্ড গুলিবৃষ্টির কবলে পড়ল-পয়েন্ট-ব্ল্যাংক-রেঞ্জ!

লড়াইয়ের বহু কলাকৌশল জানে ক্যাপ্টেন পল কেড্রিক। জানত গম্বরের এই আশ্রয় দীর্ঘকালে মরণফাঁদে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা আছে। তাই নিজেকে কীথের জায়গায় কল্পনা করে বুঝে নিয়েছে সে কী করতে যাচ্ছে। তারপর সাতজন সঙ্গী আর চোদ্দটা রাইফেল নিয়ে ইন্ডিয়ানদের মতো অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়ে বেরিয়ে এসেছে খাদ থেকে। কীথের কল্পনায় আসবে নাএমন একটি জায়গায় ঘাপটি মেরে বসেছে।

গোলাগুলির প্রথম ঝাঁপটাতেই প্রতিপক্ষের পাচজন ইহলোকের মায়া ত্যাগ, করল। নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় ছুটোছুটি শুরু করে দিল গানহ্যান্ডরা। ফলে আরও দুজন প্রাণ হারাল। ভাঙা হাঁটু নিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে কোনওমতে পরিত্যক্ত ক্যাম্পে ফিরে এল একজন। কিন্তু এখানে কাউকে পেল না সে।

ট্যাগার্টের স্ত্রীর হাতে বিপর্যয়ের শুরু-শেষ হলো রাইফেলের প্রচণ্ড গর্জনে।

কোম্পানি-ফাইটাররা ক্যানিয়নের মুখ থেকে প্রায় ছিটকে বেরিয়ে এল, একসঙ্গে ছুট লাগাল যার যার ঘোড়ার দিকে। কীথও আছে এদের সঙ্গে। প্রাণ নিয়ে সরে পড়তে পেরে শোকর করছে। ওকে স্যাডলে উঠে বসতে দেখল উরনি শ। ঘোড়া ঘুরিয়ে পাশে চলে এল। পেছনে, সুশৃঙ্খল সেনাদলের মতো সাবধানে গুলি করতে করতে এগিয়ে এল ক্যানিয়নের স্কোয়াটাররা। একটা ঘোড়াকে লুটিয়ে পড়তে দেখল কীথ। হামাগুড়ি দিয়ে বোল্ডারের আড়ালে আত্মগোপন করল ওটার সওয়ারী, পরক্ষণে লাফিয়ে উঠে খিচে দৌড় দিল। দল ছেড়ে বেরিয়ে এল ডাই রীড়। পিছু নিল তার।

ওরা পালানোর আগে আরও একজনকে হারাতে হলো। ঘোড়া ঘুরিয়ে সঙ্গীদের মুখোমুখি হলো কেড্রিক। সবাই ঘোড়া যোগাড় করো, তাড়াতাড়ি। মেয়েরা এখানে নিরাপদেই থাকবে। একবারেই সব ঝামেলা মিটিয়ে আসি।

ঘুরে দাঁড়াল ব্ৰকাউ। এক লোক এগিয়ে আসছে। ডাই রীড। ওর বাগিয়ে ধরা স্পেন্সার দেখে চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল তার। মনে পড়ল, নিজের রাইফেলটা খালি। পায়ে পায়ে পিছোতে শুরু করল সে। চোখ দুটো আতঙ্কে কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে।

আমার রাইফেলে গুলি নেই, বলল সে, পিস্তলটাও হারিয়ে ফেলেছি!

তা হলে ওটা ফেলে দাও, শান্ত কণ্ঠে বলল ডাই রীড, এরকম কিছুই চাইছিলাম আমি, পিস্তল রাইফেল ধাতে সয় না।

কথাটার মানে না বুঝলেও রাইফেল ফেলে দিল ব্ৰকাউ। বিশাল শরীর তার, পেশীবহুল, শক্তিশালী। বিস্মিত চোখে ডাই রীডকে স্পেন্সর নামিয়ে রাখতে দেখল সে। গানবেল্টও খুলে ফেলল রীড। বাঁকা পায়ে এগিয়ে এল ছোটখাট মানুষটা।

মুহূর্তের জন্যে পলক পড়ল না আউট-লর চোখে। তারপরই ডাই রীডের মোকাবিলা করতে পা বাড়াল। কাছাকাছি হতেই ঘুসি হাঁকাল। পাথরের মতো শক্ত মুষ্টি আঘাত হানল ডাই রীডের চিবুকে। প্রচণ্ড আঘাত নিঃশব্দে হজম করল ডাই রীড, চোখজোড়া একটু পিটপিট করে উঠল কেবল। পরক্ষণে ঝাঁপিয়ে পড়ল ব্ৰকাউয়ের ওপর। প্রথম ঘুসি ব্যর্থ হওয়ায় আতঙ্ক ভর করল ব্ৰকাউয়ের মনে, আরও দুটি ঘুসি হানল সে। নিজেকে বাঁচাতে ব্যর্থ হলো রীড। নীরবে মার খেলো। এইবার ডাই রীড বিশাল দুই হাতে ব্ৰকাউয়ের বাহু খামচে ধরল, হ্যাচকা টানে কাছে নিয়ে এল ওকে।

দুহাতে আউট-লর মাথা ধরল ডাই রীড়, সামনে টানল। ঠকার্স করে বাড়ি খেলো দুটো মাথা! চোখে সর্ষে ফুল দেখল ব্ৰকাউ। নাকের হাড় ভেঙে গুড়ো হয়ে গেল। বুনে বর্বরের মতো ঘুসি হাঁকানোর চেষ্টা করল সে। কিন্তু তার আগেই রীডের দুহাত চেপে বসেছে ওর শ্বাসনালীর ওপর। ব্ৰকাউ নিস্তেজ না হওয়া পর্যন্ত ছাড়ল না রীড়। তারপর ওকে মাটির ওপর শুইয়ে দিল। ঘুরে হাঁটতে শুরু করল এবার। কাছেই একটা ঘোড়া দাঁড়িয়ে আছে, দেখল না। একটা গলা মাস্ট্যাং।

ক্যানিয়ন মুখে বিপত্তির পর ঊর্ধ্বশ্বাসে পালাচ্ছে ওরা। কিন্তু একটা বিশেষ উদ্দেশ্য আছে ল গফের। পোড়খাওয়া মন্টানা গানম্যান গফ মিসেস ট্যাগার্টের চোখে-মুখে সত্যের প্রকৃত রূপ প্রত্যক্ষ করেছে। মহিলা ওকে ওর মায়ের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। মন্ট্যানার একটা জীর্ণ র‍্যাঞ্চে সাত ছেলে আর পাঁচটি মেয়েকে লালনপালন করতে গিয়ে প্রচণ্ড পরিশ্রমের ধকল সইতে পারে নি মহিলা, অকালে বিদায় নিয়েছে পৃথিবী থেকে।

ইয়েলো বাটে মিসেস ট্যাগার্টের বাড়িতে যাচ্ছে লী গফ।

কুটিরের সামনে পৌঁছে ঘোড়া থামাল সে। নামল না। স্যাডলে বসেই মৃদু টোকা দিল দরজায়। খুলে গেল কবাট দুটো, মিসেস ট্যাগার্টের মুখোমুখি হলো সে। কেঁদে কেঁদে চোখ লাল করে ফেলেছে মহিলা। ম্যাম, বলল গফ, আমি খুব তুচ্ছ একজন মানুষ, আমার কথায় হয়তো কিছুই যায় আসে না। কিন্তু এসব আমার আর ভালোগছে না। আমি চলে যাচ্ছি। দয়া করে এই টাকাগুলো রাখবে?

মোটাসোটা এক তোড়া টাকা সসংকোচে মিসেস ট্যাগার্টের দিকে বাড়িয়ে ধরল লী গফ। এক মুহূর্ত ইতস্তত করল মহিলা। তারপর সসম্মানে গ্রহণ করল তোড়াটা। ধন্যবাদ, বাবা। খুব ভালো ছেলে তুমি!

ঘোড়ার পেটে পার ছোয়াল গফ। ঘুরে ভোরের আবছা আলোয় হারিয়ে গেল চ্যাপটা মুখো সোরেলটা নিয়ে। লীগফের লড়াইয়ের সাধ মিটে গেছে। কলরাডো অথবা ইউটাহতে যাচ্ছে সেকিংবা অন্য কোনওখানে মোট কথা দূরে কোথাও।

 ওদিকে মাস্ট্যাংয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ক্যাপ্টেন পল কেড্রিক। ওর সঙ্গে আছে লরেড়ো শ্যাড, পিট লেইন, ডাই রীড, বার্ট উইলিয়ামস এবং আরও কয়েকজন। দল বেঁধে নিঃশব্দে এগিয়ে চলেছে ওরা। স্যাডলফর্কের ওপর রাইফেল ফেলে রেখেছে।

ওদের পশ্চিমে, অন্যদিকে ছোট্ট একটা নাটকের মহড়া চলছে। কেড্রিক যাদের ধাওয়া করছে, ক্যানিয়ন যুদ্ধে পরাজিতদের সবাই ওই দলে নেই। ডরনি শ আর কর্নেল লরেন কীথপশ্চিমে রওনা দিয়েছে। ইতিকর্তব্য স্থির করে ফেলেছে ওরা।

যথেষ্ট ঝামেলা পোহানো গেছে, ভাবছে কীথ, আর নয়। কেউ মানুক আর নাই মানুক শোচনীয় পরাজয় ঘটেছে ওদের। এখন দেশ ছেড়ে পালানো ছাড়া উপায় নেই।

মাস্ট্যাংয়ের হেডকোয়ার্টারে কিছু ক্যাশ টাকা জমা আছে। ওগুলো একবার হাত করতে পারলেই সোজা ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে যাবে ও। তারপর যত ইচ্ছে তদন্ত চালাক র‍্যানসাম। কয়েক বছর পর আবার পুবে ফিরে যাবে। এখানকার ঘটনা সম্পর্কে কেউ প্রশ্ন তুললে জড়িত থাকার কথা সোজাসাপ্টা অস্বীকার করবে। কোম্পানির প্রাথমিক অবস্থায় আইনগত ব্যাপারে সাহায্য করা ছাড়া ওদের সঙ্গে আর কোনও সম্পর্ক ছিল না বললেই হবে।

চেহারা দেখে ডরনি শয়ের মনের কথা বোঝার সাধ্য নেই কারও। অবশ্যই এই মুহূর্তে তেমন কিছু ভাবছে না সে। আসলে চিন্তাভাবনা ওকে দিয়ে হয় না। মদে আসক্তি নেই তার, খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে বাছবিচার করে না। কিন্তু কয়েকটা জিনিসের প্রতি বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে। ভালো ঘোড়ার মালিক হতে তার ভালো লাগে এবং সুন্দ মেয়েদের প্রতিও দারুণভাবে আকৃষ্ট হয়। স্যু লেইনকে ভালো লাগত ওর কাছে। কিন্তু সামান্থা ফক্স ওকে পাগল করে দিয়েছে। ডরনি শ যে বেঁচে আছে মেয়েটা বোধ হয় জানে না। তবে ডরনি শয়ের সবচেয়ে প্রিয় জিনিস আগ্নেয়াস্ত্র। বিপদে কিংবা

লড়াইতে আগ্নেয়াস্ত্রের সাহায্যে নির্বিচারে যন্ত্রের মতো মানুষ হত্যা করতে পাকে আজ পর্যন্ত ওর চেয়ে দক্ষ কোনও পিস্তলবাজের দেখা পায় নি সে। পিস্তল ছাড়া অন্য কিছুর সাহায্যে শত্রুর মোকাবিলা করতে হয় নি-ভবিষ্যতেও করার ইচ্ছে নেই।

দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে ওরা। আরাম করে স্যাডলো বসেছে। কেড্রিক যখন সদলে ইয়েলো বাট থেকে মাস্ট্যাংয়ের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েছে, সেই সময় সল্ট ক্রিক ওঅশের তীরে পৌঁছুল ডরনি শ আর কর্নেল কীথ। জিনের পেটি শক্ত করে বাঁধার জন্যে স্যাডেল থেকে নামল কীথ। সুযোগ পেয়ে পানি খেয়ে নিল ঘোড়াটা। ডরনি শও নামল এবার ঘোড়ার পিঠ থেকে।

অন্যমনস্কভাবে ডরনিকে জিজ্ঞেস করল কীথ, তা ডরনি; খেলা তো শেষ, এবার কোথায় যাবে?

কী জানি, কর্নেল, হালকা সুরে আস্তে করে বলল ডরনি শ, জানি না। তবে তোমার রাস্তা কিন্তু এখানেই শেষ।

কথাটার মানে বুঝতে প্রচুর সময় লাগল কর্নেলের। ঘুরে মুখোমুখি হলো সে ডরনির। বিভ্রান্ত চেহারায় প্রথমে ভয় তারপর আতঙ্কের ছায়া পড়ল। নিতান্ত অবহেলার দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে উরনি শ। ঠোঁটে মুচকি হাসি, চোখে ফাঁকা দৃষ্টি।

ডরনির কথা হৃদয়ঙ্গম করার সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডা হয়ে গেল কীথের শরীর। ওকে হত্যা করতে যাচ্ছে এই লোকটা!

বোকার মতো ডরনির ফাঁদে পা দিয়েছে ও। দল ছেড়ে ওর সঙ্গে আসল কোন বুদ্ধিতে? সুযোগ পেয়েও লোকটাকে খুন করল না কেন? ডরনি শয়ের সঙ্গে পাগলা কুকুরের পার্থক্য নেই। উন্মাদ, বদ্ধ উন্মাদ!

কী আবোলতাবোল বকছ, শ? মিলিটারি কায়দায় প্রশ্ন করল কর্নেল কীথ। ওর বলার ভঙ্গি খেয়ালই করল না ডরনি শ। কীথের বেল্টের বাকলসের ওপর দৃষ্টি স্থির হয়ে আছে তার। কর্নেল, ভাবল সে, ইদানীং বেশ মুটিয়ে গেছে-ছোটখাট একটা ভুড়ি হয়েছে দেখছি। কেন, সহজ কথা, আর কোথাও যাচ্ছ না তুমি, কর্নেল। কিন্তু সেজন্যে আমার মোটেই খারাপ লাগছে না।

বারউইক এসব পছন্দ করবে না। আমাদের দুজনের ওপরই সে নির্ভর করে আছে।

উঁহু। বললো, ছিল। অবস্থা পাল্টে গেছে এখন। কাল ওদিকে, ইয়েলো বাটের দিকে মাথা নেড়ে ইশারা করল ডরনি শ, বারউইক ইঙ্গিত দিয়ে গেছে আমাকে, পার্টনারের সংখ্যা নাকি বেশি হয়ে গেছে ওর। টুপিটা একটু পেছনে ঠেলে দিল সে।

ড্র করতে চাও? লাভ নেই যদিও, তবু চেষ্টা করে দেখতে পারো।

সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে কীথ। শরীরের সব পেশী যেন আড়ষ্ট হয়ে গেছে। নড়তে চাইছে না। অথচ কিছু একটা করা দরকার, এখুনি! অবশেষে কথা বেরোল ওর মুখ দিয়ে, অন্তর থেকে উচ্চারণ করল কীথ, কেড্রিক তোমাকে খুন করবে, উরনি। ও-ই জিততে যাচ্ছে। বারউইক ওর সঙ্গে পারবে না!

হঠাৎ একটা জিনিস মনে পড়ল কীথের। ডরনি শয়ের চেহারায় একটা অস্পষ্ট অভিব্যক্তি। কিন্তু সেটাও তুচ্ছ নয়। ডরনি! মরিয়া কণ্ঠে বলল সে, তোমার পেছনে! সেই গ্রাটা!

শাদা হয়ে গেল ডরনির মুখ। পাঁই করে ঘুরল সে। হিংস্র ভাব তার চোখে। ডরনি, ঘুরতেই বিজয়ানন্দে হাঁপ ছাড়ল কীথ, হাত বাড়াল পিস্তলের দিকে। কিন্তু শয়ের মতো লোকের মুখোমুখি আর কখনও হয় নি সে। পিস্তলের বাট জাপটে ধরেছিল, খাপমুক্তও হয়েছিল ওটা। বিদ্যুৎ চমকের মতো ঘুরে পেছনে কিছু নেই দেখেই চট করে সরে গেল ডরনি শ, চরকির মতো ঘুরল ফের। এক মুহূর্ত আগে ও যেখানে ছিল, সেখান দিয়েই সাঁই করে হারিয়ে গেল কীথের গুলি। পরক্ষণে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে ট্রিগার টিপল উরনি।একবার, দুবার।

দুটো গুলিই কীথের কুঁড়ি ফুটো করে দিল।

ঝপাৎ করে সল্ট ক্রিকের পানিতে পড়ল সে। পিস্তলে গুলি ভরতে ভরতে তার জ্বলজ্বলে দুই চোখের দিকে তাকাল ডরনি শ। কীভাবে জানলে? বিষণ্ণ কণ্ঠে জানতে চাইল, তুমি কীভাবে জানলে?

<

Super User