দিল্লী দখল করিবার পর মুসলমান সুলতানেরা দীর্ঘকাল দাক্ষিণাত্যের দিকে দৃষ্টিক্ষেপ করেন নাই। বিন্ধ্য গিরিমালা এবং নর্মদা নদী যেন প্রাকার-পরিখা রচনা করিয়া তাঁহাদের নিরস্ত করিয়াছিল।

প্রথম প্রাকার-পরিখা লঙ্ঘন করিলেন আলাউদ্দিন খিলজি। তিনি পরে অন্নদাতা পিতৃব্যকে হত্যা করিয়া দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণ করিয়াছিলেন। তাঁহার রণপাণ্ডিত্য ছিল, আর ছিল অনির্বাণ নারীতৃষ্ণা। এই দুই মিলিয়া তাঁহার চরিত্র পিশাচতুল্য করিয়া তুলিয়াছিল। ভারতের অন্ধকার মধ্যযুগেও তাঁহার সমান বিশ্বাসঘাতক নৃশংস ইন্দ্রিয়পরায়ণ সুলতান বোধহয় বেশি ছিল না।

দাক্ষিণাত্যে প্রবেশ করিয়া আলাউদ্দিন বেশিদূর অগ্রসর হন নাই, দেবগিরির রাজ্য ছলনার দ্বারা জয় করিয়া প্রচুর ধনরত্ন লুণ্ঠনপূর্বক স্বরাজ্যে ফিরিয়া গিয়াছিলেন; তারপর পিতৃব্যকে হত্যা করিয়া দিল্লীর সিংহাসনে বসিয়াছিলেন। তাঁহার অন্তঃপুরে সুন্দরী যুবতীর অভাব ছিল না, তবু তিনি গুজরাতের রানী কমলাকে কাড়িয়া আনিয়া নিজের অঙ্কশায়িনী করিয়াছিলেন।

সুন্দরী নারী, রাজরানী হোক বা পথের ভিখারিনী হোক, আলাউদ্দিনের চোখে পড়িলে আর তার নিস্তার নাই। তিনি একবার চিতোরের পদ্মিনীর দিকেও হাত বাড়াইয়াছিলেন, কিন্তু সেই জ্বলন্ত অনলশিখাকে স্পর্শ করিতে পারেন নাই। নারী-বিজয়-ক্ষেত্রে দিল্লীর সুলতান আলাউদ্দিনের ইহাই একমাত্র ব্যর্থতা।

কিন্তু দিল্লী বহুত দূর। দিল্লী হইতে দুই শত ক্রোশ দক্ষিণে বিন্ধ্যগিরির ক্রোড়ে সাতপুরা শৈলমালার জটিল আবর্তের মধ্যে এই কাহিনীর সূত্রপাত।

<

Sharadindu Bandyopadhyay ।। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়