ছেলেটা আসার পর থেকেই যে দাদুর মন খারাপ হয়ে গেছে, সেটা বুঝতে পেরে হাবুলের মনটাও ভাল নেই। বিকেলে ফুটবলের মাঠে সে আজ খুবই খারাপ খেলল। দু দুবার ওপেন নেট পেয়েও গোল করতে পারল না। ভুল পাস করল অজস্র। ড্রিবলিংও খুব খারাপ হল তার।

কোচ দয়ারাম দাস খেলার পর তাকে ডেকে বলল, “আর দু’দিন বাদে প্রভাবতী শিন্ডের সেমিফাইন্যাল। মন দিয়ে না খেললে ফাঁইন্যালে যাওয়ার আশা নেই। যবনপুর খুব শক্ত টিম।”

হাবুল মাথা নিচু করে রইল।

বাড়ি এসে হাতমুখ ধুয়ে ছেলেটার খোঁজ করে জানল, সে বেরিয়ে গেছে।

হাবুল গিয়ে দাদুর কাছে দাঁড়াল। “দাদু, তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব?”

দাদু মধু আর সর দিয়ে মারা স্বর্ণসিন্দুর খাচ্ছিলেন। মুখ তুলে বললেন, “বলো।”

“ছেলেটা কে?” দাদু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, “নিয়তি।”

“নিয়তি! তার মানে?”

“মানে বোঝার মতো বয়স তোমার হয়নি। তবে এ-ছেলেটা আসায় তোমাদের সুখের দিন শেষ হয়ে গেল। দুঃখের জন্য তৈরি হও। তিলে তিলে এতকাল ধরে যা তৈরি করেছিলাম, তার কিছুই বুঝি আর থাকে না।”

হাবুল বেশি কিছু বুঝতে পারল না। তবে তার মনে হচ্ছিল, দাদু যতটা দুঃখ করছেন, তো কিছু সর্বনাশ তাদের হওয়ার কথা নয়। কিন্তু সে মুখে আর কিছু বলল না। হাতমুখ ধুয়ে আত্মিক সেরে পড়তে বসল।

পড়ার ঘরে বসে থেকেই হাবুল টের পেল, তার বাবা-কাকারা একে একে কাজের জায়গা থেকে ফিরে এলেন। কিছুক্ষণ পরেই দাদু তাঁদের নিজের ঘরে ডেকে পাঠালেন।

ব্যাপারটা যে এত গুরুতর হয়ে দাঁড়াচ্ছে, সেটা হাবুলের একদম ভাল লাগছিল না।

আজ পড়ায় হাবুলের মন নেই। বারবার আনমনা হয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর অসহ্য লাগায় সে উঠে পড়ল। তারপর সোজা গিয়ে

ছেলেটার ঘরে হানা দিল।

ছেলেটা ফিরেছে, এবং একটা মাপবার ফিতে দিয়ে খুব মনোযোগ সহকারে জানালা থেকে খাট অবধি কী সব মাপজোখ করছে।

হাবুল বলল, “কী করছেন?”

ছেলেটা তার দিকে চেয়ে ভারী সুন্দর করে হেসে বলল, “রাতের অতিথিদের জন্য তৈরি থাকছি।”

“রাতের অতিথি মানে কি চোর? আমাদের বাড়িতে চোর আসে না। টমি আছে। তা ছাড়া দাদুকে এখানে সবাই খাতির করে আর ভয় পায়।”

ছেলেটা মাথা নেড়ে বলল, “আমি যদি চোর হতাম তবে এসব বাধা আমার কাছে বাধাই হত না।”

হাবুল বিরক্ত হয়ে বলল, “কিন্তু আপনি তো আর চোর নন। এখানকার চোরেরা আমাদের বাড়ি ঢুকবেই না।”

ছেলেটা মৃদু হেসে বলল, “আজ ঢুকতে পারে। এতদিন আসেনি বলেই কি আজ আসবে না? এসো, ভিতরে এসে বোসো। আলাপ করি।”

হাবুল সসঙ্কোচে ভিতরে ঢুকে চেয়ারে বসল। ঘরটা বেশ ঝকঝক করছে এখন।

ছেলেটা বিছানায় তার মুখোমুখি হয়ে বসে বলল, “তোমার নাম যে হাবুল তা জানি। আমার নাম হল গন্ধর্বকুমার। বিচ্ছিরি নাম, না?”

হাবুল হেসে বলল, “একটু পুরনো, কিন্তু বেশ ভারিক্কি।”

“আমাদের পরিবারে ভারিক্কি নাম রাখাটাই চল। তুমি আমাকে গেনুদা বলে ডেকো। আমার ডাকনাম গেনু। গন্ধর্বেরই সংক্ষিপ্ত সংস্করণ।”

ছেলেটাকে হাবুলের বেশ লাগছে। হাসিখুশি, আমুদে, উজ্জ্বল। তবু যে একে কেন দাদুর এত ভয়!

হাবুল বলল, “আচ্ছা, আমার দাদুর সঙ্গে আপনার কিসের সম্পর্ক বলুন তো!”

“আপনি নয়, তুমি। আমাকে তুমি’ বলে ডাকলে খুশি হব।”

“ঠিক আছে। এবার জবাবটা দাও।” গন্ধর্ব একটু অন্যমনস্ক হয়ে জানালার দিকে চেয়ে রইল। তারপর মাথা নেড়ে বলল, “সত্যি বলতে কি, তোমার দাদু যদি নিজে থেকে কিছু না বলেন, তা হলে আমারও জানার সাধ্য নেই তার সঙ্গে আমার কিসের সম্পর্ক বা আমাকে দেখে তিনি এত ঘাবড়েই বা গেছেন কেন।”

“আপনি নিজে কিছু জানেন না?”

গন্ধর্ব মাথা নেড়ে বলল, “তেমন বিশেষ কিছু নয়। তবে এটুকু জানি যে, সঁওতাল পরগনায় আমাদের কিছু জমিজমা ছিল, আর ছিল মস্ত এক কারবার। এখন আর কিছুই নেই। আমি কপর্দকশূন্য। আমার কিছু শত্রুও আছে। সেইসব নানা কারণেই আমাকে দেশ ছাড়তে হয়েছে। শুধু দাদুর মৃত্যু পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলাম। তারপরই বেরিয়ে পড়ি।”

“তোমার দাদু কি আমার দাদুর বন্ধু?”

“তা তোমার দাদুই বলতে পারবেন। আমি কিছুই জানি না। তবে আমার দাদু মারা যাওয়ার আগে আমাকে বলে গিয়েছিলেন যেন অবশ্যই রতন বাড়ুজ্যের সঙ্গে দেখা করি। সেইজন্যই আসা।”

“তোমার বাড়িতে আর কে আছে?”

গন্ধর্ব মাথা নেড়ে মলিন একটু হাসল। তারপর বলল, “কেউ নেই। বছর দশেক আগে আমাদের বাড়িতে একদল লোক চড়াও হয়ে সবাইকে মেরে ফেলে। শুধু দাদু কোনওক্রমে আমাকে নিয়ে পালিয়ে বেঁচে যান। তারপর থেকে আমি আর দাদু কেবল জঙ্গলে-জঙ্গলে ঘুরেছি, গা-গঞ্জে মজুর খেটেছি, ভিক্ষে করেছি। বাড়িতে ফিরে যাওয়ার উপায় ছিল না।”

“কেন, উপায় ছিল না কেন?”

“কিছু লোক আমাদের ভয়ঙ্কর শত্রু। তারা এখনও সেখানে অপেক্ষা করে আছে। ফিরে গেলেই তাদের হাতে মরতে হবে। আমি দাদুকে প্রায়ই বলতাম, চলো দাদু, অন্য কোথাও গিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করি। কিন্তু দাদু সে কথায় আমল দিতেন না। দাদুর খুব ইচ্ছে ছিল নিজেদের বিষয়সম্পত্তি আবার উদ্ধার করবে। কিন্তু সেটা বোধহয় আর সম্ভব নয়।”

গন্ধর্বের কথা শুনে হাবুলের খুব কষ্ট হচ্ছিল। চোখ ছলছল করছিল তার। সে বলল, “তুমি খুব কষ্ট করেছ গেনুদা।”

“কষ্ট বলে কষ্ট! সাঙ্ঘাতিক কষ্ট। প্রত্যেকটা দিনই ছিল বেঁচে থাকার লড়াই। তবে সে-জীবনেরও একটা আনন্দ আছে। শিকার করে বা বনের ফলপাকুড় পেড়ে আমাদের খাওয়া চলত। গাছের ডালে বা মাটিতে শুয়ে কত রাত কেটে গেছে। সে-জীবন কীরকম তা তুমি ভাবতেও পারবে না। ভিক্ষে করতে যখন লোকালয়ে আসতাম তখন কষ্ট হত সবচেয়ে বেশি। আমাদের একসময়ে রাজার মতো সম্মান ছিল। তাই হাত পাততে ভীষণ লজ্জা করত। কিন্তু বেঁচে থাকতে গেলে তো সবই করতে হয়। আবার এরকম কষ্ট করে করে আমি শিখেছিও অনেক।”

হাবুল সম্মোহিতের মতো একদৃষ্টে গন্ধর্বের মুখের দিকে চেয়ে ছিল। কী সুন্দর মুখ, কী সরল চোখের দৃষ্টি। এই লোকটাকে দাদু কেন ভয় পাচ্ছে তা কিছুতেই তার মাথায় ঢুকছিল না। ভয় নয়, গন্ধর্বকে দেখে মায়া হওয়াই তো স্বাভাবিক।

গন্ধর্ব অন্যমনস্কের মতো জানালার বাইরে অন্ধকারের দিকে চেয়ে ছিল।

হাবুলের গলা ধরে আসছিল, অস্ফুট গলায় বলল, “আমাদের কাছে থাকো না গেনুদা! তোমার কোনও কষ্ট থাকবে না। আমার তো দাদা নেই, তোমাকে দাদা বলে ডাকব।”

গন্ধর্ব একটু অবাক হয়ে হাবুলের দিকে চাইল, তারপর সুন্দর করে হেসে বলল, “আমাকে তো তুমি ভাল করে চেনোও না এখনও।”

হাবুল জোরের গলায় বলল, “আমি জানি তুমি ভাল ছেলে।”

গন্ধর্ব মাথা নেড়ে বলল, “আমার তো কেউ নেই, তাই তোমাদের মতো একটা পরিবারে নিজের জনের মতো থাকতে পারলে ভালই হত। কিন্তু তা হওয়ার নয়।”

“কেন নয় গেনুদা?”

“আমার অনেক কাজ বাকি পড়ে আছে। পরে শুনবে।” হাবুল উঠল। বলল, “আমি পড়তে যাচ্ছি। কাল তোমার গল্প শুনব।”

গন্ধর্ব ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ কিছু বলল না। একটু হাসল মাত্র।

পড়ায় একদম মন লাগছিল না হাবুলের। দাদুর ঘরে বন্ধ দরজার পিছনে কী নিয়ে কথা হচ্ছে তা বারবার আন্দাজ করার চেষ্টা করছিল সে।

অবশেষে রাত দশটা নাগাদ দরজা খুলে সকলে বেরিয়ে এল। প্রত্যেকের মুখই গম্ভীর এবং থমথমে। চুপচাপ যে যার ঘরে চলে গেল।

রাতে সকলেই একসঙ্গে খেতে বসল বটে, কিন্তু কেউ কারও সঙ্গে ভাল করে কথা বলছিল না। গন্ধর্বকে শুধু ভদ্রতাসূচক দু একটা কথা বলা হল।

খাওয়ার পর হাবুলের ছোটকাকা বিরু এসে হাবুলের ঘরে ঢুকল। বিছানায় শুয়ে পায়ের ওপর পা তুলে হাঁটু নাচাতে নাচাতে বলল, “সব শুনেছিস?”

ছোটকাকা যেমন সাহসী, তেমনি আমুদে। ছোটকাকাকে হাবুল খুব ভালবাসে। সে বলল, “কিছু শুনিনি তেমন, কী হয়েছে ছোটকা?”

“কেস খুব খারাপ। আমাদের যা কিছু সম্পত্তি-টম্পত্তি আছে, সব নাকি ওই ছোঁকরার। বাবাকে নাকি ওর দাদু মেলা বিষয়সম্পত্তি দিয়েছিলেন। কথা ছিল তার নাতি কোনওদিন ফিরে এলে সব ফিরিয়ে দিতে হবে। সেই নাতি হান্ড্রেড পারসেন্ট হাজির।”

হাবুল হঠাৎ একটু রেগে গিয়ে বলে, “এই লোকটাই যে রামদুলালের নাতি, তার কোনও প্রমাণ আছে!”

বিরু ঠ্যাং নাচাতে নাচাতেই বলল, “আছে, একটা আংটি আর একটা চিঠি।”

“আর দাদু যদি সম্পত্তি ফিরিয়ে না দেয়?”

বিরু একবার হাবুলের দিকে তাকিয়ে নিল। তারপর একটা হাই তুলে

বলল, “বাবা সেরকম লোক নয়। রামদুলালের নাতি না এলে.সম্পত্তি দিতে হত না, কিন্তু এসে যখন পড়েছে, তখন উপায় নেই। আজ বৈশাখী অমাবস্যা। আজ রাতেই শ্বেত আর লোহিত নামে দুটো লোক আসবে। তারা রামদুলালের বিশ্বস্ত দুই প্রজা। তারা নাকি প্রত্যেক বৈশাখী অমাবস্যায় এসে দেখে যায় রামদুলালের নাতি, এল কি না। আমি অবশ্য কোনওদিন শ্বেত আর লোহিতকে দেখিনি। তুই দেখেছিস?”

হাবুল ভ্রূ কুঁচকে একটু ভাবল। তারপর বলল, “দেখেছি দু’জন ঠিক একরকম দেখতে। খুব স্ট্রং চেহারা, তবে বুড়ো। একজন ফর্সা, একজন কালো।”

“তা হলে ঠিকই দেখেছিস। তারা যমজ ভাই। তাদের ওপর হুকুম আছে সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়া না হলে তারা বাবাকে খুন করবে।”

“ইশ, খুন করা অত সোজা?” হাবুল ফোঁস করে উঠল।

বিরু ঠ্যাং নাচানো বন্ধ করে বলল, “খুন করা যে সোজা নয়, তা ওরাও জানে, আমরাও জানি, ওরা এও জানে যে, খুন করার দরকারও হবে না। বাবা সবই ফিরিয়ে দেবে। তবে শ্বেত আর লোহিতকে আণ্ডারএস্টিমেট করাও ঠিক নয়। তারা এক সময়ে রামদুলালের লেঠেল ছিল। বিস্তর খুনখারাপি করেছে।”

“আমি দুই ঘুষিতে দু’জনকে…।”

“থাক থাক, আর বীরত্বে কাজ নেই। সম্পত্তি যখন ফিরিয়েই দেওয়া হচ্ছে তখন আর চিন্তা কী?”

হাবুল হঠাৎ কাকার দিকে তাকিয়ে বলল, “তা হলে সবাই চিন্তা করছে কেন?”

বিরু ঠ্যাং নাচাতে নাচাতে ছাদের দিকে চেয়ে কী যেন ভাবছিল। একটা শ্বাস ফেলে বলল, “ভাববার কারণ আছে।”

“কী কারণ?”

“বাবার কাছে রামদুলালের একটা আংটি ছিল। দামি হিরের আংটি, দেড় দু’লাখ টাকা দাম। ঠিক আংটি বললেও ভুল হবে, ওটা একটা রাজকীয় অভিজ্ঞান। গন্ধর্বর আঙুলেও ঠিক ওরকম একটা আছে। প্রতিবার বাবাকে শ্বেত আর লোহিত এলে সেই আংটি দেখাতে হয়। গতবারও দেখিয়েছে। আজ বৈশাখী অমাবস্যা বলে দুপুরবেলা নাকি আংটিটা বের করতে গিয়েছিল বাবা। দেখে, আংটি চুরি গেছে।”

হাবুল চমকে উঠে বলল, “চুরি! এবাড়ি থেকে?”

“সেইটেই তো আশ্চর্যের বিষয়। বাবা নিজে দারুণ সাবধানী, তার ওপর এতগুলো লোক আমরা রয়েছি বাড়িতে, জিমি আছে, চুরি গেল কী করে সেটাই রহস্য।”

“দাদু কী বলল?”

“কী করে চুরি গেল তা বাবা কিছুতেই বুঝতে পারছে না। আংটিটা ছিল লোহার আলমারির মধ্যে, চাবি বাবার কাছে থাকে। ত্রিবেলা বালিশের নীচে চাবির গোছা নিয়ে শুয়ে থাকে। তবু চুরি গেছে।”

“তোমরা পুলিশ ডাকবে না ছোটকা?”

“সে তো নিশ্চয়ই। কিন্তু আজ রাতে শ্বেত আর লোহিত এলে তো সেই আংটি দেখানো যাবে না।”

“আজই দেখাতে হবে? দুদিন সময় নিলে হয় না?” বিরু মাথা নেড়ে বলল, “না, শ্বেত আর লোহিত প্রিমিটিভ ওয়ার্ল্ডের লোক। কতগুলো অন্ধ কুসংস্কার মেনে চলে। বৈশাখী অমাবস্যার রাত ছাড়া ওই আংটির দিকে যে তাকাবে, সে-ই নাকি অন্ধ হয়ে যাবে। অবশ্য রামদুলালের বংশধররা ছাড়া।”

“যাঃ, যত সব গুলগল্প।”

বিরু হাসছিল। ঠ্যাং নাচানো অব্যাহত রেখে বলল, “তা হবে, কিন্তু আমার বাবাও সেই গুলগল্প বিশ্বাস করে। বাবাও বৈশাখী অমাবস্যা ছাড়া ওই আংটির দিকে কখনও তাকায়নি। প্রবলেম হল, শ্বেত আর লোহিতকে যদি আংটি না দেখানো যায়, তবে তারা খুব ঠাণ্ডা মাথায় বাবাকে খুন করার প্ল্যান নেবে।”

“নিক না। আমরাও পুলিশে খবর দিচ্ছি।”

বিরু একটু ম্লান হেসে ধমক দিল, “দূর বোকা! খুনের ভয়টাই কি একমাত্র ভয়? আংটি চুরি যাওয়াটা লজ্জার ব্যাপার না? বিশেষ করে আজই যখন রামদুলালের নাতি তার বিষয়সম্পত্তি দাবি করতে এসেছে, ঠিক সেদিনই আংটিটা খুঁজে না-পাওয়া একটা বিশ্রী অস্বস্তির কারণ। বাবা ভীষণ ভেঙে পড়েছে।”

“গন্ধর্ব চুরির কথা জানে?”

বিরু মাথা নেড়ে বলল, “গন্ধর্ব কিছুই জানে না।”

হাবুল গম্ভীর হয়ে বলল, “গন্ধর্বদা খুব ভাল লোক।”

“হ্যাঁ, আমার সঙ্গেও আলাপ হয়েছে। বেশ ছেলে, চালাক চতুর। তোর মতো হাবা নয়।”

“গন্ধর্বদা খুব কষ্ট পেয়ে এতদূর এসেছে।”

বিরু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “আর একটু কষ্ট করে যদি আজকের বৈশাখী অমাবস্যাটা পার করে আসত, তা হলে আর কোনও ঝামেলা থাকত না।”

“কেন, ঝামেলা থাকত না কেন?”

“বাবার সঙ্গে নাকি রামদুলালের শর্ত ছিল আজকের বৈশাখী অমাবস্যা পার হয়ে গেলে এবং তার নাতি না এলে বিষয়সম্পত্তি চিরকালের মতো বাবার হয়ে যাবে। আর কোনও দায় থাকবে না। শ্বেত আর লোহিতও আর আসবে না।”

“ইশ! সত্যি?”

“বাবা তো তাই বলল, সবই প্রিমিটিভ আমলের ব্যাপার-স্যাপার।” বলে বিরু খানিকটা আনমনা হয়ে রইল। তারপর বলল, “কিন্তু আংটিটাই ঝামেলা পাকিয়েছে। ওই পয়মন্ত আংটির দামটাও বিশ্রীরকম বেশি, তার ওপর ওটা নিয়ে নানা কিংবদন্তী আছে, মেটেরিয়াল ভ্যালুর চেয়েও কিংবদন্তীর ভ্যালু অনেক হাই।”

হাবুল দাদুর জন্য চিন্তিত হয়ে পড়ল। বলল, “আংটিটা কীভাবে চুরি গেল তা তুমি ভেবে পাচ্ছ?”

বিরু মাথা নেড়ে বলল, “না। চোর কোনও প্রমাণ রেখে যায়নি। তবে বাবা বলল, দুতিন দিন আগে এক সকালে উঠে বাবা ঘরের দরজা খোলা দেখেছে। বাবার ঘরে পাঁচুদাও শোয়। দু’জনের কারওই ভাল ঘুম হয় না, বারবার ওঠে। ফলে দু’জনেরই কেউ হয়তো একবার দরজা ঠিকমতো লাগাতে ভুলে গেছে। এই ভেবে বাবা আর বেশি উচ্চবাচ্য করেনি।”

“তোমার কাউকে সন্দেহ হয় না ছোটকা?”

“না, সন্দেহের স্টেজ এখনও আসেনি। এখন বিস্ময়ের স্টেজ চলছে। বিস্ময় কাটলে সন্দেহ শুরু হবে।”

বিরু শুয়ে-শুয়ে ঠ্যাং নাচাতে লাগল।

“তা হলে কী হবে ছোটকা?”

বিরু খুব চিন্তিত মুখে বলল, “একটা আইডিয়া মাথায় এসেছে। তবে তাতে কতদূর কাজ হবে তা জানি না।”

“কী আইডিয়া?”

“শ্বেত আর লোহিতকে যদি আজ রাতের মতো এবাড়িতে ঢোকা থেকে ঠেকিয়ে রাখা যায়, তা হলে অনেক দিক সামাল দেওয়া বাবে।”

হাবুল উজ্জ্বল হয়ে বলল, “খুব ভাল আইডিয়া ছোটকা।”

বিরু আনমনে ভাবতে-ভাবতে বলল, “আইডিয়া তো ভাল, কিন্তু ঠেকানো যাবে কী ভাবে, সেটাই তো ভেবে পাচ্ছি না। কোন্ দিক দিয়ে তারা আসবে, তা জানা নেই, তাদের চেহারা জানি না, কেমন স্বভাবের লোক তাও জানি না, ঠেকাব বললেই কি ঠেকানো যায়?

হাবুল সোৎসাহে বলল, “আমি তাদের চিনি। চলো, ঠিক খুঁজে বের করে ফেলব।”

“তারপর কী করবি?”

“রাস্তায় ল্যাং মেরে ফেলে দেব।”

বিরু এই বিপদের মধ্যেও হোহোহা করে হেসে উঠল। তারপর বলল, “ল্যাং মেরে ফেলে দিলে কি তারা ছেড়ে দেবে?”

“না, ঝগড়া করবে। আমিও ঝগড়া করব। করতে করতে রাত কেটে যাবে।”

বিরু আবার হেসে উঠে বলল, “তুই চাইলেও তারা সারা রাত ঝগড়া করতে চাইবে কেন? কাজের লোকেরা ঝগড়া-টগড়া করতে ভালবাসে না।”

“ল্যাংটা একটু জোরে মারলে পা মচকে গিয়ে যদি…”

ঠিক এই সময়ে দরজায় পাঁচু এসে দাঁড়াল। চোখ দুটো ধকধক করে জ্বলছে, মুখে ফেটে পড়ছে চাপা রাগ। গলায় একটা ব্যাঘ্রগর্জনের মৃদু নমুনা তুলে বলল, “কী শলাপরামর্শ হচ্ছে তোমাদের তখন থেকে? বাতি নিবিয়ে শুয়ে পড়ো না।”

পাঁচুর মুখে-চোখে রাগ থাকলেও ধমকের তেমন তেজ নেই। শুয়ে পড়তে বলছে বটে কিন্তু সেটা চাইছে না।

হাবুল গিয়ে পাঁচুর হাত ধরে ঘরে টেনে এনে বলল, “পাঁচুদা, তুমি শ্বেত আর লোহিতকে চেনো?”

পাঁচু মেঝের ওপর হাঁটু মুড়ে বসে ক্লান্তির একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “খুব চিনি। তাদের কাণ্ডকীর্তির কথাও মেলা জানি। রামদুলালের বাড়ির মাটির তলার চোর-কুঠুরিতে এখনও শয়ে শয়ে মানুষের কন্স পাওয়া যাবে।”

পাঁচু কাঁধের গামছায় ঘামে ভেজা মুখ মুছে একটু দম নিয়ে বলল, “বাইরে থেকে তোমাদের কথা সব শুনেছি। শ্বেত আর লোহিতকে ঠেকানোর বুদ্ধিটা ভাল। রাত কেটে গেলে তারা কাল সকালে আর আংটি দেখতে চাইবে না। কিন্তু তাদের ঠেকানো বড় সহজ কাজ নয়। আমার তো ইচ্ছে ছিল দুটোকেই বল্লমে গেঁথে নিকেশ করে দিই। ফাঁসি হলে আমার হবে। কিন্তু কতামশাই সেকথায় চটে যান।”

বিরু সোজা হয়ে বসে বলল, “ঘটনাটা কী, একটু বলবে পাঁচুদা?”

পাঁচু মাথা নেড়ে বলল, “সে সাতকাহন গল্প। কতামশাই যখন দেশ ছেড়ে পশ্চিমে রওনা হন, তখন দেশে ঘোর আকাল। ট্রেনে চেপে যেতে-যেতে ভোরবেলা একটা জায়গায় গাড়ি থামতেই কতামশাই লটবহর নিয়ে নেমে পড়লেন। মনে-মনে নাকি সংকল্পই ছিল যেখানে ভোর হবে সেখানেই নেমে পড়বেন। তা জায়গাটা খুব খারাপও ছিল না। দু’চারদিন ঘোরাঘুরি করে একদিন এক মুদির দোকানে খবর পেলেন, কয়েক মাইল দূরে পাহাড়ে ঘেরা একটা আজব জায়গা আছে, সেখানে কাজ মিলতে পারে।”

বিরু বলল, “এ গল্প তো আমরা জানি। জায়গাটার নাম লক্ষ্মণগড়।”

“জানো, কিন্তু সবটা জানো না। লক্ষ্মণগড়ে রামদুলাল রায় রাজত্ব করত বটে, কিন্তু নামে মাত্র। জমিদার ঘোট, প্রজা মাত্র কয়েক ঘর। তার ওপর সাত শরিকে ঝগড়া। বড় তরফ রামদুলাল কতামশাইকে কাজ দেন। বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েকে পড়ানোর কাজ। সামান্য বেতন। কষ্টেসৃষ্টে কামশাইয়ের চলে যেত। তবে একথা সত্যি যে, কয়েক বছরের মধ্যেই কতামশাই রামদুলালের খুব বিশ্বাসী লোক হয়ে উঠেছিলেন। সবাই জানত কতামশাই এক কথার মানুষ। সত্যবাদী, চালচলনে সংযত। এই সময়ে রাজবাড়ির বুড়ো-পুরুত মারা যাওয়ায় কতামশাইকে রামদুলাল পুরোহিতের কাজটাও দেন। তা বিশালাক্ষীর মন্দিরটা ছিল বহু পুরনো, অনেকদিন কোনও সংস্কার হয়নি। রামদুলালের এমন টাকা নেই যে, মন্দির সারাই করে। কামশাই তাই একদিন নিজের হাতেই মন্দির সংস্কার করতে লেগে গেলেন। আর সেই ঘটনাতেই যত বিপত্তি। সে-গল্প জানো?”

বিরু মাথা নেড়ে বলল, “না, শুনিনি।”

হাবুল নড়েচড়ে বসল।

পাঁচু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “অত্যন্ত গোপন কথা। এতকাল কাউকে বলার হুকুম ছিল না। আজ বিপদের দিনে বলছি। সেও এক বৈশাখী অমাবস্যার দিন। কতামশাই বিকেলে একটা শাবল দিয়ে বিগ্রহের সিংহাসনের তলায় জমা শ্যাওলা চেঁছে পরিষ্কার করছিলেন। সিংহাসনটা হঠাৎ ঢকঢক করে নড়ে উঠল। তলায় মেঝের ওপর দেখা গেল একটা চৌকোনা ফাটল। কামশাই প্রথমটা ঘাবড়ে গেলেও কাউকে কিছু বললেন না। গভীর রাতে মন্দিরে ঢুকে ফের সেই আড়াইমন ভারী সিংহাসন টেনে সরিয়ে শাবলের চাড় দিয়ে চৌকোনা জায়গাটা ফাঁক করলেন। কাজটা বলতে যত সহজ, কাজে ততটা ছিল না। ভারী পাথরের সেই চাংড়া তুলতে হাতি লাগে।”

হাবুল হঠাৎ জিজ্ঞেস করল, “তুমি তখন কোথায় ছিলে?”

পাঁচু সামান্য একটু হাসল। বলল, “কতামশাইয়ের সঙ্গেই। দুজনে মিলেই ওই কাণ্ড করি। পাথর সরাতেই দেখি নীচে গর্ত। প্রায় সাত হাত গভীর কুয়োর মতো। সেই গর্তের মধ্যে দুটো পেতলের বাক্স। কুলুপ আঁটা। আমরা দুজনেই বুঝতে পারলুম যে, এ হল গুপ্তধন। ইচ্ছে করলেই আমরা সেই দুটো বাক্স রাতারাতি সরিয়ে ফেলতে পারতুম, রামদুলাল টেরও পেত না। গর্ত চাপা দিয়ে সিংহাসনটা জায়গামতো বসিয়ে দিলেই হল। কিন্তু কতামশাই তা হতে দিলেন কই? পরদিন সকালে রামদুলালকে চুপি-চুপি খবরটা দিলেন। সেই থেকে রামদুলালের অবস্থা ফিরে গেল।”

হাবুল বলল, “তোমাদের কিছু দিল না?”

পাঁচু মাথা নেড়ে বলল, “দিয়েছিল, সামান্য কিছু বখশিশ। যা পেয়েছিল, তার তুলনায় কিছুই নয়। সোনাদানা মোহর হিরে জহরত মিলিয়ে সে কোটি টাকা হবে। টাকা পেয়েই বাবুয়ানির মাত্রা বাড়িয়ে দিল রামদুলাল। ঘনঘন ভোজ দিতে লাগল, বাড়ির ভোল পাল্টাল, নতুন গাড়ি কিনল। আর তাই দেখেই শরিকদের মধ্যে গুজগুজ ফুসফুস শুরু হয়ে গেল। লোক তারা বড় ভালও ছিল না। শচীদুলাল ছিল সাক্ষাৎ ডাকাত। যেমন, রাগী, তেমনি নির্দয়। রামদুলাল যে বিশালাক্ষী মন্দিরে বংশগত গুপ্তধন পেয়েছে, একথাটাও চাউর হতে বিশেষ দেরি হয়নি। আমার মনে হয় আহ্লাদে বেহেড হয়ে রামদুলাল নিজেই সেকথা কবুল করেছিল। ফলে শরিকরা দাবি করতে লাগল, গুপ্তধন একা রামদুলালের নয়, ওতে তাদেরও ভাগ আছে। ফলে লেগে গেল বখেরা। ঝগড়া কাজিয়ায় লক্ষ্মণগড় তখন গরম। সেই গরমের মধ্যেই একদিন আর-পাঁচজন শরিকের লোজন নিয়ে শচীদুলাল চড়াও হল রামদুলালের ওপর। রক্তগঙ্গা বয়ে গেল।”

“কেউ বাঁচেনি?”

পাঁচু ফের গামছায় মুখ মুছে বলল, “কতামশাই বুদ্ধিমান লোক। কিছু একটা ঘটবে আঁচ করে নিজের পরিবারকে আগেভাগেই দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। শুধু আমি তাঁর সঙ্গে ছিলাম। রামদুলাল তাড়া খেয়ে শুধুমাত্র একটা নাতিকে কোলে নিয়ে পালাতে পেরেছিল।” হাবুল বলল, “তা হলে দাদুকে সম্পত্তি দিয়েছিল কখন?”

পাঁচু গামছা ঘুরিয়ে হাওয়া খেতে-খেতে বলল, “কতামশাইয়ের মত বিশ্বাসী লোক যে হয় না, তা রামদুলালের চেয়ে ভাল আর কে জানে? একটা পেতলের বাক্স সে কতামশাইয়ের কাছে আগেই গচ্ছিত রেখেছিল। তখনই ওই শর্ত করে রাখে। তবে শর্ত এও ছিল, পঁচিশ বছরের মধ্যেও যদি তার নাতি গিয়ে সম্পত্তি দাবি না করে তবে তা তোমার দাদুর হয়ে যাবে। যখন এই শর্ত হয়, তখন সাক্ষী ছিলুম আমি আর শ্বেত লোহিত নামে দুই যমজ ভাই। রামদুলালও আন্দাজ করেছিল, শরিকরা একদিন চড়াও হতে পারে, তাই আগেভাগেই নিজের ভবিষ্যৎ গোছাতে ওই বাক্সটা কতামশাইয়ের কাছে চালান দেয়। হিরের আংটিটা ছিল ওই বাক্সের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস। একটা ভূর্জপত্রে লেখা ছিল : এই অভিজ্ঞান যেন কখনওই পরহস্তে না যায়। যদি যায়, তা হলে বংশের বাইরের কেউ যেন একমাত্র বৈশাখী অমাবস্যার রাত ছাড়া এই আংটির দিকে না তাকায়। তাকালে সে অন্ধ হয়ে যাবে। অন্য বাজতেও ঠিক ওই রকম একটা আংটি ছিল, যা এখন গন্ধর্বর হাতে রয়েছে।”

হাবুল জিজ্ঞেস করল, “গন্ধর্বদার আংটির দিকে তাকালেও কি চোখ অন্ধ হয়ে যাবে আমাদের?”

পাঁচু মাথা নেড়ে বলল, “না। ওই বংশের কারও হাতে থাকলে আর ভয় নেই।”

বিরু মৃদু হেসে বলল, “এসব কিংবদন্তী হল ফর সিকিউরিটিজ শেক। যাতে কেউ আংটি চুরি করতে সাহস না পায়।” হাবুল বলল, “তারপর কী হয়েছিল জানো?”

পাঁচু মাথা নেড়ে বলল, “রামদুলাল আর তার নাতির কী হয়েছিল তা আর জানি না। লোকটা বড় জেদি আর একগুঁয়ে। রাজবংশের ধাত যাবে কোথায়। কতামশাইয়ের কাছে এলে রাজার হালে থাকতে পারত। কিন্তু তা সে করেনি। রাজ্যোদ্ধারের চেষ্টাতেই নাকি জীবনটা দিয়েছে। আর কতামশাইয়ের কথা তো জানোই। সেই পেতলের বাক্সের ধনসম্পত্তি দিয়ে এখানে জোতজমা করেছেন। নানা কারবারেও তাঁর মেলা টাকা খাটছে। কিন্তু সর্বদাই তিনি জানেন যে, এসব কিছুই তাঁর নয়। সেইজন্যেই তোমাদের কখনও বাবুয়ানা করতে দেন না, সর্বদা স্বাবলম্বী হতে শেখান।”

হাবুল বলল, “শ্বেত আর লোহিতের কথা কিছু বললে না?”

পাঁচু মাথা নাড়ল, “বলে লাভ নেই। তারা ঠিকই আসবে। কতামশাইকে তারা কোনওদিনই পছন্দ করত না। তবে এটা ঠিক, তাদের মতো বিশ্বাসী লোক হয় না। রামদুলাল বা নাতির জন্য তারা জান দিতে পারে। বুড়ো হয়েছে বলে দুর্বল ভেবো না। বুড়ো হাড়েও অনেক ভেলকি দেখাতে পারে। আজকের রাতটা কেটে গেলে তাদের জারিজুরি শেষ, এটা তারাও জানে। কাজেই আজ রাতে তারা আসবেই। হয়তো সহজপথে না এসে বাঁধা পথ নেবে। দু’জনেই অতিশয় ধূর্ত। সুতরাং ল্যাং মেরে ফেলে দেওয়ার আশা ছাড়ো। অত সহজ কাজ নয়।”

বিরু নড়েচড়ে বসে বলল, “তা হলে কী করা যায় বলো তো!”

পাঁচু কিছুক্ষণ ঝিম মেরে থেকে বলল, “কিছু একটা করতেই হবে। চুপচাপ বসে থাকলে তো চলবে না। আংটিচোর যেই হোক, সেও অতি পাকা লোক।”

হাবুল একটু উত্তেজিত গলায় বলল, “আংটি দেখাতে না পারলে ওরা দাদুকে মেরে ফেলবে কেন?”

পাঁচু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “সেই রকমই কথা হয়েছিল। আংটি হারালে রামদুলালের বংশ লোপাট হয়ে যাবে। আপকালে অন্যের কাছে গচ্ছিত রাখা চলে, কিন্তু চুরি গেলে বা হারালে চলবে না। পাছে লোভে বা অভাবে পড়ে কতামশাই আংটি বেচে দেন বা হারিয়ে ফেলেন, সেই ভয়েই ওরকমধারা শর্ত করা হয়েছিল। তবে,বাপু,খুনখারাপির কথা রামদুলালের মাথায় আসেনি, সে কতামশাইকে বাস্তবিকই বিশ্বাস করুত। খুনের কথা তোলে ওই শ্বেত আর লোহিত। আজ তারা বগল বাজাবে।”

<

Shirshendu Mukhopadhyay ।। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়