০২.

যিশুখ্রিষ্টের জন্মের ১৬০০ বছর আগে শ্রীলংকার নৃপতি ছিলেন রাজা কাশ্যপ।

কাশ্যপ ছিলেন মহা ভীতুদের একজন। সর্বক্ষণ আতঙ্কে থাকেন কখন জলদস্যুরা আক্রমণ করে। কখনবা ভারত থেকে সৈন্যবাহিনী এসে তার দেশ দখল করে।

তাঁর আসল ভয় সৎভাই ম্যাগলোনাকে। সে ঘোট পাকাচ্ছে কাশ্যপের রাজত্ব দখলের। প্রজারা আবার ম্যাগলোনার অনুগত, কারণ মহারাজা কাশ্যপ রক্ষিতার গর্ভে জন্মেছেন। অন্যদিকে তার সৎভাইয়ের গায়ে আছে রাজরক্ত। প্রজারা রাজরক্তের ভক্ত হয়ে থাকে।

একজন ভীতু মহারাজা কী করেন? বিশাল সৈন্যবাহিনী হাতের কাছে মজুদ রাখেন। কাশ্যপও তাই করেছেন। তাঁর বিশাল সেনাবাহিনী। সবাই হাতিতে চড়ে যুদ্ধে পারদর্শী। শ্রীলংকা হাতির দেশ। রাজা কাশ্যপের আছে দশ হাজার হাতির বিশাল বাহিনী।

একজন ভীতু রাজা তার প্রাসাদ এমন এক জায়গায় নির্মাণ করেন, যেখানে প্রবেশ করা দুঃসাধ্য ব্যাপার। রাজা কাশ্যপ তা-ই করেছেন। ছয়শত ফুট উঁচু এক পাথর কেটে দুর্ভেদ্য প্রাসাদ বানিয়েছেন। প্রাসাদ অনেকটা মৌচাকের চাকের মতো। এই পাথর ‘সিগিরিয়া রক’ নামে ভুবন বিখ্যাত। সিগিরিয়া রকের আরেক নাম ‘লায়ন রক’। পাথরের এই দুর্গের প্রবেশপথটি একটি বিশাল সিংহমূর্তির মতো। সিংহমূর্তির অনেকখানি এখনো টিকে আছে।

ভীতু রাজারা লুকিয়ে থাকতে পছন্দ করেন। সেই কারণেই কাশ্যপের বেশিরভাগ সময় কাটে দুর্ভেদ্য পাথরের প্রাসাদে। সেখানে আমোদপ্রমোদের সব ব্যবস্থা আছে। তার রক্ষিতার সংখ্যা পাঁচ শ’র বেশি। তার রক্ষিতা হিসেবে আফ্রিকান মোটা ঠোঁট কোঁকড়ানো চুলের মেয়ে যেমন আছে, চাপা নাক চেরাচক্ষুর চৈনিক তরুণীও আছে।

তাঁর নির্দেশে এই পাঁচ শ’ তরুণীর নগ্ন এবং অর্ধনগ্ন চিত্র আঁকা হয়েছে পাহাড়ের গুহায়। এইসব দেয়ালচিত্রের সামনেই গ্রানাইট পাথরের দেয়াল। গ্রানাইট পাথর ঘষে এমন চকচকে করা হয়েছে যে, সেটা হয়ে দাঁড়িয়েছে আয়না। এই আয়নায় দেয়ালচিত্রে আঁকা রক্ষিতাদের ছবি প্রতিফলিত হয়। রাজা কাশ্যপ প্রতি বিকেলে আয়নায় রক্ষিতাদের ছবি দেখে ঠিক করেন আজ রাত কার সাথে কাটাবেন।

পাথরের সুউচ্চ প্রাসাদে কাশ্যপ সুইমিং পুলের ব্যবস্থা করেছেন (আজও টিকে আছে)। সখীদের নিয়ে আনন্দ-স্নানের আয়োজন।

ব্রিটিশ এক ইতিহাসবিদ ভিন্ন কথা বলছেন। তার মতে তরুণীরা সবাই একদিকে যাচ্ছে। কারও কারও হাতে ফুল। তারা যেদিকে যাচ্ছে সেদিকে বৌদ্ধ বিহার পিদুরাগালা, সিগিরিয়া থেকে এক মাইল দূরে। কাজেই তরুণীরা যাচ্ছে বৌদ্ধ বিহারে গৌতম বুদ্ধের মূর্তির কাছে।

ইতিহাসবিদরা মাঝে মাঝে ইতিহাস লিখতে হাস্যকর যুক্তি ব্যবহার করেন। যে গৌতম বুদ্ধ নারীদের সাধনার বিঘ্ন ঘোষণা করেছেন, তার কাছে তরুণীরা যাবে নগ্ন অবস্থায়? শুধু নগ্ন নারীরাই যাবে? পুরুষ যাবে না। কোনো পুরুষের ছবি দেয়ালচিত্রে নেই।

কাশ্যপের দিন আনন্দেই কাটছিল, হঠাৎ খবর পাওয়া গেল সৎভাই হস্তীবাহিনী নিয়ে আক্রমণের জন্যে আসছে। কাশ্যপ তার বিশাল সৈন্য নিয়ে অগ্রসর হলেন। তখনকার রীতি অনুযায়ী যুদ্ধ পরিচালক হিসেবে হাতির পিঠে রাজা কাশ্যপ আছেন সবার সামনে। তাঁকে অনুসরণ করছে তাঁর বাহিনী। এমন সময় দুর্ঘটনা ঘটল। কাশ্যপের হাতি হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ স্থির থেকে পেছনে ফিরল।

কাশ্যপের সেনাপতিরা ভাবল, রাজা যুদ্ধ না করে পালাতে চাচ্ছেন। তারা রাজাকে ফেলে নিমিষের মধ্যে উধাও হয়ে গেল। কাশ্যপ অবাক হয়ে দেখলেন যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি একা। ভাইয়ের হাতে ধরা পড়ার চেয়ে তিনি মৃত্যুকে শ্রেয় মনে করলেন। কোমর থেকে ধারালো ছোরা নিয়ে নিজের গলায় বসিয়ে দিলেন।

কাশ্যপের সেই পাথরের প্রাসাদ আজও দাঁড়িয়ে আছে পৃথিবীর অতি বিস্ময়কর স্থান হিসেবে।

.

এই মুহূর্তে আমি আমার সফর সঙ্গীদের নিয়ে সিগিরিয়া রক নামে খ্যাত কাশ্যপের প্রাসাদের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছি। যেসব পর্যটক দেয়ালচিত্র দেখবে তাদের চার শ’ ফুট উপরে উঠতে হবে।

আমি বললাম, অসম্ভব ব্যাপার। সিগারেট ফুঁকে ফুঁকে ফুসফুস করেছি দুর্বল। বাইপাস অপারেশনে হার্টের অবস্থা নাজুক। নগ্নবক্ষা তরুণীদের ছবি দেখতে গিয়ে অপঘাতে মরার কোনো মানে হয় না। আমি শাওনকে জানালাম, আমার পক্ষে উপরে ওঠার প্রশ্নই আসে না।

সেহেরি আমার চেয়ে এক কাঠি উপরে। সে উপরে উঠবে কি উঠবে না তা না-বলেই স্ত্রীকে রেখে উল্টাদিকে হাঁটা শুরু করল।

নাজমা ভাবি চেঁচাচ্ছেন, এই, তুমি কাউকে কিছু না বলে যাচ্ছ কোথায়? তোমার কি ভীমরতি হয়েছে?

সেহেরি ফিরেও তাকাল না। স্ত্রীকে উপেক্ষা করার তার অসীম সাহস দেখে আমি মুগ্ধ।

নাজমা ভাবি বললেন, হুমায়ুন ভাই, আপনি একটা বুদ্ধি দেন দেখি আমি কী করব। ডলার খরচ করে একটা জিনিস না দেখে চলে যাব? এটা কি ঠিক হবে?

আমি বললাম, অবশ্যই ঠিক হবে না। আপনি উপরে উঠবেন। গাইডরা ঠেলেঠুলে আপনাকে তুলে ফেলবে।

পরপুরুষ গায়ে হাত দিবে–এটা কেমন কথা?

তাহলে নিজেই সাবধানে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে থাকুন। শাওন যাচ্ছে। সে আপনাকে সাহায্য করবে।

নাজমা ভাবি রওনা হলেন। আমি দুই পুত্র নিয়ে বিশাল এক পাথরের উপর বসে আছি। জায়গাটা সমভূমি থেকে অনেক উঁচু। দুজনকে নিয়ে সরু সিঁড়ি বেয়ে নেমে বাসের কাছে যাওয়া সম্ভব না। চারপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য অপরূপ। দৃশ্যে মন দিতে পারছি না। বারবার একটা সাইনবোর্ডে দৃষ্টি আটকে যাচ্ছে। সেখানে ইংরেজিতে লেখা সাবধান বাণী–

ভয়ঙ্কর ভিমরুলের চাকপ্রধান এলাকা
 শব্দ করে তাদের বিরক্ত করবে না।
প্রাণ সংহার হতে পারে।

ভিমরুলদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যেই হয়তোবা নিষাদ গলা উঁচিয়ে কাঁদতে লাগল–মার কাছে যাব! মার কাছে যাব! তার বিকট কান্নায় কনিষ্ঠজনের নিদ্রাভঙ্গ হলো। সে ভাইয়ের সঙ্গে তাল দিয়ে কাঁদতে লাগল। দুই ভাইয়ের কান্নায় ভিমরুলদের শান্তি বিনষ্ট হওয়ার কথা। আমি আতঙ্কিত বোধ করছি। বেড়াতে এসে ভিমরুলের হাতে জীবন দেওয়ার অর্থ হয় না।

আমার দুরবস্থা দেখে শ্রীলংকান এক যুবক পুরুষ এগিয়ে এল। জানতে চাইল বাচ্চা কাঁদছে কেন? [এইংরেজিতে প্রশ্ন, শুদ্ধ ইংরেজি। শ্রীলংকায় শিক্ষার হার শতভাগ]।

আমি বললাম, বড়টি কাঁদছে মার কাছে যাওয়ার জন্যে। ছোটটি ভাইয়ের কান্নায় ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক দিচ্ছে। এরা কখনোই আলাদা কাঁদে না, একসঙ্গে কাঁদে।

যুবাপুরুষ বলল, এক হাজার রুপির বিনিময়ে আমি তোমার পুত্রকে ঘাড়ে করে তার মা’র কাছে নিয়ে যেতে পারি। শিশুদের কোলে করে দেয়ালচিত্রের কাছে নিয়ে যাওয়াই আমার জীবিকা।

নিষাদ অপরিচিত এই মানুষটির কোলে চড়ে মার কাছে যেতে রাজি হলো। কান্না থামাল।

বড় ভাই কাঁদছে না, কাজেই ছোটটারও কান্না বন্ধ। আমি যুবককে বললাম, তুমি আরেকজনকে খুঁজে বের করো যে ছোটটাকে কোলে নিয়ে উঠবে। আমার কাছে বেবি ক্যারিয়ার আছে। বাচ্চাকে সেখানে বসিয়ে পিঠে বেঁধে নিলেই হবে।

আমি কল্পনায় দেখছি দুই ভাই মার কাছে উপস্থিত। মা তাদের দেখে বিস্ময়ে খাবি খাচ্ছে। দেয়ালচিত্র তার কাছে তুচ্ছ হয়ে গেছে। পরিচিতজনদের বিস্মিত করতে আমার সবসময় ভালো লাগে।

বিস্মিত করার পরিকল্পনা কাজে লাগল না। শেষ মুহূর্তে নিষাদ বলল, সে তার বাবাকে ছাড়া যাবে না। কেউ আমাকে কোলে করে সিঁড়ি বাইছে–এই দৃশ্য কল্পনা করে শিউরে উঠলাম। দুই ভাই কাঁদুক! কী আর করা।

.

সরু পিচ্ছিল সিঁড়ি বেয়ে সাড়ে চার শ’ ফুট ওঠার রোমাঞ্চকর বর্ণনা শাওনের কাছে শুনে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললাম। এত কাছে এসেও দেখা হলো না। বয়স এবং স্বাস্থ্য বাদ সাধল। আনন্দভ্রমণে তিনটি জিনিস লাগে–

অর্থ
বয়স
স্বাস্থ্য

ভ্রমণে বের হওয়ার মতো অর্থবান হতে সাধারণ বাঙালি ছেলের অনেক সময় লাগে। অর্থ যোগাড়ের সামর্থ্য হতে হতে তার বয়স হয়ে যায়, স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে।

শাওনের কাছ থেকে নাজমা ভাবির ভয়াবহ অভিজ্ঞতা শুনলাম। বেচারি দেড়শ’ ফুট পর্যন্ত নিজে নিজেই উঠলেন। তারপর হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, আমার পক্ষে আর ওঠা সম্ভব না। আমি নেমে যাব।

বললেই নামা যায় না। নামার সিঁড়ি ভিন্ন। তাৎক্ষণিকভাবে তার জন্য দুজন গাইড জোগাড় করা হলো। একজন তাকে সামনে থেকে টানছে। আরেকজন পেছন থেকে ঠেলছে। সাড়ে চার শ’ ফুট ওঠার পর তিনি হতাশ গলায় বললেন,

 ‘নেংটা মেয়েদের ছবি দেখার জন্য এত কষ্ট করেছি?’ বলেই তিনি মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন। তাকে নামিয়ে আনতে তিনজন গাইড লাগল। তারা কাঁধে করে উনাকে নামিয়ে ফেলল। গাইডদের কর্মক্ষমতা অসাধারণ।

.

পাঁচ শ’ রক্ষিতার ছবি থেকে মাত্র আঠারোটি টিকে আছে। বাকি ছবি ধ্বংস করেছেন বৌদ্ধভিক্ষুরা। পরাজিত কাশ্যপের বিজয়ী ভ্রাতা সিগিরিয়া রক বৌদ্ধ ভিক্ষুদের উপহার হিসেবে দান করেন। তিনি বৌদ্ধধর্মাবলম্বী ছিলেন। গৌতম বুদ্ধের বাণী তাঁকে খুব প্রভাবিত করেছে তা মনে হয় না। তিনি কাশ্যপের প্রতিটি কর্মচারী, তার আত্মীয়স্বজন সবাইকে হত্যা করেন। এই হতভাগ্যের দলে কাশ্যপের স্ত্রী-কন্যারাও ছিল। সর্বমোট সংখ্যা এক হাজার।

বৌদ্ধ ভিক্ষুরা কাশ্যপের সাধের প্রাসাদে বাস করতে আসেন। তারা সেখানকার নির্জনতায় উপাসনার ফাঁকে ফাঁকে দেয়ালচিত্র ধ্বংস করতে থাকেন। বৌদ্ধধর্মে নারীরা সাধনার বাধা। সেখানে নগ্ন নারীমূর্তির ছবির সামনে উপাসনা অর্থহীন হবেই।

একই ঘটনা রোমের সিসটিন চাপালে ঘটেছিল। গির্জার দেয়ালচিত্র এঁকেছিলেন পৃথিবীর মহান শিল্পীদের একজন–মাইকেল এঞ্জেলো। সেখানে নগ্ন নারীর ছবি। পোপের নির্দেশে সব নগ্ন নারীকে কাপড় পরিয়ে দেওয়া হয়। অনেক বছর পরে কাপড়ের রঙ সরিয়ে অপূর্ব নারীমূর্তি বের করা হয়।

সিগিরিয়া রকের ফ্রেসকো আমি দেখতে পাই নি, সিসটিন চ্যাপেলের বিখ্যাত ফ্রেসকো দেখেছি।

এখন রাজা কাশ্যপ বিষয়ে কিছু বলি। তাঁর বাবা ছিলেন অনুরাধাপুরের নৃপতি। নাম ধাতুসেন। তিনি শুধু যে বৌদ্ধধর্মাবলম্বী ছিলেন তা-না, মনেপ্রাণে গৌতম বুদ্ধের বাণীতে বিশ্বাসী ছিলেন। প্রজাহিতকর অসংখ্য কাজ তিনি করেছেন। সাধারণ মানুষের হাসপাতাল তো বানিয়েছেনই, পঙ্গুদের জন্যেও একটা হাসপাতাল বানিয়েছেন। অনুরাধাপুরের মানুষদের জলকষ্ট নিবারণের জন্যে তিনি বৃষ্টির পানি ধরে রাখার বিশাল প্রকল্প শেষ করেন। এই পানি সেচকার্যে ব্যবহার করে অনুরাধাপুর হয়ে উঠল সুজলা-সুফলা। ঐতিহাসিক মাহাওয়ানসা (Mahawansa) বলেছেন, ধাতুসেনের সুকৃতি লিখতে পাতার পর পাতা লাগবে, তারপরেও লিখে শেষ করা যাবে না।

তাঁর পুত্র কাশ্যপ পিতাকে বন্দি করে সিংহাসন দখল করলেন। পিতার উপর প্রবল চাপ প্রয়োগ করলেন তাঁর লুকানো সম্পত্তির জন্যে। একসময় ধাতুসেন বললেন, চলো তোমাকে আমার সম্পত্তি দেখাচ্ছি। তিনি তাকে নিয়ে গেলেন তার তৈরি জলাধারের কাছে। বললেন, ওই দেখো আমার সম্পত্তি।

কাশ্যপ পিতাকে বললেন, আপনি যেন সারা জীবন আপনার লুকানো সম্পত্তি দেখতে পারেন সেই ব্যবস্থা করছি। তিনি লেকের দিকে মুখ ফিরিয়ে পিতাকে জীবন্তু দেয়ালের সঙ্গে প্লাস্টার করে ফেললেন। ধাতুসেন চব্বিশ ঘণ্টা বেঁচেছিলেন।

মোঘল আমলেও এ প্রনের ঘটনা ঘটেছিল। সম্রাট শাহজাহানকে বন্দি করেছেন তাঁর পুত্র আওরঙ্গজেব। শাহজাহানের দিন কাটছে তার নিজের সৃষ্টি তাজমহলের দিকে তাকিয়ে। শাহজাহান ভাগ্যবান, তাঁর পুত্র পিতাকে দেয়ালে প্লাস্টার করে ফেলে নি।

ভাইয়ের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে কাশ্যপের হাতি হঠাৎ কেন পিছু ফিরল তার ব্যাখ্যা হলো হাতিরা জলাভূমিতে চোরাবালির অস্তিত্ব বুঝতে পারে। হাতির সামনে চোরাবালি পড়েছিল বলেই সে দিক পরিবর্তন করে। এখানে আমার ছোট্ট প্রশ্ন আছে। হাতি চোরাবালির অস্তিত্ব টের পেয়ে পেছনে ফিরে–এই তথ্য কি হাতিটা কাউকে বলে গেছে?

সিগিরিয়া রক একসময় বনেজঙ্গলে ঢাকা পড়ে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যায়। দুজন ব্রিটিশ পর্যটক ১৮৫৩ সালে এর অস্তিত্ব খুঁজে পান। এরপর থেকে প্রতিবছর শত শত পর্যটক এখানে আসেন। মুগ্ধ হয়ে দেখেন যিশুখ্রিষ্টের জন্মের ১৬০০ বছর আগের অপূর্ব স্থাপত্য  

.

পুনশ্চ

দেয়ালচিত্রগুলিতে তিনটি রঙ ব্যবহার করা হয়–লাল, হলুদ এবং সবুজ। একটি মাত্র ছবিতে ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে কালো ব্যবহার করা হয়েছে। কোনো ছবিতে নীল রঙ নেই। এটি চিত্র বিশেষজ্ঞদের বিস্মিত করেছে। কারণ অজন্তার গুহাচিত্র একই সময়ে আঁকা। সেখানে নীল রঙ ব্যবহার করা হয়েছে।

সিগিরিয়া রকে আঁকা ফ্রেসকো বিষয়ে কিছু কথা। দেয়াল তৈরি হওয়ার পর রঙতুলি দিয়ে ফ্রেসকো আঁকা হয় না। দেয়ালে প্লাস্টারের সময় ছবি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। লাইম স্টোনের আস্তরের সঙ্গেই প্রাকৃতিক রঙ মেশানো হয়। এই কারণেই ছবিতে যদি কোনো ভুল থাকে সেই ভুল শুধরানো যায় না।

সিগিরিয়া রকের দেয়ালচিত্রে বড় কিছু ভুল এই কারণেই থেকে গেছে। যেমন এক তরুণীর দু’টা হাতের বদলে তিনটা হাত। একটা হাত তার বুকের ভেতর থেকে বের হয়েছে।

পাঁচটা আঙুলের বদলে কিছু তরুণীর হাতে দুটা আঙুল। একজনের হাতে ছয়টা আঙুল দৃশ্যমান।

দেয়ালচিত্রগুলো একজন শিল্পী এঁকেছেন, নাকি অনেকের পরিশ্রমের ফসল– তা জানা যায় নি। শিল্পী হারিয়ে গেছেন, তার শিল্পকর্ম সাড়ে তিন হাজার বছর পরেও মানুষকে মুগ্ধ করছে। সেইসব শিল্পী কত না ভাগ্যবান!

Humayun Ahmed ।। হুমায়ূন আহমেদ