শ্রীদিলীপকুমার রায়কে লিখিত – ৬

ছন্দ নিয়ে যে-কথাটা তুলেছ সে সম্বন্ধে আমার বক্তব্যটা বলি। বাংলার উচ্চারণে হ্রস্বদীর্ঘ উচ্চারণভেদ নেই, সেইজন্যে বাংলাছন্দে সেটা চালাতে গেলে কৃত্রিমতা আসেই।

               ॥      ॥         ॥
               হেসে   হেসে হল যে অস্থির,
               ॥।     ।        ।
               মেয়েটা বুঝি ব্রাহ্মণবস্তির।

এটা জবরদস্তি। কিন্তু —

               হেসে কুটিকুটি এ কী দশা এর,
               এ মেয়েটি বুঝি রায়মশায়ের,

এর মধ্যে কোনো অত্যাচার নেই। রায়মশায়ের চঞ্চল মেয়েটির কাহিনী যদি ব’লে যাই লোকের মিষ্টি লাগবে, কিন্তু দীর্ঘে হ্রস্বে পা ফেলে চলেন যিনি তাঁর সঙ্গে বেশিক্ষণ আলাপ চলে না। যেটা একেবারে প্রকৃতিবিরুদ্ধ তার নৈপুণ্যে কিছুক্ষণ বাহবা দেওয়া চলে, তার সঙ্গে ঘরকরা চলে না।

“জনগণমনঅধিনায়ক’– ওটা যে গান। দ্বিতীয়ত, সকল প্রদেশের কাছে যথাসম্ভব সুগম করবার জন্যে যথাসাধ্য সংস্কৃত শব্দ লাগিয়ে ওটাকে আমাদের পাড়া থেকে জয়দেবীর পল্লীতে চালান করে দেওয়া হয়েছে। বাংলা শব্দে এক্‌সেন্‌ট্‌ দিয়ে বা ইংরেজি শব্দে না দিয়ে কিম্বা সংস্কৃত কাব্যে দীর্ঘহ্রস্বকে বাংলার মতো সমভূমি করে যদি রচনা করা যায় তবে কেবলমাত্র ছন্দকৌশলের খাতিরে সাহিত্যসমাজে তার নতুন মেলবন্ধন করা চলে না। বিশেষত, চিহ্ন উঁচিয়ে চোখে খোঁচা দিয়ে পড়াতে চেষ্টা করলে পাঠকদের প্রতি অসৌজন্য করা হয়।

                          ।                    ।        ।
                   Autumn flaunteth in his bushy bowers

এতে একটা ছন্দের সূচনা থাকতে পারে, কিন্তু সেইটেই কি যথেষ্ট। অথবা —

                   ।        ।                  ।     ।
                   সম্মুখ সমরে পড়ি বীর চূড়ামণি বীরবাহু।

এক্‌সেন্‌ট্‌এর তাড়ায় ধাক্কা মেরে চালালে এইরকম লাইনের আলস্য ভেঙে দেওয়া যায় যদি মানি, তবু আর কিছু মানবার নেই কি।

৬ জুলাই, ১৯৩৬

<

Rabindranath Tagore ।। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর