দশম পরিচ্ছেদ

১৮৮৩, ২৮শে নভেম্বর

ব্রাহ্মসমাজ ও বেদোল্লিখিত দেবতা — গুরুগিরি নীচবুদ্ধি

[অমৃত — কেশবের বড় ছেলে — দয়ানন্দ সরস্বতী ]

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কিছু মিষ্টমুখ করিয়া যাইবেন। কেশবের বড় ছেলেটি কাছে আসিয়া বসিয়াছেন।

অমৃত বলিলেন, এইটি বড় ছেলে। আপনি অশির্বাদ করুন। ও কি! মাথায় হাত দিয়া আশির্বাদ করুন।

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলিলেন, “আমার আশীর্বাদ করতে নাই।”

এই বলিয়া সহাস্যে ছেলেটির গায়ে হাত বুলাইতে লাগিলেন।

অমৃত (সহাস্যে) — আচ্ছা, তবে গায়ে হাত বুলান। (সকলের হাস্য)

ঠাকুর অমৃতাদি ব্রাহ্মভক্ত সঙ্গে কেশবের কথা কহিতেছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ (অমৃত প্রভৃতির প্রতি) — “অসুখ ভাল হোক” — এ-সব কথা আমি বলতে পারি না। ও-ক্ষমতা আমি মার কাছে চাইও না। আমি মাকে শুধু বলি, মা আমাকে শুদ্ধাভক্তি দাও।

“ইনি কি কম লোক গা। যারা টাকা চায়, তারাও মানে, আবার সাধুতেও মানে। দয়ানন্দকে দেখেছিলাম। তখন বাগানে ছিল। কেশব সেন, কেশব সেন, করে ঘর-বাহির করছে, — কখন কেশব আসবে! সেদিন বুঝি কেশবের যাবার কথা ছিল।

“দয়ানন্দ বাঙলা ভাষাকে বলত — ‘গৌড়াণ্ড ভাষা’।

“ইনি বুঝি হোম আর দেবতা মানতেন না। তাই বলেছিল ঈশ্বর এত জিনিস করেছেন আর দেবতা করতে পারেন না?”

ঠাকুর কেশবের শিষ্যদের কাছে কেশবের সুখ্যাতি করিতেছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ — কেশব হীনবুদ্ধি নয়। ইনি অনেককে বলেছেন, “যা যা সন্দেহ সেখানে গিয়া জিজ্ঞাসা করবে।” আমারও স্বভাব এই। আমি বলি, ইনি আরও কোটিগুনে বাড়ুন। আমি মান নিয়ে কি করব?

“ইনি বড়লোক। টাকা চায়, তারাও মানে, আবার সাধুরাও মানে।”

ঠাকুর কিছু মিষ্টমুখ করিয়া এইবার গাড়িতে উঠিবেন। ব্রাহ্মভক্তেরা সঙ্গে আসিয়া তুলিয়া দিতেছেন।

সিঁড়ি দিয়া নামিবার সময় ঠাকুর দেখিলেন, নিচে আলো নাই। তখন অমৃতাদি ভক্তদের বলিলেন, এ-সব জায়গায় ভাল করে আলো দিতে হয়। আলো না দিলে দারিদ্র হয়। এরকম যেন আর না হয়।

ঠাকুর দু-একটি ভক্তসঙ্গে সেই রাত্রে কালীবাড়ি যাত্রা করিলেন।

<

Mahendranath Gupta ।। মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত