ফেব্রুয়ারি মাস শেষ হতে চলল, কিন্তু এখনও দিব্যি ঠাণ্ডা। তবে শীতকালের মতো দিন। আর অত ছোট নেই, ছটা পর্যন্ত বেশ আলো থাকে। আমি আর লালমোহনবাবু কফি আর মুরগির কাটলেট খেয়ে ঠিক সোয়া ছাঁটায় রেস্টোরান্ট থেকে বেরিয়ে রওনা দিলাম প্রিনসেপঘাটের দিকে।

পথে লালমোহনবাবু মাঝে-মাঝে বুক ভরে নিশ্বাস নিয়ে আঃ উঃ শব্দ করে সান্ধ্যভ্রমণের অভিনয় করছেন, সেটা যে খুব কনভিনসিং হচ্ছে তা নয়। কিন্তু ক্ৰমেই আশপাশের লোকজন এত কমে আসছে, ফুচকাওয়ালা আর ভেলপুরিওয়ালার দল এত পিছিয়ে পড়ছে যে, এখন উনি যা খুশি করলেও আপত্তির কিছু নেই।

দশ মিনিট লাগল আমাদের গম্বুজওয়ালা বসার জায়গাটায় পৌঁছতে। বেঞ্চ দখল করার পর এদিক ওদিক চেয়ে লালমোহনবাবু চাপা গলায় প্রশ্ন করলেন, তোমার দাদাকে দেখতে পাচ্ছ কি, তপেশ?

দাদা কেন, কোনও মানুষকেই দেখতে পাচ্ছি না ঘাটের নীকের মাঝিদের ছাড়া। কোনখানে লুকিয়ে রয়েছে ফেলুদা কে জানে। ঘাটের দেড়শো বছরের পুরনো থামগুলো মাথা উচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তাদের মধ্যে ফাঁকগুলো ক্রমেই অন্ধকারে হয়ে আসছে। ওখানে গিয়ে কেউ টাকার ব্যাগ রাখলে, বা সে ব্যাগ নিতে এলে, কেউ দেখতেও পাবে না।

ওই যে! লালমোহনবাবু আমার হাত খামচে ধরেছেন।

হ্যাঁ—ঠিকই দেখেছেন ভদ্রলোক।

একজন সাদা প্যান্ট আর কালো কোট পরা লোক হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে প্রিনসেপঘাটের দিকে। অম্বরবাবুদের ড্রাইভার। বিলাসবাবু।

বিলাসবাবু এবার থামগুলোর ফাঁক দিয়ে ভিতরে ঢুকে অন্ধকারে মিলিয়ে গেলেন।

মিনিটখানেক পরেই তাঁকে আবার দেখা গেল। এবার হাত খালি। বড়রাস্তায় পড়ে ডাইনে মোড় ঘুরে গাছের আড়াল হয়ে গেলেন ভদ্রলোক।

সাড়ে ছটা বেজে গেছে। আলো আরও পড়ে এসেছে। এখন সামনের সারির থামগুলো ছাড়া আর কোনওটাই দেখা যাচ্ছে না। একবার মনে হল অন্ধকারের মধ্যে কে যেন নড়াল; কিন্তু সেটা চোখের ভুল হতে পারে।

এবার দেখলাম সেনদের গাড়ি আমাদের সামনে দিয়ে রেস্টোরান্টের দিকে চলে গেল। তারপর তিনজন জিনস-পরা ছেলে, আর তাদের পিছনে ঢোলা প্যান্টপরা হাতে লাঠিওয়ালা এক বৃদ্ধ ফিরিঙ্গিও সেই দিকেই চলে গেল।

আমরাও উঠে পড়লাম।

আবার ঠিক দশ মিনিটই লাগল আমাদের গাড়িতে পৌঁছাতে।

কিন্তু ফেলুদা কই?

এবার গাড়ির ভিতরে চোখ গেল।

নস্যিরঙের আলোয়ান জড়ানা এবং লুঙ্গি পরা এক বুড়ো বসে আছে ড্রাইভার হরিপদবাবুর পাশে। থুতনিতে খোঁচা-খোঁচা দাড়ি, কিন্তু গোঁফ নেই।

স্যালাম কর্তা! লালমোহনবাবুর দিকে চেয়ে বলল লোকটা।

এ আর বলতে হবে না। ওই মুসলমান মাঝি ফেলুদা ছাড়া আর কেউ না। এদিকে অম্বুজবাবুও এসে পড়েছেন রাস্তার ওদিক থেকে। তাঁর কাছে ফেলুদার নিজের পরিচয় দিতেই হল। নীকো থেকে ঘাটটা সবচেয়ে ভাল দেখা যায়, তাই ওখানেই ওত পাতার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।

কিন্তু কী হল সেইটে বলুন, মিঃ মিত্তির।

ফেলুদা গম্ভীর।

ভেরি সরি, মিঃ সেন।

মানে?

আমি ঘাটে ওঠার আগেই সে লোক টাকা নিয়ে হাওয়া।

বলেন কী! টাকা নেই? লোকটাকেও ধরা গেল না?

বলছি তো—আমি অত্যন্ত দুঃখিত।

অম্বুজবাবু কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলেন ফেলুদার দিকে। কথাটা যেন ভদ্রলোকের বিশ্বাসই হচ্ছে না। সত্যি বলতে কী, আমারও কেমন যেন মাথা বিমঝিম করছিল। ফেলুদাকে এভাবে হার মানতে এর আগে দেখিনি কখনও।

আপনাদের পুলিশের সাহায্যই নিতে হবে, মিঃ সেন, বলল ফেলুদা। আপনি বাড়ি চলে যান। এবার তো অম্বরবাবুর ফিরে আসা উচিত। আমরা একবার বাড়িতে টু মেরে আপনার ওখানেই আসছি। এই বেশে তো আর পাম এভিনিউ-এর বৈঠকখানায় ঢোকা যাবে না।

 

বাড়ি যাওয়ার একমাত্র কারণ ফেলুদার একটু ফিটফট হয়ে নেওয়া। তা ছাড়া হাতেও রং লেগেছিল–জিজ্ঞেস করতে বলল। আলকাতরা—সেটাও ধুয়ে নেওয়া দরকার। আলকাতরাটাও মেক-আপের অংশ কিনা জিজ্ঞেস করাতে কোনও উত্তর দিল না ফেলুদা।

আমরা যখন পাম এভিনিউ রওনা হলাম, তখন প্রায় সাড়ে সাতটা বাজে। পথে লালমোহনবাবু একবার বলেছিলেন, আপনার অমন ব্রিলিয়ান্ট মেক-আপটা মাঠে মারা যাবে। ভাবিনি মশাই— কিন্তু তাতে ফেলুদা কোনও মন্তব্য করেনি।

পাম এভিনিউ পৌঁছানোর সঙ্গে-সঙ্গেই রুনার গলায় উচ্ছসিত চিৎকার শোনা গেল, জেঠু এসে গেছে!

অম্বরবাবু ফিরেছেন আমরা আসার মিনিট দশেক আগে। আমরা বৈঠকখানায় গিয়ে ঢুকতেই ভদ্রলোক সোফা ছেড়ে উঠে হাত বাড়িয়ে ফেলুদার হাত দুটো ধরে ঝাঁকিয়ে দিলেন। ভাই ভাইয়ের বউ, ভাইঝি, সমরেশবাবু, বিলাসবাবু, সকলেই ঘরে রয়েছেন।

কোথায় আটক করে রেখেছিল আপনাকে? একগাল হেসে প্রশ্ন করলেন লালমোহনবাবু।

ওঃ–সে। আর বলবেন না—

ফেলুদা হাত তুলে বাধা দিল ভদ্রলোককে।

উনি তো বলবেনই না, আর আপনিও বলবেন না, মিঃ সেন। কারণ বললেই একরাশ কল্পনার আশ্রয় নিতে হবে। মিথ্যে শব্দটা ব্যবহার করলাম না, কারণ সেটা ভাল শোনায় না।

হুররে হুররে হুররে! চেঁচিয়ে উঠল। রুনা। ফেলুদা ধরে ফেলেছে, ফেলুদা ধরে ফেলেছে!

এবার ফেলুদা একটা চারমিনার ধরিয়ে নিয়ে বলল, আপনারা যে একটা বিরাট ফন্দি ঐটেছিলেন সেটা ধরে ফেলেছি, কিন্তু সেটার কারণটা এখনও ঠিক ধরতে পারছি না।

কারণ বলছি মিঃ মিত্তির, হেসে বললেন অম্বর সেন। কারণ আমার ওই খুদে ভাইঝিটি। সে আপনাকে বলতে গেলে একরকম পুজোই করে। তার ধারণা। আপনি ভুলভ্রাস্তির উর্ধে। তাই ওকে আমি সেদিন বললাম যে, তোর ফেলুদাকে আমি জব্দ করতে পারি। ব্যস-ওই একটি উক্তি থেকেই সমস্ত ফন্দিটির উৎপত্তি। এতে আমাদের সকলেরই ভূমিকা আছে।

অর্থাৎ এও আপনাদের একটা ফ্যামিলি নাটক?

ঠিক তাই। সবাইকে সব কিছু আমিই শিখিয়ে পড়িয়ে দিয়েছিলাম। আপনি কী জিজ্ঞেস করলে কী উত্তর দেবে, সব লিখে মুখস্থ করিয়ে দিয়েছিলাম—এমনকী ড্রাইভার ও চাকরকে পর্যন্ত। প্রধান নারীচরিত্র অবশ্য বউমা, যাঁকে দিয়ে মনগড়া অ্যাকসিডেন্টের কথাটা বালানো হয়েছিল। আমি নিজে ভাবিনি যে, আপনি ব্যাপারটা ধরে ফেলবেনী-ইন ফ্যাক্ট, এই নিয়ে আমার ভাইয়ের সঙ্গে একশো টাকা বাজিও ধরেছিলাম। এ ব্যাপারে রুনার উৎকণ্ঠই ছিল সবচেয়ে বেশি। কারণ তার হিরো যদি ফেল করত, তা হলে তার দুঃখের সীমা থাকত না। এই ঝুকিটা অবশ্য আমাকে নিতেই হয়েছিল, কিন্তু এখন সে নিশ্চিন্তু। এবার বলুন তো আপনার সিসটেমটা কী। কীসে আপনার প্রথম সন্দেহ হল মিঃ মিত্তির?

ফেলুদা বলল, প্রথমত এবং প্রধানত, দুটো ভুকু, দুটোই আপনার কাজের ঘরে পাওয়া। এক হল হিমালয়ান অপটিক্যালসের ক্যাশ মেমো। আমি সেখানে খোঁজ নিয়ে জেনেছি যে, আপনি দিন সাতেক আগে একটি সোনালি ফ্রেমের নতুন চশমা করিয়েছেন। অথচ আপনার বাড়িতে সেটা সম্বন্ধে কেউ জানে না, বা কেউ সেটা আপনাকে পরতে দেখেনি। প্রশ্ন হল, এই চশমার দরকার পড়ছে কেন। এবং ঠিক এই সময় দরকার কেন।

দুই হল—আপনার ডেট ক্যালেন্ডারে তিন দিনের পুরনো তারিখ। আপনার চাকর যখন তারিখ বদল করে না, তখন সেটা নিশ্চয় আপনিই করেন। তা হলে বদল হয়নি কেন?

তখনই মনে হল যে, আপনাকে যদি কিডন্যাপড় হবার ভান করে গা ঢাকা দিতে হয়, তা হলে হয়তো একটা ড়েরা স্থির করে দুদিন আগে গিয়েই সেখানে থাকা অভ্যাস করতে হবে। নতুন জায়গা ধাতস্থ হতে সময় লাগে বইকী!! আর তাই যদি হয়, তা হলে সাবধানতা অবলম্বন করার জন্য আপনাকে হয়তো একটি ছদ্মবেশ ও একটি নতুন নাম নিতে হবে। সেই ক্ষেত্রে একটি নতুন চশমা নেওয়াও মোটেই অস্বাভাবিক নয়।

ধরে ফেলেছে, ফেলুদা সব ধরে ফেলেছে। আবার চেঁচিয়ে উঠল রুনা।

এর মধ্যে লালমোহনবাবু যে হঠাৎ কেন খাঁচায়-বন্ধ সিংহের মতো পায়চারি করতে আরম্ভ করেছেন তা বুঝতে পারলাম না। ভদ্রলোক যাতে কোনও বাড়াবাড়ি না করে ফেলেন। তাই ওঁকে সামলাতে যাব, এমন সময় উনি হঠাৎ দুহাত তুলে চেঁচিয়ে উঠলেন–

ইউরেকা!

চিনেছেন ভদ্রলোককে? ফেলুদা প্রশ্ন করল।

চিনব না? মৃত্যুঞ্জয় সোম!

অম্বরবাবু হা হা করে হেসে উঠলেন।

আপনার সঙ্গে সেদিন পর্কে দেখা হওয়াটা সম্পূর্ণ অ্যাকসিডেন্ট, মশাই। আসলে গড়পারেই আমার এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে ছিলাম সাতদিন। আপনি যখন এগিয়ে এসে জটায়ু-টটায়ু বলে নিজের পরিচয় দিলেন, তখন ভাবলাম— বা রে, এ তো বেশ মজা! যাকে জব্দ করতে যাচ্ছি তারই সাকরেদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল! তা হলে এঁকে নিয়ে একটু রগড় করতে পারলে কেমন হয়? তারপর অবিশ্যি মিত্তির মশাইয়ের বাড়িতেও আপনার সঙ্গে দেখা হয়েছিল আমার আসল চেহারায়, কিন্তু আপনি চিনতে পারেননি।

কিন্তু তা হলে ব্যাপারটা কী দাঁড়াচ্ছে? বলল ফেলুদা, নাটকের তো এখানেই শেষ নয়, অম্বরবাবু। এখনও তো ড্রপসিন ফেল চলবে না।

ঘরের আবহাওয়া মুহূর্তে বদলে গেল, কারণ ফেলুদা কথাটা বলেছে গম্ভীর থমথমে ভাবে।

হোয়্যার ইজ দ্য মানি? প্রশ্ন করল ফেলুদা।

অম্বর সেন ফেলুদার দিকে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে চেয়ে বললেন, মিঃ মিত্তির, আপনি আমাকেও কিন্তু একজন শখের গায়েন্দা বলতে পারেন। আমি যদি বলি যে, টাকাটা আপনিই নিয়ে আমাদের সঙ্গে একটু রগড় করছেন, তা হলে কি খুব ভুল বলা হবে? অপরাধী যখন নেই, কিডন্যাপার নেই, তখন টাকাটা সরে কোথায় যাবে মিঃ মিত্তির?

ফেলুদা মাথা নেড়ে বলল, মিঃ সেন অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, আপনার শখের গোয়েন্দাগিরি এক্ষেত্রে খাটল না। প্রিনসেপঘাটের কাছে আজ। সন্ধ্যায় আমি ছাড়াও আরেকজন ছদ্মবেশী ছিলেন।

বলেন কী! বললেন অম্বর সেন, আপনি তাকে দেখেছেন?

দেখেছি, কিন্তু চিনিনি।

কিন্তু আপনি তখনই তাকে ধরলেন না কেন?

তখন ধরাটা আপনাদের পক্ষে যথেষ্ট নাটকীয়া হত না। আপনারা নাটক পছন্দ করেন তো? আমার মনে হয় আপনাদের সামনে ধরাটা আরও নাটকীয় হবে। আমার সন্দেহ তিনি এখানেই আছেন। এ সন্দেহ ঠিক কি না সেটা আমি একবার পরখ করে দেখতে চাই।

ঘরে যাকে বলে পিন-পড়া নিস্তব্ধতা। রুনার দিকে আড়াচোখে চেয়ে দেখলাম। সেও ফ্যাকাসে মেরে গেছে।

বিলাসবাবু, আপনার জুতোর তলাটা একবার দেখুন তো, বলে উঠল ফেলুদা।

বিলাসবাবু ঘরের দরজার মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন, বললেন, দেখব আর কী স্যার, জুতোর তলায় তো আলকাতরা লেগে রয়েছে। ব্যাগ রেখে ফেরবার সময় তো রাস্তায় পা আটকে যাচ্ছিল।

ওই আলকাতরা আমিই ছড়িয়ে রেখেছিলাম থামটার চারপাশে, বলল ফেলুদা, কারণ একজনের সম্বন্ধে আমার মনে একটা সন্দেহের কারণ ঘটেছিল। আপনারা সকলেই বানিয়ে বানিয়ে কথা বলেছিলেন। কিন্তু ইনি যে মিথ্যেটা বলেছিলেন সেটা একটু অন্যরকম। ইনি বলেছিলেন…ও কী, আপনি যাচ্ছেন কোথায়?

কিন্তু পালাবার পথ নেই। দরজা আগলে দাঁড়িয়ে আছেন বিলাসবাবু। এক ঝটিকায় যাকে বগলদাবা করে ফেলেছেন ভদ্রলোক, তিনি হচ্ছেন সমরেশ মল্লিক।

এবার আপনার স্যান্ডেলের তলাটা এঁদের দেখিয়ে দিন তো, বলল ফেলুদা।বিলাসবাবু একটু হেলপ করলে ব্যাপারটা সহজে হয়ে যায়।

বিলাসবাবু নিচু হয়ে সমরেশবাবুর পা থেকে স্যান্ডেলটা একটানে খুলে নিয়ে তার তলাটা সকলকে দেখিয়ে দিলেন। উনিই যে গিয়েছিলেন প্রিনসেপঘাটের থামের পাশে, তাতে আর কোনও সন্দেহ রইল না।

আপনার কোহিনুর কোম্পানি তো দুবছর হল লাটে উঠেছে সমরেশবাবু, বলল ফেলুদা, তা সত্ত্বেও আপনি সেখানে চাকরি করছিলেন। কী করে সেটা এদের একটু বুঝিয়ে বলবেন? আর যদি চাকরি না-ই করে থাকেন, তবে এই দুবছর কীভাবে রোজগার করেছেন সেটা বলবেন?

সমরেশবাবু নিরুত্তর। বিলাসবাবু এখনও তাঁকে জাপটে ধরে আছেন; মনে হয় পুলিশ আসার আগে পর্যন্ত সেইভাবেই ধরে থাকবেন।

অবিশ্যি এই ব্যক্তির খালস খুলে ফেলার জন্য আপনাদের আমাকেই ধন্যবাদ দিতে হবে, বলল ফেলুদা! আপনারা তো আর বিশ হাজার টাকা রাখতেন না থামের পাশে! নেহাত আমি যখন বললাম শাসনি কেয়ার করি না, আমি নিজে থাকব। সেখানে, তখন আপনাদের বাধ্য হয়েই রাখতে হল, আর সেই টাকা হাত করার সুযোগ নিলেন সমরেশবাবু। যাকগে, এখন তো জানলেন টাকা কোথায় আছে। এবার সেটা আদায় করার রাস্তা আপনারা দেখুন। উনি যদি সেটাকা অন্যত্ৰ পাচার করে থাকেন, তা হলে পুলিশ তো আছেই, তারা এসব আদায়ের অনেক রাস্তা জানে। আমার কাজ এখানেই শেষ।

ফেলুদার সঙ্গে সঙ্গে আমরা দুজনও উঠে পড়েছিলাম, কিন্তু ওঠা। আর হল না। মিসেস সেন বাধা দিলেন।

শেষ বলছেন কী? এত সহজে শেষ হবে কী করে? আপনাকে ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যে কথাগুলো বললাম, তার বুঝি প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে না? আজ রাত্তিরে আপনাদের খেতে হবে। আমাদের বাড়িতে।

আর ওই বিশ হাজারের অন্তত খানিকটা তো আপনার প্রাপ্য, বললেন অম্বর সেন, সেটা না নিয়ে যাবেন কী করে?

আর তোমরা তিনজনে একসঙ্গে এসেছি বুললেন শ্ৰীমতী রুনা, আমার অটোগ্রাফে সই দেবে না বুঝি?

এন্ডস ওয়েল দ্যাট অলস্‌ ওয়েল, বললেন লালমোহনবাবু।

Satyajit Ray ।। সত্যজিৎ রায়