এস ডি ও খাণ্ডেলওয়া সাহেবের সাদা ধবধবে যুবক অ্যালসেশিয়ান কুকুরটাকে তাঁর কুচকুচে কালো যুবতী আয়া রোজই বিকেলে বেড়াতে নিয়ে যায়। পৃথু জানলার সামনে ইজিচেয়ারে বসে দেখে। প্রকৃতির মধ্যে গেলে শেকল বাঁধা কুকুরটা সহজ হয়; প্রকৃতির মধ্যেই বোধ হয় সমস্ত প্রাণীর প্রকৃত মুক্তি নিহিত আছে; ভাবে পৃথু।

এস ডি ও সাহেবের বাড়িতে অনেকখানি জমি আছে, কিন্তু ন্যাড়া; রুখু। একটিও সবুজ গাছ নেই তাতে। কোনও ফুলই ফোটে না সেখানে। পাখি ডাকে না। অথচ মধ্যপ্রদেশের এই ছোট্ট অখ্যাত জায়গাটি ঘিরে আছে গভীর ঘনসবুজ জঙ্গল আর মাথা-উঁচু পাহাড়। বলয়ের পর বলয়।

পৃথু তার স্ত্রীর দিকে শীতের বিকেলের পড়ন্ত রোদে তাকিয়ে ভাবল, রুষা খুবই সুন্দরী ছিল এবং এখনও আছে। এমন সুন্দরী, লক্ষে মেলে। রুষার স্বামী বলে, ওর নতুন করে গর্ব হল।

রুষা বারান্দাতে এল। একটা কাক বসেছিল পেঁপে গাছে। কোনও এক কাক কাল একটা চামচ নিয়ে গেছে ঠোঁটে করে। বোকা কাকটা। এই কাক, সেই কাকই কি না, তা জানা নেই। মানুষদেরই মতো, কাকদেরও আলাদা করে চেনার বিশেষ উপায় নেই। এই দুই জীবই বাসি-পচা নোংরা-আবর্জনা ঠুরে খায়। কাকেরই মতো মানুষও স্ক্যাভেঞ্জার।

বারান্দার রেলিং-এ পা তুলে বসে পৃথু ভাবছিল।

রুষা রুষ্ট চোখে তাকাল কাকটার দিকে। ডান হাতে ঢেউ তুলে বলল, হুসস্‌-স্।

ব্যক্তিত্বসম্পন্ন কাকটা, রুষাকে গ্রাহ্য না করে উদাসীনভাবে উড়ে গেল। স্বভাবতই কাকেরা মানুষদের চেয়ে অনেক বেশি উদাসীন। চামচ, কাকের খাদ্য নয়। খাদক হয়েও খাদ্য চেনে না বলেই নিয়েছিল।

পৃথুর দিকে চোখ পড়তেই বিরক্ত গলায় বলল রুষা, রেলিং-এ পা তুলে বসে আছ কেন অসভ্যর মতো? এক কথা আর কতবার বলব। আর পারি না। স্বভাবটা বদলাও।

স্বভাব বদলায় চিতাতে গিয়েই। স্বভাব বদলাও বললেই কি বদলানো যায়?

নিরুচ্চারে বলল পৃথু। মুখে কিছু না বলে, পা নামিয়েই নিল। সুখের চেয়ে শান্তি অনেক দামী। এই সুন্দর কনে-দেখা-আলো-ছোঁয়ানো সুগন্ধি বিকেলে অনেক কিছুই করা যেত, যায়; যা সুন্দর।

ঝগড়া করতে ইচ্ছে করল না পৃথুর।

একি! চায়ের কাপটাও কি নিজে তুলে রাখতে পার না? পা লেগে যে, এখুনি ভাঙত! তাও কলকাতা থেকে রুবু নিজে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল বলে! হিটকারির; এক্সপোর্ট কোয়ালিটির। তুমি এসবের কী বুঝবে? রুচি থাকতে হয়; শখ থাকতে হয়। ভদ্রসমাজে বাসের তুমি একেবারেই অযোগ্য!

এস ডি ও সাহেবের বাড়ির দিকে তাকিয়ে চুপ করে বসে রইল ও। জবাব দিল না। সব কথার জবাব হয়ও না। মাঝে মাঝেই, ভদ্রসমাজে ওর জন্ম, ওর বাস বলে নিজের উপর খুব ঘেন্না হয় পৃথুর।

মুখটা নিচু করে পৃথু বলল, আস্তে কথা বলো, এস ডি ও সাহেব বাড়ি আছেন।

যে খুশি থাকুক। আই ডোন্ট কেয়ার। আমি অনেক সহ্য করেছি, আর ভাল লাগে না। ঘরকুনো, কুঁড়ে, লেথার্জিক পুরুষমানুষ একটা। পুরুষ না ছাই। সীমা বাড়ি করে ফেলল, কুকু, এমনকী নোটনটা পর্যন্ত বাড়ি করে ফেলল ভোপালের মতো জায়গায়। কুর্চির মতো সাধারণ মেয়ে; সেও কী চমকার থাকে জবলপুরে। আর আমি? হুঁ! সারাজীবন এই জংলি হাটচান্দ্রাতে, লালধুলো আর চামারটোলির শুয়োরদের মধ্যেই কাটাতে হবে বাকি জীবন। কান্না পায় আমার। বিয়ে করেছিলাম বটে! এরকম বিয়ে যেন শত্রুরও না হয়।

পৃথু সিগারেটটা ছাইদানীতে ঠেসে ধরে, রাগটা আর সিগারেটটাকে একইসঙ্গে জোরে টিপতে টিপতে বলল, তুমি আর করলে কোথায়? বিয়ে তো আমিই করেছিলাম।

থাক। তোমার ওই একঘেয়ে মনোলোগ শুনতে চাই না আর। ফেড়-আপ হয়ে গেছি। বক্তৃতা মেরে, যাও, দুধটা নিয়ে এসো এখন। কুক্ নেই, আয়া নেই, মালী নেই, একটু কাজ করো, ফর আ চেঞ্জ! দুধটা চট করে এনে দিয়েই বাজারে যাবে একবার। বুঝেছো! কাল টুসুর এক বন্ধুর বার্থডে। পদ্মা স্টোর্স থেকে এক পাউন্ড কেক কিনে নিয়ে এসো, আর ওখানেই র্যাপিং পেপার পাবে, গিফ্ট প্যাক-এর। চার-পাঁচটা শীট এনো। তোমার যা টেস্ট! ক্যাঁটক্যাঁটে রঙ এনো না আবার। হালকা শেড়-এর আনবে। বুঝেছো। গোলমাল কোরো না যেন। পদ্মা স্টোর্স চেনো

তো? লাল সাইনবোর্ডে লাল লাল পদ্মফুল আঁকা আছে। তোমার ইয়ার, সাবির মিঞার জুতোর দোকান ছাড়িয়ে যাবে। ভুলভুলাইয়া অবধি যেতে হবে না। একটু আগে, বাঁ হাতে। মানে, ভুলভুলাইয়ার একটু…

পৃথু অস্ফুটে বলল, চিনি।

চেনো! আর আমাকে এতক্ষণ বকালে! আগে বলতে কী ছিল?

সুযোগ পেলাম কই?

যাচ্ছেতাই। ইনকরিজিবল লোক।

পৃথুদের বাড়ির কাছেই নিমগাছতলায় ছোট্ট খাটাল। মোষই বেশি। দুটি গরু। দুধটা এনে দুখীর হাতে দিয়েই আবার চাদর গায়ে বেরিয়ে পড়ল থলে হাতে করে বাজারের দিকে। স্ত্রীর বশংবদ, সংসারী স্বামীর মতো। এই আদর্শ সামনে রেখেই অন্য বহু পুরুষেরই মতো ও এই আদর্শে উদ্বুদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু পারে না। কোনও একটিও আদর্শর যথার্থ অনুগমন করতেই সম্পূর্ণ অপারগ হয়েছে ও। আটারলি ওয়ার্থলেস্।

অন্ধকার হয়ে গেছে। পাশ দিয়ে ফুল স্পীডে সাইকেল চালিয়ে বানোয়ারীলাল চলে যেতে যেতে পান-ভরা মুখে বলল, সব ঠিকেই না হ্যায় খা-খরিয়াৎ ঘোষবাবু?

চমকে উঠে, পৃথু বলল, হাঁ! সব ঠিক্কেই…

কিন্তু কথাটা যখন বানোয়ারীলালের কাছে গিয়ে পৌঁছল তখন সে অনেকটাই দূরে এগিয়ে গেছে। শুনতে যে পেয়েছে, তা বোঝাবার জন্যেই হ্যান্ডেল ছেড়ে ডান হাতটা তুলল সে উঁচু করে। পান জৰ্জবে মুখে কী একটা বলল, বোঝা গেল না।

আরও একটু এগোতেই বড় রাস্তাতে এসে পড়ল ও। যদিও কম বাড়িতেই ইলেকট্রিসিটি আছে এখানে, তবুও প্রায়ই লোডশেডিং হয়। বড় রাস্তাতে পৌঁছতেই লোডশেডিং হয়ে গেল। দোকানে দোকানে মিটমিট করে কেরোসিনের আলো জ্বলছে। মোড়ের পানের দোকানের দেওয়ালজোড়া আয়নাটা কেরোসিনের আলোতে কেমন লালচে দেখাচ্ছে। তার মধ্যে পথচলতি মানুষের অসংখ্য ভুতুড়ে মুণ্ডু আর মুখের ছায়া নাচানাচি করছে। সাইকেল রিকশার প্যাঁক প্যাঁক। নানারকম মিশ্র আওয়াজ। কার্তিকের ওঠাবসা ধুলো। চিকার। লাক্ষাবোঝাই লরি। ভিড়, ভিড়।

পৃথুর ভাল লাগে না।

ভুলভুলাইয়ার দিকে যেতে যেতে ভাবছিল পৃথু। ভিড়ের মধ্যে, আওয়াজের মধ্যে থেকেও একদম একা হয়ে গিয়ে ভাবতে খুব ভাল লাগে ওর। ভাবতে ভাবতেই হাঁটছিল…

সময়ের কোনওই দাম নেই পৃথুর কাছে। তিন মাস ছুটি পাওনা ছিল, পুরোটাই নিয়ে নিয়েছে। ম্যানেজার জিজ্ঞেস করেছিলেন, “ইতনা দিন ছুটি লেকর কিজিয়েগা কেয়া ঘোষবাবু? চেঞ্জকা লিয়ে কাঁহি বাহার যা রহা হ্যায় ক্যা আপ?”

পৃথু হেসেছিল। বলেছিল, নহী।

তব?

অ্যাইসেহি…।

অ্যাইসেহি? তিন মাহিনা ভর? আপকা দিমাগ জরুর গড়বড়াগিয়া হোগা ঘোষবাবু। অজী। আদমী।

পৃথু জানে যে ও অজী আদমী। তবু ওঁকে বোঝাবার চেষ্টায় আরও কিছু না বলে শুধু বলেছিল, খ্যয়ের। লে হি রহা হ্যায়…।

সব কথা সবার বোঝার জন্যে নয়। সংসারে সব কথা সবাইকে বোঝাতে যাওয়াও মুর্খামি। বেড়াতে যাওয়ার জন্যে অথবা হৃতস্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের জন্যেও নয়; নিছকই কাজের জোয়াল থেকে ছাড়া পেয়ে একটু পড়াশুনো, ভাবাভাবি, লেখালেখি করার জন্যেই এই ছুটি নেওয়া।

রুষা এখানের কো-এড় স্কুলে ইংরিজি পড়ায়, তার স্কুলে ছুটি এবং মিলি-টুসুর ছুটিই কোথাও বেড়াতে বা অন্য কাজে যাওয়ার সময়, যদি কোথাও যাওয়া আদৌ হয়, নির্ধারিত করে। রুষার স্কুলের ছুটি যদিবা হল, তখন তার মহিলা সমিতির নানারকম কাজ থাকে। ছুটিতেই সে কাজ বেশি। খুবই সামাজিক, পরোপকারী, জনপ্রিয়, উদ্যোগী মেয়ে রুষা। স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের সম্মিলিত সুবিধা যখন হয়, তখন পৃথুকে প্রায়ই প্রচণ্ড অসুবিধে করেই ওদের সঙ্গে যেতে হয়। অনেকটা কন্ডাকটেড ট্যুওরের থ্যাঙ্কলেস্ নন-এনটিটি গাইডেরই মতো।

পৃথু কবিতা লেখে এবং দশ বছর আগে ‘অসূয়া নামে তার একটি কবিতার বই কলকাতা থেকে প্রকাশিতও হয়েছিল। অবশ্য নিজেই, কলকাতার এক বন্ধু মারফৎ প্রকাশ করেছিল নিজেরই খরচে। কবিতার কারণে তাকে রুষার কাছে প্রতিনিয়তই নিগৃহীত হতে হয়।

মেয়ে মিলি, মনে হয় তার অপদার্থ কবি-প্রকৃতির বাবার প্রতি ইদানীং সামান্য অনুকম্পা বোধ করে এবং অসম সাহসের সঙ্গে তা প্রকাশও করে। তাতে পৃথু বিব্রতই বোধ করে। অনুকম্পা, সে কারও কাছ থেকেই চায়নি। আজও চায় না।

রুষাকে যেমন ভয় পায় পৃথু, তেমন একধরনের ভক্তিও করে। তার চরিত্রে, পৃথু ওদের পিতৃতান্ত্রিক যৌথ-পরিবারের প্রয়াত জ্যাঠামশাইকে প্রত্যক্ষ করে। আ গ্রেট অটোক্র্যাট। সামান্য হলেও, রুষার বাড়ি-ঘর সবসময়ই ঝক্সক্ত করে। এই ছোট্ট সংসারের সমস্ত ক্রিয়াকাণ্ডই সুকঠিন নিয়মানুবর্তিতা ও কড়া শাসনের সঙ্গে চালিত হয়। ঘড়ি ধরে। এই ক্রিয়াকাণ্ডে পৃথুর মতো অগোছালো স্বভাবের এলোমেলো অপদার্থ মানুষের কোনওই ভূমিকা নেই। বরং এই সুসংহত স্রোতের পথে এই একমাত্র বাধা। এটা জেনে, মেনে নিয়ে; মনে মনে ও সবসময়ই বড় লজ্জিত থাকে। নিজের অসুয়া, নিজেরই প্রতি; লজ্জা করলেও ফেলে দিতে পারে না।

নির্বুদ্ধি প্রথম যৌবনে নিজের খরচে, এবং নিজের প্রাণ-প্রাচুর্যতায় কবিতার প্রথম ও শেষ বই প্রকাশ করতে পেরে ও অনেক অপরিচিত কবিদের সঙ্গে এক গভীর একাত্মতা বোধ করে। ওর মতো অনেকই ব্যর্থ কবি এদেশের আনাচকানাচ ভরে আছে যে, এ সত্যটা তাকে এক অচিহ্নিত, পতাকাহীন দলগত বোধেও উদ্বুদ্ধ করে। “ব্যর্থ কবি” কথাটাতেও ওর ঘোর আপত্তি আছে। কবিতার সাধনা যাঁরা করেন তাঁরা কি কখনই ব্যর্থ হন? কবিতার সার্থকতা তো কবিতারই মধ্যে, কবির যশেই কি তা সীমিত? ব্যর্থ কবিরা মনে মনে যতখানি কবি, তথাকথিত অনেক সফল কবিরাই হয়ত ঠিক ততখানি নন, এমন একটা ভাবনার গায়ে পৃথু ওর পুরুষাঙ্গে হাত বোলানোর মতই অত্যন্ত গোপনে এবং আদরে হাত বোলায়। পৃথুর মনে হয় যে, সাফল্য, বোধহয় মানুষের সুক্ষ্ম অনুভূতি এবং তীব্র বোধকে প্রায়শই ভোঁতা করে দেয়।

গত মাসে কলকাতা থেকে অনেক নামী-দামী কবিরা এসেছিলেন হাটচান্দ্রাতে। কবি সম্মেলনে। নবনীতা দেবসেন-এরও আসার কথা ছিল। অসুস্থতার কারণে আসতে পারেননি। প্রবীণদের মধ্যে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এসেছিলেন। তরুণতমদের মধ্যে জয়িতা মিত্র। সার্কিটহাউস এবং এখানকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বাড়িতে ভাগ করে করে মানী অতিথিদের রাখা হয়েছিল।

কবি সম্মেলন ছিল দু’দিনের। সারা শহরে হৈ হৈ পড়ে গিয়েছিল। এতজন বিখ্যাত কবিকে কাছ থেকে দেখা গেল, মধ্যপ্রদেশের এই জংলি হাটচান্দ্রার কবিতাপ্রিয় মানুষদের এই-ই অশেষ সৌভাগ্য। পৃথুর মতো নগণ্য মানুষেরও তাই-ই। আলাপিত হতে পেরেছিল শুধু দুজনের সঙ্গে। রুষাও গেছিল সম্মেলনে। সুন্দরী, সপ্রতিভ এবং মার্জিত রুচি, নিখুঁত ইংরিজি উচ্চারণের মনোহারিনী রুষাকে ছাড়া হাটচান্দ্রার কোনও অনুষ্ঠানই যেন প্রাণ পায় না। ওই-ই হাটচান্দ্রার ট্রাম্পকার্ড। ডিএম. এস-পি থেকে শুরু করে এখানের সব কৃতী মানুষরাই রুষার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। পুরুষদের চোখে অবশ্য প্রশংসা ছাড়াও অন্য কিছু থাকে। রুষা সেটা জানে। এবং সেই অহংবোধটা ও ললিপপ-এর মতো চুষে চুষে তারিয়ে তারিয়ে খায়।

জীবনে যদিও রুষা একটিও বাংলা কবিতা পড়েনি, তবু ওর অটোগ্রাফ খাতায় ও সমস্ত সফল কবির স্বাক্ষরই সংগ্রহ করেছিল। কোনও কবিই রুষার সুন্দর মুখে চেয়ে, জিজ্ঞেস করতে পারেননি

যে, সে তাঁদের কারও একটি কবিতাও পড়েছে কি না। হেসে, সাগ্রহে স্বাক্ষর দিয়েছিলেন। সকলেই। কবিরা সৌন্দর্যর কদর না করলে, কারাই বা করবেন?

পৃথুর খুবই ইচ্ছা ছিল একদিন বাড়িতে কবিদের সবাইকে এনে চা খাওয়াবে, বিরজুর দোকানের কালাজামুন আর দহিকচুরীর সঙ্গে। কিন্তু রুষা বলেছিল, এমন থার্ডক্লাস বাড়িতে সুপার-ক্লাস অয়েল-অফ ফেমাস কবিদের ডাকা যায় না। ও মরে গেলেও নিজেকে এতখানি অসম্মানিত করতে পারবে না। ঠোঁট বেঁকিয়ে বিদ্রুপ করে বলেছিল, সাধ্য নেই এককণা; সাধ অনেক।

পৃথু আহত গলায় বলেছিল, আন্তরিকতার কি কোনওই দাম নেই?

নেই। আন্তরিকতা একটা অলিট ওয়ার্ড। টাইমবার। কবিতা যাঁরা লেখেন, তাঁরা সকলেই যে ব্যক্তিগত জীবনে তোমার মতোই ল্যাজে-গোবরে, ওয়ার্থলেস, আপ্র্যাকটিকাল হন না, তা সাকসেসফুল কবিদের দেখেও না বুঝলে, না-শিখলে আমার কিছুই বলার নেই। তোমার মান-সম্মান না থাকতে পারে; কিন্তু আমার আছে। এমন বোেকা-বোকা শ্যাবী ব্যাপার আমি ঘটতে দেব না প্রাণ থাকতে।

“স্বদেশে পূজ্যতে রাজা বিদ্বান সর্বত্র পূজ্যতে”!

দেখে, ভাল লেগেছিল পৃথুর।

একী! এ কোথায় চলে এসেছে ও!

প্রায় শহর ছাড়িয়ে, রাত মোহানার পথের দিকে! ভুলভুলাইয়া তো ফেলে এসেছে অনেকই পিছনে। কোথায় পড়ে রইল লাল লাল পদ্মফুল আঁকা পদ্মা স্টোর্স-এর সাইনবোর্ড! দোকান সব বন্ধ হয়ে গেছে সাতটাতেই। ঈস্স্…বড়ই ভুল হয়ে যায় পৃথুর…।

আজ কপালে আছে…

পৃথু যদি আরেকটি কবিতার বই নিজের খরচে প্রকাশ করতে পারে, তাহলে সেই সংকলনের নাম দেবে “ভুলভুলাইয়া”।

আজ রুষার কাছে…না…কপালে আছে…

<

Buddhadeb Guha ।। বুদ্ধদেব গুহ