সাপটি ছিল রান্নাঘরের পেছনে। সেখানে পূর্ণিমাদি কয়েক মাস আগে নিজের হাতে পাঁচটি কাঁচা লঙ্কাগাছ লাগিয়েছিলেন। একদিন সেই গাছে সাদা সাদা ছোট ছোট ফুল ফুটল। তারপর ফল হল সেই ফুল থেকে। আশ্চর্য, ফুল ফুটেছিল সাদা রঙের, অথচ তার থেকে লঙ্কা হল কালো মিশমিশে। পূর্ণিমাদি যখন তখন সেই লঙ্কাগুলোকে আদর করতে যান। অনেকে ফুলগাছ ভালবাসে, কিন্তু পূর্ণিমাদির এই লঙ্কাগাছ-প্রীতি দেখে ঠাট্টা করত অনেকে। কতই-বা দাম কাঁচা লঙ্কার।

রান্নাঘরে উনুনে ছোলার ডাল চাপিয়ে পূর্ণিমাদি দৌড়ে এসেছিলেন দুটো কাঁচা লঙ্কা ছিঁড়ে নিয়ে যেতে। দৌড়ে এসেছিলেন বলেই দেখতে পাননি সাপটি লঙ্কাগাছের ঝিরঝিরে ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছিল। পূর্ণিমাদি সেটার গায়ের ওপর পা দিয়ে ফেললেন। সাপটি প্রথমে পালাবার চেষ্টা করল, তারপর আবার কী ভেবে মুখ ঘুরিয়ে কামড়াল।

সেই অবস্থাতেও পূর্ণিমাদি একটা ইট তুলে সাপটাকে মারতে গেলেন। তার ব্যথাবোধের চেয়েও প্রতিশোধ-স্পৃহা প্রবল হল। তিনি ভাবলেন, তিনি তো আর বাঁচবেনইনা। কিন্তু এই সাপটা যেন আর কারুকে না কামড়ায়। সাপটা তার সাধের লঙ্কা গাছ পেঁচিয়ে রইল, ইট গায়ে লাগল না।

পূর্ণিমাদি রান্নাঘরে ফিরে এসে আস্তে আস্তে বসে পড়লেন মাটিতে, অনন্তকে ডেকে বললেন, অনন্ত, আমি গেলাম। আমার জিনিসপত্র আমার ভাইপোর কাছে পাঠিয়ে দিস। একবার বিকাশকে ডাকবি?

সবাই যখন ছুটে এল, তখন পূর্ণিমাদিকে ধরাধরি করে বারান্দায় এনে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে। অনন্ত বুদ্ধি করে একটা গামছা দিয়ে বাঁধন দিয়েছে পায়ে। এর মধ্যেই নেশাগ্রস্তের মতো চোখ ঢুলু ঢুলু হয়ে এসেছে পূর্ণিমাদির, কিন্তু তিনি এতক্ষণের মধ্যে একবারও যন্ত্রণার শব্দ করেননি। বিকাশ এসেই ভয়ার্ত চ্যাঁচামেচি শুরু করে দিল, একবার পুর্ণিমাদির মাথাটা কোলে নিয়ে বসল, পরক্ষণেই আবার মাথাটা নামিয়ে ছুটে গিয়ে স্টোর্স থেকে বিলিতি দড়ি নিয়ে এল। পূর্ণিমাদির হাঁটুর তলা থেকে উরু পর্যন্ত বাঁধন দিল চার জায়গায়।

সাহেবদের মধ্যে কিন্তু কোনও উত্তেজনা নেই। তারা সব কিছুর জন্য তৈরি থাকে। এই সাপ, বাঘ আর সন্ন্যাসীতে ভরা নোংরা জলকাদার দেশে তারা কি তৈরি না হয়ে আসবে? এর মধ্যে রজার্সের মাথা সব চেয়ে ঠাণ্ডা, সে বিশেষ কথা বলে না। সে হাঁটু গেড়ে বসে প্রথমে পূর্ণিমাদির পায়ের ক্ষতটা পরীক্ষা করে দেখল। তারপর দু’বার মাথা নাড়ল। অর্থাৎ, সাপটা সত্যি বিষাক্ত। সে হাত বাড়িয়ে দিল নোয়েল এডারসেনের দিকে। নোয়েলের কাছে ওষুধের বাক্স।

ছুরি দিয়ে প্রথমে ক্ষতস্থানটা চিরে দিয়ে সেখানে ছড়িয়ে দিল একটা পাউডার। তারপর দিল ইঞ্জেকশান। এবার সে দাঁড়িয়ে দড়ির বাঁধনগুলো খুলতে লাগল। বিকাশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, এক্ষুনি বাঁধন খুলে দেবেন! চব্বিশ ঘণ্টা রাখতে হয় না?

রজার্স নিজের কাজ না থামিয়ে বলল, দবকার নেই। উঠে দাঁড়িয়ে সে নোয়েল এন্ডারসেনকে বলল, শি উইল বি ওকে!

 সুখেন্দু জিজ্ঞেস করল, হাসপাতালে পাঠাবেন না?

 রজার্স বলল, কোনও প্রয়োজন নেই।

সুখেন্দু কিন্তু এত বড় দায়িত্ব নিতে চায় না। মফঃস্বলের শহরগুলির মধ্যে বাঁকুড়া শহর এক দিক থেকে ভাগ্যবান, কারণ এখানে একটি মেডিক্যাল কলেজ আছে। অনেক ডাক্তার।

সে আবার বলল, এখানে খুব ভাল হাসপাতাল আছে। আমরা শুধু শুধু ঝুঁকি নেব কেন?

রজার্স কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, ঠিক আছে, তাহলে পাঠাও। আমি যে-ইঞ্জেকশানটা দিয়েছি, তার নাম লিখে দিচ্ছি, ডাক্তারদের দেখিও।

বোধিসত্ত্ব এক পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন। তিনি এক দৃষ্টিতে পূর্ণিমাদির মুখের দিকে চেয়ে আছেন। সেই মুখে মৃত্যুর ছায়া। বহুকালের সংস্কার অনুযায়ী পূর্ণিমাদি ধরেই নিয়েছেন যে, সাপে কামড়ালে মানুষকে মরতে হয়। সুতরাং মৃত্যুকে মনে মনে মেনে নিয়েছে, কোনও ওষুধ কি তাকে বাঁচাতে পারবে? এই হাসিখুশি সরল নারীটির জন্য বোধিসত্ত্ব খুব দুঃখ বোধ করলেন। কেন একে হঠাৎ সব কিছু ছেড়ে চলে যেতে হবে? পূর্ণিমাদির কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। ঠিক চন্দনের ফোঁটার মতো। বোধিসত্ত্ব শিউরে উঠলেন যেন।

পূর্ণিমাদিকে একটা স্ট্রেচারে তুলতে যেতেই তিনি মৃদু গলায় বললেন, না, আমি হাসপাতালে যাব না। আমাকে এখানেই শান্তিতে মরতে দাও।

সুখেন্দু বলল, আপনার কিছু ভয় নেই পূর্ণিমাদি। ওই সাপটার বিষ নেই।

 পূর্ণিমাদি বলল, আমি সাপ চিনি।

নোয়েল এডারসেন তাকালেন রজার্সের দিকে। রজার্স গভীর আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলল, একশো ভাগ নিশ্চিত উনি বেঁচে যাবেন।

সুখেন্দুরা জোর করে পুর্ণিমাদিকে স্ট্রেচারে তুলল। পূর্ণিমাদি ছটফট করছেন। এখন সারা মুখে ঘামের ফোঁটা। স্ট্রেচারটা গাড়িতে তুলেই বিকাশ পূর্ণিমাদির পায়ে আবার বাঁধন দিতে গেল। এটাও তার সংস্কার যে সাপে কাটা মানুষকে দড়ি দিয়ে বাঁধতে হয়। রজার্স দৌড়ে গিয়ে বলল, প্লিজ! বেঁধো না। ও-রকম ভাবে বাঁধলে ওষুধটা রক্তে ছড়াবে কী করে?

ড্রাইভার উঠে বসেছে, গাড়ি এক্ষুনি ছাড়বে, বিকাশ পূর্ণিমাদির মাথা কোলে নিয়ে বসেছে। সেই সময় বোধিসত্ত্ব গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে পূর্ণিমাদিকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার বাঁচার ইচ্ছে করে না?

এবার পূর্ণিমাদি একেবারে হাউ হাউ কেঁদে উঠলেন। মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বললেন, ওগো, আমার সাধ আহ্লাদ কিছুই মিটল না। আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ? আমাকে কেন যমে ধরল? আমি কী পাপ করেছি? বিকাশ, বিকাশ, আমার কপালে এই ছিল?

বোধিসত্ত্বের চোখে জল এসে গেল। সাধ আহ্লাদ এই শব্দ দুটি কত সুন্দর। মৃত্যুপথযাত্রিনীর মুখে এই শব্দ মর্মান্তিকতম। বোধিসত্ত্ব ভাবলেন, এমন কোনও অলৌকিক উপায় নেই, যাতে এই মেয়েটিকে বাঁচানো যায় তিনি জানেন না। তিনি অসহায়।

বিমলেন্দু এসে বলল, আপনি সরুন, গাড়ি ছাড়বে।

বোধিসত্ত্ব গাড়ি থেকে হাত সরিয়ে নিলেন। গাড়িটা হুস করে বেরিয়ে গেল। তখন তিনি দেখলেন, রোজানা তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। তিনি কাছে এগিয়ে যেতেই রোজানা বলল, আপনি কাঁদছেন কেন? ওই মহিলাটি তো বেঁচে যাবেন।

বোধিসত্ত্ব ওর ভাষা বুঝলেন না। তবু চোখ মুছলেন।

নোয়েল এল্ডারসেন বললেন, মাত্র দু’চার দিন আগেও যাকে চিনত না, তার জন্যও কেউ কাঁদতে পারে! আশ্চর্য না? এই লোকটি বিচিত্র।

রোজানা বলল, আমার ইচ্ছে হয়, আমিও কারুর জন্য কাঁদি। কিন্তু আমার অশ্রু নেই।

কয়েক জন উৎসাহী লোক এর মধ্যে সাপটাকে খুঁজে বার করে মেরেছে। একটা লাঠির ডগায় সেটাকে ঝুলিয়ে নিয়ে এল ওদের সামনে। ইউনিটের আরও তিনটি মেয়ে সেই মরা সাপ দেখেই ভয়ে সিটিয়ে গেল। নোয়েল এন্ডারসেন বললেন, কোয়াইট বিগ। এ-রকম সাপ নিশ্চয় আরও আছে।

সুখেন্দু বলল, কাল রাত্তিরে বৃষ্টি হয়েছিল তো, এই সাপটা আজ বেরিয়েছিল। বর্ষা নামবার পর এদিকে প্রচুর সাপ দেখা যাবে।

রজার্স নিঃশব্দে চিন্তিত ভাবে মাথা নাড়তে লাগল। অর্থাৎই উনিট নাম্বার ফাইভ-এর কার্যসূচিতে আর একটা জিনিস বাড়ল। ডুমুরগাছি গ্রামটিকে সাপমুক্ত করতে হবে।

সেদিন বিকেলবেলা বোধিসত্ত্ব গেলেন বাঁকুড়া শহরের দিকে। তার খালি পা। বিমলেন্দু সেই জন্য বলেছিল, মশাই, খালি পায়ে রাস্তায় ঘুরবেন না। আপনার কাছে তো কিছুই নেই। বড়সাহেবকে বলে কিছু টাকা অ্যাডভান্স নিন। তারপর এক জোড়া চটি জুতো অন্তত কিনুন।

বোধিসত্ত্ব ভাবলেন, খালি পায়ে ঘুরলে পায়ে কাঁটা ফুটে যাবার কথা বুঝি বলেছে বিমলেন্দু। তা ফুটলই বা কাঁটা। হাজার হাজার বছর ধরে কোটি কোটি মানুষ পায়ে হেঁটে ঘুরেছে এ দেশে।

বিমলেন্দুর পাশে দাঁড়িয়ে ছিল ইউনিটের ডাক্তার তপন চক্রবর্তী। সে বলল, খালি পায়ে হাঁটলে পা দিয়ে হুক ওয়ার্ম ঢুকে যাবে। এখানকার লোকদের বলে বলে কিছুতেই বোঝানো যায় না যে, মাঠেঘাটে পায়খানা করবে না। নিজেরাই রোগ ছড়াচ্ছে।

এই কথাটাই ভাবতে ভাবতে চললেন বোধিসত্ত্ব। জুতোটা তাহলে বিলাসিতার অঙ্গ নয়? সভ্যতা বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের প্রয়োজনের বাহুল্য দেখা দিচ্ছে। এবং প্রত্যেকটির জন্য একটা যুক্তি তৈরি হয়েছে। চোখ থাকলে পথের কাঁটা বাঁচিয়ে হাঁটা যায়। কিন্তু পায়ের তলা দিয়ে ঢুকে যাবে অতি সূক্ষ্ম পোকা! একটা অদৃশ্য জীবজগৎ আছে, যা মাটিতে বাতাসে ছড়িয়ে থেকে মানুষকে সব সময় মারবার চেষ্টা করছে। যারা ঈশ্বর-চিন্তায় মগ্ন তারা কি ভাবে এই বীজাণুপুঞ্জও ঈশ্বরের সৃষ্টি?

বড় রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বোধিসত্ত্ব এক সময় বাঁকুড়া শহরে পৌঁছে গেলেন। একটি চুপসে যাওয়া নদীর ওপর দিয়ে সেতু। তারপর অজস্র দোকানপাট, বহু বড় বড় বাড়ি, অনেক মানুষ। মানুষের ভিড়ের ফাঁকে ফাঁকে চলে যাচ্ছে নানা রকমের গাড়ি।

কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করার পর বোধিসত্ত্ব ভাবলেন, এই নগরীরই কোথাও পূর্ণিমাদি রয়েছেন। এখনও বেঁচে আছেন কি? বিকাশ সারা দিনে আর ফিরে যায়নি। বোধিসত্ত্ব একবার ভাবলেন, পূর্ণিমাদির খোঁজ করবেন। সাধ-আহ্লাদ শব্দ দুটি তার বার বার মনে পড়তে লাগল, কিন্তু বোধিসত্ত্ব যেন একটু ভয় পেলেন মনে মনে। তিনি মৃত্যুর মুখোমুখি হতে চান না।

ঘুরতে ঘুরতে একটা আশ্চর্য দৃশ্য দেখে তিনি থমকে দাঁড়ালেন। তার শরীরে একটা শিহরণ খেলে গেল।

আচার্য যোগেশচন্দ্র রায় রোডের ওপর একটা বড় গাছের নিচে বসে আছে একটি লোক। লোকটির একটা পা কাটা। সামনে একটা ময়লা ন্যাকড়া পাতা, তার ওপর দু’চারটে খুচরো পয়সা। লোকটি সামনে একটি হাত বাড়িয়ে রেখে চোখ বুজে ঝিমোচ্ছ। বোধিসত্ত্ব স্তম্ভিত ভাবে দেখতে লাগলেন লোকটিকে। এই লোকটি তার দারুণ চেনা। এই লোকটির বয়েস অন্তত দু’তিন হাজার বছর। যুগের পব যুগ উধাও হয়ে গেছে, ঘটে গেছে কত সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন, কত মানুষ এসেছে, ফের নিশ্চিহ্ন হয়েছে, কত আকাঙ্ক্ষা, দীর্ঘশ্বাস মিশেছে হাওয়ায়, গ্রাম ভেঙে তৈরি হয়েছে শহর। কুঁড়েঘরের জায়গায় গজিয়ে উঠেছে প্রাসাদ, মানুষ বানিয়েছে নিজের থেকেও হাজার হাজার গুণ শক্তিশালী যন্ত্র, তবু তার মাঝখানে তিন হাজার বছরের ওই পুরনো মানুষটি বসে আছে ভিক্ষের জন্য হাত পেতে। যুগ-যুগান্তরে সে একটুও বদলায়নি। এই সুন্দর প্রশস্ত রাস্তাটির দুদিকে বড় বড় বাড়ি, রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে কত মানুষ, সবাই জানে সব কিছু বদলায়, শুধু ওই মানুষটি একই রকম রয়ে গেছে। ওর এ কী মোহনিদ্রা! কাছেই একটি খুব বড় অট্টালিকা তৈরি হচ্ছে, ঘট ঘট করে শব্দ হচ্ছে একটি বেখাপ্পা চেহারার সিমেন্ট মিক্সার যন্ত্রে। এই লোকটা যেন সেই শব্দও শুনতে পায় না, ও জানেনা মাথার ওপর দিয়ে পার হয়ে গেছে কত কাল। ও ছিল কৌশাম্বীতে, বারাণসীতে, পাটলিপুত্রে, ঠিক এই রকম পথের ওপরে এক গাছতলায়, সামনের দিকে বাড়ানো হাত।

বোধিসত্ত্ব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। ওই লোকটির একটি পা কাটা। নিশ্চই ওরও সাধ-আহ্লাদ আছে।

ও দাদা শুনুন।

বোধিসত্ত্ব পেছন ফিরে দেখলেন, এক জন বেঁটে খাকি পোশাক-পরা লোক ডাকছে তাকে। লোকটি কাছে এগিয়ে এসে বললেন, দাদা, একটু হাত লাগাবেন এসে?

বোধিসত্ত্ব বুঝতেই পারলেন না, লোকটি কী বলতে চায়।

আসলে কাছেই একটা সাদা অ্যাম্বাসাডর গাড়ি থেমে আছে। এই লোকটি সেই গাড়ির ড্রাইভার। গাড়িটি ঠেলতে হবে। লোকটার ইঙ্গিতে বোধিসত্ত্ব গাড়িটার কাছে এলেন। গাড়ির মধ্যে স্থিরভাবে বসে আছে এক নারী। তাকে দেখে একটু চমকে উঠলেন বোধিসত্ত্ব, এ তো ঠিক অবিকল সেই মাটি কাটা কামিন লছমিয়া। সেই চোখ, সেই রকম নাক, যে-রকম বিষণ্ণ উদাস ভাবে সে তার মরদ হারানোর গল্প বলেছিল, নারীটি ঠিক সেই দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। অবশ্য এর রঙ অনেক পরিষ্কার, শাড়ি মূল্যবান, আঙুলে দীপ্তি পাচ্ছে মণিবসানো আংটি। তবু একে দেখলে লছমিয়ার কথাই মনে পড়ে। বোধিসত্ত্ব মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আরও অনেক দূর পর্যন্ত দেখতে পেলেন।

ড্রাইভার এক হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে ঠেলতে লাগল সামনে থেকে। বোধিসত্ত্ব হাত লাগালেন পেছনে। গাড়িটা জীবন্ত হল না, ঠেলা খেয়ে গড়াতেই লাগল। সেইভাবে গাড়িটাকে নিয়ে বোধিসত্ত্ব সেই গাছতলার ভিক্ষুকটিকে পেরিয়ে গেলেন। তার মনে হল, এই দৃশ্যাবলীর মধ্যে একটা বিশেষ মানে আছে। রাস্তার পাশে বসে আছে ওই পাকাটা মানুষটি, আর এই অক্ষম গাড়ির মধ্যে এক মহিলা।

বেশ কিছুক্ষণ চলার পর, ড্রাইভারটি ক্লান্ত হয়ে থামল। কপালের ঘাম মুছে সে বলল, নাঃ! এ এখন চলবে না। মিস্তিরি ডাকতে হবে, মাইজি!

মহিলাটি বলল, কতক্ষণ লাগবে?

 সে তো বলতে পারছি না। মিস্তিরি এসে দেখবে, কোথায় ফেঁসে গেল কে জানে।

আমি এতক্ষণ বসে থাকব নাকি?

ড্রাইভার গাড়ির বনেট তুলে ফেলেছে। মহিলাটি বেরিয়ে এসে বোধিসত্ত্বের দিকে চেয়ে বলল, এই একটা রিকশা ডেকে দাও তো।

বোধিসত্ত্বকে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করার একমাত্র কারণ, তার পায়ে জুতো নেই। মুখখানাও ঠিক বাঙালিদের মতো নয়। তিনি মেয়েটির মুখের দিকে চেয়ে আছেন অপলক ভাবে। খালি পায়ের লোকেরা গাড়ি চড়া মেয়েদের দিকে এ-রকম ভাবে তাকায় না।

মহিলা একটু ভুরু তুলে রীতিমতো আদেশের সুরে বললেন, একটা রিকশা ডেকে দাও না!

বোধিসত্ত্বকে ডাকতে হল না, তখুনি একটা ফাঁকা সাইকেল রিকশা ঘণ্টা বাজিয়ে কাছে এসে দাঁড়াল। শাড়ির প্রান্ত সামান্য উঁচু করে মহিলাটি বিকশায় উঠে ঘাড় সোজা করে বসল। তারপর রিকশা চলতে শুরু করার পর শেষ মুহূর্তে একবার কৃপার দৃষ্টি দিল বোধিসত্ত্বের দিকে।

বোধিসত্ত্ব হাঁটতে লাগলেন বিপরীত দিকে। তিনি ওই মহিলাটির কথা ভাবছেন। এই প্রথম তিনি একটি নারীর কাছ থেকে আদেশ শুনলেন। কিন্তু ওই মেয়েটি একটি অপরিচিত মানুষকেও আদেশ করে কেন? সে কি শুধু রূপ আছে বলে? ও কি ধরে নিয়েছে সকলেই ওর রূপের জন্য লোলুপ? অথবা এরমধ্যেও আরও কিছু গভীর রহস্য আছে?

সেই দিন রাত্রে বিকাশ বোধিসত্ত্বের ঘরে এসে বলল, দাদা আপনার সঙ্গে দুটো কথা আছে।

রাত্রি ন’টা পর্যন্ত শেষ সংবাদ, পূর্ণিমাদি তখনও নিশ্বাস ফেলছে। ডাক্তারের বলেছে, চব্বিশ ঘন্টা না কাটলে কিছুই বলা যায় না।

বিকাশ চেয়ারের ওপর বসে বলল, হাসপাতালে প্রলাপের ঘোরে পূর্ণিমাদি বার বার আপনার নাম করছিলেন। ওঁর ধারণা আপনি এক জন সাধু পুরুষ। আপনি কি সত্যি সাধু?

বোধিসত্ত্ব বললেন, না।

কিন্তু আপনার হাবভাবের মধ্যে একটা সাধু সাধু ভাব আছে। আমিও লক্ষ্য করেছি।

সাধু কাকে বলে?

এই যারা সাধনা-টাধনা করে। সংসারে থাকে না। মানুষের মঙ্গল চায়। আজকাল অবশ্য অনেক ভণ্ড সাধুও আছে।

আমি কোনও সাধনা করি না। আমি কী চাই, তা এখনও জানি না।

সে কি ছাই আমিই জানি? বঙ্কিমবাবুকে শ্রীরামকৃষ্ণ জিজ্ঞেস করেছিলেন, জীবনের উদ্দেশ্য কী? বঙ্কিমবাবু বলেছিলেন, আহার, নিদ্রা, মৈথুন। সোজা বাংলা কথা। আমরাও তো তাই করেই কাটাচ্ছি। তবে কোনও কোনও মানুষ বোধহয় আরও বেশি কিছু চায়। যাই হোক, যা বলতে এসেছিলাম। পূর্ণিমাদির ধারণা, উনি পাপ করেছেন, তাই এই শাস্তি পেলেন। আমি কতবার বোঝালাম, উনি কোনও পাপ করেননি। উনি অবুঝ। উনি যদি মরেও যান, তাহলেও মৃত্যুর আগে এ-রকম একটা খারাপ ধারণা করে যাবেন, এটা ভাবতেই আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আপনি একবার গিয়ে বুঝিয়ে বলবেন যে, উনি সত্যি কোনও পাপ করেননি।

কিন্তু আমি তো পাপ-পূণ্য বিষয়ে কিছু জানি না।

উনি বোধহয় আপনার কথা শুনবেন।

 কিন্তু আমি ওকে কী বলব? পাপের প্রশ্নই-বা উঠছে কেন?

আনি আপনাকে বুঝিয়ে বলছি। পূর্ণিমাদি বয়েসে আমার চেয়ে দু’বছরের বড়। এখানকার বড় ছোট সবাই ওকে পূর্ণিমাদি বলে, আমিও বলি। কিন্তু আমি ওকে ভালবাসি। দিদির মতো নয়, অন্য রকম।

বোধিসত্ত্ব ভালবাসা শব্দটিকে কামনা অর্থে নিলেন। ভারতীয় ঐতিহ্যের যে টুকরো টুকরো স্মৃতি তাঁর মনে পড়ে, তার মধ্যে ভালবাসার কোনও স্থান নেই। সন্ত মহাপুরুষেরা মানুষকে ভালবাসতে বলেছেন। কিন্তু পুরুষকে বলেননি নারীকে ভালোবাসতে। পুরুষ নারীকে হয় কামনা করবে অথবা কামনা ত্যাগ করে নারীবিমুখ হবে।

বিকাশ বলল, প্রথম প্রথম কিছু আপত্তি করলেও শেষ পর্যন্ত পূর্ণিমাদিও আমাকে ভালবেসে ফেলেছিলেন। আপনি জানেন বোধহয়, উনি বিধবা?

বোধিসত্ত্ব ঘাড় নাড়লেন।

জীবনে উনি অনেক দুঃখকষ্ট পেয়েছেন। আমিও পেয়েছি। আমি বিয়ে করেছিলাম খুব অল্প বয়েসে। দুটি ছেলে-মেয়ে আছে। বিয়ে করেছিলাম নিজে পছন্দ করে, প্রেম করে। কিন্তু সব কিছু গোলমাল হয়ে গেল। আমার বউ এখন পাগল। বছরে আট ন’মাস তাকে রাখতে হয় নার্সিং হোমে, বাকি সময়টা বাড়িতে এসে থাকে, তা-ও ঠিক সুস্থ নয়। এক দিন আমাকে জ্বলন্ত স্টোভ ছুঁড়ে মেরেছিল। ডাক্তাররা বলেছে, ও কোনও দিনই আর পুরোপুরি সারবে না। বরং এই পাগলামির ঝোঁকটা আরও বাড়তে পারে। ছেলে-মেয়ে দুটোকে হস্টেলে রাখতে বাধ্য হয়েছি। আমার স্ত্রী গোপাকে এখানেও নিয়ে এসেছিলাম একবার, পনেরো দিনের বেশি রাখা গেল না। প্রথম প্রথম ভাল ছিল, হঠাৎ এমন গোলমাল শুরু করে দিল, এখানকার সবাই দেখেছে তাকে, পূর্ণিমাদিও দেখেছেন। আচ্ছা, পূর্ণিমাদিকে আপনার কেমন মনে হয়?

বোধিসত্ত্ব একথার কী উত্তর দেবেন? এক জন মানুষ সম্পর্কে ধারণা গড়ে উঠতে কত দিন লাগে? তবু প্রথম দর্শনেই যা মনে হয়, সেই ভিত্তিতে তিনি বললেন, শরীরে দয়া আছে।

বিকাশ বলল, ঠিক তাই। মুখে সবাইকে চোপা করলে কী হবে? ওর মনটা খুব নরম। আমার স্ত্রীকে দেখে উনি খুব কষ্ট পেয়েছিলেন? আমাকে বলেছিলেন, আহা, এত ভাল মেয়েটা, সে আর ভাল হবে না? ওর ছেলে মেয়েরা পাবে না মায়ের স্নেহ।

বোধিসত্ত্ব জিজ্ঞেস করলেন, মানুষ কেন পাগল হয়?

আরে দাদা, বড় ডাক্তাররাই এখন সেকথার উত্তর দিতে পারে না। আমার দিক থেকে কোনও ত্রুটি ছিল না। আমি তো গোপার জন্য আমার যথাসাধ্য করেছি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওদের ফ্যামিলিতে ওর এক মামা পাগল ছিলেন। এইটুকু হিস্ট্রি। সেই মামাকে গোপা চোখেও দেখেনি, অথবা তার জন্যই বিয়ের পাঁচ বছর বাদেই ছেলে-মেয়ের সংসার থাকলেও গোপাকে পাগল হয়ে যেতে হবে? এটা কীসের শাস্তি। এক-এক সময় যখন গোপা ভাল থাকে, আমার হাত চেপে ধরে বলে, ওগো, আমি কেন পাগল হলাম? আমার কান্না এসে যায়, বুঝলেন!

বিকাশের চোখ ছল ছল করে উঠল। বোধিসত্ত্বমুখটা ফিরিয়ে নিলেন।

বিকাশ নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বলল, গোপাকে তো আমি কোনও দিন ফেলতে পারব না। সারা জীবন তার খরচ টেনে যেতে হবে আমাকে, তা আমি যাব ঠিকই। কিন্তু আমার জীবনে কি আর কিছু থাকবে না? পূর্ণিমাদি জীবনে অনেক দুঃখ পেয়েছেন, আমিও পেয়েছি। দুঃখের জন্য আমরা কাছাকাছি এসেছিলাম। পূর্ণিমাদি বিধবা, আমার স্ত্রী থাকতেও স্ত্রী নেই। কিন্তু আমরা বিয়ে করতে পারব না। এ সমাজ সে-অধিকার আমাদের দেবে না। তবু যদি আমাদের ঘনিষ্ঠতা হয়, সেটা কি দোষের? আপনি বলুন, দোষের?

বোধিসত্ত্ব একটুঅসহায় বোধ করলেন তিনি তো বিচারক নন। তিনি এখানে কী মতামত দেবেন?

 বিকাশ বলল, আপনি কাল সকালে চলুন আমার সঙ্গে। পূর্ণিমাদিকে একবার বুঝিয়ে বলুন। আপনি সাধু হোন আর না-ই হোন, উনি যখন আপনাকে সাধু বলে মনে করেছেন, তখন আপনার কথা মানবেন।

বোধিসত্ত্ব জিজ্ঞেস করলেন, আমি কী বলব?

এই যে-সবকথা আপনাকে বুঝিয়ে বললাম, এতে কি আপনার মনে হয় আমরা কোনও অন্যায় করেছি? কারুকে ভালবাসাটা অন্যায়? এই যে এখানে রেখা, স্নিগ্ধা, দেবযানী–এই আরও তিনটি মেয়ে রয়েছে, এর মধ্যে দেবযানীকে সবাই সুন্দর বলে। কিন্তু ওদের কাছে তো আমি কখনও ছোঁক ছোঁক করতে যাইনি। আমি পূর্ণিমাদিকেই ভালবাসি, আমার চেয়ে বয়সে বড় হলেও। আর একটা কথা বলছি, আপনার কাছে কিছু লুকোব না, কিন্তু আপনাকে বিশ্বাস করতেই হবে। এত দিনের মধ্যে মাত্র এক দিন আমরা একসঙ্গে শুয়েছিলাম। তা-ও সেটা হঠাৎ হয়ে গিয়েছিল, আমরা আগে থেকে কেউ কিছু ঠিক করিনি, যেন ঠিক চুম্বকের মতে, সে-দিন পূর্ণিমাদি অনেকক্ষণ কেঁদেছিলেন। আমিও কেঁদেছিলাম গোপার কথা ভেবে, কিন্তু বলুন তো, এটা কি পাপ? আপনি ঠিক করে বলুন।

বোধিসত্ত্বের মনে পড়ল একটা কথা। যে-সব নারী মাতৃরক্ষিত, পিতৃরক্ষিত, মাতৃপিতৃরক্ষিত, ভ্রাতৃরক্ষিত, ভগিনীরক্ষিত, আত্মীয়রক্ষিত, সস্বামীক, বাগদত্তা এবং যার সঙ্গে মিলন শাস্তিযোগ্য, এই রকম মেয়েদের সঙ্গে সহবাস করা অন্যায়। বাকি রইল কে? নিজের স্ত্রী এবং বেশ্যা। কিন্তু এই বিধান তিনি উচ্চারণ করতে পারলেন না। শ্রাবস্তীর জেতবনে ঘোষিত হয়েছিল এই বিধান। তবু তাঁর খটকা লাগল। বিকাশের মুখের দিকে তিনি তাকিয়ে রইলেন। এই কি পাপীর মুখ?

কী দাদা, চুপ করে রইলেন কেন, বলুন!

আমি জানি না।

বিকাশ এবার ক্রুদ্ধ স্বরে বলল, আপনি জানেন না? আপনাকে সব খুলে বললাম। তবু আপনি বুঝতে পারছেন না? এক জন অসহায় স্ত্রীলোক মরার আগে ভেবে যাবে, সে পাপ করেছিল? যদি এই চিন্তার জন্যই সে মরে, তাহলে আমি সারা জীবনে শান্তি পাব? পূর্ণিমাদি বিয়ের ঠিক দেড় বছর পর বিধবা হয়েছিলেন, তার জীবনে আর কোনও সাধ-আহ্লাদ থাকবে না? এই আপনাদের সাধু-ফাদুদের বিধান? আমি যদি গোপাকে ত্যাগ করি, তার কোনও চিকিৎসা হবে না, তাকে দেখবার কেউ থাকবে না। আর তা যদি না করি, তাহলে আমি সারা জীবন শুধু আমার পাগল বউয়ের সেবা করে যাব? বলুন, জবাব দিন!

বোধিসত্ত্বের সমস্ত শরীরটা কেঁপে উঠল। তিনি আস্তে আস্তে বললেন, আমি সাধু নই।

না-ই হলেন সাধু! মানুষ তো। এক জন সাধারণ মানুষের বিচার-বুদ্ধিতে কী বলে, সেটুকু অন্তত বলতে পারবেন না!

আমাকে একটু চিন্তার সময় দিন। আজ রাতটা ভেবে দেখি।

 দেখুন ভেবে! কাল সকালে আপনাকে নিয়ে যাব।

বোধিসত্ত্বের দিকে একটু রুষ্ট দৃষ্টি নিয়ে বেরিয়ে গেল বিকাশ।

 তিনি চুপ করে বসে রইলেন। তার একটু একটু করে মনে পড়ে যাচ্ছে শাস্ত্রের কথা। সব শাস্ত্র মানুষকে বলেছে সংযমী হতে। শাস্ত্র যাঁরা রচনা করেছেন, তারা কি জানতেন যে, অনাত্মীয় নারী-পুরুষ নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে অন্য কোথাও পাশাপাশি থেকে কাজ করবে? কাছাকাছি কোয়ার্টার, এখানে যারা থাকে, তারা কিছু দিন আগেও কেউ কারুকে চিনত না। কুমারী মেয়েরাও এখানে কাজ করে। এই মেয়েরা মাতা-পিতা, ভাই-বোন, আত্মীয়দের দ্বারা রক্ষিত নয়, এরা বেশ্যাও নয়, এরা স্বাবলম্বী। এদের বিবাহের সুযোগ হয়নি কিংবা অন্য কোনও অসুবিধা আছে। স্বাবলম্বী মেয়েদের যৌনজীবন সম্পর্কে শাস্ত্রকাররা কিছুই লিখে যাননি। বিকাশ একটা কথা বলেছিল, ঠিক যেন চুম্বকের মতো..।

কাল সকালে বিকাশ তাকে নিয়ে যাবে পূর্ণিমার কাছে। সেখানে তিনি কী বলবেন? সত্যি মিথ্যে যাই হোক, মৃত্যুপথযাত্রিণীকে যদি তিনি বলেন, না, আপনি কোনও পাপ করেননি, সেটা দোষের? তিনি সে-কথাই বলবেন।

বোধিসত্ত্ব অনেকক্ষণ বসেছিলেন স্থির হয়ে। তিনি খেয়াল করেননি, কখন বৃষ্টি নেমেছে। জানলা দিয়ে ঢুকেছে জলকণা-মিশ্রিত হাওয়া। বেশ খানিকটা বিছানা ভিজে যাওয়ায় তিনি উঠে এলেন জানলা বন্ধ করার জন্য। সেই সময় দড়াম করে কোথাও বজ্রপাত হল। তার পরও সারা আকাশ চিরে প্রচণ্ড একটা শব্দ ঘুরতে লাগল। সেই শব্দের মধ্যে কেউ যেন ডেকে উঠল, মৈত্রেয়! মৈত্রেয়!

বোধিসত্ত্ব চমকে উঠলেন। বিদ্যুৎ ঝলকের দিকে তাকিয়ে তিনি শুনলেন যেন এক দৈববাণী।

মেঘের গর্জনের মধ্যে স্বর মিশিয়ে কেউ বলল, মৈত্রেয়, মৈত্রেয়, আপনি তোষিত স্বর্গ ছেড়ে নেমে এসেছেন এই উদভ্রান্ত পৃথিবীতে। আপনি লুপ্ত সত্যের পুনরুদ্ধার করবেন। সত্যের প্রতিষ্ঠা করবেন। আমরা প্রতীক্ষায় আছি।

বোধিসত্ত্ব কিছুই বুঝতে পারলেন না। কে কার উদ্দেশে বলছে এই সব কথা। কে মৈত্রেয়? কোথায় তোষিত স্বর্গ? লুপ্ত সত্যের পুনরুদ্ধার করবেন কে? সত্য কী? সকালবেলা সাহেবদের সামনে তিনি হঠাৎ বলে ফেলেছিলেন যে, মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য সত্যের অনুসন্ধান। কিন্তু তিনি নিজেই তো জানেন না, প্রকৃত সত্য কাকে বলে।

যিনি লুপ্ত সত্য উদ্ধার করতে এসেছেন, তাঁর সঙ্গে দেখা হলে বোধিসত্ত্ব জিজ্ঞেস করতেন, পূর্ণিমাদি পাপী কি না?

.

০৬.

ভোরবেলা পূর্ণিমাদির মৃত্যু সংবাদ এল। খবর শুনে বিকাশ নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে রইল, অন্যদের ডাকাডাকিতেও বেরুল না কিছুক্ষণ। বিকাশের সঙ্গে পূর্ণিমাদির সম্পর্কের ব্যাপারটা এখানকার সবাই মোটামুটি জানে।

সকলে ডাইনিংহলের সামনের চত্বরটায় এসে দাঁড়িয়েছে। কথা বলছে ফিসফিস করে। সব চেয়ে বেশি বিমর্ষ হয়ে গেছে কিম রজার্স। সাপে কামড়াবার পর এত তাড়াতাড়ি ওষুধ আর ইঞ্জেকশান দেওয়া হল, এতে তো কারুর মরবার কথা নয়। কোনও সাহেবের বাচ্চা হলে কিছুতেই মরত না। ভারতীয়রা বুঝি এমনিতেই মৃত্যুপ্রবণ। নোয়েল এন্ডারসেন পরবর্তী ব্যবস্থাগুলি সম্পর্কে আলোচনা করছেন সুখেন্দুর সঙ্গে। পূর্ণিমাদির কোনও আত্মীয় স্বজনকে কীভাবে খবর দেওয়া যাবে, সেটাই হল একসমস্যা। তাঁর সেরকম কোনও আত্মীয়ের ঠিকানা কারুর জানা নেই।

পূর্ণিমাদির দেহ নিয়ে আসবার জন্য যখন এখানকার গাড়ি তৈরি হল, এখন সেই শব্দ শুনে বেরিয়ে এল বিকাশ। তার মুখমণ্ডল শান্ত। সে বলল, আমিও যাব।

বোধিসত্ত্ব ভিড়ের আড়ালে লুকিয়ে রইলেন। তিনি বিকাশের সামনে যেতে ভয় পাচ্ছেন। তার চোখের দিকে চোখ ফেলতেও পারছেন না।

কিন্তু বিকাশই এ-দিক ওদিক খুঁজে বোধিসত্ত্বকে দেখে জিজ্ঞেস করল, আপনি যাবেন না আমার সঙ্গে?

বোধিসত্ত্ব কোনও রকম প্রতিবাদ না করে গাড়িতে উঠে পড়লেন। বিকাশ স্পষ্ট ধারালো চোখে চেয়ে আছে তার দিকে। বোধিসত্ত্ব বিকাশের হাত চেপে ধরে ফিস ফিস করে বললেন, উনি পাপ করেননি।

ফেরার পথে পূর্ণিমাদির শরীরটি শোওয়ানো হল গাড়ির মধ্যে। বিকাশ পাশে পূর্ণিমাদির শরীর ছুঁয়ে রইল। বোধিসত্ত্ব সেখানে বসতে পারলেন না, তিনি চলে গেলেন ড্রাইভারের পাশে।

পূর্ণিমাদির মুখের দিকে তিনি একবার মাত্র তাকিয়েছিলেন। কী প্রফুল্ল, কী জীবন্ত সেই মুখ। অথচ রাত্রে-ফোঁটা ফুল যেমন দিনেরবেলা একটু একটু করে শুকিয়ে যায়, এই মুখ সেই রকম বিবর্ণ হয়ে যাবে। পূর্ণিমাদি যাবার সময় যে সাধ-আহ্লাদ শব্দ দু’টি উচ্চারণ করেছিলেন, সে কথা মনে পড়ল বোধিসত্ত্বের। তার বুক মুচড়ে কান্না এল।

পূর্ণিমাদির শব এনে শোওয়ান হল উঠানে, তখন সেখানে দুধ নেবার জন্য গ্রামবাসীদের লম্বা লাইন পড়েছে। স্বয়ং নোয়েল এণ্ডারসেন অনন্তকে সঙ্গে নিয়ে দুধ গুলছেন। কোনও কাজই থেমে থাকবে না। তিনি একবার উঠে এসে মৃত্যুর সামনে দাঁড়ালেন নতমস্তকে। বিড় বিড় করে বললেন, ইনি ছিলেন একজন মহান মহিলা ঈশ্বর এঁকে নিজের কাছে আশ্রয় দেবেন।

ইনগ্রিডের মাথায় আজ টুপি নেই। অঞ্জলি ভরে এনেছেন শিউলি ফুল। সেই ফুল ছড়িয়ে দিলেন পূর্ণিমাদির শরীরে। তিনিও উচ্চারণ করলেন বাইবেলের দুটি লাইন। রোজানা দাঁড়িয়ে রইল চুপ করে, তার দৃষ্টি উদাস। যারা দুধ নিতে এসেছে, তারাও অনেকে দৌড়ে গিয়ে শিউলিতলা থেকে ফুল কুড়িয়ে নিয়ে এল। ইউনিটের লোকেরাও একে একে এসে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়ে গেল, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদল কয়েকটি মেয়ে।

বোধিসত্ত্ব নোয়েল এন্ডারসেনের পাশে গিয়ে দুধের হাতাটা তুলে নিলেন। কাল ঠিক এই সময় এখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন পূর্ণিমাদি। এখনও বাতাসে যেন ভেসে বেড়াচ্ছে তার নিশ্বাস।

সব চেয়ে চমকপ্রদ শ্রদ্ধাঞ্জলী নিয়ে এল কিম রজার্স। তার হাতের লোহার রডে ঝুলছে তিনটে মরা সাপ। ভোরবেলা দুসংবাদ শুনেই সে কোথায় যেন বেরিয়ে পড়েছিল। হঠাৎ সাপ মারার ইচ্ছে হলেই তো আর সাপ খুঁজে পাওয়া যায় না। তবু সে কোন পরমাশ্চর্য উপায়ে খুঁজে খুঁজে তিনটে সাপ রেরে এনেছে, কে জানে। ঠিক ফুলের মতো সে সাপগুলোকে রাখল পূর্ণিমাদির পায়ের কাছে। একটি কথাও উচ্চারণ করল না।

নোয়েল এন্ডারসেন বললেন, এইবার মৃতদেহটি সরিয়ে নিয়ে যাও। এখন দুধ দেওয়া হবে।

পূর্ণিমা সরকারের সঙ্গে এ পৃথিবীর সম্পর্ক এখানেই শেষ হয়ে গেল।

.

সন্ধের পর রোজ এখানে একটি আসর বসে।

নোয়েল এন্ডারসেন বেডেন পাওয়েলের শিষ্য। ক্যাম্পজীবনে সারা দিনেরকাজকর্মের পর একটুখানি সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকলাপের প্রয়োজন। তাই প্রতি সন্ধ্যায় এখানে ক্যাম্প ফায়ার হয়। কয়েকটা চ্যালাকাঠে আগুন জ্বেলে মাঝখানে রেখে ইউনিটের কুড়ি জন গোল হয়ে বসে। আজ উনিশ জন।

প্রতি সন্ধ্যায় এদের মধ্য থেকে পালা করে পাঁচজনকে কিছু একটা করতে হয়। যে যা পারে। গান, কবিতা, আবৃত্তি, কোনও কৌতুক চুটকি বা গল্প। যে কিছুই পারে না, তাকেও উঠেদাঁড়িয়ে পাঁচ মিনিট কিছুনা-কিছু বলতেই হবে। এমনকী নোয়েল এন্ডারসেনও বেসুরো গলায় গান গেয়ে ওঠেন।

সে-দিন যারা উঠলেন, সকলেই বলল, পূর্ণিমাদির কথা। টুকরো টুকরো স্মৃতি। দেবযানী গাইল একটি গান– আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু। নোয়েল এডারসেন হঠাৎ বোধিসত্ত্বকে অনুরোধ করলেন কিছু বলবার জন্য।

বোধিসত্ত্ব প্রথমে কয়েক বার আপত্তি জানালেন। কিন্তু তা কেউ মানলেন না। গান না জানলেও এখানে গাওয়া যায়, গল্প বলতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেললেও সেটা একটা মজার ব্যাপার।

বোধিসত্ত্ব উঠে দাঁড়ালেন। সকলের চোখ তার দিকে। কাঠের আগুনের শিখায় তার গৌরবর্ণ মুখখানি লালচে দেখায়। তিনি কী বলবেন, চিন্তা করতে লাগলেন। পূর্ণিমাদি সম্পর্কে অন্যরা যা বলেছে, তার বাইরে তার কিছু বলার নেই।

তিনি একটুক্ষণ চুপ করে দূরের দিকে তাকিয়ে রইলেন। হঠাৎ তার চোখে একটা দৃশ্য ভেসে উঠল। তিনি বলে উঠলেন, এক জন মানুষ যাচ্ছে…সে একা…বড় বিপদসঙ্কুল পথ, এক সময় পথ হারিয়ে গেল জঙ্গলের মধ্যে… ঘোর অন্ধকার বন, অনেক রকম হিংস্র জন্তু রয়েছে সেখানে, পথিকের থামবার উপায় নেই, ফিরে যাবারও উপায় নেই। কেননা সে এসেছে খুব দুঃখময় জায়গা থেকে। যেখানে রয়েছে রোগ, মহামারী, নানা রকম অন্যায়, চোর-ডাকাতের ভয়, পথিককে সামনে যেতেই হবে…অতিকষ্টে সেই বিপদ-ভরা বন পার হয়ে পথিক এসে পৌঁছল এক নদীর ধারে। নদীর ওপারে বিন্দু বিন্দু আলো জ্বলছে। পথিকের মনে হল, নদী ওপারে অনেক মানুষ আছে। ও-দিকে কোনও ভয় নেই। পথিকের একমাত্র উপায়, সেই নদী পার হয়ে ও-পাশে সেই ভয়শূন্য স্থানে পৌঁছনো। কিন্তু নদীটিতে নিদারুণ স্রোত। এখানে কোনও খেয়াঘাট নেই, এখানে  নেই কোন নৌকো। কেউ তাকে সাহায্য করবে না। বরং যে-কোনও মুহূর্তে আক্রান্ত হবার ভয়। তবু পথিক গাছের ডালপালা সংগ্রহ করল, খুঁজে আনল কিছু শক্ত লতা, তারপর তৈরী করলো একটি ভেলা। তারপর সেই ভেলায় চড়ে সেই বিপজ্জনক নদী পার হয়ে এল কোনওক্রমে ..।

এ-পারে এসে, সুখের দীর্ঘশ্বাস ফেলার পই পথিকের মনে হল, খুব উপকার করেছে এই ভেলাটি। এখন তাকে নদীর পাড়ে ছেড়ে যেতে হবে। কিন্তু ওই পরম উপকারী ভেলাটিকে সে কি রেখে যাবে সেখানেই, না নিয়ে যাবে প[ইঠে করে?

এই পর্যন্ত বলে বোধিসত্ত্ব চুপ করলেন।

সুখেন্দু ফিস ফিস কবে সব কথাগুলো মোটামুটি অনুবাদ করে শুনিয়ে যাচ্ছিল বিদেশি চার জনকে।

নোয়েল এন্ডারসেন বললেন, বাঃ! এটি একটি খুব ভাল প্রশ্ন। যে ভেলাটি তার জীবন বাঁচিয়েছে, সেটা কি সে ফেলে যেতে পারবে? তার মায়া হবে নিশ্চয়ই।

ইনগ্রিড বললেন, কিন্তু মাটির ওপর দিয়ে যাবার সময় একটা ভেলা কাঁধে করে যাওয়া হবে অতি নির্বোধের কাজ।

সুখেন্দু বলল, যদি আবার লাগে? যদি আবার ওই রকম একটা নদী আসে?

নোয়েল এন্ডারসেন বললেন, বোঝাই যাচ্ছে, এটা একটা রূপক। পথিক দুঃখের স্থান থেকে সুখের স্থানে পৌঁছে গেছে। তার আর ভেলার প্রয়োজন হবে না। সুতরাং আমার মনে হয়, পথিকের উচিত হবে ভেলাটিকে সেই নদীর ধারেই বেঁধে রাখা, যাতে অন্য লোকের কাজে লাগে। অন্য কেউ এ-পারে আসতে চাইলে ভেলাটি ব্যবহার করতে পারবে। পথিক এইভাবে অনেক উপকার করবে।

রোজানা হেসে বলল, নোয়েল, তোমার কথামতো এটি যদি রূপক হয়, তাহলে এ-পারের লোকদের তো ভেলাটা কোনও কাজেই লাগবেনা! সুখের জায়গা ছেড়ে কে দুঃখের জায়গায় যাবে? ভেলা তো লাগবে দুঃখের জায়গা থেকে সুখে আসবার জন্য। এ-পারে ভেলাটা থাকাই বরং খারাপ, যদি কেউ ভুল করে ওই ভেলায় চেপে যায়।

এ-পার থেকে কেউ ওই ভেলা নিয়ে গিয়ে ও-পার থেকে আর কারুকে উদ্ধার করে আনতে পারে।

রূপক অনুযায়ী, ভেলাটি শুধু এক জনের জন্যই হওয়া উচিত।

 ও আই সি। তাহলে, কুমার সিংহ, আপনিই আপনার ধাঁধাটির জবাব দিন।

 বোধিসত্ত্ব বললেন, আমি একটু ভুল বলেছিলাম।

কয়েক জন হেসে উঠলেন।

বোধিসত্ত্ব বিমর্ষ ভাবে বললেন, আমি ধাঁধা জিজ্ঞেস করিনি। যে-পথিক ভেলা নিয়ে ও-পারে পৌঁছে গেছে, সে ভেলাটি নিয়ে কী করবে সেটা তার সমস্যা। খুব বড় সমস্যা নয়। কিন্তু আমার হঠাৎ মনে পড়ল, আমি বা এখানকার যে কেউ যদি একা কখনও সেই রকম নদীতীরে উপস্থিত হই, যখন আর পেছনে ফেরা যাবেনা, তখন একলা কি সেই ভেলাটি তৈরি করে নিতে পারব? পারব কি সেই নদী পার হতে? সে-জন্য কি আমরা প্রস্তুত হচ্ছি?

স্বল্পভাষী কিম রজার্স ঝুঁকে পড়ে সুখেন্দুকে বলল, ওকে বলে দাও, ইংরাজিতে একটা কথা আছে, নদীটা কী করে পার হব, সেটা সেখানে উপস্থিত হবার পর ভাবব।

রোজানা বলল, ঠিক বলেছ, কিম। এই রকম বেপরোয়া গোঁয়ার ভাবনার জন্যই পশ্চিম জগৎ এত পার্থিব উন্নতি করেছে। আর এই লোকগুলি আগে থেকেই ভাবে পারলৌকিক মুক্তির কথা। তা-ও একা একা। সেই জন্যই এরা একই সঙ্গে জ্ঞানী এবং নির্বোধ।

সেদিন গভীর রাত্রে বোধিসত্ত্ব ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লেন। তাঁর কিছুতেই ঘুম আসছিল না। একটু চোখ বুঝলেই তিনি দৃশ্যের পর দৃশ্য দেখছেন। কোনওটাই একালের নয়। প্রতিটি দৃশ্যেরই যা পরিণতি, কোনওটাই তার মনঃপূত হচ্ছে না। যেন এগুলো স্বপ্ন, বোধিসত্ত্ব তার স্বপ্নকেও বদলাতে চাইছেন। এর চেয়ে জেগে থাকা ভাল।

তাদের এলাকা ছাড়িয়ে বোধিসত্ত্ব হাঁটতে লাগলেন গ্রামের মধ্য দিয়ে। ঘুমন্ত গ্রামটিকে এখন জীবনহীন মনে হয়। অথচ এরই মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে লক্ষ লক্ষ প্রাণের।

গ্রাম ছাড়িয়ে তিনি এলেন মাঠের মধ্যে। শুক্লপক্ষ হলেও আকাশে ভাঙা ভাঙা মেঘ। কখনও একটু জ্যোৎস্না বেরিয়ে পড়ে। আকাশের দিকে তাকালে মনে হয় ওখানে অবিরাম এক খেলা চলছে। আকাশের অসীম বিশালত্বের জন্য সব কিছুই মনে হয় অতিপ্রাকৃত।

হাঁটতে হাঁটতে বোধিসত্ত্বের দু-একবার মনে পড়ল সাপের কথা। মাঝে মাঝে ভয় জাগছে, তিনি সেটাকে দমন করছেন। শুধু সাপ কেন, তিনি খালি পায়ে হাঁটছেন, পায়ের তলা দিয়ে নাকি অতি সূক্ষ্ম বীজাণু ঢুকে যায়। মানুষের বেঁচে থাকার কত রকম বাধা!

তবুএই ভাঙা ভাঙা জ্যোৎস্না ও বিশাল একাকিত্বের মধ্যে কোথায় যেন একটা হালকা বাঁশির শব্দ ভেসে বেড়াচ্ছে। এই বাঁশির কোনও বাদক নেই। মধ্যরাত্রির আকাশ নিঃসঙ্গ পথিককে এই মধুর শব্দ উপহার দেয়।

সেই ফাঁকা মাঠের মধ্যে দিগন্ত-ঘেরা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে বোধিসত্ত্বঠিক করলেন, এই জীবনকে তিনি আরও অনেক দূর পর্যন্ত দেখবেন। এই জীবন-যাপনের মধ্যে কোন সত্য আছে, তা না জানলে চলবে কেন?

<

Sunil Gangapadhyay।। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়