(সেই সময় – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় — অনেক বড় উপন্যাস। ধীরে ধীরে আপডেট দেয়া হবে।)

শিশুটির জন্ম মাত্র সাত মাস দশ দিন গর্ভবাসের পর। মাতৃজঠরেই তার চাঞ্চল্য প্রকাশ পেয়েছিল। সেই অন্ধকার জলধিতে সে বেশীদিন থাকতে চায়নি।

বাবু রামকমল সিংহ তখন উড়িষ্যায় মহাল পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন। প্রাক-সন্ধ্যেবেলা তিনি মহানদীর বুকে বজরার ওপর বসে সূর্যাস্তের শোভা দেখছেন। এমন সময় একটা ছোট ছিপনৌকো তীরবেগে ছুটে এলো বজরার দিকে। সেটা থেকে লাফিয়ে নামলো তাঁর গোমস্তা দিবাকর। অকস্মাৎ দিবাকরকে দেখেই রামকমলের হৃৎকম্প শুরু হয়ে গিয়েছিল। নদীবক্ষে পবিত্র নির্মল বাতাসের মধ্যে দিবাকর দুঃসংবাদের গন্ধ নিয়ে এসেছে। রামকমল ধরেই নিলেন বিম্ববতী আর নেই। দিবাকরেরও সেই রকম ধারণা, গৃহকর্ত্রীকে সে সংজ্ঞাহীন মুমূর্ষু দেখে এসেছে। প্রভুকে সে ঠিক মতন সান্ত্বনা দিতে পারলো না। শুধু বললো, হুজুর আজই ফেরার গতিক কত্তে হবে। উকিলবাবু আমাকে পাটালেন। রামকমলের চক্ষু থেকে অবিরল অশ্রু বর্ষণ হতে লাগলো। বিম্ববতী তাঁর সংসারের সৌভাগ্যলক্ষ্মী। বজরার ছাদ থেকে নীচের প্রকোষ্ঠে নেমে এসে রামকমল কমলাসুন্দরীকে বললেন, আজ হতে আমি নিঃস্ব হলোম! পৃথিবীর কোনো দ্রব্যেই আর আমার সুখ হবে না।

কমলাসুন্দরী রামকমলকে শয্যায় শুইয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। বিম্ববতীর স্মরণে সেও চোখের জল ফেললো কয়েক ফোঁটা। গঙ্গার ঘাটে দূর থেকে সে বিম্ববতীকে দেখেছে দু একবার। সাক্ষাৎ জগজননী দুর্গার মতন রূপ! কমলাসুন্দরী তাঁর দাসী হবারও যোগ্য নয়। অমন রূপবতী স্ত্রী থাকতেও রামকমল কেন অপর নারীদের কাছে যান বা দু তিন বছর অন্তর অন্তর রক্ষিতা বদল করেন, তা বোঝা ভার। কমলাসুন্দরীর গায়ের রঙ মসৃণ কষ্টিপাথরের মতন। নিজের স্ত্রীর দুধে-আলতা মেশানো গাত্ৰবৰ্ণ বলেই বোধহয় রামকমল শুধু কৃষ্ণাঙ্গী মেয়েদের মধ্য থেকেই উপপত্নী নিবাচন করেন। পুরুষ মানুষ এমনই অরভুত হয়।

রৌপ্য পাত্রে খানিকটা ব্র্যাণ্ডি ঢেলে এনে কমলাসুন্দরী বললো, এটুকু পান করে নিন, নইলে আরও দুর্বল হয়ে পড়বেন।

রামকমল বাঁ হাত দিয়ে সেই পাত্র ঠেলে দিয়ে বললেন, আমার আর কিছুতে রুচি নেই। আমাকে জ্বালাতন করিস নি, কমল। তুই আমার সম্মুখ থেকে এখন সরে যা—!

কমলাসুন্দরী ক্ষুদ্র গবাক্ষের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে চুল এলো করে দিল। বাইরে নদীর জলে লকলক করছে অস্ত সূর্যের লাল শিখা। সেদিকে তাকিয়ে সে ভাবলো, এবার বুঝি। এ বাবুর কাছ থেকে পাট উঠলো। আবার নিয়তি তাকে কোথায় নিয়ে যাবে কে জানে!

রামকমল কোমল শয্যায় শুয়ে প্রবল হুতাশের সঙ্গে আঃ আঃ শব্দ করতে লাগলেন। ততক্ষণে বজরা চলতে শুরু করেছে।

তিনদিন পর কলকাতার যোড়াসাঁকো পল্লীতে তাঁর অট্টালিকার সদর দেউড়িতে পা দিয়েই রামকমল শুনলেন নতুন শিশুর কান্না। তিনি ভুরু উত্তোলন করে তাকালেন দিবাকরের দিকে। দিবাকরীও বিমূঢ়। বিম্ববতীর রোগ-যন্ত্রণা, যে আসলে প্রসব-বেদনা, তা সে-ও জানতো না। তা ছাড়া, সাত মাস গর্ভের সন্তান জন্মের কথা কে-ই বা কখন শুনেছে। আট মাস পুরলেও না হয় কথা ছিল।

রামকমলের বয়েস এখন সাতচল্লিশ। পনেরো বছর আগে তিনি বিম্ববতীকে বিবাহ করেছিলেন। তাঁর তৃতীয় বিবাহ। এর আগে তাঁর দুই স্ত্রীই মারা গেছে নিতান্ত বালিকা বয়েসে। প্রথমা স্ত্রী লক্ষ্মীমণিকে রামকমলের একটু একটু মনে আছে কিন্তু দ্বিতীয়া স্ত্রী হেমবালার মুখখানিও তাঁর মনে পড়ে না এখন। বিম্ববতী নতুন বধূ হয়ে এ বাড়িতে আসেন ন বছর বযেসে। তখন এ বাড়ির চেহারা অবশ্য অন্যরকম ছিল। বিম্ববতী আসার পর এই সিংহ পরিবারের শ্ৰীবৃদ্ধি ঘটতে থাকে। রামকমল যে ব্যবসায়ে হাত দেন, সেখানেই সোনা ফলে। বিম্ববতী এই সংসারে এত সমৃদ্ধি এনে দিলেও একটি সন্তাপ সর্বক্ষণ ছিল তাঁর মনে। তাঁর স্বামী অপুত্ৰক। কিন্তু বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় পরিজন এমনকি বিম্ববতীর অশ্রুসজল সনির্বন্ধ অনুরোধ সত্ত্বেও রামকমল আর দার পরিগ্রহ করেননি।

রামকমল লাফিয়ে উঠতে লাগলেন সিঁড়ি দিয়ে; দোতলায় সিঁড়ির মুখে তাঁর বাল্যবন্ধু ও আজীবন সুহৃদ বিধুশেখর দাঁড়িয়ে। কার্যোপলক্ষে রামকমল প্রবাসে গেলে বিধুশেখরই এ গৃহের রক্ষণাবেক্ষণের ভার নেন। বিধুশেখর একজন দক্ষ আইনজীবী, অতি সূক্ষ্ম তাঁর বুদ্ধি, হৃদয়খনি সমুদ্রের মতন বিশাল। এই বন্ধুর ওপর দায়িত্ব ন্যস্ত করে রামকমল নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন সব সময়।

রামকমল জিজ্ঞেস করলেন, সব শেষ? বিধুশেখর বন্ধুকে আলিঙ্গন করে বললেন, তুই এসিচিস, আর কোনো চিন্তা নাই। আগে হাত মুখ ধো, পরে সব শুনবি!

রামকমল ব্যগ্ৰভাবে বিধুশেখরের মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, আগে বল, বিম্ববতীকে আর দোকতে পাব কি না।

গ্ৰায় আলিঙ্গনাবদ্ধ অবস্থাতেই দুই বন্ধু এসে দাঁড়ালেন বিম্ববতীর শয়নকক্ষের দরজার কাছে। বিরাট পালঙ্কের ওপর বিম্ববতী চোখ মুদে শুয়ে আছেন চিৎ হয়ে, করতল দুটি বুকের ওপর প্রণামের ভঙ্গিতে যুক্ত। মুখখানি অস্বাভাবিক পাণ্ডুর।

তিনজন সাহেব ডাক্তার পালঙ্কের ডান পাশে মখমলমোড়া কোঁচে নিস্তব্ধ হয়ে বসে আছে। বাঁ পাশে বসে আছেন বিখ্যাত কবিরাজ দীনদয়াল ভেষগশাস্ত্রী। তাঁর চোখ দুটি বন্ধ, চিবুক ঝুলে পড়েছে বুকের ওপর, তিনি ঘুমন্ত কিনা বোঝা যায় না। তবে এটাই তাঁর সুপরিচিত ভঙ্গি। একজন দক্ষিণ দেশীয় আয়ার কোলে একটি কাঁথার পুঁটুলি, সেই পুঁটুলি থেকে শব্দ আসছে কান্নার। বেশ জোর আছে গলায়। জন্মের পর যে শিশু কাঁদে, তার প্রাণশক্তি সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হওয়া যায়।

বিধুশেখর ব্যবস্থার কোন ত্রুটি রাখেননি। কিন্তু রামকমল পিতৃত্ব অর্জনের কোনোরকম সুখানুভূতি বোধ করলেন না। তাঁর মন উদ্বেল হয়ে আছে বিম্ববতীর জন্য। বিম্ববতী তাঁর হৃদয়মণি।

রামকমল ধরা গলায় আবার জিজ্ঞেস করলেন, সব শেষ? বিধুশেখর বললেন, না। এখনো প্ৰাণ রয়েচে। সতীলক্ষ্মী তোর অপেক্ষাতেই আচে, তোকে শেষ দেখা না দেখে সে আমাদিগের ছেড়ে যাবে না!

বিচলিত পায়ে রামকমল ছুটে আসতে যাচ্ছিলেন, সাহেব ডাক্তারদের মধ্য থেকে সার্জেন গর্ডন উঠে এসে তাঁর সম্মুখে দাঁড়ালেন। গম্ভীর গলায় খানিকটা ধমকের সুরে তিনি বললেন, ডোন্ট ডিস্টার্ব হার নাও-প্লাজ-দেয়ার আর এনাফ চান্সেস দ্যাট শী উইল সারভাইভ।

রামকমল উদভ্ৰান্তের মতন বললেন, একবার শুধু পাশে গিয়ে বসি, একবার শুধু স্পর্শ করব-কতা কইবো না।

বিধুশেখর সাহেবকে অনুরোধ করলেন। সার্জেন গর্ডন সরে দাঁড়িয়ে তাঁর জেব থেকে সোনার ঘড়ি বার করে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেন সেদিকে।

রামকমল পা থেকে নাগরা জোড়া খুলে ফেলে নিঃশব্দে গিয়ে দাঁড়ালেন স্ত্রীর পাশে। তাঁর বুক কাঁপছে। ঘরের মধ্যে একটা অদ্ভুত গন্ধ পাচ্ছেন তিনি, এটাই মৃত্যুর গন্ধ কিনা। তিনি ঠিক বুঝতে পারছেন না। বিম্ববতীর শয়নকক্ষে এরকম গন্ধ তিনি আগে পাননি।

বিম্ববতীর ললাটে তিনি হাত রেখে আরও চমকে উঠলেন। কী ঠাণ্ডা! প্ৰতিশ্রুতি ভুলে গিয়ে তিনি ধরা গলায় বলতে লাগলেন, বিম্ব, বিম্ব একবার চোখ তুলে চাও, দাখো, আমি এসিচি।

বিম্ববতীর কানে সে ডাক পৌছোলো না, শরীরে কোনো স্পন্দন দেখা দিল না।

সার্জেন গর্ডন প্লীজ প্লীজ করতে লাগলেন। কবিরাজ মশাই চোখ খুলে বললেন, সিংগিমশায়, ভগবানকে ডাকুন। বৌমাকে এখন ডাকবেন না। ভগবানের দয়া হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

নিজেকে সামলে নিয়ে রামকমল বিম্ববতীর শয্যার পাশ থেকে সরে এলেন। এতগুলি বাঘা বাঘা ডাক্তার কবিরাজ রয়েছেন, এখানে তাঁর শিশুপনা দেখানো শোভা পায় না।

তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে আসছিলেন, এসময় বিধুশেখর বললেন, পুত্ৰমুখ দেকলি না?

দক্ষিণ দেশীয়া আয়াটির দিকে তাকিয়ে তিনি ইঙ্গিত করলেন। সে রামকমলের কাছে এসে কলকল করে কত কী যেন বললো, তার একটি অক্ষরও বোঝা যায় না।

কাঁথার পুঁটুলির মধ্যে ছোট্ট একটা বাচ্চা, সে এত ছোট্ট যে মানুষের ছানা বলে বোঝাই যায় না। মনে হয় যেন চোখ নেই, নাক নেই, শুধু মাংসের পুতুল। কিন্তু জীবন্ত যে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই, তারস্বরে কেঁদে যাচ্ছে আর ক্ষুদে ক্ষুদে দুটি হাত নাড়ছে।

রামকমল দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। এই শিশু তার জননীকে খেতে এসেছে। কোনো প্রয়োজন ছিল না। এর আসার। রামকমল তো পুত্রের অভাব বোধ করেননি কখনো। বিম্ববতীর জীবনের বিনিময়ে তিনি কিছুই চান না।

আয়াটির হাতে দুটি মুদ্রা গুঁজে দিয়ে তিনি দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন।

সাতদিন যমে-মানুষে লড়াই চললো। তারপর বিম্ববতী চোখ মেললেন। প্রথমেই তিনি বললেন, আমি কোতায়?

তখন মধ্যাহ্ন। রামকমল সবেমাত্ৰ আহারে বসেছিলেন, খবর পেয়ে তিনি পাত্ৰ ত্যাগ করে উঠে এলেন। বিম্ববতী বারবার একই প্রশ্ন করছেন শুনে রামকমল বললেন, এ তো তোমার ঘব, এ তোমার শয্যা, এই দ্যাখো আমি রয়িচি, তুমি জানো, তোমার একটি পুত্ৰ সন্তান হয়েচে?

বিম্ববতীর চক্ষে ঘোর। তিনি আবার বললেন, হ্যাঁগো, আমি কি মরে গিইচিলুম?

রামকমল বললেন, বালাই ষাট, তুমি মরবে কেন? তোমার…

বিম্ববতী বললেন, আমার যেন মনে হলো, আমি কত দেশ ঘুরে এলুম, কত পাহাড়, নদী, বন, বিরাট বিরাট অন্ধকার সুড়ঙ্গ, তার ওধারে আলো, সেই আলো, সেই আলোর এত জোর যে চোখ ধাঁধিয়ে যায়…

হঠাৎ ধড়মড় করে উঠে বসে বিম্ববতী বললেন, আমার ছেলে কই? আমার ছেলে—

আয়া কাঁথার পুঁটুলিটা তুলে দিল বিম্ববতীর কোলে। তিনি চমকে উঠে বললেন, এ কে? এ তো আমার ছেলে না? আমার ছেলে তো অনেক বড়।

রামকমল স্ত্রীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন, বিম্ব, তোমার মনে নাই, তুমি পোয়াতি হয়েছিলে, এই তো তোমার গর্ভের সন্তান।

শিশুটি এখন কাঁদছে না, ঘুমিয়ে আছে। বিম্ববতী এক দৃষ্টে তাকিয়ে রইলেন তার মুখের দিকে। ক্রমশ তাঁর দৃষ্টি স্বচ্ছ হয়ে এলো। তিনি কয়েক ফোঁটা চোখের জলে ভিজিয়ে দিলেন সন্তানের মুখ। তারপর তার ললাট চুম্বন করলেন।

—গঙ্গা কোথায়? গঙ্গা? সে কেন আসেনি?

গঙ্গাকে ডাক তো! সে কোথায়?

রামকমলের মনে পড়লো, গত দুতিনদিন তিনি গঙ্গানারায়ণকে দেখেননি। সে এ ঘরে একবারও আসেনি। রামকমল একটু অনুতপ্ত বোধ করলেন।

একজন ভৃত্য এসে খবর দিল গঙ্গানারায়ণ ফিরিঙ্গি পাঠশালায় পড়তে গেছে।

বিম্ববতী উতলা হয়ে বললেন, ওগো, তাকে ডেকে আনো। আমি তাকে এক্ষুনি দেকবো।

রামকমল হুকুম দিলেন, এই, কেউ একজন যা, দৌড়ে গিয়ে তাকে ডেকে আনাগে যা!

ফিরিঙ্গি পাঠশালা বেশী দূরে নয়। লোক ছুটে গেল সেখানে। রামকমল স্ত্রীকে বললেন, তুমি শোও। সে আসচে। এখুনি আসচে!

বিম্ববতী বললেন, তোমরা বুঝি ভেবেছিলে আমি মরে গ্যাচি। আমার কী এক মহানিদ্রা পেয়েচিল, তার মধ্যে আমি কত দেশ ঘুরে এলুম।

বিম্ববতীর বিধবা বড় জা। হেমাঙ্গিনী এগিয়ে এসে বললেন, তোর কী খিদে পেয়েচে, কিছু খাবি? এ কটা দিন তো ওষুধ ছাড়া কিছু পেটে যায়নি।

যেন তাঁর কোলের সন্তানকে কেউ কেড়ে নেবে, এইভাবে পুঁটুলিটা আঁকড়ে ধরে বিম্ববতী বললেন, আমার একদম খিদে নেই গো, আমি যেন অমৃত খেয়িচি, আমার শরীর মন একেবারে ভরে আচে।

অল্পক্ষণের মধ্যেই গঙ্গানারায়ণকে নিয়ে আসা হলো ঘরের মধ্যে। চোদ্দ বছরের একটি সুদৰ্শন কিশোর। তার মুখখানি লাজুক ধরনের। সে বিম্ববতীর পালঙ্কের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। বিম্ববতী তাকে আরও কাছে ডাকলেন। তার মাথায় মুখে আদর করে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন, আমার কাছে বসে থাক। তুই-ও কি ভেবেছিলি, তোর মা মরে গ্যাচে?

গঙ্গানারায়ণ মুখ নীচু করে নিঃশব্দ হয়ে রইলো।

হেমাঙ্গিনী বললেন, ওলো, এখন বেশী কত কস নি। একটু বিশ্রাম নে। চোখ মুখ যা টেনে গ্যাচে, আবার ভির্মি খেয়ে পড়বি।

রামকমলও ভয় পেলেন। প্ৰদীপের সলতে নিভবার আগে একবার দপ করে জ্বলে ওঠে, পট পট শব্দ হয়, বিম্ববতীরও সেই অবস্থা নয় তো?

তিনি বললেন, বিম্ব, তুমি এখন শোও, কোবরেজ মশাইকে খপর দিইচি, উনি এসে একবার দেখুন।

বিম্ববতী বললেন, আর কোনো ভয় নেই গো! কতদিন তোমাদের দেখিনি, কতদিন গঙ্গাকে দেখিনি। আহা, গঙ্গার মুখ শুকিয়ে গ্যাচে। তুই আজ খোইচিস তো? কেউ তোকে খাবার দিয়েছেল?

গঙ্গানারায়ণ ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালো।

—আমাকে একবার মা বলে ডাক তো। কতদিন তোর মা ডাক শুনিনি।

গঙ্গানারায়ণ কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, মা—

—আয়, খাটের ওপর উঠে বোস। বাবা গঙ্গা, তোর একটি ছোট ভাই হযোচে, তুই তাকে ভালোবাসবি তো?

 

গঙ্গানারায়ণের ক্ষুদ্র জীবনের কাহিনীটি এই প্রকার।

রামকমল সিংহের পৈতৃক ভিটে হুগলি জেলার বাকসা-গ্রামে। রামকমলের পিতামহ সেই গ্রাম ছেড়ে ভোগ্যান্বেষণে এসেছিলেন কলকাতায়, কালক্রমে নুনের দেওয়ানি লাভ করে এখানকার অভিজাত সমাজে স্থান করে নেন। পিতামহের অপর দুই ভাই থেকে যান সেই গ্রামেই। এই বংশের কলকাতা শাখাঁটির যতই উন্নতি হতে থাকে, গ্রামের শাখাঁটি ততই জীর্ণ হয়ে যায়। রামকমল ঐ গ্রামের সঙ্গে কোনো রকম সম্পর্কই রাখেননি। একদিন রামকমল হঠাৎ লোকমুখে খবর পান যে বাকসা—গ্রামে শ্ৰীশ্ৰীরঘুনাথ জীউর যে সুবৃহৎ নবরত্বের মন্দির আছে, সেই মন্দিরের চত্বরে এক রমণী তার একবছরের শিশুপুত্রকে রাত্ৰিবেলা ফেলে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করছিল। কিন্তু পুরোহিতদের নজরে পড়ে যায়। ধরা পড়ার পর রমণীটি স্বীকার করে যে, ক্ষুধার জ্বালাতেই সে উদ্যত হয়েছিল এমন নৃশংস কাজে। পুত্রকে আহার জোগাতে পারে না বলেই সে শ্ৰীশ্ৰীরঘুনাথ জীউ-এর চরণে পুত্রকে সমর্পণ করে নিজে উদ্বন্ধনে আত্মহত্যা করা মনস্থ করেছিল। এই কাহিনী মুদ্রিতও হয়েছিল ইংরেজি সংবাদপত্রে।

রমণীটি বিধবা। রামকমল জানতে পারেন যে সেই রমণীটি তাঁরই এক সম্পর্কিত ভাইয়ের স্ত্রী। লোকপবাদের ভয়ে পুত্রসমেত সেই রমণীটিকে আনিয়ে রামকমল ঠাই দিলেন তাঁর কলকাতার বাড়িতে। সব বড় মানুষের বাড়িতেই এরকম কিছু দুঃস্থ আত্মীয়স্বজন আশ্রয় নেয়। যোড়াসাঁকোর এই সিংহবাড়িতে প্রত্যেকবেলা অন্তত পঞ্চাশটি পাত পড়ে। গৃহকতা অনেকের নামই জানেন না। তাঁর জননী অতি দানশীলা। কেউ এসে আশ্রয় চাইলে তিনি ফেরান না। জননীর অনুমতি নিয়েই রামকমল বাকসা—গ্রামের সেই রমণীকে সন্তানসমেত এনেছিলেন এ বাড়িতে। অনেক দিন এ বাড়িতে কোনো শিশু ছিল না, তাই সকলেই সেই শিশুটিকে কড়াকড়ি করে আদর করতো। তার মা কিন্তু এ বাড়িতে এসেও খুব স্বচ্ছন্দে মনের সুখে থাকতে পারেনি। অন্যান্য আশ্রিতরা থাকে একতলায়, তাকে স্থান দেওয়া হয়েছিল ওপরে। বিম্ববতী দেখেছেন, প্রায়ই সে বিরলে বসে কাঁদে।। তার মন—মরা রোগ হয়েছিল, বিশেষ কথা বলতো না, আর বোধহয় সেই রোগের জন্যই সে বেশী দিন বাঁচলো না। মাত্র ছ মাস পরেই সে চলে গেল পৃথিবী ছেড়ে, যাবার আগে সে তার ছেলেকে দিয়ে গেল বিম্ববতীর কোলে। সজল চক্ষে বলে গিয়েছিল, দিদি, তুমি ওকে দেখো।

সেই শিশুই গঙ্গানারায়ণ। বিম্ববতীর একেই দয়ার শরীর, তার ওপর হৃদয় ছিল সন্তান-তৃষিত, তিনি ছেলেটিকে আপন করে নিলেন। ছেলেটির দেহে তাঁদের পরিবারের রক্ত আছে, একথা নিশ্চিতভাবে জানার পর, রামকমল ঐ ছেলেটিকে দত্তক নেবার প্রস্তাব দিলেন বিম্ববতীর কাছে। ততদিনে ধরেই নেওয়া হয়েছিল, বিম্ববতীর সন্তান হবে না। বিম্ববতী তৎক্ষণাৎ রাজি হলেন। আনুষ্ঠানিকভাবে গঙ্গানারায়ণকে দত্তকপুত্র হিসেবে গ্রহণ করলেন রামকমল। সে প্রায় পাঁচ বছর আগেকার কথা। বিস্ময়ের কথা এই যে বয়ঃবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গঙ্গানারায়ণের মুখের গড়নে আশ্চর্য সাদৃশ্য দেখা যেতে লাগলো। রামকমলের সঙ্গে। যেন সে রামকমলেরই ঔরসজাত পুত্র। যে দেখে, সে-ই ঐ কথা বলে।

লোকে এমন কথাও বলে যে ঐ দত্তক নেবার ব্যাপারটা নিছকই ভড়ং! রামকমলের নারীলোলুপতার কথা সর্বজনবিদিত, তিনি নিশ্চয়ই নিজের গ্রামেও একটি উপপত্নী রেখেছিলেন, প্রতি বৎসর পূজোর সময় একবার সেখানে যান তিনি। ঐ গঙ্গানারায়ণ সেই উপপত্নীরই সন্তান, তাকে সম্পত্তির উত্তরাধিকারী করার জন্য দত্তক নেওয়া হলো। কেউ কেউ এ রটনা বিশ্বাস করে। রামকমলের ঘনিষ্ঠতম সুহৃদ বিধুশেখরের কানেও এই রটনা এসে পৌঁছেছে, তিনি শুনে উচ্চহাস্য করে উঠেছিলেন। আর যেই বিশ্বাস করুক, বিধুশেখর কিছুতেই এটা বিশ্বাস করতে পারেন না।

বিম্ববতীর ধারণী, শ্ৰীশ্ৰীরঘুনাথ জিউ-ই ছেলেটিকে পাঠিয়েছেন তাঁদের কাছে। এমন উপর্যুক্ত সন্তান মানুষ বহু ভাগ্যে পায়। ছেলেটি ধীর স্থির, বুদ্ধিমান। পড়াশুনোয় মতি আছে। সংস্কৃত, ফাসী ও ইংরেজি শিখছে নিয়মিতভাবে। এই ছেলের হাতে যে বিষয়-সম্পত্তি রক্ষা পাবে ও বৃদ্ধি পাবে, এ সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলেন রামকমল।

কয়েকদিন পর বিম্ববতীর সঙ্গে দুই পুত্ৰ বিষয়ে খানিক আলোচনা করলেন রামকমল।

তাঁর তখনও আশঙ্কা তাঁর নিজের সন্তানটি শেষ পর্যন্ত বাঁচবে কিনা। এত ক্ষুদ্র মানবশিশু তিনি কখনো দেখেননি। এর সব কিছুই যেন অদ্ভুত। জন্মের পর বেশ কিছুদিন বাচ্চারা অধিকাংশ সময় ঘুমিয়েই কাটায়। নিদারুণ অন্ধকার থেকে এসে এই পৃথিবীর আলো চক্ষে সইয়ে নিতে যথেষ্ট সময় লাগে। কিন্তু এ তেমন ঘুমোয় না, যখন তখন জাগে আর কান্না জুড়ে দেয়। হাসতেও শিখেছে। এরই মধ্যে। মুখের সামনে একটা আঙুল নিয়ে গেলেই হেসে ওঠে খটখটিয়ে। দেড় দু মাসের মধ্যে শিশুরা নাকি ভালো করে দেখতেই পায় না, কিন্তু যে-কেউ সামনে গেলেই এ দিব্যি তাকিয়ে থাকে তার মুখের দিকে।

নিজের সন্তান সম্পর্কে রামকমলের মনোভাব প্রতিদিন বদলে যাচ্ছে। এখন দিনের মধ্যে বহুবার তিনি ছেলের মুখ দেখতে আসেন। প্রথম দু একদিন তিনি নতুন শিশুটিকে বেশী মনে স্থান দেননি, বিম্ববতীর সঙ্গে দেখা করতে এসেও ছেলের দিকে তাকাতেন না। যেন বেশী মায়ায় বাঁধা পড়তে চান না, ও যদি চলে যায়, তাহলে যেন বিস্মৃতি আসে খুব দ্রুত। গঙ্গানারায়ণ তাঁর বংশধর, তাকে নিয়েই তিনি তৃপ্ত থাকবেন। তারপর একটা একটা দিন যেতে লাগলো। আর তাঁর নিজের সন্তান যেন তাঁকে টানতে লাগলো চুম্বকের মতন। মাত্ৰ সাত মাস দশ দিন গর্ভবাসের পর জন্মেছে যে বাচ্চা, এতখানি জীবনীশক্তি দেখলে, বিশেষত তার খটখাটে হাসি শুনলে যেন খানিকটা গা ছম ছম করে।

আর একটা বিস্ময়বোধও যেন আচ্ছন্ন করে ফেলছে রামকমলকে। এতদিনে তাঁর এই ধারণা বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছিল যে তাঁর সন্তান উৎপাদনক্ষমতা নেই। বিম্ববতী অবশ্য নিজেকে বাঁজা ভাবতেন এতদিন। কিন্তু রামকমল আরও অনেক রমণীর গর্ভে বীৰ্য নিষেক করেছেন, তারা কেউই তাঁকে একটিও সন্তান উপহার দিতে পারেনি। যদি কেউ দিত, তাহলে সেই সন্তানকে তিনি নিজের বংশধর হিসেবে স্বীকৃতি না দিলেও তার ভরণপোষণের জন্য যাপ্ত ব্যবস্থা করে দিতেন নিশ্চিত। শেষ পর্যন্ত বিম্ববতীর কাছেই সার্থক হলো তাঁর পৌরুষ। এ কথা চিন্তা করলেই রামকমলের সারা শরীরে গুপ্ত খুশীর জোয়ার এসে যায়।

বিম্ববতীর শরীর এখনো দুর্বল, তবু তিনি পুত্র কোলে নিয়ে অনেক রাত পর্যন্ত জেগে বসে থাকেন। রাস্তার দিকের সব কটি জানলা বন্ধ। কাছেই এক জায়গায় চড়কের মেলা বসেছে। অনেক রাত পর্যন্ত পথ দিয়ে মানুষজন হলুল্লা করতে করতে যায়। গতকাল রাত্তিরেই একদল মাতাল এমন গান জুড়েছিল ঋষভরাগিণীতে যে আর একটু হলেই ধোপারা ছুটে আসতো দড়িদড়া নিয়ে। একজন পাহারাওয়ালা মজা দেখছিল সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। শেষ পর্যন্ত রামকমলই তাঁর পাইকদের পাঠিয়ে মাতালগুলোকে গলাধাক্কা দিয়ে বিদায় করে দেন।

রামকমল শুতে যাবার আগে এসে দাঁড়ালেন পত্নীর পাশে। চার চক্ষুর দৃষ্টি একসঙ্গে নিবদ্ধ হলো ঘুমন্ত শিশুটির ওপর। বিম্ববতী বললেন, চোখ দুটো দেকেচো? ঠিক তোমারই মতন হবে। ঠোঁটের কাঁচটাও তোমার মতন। শুধু কপালের এইটুকু জায়গায় আমার সঙ্গে মিল আচে।

রামকমল হাসলেন। স্ত্রীলোকেরা এসব কী করে বোঝে কে জানে। শিশুর মুখ চোখ কিছুই তো এখানে চেনা যায় না।

—তুমি কেমন আচো, বিম্ব?

বিম্ববতীর ঠোঁটে গাঢ় পরিতৃপ্তির হাসির আভাস পাওয়া গেল। তিনি বললেন, আমি ভালো আচি-তুমি তোমার শরীরের যত্ন নিও গো, আমি কিচু দোকতে পারি না।

—আমার জন্য চিন্তা করো না। মা রয়োচেন, বড় বৌঠান রয়েচেন।

—গঙ্গা শুয়ে পড়েচে? ওর খাওয়াদাওয়া ঠিকমতন হচ্চে তো?

—দেকলুম তো শুয়ে আচে। তোমার কাচে আসেনি?

—এ বেলা আসেনি কো, একবার খপর নিয়ে শুনলুম পড়াশুনা কচ্চে!

—ও কি তোমার ঘরে বেশী আসে না?

—লজ্জা  পায় বোধহয়। আমাকে এমনভাবে শুয়ে থাকতে তো কখনো দ্যাকেনি, বহু বিচারের মধ্যে আমার কোনো রোগভোগ হয়নি।

—নতুন ভাইবোন জন্মালে ছেলেমেয়েদের এরকম একটু অভিমান হয়ই। কুসুমকুমারী যৌবারে জন্মালো, আমার তখন না বচর বয়েস, আমি ভাবতুম মা বুঝি আমা অপেক্ষা কুসুমকুমারীকেই বেশী ভালোবাসেন। কুসুমের তখন কত আদর।

—গঙ্গার তো আর ন বচর বয়েস নয়। সে বড় হয়েচে, সে বুজবে।

—কিন্তু বিম্ব, তুমি কি দুজনকে সমান ভালোবাসতে পারবে?

—কেন পারবো না? গঙ্গাকে পেটে ধরিনি বটে, কিন্তু সে কি কিচু কম?

—বিধু আমার মনের মধ্যে একটা কথা ঢুক্যে দিয়েচে। দত্তক নেবার পর নিজের সন্তান জন্মালে সে বংশে নাকি একটা বড় রকম বিরোধ বাধে। আদালতে সে এমন অনেক দেকেচে।

—গঙ্গা অতি ভালো ছেলে, সে কক্ষনো তার ছোট ভাইয়ের সঙ্গে বিবাদ করবে না। —গঙ্গা না হয় না-ই করলো, কিন্তু তোমার এ ছেলে যদি বড় হয়ে গঙ্গাকে সহ্য করতে না পারে?

বিম্ববতী আহত হয়ে বললেন, তুমি আগে থেকেই এরকম গাইচো কেন? ওসব কিচু হবে না। আমি বলচি দেখো, ওদের দু ভাইয়ের মধ্যে কখনো অসৈারণ হবে না।

রামকমল বললেন, না হয় তো মঙ্গল। আমার বিষয় সম্পত্তি যথেষ্ট আচে, আমি ওদের মধ্যে সমান ভাগ করে দিয়ে যাবো।–লিখিত পড়িতভাবে-আগে থেকেই, তাতেও ওরা যা পাবে—

কথাটা বলতে বলতেই রামকমলের মনের মধ্যে একটা খটকা লাগলো। সমান? তাঁর নিজের রক্ত বইছে। এই ছেলের শরীরে, সে গঙ্গানারায়ণের সমান পাবে? বড় হয়ে-যখন সে সব জানবে, তখন বাপ-মায়ের ওপর তার অভিমান জন্মাবে না?

রামকমল শব্দ করে হাসলেন।

—কী হলো?

—আমি নিজেই এর মধ্যে ভাবতে শুরু করিচি, ওদের সমান সমান সম্পত্তি দেওয়া হবে কিনা-আমার রক্ত বইচে এর শরীরে-রক্তে এত টান যে আমিও দুর্বল হয়ে পড়চি।

—আমি যতদিন বেঁচে থাকবো, আমি দুজনকেই সমান করে দেকবো।

—ভালো। তুমি মা হয়ে যদি তা পারো, আমিই বা তাহলে পারবো না কেন?

আরও কয়েকদিন পর সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলেন বিম্ববতী। বাড়িতে এতদিন ডাক্তার কবিরাজের আনাগোনা লেগেই ছিল। তাঁরা কেউই বিশ্বাস করতে পারেন নি যে শেষ পর্যন্ত জননী ও সন্তান দুজনেই বেঁচে থাকবে। এটা রীতিমতন একটা বিস্ময়ের ব্যাপারই বটে। রামকমলের মা সৌদামিনী ইতিমধ্যে বহু পুজোআচ্চা, ব্ৰাহ্মণ বিদায় ও কাঙালী ভোজন করিয়েছেন এই শিশুর মঙ্গল কামনায়।

কুলপুরোহিত এসে জাতকের জন্মলগ্নের রাশি নক্ষত্ৰ বিচার করে কোষ্ঠি রচনা করে দিলেন। তিনি ঘোষণা করলেন, এ শিশুর যশোভাগ্য সাঙ্ঘাতিক। একদিন সারা দেশ। এরই জন্য এই বংশের সুনাম গাইবে। বিম্ববতী রত্নপ্ৰসবিনী।

শিশুর নাম রাখা হলো নবীনকুমার।

একুশ দিনের দিন বিম্ববতী নবীনকুমারকে কোলে নিয়ে সারাবাড়ি ঘুরে এলেন। তারপর শিশু ঘুরতে লাগলো এ কোল থেকে ও কোলে।

সন্ধ্যেবেলা বৈঠকখানা ঘর থেকে ওপরে এসে রামকমল দেখলেন বারান্দায় বিম্ববতী আসনপিঁড়ি হয়ে বসে স্তন্য পান করাচ্ছেন নবীনকুমারকে। আর গঙ্গানারায়ণ বসে আছে মায়ের পিঠে গাল ঠেকিয়ে। রামকমল মুগ্ধ হয়ে গিয়ে ভাবলেন, আহো, কী সুন্দর দৃশ্য!

তিনি তখনি আবার নীচে নেমে এসে দিবাকরকে নির্দেশ দিলেন যুড়িগাড়ি বার করবার জন্য। আজ তাঁর মনে খুব আনন্দ। অনেক দিন পর আজ তিনি জানবাজারে কমলাসুন্দরীর বাড়িতে যাবেন।

<

Sunil Gangapadhyay।। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়