ব্যাপারটা যে এত দ্রুত চাউর হয়ে যাবে কল্পনা করতে পারেনি অনিমেষ। পরদিন সকালে যখন আকাশ সাজানো রোদ উঠল, ত্রিদিবের সঙ্গে ডাইনিং রুমে ঢুকতেই ও বুঝতে পারল হোস্টেলের বাঙালী বাসিন্দাদের চোখের দৃষ্টি পাল্টে গেছে। প্রথমটায় একটু অস্পষ্টতা ছিল, ছেলেরা খেতে খেতে ওর দিকে তাকাচ্ছে বারে বারে নিজেদের মধ্যে কথা বলছে এবং সেটা ওকে কেন্দ্র করেই। অনিমেষ ত্রিদিবকে কারণটা জিজ্ঞাসা করল। এরা বেশির ভাগই কলেজের ছাত্র, ওদের চেয়ে জুনিয়ার, এক সঙ্গে মেশার প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল, কি ব্যাপার, সামথিং গোলমাল মনে হচ্ছে?

ওদের মধ্যে যে ছেলেটি সবচেয়ে সপ্রতিভ সে খাওয়া থামিয়ে হেসে জবাব দিলে, না, না, গোলমাল হবে কেন? আমরা অনিমেষদার সম্পর্কে একটা খবর শুনেছি তাই আলোচনা করছিলাম।

কি খবর? ত্রিদিব মজা করে জিজ্ঞাসা করল।

উনি খুব অ্যাকটিভ কমুনিস্ট অথচ এখানে এমনভাবে থাকেন কেউ তা টের পায় না। অনিমে হেসে ফেলল, তারপর প্রতিবাদ করতে গিয়ে কি ভেবে চুপ করে গেল । ওর মনে হল ফালতু কথা বলে কোন লাভ নেই। যে কেউ ইচ্ছে মতন ধারণা তৈরি করে নিতে পারে, জনে জনে গিয়ে সেই ধারণা আগ্রহ হচ্ছিল। সেটা ত্রিদিবই প্রশ্ন করল, তোমরা এই খবরটা কি করে পেলে?

বাঃ, খাদ্য আন্দোলনের সময় অনিমেষদা পুলিশের গুলীতে হেভি ইনজুরড হয়েছিলেন শুনলাম, সেটা অ্যাকটিভ না হলে হয়? ছেলেটি কথা থামিয়ে একটু ভেবে প্রশ্ন করল, কিন্তু অনিমেষদা, আপনি কলেজ ইউনিয়নে জয়েন করেননি কেন? আমরা শুনলাম আপনি এস এফ–এর মেম্বার পর্যন্ত ছিলেন!

খেতে ভাল লাগছিল না অনিমেষের। ত্রিদিব খুব দ্রুত খায়, ওর খাওয়া শেষ হয়ে এসেছিল। অনিমেষ উঠে দাঁড়িয়ে বলল, তোমরা খুব ভুল খবর শুনেছ। আমার সঙ্গে কম্যুনিস্ট পার্টির মেম্বারশিপ পাওয়া সহজ ব্যাপার ন আর যারা রিয়েল মেম্বার তারা কক্ষণো সেটা প্রকাশ করে না।

ব্যাপারটা যদি এ পর্যন্ত থেমে থাকত তবে সেটা একরকম হতো, ইউনিভার্সিটিতে খবর গড়িয়ে গড়িয়ে এল। সেই মে মাসে রেজাল্ট বেরিয়েছে আর এখন জুলাই–এর মাঝামাঝি, সব ক্লাস শুরু হয়েছে, কেউ কাউকে চেনে না। এমনকি নবীন ছাত্রদের বরণ-করা ব্যাপারটা এখনও হয়ে ওঠেনি। স্কটিশের যে ব্যাচটা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে অনিমেষ ওদের সঙ্গেই সময় কাটাতো। ওদের এই ব্যাচের সবাই খুব শান্তশিষ্ট, পড়াশুনোর মধ্যেই থাকতে ভালবাসে। বি-এ অনার্সে যে ছেলেটি ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছিল সে ওদের ব্যাচেরই। দুজন খুব সিরিয়াসলি সাহিত্য করার কথা ভাবে। এর মধ্যেই বিদেশী সাহিত্যের অনেক খবর ওরা জেনে গেছে। ইউনিভার্সিটিতে আসার পর বিদেশী রেফারেন্স দিয়ে কথা বলার ঝোঁক ওদের আরো বেড়েছে।

স্কটিশের হোস্টেল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করতে কেউ হেঁটে আসে না। পথটা এমন দূরত্বের নয় যে হাঁটা অসম্ভব কিন্তু কোলকাতায় চোখের সামনে এত যানবাহন যে হাঁটার প্রয়োজন পড়ে না। অনিমেষ একটা মান্থলি করিয়ে নিয়েছে সেকেন্ড ক্লাশ ট্রামের । সেটায় সেই ধর্মতলা থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত সারাদিন ধরে ঘোরা যায় অথচ পয়সা সামান্যই লাগে। সেদিন ত্রিদিব একটা কথা বলল। জিনিসপত্রের দাম এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতা নিয়ে কথা হচ্ছিল। একটা কাগজ লিখেছিল যে মাথা পিছু মানুষের প্রতিদিনের রোজগার নাকি কুড়ি পয়সা। কুড়ি পয়সায় একটা মানুষ কি করে বেঁচে থাকতে পারে? ত্রিদিব বলেছিল তবু মানুষ বেঁচে থাকে এবং সেটা মানুষ বলেই সম্ভব। ভারতবর্ষের কোথাও যখন মানুষ এ বিষয় নিয়ে হইচই করেনি, জিনিসপত্রের দাম কমানো নিয়ে আন্দোলন হয়নি তখন কলকাতায় একদিন দুদিনের জন্য হলেও বিক্ষোভ ফেটে পড়েছিল। ত্রিদিবের কাছে সেটাই অস্বাভাবিক লাগে। ও বলেছিল, এখানে দশ পয়সা দিলে এক ভাড় চা পাওয়া যায়, ট্রাম মাইলখানেক স্বচ্ছন্দে চলে যাওয়া যায়, বারো আনা পয়সায় একটা মানুষ ডাল ভাত তরকারি খেতে পারে। এই ব্যাপারটা পশ্চিম বাংলার বাইরে কোথায়ও সম্ভব নয়। দিল্লীতে নাকি এটা স্বপ্নকুসুম। তাই এখানে এত মানুষের ভীড়, সবাই কম পয়সায় থাকবার জন্য কলকাতায় ছুটে আসছে। অথচ এখানেই খাদ্য আন্দোলন হয়, এক পয়সা ভাড়া বাড়লে ট্রাম পোড়ে। কেন? তার মানে কি এই যে পশ্চিম বাংলার মানুষ খুব সচতেন, তাদের কেউ ভুলিয়ে রাখতে পারে না? অনিমেষ এই জায়গায় ত্রিদিবের সঙ্গে একমত নয়। এখানে যত তাড়াতাড়ি আগুন জ্বলে ওঠে তত তাড়াতাড়ি তা নিভে যায়। নিভে যাওয়ার পর মনেই হয় না কখনো আগুন জ্বলেছিল। আর এই আগুন জ্বলবারও একটা মজার দিক আছে। বেশির ভাগ মানুষই শীতে হাত পা সেঁকার মত দূরে থেকে নিজেদের গরম রাখতে চায়, মুষ্টিমেয় যে কজন ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের আচরণ নাটক দেখার চোখ নিয়ে দেখে। বেশির ভাগ বাঙালীর চরিত্রই এই, অবাঙালীরা যারা এই শহর কোলকাতায় প্রায় আধাআধি, তাদের সঙ্গে যেন এইসব আন্দোলনের কোন সম্পর্ক নেই, দেখলে মনে হয় তারা অন্য পৃথিবীতে বাস করে। কলেজে পড়ার সময় যে দুচারটে ছোটখাটো আন্দোলন অনিমেষ দেখেছে সেগুলোর চেহারা মোটামুটি একই। একটা ইস্যু নিয়ে বিক্ষোভ, মিছিল করে ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেল, সেখানে কিছুক্ষণ জ্বালাময়ী বক্তৃতা চলল, ব্যাস, সব কর্তব্য শেষ। কিংবা খুব জোরদার কিছু ঘটলে একদিনের জন্য ধর্মঘট। এই ব্যাপারটা অনিমেষের মাথায় ঢোকে না, ধর্মঘট করলে কি লাভ হবে! নিজেকে নাক কেটে কি অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করা যায়? আমি কোন কাজ করছি না তোমার আচরণের প্রতিবাদে– যারা অন্যায় করে, এত সহজে তারা আজকাল ভয় পায় না এটাই বোধহয় ধর্মঘটী নেতারা ভুলে গেছেন। নাকি আসলে কিছু করার ক্ষমতা নেই বলেই ধর্মঘটের মুখোশ পরে নিজেদের সুপ্রতিষ্ঠিত রাখতে চান। ক্রমশ এই ধারণা বন্ধমূল হচ্ছে সাধারণ মানুষ কখনই কোন আন্দোলনের সঙ্গে নিজেদের জড়াতে চায় না। অথচ আন্দোলন বলে যেটা হয় সেটা সাধারণ মানুষের জন্যেই।

দ্বিতীয় শ্রেণীতে মান্থলি টিকিট নিয়ে যাওয়া-আসার পথে আর একটা ব্যাপার লক্ষ করেছে অনিমেষ। প্রথম শ্রেণীতে এক তিল জায়গা না থাকলেও ভদ্র বাঙালীরা কখনই দ্বিতীয় শ্রেণীতে উঠতে চান না। সেখানে কিছু অবাঙালী এবং ওই কুড়ি পয়সা-আয় মার্কা মানুষের ভীড়। অথচ দুটো কামরা একই সঙ্গে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে। মেয়েদের মধ্যে তো  বিচার আরো প্রবল। অনিমেষ কোন সুন্দরী মহিলাকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে যাতায়াত করতে দেখেনি। চাওয়া-পাওয়ার ব্যাপারে এদুটো শ্রেণীর মানুষেরাই সাধারণ-জনসাধারণ।

জলপাইগুড়িতে যে সব চিন্তাভাবনা ওর মাথায় ছটফট করত সেগুলো এই চার বছরে অন্য চেহারা নিয়েছে। মাঝে মাঝে মনে হয় সেদিন পুলিশের ছোঁড়া বুলেটটা তার একদিক দিয়ে উপকারই করেছে। এই যে অতদিন বিছানায় শুয়ে থাকা, শরীর কাহিল হওয়ায় সতর্ক হয়ে চলাফেরা–এগুলো অনেক উদ্দামতাকে সংযত করতে সাহায্য করছে। না হলে যে উদ্দীপনা প্রথমবার কোলকাতায় আসবার সময় বুকের মধ্যে আঁচড় কাটতো সেটা তাকে এতদিনে কোথায় নিয়ে যেত কে জানে। খোলা চোখেও যে অনেক সময় দৃষ্টি থাকে না–সেটা সেরকম সময় ছিল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোন বাড়িটায় ওদের ক্লাস শুরু হয়েছে। বইপত্র এখনও কেনা হয়নি। মহীতোষ এখনও টাকা পাঠায়নি। রেজাল্ট বের হবার পর যখন সে জলপাইগুড়ি থেকে এবার এল তখন ভর্তির অতিরিক্ত টাকা মহীতোষ দিতে পারেননি। এম এ ক্লাসে কি রকম বই কিনতে হয় ওঁরা কেউ জানেন না, অনিমেষও বলতে পারেনি। এম এ রেজাল্ট বের হবার পর মহীতোষ একটু পাল্টে গেছেন। তার এখন মনে হচ্ছে অনিমেষ যদি ফাস্ট ক্লাস নিয়ে এম এ পাশ করতে পারে তা হলে কোন কলেজে অধ্যাপনার চাকরী পেয়ে যাবে। যদিও মাইনে কম তবু চাকরীটায় সম্মান আছে। এসব ব্যাপারে দেবব্রতবাবু তাকে হালফিল খবর চিঠিতে জানিয়ে থাকেন।

দেবব্রতবাবুর বাড়িতে অনেকদিন যাওয়া হয়নি। মনে পড়ে, হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে প্রায় মাস তিনেক ওঁর বাড়িতে থাকতে হয়েছিল অনিমেষকে। একটুও কষ্ট হয়নি। দেবব্রতবাবু ব্যবসা করেন কিন্তু কি ধরনের ব্যবসা তা ও জানে না। দিনরাতের খুব কম সময়ই ওঁকে বাইরে যেতে দেখেছে সে সময়। কিন্তু বাড়িতে স্বচ্ছলতা সবখানে, ব্যাপারটা জিজ্ঞাসা করতে সঙ্কোচ হত। নীলা কলেজে পড়ছে। মানে সকালে সেজেগুঁজে যেত আর বারোটা নাগাদ খুব পরিশ্রান্ত হয়ে ফিরে আসত। সারাটা দুপুর নীলার সঙ্গে গল্প করে কেটে যেত। গল্প মানে পৃথিবীর কোন বিষয় যা থেকে বাদ নয়। কদিনের মধ্যে তুই-তোকারিতে সম্পর্কটা নামিয়ে এনেছিল নীলা। অতবড় একটা লজ্জাজনক ব্যাপার। কিন্তু একটা ব্যাপার, ও বুঝতে পারছিল নীলার মতন মেয়ে জলপাইগুড়িতে সে কখনো দেখেনি। সীতা, উর্বশী কিংবা রম্ভার থেকে নীলা যেন হাজার মাইল আলাদা জাতের মেয়ে। মন্টু বলত যৌবন এসে গেলে মেয়ে-পুরুষ বন্ধুত্ব হয় না। অনিমেষের মনে হয়েছিল মন্টু নীলার মত মেয়েকে দেখেনি। কোন রকম নকল লজ্জা বা ঢং ছাড়া একটা মেয়ে যখন কথা বলতে পারে তখন তাকে বন্ধু না ভেবে পারা যায়! ওর কলেজে যাওয়া-আসার পথে ছেলেরা দাঁড়িয়ে থেকে যে সব মন্তব্য ছুঁড়ে মারে সেগুলো অকপটে বলতে পারে নীলা। গুডি ছেলেদের দেখলে কি ভীষণ ক্যাবলা মনে হয়, আবার অতিরিক্ত স্মার্টদের দেখলে গা জ্বলে যায় অনিমেষের জানা হয়ে গেছে। ওদের বাড়িতে থাকার শেষের দিকে ওর সহপাঠিনীর এক দাদাকে ভাল লাগতে শুরু হয়েছিল অনিমেষকে সেটা জানাতে দ্বিধা করেনি নীলা। একসঙ্গে একই বাড়িতে থেকে এক মুহূর্তের জন্য অন্য কোনরকম আচরণ করতে দেখেনি ওকে অথচ হাসপাতালে প্রথম আলাপের দিন অনিমেষ নীলার সম্পর্কে একটা মোটা দাগের ধারণা করে ফেলেছিল।

পরের বছর হোস্টেলে আসার পর দেবব্রতবাবুর ওখনে সে গিয়েছে মাঝে-মাঝে। দেবব্রতবাবুও খোঁজখবর নিতে এসে থাকেন কিন্তু নীলার সঙ্গে সে আড্ডাটা আর জমেনি। একটা বছর নষ্ট হওয়ায় নীলা ওর থেকে এক ধাপ এগিয়ে গেছে। বি-এ পড়ার সময় একটা ছোট্ট ঘটনা ঘটেছিল যার পর অনিমেষ আর দেবব্রতবাবুর বাড়িতে যায়নি। যায়নি মানে সম্পর্ক চলে যাওয়া নয়, যেতে ঠিক ইচ্ছে করে না। ব্যাপারটা ওকে এমন চমকে দিয়েছিল যে এখনও ভাবলে কুলকিনারা পায় না। দেবব্রতবাবুকে জানাতে পারেনি অনিমেষ। যাকে বলা যেত সে কোনদিন জিজ্ঞাসা করেনি। নীলা কখনই ওর হোস্টেলে আসেনি। যখন বাড়িতে যেত তখন হেসে গল্প করত, খবরাখবর নিত, ব্যাস, এক এক সময় অনিমেষের মনে হয়েছে সরাসরি গিয়ে নীলাকে ব্যাপারটা বলে, ওর কি বক্তব্য সেটা জেনে নেয়। নীলা যেমন সহজ মেয়ে নিশ্চয়ই সত্যি কথা বলবে। কিন্তু সেই জিজ্ঞাসা করাটাই যে অস্বস্তির। সেই বিকেলটা ছিল শীতের। সন্ধ্যেটা আসবার আগেই কোলকাতা ধোঁয়াটে হয়ে যায়। নীলাদের বাড়িতে এসেছিল অনিমেষ। এসে শুনল নীলা দেবব্রতবাবুর সঙ্গে সিনেমা দেখতে বেরিয়েছে। ওর আসার কোন কথা নয়, ওরা জানেও না। মাসীমা খুব আদর করে ওকে খাওয়ালেন, ভদ্রমহিলাকে কখনো গম্ভীর মুখে দেখেনি অনিমেষ। ওদের এই বাড়িটা সুখী সংসারের একটা দারুণ উদাহরণ। মহীতোষ তাকে নিয়ে সিনেমা দেখতে গেছেন একটা স্বপ্নেও ভাবা যায় না। ওদের ফিরতে দেরী হবে বলে অনিমেষ চলে আসছিল। বাড়ি থেকে বেরিয়ে গলি দিয়ে হাঁটছে এমন সময় কেউ একজন ওর সামনে এসে দাঁড়াল। অনিমেষ দেখল ছেলেটি ওর চেয়ে সামান্য বড় হবে কোঁকড়া কোঁকড়া চুল, এই শীতেও কোন গরম জামা গায়ে নেই। অনিমেষ থমকে দাঁড়াতেই ছেলেটি গম্ভীর গলায় বলল, তোমার সঙ্গে আমার খুব জরুরী কথা আছে।

অনিমেষ হকচকিয়ে গিয়েছিল, কোনরকমে বলল, আপনি কে?

আমি যে-ই হই তোমার তাতে কি দরকার! কথা আছে শুনতে হবে।

বাঃ, আপনাকে আমি চিনি না।

অনিমেষকে থামিয়ে দিয়ে ছেলেটি বলল, ঠিক আছে, তুমি আমার সঙ্গে এস। ওপাশে একটা পার্ক আছে, সেখানে বসব। কথা বলার সময় ছেলেটি বারংবার চারপাশে তাকাচ্ছিল। মনে হল ছেলেটি তো অন্য কারো সঙ্গে তাকে গুলিয়েও ফেলতে পারে। এই আবছা অন্ধকারে সেটা অসম্ভব নয়। সে জিজ্ঞাসা করল, আপনি আমাকে চেনেন?

তুমি তো অনিমেষ, এসো, আমি এগোচ্ছি। ছেলেটি সামনে হাঁটছে, ইতস্তত করেও অনিমেষ ওকে অনুসরণ করল। ঠিক ভয় নয়, অনিমেষের মনে হচ্ছিল কোন কিছু মারাত্মক ব্যাপার ঘটেছে যার ফলে ছেলেটির তাকে খুব প্রয়োজন। কিন্তু সেটা এত অস্পষ্ট যে ওটা জানবার আগ্রহ ওকে পার্কে টেনে আনল। সে পার্কের ভেতর ঢুকে দেখল একটা খালি বেঞ্চিতে ছেলেটি। বলল পার্ক কিন্তু মানুষের ভীড় কম। অনিমেষকে একটু পা টেনে হাঁটতে দেখে ছেলেটি বলল, তোমার পায়ে কি এখনও ব্যথা আছে? অবাক হয়ে তাকাল অনিমেষ। ঘাড় নেড়ে না বলতে বলতে ভাবল এই ছেলেটি ওর সম্পর্কে অনেক কিছু জানে। কি ব্যাপার!

বেঞ্চিতে বসলে ছেলেটি এবার কেমন হয়ে গেল। যে উত্তেজনায় অনিমেষকে এখানে ডেকে এনেছে সেটা কমে আসতেই ও কথা খুঁজে পাচ্ছে না এটা টের পাওয়া যাচ্ছিল। অনিমেষ বলল, কি কথা, বলুন।

ছেলেটি হঠাৎ কাতর গলায় বলে উঠল, তুমি আমাকে চেন না, আমার নাম শ্যামল। আমি নীলাকে প্রাণের চেয়ে বেশি ভালবাসি।

এরকম কথা শুনবে অনুমান করতে পারেনি অনিমেষ। ও অবাক হয়ে ছেলেটিকে দেখতে লাগল । এবং এতক্ষণে ওর খেয়াল হল প্রথম থেকে শ্যামল ওকে সমানে তুমি তুমি বলে যাচ্ছে অথচ ওকে খুব বেশি বয়স্ক মনে হচ্ছে না তার। নীলাকে ভালবাসে বলেই কি অনিমেষকে তুমি বলার অধিকার পেয়ে যাবে! বিরক্ত হয়ে সে অন্যদিকে তাকাল। ছেলেটি সেইরকম গলায় বলল, আমি তোমার কাছে, কি বলব, আমার মনে হচ্ছে পাগল হয়ে যাব।

কোন রকমে অনিমেষ বলতে পারল, এসব কথা আমাকে বলছেন কেন?

শ্যামল বলল, কারণ তুমি আমাকে সাহায্য করতে পার!

আমি? হতভম্ব হয়ে গেল অনিমেষ।

তুমি এমন ভাব করছ যেন কিছুই বুঝতে পারছ না! আড়চোখে তাকাল শ্যামল।

বিশ্বাস করুন, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

হয় তুমি মিথ্যুক নয়– না, নীলা কখনোই মিথ্যে কথা বলতে পারে না। শোন, তোমাকে একটা কথা স্পষ্ট বলতে চাই নীলাকে আমি ভালবাসি। আমি জানতাম ও আমাকে ছাড়া আর কিছু চায় না। কিন্তু ইদানিং ওর ব্যবহার একটু একটু করে প্যাল্টে যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত স্বীকার করল যে আমাকে নাকি ও ভালবাসতে পারছে না। আমি জানি এর কারণ তুমি! তুমি ওদের বাড়িতে অতদিন ছিলে, একসঙ্গে থাকলে অনেকসময় মমতা এসে যায়। নীলা তোমার জন্যে আমাকে রিফুজ করছে। বড় বড় চোখে তাকাল শ্যামল।

হেসে ফেলল অনিমেষ। সে শ্যামলের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল, একথা আপনি কোত্থেকে জানালেন? নীলা আপনাকে বলেছে?

ঘাড় নাড়ল শ্যামল, নীলা বলবে কেন? আমি বুঝতে পেরেছি। তুমি ছাড়া আর কোন ছেলে ও বাড়িতে যায় না।

হাসছিল অনিমেষ, ব্যাস, তা থেকেই আপনি ধারণা করে ফেললেন?

শ্যামল রেগে গেল, ইয়ার্কি মারার সময় এটা নয়। নীলা আমাকে যেরকম ভালবাসত তা থেকে সরে যাওয়ার একমাত্র কারণ অন্য কেউ তার মন ভুলিয়েছে। মেয়েরা রুগ্ন মানুষের ওপর চট করে মায়া দেখিয়ে বসে।

অনিমেষ বলল, আপনি ভুল করছেন। নীলার সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নেই। কেন নীলা এরকম করেছে সেটা তাকেই জিজ্ঞাসা করুন।

আমাকে ও এড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমি তোমার কথা বিশ্বাস করি না। নীলা তোমার গল্প আমার কাছে যখনই করত তখন এমন ভাব দেখাতো যে তুমি একজন হিরো। পুলিশের গুলী খেয়েও বেঁচে গেছ । নীলা জানে না আমি এর চেয়ে বেশি কিছু করতে পারি।

অনিমেষ ভেবে পাচ্ছিল না নীলা এরকম ব্যবহার শ্যামলের সঙ্গে করছে। বোধহয় শ্যামল হল সেই ছেলে যার কথা নীলা ওকে বলেছিল। সহপাঠিনীর দাদা। এত চট করে ভালবাসা চলে যায় কি করে! ও বন্ধুর মত শ্যামলকে বলল, নীলা যখন চাইছে না তখন ব্যাপারটা ভুলে যান। জোর করে কারো ভালবাসা আদায় করা যায় না আর আদায় করাটা পাওয়া নয়।

ফুঁসে উঠল শ্যামল, ভুলে যাব? অসম্ভব। আমি তার আগে নীলাকে মেরে ফেলব।

এবার সত্যি ঘাবড়ে গেল অনিমেষ। শ্যামলের ভঙ্গী দেখে মনে হচ্ছে সেরকম কিছু করা ওর পক্ষে অসম্ভব নয়। সে তাড়াতাড়ি বলল, ঠিক আছে, আপনি আমাকে কি করতে বলেন?

শ্যামল খুব গম্ভীর গলায় এবার বলল, তুমি যদি আর নীলার সঙ্গে যোগাযোগ না রাখো তাহলে নিশ্চয়ই নীলার মন আবার আমার দিকে ফিরে আসবে। আউট অফ সাইট, আউট অফ মাইন্ড। তুমি তো বলছ তোমার সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই, তাহলে যোগাযোগ না থাকলে কোন ক্ষতি হবে না।

এই প্রথম ছেলেটির জন্য কেমন মমতা অনুভব করল অনিমেষ। ভালবাসলে মানুষ কি অন্ধ হয়ে যায়! কোন যুক্তি কি আর মাথায় কাজ করে না? নীলা যদি ওকে এড়িয়ে যেতে চায় তাহলে শ্যামল কত মানুষের কাছে গিয়ে এই ধরনের অনুরোধ করবে? কিন্তু নীলার মত সহজ মেয়ে এইরকম ব্যবহার করবেই বা কেন? যদিও নীলা শ্যামলকে বলেনি যে সে অনিমেষকেই ভালবাসে ব্যাপারটা চিন্তা করতেই সমস্ত শরীর সিরসির করে উঠল। সে তাড়াতাড়ি বলে উঠল, ঠিক আছে, আপনি নিশ্চিত থাকুন, আমি নিজে নীলার কাছে আসব না।

শ্যামল খুব খুশি হলো, ওর মুখে হাসি ফুটল।

অনিমেষ উঠে দাঁড়ায়ে কিছু একটা বলতে গিয়েও মন পাল্টালো। শ্যামলকে পার্কের বেঞ্চিতে রেখে সে হন হন করে রাস্তায় দিকে এগিয়ে গেল । দ্রুত হাঁটতে তখনও অসুবিধে হতো কিন্তু সে গ্রাহ্য করল না।

কথা রেখেছিল অনিমেষ। যদিও মাঝে মাঝে মনে হতো শ্যামলের ওই ছেলেমানুষি হৃদয়াবেগকে ও অহেতুক প্রশ্রয় দিচ্ছে তবু নীলাদের বাড়িতে যেতে কেমন আড়ষ্টতা অনুভব করত এর পর থেকে। এসব কথা দেবব্রতবাবুকে বলা যায় না। নীলা-শ্যামলের সম্পর্কটা এখন কি রকম সে খবর আর পায়নি সে। এবং একটা অদ্ভূত ব্যাপার, নীলা তার সঙ্গে দেখা করতে আসেনি। বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে স্কটিশ তো মোটে দশ মিনিটের রাস্তা।

কলেজ স্ট্রিটের মোড়ে কি একটা গোলমাল হয়েছে, ট্রামগুলো লাইনবন্দী হয়ে পড়ায় অনিমেষ নেমে পড়ল। আজ প্রথম পিরিয়ড বারোটায়। সময় আছে হাতে। বই-এর দোকানগুলোর সামনে দিয়ে যেতে ওর খুব মজা লাগে। সার দেওয়া দোকানগুলোতে কত রকমের বই অথচ দুদন্ড সেদিকে তাকাবে তার জো নেই। দরজায় দাঁড়ানো কর্মচারীরা চিৎকার করে ডেকে দোকানে ঢোকাবেই। যারা ওই ফুটপাতে হাঁটবে তারা সম্ভাব্য খরিদ্দার বলে বোধ হয় ওরা ধারণা করে। এক একদিন তো প্রায় হাত ধরে টানাটানি চলে ভেতরে নিয়ে যেতে, তা বই কেনার প্রয়োজন থাকুক বা না থাকুক। ওদের কবল থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চলে বই দেখার মধ্যে লুকোচুরি খেলার মত একটা মজা আছে। হ্যারিসন রোড পার হয়ে এপারে আসতেই অনিমেষ চমকে উঠল। প্রায় পাঁচ বছর পর দেখল, চেহারার সামান্য পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু চিনতে একটুও অসুবিধে হয় না। সেই গেরুয়া পাঞ্জাবিটি আর পাজামা, কাঁধে শান্তিনিকেতনী ব্যাগ, মাথার চুল উস্কোখুস্কো, হাতে সিগারেট নিয়ে কিছু ভাবছে। অনিমেষ সোজা সামনে গিয়ে দাঁড়াল, চিনতে পারছেন? আচমকা প্রশ্নটায় মুখে ভাঁজ পড়ল ! কিন্তু সেটা খুব অল্প সময়ের জন্য, তারপরই, অনিমেষের হাত ধরে প্রবল ঝাঁকুনি, আরে তুমি!

অনিমেষ বলল, যাক, শেষ পর্যন্ত চিনতে পারলেন!

সুবাস সেন বলল, কি আশ্চর্য, চিনব বা কেন? তবে তুমি খুব বড় হয়ে গেছ। মুখটা দাড়িগোঁফে ঢেকে ফেললেও চিনতে অসুবিধে হবে কেন? কেমন আছ?

ভাল। অনিমেষ উত্তরটা দিতে গিয়ে টের পেল এতদিন বাদে সুবাস সেনকে দেখতে পেয়ে ওর খুব ভাল লাগছে।

তোমার পা? এখন ঠিক হয়ে গেছে তো? সুবাস পায়ের দিকে তাকাতেই অনিমেষ বলল, প্রায় ঠিক, কোন অসুবিধে হয় না। তবে দৌড়ালে লাগে।

সুবাস হাসল, দৌড়াবার কি দরকার। হেঁটে যদি পৌঁছে যাওয়া যায় সেটাই তো ভাল। তারপর বলল, আছ কোথায়, কি করছ?

একটা সময় ওর সুবাসের ওপর অভিমান হত, এই কয় বছরে কলকাতা শহরে যখনি সে হেঁটেছে তখনই মনে হয়েছে, হয়তো, হয়তো একদিন সুবাসের সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে । কিন্তু কোনদিন সেরকম কিছু হয়নি। হাসপাতালে একদিন এসে সেই যে সুবাস চলে গেল আর দেখা পায়নি তার। সুবাস বলেছিল, আবার তাকে দেখতে আসবে কিন্তু কথা রাখেনি। ইচ্ছে করলে কি সুবাস তার ঠিকানা হাসপাতাল থেকে সংগ্রহ করে দেবব্রতবাবুর বাড়িতে যেতে পারত না! এ সব চিন্তা যত পুরনো হয়েছে তত মনে হয়েছে, তার কাছে সুবাসের আসবার কি কারণ থাকতে পারে? সে সুবাসদের আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, একদিন যে হাসপাতালে এসে দেখা করে জিনিসপত্র দিয়ে গেছে তাই ঢের। কিন্তু সুবাস যে কথা দিয়েছিল আসবে–কথা দিয়ে না এলে বড় কষ্ট হয়। এখন এই মুহূর্তে সেই সব অভিমানগুলো যখন ওর মনে দুলতে শুরু করেছে, সুবাস বলল, নাও, এতদিন পর দেখা হল, একটা সিগারট খাও। চারমিনারের প্যাকেটটা সামনে এগিয়ে ধরতে অনিমেষ ঘাড় নাড়ল, না সিগারেট সে খায় না তা নয়, কিন্তু ওই যে অতদিন বিছানায় শুয়ে থাকতে হয় তারপর থেকে খাওয়ার ঝোঁকটাই একদম চলে গেছে। আর এখন মহীতোষ যে টাকা পাঠান তাতে সিগারেট খেতে গেলে খুব অসুবিধে হবে।

অনিমেষ এখন কি করছে তা জেনেটেনে নিয়ে সুবাস বলল, বা, তুমি দেখছি বেশ গুড বয়। যাক, তোমাদের ক্লাস শুরু হয়েছে, ওখানে আমাদের ছেলেদের সঙ্গে আলাপ-টালাপ হলো?

আপনাদের ছেলে মানে? অনিমেষ অবাক হল।

সুবাস ওর দিকে স্পষ্ট চোখে তাকাল। তারপর জিজ্ঞাসা করল, তুমি কি স্কটিশে ছাত্র ফেডারেশন করতে না? অবশ্য করলে তো আমি জানতামই ।

অনিমেষ ঘাড় নাড়ল, না। য়ুনিয়নের সঙ্গে আমার সরাসরি সম্পর্ক ছিল না।

সুবাস এবার অবাক হল, সে কি! আমার যদ্দূর মনে হচ্ছে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে তুমি বামপন্থী কথাবার্তা বলেছিলে।

অনিমেষ বুঝতে পারছিল না কি করে ব্যাপারটা বোঝাবে । সে যদি চটপট বলে বসে যে, আন্দোলনের ব্যাপারটা ওর কাছে স্পষ্ট নয় বলে সে সক্রিয় হতে পারেনি অথবা স্কটিশেন ছাত্র ফেডারেশন কতগুলো বিলাসী ছেলের সময় কাটানোর একটা মাধ্যম বলে তার মনে হয়েছিল, তা বললে সুবাসদা সে কথা নিশ্চয়ই খুব সহজে মেনে নেবে না। ওর ভয় হচ্ছিল; এ কথা শুনলে বরং সুবাসদা ওকে ভুল বুঝতে পারে।

অনিমেষ বলল, আসলে আমার এই পা নিয়ে এত বিব্ৰত ছিলাম, যে, কিছু করতে সাহস পেতাম না। কথাটা শেষ করেই মনে হল উত্তরটায় ফাঁকি থেকে গেল। সে আবার বলল, তা ছাড়া, কোন ব্যাপার অস্পষ্ট থাকলে আমার মন তার মধ্যে যেতে সায় দেয় না।

কিন্তু অস্পষ্টতা কিসের জন্য এ নিয়ে কারো সঙ্গে আলোচনা করেছ কখনো?

সুবাস ওর কাঁধে হাত রাখল। অনিমেষ উত্তর দিল, না, আসলে কিছু কিছু ব্যাপার আছে যা নিজেই ভেবে ঠিক করে নেওয়া যায়।

সুবাসের হাতের আঙুল ওর কাঁধে শক্ত হল, না। অলোচনাই পথ পরিষ্কার করে । ঠিক আছে, একদিন তুমি আর আমি বসব। একা একা লড়াই করা যায় না।

অনিমেষ বলল, মাঝে মাঝে আপনার কথা ভাবতাম কিন্তু ঠিকানা জানি না যে দেখা পাব। কটা বাজে?

সুবাস ঘড়ি দেখল, বারোটা বাজতে তিন মিনিট বাকি। সে বলল, তুমি তো ইউনিভার্সিটিতে যাচ্ছ, চলো, তোমার সঙ্গে একজনের আলাপ করিয়ে দিই।

অনিমেষ অস্বস্তির গলায় বলল, কিন্তু আমার যে বারোটায় ক্লাস!

সুবাস বলল, কি সাবজেক্ট?

অনিমেষ বলল, বৈষ্ণব সাহিত্য।

সুবাস হাসল, এটা জেনে তোমার কি কাজে লাগবে? পরীক্ষার আগে তিন দিন চোখ বোলালেই নম্বর পেয়ে যাবে। বিমানের সঙ্গে আলাপ করো, দেখবে ভবিষ্যতে কাজ করতে সুবিধে হবে। ক্লাস না করে কোথাও যেতে খারাপ লাগছিল অনিমেষের। তবু সে জিজ্ঞাসা করল, বিমান কে?

সুবাস বলল, ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি।

<

Samaresh Majumdar ।। সমরেশ মজুমদার