তোমার আবার বই কি হবে বাবা! আজ খাওয়া-দাওয়ার পরে ওই ওষুধটাই তোমার কাছে পড়ে নেব। দেবে পড়িয়ে বাবা?
দেব বৈ কি মা, দেব বৈ কি। নক্সের সঙ্গে তফাতটা হচ্চে আসলে—ওই বইখানা একবার—
তোমার পায়ে ততক্ষণ তেলটুকু মাখিয়ে দিই না বাবা? বড্ড বেলা হয়ে গেছে—মা আবার রাগ করবেন। বলিয়া সে একবার উদ্বিগ্ননেত্রে দেখিয়া লইল তাহার জননী ঘাট হইতে ফিরিতেছেন কিনা। এবং আপত্তি করিবার পূর্বেই তেলের বাটি হইতে খানিকটা তেল লইয়া বাবার পায়ে মাখাইয়া দিল।
ইঃ—একটু সবুর করলি নে মা। একবার দেখে নিয়ে—
আজ কাকে কাকে দেখলে বাবা? আচ্ছা, পঞ্চা জেলের ঠাকুদ্দাদা—
সে বুড়ো? ব্যাটা মরবে, মরবে, মরবে, তুই দেখে নিস্ সন্ধ্যে। আর ঐ পরানে চাটুয্যে, ও হারামজাদার নামে আমি কেস করে তবে ছাড়ব। যে রুগীটি পাব, অমনি তাকে গিয়ে ভাঙ্চি দিয়ে আসবে! একদিনের বেশী যে কেউ আমার ওষুধ খেতে চায় না সে কেন?— সে কেবল ওই নচ্ছার বোম্বেটে পাজী উল্লুকের জন্যে! কি করেচে জানিস? পঞ্চার ঠাকুরদাকে যাই একটি রেমিডি সিলেক্ট করে দিয়ে এসেছি, অমনি ব্যাটা পিছনে পিছনে গিয়ে বলেচে কৈ দেখি কি দিলে?
সন্ধ্যা ক্রুদ্ধস্বরে কহিল, তারপরে?
তাহার পিতা ততোধিক ক্রুদ্ধস্বরে বলিলেন, ব্যাটা বজ্জাত ঢক্ঢক্ করে সমস্ত শিশিটা খেয়ে ফেলে বলেচে, ছাই ওষুধ! এই ত সমস্ত খেয়ে ফেললুম। কৈ, আমার ওষুধ সে খাক ত দেখি! এই বলে না এক শিশি ক্যাস্টর অয়েল দিয়ে এসেচে। তারা বলে ঠাকুর, তোমার ওষুধ সে একচুমুকে খেয়ে ফেললে, তার ওষুধ তুমি খেতে পার ত তোমার ওষুধ আমরা খাব, নইলে না।
সন্ধ্যা ভয়ে ব্যাকুল হইয়া বলিল, সে ত তুমি খাওনি বাবা?
নাঃ—তা কি আর খাই! কিন্তু এতটা বেলা পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ালুম, একটা রুগী যোগাড় করতে পারলুম না। পরাণের নামে আমি নিশ্চয় কেস্ করব তোকে বললুম সন্ধ্যে।
ক্ষোভে অভিমানে সন্ধ্যার চোখে জল আসিতে চাহিল। এই পিতাটিকে সংসারে সর্বপ্রকার আঘাত, উপদ্রব, লাঞ্ছনা, উপহাস-পরিহাস হইতে বাঁচাইবার জন্য সে যেন অহরহ তাহার দশ হাত বাড়াইয়া আড়াল করিয়া রাখিত। সজলকণ্ঠে কহিল, কেন বাবা তুমি পরের জন্যে রোদে রোদে ঘুরে বেড়াবে! এই বাড়িতেই যে কতজন তোমার ওষুধের জন্যে এসে এসে ফিরে গেল।
উপন্যাস : বামুনের মেয়ে Chapter : 1 Page: 10
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: বামুনের মেয়ে
- Read Time: 1 min
- Hits: 197