দ্বিজদাস কহিল, অন্ততঃ বলা অসম্ভব মনে করিনে বন্দনা। বৌদি বলছিলেন, মায়ের সবচেয়ে বেজেচে এই ব্যথাটা যে সুধীর আমাদের জাত নয়,—আসলে তোমরা জাত মানো না। এতবড় বিভেদ যে, কিছু দিয়েই এ ফাঁক ভরানো যাবে না।

আপনিও কি এই কথাই বলেন?

আমি ত তৃতীয় পক্ষ বন্দনা, আমার বলায় কি আসে যায়!

রায়সাহেবের আহারের সময় নিকটবর্তী হইয়া আসিতেছিল, বন্দনা উঠিয়া দাঁড়াইল। বাহির হইবার পূর্বে কহিল, বাবার ছুটি শেষ হয়েচে, কাল তিনি চলে যাবেন। আমিও কি তাঁর সঙ্গে চলে যাবো দ্বিজুবাবু?

দ্বিজদাস কহিল, এ-ও কি আমার বলবার বন্দনা? যদি যাও আমাকে তুমি ভুল বুঝে যেও না। তুমি যাবার পরে তোমার হয়ে মাকে তোমার সমস্ত কথা জানাবো, লজ্জা করবো না। তারপরে রইল আমাদের আজকের সন্ধ্যাবেলাকার স্মৃতি, আর রইল আমাদের বন্দেমাতরমের মন্ত্র।

বন্দনা ইহার কোন উত্তর দিল না, নীরবে ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল।

Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়