বিরাজ কি করিবে, কোথায় যাইবে, কাহার কাছে কি বলিবে—আজ কোন দিকে চাহিয়া কোন উপায় দেখিতে না পাইয়া, সেইখানে অন্ধকার উঠানের উপর উপুড় হইয়া পড়িয়া ফুলিয়া ফুলিয়া কাঁদিতে লাগিল। কেবলই বলিতে লাগিল,—অন্তর্যামী ঠাকুর, একটিবার মুখ তুলে চাও। যে লোক কোন দোষ, কোন পাপ করতে জানে না, তাকে আর কষ্ট দিও না ঠাকুর—আর আমি সইতে পারব না।

রাত্রি তখন নটা বাজিয়া গিয়াছিল, নীলাম্বর নিঃশব্দে আসিয়া শয্যায় শুইয়া পড়িল। বিরাজ ঘরে ঢুকিয়া পায়ের কাছে বসিল। নীলাম্বর চাহিয়া দেখিল না, কথাও কহিল না।

খানিক পরে বিরাজ স্বামীর পায়ের উপর একটা হাত রাখিতেই তিনি পা সরাইয়া লইলেন। আরও মিনিট-পাঁচেক নিস্তব্ধে কাটিল—বিরাজের লুপ্ত অভিমান ধীরে ধীরে সজাগ হইয়া উঠতে লাগিল, তথাপি সে মৃদুস্বরে বলিল, সমস্ত দিন যে খেলে না, এটা কার ওপর রাগ করে শুনি?

ইহাতেও নীলাম্বর জবাব দিল না।

বিরাজ বলিল, বল না শুনি?

নীলাম্বর উদাসভাবে বলিল, শুনে কি হবে?

বিরাজ বলিল, তবু শুনিই না।

এবার নীলাম্বর অকম্মাৎ উঠিয়া বসিল, বিরাজের মুখের উপর দুই চোখ সুতীক্ষ্ণ শূলের মত উদ্যত করিয়া বলিল, তোর আমি গুরুজন বিরাজ, খেলার জিনিস নয়।

তাহার চোখের চাহনি, গলার শব্দ শুনিয়া বিরাজ সভয়ে চমকিয়া, স্তব্ধ হইয়া গেল। এমন আর্ত, এমন গম্ভীর কণ্ঠস্বর সে ত কোন দিন শুনে নাই!

Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়