দিল্লীর বাদশা পকেটে হাত দিয়া দেখিলেন, রাজকোষ প্রায় শূন্য। অতবড় সম্রাটের চারিটি পয়সা ও একটি গাঁজার কলিকা ভিন্ন আর কিছুই নাই। বহুৎ আচ্ছা ! তাহাই সহায় করিয়া তিনি নিকটবর্তী একটা গঞ্জিকার দোকানে প্রবেশ করিলেন।
অধিকারীকে মিষ্ট সম্ভাষণে আপ্যায়িত করিয়া কহিলেন, খুড়ো, চার পয়সার তামাক দাও ত।
অধিকারী সে আজ্ঞা সত্বর সম্পাদন করিল।
হারাণচন্দ্র তখন মনোমত একটা বৃক্ষতল অন্বেষণ করিয়া লইয়া গঞ্জিকা-সাহায্যে বিশৃঙ্খল রাজত্ব পুনরায় শৃঙ্খলিত করিয়া লইলেন।সমস্ত কর্ম সম্পন্ন হইলে রাত্রি অনেক হইতেছে দেখিয়া বৃক্ষতল পরিত্যাগ করিয়া উঠিলেন। অনেকদূর গিয়া একটা খোড়ো বাড়ির সম্মুখের দ্বারে আঘাত করিয়া ডাকিলেন, কাত্যায়নী !
কেহ উত্তর দিল না।
আবার ডাকিলেন, বলি কাতু বাড়ি আছ কি?
তথাপি উত্তর নাই।
বিরক্ত হইয়া হারাণচন্দ্র চিৎকার করিয়া ডাকিলেন, বলি বাড়ি থাক ত দরজাটা একবার খুলে দিয়ে যাও না।
এবার অতি ক্ষীণ রমণীকন্ঠে জবাব আসিল, কে?
আমি—আমি
আমার বড় শরীর অসুখ—উঠতে পারব না।
তা হবে না। উঠে খুলে দাও।
এবার একজন পঞ্চবিংশতি-বর্ষীয়া কালোকোলো মোটাসোটা সর্বাঙ্গে উল্কিপরা মাননসই যুবতী যন্ত্রণাসূচক শব্দ করিতে করিতে আসিয়া খট করিয়া দ্বার মোচন করিল।
উঃ মরি—যে পেটে ব্যথা ! অত ষাঁড়-চেঁচাচ্চ কেন?
চেঁচাই কি সাধে? দোর না খুললেই চেঁচামেচি করতে হয়।
যুবতী বিরক্ত হইল—না বাবু, অত আমার সইবে না। আসতে হয় একটু সকাল সকাল এসো। রাত্তির নেই, দুপুর নেই, যখন-তখন যে অমনি করে চেঁচাবে—তা হবে না, অত গোলমাল আমার ভাল লাগে না।
হারাণচন্দ্র ভিতরে প্রবেশ করিয়া অর্গল বন্ধ করিলেন। তাহার পর কাত্যায়নীর পানে চাহিয়া বলিলেন, আহা ! পেটে ব্যথা হয়েছে, তা ত আমি জানিনে।
তুমি কেমন করে জানবে? জানে পাড়ার পাঁচজন। কাল থেকে এখন পর্যন্ত পেটে একবিন্দু জলও যায়নি। তা এত রাত্তিরে কেন?
একটু কাজ আছে।
কাজ আবার কি?
বলছি। তুমি একটু তামাক সাজ দেখি।

Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়