তিনি বাটীতেই আছেন?

মালতী একটু চিন্তা করিয়া বলিল, না; তিনি নাই।

সুরেন্দ্রবাবু বুঝিলেন তাহার পিতার মৃত্যু হইয়াছে। বলিলেন, বাটীতে আর কে আছে?

এইবার মালতী বহুক্ষণ মৌন হইয়া রহিল, তাহার পর ধীরে ধীরে বলিল, বোধ হয় কেহই নাই।
এতদিন কোথায় ছিলে?

সেইখানেই ছিলাম, কিন্তু আমরা সাগরে যাইতেছিলাম, পথের মাঝে নৌকাডুবি হইয়াছে।
তোমার শ্বশুরবাড়ি কোথায়?

কালিপাড়ায়।

সেখানে তোমার কে আছে?

হয়ত কেউ আছে, কিন্তু আমি তাহাদের চিনি না।

কখন সেখানে যাও নাই?

বিবাহের সময় একবারমাত্র গিয়াছিলাম।

সুরেন্দ্রবাবু কিয়ৎকাল চিন্তা করিয়া বলিলেন, তোমার বাপের বাড়িতেও কেহ নাই, শ্বশুরবাড়িতেও কেহ নাই, অন্ততঃ তুমি জান না—তবে এখন কোথায় যাইবে?

কলিকাতায়।

কলিকাতায়? সেখানে কে আছেন?

কেহ না।

কেহ না? তবে কোথায় থাকিবে?

কাহারও বাটী অনুসন্ধান করিয়া লইব।

তাহার পর?

মালতী মৌন হইয়া রহিল।

সুরেন্দ্রবাবু বলিলেন, তুমি রাঁধিতে জান?

জানি।

কলিকাতায় কোথাও রাঁধিতে পাইলে থাকিবে?

হাঁ।

সুরেন্দ্রবাবু কিছুক্ষণ নীরব থাকিয়া ধীরে ধীরে বলিলেন, মালতী, কলিকাতা ভিন্ন আর কোথাও ঐ কাজ পাইলে করিবে কি?

মালতী মাথা নাড়িয়া বলিল, না।

বোধ হইল যেন সুরেন্দ্রবাবু কথার উত্তরে কিছু বিমর্ষ হইলেন। আরো কিছুক্ষণ ভাবিয়া চিন্তিয়া বলিলেন, কলিকাতায় যাহা আশা কর, অন্যস্থানে তাহার দ্বিগুণ, চতুর্গুণ পাইলেও করিবে না কি?

মালতী পূর্বের মত মাথা নাড়িল—কলিকাতা ভিন্ন আর কোথাও আমি যাইব না।

সুরেন্দ্রবাবু দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিলেন। ম্লান মুখ দেখিয়া মালতীও বুঝিতে পারিল যে, তাহার কথা সুরেন্দ্রবাবুর মনোমত হয় নাই, সম্ভবতঃ ক্লেশ অনুভব করিয়াছেন।

Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়