নবম পরিচ্ছেদ
আরো কতদিন কাটিয়া গেল। ছলনা বাপের বাটী ফিরিয়া আসিল, পাড়ার মেয়েরা আর–একবার নূতন করিয়া কন্যা –জামাতা দেখিয়া গেলেন, কত হাসি কত তামাশা গড়াইয়া গেল, হরমোহন নিজে এখানে আসিয়া সকলকে মধুর সম্বোধনে আপ্যায়িত করিয়া ব্যায়ানঠাকুরানীর নমস্কার গ্রহণ করিয়া ফিরিয়া গেলেন, হারাণচন্দ্র কোমরে ফর্সা চাদর বাঁধিয়া বামুনপাড়ার প্রত্যেক দোকানে একবার করিয়া বসিয়া তাহাদিগকে মোহিত করিলেন—এইরূপ অনেক ঘটনা ঘটিয়া গেল।
আজ মাধবচন্দ্রের পীড়া বড় বৃদ্ধি পাইয়াছে। শয্যার উপর ছটফট করিতেছে এবং পার্শ্বে, শিয়রে, পদতলে পিসিমাতা, কৃষ্ণঠাকুরানী, ছলনা প্রভৃতি বসিয়া আছে। শুভদা এখানে নাই—তিনি রন্ধনশালায় বসিয়া কতক রাঁধিতেছেন, কতক কাঁদিতেছেন, সদানন্দ ডাক্তার ডাকিতে গিয়াছে, আর হারাণচন্দ্র ‘এই আসিতেছি’ বলিয়া ঘণ্টাতিন হইল বাহির হইয়াছেন, এখনও আসিয়া পৌঁছিতে পারেন নাই। সকলে মুখোমুখি হইয়া বসিয়া আছেন; কৃষ্ণঠাকুরানী মাধবের গায়ে হাত বুলাইয়া দিতেছেন এবং ডাক্তারের অপেক্ষায় মনে মনে সময় গুনিতেছেন।
ক্রমে সন্ধ্যার একটু পরে ডাক্তার আসিয়া পৌঁছিলেন; তিনি আজ ছয়–সাত দিবস হইতে নিত্য আসিতেছেন, নিত্য দেখিতেছেন, পীড়া কিছুতেই কমিতেছে না বরং বাড়িতেছে তাহা জানিতেন, বাঁচিবে না তাহাও বুঝিয়াছিলেন। আসিবার ইচ্ছাও ছিল না, কিন্তু সদানন্দর পীড়াপীড়িতে আসিতে বাধ্য হইয়াছিলেন।
ঘরে আসিয়া ডাক্তারে যাহা দেখে তাহা তিনি দেখিলেন, তাহার পর বাহিরে আসিয়া সদানন্দকে ডাকিয়া বলিলেন, সদানন্দবাবু, আজ বেশ সাবধানে থাকিবেন; ছেলেটি বোধ হয় আজ রাত্রে বাঁচিবে না।
সদানন্দও তাহা জানিত।
অনেক রাত্রে হারাণচন্দ্র ফিরিয়া আসিলেন, চোরের ন্যায় কক্ষের বাহিরে দাঁড়াইয়া ভিতরের বৃত্তান্ত যতটা সম্ভব অবগত হইলেন, তাহার পর দ্বার ঈষৎ খুলিয়া মুখ বাড়াইয়া বলিলেন, এখন কেমন আছে?
কেহ কথা কহিল না। শুধু শুভদা বাহির হইয়া আসিল; খাবার থালা সম্মুখে রক্ষা করিয়া নিকটে বসিল।
উপন্যাস : শুভদা (অধ্যায় ২) Chapter : 9 Page: 40
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: শুভদা (অধ্যায় ২)
- Read Time: 1 min
- Hits: 195