নিকি, তুমি কিন্তু দুষ্টামি করছ। ভদ্র হও নিকি। অন্যদের খেতে দাও। দেখ, তোমার জন্যে ফিবো খেতে পারছে না। এই তো লক্ষ্মী মেয়ে। মেয়েদের লক্ষ্মী হতে হয়। তুমি মেয়ে হয়ে ছেলে দুটিকে খেতে দিচ্ছ না, এটা ঠিক হচ্ছে না। আমরা মেয়ে কি করি জান না? পুরুদের খাওয়া হয়ে গেলে তারপর খেতে বসি! ভাল ভাল খাবার পুরুষদের প্লেটে তুলে দিয়ে তারপর যা থাকে তাই সোনামুখ করে খেয়ে ফেলি। এটাই সাধারণ নিয়ম। মাইক, তোমার আর কি হল? দাঁত বের করে কাকে ভয় দেখাচ্ছ? লেজ মুলে দেব?

পারুল বড় একটা গামলায় কুকুরদের খেতে দিয়েছে। গরম গরম ভাত ডাল দিয়ে মাখানো। গোশত ছাড়া এরা কিছু খায় না। সারা দিনে এক বেলা খায়–হলুদ দিয়ে সেদ্ধ করা মাংস। পুরোপুরি সেদ্ধ না–আধাসেদ্ধ। ঘরে মাংস নেই, তাহেরকে দিয়ে আনতে হবে।

ফিবো। তোমার সারা গায়ে কাদা লেগে আছে এটা কেমন কথা। নিকি আর মাইকের গায়ে তো কাদা লাগেনি। তুমি বুঝি কাদায় গড়াগড়ি করেছ? এখন যদি এক বালতি পানি তোমার গায়ে ঢেলে দি তাহলে ভাল হবে? কাল দুপুরে তোমাদের গোসল। করিয়ে দেব। সাবান মেখে ব্রাস ঢেলে দেব। বুঝেছ? আরেকটা কাজ করব–তোমাদের নাম বদলে দেব। ইংরেজি নাম আমার ভাল লাগে না। সুন্দর বাংলা নাম দেব। নামের বই ও আজ নিয়ে আসবে–সেই বই দেখে নাম রাখব। আচ্ছা, এই যে আমি এত কথা বলছি–ফিবো আর মাইক শুনছে–কিন্তু নিকি, তুমি কিছুই শুনছ না। এটা অভদ্রতা না?

নিকি মুখ তুলে তাকাল। চাপা শব্দ করল। পারুল বলল, এই তো লক্ষ্মী মেয়ে। আদব-কায়দা জানে। এখন থেকে তোমাদের আমি আদব-কায়দাও শেখাব। গান গাইতে পারলে গান গেয়ে শুনতাম। গান জানি না। কবিতা জানি না। একটা শুধু জানি–দুই বিঘে জমি–রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। সেই কবিতা তো তোমাদের আগে একবার শুনিয়েছি। এই কবিতাটি ছোটবেলায় মুখস্থ করেছিলাম। আমাদের পাড়ায় একবার রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে। আমার সেখানে দুই বিঘে জমি কবিতা আবৃত্তি করার কথা। রোজ পল্টু ভাইদের বাড়িতে বিহার্সেল হত। চা-সিঙ্গারা খাওয়া হত। খুব মজা হত। আমার এত ভাল লাগত। শেষ পর্যন্ত আমি অবশ্যি রবীন্দ্র জয়ন্তীতে কবিতা আবৃত্তি করিনি। কেন শুনবে? আচ্ছা শোন–খবর্দার, কাউকে বলবে না। মানুষদের তোমরা বলতে পারবে না তা তো জানি, অন্য কুকুরদেরও বলবে না, কারণ খুব লজ্জার ব্যাপার। যেদিন রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে তার আগের দিন রাতে স্টেজ রিহার্সেল হবে। সেদিন আবার খুব ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে। ইলেকট্রিসিটি চলে গেছে। হারিকেন জ্বালিয়ে রিহার্সেল হল। রিহাসেলের পর সবাই চলে যাচ্ছে, পল্টু ভাই আমাকে বললেন–পারুল, ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে তুই একা যাবি কি করে? তুই থাক, আমি পৌঁছে দেব। ড্রাইভার এক্ষুণি আসবে, তোকে নামিয়ে দেবে। আমি থেকে গেলাম–সবাই চলে গেল। পল্টু ভাই তখন একটা ভয়ঙ্কর কাণ্ড করল। মানুষেরা যে কি ভয়ঙ্কর কাণ্ড করতে পারে তোরা জানিস না, কারণ তোরা হলি পশু। মানুষের কত ভয়ঙ্কর তোরা জানবি কি করে? আশ্চর্যের ব্যাপার কি জানিস? ঐ ভয়ঙ্কর কাণ্ডের পর পল্টু ভাই গাড়ি করে আমাকে বাসায় পোঁছে দিলেন। সহজ গলায় বললেন–কবিতা আবৃত্তির সময় তুই মাঝে মাঝে ফাম্বল করিস। কথা জড়িয়ে যায়। পরিষ্কার করে আবৃত্তি করবি। নো ফাম্বলিং।

তোদের সঙ্গে তো তখন পরিচয় হয়নি। তোদের বোধহয় তখন জন্মও হয়নি। তোরা যদি তখন আমার সঙ্গে থাকতি তাহলে অবশ্যই পলটু ভাইকে বুঝিয়ে দিতাম–দুই বিঘে জমি আসলে কতটুকু জমি।

পল্টু ভাই এখনো রবীন্দ্র শতবার্ষিকী, নজরুল জয়ন্তী এসব করে বেড়াচ্ছে। বিরাট ফার্মেসী দিয়েছে। ফার্মেসিীর নাম–উপশম। এইবার আমি তাকে উপশম শিখিয়ে ছাড়ব। সুন্দর করে পল ভাইকে একটা চিঠি লিখে এ বাড়িতে আসার নিমন্ত্রণ করব। উনি চিঠি পেয়ে দেরি করবেন না, সঙ্গে সঙ্গে চলে আসবেন। এই সব লোক কখনো কোন সুযোগ নষ্ট করে না। আমি গেট খুলে উনাকে ঢুকাব। হাসিমুখে বলব, কেমন আছেন পল্টু ভাই?

উনি বলবেন, ভাল। আরে, তুই এত বড় হয়ে গেছিস। বিয়ে-টিয়ে করে একেবারে ঘরণী হয়ে গেছিস। তোকে তো দারুন লাগছেরে।

আমি বলব, সুন্দর হয়েছি, তাই না? ছোটবেলায় তো আর এত সুন্দর ছিলাম না। আমি যখন ছোট ছিলাম সেই সময়ের কথা কি আপনার মনে আছে?

উনি একটু চিন্তিত ভঙ্গিতে বলবেন, কিসের কথা বলছিস?

ঐ যে রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে, ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছিল–আপনি আমাকে থেকে যেতে বললেন, তখন ছোট ছিলাম, কিছু বুঝতাম না–এখন আপনাকে সব জেনেশুনে ডেকেছি। আর আপনাকে ফিরে যেতে দেব না।

উনি অস্বস্তির সঙ্গে কথা ঘুরাবার জন্যে বলবেন–এত বড় বাড়ি, এটা কার?

তখন আমি বলব, আমার বাড়ি। আবার কার? ঐ মে কুকুর লি দেখছেন ওরাও আমার। গায়ে শাদা ফুটকি সেটার তার নাম–নিকি। ও হল মেয়ে। ও সবচে ভয়ংকর। মেয়েরা মাঝে মাঝে দারুণ ভয়ংকর হতে পারে, জানেন তো? নাকি জানেন না?

পল্টু ভাই ততক্ষণে পুরো ব্যাপারটা আঁচ করে ফেলবেন। বুদ্ধিমান মানুষ তো। আঁচ করতে দেরি হবে না। আঁচ করে ফেললেও লাভ হবে না। ততক্ষণে আমি গেট বন্ধ করে দিয়েছি। হি হি হি।

তোদের তখন আমি ডেকে পাঠাব। তোরা এক সঙ্গে ঝাঁপ দিয়ে পড়বি। পারবি না? কিংবা একজন ঝাঁপ দিয়ে পড়বি। বাকি দুজন তাকে ঘিরে চক্কর লাগাবি। নিকি তুই ঝাঁপ দিবি। তুই তো মেয়ে, তোর দায়িত্ব বেশি।

নিকি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মাইক এবং কিবো লেজ নাড়ছে।

পারুল চাপা গলায় বলল, কাজটা শেষ হবার পর–তোদের আমি খুব সুন্দর করে দুই বিঘে জমি আবৃত্তি করে শোনাবো। নাকি এখনই শুনতে চাস?

নিকি, মাইক, কিবো তিনজনই একসঙ্গে লেজ নাড়ল। মনে হচ্ছে তারা শুনতে চায়। পারুল চাপা গলায় শুরু করল–

শুধু বিঘে দুই ছিল মোর ভুঁই, আর সব গেছে ঋণে
বাবু কহিলেন, বুঝেছ উপেন? এ জমি লইব কিনে।
কহিলাম আমি, তুমি ভূস্বামী, ভুমির অন্ত নাই
চেয়ে দেখো মোর আছে বড়োজোর মরিবার মত ঠাঁই।

 

গেটে শব্দ হচ্ছে। তিনটি কর এক সঙ্গে গেটের দিকে তাকিয়ে স্থির হয়ে গেল। পারুল বলল–ও এসেছে। যা, তোরা খেলা কর গিয়ে। বাকি কবিতাটা অন্যদিন শুনাব। যা বললাম।

পারুল চাবি হাতে গেটের দিকে রওনা হল। গেটের শব্দ শুনে বোঝা যাচ্ছে না কে এসেছে। অন্য কেউও হতে পারে। পুরোপুরি নিশ্চিত না হয়ে গেট খোলা যাবে না। তাহেরকে গেটে ধাক্কা দেবার একটা কৌশল শিখিয়ে দিতে হবে। পরপর তিনবার ধাক্কা দেবে থামবে তারপর দুবার দেবে।

তাহেরের গলা শোনা গেল, সে কাঁপা কাঁপা গলায় ডাকছে–পারুল। এই পারুল! গেট খোল।

পারুল গেট খুলল। তাহের বিব্রত গলায় বলল, দেরি করে ফেললাম।

না, দেরি কোথায়! এসো। আমার বই এনেই?

হুঁ।

চা আর চিনি?

ভুলে গেছি।

থাক। ভুলে গেলে কি আর করা–এসো, ঘরে চল। দাঁড়িয়ে আছ কেন?

তাহের হাত তুলে দেখাল। নিকি, ফিবো আর মাইক–এক লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। অন্ধকারে তাদের চোখ জ্বল জ্বল করছে। পরুল বলল–ওরা তাকিয়ে আছে তো কি হয়েছে? এসো। পারুল তাহেরের হাত ধরল।

তোমার গা গরম। জ্বর এসেছে?

বোধ হয়।

পারুল বলল, জ্বরের আমি একটা খুব ভাল চিকিৎসা জানি। এক্ষুণি সেই চিকিৎসা করা হবে– দেখলে কোথায় পালিয়েছে জ্বর।

পারুল সহজ স্বাভাবিক গলায় কথা বলছে। যেন কিছুই হয়নি, সব আগের মত আছে। তাহের পারুলের পেছনে পেছনে ঘরে ঢুকল। কুকুর তিনটা এখনো তাকিয়ে আছে।

বাথরুমে তোমার জন্যে গরম পানি দিচ্ছি। আরাম করে গা ডলে গোসল কর।

জ্বর-গায়ে গোসল করব?

জ্বর-গায়ে গোসলই হচ্ছে জ্বরের অষুধ। একে বলে জল-চিকিত্সা। তুমি কি তোমাদের ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলেছ?

হুঁ।

উনি কিছু বলেছেন

না।

কিছুই বলেননি?

কি কি যেন বলেছেন–ভুলে গেছি।

ভুলে যাওয়াই ভাল। পৃথিবীতে সবচে সুখী মানুষ কারা জান? যারা দ্রুত সব ভুলে যেতে পারে তারা। যারা কিছুই ভুলতে পারে না তারা দারুণ অসুখী। আজ রাতের খাওয়া কিন্তু খুব সাধারণ–শুধু ডাল আর ভাত। ঘরে যে কোন বাজার নেই তোমাকে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। কাল বাজার করে দেবে।

আচ্ছা।

নিকি, ফিরো, মাইক এদের মাংস আনতে হবে।

আচ্ছা।

আজ সারাদিন কি করলে? মনে আছে না ভুলে গেছ?

পার্কের বেঞ্চিতে ঘুমিয়েছি।

এই তো একটা কাজের কাজ করছে। বেঞ্চিতে না ঘুমিয়ে গাছের নিচে ঘুমালে আরো মজা হত। ছেলে হয়ে জন্মানোর অনেক সুবিধা। যেখানে-সেখানে ঘুমিয়ে পড়তে পার। তুমি কি গোসলের পর এক কাপ চা খাবে? ঘরে সামান্য চা-চিনি আছে।

গোসল করব না।

অবশ্যই করবে। গোসলের পর পর দেখবে শরীরের জং পরা ভাব সেরে যাবে।

 

পারুলের কথাই ঠিক। গোসলের পর তাহেরের শরীর ঝরঝরে হয়ে গেল। মাথায় চাপা যন্ত্রণা ছিল, সেটিও সেরে গেল। আরাম করে ভাত খেল। ডালভাতি তবে তার সদে শুকনো মরিচ পড়িয়ে পেয়াজ মেখে একটা ভতার মত বানিয়েছে। আগুনের মত ঝাল–কিন্তু খেতে অসাধারণ। পারুল খাওয়ার মাঝখানে হঠাৎ বলল, তুমি কি কাল আমাকে একটা কাজ করে দেবে?

-কি কাজ?

আমি একটা চিঠি লিখে রেখেছি–একজনকে পৌঁছে দিতে হবে। পারবে না?

হুঁ, পারব।

কি লিখেছি সেই চিঠিতে জানতে চাও না?

তাহের কিছু বলল না। পারুল চোখ বড় বড় করে বলল, কার কাছে চিঠি লিখলাম, কি ব্যাপার কিছুই জানতে চাও না?

তুমি বললেই জানব। না বললে জানব কিভাবে?।

পল্টু ভাইকে একটা চিঠি লিখেছি। ভাল নাম মনে নেই। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি এই সব নিয়ে তিনি সব সময় খুব ব্যস্ত থাকেন। বাচ্চাদের নিয়ে তার একটা সংগঠন আছে–কিশোর মেলা।

ও অচ্ছি।

বিরাট একটা ফার্মেসী আছে। টুকটাক ব্যবসা আছে। ফার্মেসীটা কোথায় আমি জানি–তোমাকে বলে দেব–খুঁজে বের করে তাকে চিঠিটা দেবে।

আচ্ছা।

তোমার মাথা ধরা কমেছে, না?

হুঁ।

চল, খাওয়া-দাওয়ার পর আমরা এই বাড়ির ছাদে ঘুরে বেড়াব।

কেন?

কেন আবার কি? মানুষ বেড়ায় কেন? আজ জোছনা আছে–ছাদ থেকে জোছনা দেখতে খুব ভাল লাগবে।

ঘুম পাচ্ছে তো।

ঘুম পেলে স্থানে ঘুমিয়ে পড়বে। সঙ্গে করে চাদর নিয়ে যাব, বালিশ নিয়ে যাব। চল এক কাজ করি–দুজনেই ছাদে ঘুমুব।

 

তাহের ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখ পড়ল বাড়ির পেছনের বাগানে–বেশ বড়সড় একটা গর্ত। গর্ত নতুন করা হয়েছে। মাড়ি স্তূপ হয়ে আছে। মাটির পাশে কোদাল পড়ে আছে।

পারুল বলল, এত মন দিয়ে কি দেখছ?

তাহেরের বুক ধ্বক ধ্বক করছিল। সে আতংকিত গলায় বলল, ঐ খানে গর্ত কে করল?

আমি করেছি।

আমি করেছি মানে কি?

সারাদিন কিছু করার ছিল না–ভাবলাম, দেখি তো আমি গর্ত করতে পারি কি না। কোদাল দিয়ে কোপ দিয়ে দেখি মাটি মাখনের মতো নরম।

এই গর্ত তুমি করেছ?

এম্নি করেছি। গর্ত খোঁড়া তো অপরাধ না। বাংলাদেশের সংবিধানে কি কোথাও লেখা আছে গর্ত খোঁড়া যাবে না?

অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে তাহের প্রায় কাদো কাঁদো গলায় বলল, পারুল, তোমার কিছু একটা হয়েছে। আমি তোমার পায়ে ধরছি–চল আমরা এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাই।

পারুল হালকা গলায় বলল, চলে তো যাবই। চির জীবনের জন্যে তো এখানে থাকতে আসিনি। যে অল্প কদিন আছি–ভালমত থাকি। দেখ কি সুন্দর চাঁদ।

তাহের চাঁদ দেখছে না, সদ্য খোঁড়া গর্তের দিকে ভয় ও বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে।

তুমি একা একা এত বড় গর্ত খুঁড়েছ?

বললাম না মাটি খুব নরম। ফ্লাওয়ার বেড় করার জন্যে আগেই বোধহয় কেউ মাটি খুঁড়ে রেখেছিল।

তাহের মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে আছে। কুকুর তিনটাকে আসতে দেখা যাচ্ছে। এর গর্তের চারপাশে একটা চক্কর দিল। থমকে দাঁড়িয়ে গর্তের দিকে তাকালো। তিনজন এক সঙ্গে উপরের দিকে তাকালো–কিছু খুঁজল, আবার হাঁটতে শুরু করল। পারুল বলল, কুকুর যে জোছনা পছন্দ করে না সেটা কি তুমি জান?

তাহের বলল, না।

ওরা জোছনা একেবারেই পছন্দ করে না। আজ পূর্ণিমা তো, দেখবে ওরা কি রকম ছটফট করবে। মাঝরাতে কি করবে জান?

না।

মাঝরাতে তিনজনই চাঁদের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে শুরু করবে। কুকুরের কান্না তুমি কখনো মন দিয়ে শুনেছ?

না।

ভয়ংকর। না শোনাই ভাল। হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসে।

তাহের পকেটে হাত দিল। তার গা ঝিমঝিম করছে। একটা সিগারেট ধরাতে পারলে ঝিমঝিমানি হয়ত দূর হবে। পকেটে সিগারেট নেই। নিচে ফেলে এসেছে। পারুল বলল, আমি ঠিক করেছিলাম কুকুর তিনটার নাম বদলে বাঙালী ধরনের নাম রাখব। এখন ভাবছি সেটা ঠিক হবে না। ওরা তো আর দিশি কুকুর না। দিশি নাম ওদের পছন্দ হবে না। ঠিক না?

হুঁ।

ওদের বিদিশী নামই ভাল–নিকি, মাইক, ফিবো…।

তাহের এখনো নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। কুকুর তিনটি গর্তের চারপাশে আবার ঘুরছে! ওরা কি কিছু আঁচ করতে পারছে?।

পারুল বলল, তোমার কি ঘুম পাচ্ছে নাকি?

হুঁ।

তাহলে চল শুয়ে পড়ি। বিছানায় শুয়ে শুয়ে আনিকক্ষণ গল্প করি। তোমার তো আবার বিশ্রী অভ্যাস–বিছানায় শোয়ামাত্র ঘুম। আজ কিন্তু অনেক রাত পর্যন্ত আমরা গল্প করব। দুজনে মিলে আমাদের বাবুর নাম ঠিক করব।

কুকুর তিনটা গর্তের চারপাশে ঘুরছে কেন?

কে জানে কেন? নতুন কিছু দেখেছে–কাজেই ঘুরে ঘুরে দেখছে। কুকুরের মনের কথা তো জানার উপায় নেই। চল ঘুমুতে যাই।

তাহের নিঃশব্দে নেমে এল।

বিছানায় শোয়ামাত্র ঘুমে তাহেরের চোখ জড়িয়ে আসে–আজ আসছে না। খাটের পাশে সাইড টেবিলে পারুল টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়েছে। ল্যাম্পের আলো চোখে লাগছে। পারুলের হাতে নাম-এর বই। পারুল শান্ত গলায় বলল, আমি নামগুলি পড়ে যাব–প্রথম পড়ব মেয়েদের নাম, কারণ আমার ধারণা আমাদের প্রথম বাচ্চাটি হবে মেয়ে। তুমি চুপচাপ শুনে যাবে। যখনই কোন নাম পছন্দ হবে তখনি বলবে, স্টপ। নামের সঙ্গে সঙ্গে আমি অর্থও বলব। ঠিক আছে?

তাহের কোন উত্তর দিল না। তারা আজ আবার মেসবাউল করিম সাহেবের মূল শোবার ঘরে শুয়েছে। এই ঘরটার ভেতর দম বন্ধ করা কিছু আছে। তাহেরের দম বন্ধ হয়ে আসছে। শ্বাসকষ্টের মত হচ্ছে।

পারুল বলল, প্রথম শুরু করছি আ দিয়ে–

আজরা–কুমারী
আতিয়া—দানশীল
আসিয়া—স্তম্ভ
আদিবা—শিষ্টাচারী
আতিকা–সুন্দরী
আরজু–ইচ্ছা
আনান—মেঘ
আনিকা–রূপসী
আসমা–অতুলনীয়।

কি ব্যাপার, এর মধ্যে একটাও তোমার পছন্দ হল না? আমার তো এর মধ্যে একটা পছন্দ হয়ে গেছে–আনান। আনান মানে কি বল তো? একটু আগে বলেছিলাম। কি, বলতে পারছ না?

না।

আনান মানে হচ্ছে–মেঘ। সুন্দর না নামটা?

তাহের বলল, আমার কেন জানি দম বন্ধ লাগছে। মনে হচ্ছে নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।

নিঃশ্বাস নিতে পারবে না কেন? নিঃশ্বাস নিতে পারছ। জব ভালভাবেই পালছ। তুমি নানা কিছু ভেবে অস্থির হয়ে পড়ে। অস্থির হবার কিছু নেই। মানুষ বর্তমানে বাস করে–অতীতেও না, ভবিষ্যতেও না। এই কথাটা তো তোমাকে আগেও বলেছি। বলিনি? আমাদের বর্তমানটা কি খারাপ যাচ্ছে? না, খারাপ যাচ্ছে না, ভালই যাচ্ছে। আরাম করে কত বড় একটা বিছানায় শুয়ে আছি। আমাদের পাহারা দিচ্ছে তিনটি ককল। এরা কাউকে আমাদের কাছে আসতে দেবে না। এরচে ভাল আর কি হতে পারে বল?

আমার সত্যি সত্যি দম বন্ধ হয়ে আসছে।

কি কালে তোমার বন্ধ দম খুলবে?

জানি না।

যখন জান না তখন চুপ করে শুয়ে থাক–আমি নাম পড়ে যাচ্ছি–তুমি নাম সিলেক্ট কর। প্রাথমিকভাবে আমরা কিন্তু একটা নাম সিলেক্ট করে ফেলেছি–আনান। আনান মানে কি বল তো?

জানি না।

ওমা–একটু আগে না কললাম–মেঘ।

তাহের হঠাৎ ভয়ংকর রকম চমকে উঠল। বাইরে থেকে বিশ্রী বিকট রক্ত জমাট করা শব্দ আসছে। তাহের বিছানায় উঠে বসল। সে থর থর করে কাঁপছে। তার কপালে ঘাম জমেছে। সে আতংকিত গলায় বলল, কি হচ্ছে পারুল?

কুকুর কাঁদছে। জোছনা দেখে কাঁদছে।

আলো তে কখনো কাঁদত না।

এরকম জোছনা আগে তো কখনো হয়নি–এ জন্যে কাঁদেনি। কিংবা হয়ত কেঁদেছে, তুমি ঘুমুচ্ছিলে বলে শুনতে পাওনি।

কামরুলের জন্যে কাঁদছে না?

তার জন্যেও কাঁদতে পারে। এতদিন একটা মানুষ তাদের সঙ্গে ছিল, এখন নেই।

আমার প্রচণ্ড ভয় লাগছে।

ভয়ের কিছু নেই। এক কাজ কর–আমাকে জড়িয়ে ধরে থাক। আমি তোমার পিঠে হাত বুলিয়ে দেব।

তাহের লরা গলায় বলল, পানি খাব।

সাইড টেবিলে পানির গ্লাস, ছগ ছিল। পারুল পানির গ্লাস এগিয়ে দিল। কুকুর রক্ত হিম করা শব্দে ডেকেই যাচ্ছে। এখন তাদের কান্না–মানুষের কান্নার মত শুনাচ্ছে। যেন শত বছর বয়েসী তিন খুনখুনে বুড়ো হাপড়ের মত শ্বাস টানতে টানতে কেঁদে যাচ্ছে। তাহের বলল, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আমি মরে যাচ্ছি। জানালা খুলে দাও।

জানালা খোলাই আছে।

খুব খারাপ লাগছে।

পারুল বলল, তুমি চুপচাপ শুয়ে থাক। ফ্যান ছেড়ে দিচ্ছি। গায়ের উপর চাদর টেনে শুয়ে থাক। শীত শীত ভাব থাকলে ভাল ঘুম হয়। আজ হঠাৎ করে একটু ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা লাগছে না?

হুঁ।

দূরে কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে। দূরে বৃষ্টি হলে–যেখানে বৃষ্টি হয় সেখানটা ঠাণ্ডা হয় না, কিন্তু আশেপাশের জায়গাগুলি ঠাণ্ডা হয়ে যায়।

আনান নামটা কি পছন্দ হয়েছে?

তাহের তার জবাব না দিয়ে বলল, কুকুরগুলি কতক্ষণ কাঁদবে?

যতক্ষণ চাঁদ দেখা যায় ততক্ষণই কাঁদবে।

তাহের শুয়েছে। পারুল বলল, মাথায় হাত বুলিয়ে দেব?

হুঁ।

হুঁ আবার কি? দেব কি দেব না সেটা বল।

তাহের পাশ ফিরল। কুকুর তিনটা এখনো ডাকছে। কুকুরের ডাক শুনতে শুনতেই তাহের ঘুমিয়ে পড়ল। গাঢ় ঘুম। প্রচণ্ড দুঃশ্চিন্তায় কিছু কিছু মানুষের গাঢ় নিদ্রা হয়।

পারুল উঠে দাঁড়াল। চিঠিটা লিখে ফেলা দরকার। কাগজ এবং কলম খুঁজে বের করতে হবে। এ বাড়িতে কোথাও না কোথাও কাগজ-কলম নিশ্চয়ই আছে। সবগুলি ঘর পারুল খুলে দেখতে পারেনি। তার কাছে চাবির গোছ আছে। চাবিগুলির নম্বর—টম্বর কিছু দেয়া নেই। ট্রায়াল ও এরার মেথডে ঘর খুলতে হয়। প্রতিবারই অনেক সময় লাগে। এখন থেকে সে একটা কাজ করবে–যে ঘর খুলবে, সে ঘর আর বন্ধ করবে না। ঘর খোলাই থাকবে।

কাগজ-কলম পাওয়া গেছে। শুধু কাগজ-কলম না, থাম, পোস্টাল ট্রাম্প, গাম, কাঁচি! বড়লোকের সবকিছু খুব গোছানো থাকে। আর গরীবদের থাকে সব এলোমেলো। খাম পাওয়া গেলে কাগজ পাওয়া যায় না। কাগজ পাওয়া গেলে কলম পাওয়া যায় না।

চিঠি কোথায় বসে লিখবে পারুল বুঝতে পারছে না। তাহেরের কাছে বসেই লেখা উচিত। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে তাকে না দেখে চমকে উঠতে পারে। চিঠি লিখতে হবে গুছিয়ে খুব সুন্দর করে, যেন পল্টু ভাই চিঠি পড়ে বিভ্রান্ত হয়ে যান। এত গুছিয়ে সে কি লিখতে পারবে? তারাই গুছিয়ে চিঠি লিখে যাদের চিঠি লিখে অভ্যাস আছে। তার অভ্যাস নেই। চিঠি লেখার মত মানুষ তার কখনো ছিল না। একজন ছিল, সব সময় ছিল। এখনো আছে। সে এত কাছে যে তাকে চিঠি লেখা হয়নি। আজ তাকেও একটা চিঠি লিখবে। পারুল তাহেরের মাথার কাছে বসল। হাঁটুর উপর কাগজ রেখে সে লিখছে। কাগজের নিচে শক্ত মলাটের একটা বই। বই ভর্তি মেয়েদের ছবি। চিঠি লেখা শেষ। সে ছবিগুলি দেখবে। ফ্যাশানের বই। মেসবাউল করিম সাহেবের ঘরে ফ্যাশানের বই কেন কে জানে!

পারুল লিখতে শুরু করেছে। তার হাতের লেখা সুন্দর, আজ তত সুন্দর হচ্ছে না।

 

শ্রদ্ধেয় পল্টু ভাই,

আপনি কি আমাকে চিনতে পারছো? আমার নাম পারুল। এক সময় আপনি আমাকে খুব স্নেহ করতেন। দুই বিঘে জমি কবিতাটি আপনি আমাকে খুব সুন্দর করে শিখিয়ে দিয়েছিলেন। এখন কি মনে পড়ছে?

কতজনের সঙ্গে আপনার পরিচয়! হয়ত মনে করতে পারছেন না। মনে করিয়ে দেবার জন্যে অনেকটা ঘটনা বলি। কবিতাটি শেষ পর্যন্তু আমি আবৃত্তি করতে পারিনি। যেদিন অনুষ্ঠান হবার কথা তার আগের রাতে আপনার বাসায় একটা ঘটনা ঘটে গেল। এখন কি মনে পড়েছে?

সে রাতে আপনার উপর আমি খুব রাগ করেছিলাম। কিন্তু মনে মনে আপনাকে আমি এত শ্রদ্ধা করতাম, এত ভালবাসতাম যে পুরোপুরি রাগ করতে পারিনি। এক সময় মনে হল, যা হবার হয়েছে। ভালই হয়েছে। দু একটা ইন্টারেস্টিং ঘটনা সব মেয়ের জীবনেই থাকা উচিত। এখন আমার খবর বলি। আমার বিয়ে হয়েছে। আমি স্বামীর সঙ্গে বিরাট এক বড়লোকের বাগানবাড়িতে একা থাকি। একা, কারণ আমার স্বামী বেচারা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাইয়ে চাকরির সন্ধানে ঘুর ঘুর করে। আমি থাকি একা। আমার সময় আর কাটে না। পুরোনো দিনের কথা ভাবি। তখন আপনার কথাও মনে। হয়। আপনি কি একদিন এসে আমাকে দেখে যাবেন? আমার বানানো এক কাপ চা খেয়ে যাবেন? আমাদের বাড়িটা শহর থেকে দুরে। বাড়ির নাম নীলা হাউস। আপনার একটু কষ্ট হবে। দোহাই আপনার। যদি আসেন, গাড়ি নিয়ে আসবেন না। আমি চাই না লোকজন জানুক। বিশেষ করে আমার স্বামী জানুক। সব কিছু সবার জানতে নেই। চিঠির উল্টো পিঠে বাড়ির ঠিকানা দিয়ে দিলাম।

বিনীতা–
পারুল

চিঠি শেষ করে করে পারুলের মনে হল–চিঠি পড়ে পল্টু ভাই নাও আসতে পাবেন। একবার যদি সামান্যতম সন্দেহ জাগে তাহলে তিনি আসবেন না। বুদ্ধিমান মানুষেরা কখনো চান্স নেয় না। পল্টু ভাইকে পুরোপুরি সন্দেহমুক্ত করতে হবে। কাজেই পাল পুনশ্চ দিয়ে আবার লিখল—

পল্টু ভাই, আপনার কাছে আমার সামান্য আবদার আছে। আমার স্বামীর জন্যে একটা চাকরি জোগাড় করে দিন। আমরা খুব কষ্টে আছি।

এবারে পারুল নিশ্চিত হল। এখন আর সমস্যা হবে না। পল্টু ভাই ধরে নেবেন পারুল তাকে ডাকছে। ভালবাসায় অভিভূত হয়ে না, ডাকছে বিপদে পড়ে। এই সুযোগ তিনি নষ্ট করবেন না।

পারুল দ্বিতীয় চিঠি লিখতে বসল। ভেবেছিল দ্বিতীয় চিঠিটা তাহেরকে লিখবে। লিখতে গিয়েও লিখল না। দ্বিতীয় চিঠিটা তাহেরের অফিসের ম্যানেজার সাহেবকে লেখা যাক। শেষ চিঠিটা লিখবে তাহেরকে। সেই চিঠি তাহেরের মাথার কাছে বসে লিখবে না। অন্য ঘরে লিখবে। পারুল লিখছে–

ম্যানেজার সাহেব,
শ্রদ্ধাস্পদেষু।

আপনি আমাকে চিনবেন না। আমি আপনাদের নীলা হাউসের সাময়িক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব যার হাতে–তাহের, তার স্ত্রী। আপনাকে আমার কিছু কথা বলা দরকার। আমার সেই সুযোগ নেই বলে চিঠির আশ্রয় নিচ্ছি। এতে কোন বেয়াদবি হলে ক্ষমা করবেন।

আমার স্বামী ভীতু প্রকৃতির মানুষ। এত বড় একটা বাড়িতে ভয়ে অস্থির হয়ে সে বাস করে। তিনটি কুকুর এবং দারোয়ান কামরুল অবশ্যি আচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে সে এদেরও ভয় পায়। প্রায় সারারাত সে জেগে বলে থাকে। ভয়ে অস্থির হয়ে সে আমাকে নিয়ে এসেছিল। আমি আপনাদের বিনা অনুমতিতে কয়েকদিন থাকলাম। তারপর যখন শুনলাম আপনি খুব রাগ করেছেন, তখন সে আবার আমাকে আমার বড় চাচার বাড়িতে রেখে এল। কারণ সে আপনাকে ভয় পায়।

আমি তো আপনাদের কোন সমস্যা করছিলাম না। ভীতু স্বামীকে সঙ্গ দেবার জন্যে তার পাশে ছিলাম। আমাদের যে ছোট্ট ঘর দেয়া হয়েছিল আমি সেখানেই থাকতাম। আপনাদের ইন্দ্রপুরী আমি নোংরা করিনি বরং সাধ্যমত তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করেছি। আমাদের দুজনকে আলাদা করে দিয়ে আপনার কি কোন লাভ হয়েছে? কোন লাভ হয়নি। মাঝখান থেকে আমরা দুজন কষ্ট পাচ্ছি।

ও আপনার খুব প্রশংসা করে। এর ধারণা আপনি একজন সৎ, নিষ্ঠাবান কর্মযোগী পুরুষ। এমন একজন মানুষ অনেক কষ্ট বুঝবেন না তা তো হয় না। আপনি কি আপনার সিদ্ধান্ত নিয়ে আরেকটু ভাববেন? আমাদের দুজনকে কিছুদিনের জন্যে একসঙ্গে থাকতে দেবেন?

বিনীতা–
পারুল

চিঠি দুটি সে আমে বন্ধ করল। তারপর সাবধানে খাট থেকে নামল। শেষ চিঠিটা সে এখন লিখবে। তাহেরের কাছে চিঠি। স্বামীর কাছে লেখা স্ত্রীর প্রথম পত্র। কি লিখবে সে এখনো জানে না। যা মনে আসে তাই লিখবে। শুরুটা কি করে করবে? প্রিয়তমেষু দিয়ে। না, তা ঠিক হবে না। যার অনেক প্রিয়জন থাকে, তারই থাকতে পারে একজন–প্রিয়তম। পারুলের একজনই প্রিয় মানুষ। এটা কি খুবই আশ্চর্যজনক ব্যাপার না সে পুরো পৃথিবীতে একজন তার প্রিয় মানুষ?

না না–আরেকজন প্রিয় মানুষ আছে। সে বড় হচ্ছে। এদিন সে মায়ের পেটে কুণ্ডলী পাকিয়ে ঘুমুছে। বাইরের ভয়াবহ ভয়ংকর পৃথিবী সম্পর্কে সে কিছুই জানে না।

পৃথিবীর সমস্ত বাবা-মা চায় তাদের সন্তানের ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে। তারা তা পারছে না। শিশুর জন্মের আগে বাবা-মারা তাদের জন্যে কত কি জোগার করে রাখেন। ছোট্ট বিছানা, ছোট্ট বালিশ, একটা ছোট্ট সার্টিনের লেপ। তুলতুলে মাখনের মত জুতা। তারা কোন কিছুই জোগার করতে পারেনি। মনে হয় পারবে না। তারা শুধু সুন্দর একটা নাম জোগার করে অপেক্ষা করবে। আনান–মেঘ।

জল ভরা দিন কালো মেঘ।

<

Humayun Ahmed ।। হুমায়ূন আহমেদ