তিন নম্বর বগিতে আশহাবের মা সাজেদা বেগম বসে আছেন। তাঁর সামনে পানের বাটা খোলা। পান, সুপারি, চুন, খয়ের সবই আছে। আসল বস্তু নেই। জর্দা নেই। জর্দা ছাড়া পান কেউ খায়? তাঁর পরিষ্কার মনে আছে পানের বাটায় জর্দা তিনি নিজের হাতে নিয়েছেন। সেই জর্দা গেল কোথায়? অবশ্যই আশহাব সরিয়েছে। জর্দা খেলে এই হয় সেই হয়। বেশি ডাক্তারি শিখে গেছে। এদেরকে সকাল বিকাল দুইবেলা থাপড়াতে হয়।

দরজায় টুক টুক শব্দ উঠছে। সাজেদা বললেন, কে?

দরজা সামান্য ফাঁক হল। চিত্রা মুখ বের করে বলল, আসব?

সাজেদা বললেন, এসো। তোমার নাম চিত্রা? আশহাব বলেছে তুমি আমার সঙ্গে রাতে থাকবে। বোসো। আমার অসুবিধা নাই।

চিত্রা বসল। সাজেদা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছেন। এত সুন্দর সুন্দর মেয়ে যেখানে সেখানে দেখা যায়, শুধু তিনি তার ছেলের জন্যে মেয়ে খুঁজে পান না। সুন্দরী মেয়ে হঠাৎ পেয়ে গেলে জানা যায় মেয়ের প্রেম আছে। আজকালকার মেয়ে প্রেম ছাড়া থাকতেই পারে না। তাঁর পাশে বসা মেয়েটাকে পছন্দ হচ্ছে। দেখা যাবে এই মেয়ে হয় বিবাহিতা কিংবা প্রেমকুমারী। এক সঙ্গে দু-তিনটা প্রেম করে যাচ্ছে। সাজেদা ভাইবা সেসানের জন্যে তৈরি হলেন। রূপবতী কোনো তরুণী দেখলেই তিনি ভাইবা নেবার জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তিনি জর্দা ছাড়া পান মুখে দিয়েছেন। মুখ মিষ্টি হয়ে আছে। মিষ্টি মুখে কথা বলতেই ইচ্ছা করে না।

তোমার কি বিয়ে হয়েছে?

জি না।

বিয়ের কথাবার্তা হচ্ছে?

না।

যাচ্ছ কোথায়?

দিনাজপুরে আমার বড় মামার কাছে।

হঠাৎ বড় মামার কাছে যাচ্ছ কেন?

উনি অসুস্থ। উনাকে দেখতে যাচ্ছি।

উনার কি অসুখ?

হার্টের অসুখ।

হার্টের অসুখ, দিনাজপুরে বসে আছেন কেন?

আমি উনাকে ঢাকায় আনার জন্যে যাচ্ছি।

বাবা কি করেন?

বাবা বেঁচে নেই।

যখন বেঁচে ছিলেন তখন কি করতেন?

ব্যাংকে চাকরি করতেন।

মা বেঁচে আছেন?

জি না।

সাজেদা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। মেয়েটার এখনো বিয়ে হয়নি কেন তা পরিস্কার হয়েছে। এই মেয়ে কঠিন এতিম। বাবা মা দুজনই নেই। কার দায় পড়েছে এতিম মেয়ে ঘরে ঢুকানোর? শ্বশুর শাশুড়ির আদর ছাড়া বিয়ে কি? স্ত্রীর ভালোবাসা হিসাবের মধ্যে আসে না। শ্বশুর শাশুড়ির ভালোবাসা আসে। আশহাবের সঙ্গে এই মেয়ের বিয়ের কিছুমাত্র সম্ভাবনা নেই জেনে সাজেদার ভালো লাগছে। মেয়েটার সঙ্গে এখন নিশ্চিন্ত মনে কথা বলা যাবে। যদি জানা যায় এই মেয়ে এক সঙ্গে তিনটা প্রেম করে বেড়াচ্ছে তাহলেও কিছু যায় আসে না। প্রেম করে বেড়ালে বরং ভাল।

সাজেদা বললেন, ঘুমের সময় তোমার কি নাক ডাকে?

চিত্রা থতমত খেয়ে বলল, না।

সাজেদা বললেন, আমার ডাকে। আমার ঘরে ঘুমাবে ভালো কথা। এটা মাথার মধ্যে রাখবে। মাঝ রাতে আমার ঘুম ভাঙিয়ে বলবে না, আমি এই কামরায় ঘুমাব না। একবার ঘুম ভেঙে গেলে আমার আর ঘুম আসে না।

জি আচ্ছা।

বাথরুমের পাশের কামরায় একটা ডেড বডি যাচ্ছে শুনেছ?

জি শুনেছি।

গন্ধ পাচ্ছ না? মরা মানুষের গন্ধ?

পাচ্ছি না।

তোমার কি নাক বন্ধ? লাশের গন্ধে আমার শরীর উল্টে আসছে। রেল কোম্পানির কারবারটা দেখ ডেড বডি নিয়ে রওনা হয়েছে। আর আত্মীয় স্বজনের আক্কেল দেখ। তোরা নিজেরা নিজেরা যা। একটা মাইক্রোবাস ভাড়া করে চলে যা—-মাইক্রোবাসে একটা লাল ফ্ল্যাগ ঝুলিয়ে দিবি সবাই সাইড দিবে। হোস করে চলে যাবি। ট্রেনের অতগুলি যাত্রীকে বিপদে ফেললি কি মনে করে?

চিত্রা চুপ করে রইল।

ভদ্রমহিলা বিরক্ত গলায় বললেন, এখন একটা কাজ কর। আমার ছেলেকে খুঁজে বের কর। তাকে বল জর্দার ব্যবস্থা করতে। কোত্থেকে ব্যবস্থা করবে সে জানে।

চিত্র উঠে দাঁড়াল। সাজেদা মনে মনে আফসোসের নিঃশ্বাস ফেললেন কি সুন্দর লম্বা একটা মেয়ে। শুধু যদি এতিম না হত। শাড়িটাও পরেছে সুন্দর করে। শাড়ির উপর চাদরের কাজটাও ভালো। তবে হাতি ঘোড়ার ছবি আঁকা। এমন চাদর গায়ে দিয়ে নামাজ হবে না। প্রশ্ন করলে দেখা যাবে মেয়ে নামাজই পড়ে না। তার পরেও জানা থাকা ভালো। সাজেদা বললেন, তুমি নামাজ পড়?

মাঝে মধ্যে পড়ি!

এটা কেমন কথা। মাঝে মধ্যে পড়ি মানে কি? তুমি কি মাঝে মধ্যে ভাত খাও? ভাততো তিনবেলাই খাও। দোয়া মাছুরাটা কি বল দেখি।

চিত্রা বলল, আমি জর্দার ব্যবস্থা করে তারপর বলি?

চিত্রার মোবাইল বাজছে। লিলির টেলিফোন। লিলি আজ ঘুমাবে না। সারারাত জেগে থাকবে। কিছুক্ষণ পর পর টেলিফোন করে বিরক্ত করবে। চিত্রা মোবাইল হাতে কামরা থেকে বের হয়ে এল। চিত্রা হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে লিলি বলল, ছয়বার রিং হবার পর ধরলি। ব্যাপার কি? শোন তোর জন্যে ভালো খবর আছে।

কি খবর?

মামা জানিয়েছেন সেলুন কারে একজন মন্ত্রী যাচ্ছেন ময়মনসিংহ পর্যন্ত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। উনি নেমে গেলেই তুই সেলুন কারে দাখিল হয়ে যাবি। কোনো সমস্যা নেই। রাজার হালে যাবি। থুক্কু রাণীর হালে যাবি। কুইন অব দিনাজপুর।

হুঁ।

হুঁ হুঁ করছিস কেন? এ রকম একটা নিউজ দিলাম, তুই লাফিয়ে উঠবি তা না শুকনা। আর শোন তোর কামরায় যে বুড়ো উঠেছে উনার খোঁজ পাওয়া গেছে। উনিতো খুবই নামকরা মানুষ। প্রফেসর রশীদ। আমেরিকার কর্নেল ইউনিভার্সিটির ম্যাথমেটিক্সের ফুল প্রফেসর। ম্যাথমেটিক্সে নোবেল প্রাইজের ব্যবস্থা থাকলে উনি অবশ্যই নোবেল পুরস্কার পেতেন।

তাঁর সম্পর্কে খবর কোথায় পেয়েছিস?

মামা জানিয়েছেন। তোর কামরাটা খালিই ছিল। উনি যখন টিকেট চাইলেন তখন উনাকে দিতেই হয়েছে। এখন বুঝেছিস।

হুঁ।

চিত্রা তুই বরং ঐ বুড়োর সঙ্গেই থাক। বুড়ো তোর গায়ে হাত রাখলে ভাল। সবাইকে বলতে পারবি বিখ্যাত একজন মানুষ আমাকে হাতা-পিতা করেছেন।

চুপ কর।

ফান করলে তুই রেগে যাস কেন?

তোর ফান আমার ভাল লাগে না।

চিত্রা শোন সেলুন কারে দাখেল হবার পর সেখানকার সুবিধা-অসুবিধা আমাকে টেলিফোন করে জানাবি। আমি নিজে সেলুন কার দেখিনি। তোর কাছে যদি শুনি জোশ তাহলে প্রগ্রাম করে তোকে নিয়ে একবার সেলুন কারে ঘুরব।

আচ্ছা।

সারারাত আমার মোবাইল খোলা থাকবে। সমস্যা মনে করলেই আমাকে জানাবি। তোর জন্যে আরেকটা সারপ্রাইজ আছে।

আবার কি সারপ্রাইজ?

এখন বললে তো আর সারপ্রাইজ থাকবে না। যখন ঘটবে তখন জানবি। ইন্টারেস্টিং সারপ্রাইজ। খোদা হাফেজ।

গুড নাইট, স্লিপ টাইট।

 

রশীদ সাহেব সিগারেট খেতে বের হয়েছেন তবে এবার করিডোরে না। দরজার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। দরজার একটা জানালা সামান্য খোলা। খোলা জানালায় শীতের বাতাস ঢুকছে। প্রবল হাওয়ায় সিগারেট টানা মুশকিল, তবে তার তেমন অসুবিধা হচ্ছে না। রেলের এটেনডেন্ট জানালার পাশে বসার জন্যে সবুজ রঙের একটা প্লাস্টিকের চেয়ার এনে দিয়েছে। তিনি এটেনডেন্টের ব্যবহারে মুগ্ধ হয়েছেন। তাঁর ইচ্ছা করছে এখনি তাকে কিছু বখশিস দেন। পাঁচশ টাকা দিয়ে দিলে কেমন হয়? পাঁচশ টাকা এমন কিছু টাকা না। সাত ডলারেরও কম। বিশ ডলার বখশিস তাঁকে প্রায়ই দিতে হয়। টাকাটা এখনি দিয়ে দেয়া দরকার। নামার সময় তড়িঘড়ি করে নামবেন। বখশিস দিতে ভুলে যাবেন।

চেয়ারে বসতে বসতে রশীদ সাহেব বললেন, বাবা, তোমার নাম কি?

এটেনডেন্ট বলল, স্যার, আমার নাম বসির।

তোমার ব্যবহারে আমি মুগ্ধ হয়েছি। তোমার জন্যে পাঁচশ টাকা বখশিস স্যাংসান করেছি। আমার মনে না থাকলেও তুমি চেয়ে নেবে। এতে দোষের কিছু নাই। এই ট্রেনে যাত্রী সর্বমোট কত জন আছে বলতে পারবে? আন্দাজ করে বললেও হবে।

বসির বলল, আন্দাজ করা লাগবে না। সঠিক সংখ্যা বলতে পারব স্যার। সবতো টিকেটের যাত্রী। টিকেটের হিসাব গার্ড সাহেবের কাছে আছে।

সঠিক সংখ্যাটা বল।

একটু সময় লাগবে। ধরেন এক ঘণ্টা।

এক ঘণ্টা সময় তোমাকে দিলাম।

স্যার, আপনার কিছু কি লাগবে? চা বা কফি।

চা-কফি কিছু লাগবে না। আমি রাত নটার সময় দুই থেকে তিন পেগ হুইস্কি খাব। হুইস্কি সঙ্গে নিয়ে এসেছি। তুমি একটা গ্লাস দেবে। বরফ কি দিতে পারবে?

পারব স্যার। বুফে কারে ফ্রিজ আছে।

ভেরি গুড।

স্যার, আপনার সিগারেট কি লাগবে? আপনার হাতের প্যাকেটটা তো মনে হয় শেষের দিকে।

সিগারেট লাগবে না। সঙ্গে অনেক আছে। আমি রোস্টেড সিগারেটে অভ্যস্থ হয়ে গেছি। আমেরিকার বাইরে যখন যাই স্যুটকেস ভর্তি সিগারেট নিয়ে যাই। বসির, আমার রুমমেট মেয়েটি কোথায় জান?

বুফে কারে দেখেছিলাম। তাকে কিছু বলব?

কিছু বলতে হবে না। বেচারী মনে হয় এক কামরায় আমার সঙ্গে যেতে সংকোচ বোধ করছে। এই কারণেই বাইরে বাইরে ঘুরছে।

উনার থাকার ব্যবস্থা হয়েছে স্যার। তিন নম্বর কামরায়। আপনার সঙ্গে একজন ডাক্তার থাকবেন।

ভেরি গুড। বৃদ্ধ বয়সে হাতের কাছে ডাক্তার পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।

রশীদ সাহেব হাতের সিগারেট ফেলে দিয়ে আরেকটা ধরালেন। বসির এখনো কাছে দাঁড়িয়ে আছে। সে এই মুহূর্তে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বুড়ো মানুষটার কাছ থেকে পাঁচশ টাকা সে নেবে না। কিছুতেই না। এমন একটা সিদ্ধান্ত সে কেন নিয়েছে নিজেই বুঝতে পারছে না। কোনো কারণ ছাড়াই বুড়ো মানুষটাকে তার ভাল লাগছে।

বসির।

জি স্যার।

আমি একুশ বছর পর দেশে এসেছি।

ভালো করেছেন।

মোটেই ভালো করিনি—আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি অচেনা এক দেশে ঘুরছি। এরকম কেন মনে হচ্ছে তাও বুঝছি না।

একা এসেছেন স্যার? ম্যাডামকে নিয়ে আসেন নাই?

বিয়ে করি নি। ম্যাডাম পাব কোথায়? পোস্ট ডক করার সময় স্পেনের এক মেয়ের সঙ্গে মোটামুটি পরিচয় হয়েছিল। মেয়েটিকে প্রপোজ করেছিলাম। সে রাজিও হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হয়নি। মেয়ের নাম ইয়েনডা। সে স্ট্যাটিসটিকসের ছাত্রী ছিল।

বসির বলল, বরফের ব্যবস্থা কি স্যার এখন করব?

রশীদ সাহেব বললেন, এখন না। রাত ঠিক নটায়। সময়ের ব্যাপারে আমি খুব পার্টিকুলার। যদিও জানি সময় বলে কিছু নেই। সময় আমাদের কাছে একটা ধারণা মাত্র। তার বেশি কিছু না। পাস্ট, প্রেজেন্ট, ফিউচার বলে কিছু নেই।

বসির বলল, স্যার, আমি খোঁজ নিয়ে আসি ট্রেনে মোট যাত্রী কতজন।

যাও।

জানালাটা বন্ধ করে দিন স্যার। ঠাণ্ডা লাগবে।

ঠাণ্ডা লাগবে না। আমি ঠাণ্ডার দেশের মানুষ।

ইয়েনডার কথা মনে পড়ায় রশীদ উদ্দিন হঠাৎ সামান্য বিষণ্ণ বোধ করছেন। ইয়েনডার সঙ্গে দীর্ঘ ট্রেন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তার আছে। এমট্রেকের অবজারভেশন ডেকে মুখোমুখি বসে দুজন ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়েছেন। পাশ দিয়ে চলে গেছে Rocky mountain. একটা বিখ্যাত গান আছে না রকি মাউন্টেইন নিয়ে–Rocky mountain high. কে গেয়েছে গান টা?

 

চিত্রা বুফে কারে ডাক্তার আশহাবের মুখখামুখি বসে আছে। সহজ ভাবেই গল্প করে যাচ্ছে। অপরিচিত জনের সঙ্গে কথা বলার অস্বস্থি কাজ করছে না। তাদের টেবিল থেকে একটু দূরে কয়েকজন যুবক প্রাণখুলে আড্ডা দিচ্ছে। তাদের মধ্যে একজন মনে হয় ওস্তাদ গল্পকার। কিছুক্ষণ পর পর সে একটা গল্প করছে। আশপাশের সব বন্ধুরা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। গল্পকার ছেলেটির গায়ে নীল রঙের স্যুয়েটার। টকটকে লাল রঙের একটা মাফলারে সে কান ঢেকেছে। তাকে দেখে থ্রি ডাইমেনশনাল বাংলাদেশের পতাকার মতো লাগছে। চিত্রার ইচ্ছা করছে বাংলাদেশী ঐ পতাকার কাছে গিয়ে বলে——আপনাদের সঙ্গে কিছুক্ষণ বসতে পারি? গল্প শুনব। অনেকদিন আমি হাসি না। আপনার গল্প শুনে হাসব।

ইচ্ছা করলেও কাজটা তার পক্ষে সম্ভব না। লিলি থাকলে নির্বিকার ভঙ্গিতে ঐ টেবিলে চলে যেত। গম্ভীর ভঙ্গিতে বলত—আমাকে জায়গা দিন তো। জোকস শুনব। আমি নিজেও শুনাব।

 

আশহাব বলল, আপনার কি মনে হচ্ছে আমার মাকে রুমমেট হিসেবে নিতে পারবেন?

চিত্রা বলল, কেন পারব না?

মা কিন্তু অনেক বিরক্ত করবে। রাতে ঘুমুতে দেবে না। উদ্ভট সব ভূতের গল্প শুরু করবেন। সব ভূত উনি নিজেই দেখেছেন।

চিত্রা বলল, মায়ের উপর আপনার কি কোনো রাগ আছে?

আশহাব বলল, আছে। মা হচ্ছে এমন একজন মানুষ যার কাছে অন্যের মতামতের কোনো মূল্য নেই। আমার ডাক্তার হবার কোনো ইচ্ছা ছিল না। অন্যের রোগের উপর আমি বেঁচে থাকব ভাবতেই খারাপ লাগে। মার জন্যে আমাকে ডাক্তারি পড়তে হয়েছে। আমার বাবার একটা গল্প শুনলেই বুঝবেন মা কেমন মহিলা। গল্পটা বলব? আপনার শোনার ধৈর্য আছে?

আছে। আপনি গল্প ভালো বলেন।

আশহাব বলল, আমার বাবা ছিলেন খুবই নির্বিরোধী মানুষ। কারো কোনো ঝামেলায় নেই। অফিসে যাবেন, অফিস থেকে বাসায় ফিরে চুপচাপ বসে থাকবেন। তিনি একবার ঠিক করলেন সবাইকে নিয়ে কক্সবাজার যাবেন সমুদ্র দেখবেন। তিনি ট্রেনের টিকিট কাটলেন। কক্সবাজারে হোটেল বুকিং দিলেন। তাঁর উৎসাহের সীমা নেই। যেদিন যাব তার আগের দিন মা।

মা বললেন, কক্সবাজার সি বিচে চোরাবালি আছে। অনেকে চোরাবালিতে ড়ুবে মারা গেছে।

বাবা বললেন, সমুদ্রে নামব না।

মা বললেন, বাদ। বাদ। সমুদ্র বাদ। চল সিলেটে যাই। জাফলং সুন্দর জায়গা। সিমিরা জাফলং গিয়েছিল। ছবি তুলে এনেছে। দেখার মতো জায়গা। সেখান থেকে ইন্ডিয়া দেখা যায়।

বাবা বললেন, ইন্ডিয়া দেখার দরকার কি?

মা বললেন, সমুদ্র দেখারইবা দরকার কি? চোখ বন্ধ করে ঘরে বসে থাক।

আমাদের সমুদ্র দেখার পরিকল্পনা বাতিল হয়ে গেল। বাবা মারা গেলেন সেই বছরই। চিত্রা, আমি যদি একটা সিগারেট ধরাই আপনি কিছু মনে করবেন?

আমি কিছু মনে করব না।

আশহাব সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলল, মা দুই টিফিন কেরিয়ার ভর্তি খাবার নিয়ে এসেছেন। খাবারের প্রতিটি আইটেম আমাকে খেতে হবে। ভালো লাগুক বা না লাগুক, খেতে হবে। খাওয়া নিয়ে আরো ব্যাপার আছে।

আর কি ব্যাপার?

খাবারের প্রথম নলাটা মা আমার মুখে তুলে দেবেন। এতে নাকি ছেলেমেয়ের হায়াত বাড়ে। দৃশ্যটা চিন্তা করে দেখুন—আমি চোখ বন্ধ করে হা করে আছি মা মুখে ভাতের প্রথম নলা তুলে দিচ্ছেন।

চিত্রার হাসি আসছে সে হাসি চাপতে চাপতে বলল, চোখ বন্ধ করে হা করে থাকবেন কেন? চোখ ভোলা রাখবেন।

চোখ খোলা রেখে সেই সময় মায়ের মুখ দেখব? নো।

আশহাব সিগারেটে লম্বা টান দিল। ঠিক তখন এটেনডেন্ট বসির বলল, স্যার, আপনাকে আপনার মা ডাকেন। আশহাব চমকে উঠে সিগারেট জানালা দিয়ে ফেলে দিল। সে উঠে দাঁড়িয়ে সঙ্গে সঙ্গে বসে পড়ল। বসিরের দিকে তাকিয়ে বলল, আপনি মাকে বলুন আমি এখন আসতে পারব না। একটু দেরি হবে।

বসির চলে যেতেই আশহাব বিব্রত গলায় বলল, মাকে কেমন ভয় পাই দেখেছেন? মার কথা শুনেই লাফ দিয়ে উঠেছি।

চিত্রা বলল, দেখলাম।

খুবই খারাপ লাগছে।

মাকে ভয় পাওয়ার মধ্যে খারাপ লাগার কিছু নেই। আপনি যান তার সঙ্গে দেখা করে আসুন।

আশহাব উঠে দাঁড়াল। সে দ্রুত যাচ্ছে। চিত্রার মনে হল—এই মানুষটার বর্তমান চেষ্টা এটেনডেন্ট মার কাছে পৌঁছানোর আগেই পৌঁছানো। যেন

মহিলাকে শুনতে না হয়, আমি এখন আসতে পারব না।

 

সাজেদা বেগম ছেলেকে দেখেই বললেন, আমাকে একা ফেলে রেখে কোথায় ঘুরঘুর করছিস?

আশহাব জবাব দিল না।

সাজেদা বললেন, ঐ মেয়েটা কোথায়?

কোন মেয়েটা?

রাতে আমার সঙ্গে থাকবে যে মেয়েটা। চিত্রা নাম।

আশহাব বলল, জানি না কোথায়।

সাজেদা অবাক হয়ে বললেন, মিথ্যা কথা বলছিস কেন? এটেনডেন্ট আমাকে বলল, তুই মেয়েটার সঙ্গে গল্প করছিলি। তুই বলে পাঠিয়েছিস আসতে পারবি না। ঘটনা কি? ঐ মেয়ের সঙ্গে তোর কি? তুই কি ঐ মেয়ের প্রেমে পড়ে গেছিস?

দশ মিনিট কথা বললে প্রেমে পড়ে যায়?

তাহলে মিথ্যা কথা বললি কেন? কেন বললি, মেয়ে কোথায় তুই জানিস না। মুখ ভোতা করে থাকবি না। বল ঐ মেয়ের সঙ্গে তোর কি? তোর গা থেকে ভুরভুর করে সিগারেটের গন্ধ আসছে। তুই কি সিগারেট খেয়েছিস? কাছে আয়, মুখ শুকে দেখি।

আশহাব বলল, মুখ শুকতে হবে না মা। আমি সিগারেট খেয়েছি। আজই যে প্রথম খাচ্ছি তা-না, প্রায়ই খাই।

কি বললি, প্রায়ই খাস?

হ্যাঁ খাই।

সাজেদা বললেন, তোর ভাব-ভঙ্গি তো মোটেই ভালো মনে হচ্ছে না। এখন তো আমার মনে হচ্ছে তুই সুযোগ পেলে মদও খাস। আমার গা ছুঁয়ে বল তুই মদ খাস কি খাস না।

মা, আমি কয়েকবার খেয়েছি।

হতভম্ব সাজেদা নিজেকে সামলে নিয়ে চাপা গলায় বললেন, তোর বাবা একবার বন্ধুর বাসা থেকে মদ খেয়ে এসেছিল। তাঁকে কি করেছিলাম মনে আছে?

আশহাব বলল, মনে আছে। আমি যতদিন বাঁচব ততদিন মনে থাকবে। যে অন্যায় সে রাতে তুমি করেছ তার কোনো তুলনা নেই।

সাজেদা হতভম্ব গলায় বললেন, তুই আমার অন্যায়টা শুধু দেখলি। তোর বাপের অন্যায়টা দেখলি না? বন্ধুর বাসা থেকে মদ খেয়ে এসে আমাকে বলেছে জিরা-পানি খেয়েছে। তার মুখে না-কি জিরার গন্ধ। আমাকে জিরা চেনায়। আমি জিরার গন্ধ চিনি না? আমি মশলা ছাড়া রাধি?

আশহাব কামরা থেকে বের হল। মার একটানা কথা শুনতে অসহ্য লাগছে। মা কথা বলতেই থাকবেন, বলতেই থাকবেন। এক সময় কাঁদতে শুরু করবেন। আশহাব করিডোরে এসেই সিগারেট ধরাল। সিগারেটে টান দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে মনে হল মার সঙ্গে এতটা বাড়াবাড়ি না করলেও চলত। সমস্যার সমাধান অবশ্যি দ্রুত করা যাবে। মার সামনে বসে বললেই হবে, মা! মুখে ভাত তুলে দাও। এই কাজটা সে কি এক্ষুনি করবে? না-কি কিছু সময় নেবে? খুক খুক কাশির শব্দে আশহাব তাকালো।

বুড়ো ভদ্রলোক কাশছেন।

দরজার পাশে প্লাস্টিকের চেয়ারে রশীদ সাহেব বসে আছেন। হাতে কাগজ কলম। হিসাব নিকাশ হচ্ছে। এই বুড়োর সঙ্গে রাত কাটাতে হবে। আগেই পরিচয় করে নেয়া ভালো হবে। যদি তেমন অসহনীয় হয় তাহলে বুফে কারে বসে থাকাটাও খারাপ না। আশহাব এগিয়ে গেল। বুড়োর সঙ্গে রাত কাটাবার একটা সুবিধা আছে। বুড়ো সিগারেট খায়। এত দূর থেকেও তার গা থেকে নিকোটিনের কড়া গন্ধ আসছে।

রশীদ সাহেব খাতায় কিছু হিসাব নিকাশ করছেন। এই মুহূর্তে তার হাতে সিগারেটের বদলে কলম। সিগারেট বিপদজনকভাবে ঠোঁটে ঝুলে আছে। যে কোনো মুহূর্তে ঠোঁট থেকে খসে পড়তে পারে। বৃদ্ধের নজর হাতের কাগজে। বসির নামের এটেনডেন্ট তাঁকে ট্রেনযাত্রীর পুরো সংখ্যা দিয়েছে।

ফুল টিকেট যাত্রী ৬২২ জন।

হাফ টিকেট যাত্রী ১৮ জন।

ইনজিনের সঙ্গে ড্রাইভারসহ ৪ জন।

গার্ডরুমে ২ জন।

জেনারেটর রুমে ৩ জন।

রশীদ সাহেব গভীর মনযোগে তাকিয়ে আছেন। যাত্রী সংখ্যার গুণ ভাগ চলছে। আশহাব এসে দাঁড়ানো মাত্র রশীদ সাহেব বললেন, আপনিই তো ডাক্তার! আমার সঙ্গে যার থাকার কথা?

আশহাব বলল, জি।

কটা বাজে দেখুন তো।

নয়টা দশ।

সর্বনাশ। নেশার সময় হয়ে গেছে। আসুনতো কামরায় যাই। আপনার সঙ্গে আলাপ পরিচয় হোক। ঐ মেয়েটাকেও দরকার। আমার ঘর থেকে জিনিসপত্র নিয়ে যাবে। ঐ মেয়ে তো থাকবে আপনার মায়ের সঙ্গে?

জি।

তাহলে এক কাজ করুন আপনিই তার স্যুটকেস আপনার মার ঘরে রেখে আসুন। আমি চাই না মেয়েটা আমার কামরায় আবার আসুক। আমি মদ্যপান করব এই দৃশ্য দেখে মেয়েটার ভালো নাও লাগতে পারে।

আপনি মদ্যপান করবেন?

হ্যাঁ। আপনার কি কোনো অসুবিধা আছে?

আশহাব কি বলবে ভেবে পেল না। মদ্যপান অনেকেই করে তবে সরাসরি ঘঘাষণা দিয়ে কেউ কি করে? এই বুড়ো এমনভাবে বলছে যেন বিষয়টা মাইকে সবাইকে জানানো খুবই জরুরী। হ্যালো ট্রেনযাত্রী! মাইক্রোফোন টেস্টিং। ওয়ান টু থ্রি। আমি এখন মদ্যপান করব।

আশহাব বুড়োর পাশে বসেছে। টু সিটার বগিতে মুখোমুখি বসার সুবিধা নেই। দুটো সিটের একটা উপরে, একটা নিচে। আশহাবের মনে হল মুখখামুখি বসতে পারলে ভালো হত। বুড়োর কাণ্ডকারখানা ভালোমতো দেখা যেতো। বুড়ো মদ খাওয়ার বিষয়টা যথেষ্ট আয়োজন করে শুরু করেছে। ঝকঝকে গ্লাস। গ্লাসে পেঁচানো ন্যাপকিন, বরফের বাক্স, বরফ তোলার চামচ। এর মধ্যে বসির বরফ দিয়ে গেছে। বুড়ো গ্লাস হাতে নিয়ে আশহাবের দিকে তাকিয়ে বলল, চিয়ার্স।

আশহাব যন্ত্রের মতো বলল, চিয়ার্স।

বুড়ো বলল, মদ্যপানের সময় শরীরের পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের মধ্যে চারটি ইন্দ্রিয় অংশ গ্রহণ করে। চোখ দেখে, জিহ্বা স্বাদ নেয় এবং স্পর্শ নেয়, নাক ঘ্রাণ নেয় শুধু একটা ইন্দ্রিয় অংশ নিতে পারে না। সেই ইন্দ্রিয়ের নাম কান, সাধু বাংলায় কর্ণ। কান যেন অংশ নিতে পারে শুধুমাত্র এই জন্যে অর্থাৎ কানকে শুনাবার জন্যে আমরা বলি Chears.

ও আচ্ছা।

বুড়ো বলল, মদ্যপানের সময় আমি প্রচুর কথা বলি। সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমে খানিকটা জড়তা আসে। মোটর একসানের উপর কন্ট্রোল কমে যায় বলেই—ক্রমাগত কথা বলা। আপনার পরিচয় আমি পেয়েছি, ইয়াং ডক্টর। আমার পরিচয় দেয়া হয়নি—আমি একজন দৈত্য! নাইস টু মিট ইউ।

বুড়ো হাত বাড়িয়েছে। আশহাবকে হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করতে হল। সে খানিকটা শংকিত বোধ করছে। বুড়ো দুটো চুমুক দিয়েই নিজেকে দৈত্য বলছে। গ্লাস শেষ করার পর কি বলবে কে জানে।

আশহাব বলল, আপনি দৈত্য?

বুড়ো বলল, হ্যাঁ দৈত্য। A giant. হা হা হা। Old giant. বৃদ্ধ দৈত্য!

আশহাব চুপ করে আছে। যে নিজেকে দৈত্য পরিচয় দিচ্ছে তার সঙ্গে আলাপ আলোচনা অর্থহীন।

আমি হচ্ছি ৮ নম্বর দৈত্য। Giant number eight. আমার কথা শুনে চমকাচ্ছ, না? এখন থেকে তুমি করে কথা শুরু করলাম। পেটে সামান্য পড়লেই নিজেকে অতি বৃদ্ধ একজন বলে মনে হয়। সবাইকে মনে হয় হাঁটুর বয়েসী, তোমাকে তুমি করে বলায় আহত বোধ করছ না তো?

আশহাব জবাব দিল না। সে আহত বোধ করলেও বৃদ্ধের কিছু যাবে আসবে বলে মনে হয় না। বৃদ্ধ হাতের গ্লাস খুব সাবধানে সিটের পাশের টেবিলে রেখে তার চামড়ার হ্যান্ড ব্যাগ খুলে একটা কমলা রঙের মোটা হার্ড কভার বই বের করে আশহাবের দিকে বাড়িয়ে দিতে দিতে বলল বইটার পাতা উল্টালেই বুঝবে কেন নিজেকে দৈত্য বলছি।

বইটার প্রথম পৃষ্ঠা দেখেই আশহাব চমকে উঠল। আমেরিকার ম্যাকমিলন কোম্পানির প্রকাশিত বই। নাম—Ten Giant of Math World, দশ জন Giant-এর ছবিও প্রথম পাতায় দেয়া। দশজনের একজন এই বুড়ো। আশহাব চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে। বুড়ো বলল, এখন আমার বিষয়ে তোমার Perspective বদলে গেছে, না? আমাকে নিশ্চয়ই অন্যরকম ভাবে দেখছ?

জি।

মনে হচ্ছে না এই জ্ঞানী বুড়ো পাবলিক প্লেসে মদ্যপান করলেও করতে পারে। এইটুকু ছাড় বুড়োটাকে দেয়া যেতে পারে।

জি, মনে হচ্ছে।

এই বুড়োর প্রতি কিছুক্ষণ আগেও বাজে ধারণা পোষণ করছিলে এই ভেবে খারাপ লাগছে না?

লাগছে।

তুমি কি আমার সঙ্গে জয়েন করবে? ট্রেনের ঝাঁকুনির সঙ্গে প্রথম শ্রেণীর ব্লান্ডেড হুইস্কি ভালো লাগার কথা। তোমাদের ওমর খৈয়ম কি বলেছেন–

এই খানে এই তরুর তলে
তোমায় আমায় কৌতূহলে
যে কটিদিন কাটিয়ে যাব প্রিয়ে,
সঙ্গে রবে সূরার পাত্র
অল্প কিছু আহার মাত্র
আরেক খানি ছন্দ মধুর
কাব্য হাতে নিয়ে।

আশহাব বলল, তোমাদের ওমর খৈয়ম বলছেন কেন? ওমর খৈয়মতো আপনারও।

বৃদ্ধ বললেন, আমার না। আমি অংকের মানুষ। কবিতার সঙ্গে অংকের বিরোধ আছে। বৃদ্ধ আরেকটা গ্লাস বের করলেন। গ্লাসে হুইস্কি ঢাললেন, বরফ দিলেন। বুঝা যাচ্ছে ব্যবস্থাটা আশহাবের জন্যে। আশহাবের বলতে ইচ্ছা করছে—স্যার, আমি খাব না। আমার সঙ্গে আমার মা আছেন। মুখ থেকে গন্ধ পেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। আশহাব বলতে পারল না। তার মধ্যে প্রবল ঘোর তৈরি হয়েছে পৃথিবীর দশজন সেরা অংকবিদের একজন তার সামনে বসা, কি আশ্চর্য। সব বিদেশি নামের ভিড়ে দুটো দেশি নাম রামানুজন, রশীদ। বাংলাদেশের অনেকেই রামানুজনের নাম জানে রশীদ উদ্দিনের নাম কেউ কি জানে?

বৃদ্ধ গ্লাস বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, চিয়ার্স।

আশহাব গ্লাস হাতে নিয়ে বলল, চিয়ার্স। সে ঠিক করেছে গ্লাসে চুমুক দেবে না। দ্রতা রক্ষার জন্যে গ্লাস হাতে নিয়ে বসে থাকবে। মাঝে মাঝে গ্লাসে ঠোঁট লাগাবে। চুমুক দেয়ার ভান করবে।

<

Humayun Ahmed ।। হুমায়ূন আহমেদ