কমল তার বাবার পাশে বসে আছে। কাছাকাছি বসেছে। সালেহ ইমরান ইচ্ছা। করলেই ছেলের গায়ে হাত রাখতে পারেন। তবে এই কাজ তিনি কখনো করবেন না। Autistic শিশুরা গায়ে হাত রাখা খুব অপছন্দ করে। তারা নিজেরা অন্যদের গায়ে হাত রাখে না। অন্যদেরও তাদের গায়ে হাত দিতে দেয় না। শরীরে হাত দেয়াকে তারা মনে করে তাদের নিজস্ব ভুবনে আক্রমণ।

কমলের দৃষ্টি স্থির এবং কিছুটা বিষণ্ণ। সে তাকিয়ে আছে টিভি স্ক্রিনের দিকে। আজ মুভি নাইট। সব ঠিক করা আছে। এখনই ছবি শুরু হবে। রিমোট কন্ট্রোল সালেহ ইমরানের হাতে। ছবির নাম The Ninth Gate. রোমান পলনস্কির ছবি। সালেহ ইমরান ছবির বিষয়বস্তু নিয়ে কিছুটা চিন্তিত। ভূত প্রেতের ছবি হলে কমলের সমস্যা হবে। সে লজিক দিয়ে যখন কিছু ব্যাখ্যা করতে পারে না তখনই অস্থির বোধ করে। সালেহ ইমরান ছবি শুরু করার আগে সবসময় কিছুক্ষণ ছেলের সঙ্গে কথা বলেন। কথা বলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

হ্যালো কমল!

হ্যালো।

আমি কি অল্প কিছু সময়ের জন্যে তোমার পিঠে হাত রাখতে পারি?

No.

সন্তানের পিঠে হাত রেখে কথা বলা একজন পিতার জন্যে খুবই আনন্দের ব্যাপার।

আনন্দের ব্যাপার কেন?

পৃথিবীর সব বাবাই সন্তানের প্রতি তার স্নেহ দেখাতে চান। সন্তানকে স্পর্শ করা স্নেহ প্রদর্শনের অংশ।

তুমি আমার পিঠে হাত রেখে স্নেহ দেখাবে। কাকে দেখাবে? এখানে। আমরা দুজন ছাড়া কেউ নেই। কে দেখবে?

আমরা দেখব।

আমরা দুজন তো স্নেহের ব্যাপারটা জানি। আমাদের আবার জানানোর দরকার কী?

তুমি যখন কাউকে ভালোবাস তখন শুধু একবার I love you বলো না। বারবার বলো। একবার বললেই তো হয়। বারবার বলো কেন?

কমল কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, LOVE শব্দটা চব্বিশভাবে বলা। যায়।

সালেহ ইমরান বললেন, চব্বিশভাবে মানে? বুঝতে পারছি না।

কাগজে লিখলে বুঝতে পারবে।

কাগজে লিখে আমাকে দেখাও।

সালেহ ইমরান কাগজ এনে দিলেন। কমল অতি দ্রুত লিখতে লাগল। LOVE LVOE LEOV OLVE OVLE OVEL…

সালেহ ইমরান বললেন, আর লিখতে হবে না, বুঝতে পারছি।

কমল বলল, SORRY শব্দটা ষাটভাবে লেখা যায়। তবে আমি একজনকে উনষাটভাবে বলেছি।

ষাটভাবে বলো নি কেন?

আমার ইচ্ছা।

সেই একজনের নাম কি মতিন?

হ্যাঁ। সে মনে হয় আমার SORRY বুঝতে পারে নি।

বুঝতে পেরেছে। আমাকে বলে গেছে।

সে আর আসবে না?

না।

কমল চুপ করে গেল। সে এতক্ষণ বাবার দিকে তাকিয়ে কথা বলছিল, এখন তাকালো টিভি স্ক্রিনের দিকে। সালেহ ইমরান স্বস্তি বোধ করলেন। ছেলের মাথা থেকে মতিনের অংশ দূর হয়েছে। এখন ছবির দিকে মন দেয়া যায়। পুত্রের সঙ্গে ছবি দেখার এই অংশটি তার জন্যে অত্যন্ত ক্লান্তিকর। তারপরেও প্রতি সপ্তাহে এই কাজটা তাঁকে করতে হয়।

সালেহ ইমরান বললেন, ছবি কি শুরু করব?

কমল বলল, মা দেখবে না?

না। সে একটা কাজে গিয়েছে।

মা কাজে যায় নি। মা ঘরে আছে। তুমি মিথ্যা কথা বলেছ।

আমি বলতে চেয়েছি সে কোনো একটা জরুরি কাজে ব্যস্ত।

মা কোনো জরুরি কাজে ব্যস্ত না। মা ম্যাগাজিন পড়ছে। ম্যাগাজিনের নাম–News Week..

News Week পড়াটাই হয়তো তার জন্যে এই মুহূর্তে ছবি দেখার চেয়ে জরুরী।

কমল বাবার দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে বলল, মা ছবি দেখতে পছন্দ করে না, এই জন্যে ছবি দেখে না।

সালেহ ইমরান বললেন, হতে পারে।

কমল বলল, তুমিও ছবি দেখতে পছন্দ কর না।

সালেহ ইমরান বললেন, পুরোপুরি ঠিক না হলেও কথাটা আংশিক সত্য।

আংশিক সত্য কথাটার মানে কী?

আংশিক সত্য মানে কিছুটা সত্য।

সেটা কীভাবে হবে? একটা সংখ্যার কিছুটা সত্য কিছুটা মিথ্যা হবে না। পাঁচ একটা সংখ্যা। পাঁচের কিছুটা সত্য কিছুটা মিথ্যা হবে? পাঁচের চার পর্যন্ত সত্য এক মিথ্যা তা হবে না।

মানুষের কথা এবং অংকের সংখ্যা এক না।

কমল কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে আবার পুরনো প্রসঙ্গে ফিরে গেল। শীতল গলায় বলল, আমি তার সঙ্গে কথা বলতে চাই।

কার সঙ্গে কথা বলতে চাও?

মতিন।

কমল শোন, তুমি চাইলেই সবকিছু হবে না। এখন তুমি যদি আকাশের চাঁদ হাতে নিয়ে দেখতে চাও তুমি কি পারবে? তোমাকে দেখতে হবে খালি চোখে। কিংবা দূরবিন দিয়ে।

আমি তার সঙ্গে কথা বলতে চাই।

মতিন চলে গেছে। সে কোথায় গেছে আমি জানি না।

আমি তার সঙ্গে কথা বলতে চাই।

তুমি চাইলেই তো সবকিছু হবে না। তাকেও চাইতে হবে।

আমি তার সঙ্গে কথা বলতে চাই।

সালেহ ইমরান শান্ত গলায় বললেন, কমল, তুমি বুদ্ধিমান ছেলে। তোমার মাথায় লজিক আছে। লজিক দিয়ে বুঝতে চেষ্টা কর যে, চাইলেই সবকিছু হয় না।

কমল চাপা গলায় বলতেই থাকল, আমি তার সঙ্গে কথা বলতে চাই। আমি তার সঙ্গে কথা বলতে চাই। আমি তার সঙ্গে কথা বলতে চাই।

কমল, ডিয়ার সান প্লিজ। প্লিজ স্টপ। আই বেগ ইউ।

কমল চুপ করে গেল। সালেহ ইমরান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। আর দেরি না করে ছবিটা শুরু করা দরকার। তিনি ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন, বাবা, ছবি শুরু করি?

কমল বলল, বাবা, আমি একটা ভুল করেছি।

সালেহ ইমরান বিস্মিত হয়ে বললেন, কী ভুল?

বড় ভুল।

বলো শুনি কী ভুল?

আমি বলেছিলাম একটা সংখ্যার কিছুটা সত্য কিছুটা মিথ্যা হয় না। আসলে হয়।

সালেহ ইমরান বললেন, কমল, আমি তোমার কথা বুঝতে পারছি না।

কমল বলল, ৮ একটা সংখ্যা। আটের কিছুটা সত্য, কিছুটা মিথ্যা হতে পারে।

এখনো বুঝতে পারছি না, বুঝিয়ে বলো।

কমল কাগজে লিখল–

৮ = ২ X (২ √-১) X (২ √-১)

লেখা শেষ করে বাবার দিকে কাগজ উঁচু করে ধরে বলল, এখানে ২ সত্য কিন্তু (২ √-১) মিথ্যা। আট সত্য, কিন্তু আটের তিনটা অংশের মধ্যে দুটা অংশ মিথ্যা।

সালেহ ইমরান বললেন, আমি এখনো কিছু বুঝতে পারছি না। অঙ্ক আমার বিষয় না।

এটা সহজ অঙ্ক।

তোমার কাছে হয়তো সহজ, আমার কাছে না।

কমল বলল, আমি যে ভুল কথা বলেছিলাম এটা কি বুঝতে পারছ?

সালেহ ইমরান বললেন, তুমি যখন বলছ ভুল তখন নিশ্চয়ই ভুল, তবে আমি এখনো বুঝতে পারছি না। এইসব জটিল বিষয় থাকুক, এসো ছবি দেখি।

কমল বলল, আমি উনার সঙ্গে ছবি দেখব।

কার সঙ্গে?

উনার নাম মতিন।

কমল, বাবা শোন, তোমাকে যুক্তি দিয়ে বুঝিয়েছি এটা সম্ভব না। তুমি অঙ্ক বুঝতে পার, যুক্তি বুঝবে না কেন?

আমি তার সঙ্গে কথা বলতে চাই। তার সঙ্গে কথা বলতে চাই। সঙ্গে কথা বলতে চাই। কথা বলতে চাই। বলতে চাই। চাই।

কমল কমল। প্লিজ বেবি, প্লিজ।

কমলের মুখ লাল, চোখ রক্তবর্ণ। তার নিঃশ্বাস প্রশ্বাস অতি দ্রুত। শরীর ঘামছে। সে তার হাতের মুঠি বন্ধ করছে খুলছে। এক্ষুনি তার অ্যাপিলেপটিক সিজারের মতো হবে। তখন তার জিভে কামড় পড়তে পারে। সালেহ ইমরানের উচিত এই মুহূর্তে কমলের দুই দাঁতের ফাঁকে কঠিন কিছু ঢুকিয়ে দেয়া।

কমল কথা উল্টো করে বলা শুরু করল। তার গলার স্বর হয়েছে তীব্র সাপের শিসের মতো। উল্টো করে বলায় মনে হচ্ছে সে ভিনগ্রহের কোনো প্রাণীদের অচেনা অদ্ভুত ভাষায় কথা বলছে–

ইচা তেলব থাক ঙ্গেস রতা মিআ। ইচা তেলব থাক ঙ্গেস রতা মিআ। ইচা তেলব থাক ঙ্গেস রতা মিআ…

সালেহ ইমরান ছেলের পিঠে হাত রাখার সঙ্গে সঙ্গে তার অ্যাপিলেপটিক সিজার হলো। তিনি চাপা গলায় বলতে থাকলেন, Oh god! Oh god! Oh god!

 

মতিন শোবার আয়োজন করছে। আয়োজন ব্যাপক। সে প্রথমে বিছানায় একটা শীতলপাটি বিছায়। ভেজা গামছায় শীতলপাটি মোছা হয়। জানালা খুলে সিলিং ফ্যান ছাড়ে। ফ্যানের বাতাসে শীতলপাটি ঠাণ্ডা হবার পর সে খোলা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে দিনের শেষ সিগারেটটা খায়। সিগারেট শেষ হবার পর হাই উঠার জন্য অপেক্ষা করে। সে হাই না উঠা পর্যন্ত বিছানায় যায় না।

আজ সে তার দিনের শেষ সিগারেটটা ধরিয়েছে। সিগারেট শেষ হবার আগেই হাই উঠে গেছে। সে ইচ্ছা করলেই আধখাওয়া সিগারেট ফেলে দিয়ে বিছানায় চলে যেতে পারে। এই সময় দরজায় টোকা পড়ল। সাবধানী ভদ্র টোকা। নিশ্চয়ই বাইরের কেউ। মেসের লোকজন দরজায় টোকা দেয় না। ধাক্কা দেয়।

মতিন দরজা খুলল। দরজার ওপাশে বিব্রত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা বললেন, আপনি কি আমাকে চিনেছেন?

মতিন বলল, চিনেছি। আপনার নাম আহমেদ ফারুক। আপনি ব্যারিস্টার সালেহ ইমরান সাহেবের জুনিয়র। আপনি আমাকে একটা মার্লবরো লাইট সিগারেট দিয়েছিলেন এবং পল্লবীতে আমার বোনের বাসায় নামিয়ে দিয়েছিলেন। সেদিনও আপনার গায়ে হাফ হাওয়াই সার্ট ছিল। সার্টের রঙ ছিল হালকা নীল। তবে সেদিন আপনার হাতে সোনালি বেল্টের ঘড়ি ছিল। আজকের ঘড়ির বেল্ট চামড়ার। আপনার কি অনেকগুলি রিস্টওয়াচ?

আহমেদ ফারুক বললেন, আপনার স্মৃতিশক্তি অসম্ভব ভালো। আমি কি ভেতরে আসতে পারি?

মতিন বলল, না। আমি ঘুমাবার জন্যে তৈরি। এখন বিছানায় যাব। আপনার যা বলার দরজা থেকে বলুন এবং সংক্ষেপে বলুন।

কমলের ব্যাপারে কিছু কথা বলতে এসেছিলাম। সে আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছে।

মতিন বলল, আমার সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছে বলেই রাত এগারোটায় তার কাছে ছুটে যাব এরকম মনে করছেন কেন? সে কৃষ্ণ না যে কৃষ্ণের বাঁশি বেজেছে আমি শ্রী রাধিকা ছুটে যাচ্ছি।

ছেলেটা অসুস্থ।

তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। আমি ডাক্তার না।

তাকে একটা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। অ্যাপিলেপটিক সিজার হয়েছিল। সেই সময় জিভ কেটে যায়। জিভ সেলাই করা হয়েছে।

তাহলে চিকিৎসা তো হয়েছেই। এখন ডাক্তারদের বলুন কড়া ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতে।

তাকে ঘুমের ওষুধ দেয়া হয়েছে। সে ঘুমাচ্ছে না। আপনাকে চাচ্ছে। এই ধরনের শিশুদের মাথায় কিছু ঢুকে গেলে সহজে দূর হয় না। প্লিজ, আপনি একটু আসুন।

মতিন বলল, দরবার করে লাভ হবে না ভাই, আমি যাব না। কেন যাব না। তার পেছনেও আমার শক্ত যুক্তি আছে। যুক্তিটা শুনবেন?

বলুন শুনি।

আজ যদি তার কাছে যাই তাহলে কয়েকদিন পর আবার সে আমার সঙ্গে কথা বলতে চাইবে। আবার তার কাছে ছুটে যেতে হবে। তারপর আবার। তারপর আবার। আমাকে থাকতে হবে ধারাবাহিক আসা-যাওয়ার মধ্যে। যুক্তি কি মানছেন?

মানছি।

তাইলে বিদায়। গুড নাইট। শুভ রাত্রি।

আহমেদ ফারুক হতাশ গলায় বললেন, আপনি কি দুই মিনিটের জন্যে রাস্তায় আসবেন?

মতিন বিস্মিত গলায় বলল, কেন?

আহমেদ ফারুক বলেন, গাড়িতে ম্যাডাম বসে আছেন, উনি আপনার সঙ্গে কথা বলবেন।

ম্যাডাম মানে কি কমলের মা? মিসেস মুনা?

জি।

শুরুতে এই কথাটা না বলে এতক্ষণ ভ্যাজর ভ্যাজর করলেন কেন?

সরি।

মতিন বিরক্ত মুখে পাঞ্জাবি গায়ে দিল। তার পরনে লুঙ্গি। তার উচিত লুঙ্গি বদলে প্যান্ট পরা। সে তা করল না। প্যান্ট পরা থাকলে এই মহিলা বলে বসতে পারেন–গাড়িতে উঠুন। সেই সুযোগ মতিন এই মহিলাকে দিতে রাজি না। ক্ষমতাধররা সবসময় অন্যদের তুচ্ছ করবে তা হয় না।

গাড়ির কাচ উঠানো। ভেতরে এসি চলছে। মুনা পেছনের সিটে গা এলিয়ে পড়ে ছিলেন। তাঁর চোখ বন্ধ। মতিন এসে জানালার পাশে দাঁড়াতেই চোখ খুললেন। গাড়ির দরজা খুলে বললেন, উঠে আসুন।

মতিন বলল, গাড়িতে উঠব?

মুনা বললেন, জি। আমি আমার ছেলেকে কথা দিয়েছি আপনাকে নিয়ে যাব। আমি কাউকে কথা দিলে কথা রাখি।

মতিন বলল, আমি কিন্তু কাউকে কোনো কথা দেই নি।

মুনা বললেন, প্লিজ। প্লিজ।

মতিন বলল, লুঙ্গি বদলে আসি।

মুনা বললেন, লুঙ্গি বদলাতে হবে না। আপনাকে লুঙ্গিতে মানিয়েছে!

ঢাকা শহরের অনেক উন্নতি হয়েছে! সুন্দর সুন্দর দালান। রাস্তার দুপাশে শোভাবর্ধক গাছপালা, ফুলের বাগান। বিদেশী ছবির মতো হাইওয়ে পেট্রল কার। কালো কুকুর হাতে কালো পোশাকের র‍্যাব। শত শত ফাস্ট ফুডের দোকান। ঢাকা শহরবাসী এখন আর নতুন কিছু দেখলে ভড়কায় না। কিন্তু মতিন গুলশান এলাকার এই ক্লিনিক দেখে ভড়কাচ্ছে। ফাইভ স্টার হোটেলের ভাবভঙ্গি। রিসিপশনে পানির ফোয়ারা। ফোয়ারায় লাল-নীল মাছ। দুজন রিসিপশনিস্ট সেজেগুজে বসা। একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে। দুজনের মুখেই ফাইভ স্টার হোটেলের রিসিপশনিস্টদের মতো ঝকঝকে নকল হাসি।

মতিনকে দেখে রিসিপশনিস্ট দুজনই ভুরু কুঁচকে ফেলল। মতিনের ধারণা হলো, তার আগে কেউ লুঙ্গি পরে রিসিপশন রুমের মার্বেল পাথরের মেঝেতে দাঁড়ায় নি। তবে রিসিপশনিস্টরা কিছু বলল না। আহমেদ ফারুক তাদের কাছে এগিয়ে গেলেন। মিসেস মুনা বললেন, আসুন আগে এককাপ কফি খাই।

মতিন বলল, আমি কফি কম খাই।

মুনা বললেন, আপনি কমলের বাবার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে তারপর কমলকে দেখতে যাবেন। কফি খাওয়ার কথা এইজন্যেই বলেছি। কফিশপ দোতলায়, আসুন হেঁটে উঠি। আমার লিফট ফোবিয়া আছে।

মতিন বলল, লুঙ্গি পরে এইসব জায়গায় হাঁটাহাঁটি করা খুবই অস্বস্তিকর ব্যাপার।

মুনা বললেন, নেংটি পরে মহাত্মা গান্ধী যদি ইউরোপ ঘুরে আসতে পারেন তাহলে আপনার সমস্যা কী?

মতিন বলল, আমি মহাত্মা গান্ধী না। এটাই আমার সমস্যা। দেখুন সবাই তাকাচ্ছে।

মুনা বললেন, আপনার দিকে কেউ তাকাচ্ছে না। তাকাচ্ছে আমার দিকে। রূপবতী কোনো মেয়ে যদি কোনো ছেলের সঙ্গে হাঁটে তখন লোকজন মেয়েটিকেই দেখে। ছেলের দিকে তাকিয়ে সময় নষ্ট করে না।

কফিশপটা খালি। এক কোনায় সালেহ ইমরান সাহেব বসে আছেন। তার হাতে টাইম পত্রিকা। তিনি বেশ মনোযোগ দিয়েই পত্রিকা পড়ছিলেন। মতিনকে দেখে পত্রিকা বন্ধ করলেন। মুনা বললেন, আমার দায়িত্ব শেষ, আমি এখন চলে যাব।

সালেহ ইমরান বললেন, কোথায় যাবে?

বাড়িতে যাব। ঘুমাবার চেষ্টা করব। আমার মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হয়েছে।

কমলের পাশের কেবিনে ইচ্ছা করলে থাকতে পার।

মুনা বিরক্ত গলায় বললেন, তুমি ভালো করেই জানো আমি হাসপাতালে থাকি না।

বিশেষ বিশেষ প্রয়োজনে থাকতে হয়।

তেমন বিশেষ প্রয়োজন এখন তৈরি হয় নি।

ঠিক আছে যাও।

মুনা চলে যাচ্ছেন। সালেহ ইমরান সিগারেট ধরিয়েছেন। মতিন বেশ আগ্রহ নিয়ে ভদ্রলোকের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। ভদ্রলোক তার স্ত্রীর উপর খুব বিরক্ত হয়েছেন। বিরক্ত মানুষের মুখের চামড়া শক্ত হয়ে যায়। এই ভদ্রলোকের তাই হয়েছে। তিনি সিগারেট টেনে টেনে মুখের চামড়া নরম করার চেষ্টা করছেন। কাজটা তেমন সহজ হচ্ছে না। কফিশপে বেশ বড় বড় করে লেখা No Smoking. তারপরেও কফিশপের কর্মচারীরা কিছু বলছে না। এটাও মতিনকে বিস্মিত করছে।

সালেহ ইমরান মতিনের দিকে সিগারেটের প্যাকেটটা বাড়িয়ে দিতে দিতে বললেন, Have a smoke. তোমাকে কমলের কেবিনে নিয়ে যাওয়ার আগে তোমার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলা দরকার।

মতিন বলল, স্যার, জায়গাটা নো স্মোকিং।

সালেহ ইমরান বললেন, কফিশপে নো স্মোকিং সাইন থাকা ঠিক না। স্মোকাররা চা-কফির সঙ্গে সিগারেট খেতে পছন্দ করে। এদের উচিত ছিল আলাদা একটা স্মোকিং কর্নার করা। যাই হোক, তুমি সিগারেট ধরাও, কেউ কিছু বলবে না।

মতিন বলল, কেন কেউ কিছু বলবে না?

সালেহ ইমরান ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, কেউ কিছু বলবে না, কারণ এই ক্লিনিকটার মালিক মুনা।

মতিন সিগারেট ধরাল। সে লক্ষ করল, সালেহ ইমরান সাহেবের মুখের চামড়া আগের মতো হয়েছে। দৃষ্টির সেই কাঠিন্যও নেই। তিনি মতিনের দিকে সামান্য ঝুঁকে এলেন।

মতিন।

জি স্যার।

তুমি এসেছ আমি খুবই খুশি হয়েছি। থ্যাংকস। এখন তুমি কমল বিষয়ে দুএকটা কথা শুনে নাও। আগেও হয়তো বলেছি, আবারো বলি।

বলুন।

অ্যাপিলেপটিক সিজার কী তুমি নিশ্চয়ই জানো? জানো না?

জি-না।

মৃগী রোগী কখনো দেখ নি?

আমার পরিচিত কারোর মৃগী রোগ নেই, তবে রাস্তায় মৃগী রোগী পড়ে থাকতে দেখেছি। তারা ছটফট করছে, লোকজন চেষ্টা করছে জুতো শোঁকানোর। পুরনো জুতোর গন্ধে নাকি রোগের আরাম হয়।

মৃগী রোগের অনেক লোকজ চিকিৎসা প্রচলিত আছে। কোনোটাই অবশ্য কাজ করে না। যা হবার তাই হয়। তখন মস্তিষ্কে ইলেকট্রিক কারেন্টের একটা ঝড় বয়ে যায়। এই ঝড় অতি অল্প সময়ের জন্যেই হয়, কিন্তু রোগীকে চরম অবসন্নতায় ফেলে দিয়ে যায়। কমল এখন আছে এই অবস্থায়। এখন তাকে কিছুতেই উত্তেজিত করা যাবে না।

আমাকে কী করতে হবে সেটা বলে দিন।

আমি তো তাও জানি না। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা করবে। সে তোমার জন্যে অতি ব্যস্ত হয়ে আছে। সে কী করবে বা করবে না সেটা সে জানে। তুমি শুধু একটা জিনিস করবে না–তার গায়ে হাত দেবে না। এই ধরনের শিশুরা নিজ ভুবনে থাকে। গায়ে হাত দেয়াটাকে তারা মনে করে তাদের ভুবনে অনুপ্রবেশ। বুঝতে পারছ?

পারছি।

কঠিন কঠিন শব্দ ব্যবহার করছি। ভুবন, অনুপ্রবেশ। আমি নিজেও ক্লান্ত। ঠিক আছে, তুমি যাও দেখা করে এসো। তোমার জন্য গাড়ি রাখা আছে। তোমাকে তোমার মেসে নামিয়ে দেবে।

কমলের ঘরে আমি একা যাব?

হ্যাঁ একা যাবে। কেবিন নম্বর ১০১ and thank you again for coming. ভালো কথা বলতে ভুলে গেছি–তুমি ওর বিছানায় খবরদার বসবে না। তুমি বসবে চেয়ারে।

 

কমল দেয়ালের দিকে মুখ দিয়ে শুয়ে আছে। স্যালাইনের ব্যাগ ঝুলছে। তাকে স্যালাইন দেয়া হয়েছে। তার ঠোঁটে সেলাই করা হয়েছে। তার জিভও কেটেছে, জিভেও সেলাই করেছে। হাসপাতালের কেবিনে প্রচুর আলো থাকে। এই কেবিনে আলো কম। ঘরটা সাজানো হয়েছে হোটেলের কায়দায়। দেয়ালে পেইন্টিং আছে। বটগাছের ছায়ায় একদল গরু ঘাস খাচ্ছে। আকাশে কাক উড়ছে। পেইন্টিং তেমন সুন্দর না। মনে হয় আনাড়ি হাতের কাজ।

কমলের গায়ে হাসপাতালের পোশাক। অ্যাশ কালারের পায়জামা-পাঞ্জাবি। বিছানার চাদরটা ছাই রঙের। দরজায় পা দিয়ে মতিনের মনে হলো, ছাই রঙ পানির একটি দিঘিতে শুভ্র পদ্ম ফুটে আছে। এত সুন্দর হয় শিশুদের মুখ!

মতিন বলল, হ্যালো!

কমল পাশ ফিরে হাসল। ঠোঁটে সেলাই নিয়ে হাসা কষ্টকর, তবুও সে হাসছে।

শুনলাম তুমি আমাকে কিছু বলার জন্যে ডেকেছ। সেটা কী?

রিস তেলব ইচা।

আমার সঙ্গে উল্টো করে কথা না বললে হয় না? আমি তোমার মতো বুদ্ধিমান না। উল্টো কথা সোজা করতে আমার কষ্ট হয়। ঠিক আছে চেষ্টা করি। রিস হলে সরি, তেলব হলো বলতে, ইচা হলো চাই। তার মানে হলো সরি বলতে চাই। ঠিক আছে?

কমল বলল, রিস।

মতিন বলল, সরি বলা তো হয়েছে। এখন কি চলে যাব?

কমল বলল, না।

মতিন বলল, না-টা উল্টো করে বলছ না কেন? নার উল্টো হয় না?

কমল বলল, হয়। না হলো–আ-না।

মতিন বলল, রমাকান্তকামার-এর উল্টো কী?

কমল বলল, রমাকান্তকামার উল্টো করলে রমাকান্তকামার হয়। এটা কি কোনো ট্রিক?

হ্যাঁ ট্রিক।

আমি ট্রিক পছন্দ করি না। যারা ট্রিক করে তাদেরকেও আমি পছন্দ করি

মতিন বলল, আমি ট্রিক পছন্দ করি। যারা ট্রিক করে তাদের পছন্দ করি। তুমি ট্রিক পছন্দ কর না, কাজেই আমি তোমাকে পছন্দ করি না।

কমল বলল, তুমি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে কথা বলছ কেন? কাছে আস।

মতিন বলল, না। তুমি আমাকে পছন্দ কর না, এইজন্যে কাছে আসতে চাও না?

মতিন বলল, এইজন্যে না। আমি অনেককেই পছন্দ করি না, তারপরও তাদের কাছে যাই। তোমার কাছে যাচ্ছি না, কারণ তোমার কাছে গেলে আমার বসতে ইচ্ছা করবে। বিছানায় বসতে ইচ্ছা করবে। আমি সেটা করতে পারব না। কারণ তুমি তোমার বিছানায় কাউকে বসতে দাও না।

চেয়ারে বসবে।

প্লাস্টিকের শক্ত চেয়ারে আমি বসতে পারি না।

ঠিক আছে এসো। বিছানায় বসো।

শুধু বিছানায় বসলেই আমার চলবে না। যার সঙ্গে আমি কথা বলব তাকে মাঝে মধ্যে আমাকে ছুঁয়ে দেখতে হবে।

কমল বলল, কেন?

এটা আমার অভ্যাস। একেকজন মানুষের একেক রকম অভ্যাস থাকে।

কমল বলল, তুমি কি ট্রিক করছ? ট্রিক করে আমার বিছানায় বসেছ? এখন ট্রিক করে গায়ে হাত দেবে। ঠিক না?

হ্যাঁ ঠিক।

আমি ট্রিক পছন্দ করি না। তুমি দুষ্টু লোক।

মতিন বলল, আমি ট্রিক করি, কিন্তু আমি দুষ্টু লোক না।

কমল বলল, তুমি কি অঙ্ক জানো?

মতিন বলল, না।

কমল বলল, যারা অঙ্ক জানে না তাদেরকে আমি পছন্দ করি না।

মতিন বলল, আমি তো তোমাকে বলি নি আমাকে পছন্দ কর। তুমি আমাকে পছন্দ করবে না, আমি তোমাকে পছন্দ করব না। মামলা ডিসমিস।

মামলা ডিসমিস মানে কী?

মতিন বলল, মামলা ডিসমিস মানে–এই বিষয়ে কথা শেষ।

কমল বলল, তুমি অঙ্ক পছন্দ কর না কেন?

মতিন বলল, অঙ্ক পছন্দ করি না, কারণ অংকে রস-কস বলে কিছু নেই। শুকনা কঠিন একটা বিষয়।

কমল বলল, অংকে অনেক মজা আছে।

কী মজা?

কমল আগ্রহের সঙ্গে বলল, আমার কেবিনের নাম্বার ১০১। এটা মজা না?

মতিন বিস্মিত হয়ে বলল, কী মজা?

এটা একটা প্রাইম নাম্বার। এটার মাঝখানে আছে একটা শূন্য। এটার স্কয়ার করলে হয় ১০২০১, এটার মাঝখানে আছে দুটা শূন্য। এটাও প্রাইম নাম্বার। ১০১-কে কিউব করলে হয় ১০৩০৩০১। এখন মাঝখানে আছে তিনটা শূন্য। ১০১-এর ফোর পাওয়ার করলে হয় ১০৪০৬০৪০১। এখন মাঝখানে এসেছে। চারটা শূন্য। মজা না?

মতিন বিস্মিত হয়ে বলল, মজাটা কী?

যতটা পাওয়ার হচ্ছে মাঝখানে ততটা শূন্য আসছে। মজা না?

এর মধ্যে আমি মজার কিছুই পেলাম না। বকবকানি বন্ধ কর।

কমল কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, এরকম করে কথা বলছ কেন?

মতিন বলল, আমার ইচ্ছা। আমি আমার ইচ্ছামতো কাজ করি। এখন আমি তোমার হাত ধরে বসে থাকব। তুমি পছন্দ কর বা না কর কিছু আসে যায় না। তুমি চিৎকার করলে চিৎকার করবে। তোমার যদি অ্যাপিলেপটিক সিজার হয় হবে।

কমলের ঠোঁট কাঁপছে। মুখ ফ্যাকাশে। সে শুয়েছিল, এখন উঠে বসল। মতিন খপ করে কমলের হাত ধরে ফেলল। কমলের হাত থরথর করে কাঁপছে। তার চোখ ঘোলাটে হয়ে আসছে। সে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। সে যখন চিৎকার দিয়ে উঠতে যাবে তখন মতিন তার হাত ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়াল।

কমল চাপা গলায় বলল, আপনি আর কখনো আসবেন না।

মতিন বলল, K.O., K.O., K.O.. [ok-এর উল্টো ]

কমল বলল, I hate you.

মতিন বলল, Ko, Ko, Ko.

কমল বলল, আপনার গায়ে ঘামের গন্ধ।

মতিন বলল, তোমার গায়ে ওষুধের গন্ধ। ওষুধের গন্ধ ঘামের গন্ধের চেয়েও খারাপ।

মতিন ঘর থেকে বের হয়ে এলো! ক্লিনিকের সামনে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ির পাশে আহমেদ ফারুক চিন্তিত মুখে হাঁটাহাঁটি করছেন। মতিনকে দেখে তিনি গাড়ির দরজা খুলতে খুলতে বললেন, কাজটা ভালো করেন নি।

মতিন বলল, কোন কাজটা ভালো করি নি?

আহমেদ ফারুক বললেন, স্যারের ছেলের সঙ্গে যে কাজটা করলেন।

মতিন বলল, আপনি জানলেন কীভাবে?

আহমেদ ফারুক বললেন, কমলের ঘরে CCTV লাগানো। সেখানে কী হয় হয় সবই টিভি ক্যামেরায় মনিটর করা হয়। আপনি যখন কথা বলছিলেন তখন টিভি মনিটরের সামনে স্যারের সঙ্গে আমিও ছিলাম।

মতিন বলল, Ko, Ko, Ko.

আহমেদ ফারুক বললেন, এর মানে কী?

মতিন বলল, মানে জানার দরকার নেই। সিগারেট থাকলে সিগারেট দিন। থাকলে কোনো একটা পান-সিগারেটের দোকানের সামনে গাড়ি থামান। আমি সিগারেট কিনব। সিগারেটের জন্যে ফুসফুস ছটফট করছে। ভালো কথা, আমার সঙ্গে কিন্তু মানিব্যাগ নেই। সিগারেট কেনার টাকা আপনাকেই দিতে হবে।

আহমেদ ফারুক সিগারেটের প্যাকেট মতিনের দিকে বাড়িয়ে দিতে দিতে বললেন, প্যাকেটটা রেখে দিন। ইউ আর এ স্ট্রেঞ্জ ম্যান।

মতিন বলল, আপনিও স্ট্রেঞ্জ ম্যান।

কোন অর্থে?

জল স্পর্শ না করার অর্থে।

পরিষ্কার করে বলুন, বুঝতে পারছি না।

মতিন বলল, গাড়ির দরজা খুলুন গাড়িতে উঠব। সিটে আরাম করে বসে আপনাকে বুঝিয়ে দেব জল স্পর্শ না করার মানে কী?

আহমেদ ফারুক গাড়ির দরজা খুলতে খুলতে বললেন, সিগারেট ফেলে গাড়িতে উঠুন।

মতিন সিগারেট ফেলে গাড়িতে উঠল। গাড়ি ড্রাইভার চালাচ্ছে না, আহমেদ ফারুক চালাচ্ছেন। মতিনের উচিত ছিল ড্রাইভারের পাশের সিটে বসা। সে বসেছে পেছনে। নরম সিটে গা এলিয়ে দিয়ে বসে থাকতে তার বেশ আরাম লাগছে। সে সিগারেটের প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরাল। আহমেদ ফারুক সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি রাস্তার পাশে দাড় করিয়ে ফেলে কঠিন গলায় বললেন, আপনাকে আগেও বলেছি সিগারেট ফেলে গাড়িতে উঠুন। সিগারেট ফেলুন।

মতিন বলল, সিগারেট ফেলব না।

তাহলে গাড়ি থেকে নামুন।

মতিন বলল, আমি গাড়ি থেকে নামবও না।

আহমেদ ফারুক বললেন, অবশ্যই নামবেন।

মতিন বলল, অবশ্যই না। আপনি একা টানাটানি করে আমাকে গাড়ি থেকে নামাতেও পারবেন না। বেশি ঝামেলা করলে আমি কিন্তু গাড়িতে পেচ্ছাব করে দেব।

কী বললেন?

পিপি করে দেব। পিপি। গাড়ি গান্ধা করে দেব। আপনি সুবোধ বালকের মতো গাড়ি চালিয়ে আমাকে আমার মেসে নামিয়ে দেবেন। আমি এক থেকে পাঁচ পর্যন্ত গুনব। এর মধ্যে গাড়ি স্টার্ট দিতে হবে। এক, দুই, তিন, চার…

আহমেদ ফারুক গাড়ি স্টার্ট দিলেন।

<

Humayun Ahmed ।। হুমায়ূন আহমেদ