ইয়াজউদ্দিন সাহেবের ঘুম ভাঙল টেলিফোনের শব্দে। টেলিফোন ধরার আগে তিনি ঘড়ি দেখলেন। ভোর ৬টা ৪০ মিনিট। এত ভোরে টেলিফোন! কোনো কি সমস্যা হয়েছে? তিনি টেলিফোন ধরলেন।

স্যার, আমি সুলেমান।

ভালো আছ সুলেমান?

জি স্যার।

বলো কী বলবে।

ছোট সাহেবের বিষয়ে কথা বলব।

বলো, আমি শুনছি।

ওনারা স্যার চিটাগাং পৌঁছেছেন।

ভালো কথা। ঢাকা থেকে যখন রওনা হয়েছে তখন চিটাগাং তো পৌঁছবেই। এ ছাড়া কোনো খবর আছে?

একটু সমস্যা হচ্ছে স্যার।

তুমি ভেঙে ভেঙে না বলে একনাগাড়ে বলে যাও। কী ব্যাপার?

পুলিশ ঝামেলা করছে। সকালবেলা একদল পুলিশ এসে উপস্থিত—উনারা নাকি কার স্ত্রীকে ভাগিয়ে নিয়ে এসেছেন। ভদ্রমহিলার স্বামী মামলা করেছেন। উনার কানেকশন ভালো। উপরের লেভেল থেকে চাপ আসছে।

আর কিছু?

জি না স্যার, আর কিছু না।

ওদের কি থানায় নিয়ে গেছে?

থানায় নিয়ে যায় নি, তবে নিয়ে যাবে বলে মনে হয়।

শুভ্ৰ কেমন আছে?

জি ভালো আছেন।

ও এই ঘটনায় নার্ভাস হয় নি?

উনি এইসব ব্যাপারে এখনো কিছু জানেন না।

ওর চোখে কি চশমা দেখেছ?

জি।

ভেরি গুড। তুমি আরো কিছু বলবে, না টেলিফোন রেখে দেব?

আমাকে কিছু করতে বলছেন স্যার?

না, কিছু করতে বলছি না। তুমি শুধু লক্ষ রাখো।

জি আচ্ছা স্যার।

টেলিফোন তাহলে রাখি?

স্যার, আরেকটা খবর ছিল—বুফো কারের ম্যানেজার, তার নাম রশীদউদ্দিন ভূইয়া—সে রেলওয়ে পুলিশের কাছে এজাহার দিয়েছে—ছোট সাহেবের বিরুদ্ধে।

শোনো সুলেমান, তুমি সব কথা একবারে বলছি না কেন? ভেঙে ভেঙে কেন বলছ? রশীদউদ্দিন ভুইয়া শুভ্রর বিরুদ্ধে এজাহার কেন দেবে? শুভ্র কী করেছে?

উনি কিছু করেন নি।

কিছু করেন নি, শুধু শুধু এজাহার!

স্যার, ছোট সাহেব উনার গায়ে থুথু দিয়েছেন।

কী বললে? শুভ্র তার গায়ে থুথু দিয়েছে? শুভ্র?

জি স্যার।

সত্যি দিয়েছে?

জি স্যার, সত্যি?

কেন থুথু দিল?

চা চেয়েছিলেন, দিতে দেরি করেছিলেন, এই জন্যে থুথু।

চা দিতে দেরি করেছে, শুধু এই কারণে গায়ে থুথু দিয়েছে?

জি। তবে স্যার রশীদউদ্দিন অত্যন্ত বদ টাইপের লোক। সে লিখিত অভিযোগ করেছে মারপিটের।

আচ্ছা, ঠিক আছে।

ইয়াজউদ্দিন সাহেব টেলিফোন রাখলেন। রাহেলার ঘুম ভেঙে গেছে। তিনি ভীত গলায় বললেন, কার টেলিফোন? শুভ্রর?

না। সুলেমান টেলিফোন করছিল। শুভ্রর খবরাখবর দিল।

শুভ্ৰ ভালো আছে?

হ্যাঁ, ভালো আছে।

ওর চশমা? হ্যান্ডব্যাগের সাইড পকেটে যে চশমা, সেটা বলেছ?

না, বলিনি।

বিলোনি কেন?

সুলেমান বলল, ও দেখেছে শুভ্রের চোখে চশমা আছে, কাজেই চশমার কথা মনে করিয়ে দেবার প্রয়োজন মনে করি নি। রাহেলা, তুমি আমাকে খুব কড়া করে এক কাপ কফি করে দাও তো!

রাহেলা চিন্তিত গলায় বললেন, খালি পেটে হঠাৎ কফি চাচ্ছ কেন? কখনও তো খাও না!

ইয়াজউদ্দিন বিরক্ত স্বরে বললেন, কখনো খাই না বলে কোনো দিনও খাওয়া যাবে না তা তো না। এখন খেতে ইচ্ছা করছে। দুধ-চিনি কিছুই দেবে না। ‘র’ কফি।

রাহেলা কফি বানাতে গেলেন। ইয়াজউদ্দিন টেলিফোন করলেন রফিককে। রফিক তাঁর ঢাকা অসিফের জেনারেল ম্যানেজার। নির্ভর করার মতো একজন মানুষ। কোনো জটিল সমস্যাই রফিকের কাছে সমস্যা না।

হ্যালো রফিক।

স্লামালিকুম স্যার।

দুঃখিত যে এত সকালে তোমার ঘুম ভাঙালাম।

কোনো সমস্যা নেই তো স্যার? কী ব্যাপার?

তোমাকে একটু চিটাগাং যেতে হবে।

স্যার আমি ফার্স্ট ফ্লাইটে চলে যাব।

শুভ্ৰ বোধহয় কী-একটা সমস্যায় পড়েছে। তুমি দূর থেকে সমস্যাটা লক্ষ করবে। সমস্যাটা কি বলব?

আপনার বলার দরকার নেই স্যার, আমি জেনে নেব।

রাখি রফিক।

জি আচ্ছা। আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। আমি দেখছি।

থ্যাংক য়্যু।

রাহেলা কফি নিয়ে এসে দেখেন সাহেব ঘুমিয়ে পড়েছেন। বেশ আরাম করে ঘুমুচ্ছেন।

<

Humayun Ahmed ।। হুমায়ূন আহমেদ