॥ ৭ ॥
সাদা রঙের পিক-আপ ধানক্ষেতে পড়ে আছে। ঢাকা চিটাগাং হাইওয়েতে গাড়ির ভিড়। এরা কেউ থামছে না। বরং একসিডেন্টের কাছাকাছি তাদের গাড়ির গতি বেগ বেড়ে যাচ্ছে। এখন গাড়ি থামানোই সমস্যা। আহত মানুষদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব এসে পড়তে পারে। কেই মারা গিয়ে থাকলে সমস্যা আরো বেশি। রাস্তা ব্লক হয়ে যাবে। দু‘ঘণ্টা তিন ঘণ্টার মত গাড়ি চলবে না। মানুষজন জমবে, পুলিশ আসবে। গাড়ি ভাংচুরও হতে পারে। গাড়ি ভাংচুর হওয়া অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে, কিছু একটা হলেই গাড়ি ভাঙ্গা হয়। কাজেই একসিডেন্ট হলে হবে। বড় বোকামী হবে গাড়ি থামিয়ে কি হয়েছে খোঁজ নিতে যাওয়া। গাড়ি চালক বা যাত্রী কারো হাতে সময় নেই। ফেরী ধরতে হবে। ফেরীর লম্বা লাইনে যেন পড়তে না হয়।
গ্রামের কিছু লোকজন পিক-আপ ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। ছোট বাচ্চা এবং মহিলাদের কানড়বা শোনা যাচ্ছে। উল্টে যাওয়া পিক-আপ থেকে প্রথম বের হয়ে এল লীনা। তার চোখে ভয়ের চেয়ে বিস্ময় বেশি। সে ডাকল, আব্বু ও আব্বু।
লীনার বাবা বের হয়ে এলেন। বেরুল ড্রাইভার মহসিন। মহসিনের বাঁ হাত দিয়ে রক্ত পড়ছে। রক্তে সার্টের অনেকখানি ভিজে গেছে। তবে তার কাছে এই আঘাত খুব গুরুতর বলে মনে হচ্ছে না। হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকা মানুষগুলির দিকে তাকিয়ে বলল, দাঁড়ায়ে তামাশা দেখতেছেন? এদের গাড়ি থেকে বের করেন। আশেপাশে ডাক্তারখানা কোথায় আছে?
গ্রামের মানুষগুলি কোন জবাব দিল না। একজন বুড়ো শুধু বলল, কয়জনের মৃত্যু হয়েছে?
এতবড় একসিডেন্ট সেই তুলনায় ক্ষতি অল্প – গুরুতর আঘাত পেয়েছে শুধুমাত্র মুহিব। একমাত্র তারই জ্ঞান নেই। মাথার পেছন দিকের খানিকটা অংশ থেতলে গেছে।
মহসিন বলল, ইনারে খুব তাড়াতাড়ি কোন বড় হাসপাতালে নিতে হবে। আপনারা একটা ব্যাবস্থা করেন। ঢাকার দিকে যে গাড়িগুলি যাচ্ছে তার একটারে থামান।
মুহিবের মাথা কোলে নিয়ে একজন মহিলা বসে আছেন। ইনি লীনার মা। তাঁর আকাশী রঙের শাড়ি রক্তে মাখা মাখি হয়ে গেছে। ভদ্রমহিলা এক মনে দোয়া ইউনুস পাঠ করছেন -।
গ্রামের মানুষের এই দৃশ্য দেখার দিকেই বেশি আগ্রহ। আহত মানুষটিকে ঢাকায় পাঠানোর ব্যাপারে তাদের তেমন উৎসাহ দেখা যাচ্ছে না। ঐ বুড়ো লোকটা লীনার মাকে বলল – “মানুষটা আফনের কে হয়?“ লীনার মা বললেন, আপনারা কেউ একটু পানি আনবেন? উনারে পানি খাওয়াব। পানি আনার ব্যাপারে সবার খুব উৎসাহ দেখা গেল। এক সঙ্গে চার পাঁচ জন ছুঁটে গেল।
লীনার বাবা ঢাকার দিকে যাচ্ছে এমন কোন একটা গাড়ি থামাবার চেষ্টা করছেন। হাত তুলে চিৎকার করছেন কেউ থামছে না। তিনি উপায় না দেখে হাত তুলে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়ালেন, তবু কেউ থামছে না। তাঁকে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। এই সময় ছোট্ট লীনা একটা অসীম সাহসের কাজ করল। সেও বাবার মত দু‘হাত তুলে রাস্তার একটা অংশ আড়াল করে দাঁড়াল। ঢাকাগামী একটা চেয়ারকোচকে যে কারণে বাধ্য হয়ে থামতে হল।
কৃষ্ণপক্ষ – পর্ব ০৭
- Details
- Humayun Ahmed ।। হুমায়ূন আহমেদ
- হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস
- Category: কৃষ্ণপক্ষ
- Read Time: 1 min
- Hits: 102