ফজরের নামায শেষ করে সোবাহান সাহেব তসবি হাতে বাগানে খানিকক্ষণ হাঁটেন। আজও তাই করছেন। হঠাৎ মনে হল কে যেন গেটে টোকা দিচ্ছে। এত ভোরে কে আসবে এ বাড়িতে? তিনি বিস্মিত হয়ে গেট খুললেন–বিলুদাঁড়িয়ে আছে। ব্যাপারটা বিশ্বাসই হল না। বিলুর মেডিকেল কলেজ খোলা। কদিন পরই পরীক্ষা। এই সময় সে ঢাকায় আসবে কেন? আনন্দ ও বিস্ময়ে সোবাহান সাহেব অভিভূত হয়ে গেলেন।

আরে তুই? বিলু, মা, তুই?

বিলু বেবীটেক্সী ভাড়া মেটাতে মেটাতে বাবার দিকে তাকিয়ে হাসল। ভোরবেলার আলোয় হলুদ রঙের শাল জড়ানো বিলুকে অন্সরীর মত লাগছে। তার এই মেয়ে বড় সুন্দর। স্বর্গের সব রূপ নিয়ে এই মেয়ে পৃথিবীতে চলে এসেছে।

ভাড়া মিটিয়ে রাস্তার উপরই বিলু নিচু হয়ে বাবার পা স্পর্শ করল। নরম গলায় বলল, তুমি এতো রোগা হয়েছ কেন বাবা? সোবাহান সাহেবের চোখে পানি এসে গেল। তাঁর বড় মেয়ের সামান্য কথাতেই তার চোখ ভিজে উঠে। তিনি ধরা গলায় বললেন,

কলেজ ছুটি না-কি মা?

ছুটি না— ছাত্ররা মারামারি করে সব বন্ধ-টন্ধ করে দিয়েছে। একমাত্র আমাদের মেডিকেল কলেজটাই খোলা ছিল। ঐটাও বন্ধ হল।

একা এসেছিস?

না। সব মেয়েরা একসঙ্গে এসেছি। সন্ধ্যাবেলা লঞ্চে উঠলাম, ঢাকা পৌঁছলাম রাত তিনটায়। একটু সকাল হতেই চলে এসেছি।

ভাল করেছিস মা। খুব ভাল করেছিস।

সোবাহান সাহেবের ইচ্ছা করছে চেঁচিয়ে বাড়ির সবার ঘুম ভাঙাতে, তিনি তা করলেন না। নিজেই রান্নাঘরে গিয়ে গ্যাসের চুলায় কেতলি বসিয়ে দিলেন। বড় মেয়ের সঙ্গে কিছু সময় একা একা থাকার আনন্দওতো কম নয়।

দুজন চায়ের কাপ নিয়ে বসেছে। বিলু এক হাতে বাবাকে জড়িয়ে রেখেছে আর এত ভাল লাগছে।

বাসার খবর বল বাবা।

কোন খবরটা শুনতে চাস?

মামা নাকি ছবি বানাচ্ছে? মিলি চিঠি লিখেছিল।

সোবাহান সাহেব মুখ বিকৃত করে বললেন, গাধাটা বড় যন্ত্রণা করছে। রিহার্সেল টিহার্সেল কি কি করছে। বিকেলে বাসায় থাকা মুশকিল।

বিলু, আপন মনে হাসল। ফরিদ তার খুবই পছন্দের মানুষ। বিলু হালকা

গলায় বলল, মামার পাগলামী কমেনি?

না বেড়েছে। আমার মনে হয় কিছুদিন পর তালা বন্ধ করে রাখতে হবে।

ধরে বেঁধে মামার একটা বিয়ে দিয়ে দাও।

ঐ সব কথাই মনে আনবি না। একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করার কোন মানে হয়?

বিলুচায়ের কাপ হাতে নিয়ে ঘর থেকে ঘরে ঘুরতে লাগল। মাত্র চার মাস পরে সে ফিরেছে অথচ মনে হচ্ছে যেন কত যুগ পরে ফিরল। সব কেমন যেন অচেনা।

আরো আফা কোন সময়ে আইলেন? কি তাজ্জব!

বিলুপ্ৰথম দেখায় চিনতে পারল না। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। চোখে চশমা, মুখ ভর্তি দাড়ি চেনা ভঙ্গিতে কে যেন হাসছে।

আফা আমি কাদের।

তুমি দাড়ি কবে রাখলে কাদের?

সিনেমায় পাট করতাছি আফা— মামার সিনেমা, আমার হিরোর পাট। খেয়া নৌকার মাঝি।

তাই নাকি? খেয়া নৌকার মাঝির বুঝি, দাড়ি থাকতে হয়?

ডিরেকটর সাব চাইছে।

বিলু হেসে ফেলল, হাসতে হাসতে বলল— তোমরা বেশ সুখে আছ বলে মনে হচ্ছে কাদের।

আর সুখ। সিনেমা করা কি সোজা যন্ত্রণা? চিন্তা-ভাবনা আছে না? এইটা কি পানি-ভাত যে মরিচ দিয়া এক ডলা দিলাম। আর মুখের মইদ্যে ফেললাম?

বিলু অনেক কষ্টে মুখের হাসি আটকাল। তার খুব মজা লাগছে। কাদেরের মুখও আনন্দে উজ্জ্বল। কাদেরের ধারণা এই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মহিলা হচ্ছে বিলু আফা। এ বাড়ির সবাই তাকে তুই করে বলে, একমাত্র বিলু আফা বলে তুমি করে। এক গ্লাস পানির দরকার হলে বিলু আফা জনে জনে হুকুম দেয় না। নিজের পানি নিজে নিয়ে আসে। একবার কাদেরের জ্বর হল। চাকর-বাকরের জ্বর হলে কে আর খোঁজ করে। ঘরের এক কোণায় কথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকতে হয়। কাদের তাই করেছে, শুয়ে আছে। জ্বর খুব বেশি। চারপাশের পৃথিবী কেমন হলুদ হলুদ লাগছে। আচ্ছান্নের মত অবস্থা। এমন সময় লক্ষ্য করল কে যেন তার মাথায় পানি ঢালছে। ঠাণ্ডা পানি। বড় আরাম লাগছে। কাদের চোখ মেলে দেখে বিলু। এক মনে পানি ঢালছে এবং রহিমার মাকে কড়া গলায় বলছে, জ্বর এত বেড়েছে, তুমি লক্ষ্য করলে না এটা কেমন কথা রহিমার মা? একশ চার টেম্পারেচার। কত সময় ধরে এক রকম জ্বর কে জানে।

রহিমার মা বলল, আমারে দেন। আফা। আমি পানি ঢালি।

থাক, তোমার আর কষ্ট করতে হবে না। তবে তোমার উপর আজ আমি খুব রাগ করেছি।

সেই প্ৰবল জুরের ঘোরের মধ্যে কাদের ঠিক করে ফেলল বড়। আপার জন্যে যদি কোনদিন প্রয়োজন হয় সে জীবন দিয়ে দিবে। বড়। আপার যদি কোন শক্ৰ থাকে–তাকে খুন করে সে ফাঁসি যাবে।

 

দুপুর নাগাদ গত তিন মাসে এ বাড়িতে কি কি ঘটেছে বিলু জেনে গেল। কোন কোন ঘটনা তিনবার চারবার করে শুনতে হল। একবার বলল মিলি, একবার মা, একবার কাদের। প্রতিবারেই বিলু ভান করল যে সে ঘটনাটা প্রথম বারের মত শুনছে।

বিলু আসা উপলক্ষে মিলি ইউনিভার্সিটিতে গেল না। সারাক্ষণ বড় আপার পেছনে পেছনে ঘুরতে লাগল এবং অনবরত কথা বলতে লাগল।

টগর আর নিশার সঙ্গে তোমার এখনো দেখা হয়নি— পৃথিবীতে এরকম দুষ্ট ছেলেপুলে আছে, না দেখলে তোমার বিশ্বাস হবে না।

তাই বুঝি?

হ্যাঁ। তবে মুখের দিকে তাকালে তোমার মনে হবে এরা দেবশিশু। ভয়ানক ইন্টেলিজেন্ট। ওদের মা নেই, তোমাকে তো আগেই চিঠি লিখে জানিয়েছি।

বিলু প্ৰসঙ্গ পাল্টে বলল, আচ্ছা তোর ঐ ডাক্তার সাহেবের খবর কি?

মিলি হকচকিয়ে বলল, আমার ডাক্তার সাহেব মানে? আমার ডাক্তার সাহেব বলছি কেন?

এম্‌নি বললাম, তোর চিঠিতে ভদ্রলোকের কথা প্রথম জানলাম তো। তুই লজ্জায় এমন লাল হয়ে যাচ্ছিস ব্যাপার কি? সত্যি করে বলতো–উনাকে কি তোর পছন্দ?

মিলি রেগে গেল। মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, কি যে তুমি বল আপা। ঐ ছাগল–কে আমি পছন্দ করব কেন? আমার তো আর মাথা খারাপ হয় নি।

তুই রেগে মেগে কেমন হয়ে গেছিস। এটাতো সন্দেহজনক।

আমি সত্যি কিন্তু রাগছি আপা।

ভদ্রলোককে খবর দে না, আমার দেখতে ইচ্ছে করছে।

তাকে খবর দেবার কোন দরকার নেই। দিনের মধ্যে তিনবার করে আসছে। রিহার্সেল করছে। মামার সিনেমায় সেও তো আছে।

বাহ ভালতো। তোমরা দুজন আবার নায়ক-নায়িকা না তো?

রাগিয়ে দিওনাতো। আপা। এতদিন পর এসেছ বলে ঝগড়া করলাম না। নয়ত প্ৰচণ্ড ঝগড়া হয়ে যেত। এর মধ্যে আবার নায়ক-নায়িকা কি?

বিলু হাসি মুখে ফরিদের ঘরে ঢুকল। বাড়ির সবার সঙ্গেই কথা হয়েছে শুধু মামার সঙ্গে কথা হয় নি।

ফরিদ মাথা নিচু করে কি যেন লিখছে। বিলুকে এক নজর দেখেও সে লিখেই যেতে লাগল। যেন বিলুকে সে চেনে না।

আসব মামা?

না।

না বললে তো হবে না। এতদিন পর এসেছি তোমার সঙ্গে খানিকক্ষণ কথাও বলব না?

না। কাজ করছি। আগামীকাল হে মাছ ছবির অন দ্যা স্পট রিহার্সেল। নিঃশ্বাস ফেলার সময় নেই। লাস্ট মিনিট চেঞ্জ যা করার এখনি করতে হবে।

তাই বলে তোমাকে আমি সালামও করতে পারব না?

বিলু এগিয়ে এসে ফরিদের পা ছুঁয়ে সালাম করল। ফরিদ বলল, তুই এত ভাল মেয়ে কি করে হলি রে বিলু? ছোটবেলায় তো এত ভাল ছিলি না। যতাই দিন যাচ্ছে ততাই ভাল হচ্ছিস।

শুনে খুশী হলাম মামা।

খুব খুশী হবার কোন কারণ নেই। বুদ্ধি কম মানুষরাই সাধারণত ভাল হয়। আমার ধারণা যত দিন যাচ্ছে তোর বুদ্ধি তত কমে যাচ্ছে।

বিলু খিলখিল করে হেসে উঠল। এমন গাঢ় আনন্দে অনেক দিন সে হাসে নি। এই মানুষটাকে তার বড় ভাল লাগে।

 

সোবাহান সাহেব তাঁর মনের মত একটা প্ৰবন্ধ পেয়েছেন। প্ৰবন্ধের নাম থাইল্যান্ডে মাগুর মাছের চাষী। এই মাছের চাষে বিশাল পুকুর কাটার দরকার নেই–ট্যাংক বা চৌবাচ্চা জাতীয় জলাধার থাকলেই হল। মাছের খাবারের জন্যেও আলাদা ভাবে কিছু ভাবতে হবে না। সঙ্গে হাঁস-মুরগির চাষ করতে হবে। মাছের খাবার হবে. সোবাহান সাহেব থমকে গেলেন। মাছের খাবার হিসেবে যে সব জিনিসের উল্লেখ করা হয়েছে তা তার পছন্দ হচ্ছে না।

স্লামালিকুম স্যার।

সোবাহান সাহেব পত্রিকা থেকে মুখ তুলে দেখলেন, আনিস দাঁড়িয়ে আছে। বিব্রত মুখ ভঙ্গি।

কিছু বলবে?

জ্বি।

বল।

এই মাসের বাড়ি ভাড়াটা স্যার দিতে পারছি না।

বাড়ি ভাড়া কি তোমার কাছে চাওয়া হয়েছে?

জ্বি না।

তাহলে বিরক্ত করছ, কেন? পড়ার মাঝখানে একবার বাধা পড়লে কনসানট্রেসন কেটে যায়।

সরি স্যার। কি পড়ছেন?

থাইল্যান্ডের মাগুর চাষ।

আপনি তাহলে মাছের ব্যাপারটা নিয়ে সত্যি খুব ভাবছেন।

হ্যাঁ ভাবছি।

আপনি বাংলাদেশ মাছে মাছে ছয়লাপ করে দিতে চান তাই না স্যার?

হ্যাঁ চাই।

এখন আপনি যদি আমাকে অনুমতি দেন তাহলে আমি একটা মজার কথা বলতে চাই— শায়েস্তা খাঁর আমলে বাংলাদেশ খুব সস্তা গন্ডার দেশ ছিল। প্রচুর খাদ্য ছিল, মাছ মাংস ছিল। মূল্য ছিল নাম মাত্র। অথচ তখনো এ দেশের প্রচুর লোক ছিল অনাহারে। নাম মাত্র মূল্যেও খাদ্য কেনার মত অর্থ তাদের ছিল না। যদি আপনিও সত্যি সত্যি এই দেশ একদিন মাছে মাছে ছয়লাপ করে দেন। তাতেও লাভ হবে না। যারা এখন মাছ খেতে পারছে না। তারা তখনো খেতে পারবে না। তাদের টাকা নেই। মূল সমস্যাটা অন্য জায়গায়।

কোথায়?

আরেকদিন আপনাকে বলব। আজ আমার একটু কাজ আছে। হে মাছ ছবির অন লোকেসন রিহার্সেল হবে। আপনি হয়ত জানেন না। ঐ ছবিতে আমার একটা রোল আছে। স্যার যাই স্নামালিকুম।

আনিস চলে গেল। দীর্ঘ সময় সোবাহান সাহেব মূর্তির মত রইলেন। তাঁর মন আনিসের কথায় সায় দিচ্ছে। তিনি আসল সমস্যা ধরতে পারেন নি। নকল সমস্যা নিয়ে মাতামাতি করছেন। দেশের লোক যদি খেতেই না পারে তাহলে কি হবে মাছের চাষ বাড়িয়ে?

 

হে মাছ ছবির অন লোকেসন রিহার্সেল শুরু হয়েছে। জায়গাটা হচ্ছে বুড়িগঙ্গার পার। বেশ নিরিবিলি। সঙ্গে ক্যামেরা নেই বলে লোকজন জড়ো হয়নি।

ফরিদের মাথায় ক্রিকেট আম্পায়ারদের টুপীর মত সাদা একটা টুপী। সত্যজিৎ রায় না কি এরকম একটা টুপী পরে সুটিং করেন। ফরিদের হাতে কালো একটা চোঙ। এই চোঙের মাধ্যমে নৌকায় বসা ডাক্তার এবং কাদেরের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে। ডাঙায় আছে মিলি, বিলু এবং আনিস। আনিসের বাচ্চা দুটিও আছে। এরা মনের আনন্দে ছুটাছুটি করছে।

নৌকায় ডাক্তারকে খুব নার্ভাস দেখাচ্ছে। তার হাতে একটা জাল। গোল করে জাল ফেলার প্র্যাকটিস সে ভালই করছে। জাল এখন সে ফেলতে পারে। তবে নৌকা দুলছে, দুলুনির মধ্যে জাল ঠিক মতো ফেলতে পারবে কিনা। এই নিয়ে সে চিন্তিত। ডাক্তারের পরনে জেলের পোশাক তবে চুল এখনো ছাটা হয়নি। কাদের বৈঠা নিয়ে বসে আছে। তাকে উৎফুল্ল মনে হচ্ছে। ফরিদের নির্দেশে তারা নৌকা ছেড়ে দিল। নৌক মাঝ নদীতে যাবার পর অভিনয় হবে। ডাক্তার ভীত গলায় বলল, কাদের ভয় লাগছে।

কাদের বলল, ভয়ের কি আছে ডাক্তার সাব? উপরে আল্লাহ নিচে মাডি।

মাটি কোথায়? নিচে তো পানি।

একই হইল। আল্লাহর কাছে মাডি যা, পানিও তা। আল্লাহর চোউখ্যে সব সমান।

সাঁতার জানি না যে কাদের। সাঁতার আমিও জানি না ডাক্তার সাব। মরণতো একদিন হইবই। অত চিন্তা করলে চলবে না। পানিতে ড়ুইব্যা মরার মজা আছে।

ডাক্তার বিস্মিত হয়ে বলল, মরার মধ্যে আবার কি মজা?

শহীদের দরজা পাওয়া যায়। হাদিস কোরানের কথা।

শহীদের দরজার আমার দরকার নেই কাদের। নৌকা এত দুলছে কেন?

ডাঙ্গা থেকে চোঙ মারফত ফিরিদের নির্দেশ ভেসে এল–ডাক্তার স্টার্ট করে দাও-রেডি ওয়ান-টু-এ্যাকসান।

এ্যাকসানে যাবার আগেই দৃশ্য কাট হয়ে গেল। ফরিদ বাজখাই গলায় চেঁচিয়ে উঠল— কাট, কাট, এই হারামজাদা কাদের চশমা পরেছিস কেন? খোল চশমা।

কাদের চশমা খুলল। সে খুব শখ করে চশমা পরেছিল।

এ্যাকসান। ডাক্তার তুমি বিষণ্ণ চোখে আকাশের দিকে তাকাও। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেল। আবার তাকাও আকাশের দিকে। গুড। কাদের তুই কানের ফাঁকে রাখা বিড়ি ধরা। গুড। পানিতে থুথু ফেল। পুরো ব্যাপারটা ন্যাচারেল হতে হবে। ডাক্তার তুমি জলকে তিনবার সালাম কর। গুড। ভাল হচ্ছে। এই বার জাল ফেলা।

ডাক্তার জাল ফেলল। আশ্চর্য কাণ্ড পানিতে শুধু জাল পড়ল না,জালের সঙ্গে খুবই স্বাভাবিক ভঙ্গিতে ডাক্তারও পড়ে গেল। জাল এবং ডাক্তার দুই-ই মুহুর্তের মধ্যে অদৃশ্য, ব্যাপারটা ঘটল চোখের পলকে।

কাদের বিড় বিড় করে বলল, বিষয় কিছুই বুঝলাম না।

ফরিদ হতভম্ব।

মিলি বলল, মামা ডাক্তার তো ড়ুবে গেছে।

ফরিদ থমথমে গলায় বলল, তাইতো দেখছি। এই গাধা কি সাঁতারও জানে না? গরু গাধা নিয়ে ছবি করতে এসে দেখি বিপদে পড়লাম।

ডাক্তারের মাথা ভূস করে ভেসে উঠল। কি যেন বলে আবার ড়ুবে গেল। আবার ভাসল, আবার ড়ুবল। ফরিদ বলল, ছেলেটাতো বডড যন্ত্রণা করছে।

আনিস চেঁচিয়ে বলল, ডাক্তার মরে যাচ্ছে। আমি সাঁতার জানি না। সাঁতার জানা কে আছেন? কে আছেন সাঁতার জানা?

কুপকুপ করে দুবার শব্দ হল। বিলু এবং মিলি দুজনই পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে ড়ুবন্ত ডাক্তারের দিকে। ফরিদ চমৎকৃত। এই মেয়ে দুটি সাঁতার শিখল কবে?

আবার ঝুপ ঝুপ শব্দ। টগর এবং নিশাও পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ওদের তুলে আনার জন্যে আনিস এবং ফরিদকেও পানিতে লাফিয়ে পড়তে হল।

ডাক্তারের জ্ঞান ফিরল হলি ফেমিলি হাসপাতালে। সে ক্ষীণ স্বরে বলল, আমি কোথায়?

মিলি বলল, আপনি হাসপাতালে।

কেন?

ফরিদ বিরক্ত গলায় বলল, উজবুকটাকে একটা চড় লাগাতো। আবার জিজ্ঞেস করে কেন? ফাজিল কোথাকার।

ডাক্তার ক্ষীণ গলায় বলল, আমি কি এখনো বেঁচে আছি?

<

Humayun Ahmed ।। হুমায়ূন আহমেদ