রাত দুটো পঁচিশ মিনিটে বেন ওয়াটসনকে ডেকে তোলা হল। কারারক্ষী বলল, জেল ওয়ার্ডেন আপনার সঙ্গে দেখা করতে চান, বিশেষ প্রয়োজন। বেন ওয়াটসন গম্ভীর হয়ে রইল, কিছু বলল না।

আপনাকে এক্ষুনি যেতে হবে।

তাঁর সঙ্গে আমার এমন কোনো জরুরি কথা থাকতে পারে না যে আমাকে রাত-দুপুরে তাঁর কাছে যেতে হবে।

আপনাকে যেতে হবে। দয়া করে তর্ক করবেন না।

বেন ওয়াটসন উঠে পড়ল। প্রায় ছ ফুট লম্বা একটি মানুষ। আড়াই শ-তিন শ পাউন্ড ওজন—যে-কারণে তাকে রোগা দেখায়। এর চোখ দুটি বড়-বড় এবং আশ্চর্য রকমের কালো। চোখের দিকে তাকালে এই মানুষটি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারণা হওয়া খুব স্বাভাবিক। তাকে যারা ঘনিষ্ঠভাবে চেনে, তারা এই ভুল করে না।

মিঃ বেন ওয়াটসন।

হ্যাঁ।

কফি খাবেন?

দুপুর-রাতে আমি কফি খাই না।

লম্বা একটি জার্নি করবেন। গরম কফির কথা সেজন্যেই বলছি।

ওয়াটসন তাকিয়ে রইল।

আপনি রওনা হবেন খুব শিগগিরই।

কোথায়?

মিসিসিপি পেনিটেনশিয়ারি।

কারণ?

আমি কিছু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আদেশে এ-কাজ করছি। স্টেট ডিপার্টমেন্টের কিছু কর্তাব্যক্তি আছেন। এঁদের এক জন আপনার সঙ্গে যাবেন।

আমি এমন একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তা জানা ছিল না।

আমার নিজেরও জানা ছিল না। সিগারেট নিন।

আমি সিগারেট খাই না।

কফি? কফির কথা বলব?

এক বার তো বলেছি, রাত-দুপুরে আমি কফি খাই না।

ওয়ার্ডেন সিগারেট ধরাল। তার চোখ কৌতূহলে চিকমিক করছে।

মিঃ ওয়াটসন।

বলুন।

আপনাকে নিয়ে যাওয়া হবে আর্মার্ড গাড়িতে। মাঝপথে গাড়ি ভেঙে আপনি পালাবেন।

তার মানে?

মানে খুব সহজ, মিঃ ওয়াটসন। স্টেট ডিপার্টমেন্ট চাচ্ছে আপনি পালিয়ে একটি বিশেষ মানুষের কাছে যাবেন। কাজেই এমন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, যাতে আপনি তা করতে পারেন।

স্টেট ডিপার্টমেন্টের হাতে এতটা ক্ষমতা, আমার জানা ছিল না।

আমার নিজেরো জানা ছিল না মিঃ ওয়াটসন।

বেন চুপ করে রইল। সে কথাবার্তা খুব কম বলে। তার ওপর তার ঘুম পাচ্ছে। ওয়ার্ডেন নিচু গলায় বলল, যে-লোকটির সঙ্গে আপনাকে যোগাযোগ করতে হবে, তার নাম তো জানতে চাইলেন না!

নাম অনুমান করতে পারছি–ফকনার। একমাত্র ফকনারের মাথায়ই এজাতীয় পরিকল্পনা খেলে।

উনি কি আপনার বন্ধু?

আমাদের দুজনারই কোনো বন্ধু নেই। তিনটা বাজছে, এখন কি আমরা রওনা হব?

নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই।

 

পেনিটেনশিয়ারির আর্মার্ড ভেহিকেল ছুটে চলছে হাইওয়ে ফিফটি নাইন দিয়ে। অন্ধকারে বেন ওয়াটসন বসে আছে চুপচাপ। এক জন অল্পবয়স্ক নার্ভাস ধরনের যুবক পরিকল্পনাটি তাকে ব্যাখ্যা করবার চেষ্টা করছে। বেন ওয়াটসনের ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে না সে কিছু শুনছে। তরুণটি মৃদুস্বরে বলল, আপনি কি আমার কথা বুঝতে পারছেন?

না।

আমি কি আবার গোড়া থেকে বলব?

না। আমার ঘুম পাচ্ছে, আমি এখন ঘুমুব। সময় হলে আমাকে ডেকে তুলবেন। তরুণটি চুপ করে গেল।

কিছুক্ষণের মধ্যেই বেন ওয়াটসন নাক ডাকাতে লাগল। তরুণটি বিড়বিড় করে নিজের মনে কী যেন বলল। একা-একা বসে থাকতে তার কেমন জানি ভয় করছে। গাড়ির ভেতরটা বড় অন্ধকার। এখান থেকে বাইরে কী হচ্ছে, কিছুই বোঝার উপায় নেই। তার চেয়েও বড় কথা, অদ্ভুত এক মানুষ তার সহযাত্রী, যে দিব্যি নিশ্চিন্তে ঘুমুচ্ছে। তরুণটি খুখুক করে কাশতে লাগল।

<

Humayun Ahmed ।। হুমায়ূন আহমেদ