সারারাত বৃষ্টিতে ভেজার ফল ফলেছে। মতি জ্বরে অর্ধ-চেতন। শীতে তার শরীর কাপছে। গায়ে পাতলা চাদর ছাড়া কিছু নেই। চাদরে শীত মানছে না। পানির তৃষ্ণায় বুক ফেটে যাচ্ছে। ঘরে পানিও নেই। কলসি ঠনঠন করছে। মতির মনে হচ্ছে, কিছুক্ষণের মধ্যেই সে মারা যাবে। জনমানবহীন এই বাড়িতে মতির বাস করা ঠিক না। মরে পড়ে থাকলেও তৎক্ষণাৎ কেউ কিছু জানবে না। শূন্য ঘরবাড়িতে মতির বাস করার কোন ইচ্ছা নেই, তাকে বাধ্য হয়ে থাকতে হচ্ছে। বাপ-দাদার ভিটা—মানুষ না থাকলে অকল্যাণ হয়। শূন্য ভিটায় পূর্বপুরুষরা হাঁটাহাঁটি করেন, দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলেন। মতি মাঝরাতে এই জাতীয় দীর্ঘ নিঃশ্বাস শুনেছে।

মতির বাড়ি এক সময় ছিমছাম সুন্দর ছিল। এখন ভগ্নদশা। দক্ষিণের ঘরের অর্ধেকটা গত কালবৈশাখীতে উড়ে গেছে। উড়ে যাওয়া অংশ খুঁজে পাওয়া গেলেও ঠিক করা হয়নি। বাংলোঘরও বাসের অযোগ্য। চালের খড় বদলানো হয়নি। পুরানো খড় পঁচে-গলে গেছে। মধ্যের ঘরটা কোন মতে ঠিক আছে। এই ঘরটা টিনের। মতির বাবা ইদরিছ মিয়ার মৃত্যুর আগে আগে ভীমরতির মত হল। ধানী জমি পুরোটা বিক্রি করে টিনের ঘর তুললেন। নেত্রকোনা থেকে কারিগর এনে ঘরের ভিটা পাকা করালেন। বাড়ির পিছনে টিউবওয়েল বসালেন। ছেলে বিয়ে-শাদী করবে। নতুন বউ এসে উঠবে টিনের ঘরে। পাকা ভিটিতে গরমকালে গা এলিয়ে শুবে। নিজের চাপকলে পানি তুলবে। পানির জন্য অন্য বাড়িতে যেতে হবে না। নতুন বৌয়ের তো একটা ইজ্জতের ব্যাপার আছে। বাপের দেশে গিয়ে বড় গলায় বলতে পারে স্বামীর বাড়িতে টিনের ঘর আছে। নিজেদের চাপকল আছে। এই কথা বলতেপ কত আনন্দ। ইদরিছ মিয়া ছেলের বিয়ে না দিয়েই মরে গেলেন। গ্রামের মানুষ মতিকে ধরল–বাপের বেজায় শখ ছিল তোমার বিবাহ দিবে–এখন বিয়েশাদী করে সংসারধর্ম করো। সংসারধর্ম বড় ধর্ম।

মতি বিস্মিত হয়ে বলল, বৌরে আমি খাওয়ামু কি? সামান্য জমি যা ছিল বাপজান বেচে টিনের ঘর করল। পানির কল দিল। পানি খাইয়া তো মানুষ বাঁচে না।

কাজকর্মের চেষ্টা দেখ।

কাজকর্ম জানি কি যে চেষ্টা দেখুম?

অসুখ-বিসুখ হলে শুধু পুরানো কথা মনে হয়। বাপজানের কথা মনে হওয়ায় মতির মন হঠাৎ খানিকটা খারাপ হয়ে গেল। বড় দুঃখী ছিল মানুষটা—বেচারার জন্যে যেন বেহেশত নসিব হয়।

জ্বরে মতির শরীর কাঁপছে। বিছানায় শুয়ে থাকলে জ্বর আরও বাড়বে। জ্বর এমন জিনিশ প্রশ্রয় পেলেই হু হু করে বাড়তে থাকে। ভালবাসা এবং জ্বর–এই দু জিনিশ প্রশ্রয় পেলে বাড়ে। এই বিষয়ে একটা গান থাকলে ভাল হত। মতি গান বাধতে পারে না। গান বাধতে পারলে এটা নিয়ে সুন্দর গান বেঁধে ফেলত। তার মাথায় নানান বিষয় নিয়ে সুন্দর সুন্দর গান বাঁধার ইচ্ছে করে। ক্ষমতা নেই বলে বাঁধতে পারে না। আল্লাহপাক সবাইকে সব ক্ষমতা দেন না।

মতি বিছানা থেকে নামল। উঠানের জলচৌকিতে কিছুক্ষণ বসল। মাথা ঘুরছে সামলে নিতে হবে। মাথা ঘুরে উঠানে পড়ে গেলে জ্বর ভাববে তার জিত হয়েছে, সে লাই পেয়ে মাথায় উঠে যাবে। তখন ডাক্তার আন রে, মাথায় পানি দাও রে…

পানির পিপাসায় বুক এখন ধড়ফড় করছে। ডাকলে যে কেউ আসবে সে উপায় নেই। তার ঘর পড়ে গেছে গ্রামের এক মাথায়। বেশ কিছুক্ষণ হাঁটলে কুসুমদের বাড়ি। কোন মতে সেই বাড়িতে উপস্থিত হলে সেবা-যত্নের ত্রুটি হবে না! কুসুম তাকে দুচোখে দেখতে পারে না। তবুও সে অসুস্থ মানুষটাকে ফেলে দেবে না। কুসুমের বাপ মোবারক চাচা তাকে স্নেহ করেন। গত ঈদে সূতীর একটা পাঞ্জাবি কিনে পাঠিয়ে দেন। পাঞ্জাবিটা গায়ে ছোট হয়েছে। সেটা কোন কথা না, একজন দিয়েছে আদর করে। আদরটাই বড়। কুসুমের বাড়ি যাওয়া কি ঠিক হবে? মেয়েছেলের কেটকেটানী কথা শুনতে কার ভাল লাগে? আর একটু এগুলেই মজিদের দোকানঘর। মজিদ নতুন মুদির দোকান দিয়েছে। দোকান চলছে না। নগদ পয়সা ছাড়া মজিদ কিছু বেচে না। কার ঠেকা পড়েছে নগদ পয়সায় সওদা করার? গ্রামের মানুষ দোকান করেছে–বাকিতে জিনিশ দেবে, ধানের সময় হিসেবমত ধান নিয়ে নেবে। মজিদ ধানের ধার ধারে না–তার নাকি নগদ ব্যবসা।

মজিদ দোকান খুলে একা একা চুপচাপ বসে থাকে। কাঁচের বৈয়ম ভরতি তালমিছরি। মাঝে মাঝে তালমিছরির টুকর। মুখে ফেলে দেয়।

মতি মজিদের দোকানের একপাশে শুয়ে থাকবে সাব্যস্ত করল। পথে কুসুমের বাড়িতে থামবে–পানি খেয়ে যাবে। কুসুমের বাবা অনেকদিন বাইরে, উনার কোন খোঁজ খবর আছে কিনা তাও জানা দরকার।

কুসুমের বয়স কুড়ি হয়েছে। এই বয়সে গ্রামের মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায়–কুসুমের হচ্ছে না। সম্বন্ধই আসছে না কেন আসে না সেও এক রহস্য। তার গায়ের রঙ শ্যামলা–গরীব ঘরের বিয়েতে মেয়ের গায়ের রঙ তেমন প্রাধান্য পায় না। কুসুম দেখতে সুন্দর। চেহারার অতি কোমল ভাব অবশ্যি তার স্বভাবে নেই। তার জন্য কোন মেয়ের বিয়ে আটকে থাকে না। কুসুমের আটকে আছে। মনগড়ের পীর সাহেবের হলুদ সুতা গলায় বাঁধার পরও সম্বন্ধ আসছে না। মনগড়ের পীর সাহেবের সুতা গলায় দেয়ার এক মাসের ভেতর সম্বন্ধ আসার কথা। সব সময় আসে।

মতিকে দেখে কুসুম চোখ কপালে তুলে বলল, আফনের হইছে কি?

মতি উদাস গলায় বলল, কিছু হয় নাই। পানি খাব।

চউক করমচার মত লাল–হইছে কি? জ্বর?

না। পানি দেও দেখি।

পানি দিমু ক্যামনে? হাত বন্ধ দেহেন না?

কুসুমের হাত ঠিকই বন্ধ। মাটিগোবর মিশিয়ে মশলা বানাচ্ছে। ঘর লেপা হবে। কুসুমের পরনে সবুজ রঙের শাড়ি। মাথায় লম্বা চুল গাইনবেটিদের মত চুড়ো খোপা করা। সকালের রোদ পড়েছে তার চোখে-মুখে। কি সুন্দর তাকে লাগছে!

মতি বলল, পানির পিয়াস লাগছিল। ঘরে আর কেউ নাই?

না?

আইচ্ছা তাহলে যাই।

বসেন। হাতের কাম শেষ করি–তারপর পানি দেই…

থাউক দরকার নাই।

গোস্বা হইলেন?

না–গোস্বা হব কেন? গোস্বা হওয়ার মত তো কিছু বল নাই।

ভাব দেইখ্যা মনে হয় গোস্বা হইছেন।

ভাব দেইখ্যা কিছু বোঝা যায় না কুসুম। মানুষের অন্তরের ভাব বড়ই জটিল। সে নিজেই জানে না, অন্যে কি জানব।

কুসুম মুখ টিপে হাসছে। মতি দুঃখিত গলায় বলল, হাস কেন?

বড় বড় জ্ঞানের কথা শুইন্যা হাসি। ছাগল ব্যা কইরা ডাক দিলে ভাল লাগে, আদর করতে মন চায়। ছাগল যখন হালুম ডাক দেয় তখন ভয় লাগে না–হাসি লাগে।

খুবই অপমানসূচক কথা। মতি অণমান গায়ে মাখল না–প্রসঙ্গ পাল্টাবার জন্য বলল, মোবারক চাচার খবর কিছু পাইছ?

না।

চিডিপত্র?

উঁহু।

বল কি! চিন্তার বিষয় হইল। যাই কুসুম, পরে খোঁজ নিব।

মতি চলে যাচ্ছে। কেমন টলতে টলতে যাচ্ছে। কুসুমের খুব মায়া লাগছে। হাত বন্ধ থাকার জন্য সে যে পানি দিচ্ছিল না–তা না। কুসুম এই কথাটা বলেছিল যাতে মতি কিছুক্ষণ বসে। পানি এনে দিলে তো পানি খেয়ে চলেই যাবে।

মেয়ে হয়ে জন্মানোর অনেক যন্ত্রণার একটা হল–মনের কথা বলা যায় না। মনের কথা বলার নিয়ম থাকলে অনেক আগেই কোন এক চান্নিপসর রাতে কুসুম উপস্থিত হত মতির বাড়িতে। মতি অবাক হয়ে দরজা খুললে হাসিমুখে বলত, তারপর অধিকারী সাব, আফনের সংবাদ কি?

মতি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে থাকত–কুসুম বলত, কি সুন্দর চান্নিপসর দেখছেন? মতি আমতা আমতা করে বলত–তুমি অত রাইতে, বিষয় কি?

কুসুম বলত, আফনের ঐ গানটা শুননের খুব ইচ্ছা হইল–চইলা আসলাম।

কোন গান?

কুসুম তখন গুন গুন করে গাইত—

তুই যদি আমার হইতি
আমি হইতাম তোর।
কোলেতে বসাইয়া তোরে করিতাম আদর…

মতি অবাক হয়ে বলত–তোমার গলা তো বড় সৌন্দর্য কুসুম।

হ্যাঁ, কুসুমের গলা অনেক সৌন্দর্য। মতি সেটা জানে না। মেয়েছেলে হয়ে তো সে গানে টান দিতে পারে না। মেয়েছেলে গানে টান দিলে সাথে সাথে জ্বীনের আছর হয়। সংসারে অমঙ্গল হয়। পুরুষছেলে গানে টান দিলেই সংসার টিকে না–এই যে মতি ভাল ছিল, সুখে ছিল, যেই গানের টান দিল ওমি সব গেল। ঘর নাই, বাড়ি নাই, সংসার নাই।

কুসুমের প্রায়ই ইচ্ছা করে, যদি শুধু সে আর মতি মিলে একটা গানের দল দিত! আর কেউ না, শুধু তারা দুজন।

কুসুমের মা মনোয়ারা ঘরের ভেতর থেকে ঝাঝালো গলায় ডাকলেন, কুসুম, ও কুসুম। কুসুম বিরক্ত মুখে উঠে গেল।

মনোয়ারা তিক্ত গলায় বললেন–ছেলেটা পানি চাইছে, তুই যে দিলি না!

দেখ না হাত বন্ধ। পানি কি দিয়া দিমু? পাও দিয়া?

এটা কেমন কথা! পানি চাইছে–হাত ধুইয়া পানি দিবি। পানি চাইছে পানি পাইল না–এইটা কেমন কথা… সংসারে তুই অলক্ষণ ডাইক্যা আনতেছস।

আনতেছি ভাল করতেছি?

পুষ্প কই? পুষ্প!

পুষ্প কই আমি কি জানি। পুষ্প তো ছাগল না যে দেইখ্যা রাখব।

তোর কথাবার্তা এই রকম ক্যান?

আমি যেমন মানুষ–তেমন কথাবার্তা।

সামনে থাইক্যা যা কুসুম। যা কইলাম। তোরে দেখলে শইল জ্বলে।

কুসুম বাড়ির পেছনের ডোবায় হাত ধুয়ে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ফিরে এসে রান্নাঘরে ঢুকল। মনোয়ারা পেছনে পেছনে ঢুকলেন। কুসুম তেলের শিশি হাতে নিচ্ছে।

যাস কই?

তেল আনতে যাই।

তোর বাপ না তোরে ঘরের বাইর হইতে নিষেধ করছে!

ঘোমটা দিয়া যামু, ঘোমটা দিয়া আসমু। তেল ছাড়া রান্ধা হইব না।

না হইলে না হইব। খবর্দার, তুই ঘরের বাইর হবি না।

কুসুম কিছু বলল না। তার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হল সে যাবেই। মনোয়ারার ইচ্ছা করছে চুলের মুঠি ধরে মেয়েকে আছড়ে উঠানে ফেলে দিতে। সাহস হচ্ছে না। ভয়ংকর জেদী মেয়ে, কি করে বসবে কে জানে!

তোর যে বিয়া হয় না–চালচলনের জন্যে হয় না। সম্বন্ধ আফনাআফনি আসে না–খোঁজখবর নিয়া আসে। তোর খোঁজখবর যা পায়…

কুসুম মার কথা শেষ করতে দিল না। তার আগেই বের হয়ে পড়ল। মজিদের দোকানে তেল আনতে যাচ্ছে। হাতের কাছে দোকান। আগেও অনেকবার গিয়েছে। মজিদ সম্পর্কে চাচাতো ভাই হয়–এমন কিছু ভয়ংকর অপরাধ কুসুম করছে না। তারপরেও মনোয়ারার গা জ্বলে যাচ্ছে। মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না এটা তার কাছে সৌভাগ্যের মত মনে হচ্ছে। যে বিশ্রি স্বভাব কুসুমের হয়েছে, শ্বশুরবাড়ির লোকজন কিছুদিনের মধ্যেই শাড়িতে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে মেরে ফেলবে।

 

কুসুম মজিদের দোকানে তেল আনতে যায়নি। সে মোটামুটি নিশ্চিত মতিকে দোকানেই পাবে। জ্বর যা এসেছে তাতে দোকানের একপাশে লম্বা হয়ে শুয়ে থাকার কথা। পানি খেয়েছে কি-না কে জানে। জ্বরে পিয়াসের পানি না পেলে শরীর চড়ে যায়।

মতি দোকানে ছিল না। মজিদ একা তালমিছরি মুখে দিয়ে বিরস মুখে বসে আছে। কুসুমকে তার বেশ পছন্দ। বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে না, কারণ গরীব ঘরের মেয়ে, একে বিয়ে করলে কিছুই পাওয়া যাবে না। সৌন্দর্য দিয়ে কি হয়–দু-তিনটা ছেলেপুলে হলেই সৌন্দর্য শেষ। সময়ের সঙ্গে সব নষ্ট হয়, শুধু টাকাপয়সা নষ্ট হয় না। টাকাপয়সা বাড়ে। তেলের শিশি এগিয়ে দিতে দিতে কুসুম বলল, মতি ভাইরে দেখছেন?

মজিদ সেই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলল, তেল কতখানি দিমু?

তিন আঙ্গল।

আঙ্গুলের হিসাব আমার দোকানে নাই। হয় এক ছটাক নাও, নয় এর কমে আধা ছটাক।

তিন আঙ্গুলে যতদূর হয় দেন–মতি ভাইরে দেহেন নাই?

দেখছি, পানি খাইতে আইছিল। আমি পানির মটকি নিয়া দোকানে বসছি? তেল দিলাম এক ছটাক। নগদ পয়সায় খরিদ করণ লাগব। টেকা আনছ?

কুসুম নিঃশব্দে শাড়ির আঁচল থেকে পাঁচ টাকার একটা নোট বের করে দিল। কুসুমের মন খুবই খারাপ হয়েছে। চোখে পানি এসে যাচ্ছে। যত তাড়াতাড়ি দোকানের সামনে থেকে চলে যেতে পারে ততই মঙ্গল।

মতি ভাই গেছে কোনদিকে জানেন?

না। দোকান লইয়া কুল পাই না–কে কোনদিকে গেছে অত খোঁজ ক্যামনে রাখব?

আফনের দোকানে তো মাছিও বসে না, অত বড় গলার কথা বেহুদা কন ক্যান?

ঝাঁঝালো ধরনের কথা বলায় কুসুমের লাভ হয়েছে–ভেজা চোখ শুকিয়ে আসছে।

মজিদ বলল, তালমিছরি খাইবা?

মাগনা দিলে খামু। দেন।

মজিদ এক টুকরা তালমিছরি দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে মনটা খারাপ করল। অকারণে মিছরি খরচ হয়ে গেল। কোন দরকার ছিল না।

মতি ভাইয়ের একটা খোঁজ নিতে পারলে ভাল লাগত। কিভাবে খোঁজ পাওয়া যায়? পুষ্প সকাল থেকেই নেই–সে থাকলে তাকে পাঠানো যেত। এইসব কাজে পুষ্প খুব সেয়ানা…।

কুসুম ক্লান্ত পায়ে ফিরছে। মজিদের সঙ্গে ঝাঁঝালো ধরনের কথা বলেও বিশেষ লাভ হয়নি। কুসুমের চোখ আবার ভিজে আসছে। যা করতে চায় না সব সময় সে সেই কাজটাই কেন করে? সবসময় সে ঠিক করে রাখে পরেরবার মতি ভাইয়ের সঙ্গে যখন দেখা হবে তখন খুব ভাল ব্যবহার করবে। এত ভাল যে মতি ভাইকে চিন্তায় পড়ে যেতে হয়। কখনো তা করা হয় না। সে সম্পূর্ণ উল্টোটা করে। কেন সে এরকম হল? কেন? পানি চেয়েছিল, দিয়ে দিলেই হত। পানির গ্লাস হাতে দিয়ে সে তো বলতে পারত–জ্বর নিয়া কই যাইবেন বইস্যা যান। তাদের বাংলোঘর বলে কিছু নেই–বাংলোঘর থাকলে সেখানে কি করে দিতে পারত। অসুস্থ মানুষ শুয়ে থাকত বিছানায়।

<

Humayun Ahmed ।। হুমায়ূন আহমেদ