আজ বুধবার। বড় মামা হোটেলে চলে যাবেন। তার সঙ্গে কী সব যাবে তা আলাদা করা হচ্ছে। মামা ট্রাংক এত হালকা কেন দেখার জন্য তালা খুলেছেন। ট্রাঙ্ক খুলে তার জবান বন্ধের মতো হয়ে গেল। শূন্যট্রাংকে সকিনার এক জোড়া স্যান্ডেল এবং মামার টেবিলের ড্রয়ারে রাখা কনডমের প্যাকেট। এই যা, কিসের প্যাকেট বলে ফেলেছি। সরি।

মামা প্রথমেই আমাকে ডেকে পাঠালেন। থমথমে গলায় বললেন, আমার ট্রাংক কে খুলেছে?

আমি বললাম, তোমার ঘর তালা দেওয়া, ট্রাংক তালা দেওয়া। চাবি তোমার কাছে। কে খুলবে?

মামা বললেন, জরুরি সব কাগজপত্র, জমির দলিল ছিল ট্রাংকে, কিছুই নেই–আছে এক জোড়া স্যান্ডেল।

কার স্যান্ডেল মামা?

কার স্যান্ডেল আমি জানব কীভাবে? এই যে স্যান্ডেল।

আমি বললাম, মনে হচ্ছে সকিনার স্যান্ডেল। ওকে ডেকে জিজ্ঞেস করি?

মামা মূর্তির মুখ করে বসে রইলেন। সকিনা এসে স্যান্ডেল শনাক্ত করল। তার মুখ আনন্দে উদ্ভাসিত। সে বলল, আপনার এইখানে স্যান্ডেল! আমি কয়দিন ধইরা খুঁজতেছি।

মামা বললেন, তুই আমার ট্রাংকে তোর স্যান্ডেল রেখেছিস?

সকিনা বলল, তুই তুকারি করেন ক্যান?

মামা বললেন, থাবড়ায়ে তোর দাঁত ফেলে দেব হারামজাদি। তুই আমার ট্রাংক খুলেছিস?

সকিনা বলল, হারামজাদি ডাকা শুরু করছেন। রাইতে যখন ঘরে ডাইকা মহব্বত করেন, তখন হারামজাদি ডাক কই ছিল?

মামা বললেন, মাগি চুপ!

সকিনা বড় মামার গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিল। অকল্পনীয় দৃশ্য। আমি ছুটে ঘর থেকে বের হলাম। মাকে বললাম, ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটছে মা। গাইলান চলে এসেছে। বাবাকে আজান দিতে বলো।

কী বলছিস তুই!

আমি বললাম, গাইলান সকিনার ওপর ভর করছে। এই কারণে সকিনা বড় মামার গালে চড় দিয়েছে। একটু আগে দেখেছি সকিনা হাতে স্যান্ডেল নিয়েছে, মনে হয় বড় মামাকে স্যান্ডেল দিয়ে মারবে।

ঘটনা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সকিনা ক্রমাগত চেঁচাচ্ছে। আমারে বিয়া করণ লাগব। বিয়া না করলে আমি ছাড়ুম না। পত্রিকায় নিউজ দিমু। বলুম, আমার পেটে সন্তান। আমি গফরগাঁয়ের মেয়ে। আমারে চিনে না। আফনেরে মামা ডাকি। মামা এমুন হয়?

মা কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন, সকিনা, এইসব কী বলছিস!

সকিনা বলল, আফনের ভাইজানেরে জিগান কী বলতেছি। যদি প্রমাণ হয় আমি মিথ্যা বলেছি, তাইলে আমি মামার কাঁচা গু খামু।

বড় মামা বললেন, তুই এক্ষুনি বের হ। বেশ্যা মাগি। মানুষকে বিপদে ফেলে ব্ল্যাকমেইলের চেষ্টা। যা তুই পত্রিকাওয়ালাদের খবর দে!

সকিনা স্যান্ডেল নিয়ে ঝড়ের বেগে বের হয়ে গেল। পরিস্থিতি সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা হওয়ার কথা। তা হলো না। বড় মামা বললেন, আমার বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমি শিশি খাওয়া পাবলিক না। আমি বুঝি।

বাবা বললেন, কী ষড়যন্ত্র? কে করছে?

বড় মামা বললেন, ষড়যন্ত্র করছে তোমার মেয়ে। আমার ঘরে রক্ত ফেলে রাখা, সকিনার স্যান্ডেল ট্রাংকে ভরে রাখা–সব তার কাজ। আমার জমির দলিল চুরি করা হয়েছে। এই বাড়ি আমি তন্নতন্ন করে খুঁজব।

বাবা বললেন, অবশ্যই খুঁজবেন। আপনার সঙ্গে আমিও খুঁজব। জমির দলিল হারানো সহজ কথা! ছিঃ ছিঃ কী কেলেঙ্কারি!

বাড়ি তন্নতন্ন করে খুঁজেও দলিলপত্রের কোনো হদিস পাওয়া গেল না। বড় মামা বললেন, কাগজপত্র কোথায় আছে আমি জানি।

বাবা বললেন, কোথায়?

বড় মামা বললেন, তোমার মেয়ে কাগজপত্র রেখেছে বাড়িওয়ালা আহসান সাহেবের কাছে।

বাবা বললেন, তার কাছে কাগজ রাখবে কেন?

বড় মামা বললেন, আমি শিশি খাওয়া লোক না। আমি সব বুঝি।

মা বললেন, কী বুঝেন?

বড় মামা বললেন, তোমার এই মেয়ে আহসান সাহেবের রক্ষিতা। আহসান সাহেব এই মেয়ের জন্যে ঘর খামাখা সাজায়ে দেন? ফ্রি লাঞ্চ বলে জগতে কিছু আছে? জেনেশুনে মেয়েকে দিয়ে বেশ্যাবৃত্তি। ছিঃ ছিঃ!

কথাবার্তার এই পর্যায়ে মা মাথা ঘুরে মেঝেতে পড়ে গেলেন।

হতভম্ব বাবা, বড় মামার দিকে তাকিয়ে আছেন। মা যে মাথা ঘুরে পড়ে গেছেন সেদিকে তার লক্ষও নেই।

ঘরে আমি আর মা। অনেক কষ্টে মাকে বিছানায় তুলেছি। বাবা এবং বড় মামা ব্যস্ত দ্বিতীয় দফা জমির দলিল অনুসন্ধানে। এখন আমার রুমে অনুসন্ধান চলছে। বড় মামা বেতের চেয়ারে বসে আছেন, বাবা খুঁজে বেড়াচ্ছেন।

সকিনা আবার ফিরে এসেছে। বাড়ির সামনে রাস্তার ওপাশে দাঁড়িয়ে দুনিয়ার নোংরা কথা বলে যাচ্ছে। প্রতিমা শুনলে খুব মজা পেত। সকিনাকে ঘিরে জনতার যে অংশ দাঁড়িয়েছে তারা খুবই মজা পাচ্ছে। অনেকেই দেখি মোবাইল ফোন উঁচু করে সকিনার ভিডিও করছে। তাকে ঘিরে ভিড় যেভাবে বাড়ছে তাতে মনে হয় কিছুক্ষণের মধ্যে ট্রাফিক জ্যাম লেগে যাবে। সকিনার কথাবার্তার কিছু নমুনা।

ওই মামা। তুই আমারে কী করছস? সব পাবলিকরে বলব। পাবলিক তুরে কাঁচা খাইয়া ফেলব। টান দিয়া তোর … ছিঁড়ব। তখন কী করবি? কারে …?

.

মা কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন, কী হচ্ছে রে?

আমি বললাম, নাটক হচ্ছে। এই নাটকে আমরা যার যার অংশে অভিনয় করে যাচ্ছি। তোমার ভূমিকা হলো মৃত সৈনিকের। তুমি চুপচাপ শুয়ে থাকো।

মা বিড়বিড় করে কী যেন বললেন। আমি বললাম, সত্যি কথা বলো তো, তুমি বড় মামাকে বাড়ির ওয়ারিশ ছেড়ে দিয়েছ, এমন দলিল কেন করলে? মহৎ সাজার জন্যে? মা, আমরা কেউ মহৎ না।

মা বললেন, ওই দলিলের কথা তুই জানলি কীভাবে? তোকে কে বলেছে?

আমি বললাম, জ্বিন গাইলান এসে বলে গেছে মা।

মা বললেন, তোর মামার ট্রাংক তুই খুলেছিস?

না। গাইলান খুলেছে। ওই প্রসঙ্গ থাক, তুমি রেস্ট নাও।

.

অনুসন্ধান পর্ব সমাপ্ত। বাবা ক্লান্ত শুকনা মুখে চেয়ারে বসে আছেন। বড় মামা বললেন, আমি আহসান বদটার ঘর পরীক্ষা করব। আমি ছাড়ব না। তোমরা চলো আমার সাথে। তোমাদের সামনে মোকাবেলা হবে। লুকাছাপার মধ্যে আমি নাই। লিপি! তুইও চল আমাদের সঙ্গে।

 আমি, বাবা আর বড় মামা আহসান সাহেবের ঘরে উপস্থিত হলাম। বাবা ক্রমাগত চোখের পানি মুছছেন। বড় মামার চোখমুখ শক্ত। শুধু আমি শান্ত। আহসান সাহেব অবাক হয়ে বললেন, কী ব্যাপার?

বড় মামা বললেন, আমার কিছু জরুরি কাগজপত্র চুরি হয়েছে। আমার ভাগ্নি লিপি চুরি করেছে। সে লুকিয়ে রেখেছে আপনার এখানে। কাগজপত্রগুলো না পেলে আমার সর্বনাশ হয়ে যাবে।

আহসান সাহেব শান্ত স্বরে বললেন, লিপি কি বলেছে যে আমার এখানে লুকিয়ে রেখেছে?

বড় মামা বললেন, এখনো স্বীকার করে নি। তবে তার ভাবভঙ্গি এ রকম।

আহসান সাহেব বললেন, অবশ্যই খুঁজে দেখবেন। আমার দিক থেকে কোনো সমস্যা নেই। তবে আমি লিপির সঙ্গে আলাদা কথা বলে জানতে চেষ্টা করি, সে আমার এখানে রেখেছে কি না।

বড় মামা বললেন, জিজ্ঞাস করেন। আমি এখানেই থাকব। আপনার ঘর পরীক্ষা না করে যাব না।

আহসান সাহেব বললেন, অবশ্যই।

আমি এবং আহসান সাহেব ছাদের এক কোনায় এসে দাঁড়িয়েছি। আহসান সাহেবের মুখ হাসি হাসি। হাসি সংক্রামক, কাজেই আমিও হাসলাম। আহসান বললেন, কাগজপত্র চুরি করেছ?

আমি বললাম, হ্যাঁ।

আমার এখানে রেখেছ?

না।

কোথায় রেখেছ?

লেখক হুমায়ুন স্যারের বাসায়। সেখানে মোস্তফা নামের আমার পরিচিত একজন আছে। হুমায়ূন স্যারের পিওন। তাকে রাখতে দিয়েছি।

আহসান সাহেব বললেন, ভেরি স্মার্ট।

আমি বললাম, আপনাকে যে সাংকেতিক চিঠি পাঠিয়েছি তার অর্থ উদ্ধার করতে পেরেছেন?

তিনি বললেন, তুমি কোনো সাংকেতিক চিঠি পাঠাও নি। এলোমেলো কিছু কথা লিখে আমাকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছ।

বিভ্রান্ত হয়েছেন?

আমি বিভ্রান্ত হওয়ার মানুষ না। তোমার বাবা কাঁদছেন কেন?

মনের দুঃখে কাঁদছেন। বড় মামা আমাকে বলেছেন আমি নাকি আপনার রক্ষিতা।

Oh God!

আমি এখন এমন এক কথা বলব যে আপনি আবারও বলবেন, Oh God.

সেটা কী কথা?

 আপনার রক্ষিতা হতে আমার কোনো আপত্তি নেই।

আহসান সাহেব Oh God বললেন না। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে প্রসঙ্গ পাল্টাবার জন্যেই হয়তো বললেন, তোমাদের কাজের মেয়েটা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কুৎসিত সব কথা বলে যাচ্ছে।

আমি বললাম, যা বলছে সবই সত্য।

সত্যি হলেও নোংরা কথা এইভাবে বলা ঠিক না। যে-কোনোভাবেই হোক বন্ধ করা প্রয়োজন।

আমি বললাম, আমি চাই সকিনা নোংরা কথা বলতে থাকুক। সবাই জানুক। আমি আপনাকে না জানিয়ে একটা অন্যায় কাজ করিয়েছি। আপনার ড্রাইভারকে পাঠিয়েছি মাইক ভাড়া করে আনতে। সকিনা যা বলার মাইকে বলবে। আশপাশের সবাই শুনবে।

তিনি এইবার বললেন, Oh God!

.

মাইক চলে এসেছে। মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে সকিনার মধ্যে পলিটিশিয়ান ভাব চলে এসেছে। সে ঘোমটা দিয়ে বসেছে এক রিকশার সিটে। মাইক হাতে নেওয়ায় কথাবার্তা খানিকটা শালীন হয়েছে। এখন এগুচ্ছে শ্ৰেণীসংগ্রামের দিকে। নমুনা

বড় লোকের বড় কথা। গরিবরে দেয় ব্যথা। গরিব কিন্তু ছাড়ব না। গরিব চেতলে কিন্তু খবর আছে। তখন টেকাপয়সা দিয়া পার পাবি না। তোর জিনিস টান দিয়া ছিঁড়ব। কি পাবলিক ভাই, ছিড়বেন না?

জনতার এক অংশ আনন্দের সঙ্গে বলল, ছিঁড়ব। ছিঁড়ব।

.

আহসান সাহেবের ঘরে দলিলের অনুসন্ধান সমাপ্ত হয়েছে। বলাই বাহুল্য, কিছু পাওয়া যায় নি। বড় মামা ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছেন। তার চোখ লাল। তার কপাল ঘামছে। আহসান সাহেব বললেন, আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি। অসুস্থ। আপনার হার্টঅ্যাটাক হচ্ছে। আপনার উচিত কোনো কার্ডিয়াক সেন্টারে চলে যাওয়া।

বড় মামা বললেন, আমাকে উচিত অনুচিত শিখাবেন? আপনি উচিত অনুচিতের কী বোঝেন? আপনি যে আমার নাবালিকা ভাগ্নিকে রক্ষিতা বানিয়ে মজা লুটছেন, এটা কি মিথ্যা? আমি আপনার আগের ড্রাইভার কিসমতের কাছে খোঁজ নিয়েছি। সে বলেছে, প্রায়ই সে লিপিকে স্কুল থেকে নিয়ে সাভারে আপনার বাগানবাড়িতে যেত। এটা কি অস্বীকার করতে পারবেন? লিপি, তুই বল। ড্রাইভার কিসমত তোকে নিয়ে সাভারের বাগানবাড়িতে গেছে না?

আমি বললাম, হ্যাঁ গেছে। রাতে কখনো থাকি নি। দিনে দিনে চলে এসেছি।

আহসান সাহেব অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। বাবাকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি যে-কোনো মুহূর্তে আমার ওপর ঝাঁপ দিয়ে পড়বেন।

আমি মিথ্যা অভিযোগ কেন স্বীকার করে নিলাম? আহসান সাহেবকে ফাঁদে ফেলার জন্যে। এখন আর আমাকে বিয়ে না করে তার উপায় নেই। দাবা খেলায় রাজাকে ঘোড়ার চাল চেক দিয়েছি। ঘোড়া আড়াই ঘর দূর থেকে চাল দেয়। তাকে কাছে আসতে হয় না। বড় মামা সকিনার সর্বনাশ করেছেন, তারপরেও তাকে বিয়ে করার জন্যে সকিনা কখনো বড় মামাকে বাধ্য করতে পারবে না। কারণ তার কাছে ঘোড়া নেই। আমার কাছে আছে।

বাবা আহসান সাহেবের দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন, আহসান, এইসব কী শুনছি?

আহসান সাহেব আমার দিকে তাকালেন। আমি চোখের ভাষায় তাঁকে বললাম, Please marry me. বাংলাদেশের এক মেয়ে ক্রিকেট খেলার মাঠে এরকম কথা প্ল্যাকার্ডে লিখে উঁচিয়ে ধরেছিল। পাকিস্তানি এক ক্রিকেটারকে তার খুব মনে ধরেছিল। প্ল্যাকার্ডে সে লিখেছিল–Afridi, please marry me.

.

মামা বুধবারে বিদায় হলেন। আমি আহসানকে বিয়ে করলাম তার ঠিক দুদিন পর, শনিবারে। আমার বাবা-মা এই বিয়ে মেনে নেন নি। তারা আমাকে ত্যাগ করে চলে গেছেন। বাবার যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। তিনি মনে হয় মুক্তিযুদ্ধে তাঁর সঙ্গে যুদ্ধ করেছে এমন কোনো বন্ধুর বাসায় উঠেছেন। মুক্তিযোদ্ধারা আবার তলায় তলায় রসুনের বোঁটা। একজনের বিপদে আরেকজন ঝাঁপ দিয়ে পড়বে।

বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় বাবা চিৎকার করে বলেছেন জীবনে আমার মুখ দেখবেন না। এইসব বাবার কথার কথা। তিনি সাত দিন আমাকে না দেখে থাকতে পারবেন না। মা আর কিছু বেশি দিন পারবেন। দশ দিন বা এগার দিন। মেয়েরা পুরুষদের চেয়ে কঠিন হয়, এ কথা তো সবাই জানে।

আমার বিয়েতে মোস্তফা ভাইকে দাওয়াত দেওয়ার জন্যে হুমায়ূন স্যারের বাসায় গিয়েছিলাম। হুমায়ূন স্যার ও শাওন ভাবিকে দাওয়াত করার ইচ্ছা ছিল। তারা তো আসবেন না, এইজন্য দাওয়াত করি নি।

খুব সাহস করে হুমায়ূন স্যারকে আমি একটা প্রশ্ন করেছিলাম। ভেবেছিলাম তিনি বিরক্ত হবেন, জবাব দেবেন না। তিনি বিরক্ত হয়েছেন কি না জানি না, তবে আমার প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন। আমার প্রশ্ন ছিল, স্যার, ভালোবাসা আসলে কী?

তিনি বললেন, রবীন্দ্রনাথ যে প্রশ্নের উত্তর দিতে জানেন না, সেই প্রশ্ন আমাকে করেছ কেন?

আমি বললাম, রবীন্দ্রনাথ এই প্রশ্নের উত্তর জানেন না?

তিনি বললেন, না। রবীন্দ্রনাথ নিজেই জানতে চেয়েছেন, সখি ভালোবাসা কারে কয়? তারপরেও আমার ব্যাখ্যাটা বলছি। এটা সম্পূর্ণই আমার নিজের ব্যাখ্যা।

স্যার বলুন।

তিনি বললেন, ভালোবাসা এবং ঘৃণা আসলে একই জিনিস। একটি মুদ্রার এক পিঠে ভালোবাসা আরেক পিঠে লেখা ঘৃণা। প্রেমিক-প্রেমিকার মাঝে এই মুদ্রা মেঝেতে ঘুরতে থাকে। যাদের প্রেম যত গভীর তাদের মুদ্রার ঘূর্ণন তত বেশি। একসময় ঘূর্ণন থেমে যায়, মুদ্রা ধপ করে পড়ে যায়। তখন কারও কারও ক্ষেত্রে দেখা যায়–ভালোবাসা লেখা পিঠটা বের হয়েছে, কারও কারও ক্ষেত্রে ঘৃণা বের হয়েছে। কাজেই এই মুদ্রাটি যেন সব সময় ঘুরতে থাকে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। ঘূর্ণন কখনো থামানো যাবে না। বুঝেছ?

আমি আর্মি অফিসারদের মতো স্যালুট দেওয়ার ভঙ্গি করে বললাম, ইয়েস স্যার। আমার মুদ্রা সব সময় ঘুরবে। কখনো থামবে না।

মজার কথা কী জানেন? দাওয়াত না করার পরেও হুমায়ূন স্যার এবং শাওন ম্যাডাম দুজনই এসেছিলেন। মনে হয় মোস্তফা ভাইয়ের কাছে শুনে এসেছেন।

আমাকে কে সাজিয়ে দিয়েছে বলুন তো?

শাওন ম্যাডাম।

সাজ শেষ হওয়ার পর আমাকে দেখে হুমায়ূন স্যার বললেন, এই মেয়ে তো ট্রয় নগরীর হেলেনের চেয়েও রূপবতী।

বাসর রাতে আহসান আমাকে কী বলল শুনতে চান? সে বলল, আমি তব মালঞ্চের হব মালাকর।

.

পুনশ্চ

দৈনিক সমকাল পত্রিকায় বড় মামা এবং সকিনার কেচ্ছা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে ছাপা হয়েছে। সকিনা কাঁদছে এই ছবিসহ। খবরের শিরোনাম মামা ভয়ঙ্কর। পত্রিকায় খবর বের হওয়ার পরপরই পুলিশ মামাকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে গেছে। তার জামিন হয় নি। মনে হয় রিমান্ডে নেবে।

<

Humayun Ahmed ।। হুমায়ূন আহমেদ