ম্যাজিক মুনসি

উৎসর্গ

জুয়েল আইচ
জাদুবিদ্যার এভারেস্টে যিনি উঠেছেন। এভারেস্টজয়ীরা শৃঙ্গ বিজয়ের পর নেমে আসেন। ইনি নামতে ভুলে গেছেন।

ভূমিকা

ম্যাজিক মুনশিকে কি উপন্যাস বলা যাবে?

উপন্যাস বললে প্রকাশকের সুবিধা হয়। পাঠকরা উপন্যাস পড়তে পছন্দ করেন। সমস্যা হচ্ছে ম্যাজিক মুনশিকে কোনো পর্যায়েই ফেলা যাচ্ছে না। ম্যাজিক মুনশি হলো রহস্যময়তার বর্ণনা এবং কিছুটা বিশ্লেষণ। উপন্যাসের কাঠামো অবশ্যি ব্যবহার করা হয়েছে।

এই লেখায় আমি কাউকে বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছি না। আমি নিজে বিভ্রান্ত মানুষ কোনোকালেই ছিলাম না, কাজেই নিজের বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেওয়ার প্রশ্ন আসে না। তবে আমি সচেতনভাবেই জগতের রহস্যময়তার প্রতি ইঙ্গিত করেছি। এই অধিকার আমার আছে।

পাঠকদের প্রতি অনুরোধ, ম্যাজিক মুনশি বইটি দুবার পড়বেন। প্রথমপাঠের অস্পষ্ট বিষয়গুলি দ্বিতীয়পাঠে স্পষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা। বইয়ে বর্ণিত কৃষ্ণশক্তি আহ্বানের ধারেকাছেও কেউ যাবেন না। মানব মস্তিষ্ক অতি বিচিত্র কারণে সাজেশনে বশীভূত। Trance অবস্থায় মস্তিষ্কের বিচিত্র কার্যকলাপের দিকে যেতে পারে। অকারণ হেলুসিনেশনের শিকার হওয়া হবে বিরাট মূর্খামি।।

হুমায়ূন আহমেদ
নুহাশপল্লী

 

০১.

ঘেটুপুত্র কমলা নামের একটা ছবি বানাব। পুরনো রাজবাড়ি বা জমিদারবাড়ি খুঁজে বেড়াচ্ছি। বাড়ির ভেতর নাচঘর থাকতে হবে। টানাবারান্দা থাকতে হবে। বড় দিঘি লাগবে, শ্বেতপাথরের ঘাট থাকতে হবে। দিঘিভর্তি পদ্ম লাগবে। যদি থাকে এখনই লাগাতে হবে। পদ্মগাছ বৈরী অবস্থাতেও ভালো থাকে।

বাংলাদেশের মানুষ পরামর্শ দিতে পছন্দ করে। অনেক পরামর্শদাতা জুটে গেল। একজন বলল, আপনি যেরকম চাচ্ছেন, অবিকল সেরকম বাড়ি একটা আছে মির্জাপুরে। এই বাড়ি আগে কেউ ব্যবহার করে নি। নাচঘরের দেয়ালে কাচ লাগানো। মেঝে কাঠের। কিছু কিছু কাঠ নষ্ট হলেও যা আছে তা-ই যথেষ্ট। সবচেয়ে বড় কথা, দিঘিভর্তি পদ্মফুল। ঘাট আছে কি না মনে করতে পারছি না। থাকার কথা।

ভদ্রলোকের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে যথাস্থানে উপস্থিত হলাম। বাড়ি বলে কিছু নেই, ইটের স্তূপ। ঝোঁপঝাড়ে ঢাকা। স্থানীয় এক ভদ্রলোক বললেন, ওদিকে যাবেন না স্যার। সাপের আস্তানা।

আমি বললাম, দিঘি কোথায়?

ভদ্রলোক বললেন, একসময় দিঘি ছিল। এখন ভরাট হয়ে গেছে।

মেজাজ খারাপ করে ফিরলাম। এরপর থেকে কেউ বাড়ির সন্ধান দিলে নিজে যাই না। নুহাশ চলচ্চিত্রের একজনকে ক্যামেরা দিয়ে পাঠিয়ে দেই। সে ছবি তুলে নিয়ে আসে। ছবি দেখে হই হতাশ। অ্যাসিসটেন্টের যাতায়াত খরচের বিল দেখে হই চমৎকৃত। একটি যাতায়াত বিলের নমুনা–

মাইক্রোবাস ভাড়া ৫,০০০ টাকা স্পিডবোট ভাড়া ৪,০০০ টাকা খাওয়াদাওয়া ৩,০০০ টাকা হোটেল ভাড়া ৭,০০০ টাকা পানি ৩,০০০ টাকা সর্বমোট ২২,০০০ টাকা মাত্র

আমি বললাম, সোনারগাঁ হোটেলের এক রাতের ভাড়া ৭০০০ টাকার কম। তোমার হোটেল বিল এত কেন?

অ্যাসিসটেন্ট বলল, রুম তো স্যার একটা নেই নাই। তিনটা নিয়েছি।

তিনটা কেন?

ঢাকা থেকে আমরা চারজন গিয়েছি। স্থানীয় যে মেম্বার সাহেব আমাদের স্পট দেখাবেন তিনিও আমাদের সঙ্গে হোটেলে ছিলেন। তার জন্যেও রুম নিতে হয়েছে।

পানি তিন হাজার টাকা-ঝলাম না। তিন হাজার টাকার পানি খেয়ে ফেলেছ?

মেম্বার সাহেব খেয়েছেন।

মেম্বার সাহেব এক রাতে নি হাজার টাকার পানি খেয়ে ফেলেছেন?

সাধারণ পানি না স্যার। পাগলাপানি। মেম্বার সাহেবের সন্ধ্যার পর পাগলাপানি খাওয়ার অভ্যাস।

 

শেষ পর্যন্ত ভিডিও দেখে একটা বাড়ি পছন্দ হলো। সুখিয়া জমিদারবাড়ি। নাচঘর আছে। ঘাট আছে। টানা বারান্দা আছে। অতি দুর্গম জায়গা। সুনামগঞ্জ থেকে লঞ্চে চারঘণ্টা যেতে হয়। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে চার কিলোমিটার।

ভিডিও ছবি দেখে লোকে পছন্দ করা কোনো কাজের কথা না। আমি ঠিক করলাম নিজে গিয়ে দেখব।

পাঠকদের জানাতে লজ্জা বোধ করছি, আমার যাত্রা উপলক্ষে সাজসাজ রব পড়ে গেল। সাজসাজ রবের কারণে আমার সম্পর্কে প্রচলিত কিছু ভ্রান্ত ধারণা। যেমন, একদল বন্ধুবান্ধব ছাড়া আমি কোথাও যেতে পারি না। বিশেষ ধরনের চিকন চাল ছাড়া খেতে পারি না। খাওয়ার সময় অনেকগুলি পদ লাগে। খাওয়ার পানি হতে হয় বরফশীতল। রাতে গানবাজনার ব্যবস্থা থাকতে হয়। রাতে এসি ছাড়া ঘুমাতে পারি না। মাঘমাসের শীতেও এসি লাগে। তখনো ঘর হিমশীতল করে আমি নাকি ডাবল লেপের ভেতর ঢুকে থাকি। ইত্যাদি।

ব্যাপার মোটেই সেরকম না। আমি যে-কোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারি। আমার প্রয়োজন কিছু R।RM থাকলে কিছু লাগবে না। পাঠকদের কেউ কেউ নিশ্চয়ই ভুরু কুঁচকে ভাবছেন RM হলো মেম্বার সাহেবের পাগলাপানি। তা-না, RM হলো Reading Material. পড়ার বই। প্রতিদিনই নিয়ম করে আমাকে কিছু পড়তে হয় না পড়লে অসুস্থ বোধ করি।

Aisac Asirnov এর Book of Facts এবং স্টিফেন কিং-এর ভূতের গল্পের কালেকশন (Skeleton Crew) ব্যাগে ভরে যাত্রার প্রস্তুতি নিলাম।

নুহাশপল্লীর ম্যানেজার বুলবুলের উপর যাত্রার পুরো দায়িত্ব। সে এসে রিপোর্ট করল, সব ঠিক আছে। এসএ পরিবহনের আধুনিক এসি বাস ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ যাবে। সুনামগঞ্জ থেকে দোতলা লঞ্চ যাবে। একটা পোর্টেবল এসি পাওয়া গেছে। সিঙ্গার কোম্পানির এসি যাচ্ছে। এসি চালানোর জন্যে জেনারেটর যাচ্ছে। সুনামগঞ্জের থানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা নিরাপত্তার জন্যে দুজন পুলিশ সদস্য দিচ্ছেন। নুহাশপল্লীর বাবুর্চি আর তার দুই অ্যাসিসটেন্ট যাচ্ছে। রান্নাবান্নার সব দায়িত্ব তাদের। টেপিবুড়ো আর কালিজিরা চাল কেনা হয়েছে। দলের অন্য সদস্যদের জন্যে মিনিকেট চলি। গানবাজনা করবে ইসলাম বয়াতির দল। যেদিন রওনা হব তার আগের দিন তারা নেত্রকোনা থেকে চলে আসবে। গায়ক সেলিম চৌধুরীও যাচ্ছেন।

আমি বললাম, Holy cow.

ম্যানেজার বলল, গরুর মাংসের ব্যবস্থা স্থানীয়ভাবে করা হবে স্যার।

আমি বললাম, সব বাতিল। শুধু আমি যাব, শাওন যাবে আর নিষাদ যাবে। ক্যামেরাম্যান মাহফুজ আর সেট ডিজাইনার কুদ্দুস যাবে। বন্ধুবান্ধব দলবল না। ঢাকা থেকে নিজের গাড়িতে সুনামগঞ্জ যাব। গান শুনতে ইচ্ছা করলে শাওন গাইবে। সে খালি গলায় গান করতে পছন্দ করে, কাজেই হারমোনিয়াম তবলচি কিছু লাগবে না।

ম্যানেজার মাথা চুলকে বলল, ইতিমধ্যে অনেক খরচ হয়ে গেছে। অনেককে অ্যাডভান্স পেমেন্ট করা হয়েছে।

আমি বললাম, হোক। যা গেছে তা গেছে। কে সারা সারা।

ভোরবেলা গাড়িতে উঠলাম আমি একা। হঠাৎ শাওনের শরীর খারাপ করেছে। সে যেতে পারছে না। নিষাদ মাকে ছেড়েই আমার সঙ্গে যাওয়ার জন্যে তৈরি। তার মা ছাড়বে না।

আমি বললাম, তোমার ছেলের কোনো অসুবিধা হবে না। নিশ্চিন্ত মনে ছেড়ে দাও।

শাওন বলল, তুমি যখন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়বে তখন ছেলের দিকে ফিরেও তাকাবে না। সে খেলতে খেলতে চলে যাবে হাওরের দিকে। তখন?

নিষাদ গলা ফাটিয়ে চিৎকার শুরু করল, আমি বাবার সঙ্গে যাব! আমি বাবার সঙ্গে যাব!

তার এই কান্না অবশ্যি খুবই সাময়িক। আমি চোখের আড়াল হওয়া মাত্র সে কান্না থামিয়ে নতুন কোনো খেলা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। কিছুদিন ধরে চকলেট গাড়ি নামের এক খেলা সে আবিষ্কার করেছে। চকলেটের একটা প্যাকেট মেঝেতে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে যায়। মুখে ট্রেনের মতো ঝিকঝিক শব্দ করে।

আমি যথেষ্টই মন খারাপ করলাম। শাওন তা বুঝতে পেরেও না-বোঝার ভান করে বলল, সাবধানে থেকো।

সুনামগঞ্জ সার্কিট হাউসে গাড়ি রেখে লঞ্চে উঠব এমনই কথা ছিল। সার্কিট হাউসের কম্পাউন্ডে ঢুকে ধাক্কার মতো খেলাম। এস এ পরিবহনের বিশাল গাড়ি আগে থেকেই উপস্থিত। গাড়ির ভেতর এবং বাইরে নুহাশ চলচ্চিত্র এবং নুহাশপল্লীর পরিচিত মুখ দেখতে পাচ্ছি। ইসলামউদ্দিন বয়াতি তার লোকজন নিয়ে দলবেঁধে হাঁটাহাটি করছে।

আমাকে গাড়ি থেকে নামতে দেখে নুহাশপল্লীর ম্যানেজার ছুটে এল। আমি বললাম, এসব কী?

ম্যানেজার মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, সব পেমেন্ট আগেই করা, তাই চলে এসেছে।

ছবির ক্যামেরাম্যান মাহফুজ কি এসেছে?

তাকে একবার মোবাইল করেছিলাম, তিনি ধরেন নি। পরে আবার করতে ভুলে গেছি।

সেট ডিজাইনার কুদ্দুস?

তাঁকে খবর দিতে বিস্মরণ হয়েছি।

তোমার চাকরি এই মুহূর্ত থেকে নট।

জি আচ্ছা স্যার।

ম্যানেজারকে চাকরি চলে যাওয়ায় মোটেই চিন্তিত এবং বিচলিত মনে হলো না। বরং আনন্দিত মনে হলো। নুহাশপল্লী থেকে বেশ কয়েকবার তার চাকরি গেছে। চাকরি চলে যাওয়ার পর পরই সে ব্যাগ-সুটকেস গুছিয়ে আমাকে কদমবুসি করে বাড়ি চলে যায়। পরিবারের সঙ্গে সপ্তাহখানিক কাটিয়ে আবার হাসিমুখে ফিরে এসে চাকরি শুরু করে, যেন চাকরি যাওয়ার মতো কিছু ঘটে নি।

বারান্দায় তেইশ চব্বিশ বছরের হলুদ গেঞ্জি পরা এক তরুণ ঘুরছে। তার গলায় ক্যামেরা, ঠোঁটে সিগারেট। এই বয়সের তরুণদের কাছ থেকে আমি কিছুটা সমীহ পাই। আমার সামনে পড়লে সিগারেট লুকানোর চেষ্টা করে। এই তরুণ তা করছে না। সে বেশ আয়েশ করে ধোয়া ছাড়ছে। আমি ম্যানেজারকে বললাম, এই ছেলে কে?

ম্যানেজার বলল, স্যার সাংবাদিক। আমাদের সঙ্গে যাবে। পথে আপনার ইন্টারভ্যু করবে। ফটোসেশান করবে।

আমি বললাম, এর ভাবভঙ্গি তো প্রথম আলোর সাংবাদিকের মতো। ধরাকে সরা না, লবণের চামুচ জ্ঞান করছে।

ম্যানেজার বলল, প্রথম আলোর সাংবাদিক না স্যার। সুনামগঞ্জের লোকাল সাংবাদিক।

ডাকো তাকে।

তরুণ সাংবাদিক সিগারেট হাতেই এগিয়ে এল।

আমি বললাম, তুমি কোন পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত?

স্যার আমি প্রথম আলোর লোকাল করস্‌পনডেন্ট।

ও আচ্ছা। ভাবভঙ্গি সেরকমই।

লঞ্চে আপনার বিশাল ইন্টারভ্যু নেব। আমাকে দুঘন্টা সময় দেবেন।

আমি তো সাংবাদিক নিয়ে চলাফেরা করি না। তুমি আমাদের সঙ্গে যেতে পারবে না।

তাহলে এখানেই ইন্টারভ্যু সেরে ফেলি? মিনি ইন্টারভ্যু।

আমি বললাম, তুমি দুটা প্রশ্ন করবে। এর বেশি না।

ঈদের ফ্যাশন নিয়ে দুটা প্রশ্ন করি?

করো। প্রথম প্রশ্ন, ঈদের দিন ভোরে আপনি কী পরবেন?

ঈদের দিন তো তোমাদের পত্রিকা বের হয় না, কাজেই ঠিক করেছি টাইম ম্যাগাজিন পড়ব। দ্বিতীয় প্রশ্ন কী?

আমি জানতে চাচ্ছিলাম নামাজের সময় আপনি কী পরবেন?

নামাজের সময় তো নামাজই পড়ব। আর কী পড়ব? দুটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি, এখন বিদায় হও।

সাংবাদিক আহত চোখে তাকিয়ে রইল। আমার কঠিন রসিকতার সঙ্গে প্রথম পরিচয় সুখকর হওয়ার কথাও না। আমার খানিকটা মায়া লাগল। আমি বললাম, তুমি আমাদের সঙ্গে যেতে পার, তবে ইন্টারভ্যু, ফটোসেশন এইসব বাদ। ট্রাকের পেছনে লেখা থাকে, এক শত হাত দূরে থাকুন। দেখেছ না?

জি স্যার।

আমার কাছ থেকেও এক শ হাত দূরে থাকবে।

তরুণ সাংবাদিক আগ্রহ নিয়ে বলল, স্যার আমি একজন কবি। আমার দুটো কবিতার বই বের হয়েছে।

আমি নির্বিকার গলায় বললাম, তাহলে দুই শ হাত দূরে থাকবে।

তরুণ সাংবাদিক ছাড়াও এক তরুণীকে দেখলাম মোবাইল ফোনে কার সঙ্গে কথা বলতে বলতে চক্রাকারে ঘুরছে। তার পোশক যথেষ্টই উগ্র। আমি ম্যানেজারকে বললাম, এই মেয়ে কে?

সে আমাদের সঙ্গে যাচ্ছে স্যার।

কেন যাচ্ছে?

সেটা তো স্যার আমি জানি না। আপনি অর্ডার দিয়েছেন বলে সে যাচ্ছে।

আমি কাকে অর্ডার দিলাম।

মেয়েকে দিয়েছেন স্যার। সে আপনার আত্মীয় হয়। খালাতো বোন।

তাকে ডাকো।

খালাতো বোন আমার সামনে এসে দাঁড়াল। মধুর ভঙ্গিতে হাসল। এই হাসি অনেক সাধনা করে শেখা, নাকি প্রকৃতিপ্রদত্ত বুঝলাম না।

নাম কী?

আমার শোবিজের নাম সোনালি।

আসল নাম কী?

সালমা।

গ্রামের বাড়ি কোথায়?

দিনাজপুরে।

দিনাজপুরে আমার কোনো খালা থাকেন বলে জানি না। তুমি নাকি বলেছ তুমি আমার খালাতো বোন?

সরি স্যার, মিথ্যা করে বলেছি। মিথ্যা না বললে আসতে পারতাম না।

শোবিজে করো কী?

র‍্যাম্প মডেল। এখন অভিনয় করতে চাই বলেই আপনার সঙ্গে পরিচিত হতে এসেছি। আজকাল পরিচয় ছাড়া কিছু হয় না।

একা এসেছ?

হুঁ।

বাবা-মা তোমাকে একা ছেড়ে দিল?

আমার বয়স একুশ। একা কেন ছাড়বে না? স্যার, আপনি নতুন যে ছবিটা বানাচ্ছেন সেখানে আমাকে ছোট হলেও একটা রোল দিতে হবে। আমি কোনো কথা শুনব না। যে-কোনো মূল্যে আমার একটা ব্রেক লাগবে।

আমি ম্যানেজারকে বললাম, এই মেয়েকে কানে ধরে বিদায় করে দাও।

ম্যানেজার বলল, অবশ্যই স্যার। অবশ্যই।

আমি লক্ষ করেছি, ইদানীং মানুষকে আহত করে আনন্দ পাচ্ছি। বয়সের একটা পর্যায়ে এরকম হয়।

জর্জ বার্নাড শ নাকি লাঠি হাতে মারার জন্যে তেড়ে যেতেন। মার্ক টোয়েন থান ইটের সাইজের বই ছুড়ে মেরে এক সাংবাদিককে আহত করেছিলেন।

আমি তাঁদের মতো বড় মাপের কেউ না বলে কঠিন রসিকতায় নিজেকে আটকে রেখেছি। এটাই বা খারাপ কী?

<

Humayun Ahmed ।। হুমায়ূন আহমেদ