আমার হাসপাতাল জীবন শুরু হল।

সোমবার বিকাল চারটায় রহমানের যোগাড়-করা জীপে চড়ে চলে এলাম হাসপাতালে। এই জীবন দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে মনে হচ্ছে। এখন যেমন খারাপ লাগছে, এক সময় তেমন খারাপ লাগবে না। ফিনাইলের গন্ধও আপন মনে হবে। ডাক্তারদের সঙ্গে পরিচয় হবে। নার্সদের কেউ কেউ হাসপাতালের গল্প শুনিয়ে যাবে। যে-সুইপার বাথরুম পরিষ্কার করতে আসবে, তাকে হয়তো আমি নাম ধরে ডাকব।

মনসুর খুব উৎসাহ প্রকাশ করতে লাগল, ভালোঁ ঘর, কেমন হাওয়া দেখছি নাকি? ফাসক্লাস।

ঘরটি ভালোই। পেছনে এক চিলতে বারান্দা। দাঁড়ালে শিশুপার্ক দেখা যায়। সেদিকটা বড়ো সবুজ। বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে চোখে ধাঁধা লাগে।

এই ফরিদ, এটা ইংলিশ বাথরুম।

বাথরুম খুলেই মনসুর মহা উল্লসিত। ভাবখানা এরকম, যেন ইংলিশ বাথরুম ছাড়া আমি বাথরুম করতে পারি না।

ফরিদ, ময়লা আছে, সুইপার দিয়ে ক্লীন করিয়ে দেব। পাঁচটা টাকা খাওয়াতে হবে। ফ্লাস্ক খোল, চা খাওয়া যাক।

রহমান বলল, আমি খাব না। আমার বমি বমি আসছে, হাসপাতালের গন্ধ আমার সহ্য হয় না। মনসুর দাঁত বের করে হাসল, হাসপাতালে ফুলের গন্ধ থাকবে নাকি রে শালা? হাসপাতালে থাকবে ওষুধের গন্ধ, রোগের গন্ধ। যেখানকার যা নিয়ম। এর মধ্যেই মনসুর আবিষ্কার করল ফ্যানের রেগুলেটারটা খারাপ, ধরলেই শক দেয়। বাথরুমের ফ্লাশ কাজ করে না। দরজার ছিটকিনি কাজ করে না। সে নোটবই বের করে লিখে ফেলল। সপ্তাহখানেকের মধ্যেই নাকি সেসব ঠিক করে ফেলবে। টাকা খাওয়াতে হবে। টাকা খাওয়ালেই সব ঠিক। টাকাটা সে কাকে খাওয়াবে, কে জানে? আমি বললাম, আরেক জন রুগী থাকার কথা না?

রুগীর বিছানা-বালিশ সবই আছে, রুগী নেই। মনসুর গম্ভীর হয়ে বলল, রুমমেট যাকে পেয়েছিস–মালদার পার্টি। জিনিসপত্র দেখ না। থার্মোফ্লাস্কটা দেখেছি? মিনিমাম এক হাজার টাকা দাম।

রহমান সত্যি সত্যি অস্বস্তি বোধ করছে। দু বার বলল, ফিনাইলের গন্ধে তার মাথা ধরে যাচ্ছে। কিন্তু মনসুরের ওঠার কোনো তাড়া দেখা গেল না। সে রুগী। সম্পর্কে খোঁজ নিতে গেল। সেইসঙ্গে এক জন আয়া নিয়ে আসবে, যে নাকি সব দেখেশুনে রাখবে। এটা-সেটা এনে দেবে। অসুবিধা হলে রাত-বিরেতে ডাক্তারকে খবর দেবে। মনসুর বিজ্ঞের মতো বলল, হাসপাতাল কি ডাক্তাররা চালায়। হাসপাতাল চালায় আয়ারা। এক জন ভালো আয়া পাওয়া নাকি ভাগ্যের ব্যাপার। রহমান বিরক্ত হয়ে বলল, ছেলেদের ওয়ার্ডে আয়া আসতে দেবে নাকি? কী যে সব কথাবার্তা

আয়া নয়, এক জন বেঁটে ছোকরাকে সে ধরে নিয়ে এল, খুব নাকি ওস্তাদ। ছোকরার নাম মজু মিয়া।

 

নতুন জীবন শুরু হল।

আমার পাশের বেডের রুগীর নাম জুবায়ের। আনকমন নাম। ভদ্রলোকও বেশ আনকমন। দারুণ ফর্সা এবং দারুণ রোগা। লম্বাও প্রায় ছ ফুটের মত। যখন শুয়ে থাকেন, তখন কেন জানি সাপের মতো লাগে। সাপের উপমাটি ঠিক হল না। সাপের মধ্যে একটা ঘিনঘিনে ব্যাপার আছে, একটা গতি আছে। এর মধ্যে তা নেই। এর চারদিকে একটা আলস্যের ভাব আছে। রোগের জন্যই হয়তো। বয়সও ধরা যাচ্ছে না, পঁচিশ থেকে তিরিশের মধ্যে হবে। রোগা মানুষের বয়স ধরা যায় না। ভদ্রলোক কথা বলেন খুবই কম। আমি যখন বললাম, আমি আজ বিকেলে এসেছি। আপনি অন্য কোথাও ছিলেন, আপনার সঙ্গে সে জন্যই দেখা হয় নি। আমার নাম ফরিদ। তিনি শুধু বললেন, আমার নাম জুবায়ের। আর কোনো কথা হল না।

ভিজিটিং আওয়ার শেষ হবার পর ভদ্রলোকের স্ত্রী এলেন। তিনি আমার সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর পরিচয় করিয়ে দিলেন, এ এ্যানি, আমার স্ত্রী।

এ্যানি নামের মহিলাটি আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসলেন। নরম স্বরে বললেন, আপনাকে কিন্তু ও খুব জ্বালাবে। রাত জেগে বই পড়বে। আগে যে-রুগী ছিল সে রোজ কমপ্লেইন করত।

আমি করব না। কারো বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই।

কেন, আপনি কি সন্ন্যাসী?

মেয়েটির মুখ হাসি-হাসি, তাকিয়ে আছে আমার দিকে। উত্তর জানতে চায় হয়তো।

কি, বলুন। আপনি কি সংসারবৈরাগী?

জ্বি-না।

সন্ন্যাসী হওয়া ঠিক না। রাগ, ঘৃণা, অভিমান, অভিযোগ–এসব থাকা উচিত। এসবের দরকার আছে।

মেয়েরা এত গুছিয়ে কথা বলতে পারে, তা জানা ছিল না। আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। ভদ্রমহিলার বয়স তেইশ-চরিশের বেশি হবে না। কালো রঙ। মাথাভর্তি চুল, বেণী করা নেই। পিঠময় ছড়িয়ে দেওয়া। এর দিকে তাকিয়ে বলে দেওয়া যায়–অনেক ছেলেরা এই মেয়েটির প্রেমে পড়েছে। মেয়েটি এদের সবাইকে ছেড়ে ফর্সা ও রোগা পোকটির কাছে এসেছে। কেন এসেছে? কী আছে লোকটির মধ্যে?

এ্যানির অন্য সব প্রেমিকদের আমার দেখতে ইচ্ছা করল। মেয়েটি বসেছে বিছানার পাশে, কথা বলছে মৃদু স্বরে। কিন্তু কথা বলছে সে একাই। লোকটি শুধু শুনে যাচ্ছে। এমন কি হা-হু পর্যন্ত বলছে না। শুয়ে শুয়ে ওদের কথা শোনা ঠিক হচ্ছে না। আমি বাইরে গিয়ে দাঁড়ালাম। বেশ বড়ো বারান্দা। রুগী দেখতে-আসা লোকজনরা হাঁটাহাটি করছে। একটা লাল সোয়েটার পরা বাচ্চা টুকটুক করে দৌড়াচ্ছে। এই গরমে তাকে সোয়টার পরিয়েছে কেন, কে জানে। আমি ডাকলাম, এই খোকা। এ্যাই। ছেলেটি অবাক হয়ে আমাকে দেখল, তারপর খেলতে লাগল। নিজের মনে। শিশুদের মন পাওয়া খুব কঠিন। এ্যানি বেরিয়ে কয়েক পা এগিয়ে এল।

ফরিদ সাহেব, যান ভেতরে যান। আমরা এমন কিছু বলি না যে, অন্য কেউ শুনতে পারবে না। আপনি শুধু শুধু কষ্ট করে বাইরে এলেন।

ওর চোখ ভেজা। কাঁদছিল হয়তে।

অনেক দিন ধরে সে আর কথা বলে না, শুধু শোনে। কথা বলি আমি একা। আচ্ছা, আজ চলি।

ওনার কী হয়েছে?

কী হয়েছে শুনে কী করবেন? ও মারা যাচ্ছে।

ভদ্রলোক রাত একটা পর্যন্ত বই পড়লেন। আমি চোখ বন্ধ করে পড়ে রইলাম। কেন জানি খুব ক্লান্ত লাগছে। এই অপরিচিত জায়গায় আমার ঘুম আসার কথা নয়, তবু আজ বোধহয় ঘুম আসবে। ভদ্রলোক বাতি নিভিয়ে নরম স্বরে ডাকলেন, ফরিদ সাহেব।

বলুন।

ঘুমান নি?

জ্বি না। নতুন জায়গায় ঘুম আসে না।

আমারো আসে না। কিন্তু মজার ব্যাপার কি জানেন, হাসপাতালের প্রথম রাতে আমি মড়ার মতো ঘুমিয়েছিলাম। ওষুধপত্র ছাড়াই দীর্ঘ ঘুম।

তাই নাকি?

হ্যাঁ।

ফরিদ সাহেব, আপনার কি ঘুম পাচ্ছে?

জ্বি।

ঘুমাবেন না। কষ্ট করে হলেও জেগে থাকেন। হাসপাতালের অনেক রকম কুসংস্কার আছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে, যে হাসপাতালের প্রথম রাতে আরাম করে ঘুমায়, সে আর হাসপাতাল ছেড়ে জীবিত অবস্থায় বের হয় না।

তাই নাকি?

এই কুসংস্কারটা আগে জানতাম না। জানলে আমি জেগে থাকতাম।

ভদ্রলোক অন্ধকারের মধ্যেই হাসলেন। যিনি তার স্ত্রীর সঙ্গে কোনো কথা বলেন নি, তিনি আমার সঙ্গে এত কথা বলছেন কি জন্য?

ফরিদ সাহেব।

জ্বি?

আপনার সঙ্গে সিগারেট আছে?

জ্বি, আছে।

দিন একটা। আমার খাওয়া নিষেধ, কিন্তু এখন খেতে ইচ্ছা হচ্ছে। আপনার কি ঘুম পাচ্ছে নাকি?

মনে হয় পাচ্ছে।

ঘুমাবেন না, উঠে বসুন। ভুল করবেন না।

কুসংস্কারটাকে আপনি এত গুরুত্ব দিচ্ছেন কেন?

ভদ্রলোক জবাব না দিয়ে সিগারেট ধরিয়ে টানতে লাগলেন। সিগারেটের আলো এক-এক বার উজ্জ্বল হয়ে উঠছিল। তাঁর ফর্সা মুখ দেখা যাচ্ছিল। এত ফর্সাও মানুষ হয়।

ফরিদ সাহেব।

বলুন।

এ্যানির সঙ্গে আমার ক দিন হয় বিয়ে হয়েছে বলুন তো?

বলতে পারব না।

অনুমান করুন।

দু বছর?

না। তিন মাস। আমি নিজে তখন আমার অসুখের কথাটা জানি। কিন্তু সেটা গোপন করেই ওকে বিয়ে করেছিলাম। কিছু কিছু মেয়ে থাকে ফরিদ সাহেব যাদের জন্যে যে কোন ধরনের অন্যায় করা যায়।

তা ঠিক।

আমি অবশ্যি বিয়ের পরই এ্যানিকে সব খুলে বলি। আপনি শুনলে আশ্চর্য হবেন, সে রাগ করে নি।

হয়তো রাগ করেছে, আপনাকে বুঝতে দেয় নি।

ভদ্রলোক জবাব দিলেন না, দীর্ঘ সময় চুপ করে থাকলেন। তারপর বললেন, দেখি, আরেকটা সিগারেট দিন।

আর খাবেন না।

এখন সিগারেট খাওয়া না-খাওয়া আমার কাছে সমান। আমি আরেকটি সিগারেট বাড়িয়ে দিলাম।

ফরিদ সাহেব।

বলুন।

ঘুম আসছে?

হ্যাঁ।

ঘুমাবেন না। কুসংস্কার হোক, যাই হোক–ঘুমাবেন না।

ঠিক আছে, ঘুমাব না।

আপনি যে বললেন সে রাগ করেছে, এটা ঠিক না। রাগ করলে ঠিকই বুঝতে পারতাম। অসুস্থ অবস্থায় মানুষের সেনসিটিভিটি বেড়ে যায়। সে হোট-ঘোট ব্যাপারগুলিও ধরতে পারে।

তাহলে হয়তো রাগ করেন নি।

না, করে নি।

ভদ্রলোকবিছানা থেকে নেমে বাথরুমে গেলেন। ফিরে এলেন অনেকক্ষণ পরে। ঘর পুরোপুরি অন্ধকার নয়। বারান্দায় বাতি জ্বলছে, তার আলোয় ঘরের ভেতরটাও আলোকিত। আবছা করে হলেও সব কিছু চোখে পড়ে। আমি বললাম, আপনি জেগে। আছেন কেন, আপনি শুয়ে পড়ুন।

হ্যাঁ, শুয়ে পড়ব। ঘুম আসছে। তবে একটা কথা শোনেন-জীবনের উপর আমার একটা রাইট আছে। আছে কিনা?

হ্যাঁ, আছে।

যাকে ভালোবাসি, তাকে যদি এক দিনের জন্যেও পেতে চাই, তাহেল সেটা কি খুব অন্যায়?

না, অন্যায় নয়।

আপনি আমাকে সান্ত্বনা দেবার জন্যে এটা বলছেন। কিন্তু আপনি মনে মনে এটাকে অন্যায় ভাবছেন।

না, তা ভাবছি না।

আমাকে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করবেন না। আমি কারো সান্ত্বনা চাই না। এসবের আমার দরকার নেই।

আমি চুপ করে গেলাম। ভদ্রলোক শুয়ে পড়লেন। এবং বোধহয় প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ঘুমিয়ে পড়লেন। আর কোনো সাড়া পাওয়া গেল না।

হাসপাতালের নিজস্ব কিছু ব্যাপার আছে। সে কখনো ঘুমায় না। দিন-রাত্রি চৰিশ ঘন্টাই জেগে থাকে। এখন রাত বাজে প্রায় সাড়ে তিনটা, বারান্দায় কাদের কথা শোনা যাচ্ছে। হাসির শব্দও শুনলাম। রুগীদের সঙ্গে তাদের আত্মীয়স্বজনেরা কেউ কেউ থাকে। দারুণ অস্বস্তি নিয়ে এরা বারান্দায় হাঁটাহাঁটি করে।

রুগীদের কেউ কেউ কাদে। ব্যাথায় কাঁদে কিংবাভয়ে কাঁদে। আয়ারা খাবারের ভাগ নিয়ে দুপুররাত্রে ঝগড়া করতে বসে।

কমবয়সী ইন্টার্নি ডাক্তাররা নিজেদের মধ্যে রসিকতা করতে করতে বারান্দা দিয়ে হাঁটেন।

কোনো একটি সময়ে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দেয়। রেসিডেন্ট সার্জেন্ট আসেন। নার্সরা ছোটাছুটি করতে থাকে। অপারেশন টেবিলে রুগীকে নিয়ে যাবার জন্যে ঘুমঘুম চোখে চোর হাতে আসে এটেনডেন্টরা। এনেসথেশিয়া যিনি করবেন, তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায় না।

রেসিডেন্ট সার্জেন্ট ধৈর্য হারিয়ে চেষ্টাতে থাকেন।

ঘুম চটে গিয়েছিল। শুয়ে শুয়ে কত রকম শব্দ শুনলাম। সব অচেনা শব্দ। এই বিচিত্র শব্দের সঙ্গে পরিচিত হতে কত দিন লাগবে কে জানে।

 

হাসপাতালের খাবারদাবার খুব খারাপ হয় বলে জানতাম। সকালের নাস্তা আমার ভালোই লাগল। এক পিস মাখন-লাগান রুটি, একটি সেদ্ধ ডিম, একটা কলা।

পাশের বেডের ভদ্ৰলোক ঘুমাচ্ছেন। তাঁর নাশতা ঢাকা পড়ে রইল। তিনি ঘুম থেকে উঠলেন নটার দিকে এবং তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই প্ৰকাণ্ড একটি টিফিন কেরিয়ারে করে তাঁর জন্যে খাবার এল।

ফরিদ সাহেব।

জ্বি।

আপনি কি নাশতা করে ফেলেছেন?

হ্যাঁ।

এর পর থেকে করবেন না। এ্যানি সব সময় দুজনের জন্যে খাবার পাঠায়। আজ যখন সে আসবে, আপনি তাকে বলে দেবেন কী কী জিনিস আপনার পছন্দ।

ভদ্রলোকের সঙ্গে সারা দিন আমার আর একটি কথাও হল না। যেন তিনি আমাকে চেনেন না। একটি বই মুখের সামনে ধরে শুয়ে রইলেন। আমি এক বার জিজ্ঞেস করলাম, কী পড়ছেন?

থ্রিলার।

বলেই এমনভাবে তাকালেন, যার অর্থ হচ্ছে আমাকে বিরক্ত করবেন না।

দুপুরের পর থেকে চার দিক অন্ধকার করে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হল। বেশ ভালো ঝড়। আজ কোন ভিজিটার আসবে না। এমন দিনে ঘর থেকে কেউ বেরুবে না।

আজ অবশ্য কারো আসার কথা নয়। তবু কেউ কেউ হয়তো আসতে চাইবে। পিছিয়ে যাবে ঝড় দেখে। ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আমাকে দেখতে আসার কেউ নেই।

আশ্চর্য, যার কথা কখনো ভাবি নি সেই দুলাভাই এসে পড়লেন। দুলাভাই বলাটা ঠিক হচ্ছে কিনা কে জানে। বড়োআপা মারা গেছেন সেই কবে। এর মধ্যে তিনি বিয়ে-টিয়ে করে ঘর-সংসার শুরু করেছেন। পুরনো আত্মীয়তা বা সম্পর্কের কিছুই তো এখন নেই।

ফরিদ, কেমন আছ?

ভালো আছি।

দুলাভাই বেশ কিছু কলা নিয়ে এসেছেন। সেগুলি থেকে টুপটুপ করে পানি পড়ছে। তাঁর গা বেয়েও পানি ঝরছে।

গামছা দিয়ে গা মুছে ফেলুন। অসুখ করবে।

না, কি অসুখ করবে?

তিনি সাবধানে কলাগুলি বেডের নিচে রাখলেন, মুখে কিছু বললেন না। তাঁর স্বভাব বেশি বদলায় নি। তাকে আগের মতোই ভাবুক মনে হল।

খবর পেয়েছেন কার কাছে দুলাভাই?

তোমার বন্ধু মনসুরের সঙ্গে দেখা হয়েছিল।

ও।

অপারেশনের ডেট দিয়েছে?

জ্বি-না। টাকাপয়সা লাগবে ফরিদ?

জ্বি-না। লাগবে না। আপনি চলে যান দুলাভাই, ঠাণ্ডা লাগবে।

এই ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে যাব কোথায়? বসি খানিকক্ষণ।

ফ্লাস্কে চা আছে, খাবেন?

না, চা খাই না। গ্যাস্ট্রিকের প্রবলেম আছে।

দুলাভাই খুব সাবধানে শার্টের ভেতরের পকেট থেকে একটা মুখবন্ধ খাম বের করে আমার বালিশের নিচে রেখে দিলেন।

কী রাখলেন?

তেমন কিছু না।

এটা দুলাভাইয়ের আজ নতুন কিছু না। আগেও অনেক বার এ রকম হয়েছে। হঠাৎ একেবারে অপ্রত্যাশিতভাবে হয়তো আমার মেসে এসেছেন। চুপচাপ বসে থেকেছেন কিছুক্ষণ। যাবার সময় লজ্জিত ভঙ্গিতে একটা পঞ্চাশ টাকার নোট রেখে। দিয়েছেন টেবিলের উপর।

টাকা লাগবে না। টাকা কি জন্যে?

চাটা খাও বন্ধুবান্ধবকে নিয়ে বেশি কিছু তো না। সেই সামর্থ্যও নেই।

তিনি এসব কি তার মৃতা স্ত্রীর স্মরণে করেন? কি জানি। মানুষের কত রকম বিচিত্র স্বভাব থাকে। সব মানুষই অবশ্যি বিচিত্র। এক জনের সঙ্গে অন্য জনের কিছুমাত্ৰ মিল নেই। সে জন্যেই কি এক জনের মধ্যে অন্য জনের ছায়া দেখলে আমরা এমন চমকে উঠি? অসংখ্য বার বলি–আজ নিউমার্কেটে একটা ছেলের সঙ্গে দেখা, অবিকল সালামের মতো, ঠিক সেই রকম হাটার ভঙ্গি।

দুলাভাই খোলা জানালা দিয়ে দূরে তাকিয়ে আছেন। কবি-সাহিত্যিক বোধ হয় এভাবে তাকায়। আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে-থাকতে তাদের চোখের দৃষ্টি কোমল হয়ে ওঠে। দুলাভাইয়ের যেমন হয়েছে। আমি বললাম, দুলাভাই, আপনার বাচ্চারা ভালো?

হুঁ।

এই প্রশ্নটি কি আমি তাঁকে দ্বিতীয় বার করলাম? আমার মনে হতে লাগল একটু আগে এই প্রশ্নটি করা হয়েছে। যখন কথা বলার কিছু থাকে না, তখনই আমরা ঘুরেফিরে একই প্রশ্ন করি।

দুলাভাই, আপনি কিছু মনে না করলে একটা সিগারেট খাই।

আরে ছিঃ ছিঃ, খাও। এই বয়সে মুরুৰি দেখলে চলে? খাও। কোনো অসুবিধা নেই।

সিগারেট ধরাতে আমার সংকোচ হতে লাগল। মনে হতে লাগল কাজটা অন্যায়। সাধাসিধা ধরনের যে-মানুষটি আমার সামনে বসে আছে, তাকে আরো খানিকটা সন্মান আমার করা উচিত।

আশ্চর্য, এই দীর্ঘদিনে এক বারও কেন তাঁর খোঁজখবর করি নি? কেন এক দিনও তাঁর বাসায় উপস্থিত হয়ে বলি নি–আপনাকে দেখতে এলাম দুলাভাই, ভালো আছেন তো?

কেমন করে দুলাভাই তাঁর নতুন সংসার সাজিয়েছেন? হঠাৎ বড দেখতে ইচ্ছে করল। দুলাভাই বললেন, যাই, কেমন? বৃষ্টি কমেছে।

আমি মৃদু স্বরে বললাম, যদি অসুখ সারে, তাহলে প্রথমেই যাব আপনার বাসায়। দুলাভাই হাসলেন। হয়তো আমার কথা বিশ্বাস করলেন না। বিশ্বাস নাকরারই কথা। কেউ কথা রাখে না। আমিও নিশ্চয়ই রাখব না। তবু তাঁর তাতে মন খারাপ হবে না। আবারো কোনো একদিন আমাকে দেখতে আসবেন। সংকুচিত ভাবে একটা ময়লা পঞ্চাশ টাকার নোট আমার বালিশের নিচে রেখে দেবেন।

দুলাভাই চলে যাবার পর দীর্ঘ সময় আমার মন খারাপ থাকল। কেন বলতে পারি না। অত্যন্ত সাধারণ কিছু মানুষ আছে,যারা অন্যদের উপর অসাধারণ প্রভাব ফেলে। খুবই ক্ষণস্থায়ী প্রভাব, তবু তার ক্ষমতা অস্বীকার করার কোনোই উপায় নেই।  মনসুর এসে উপস্থিত হল সন্ধ্যাবেলা। ভিজিটিং আওয়ার শেষ হবার মিনিট পাঁচেক বাকি। আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে আসবার দরকারটা কী ছিল?

আসতাম না। রীনা বলল–ঠাণ্ডার মধ্যে চাটা খেতে ইচ্ছা হবে। ফ্লাস্কটা দিয়ে এস। চা দিয়েছে ফ্লাস্কে করে।

ফ্লাস্ক তো আমার এখানে একটা আছে। রহমান দিয়ে গেল না?

সারছে। আমি আবার একটা কিনলাম।

মনসুর চা ঢালল। পাশের ভদ্রলোককে চা সাধল। তিনি শীতল কণ্ঠে বললেন, চা খাব না।

দোকানের চা না, ঘরের চা। খান এক কাপ, ঠাণ্ডার মধ্যে ভালো লাগবে। তেজপাতা দেওয়া আছে।

থ্যাংক য়ু, আমি চা খাব না।

কী অসুখ আপনার?

অসুখ নিয়ে আমি কারো সঙ্গে ডিসকাস করি না। কিছু মনে করবেন না।

না-না, ঠিক আছে।

মনসুর থাকল সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত। সে কথা না বলে এক সেকেণ্ডও থাকতে পারে না। সাতটা পর্যন্ত সে ক্রমাগত কথা বলে বলে আমার মাথা ধরিয়ে দিল। আমি বললাম, এখন বাড়ি যা মনসুর।

এত সকালে বাড়ি গিয়ে করব কী?

বৌয়ের সঙ্গে গল্প করবি।

দেখি, যাব। আরেকটু বসি। এমন করছিস কেন?

ভিজিটিং আওয়ার শেষ হয়ে গেছে, এখন যা।

মনসুর তবু বসেই রইল। সম্ভবত তার যেতে ইচ্ছে করছে না। তার স্বভাবই এরকম, কোথাও গেলে কিছুতেই উঠতে চাইবে না। বিয়ের পরও সে-স্বভাবের তেমন পরিবর্তন হয় নি।

ফরিদ, উঠি? কাল রীনাকে নিয়ে আসব।

আসতে হবে না।

হবে না কেন?

আজই আসতে চেয়েছিল। বৃষ্টির জন্যে আনি নি।

আমি মনসুরকে সিঁড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিতে গেলাম। এই অল্প সময়ের মধ্যেই সে তার শ্বশুরবাড়ির প্রসঙ্গ নিয়ে এল। তার এক মামাশ্বশুর নাকি তাকে কথায় কথায় জিজ্ঞেস করেছেন–তার ঝুীজ আছে কিনা। এই কথা কটি সে বলল নিচু গলায়। এমন কী রহস্যময় কথা যে ফিসফিস করে বলতে হবে? মনসুর বলল,

এটা কেন জিজ্ঞেস করল বুঝতে পারছিস?

না।

একটা ফ্ৰীজ কিনে দেবে আর কি!

বলিস কি।

আরে, ওদের কি আর অভাব আছে নাকি?

সুখী মানুষের মত হাসিমুখে নিচে নামতে লাগল মনসুর। তার মানে কি কোননী দুঃখ নেই? সে কি সত্যি সত্যি এক জন পরিতৃপ্ত সুখী মানুষ।

আমি মনসুরকে সিঁড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে ঘরে এসে দেখি এক জন বুড়ো ভদ্রলোক এসেছেন আমাদের ঘরে। আমার রুমমেটের বাবা। অবিকল এক রকম চেহারা। বাবা ও ছেলের মধ্যে এমন মিল সচরাচর দেখা যায় না। তারা কথা বলছে নিচু স্বরে। আমি বুড়ো ভদ্ৰলোককে সালাম টালাম কিছু দিতাম। কিন্তু তিনি এক বারও ভালো করে তাকালেন না আমার দিকে।

আমি বারান্দায় একটা চেয়ার টেনে বসে রইলাম। এক জন প্রফেসর সাহেব সম্ভবত রাউণ্ড দিতে বের হয়েছেন। তাঁর সঙ্গে তিন জন ছাত্র, এক জন নার্স। প্রফেসর সাহেবকে খুব মেজাজী মনে হল–যাকে দেখছেন তাকেই ধমকাচ্ছেন। আমার সামনে এসে থমকে দাড়ালেন।

আপনি কি রুগী?

জ্বি।

বাইরে বসে আছেন কেন?

এম্নি বসে আছি।

যান, ঘরে যান।

ঘরে গিয়ে ঢুকলাম। প্রফেসর সাহেব বুড়ো ভদ্রলোকের দিকে আগুন চোখে তাকালেন, কিন্তু কিছু বললেন না। বুড়ো ভদ্রলোক নিঃশব্দে বেরিয়ে গেলেন। আমাকে বললেন, আপনার অপেনিংয়ের ডেট দিয়েছে? আমি তাঁর কথা বুঝতে পারলাম না।

অপারেশনের ডেট হয়েছে কি?

জ্বি-না।

প্রিলিমিনারি টেস্ট?

এখনো কিছু হয় নি।

সে কি।

আমি মাত্র গতকাল এসেছি।

তাতে কি? চৰ্বিশ ঘন্টা তো পার হল। এই যে ইয়ং ডক্টরস, তোমরা করছ। কি?

ইন্টার্নি ডাক্তাররা নার্ভাস ভঙ্গিতে মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগল। ডাক্তার সাহেব এগিয়ে এলেন আমার রুমমেটের দিকে।

জুবায়ের সাহেব আছেন কেমন?

ভালো।

কী পড়ছেন?

থ্রিলার।

ইন্টারেস্টিং নাকি?

আছে মোটামুটি।

আপনার অপারেশন শিডিউল হয়েছে তো?

জ্বি, কাল।

কি, নার্ভাস?

নাহ।

দ্যাটস গুড। কখন টাইম দিয়েছে?

সকাল এগারটা।

আজ বেশি রাত জাগবেন না। শুয়ে পড়বেন।

জুবায়ের সাহেব কোনো উত্তর দিলেন না।

টেনশন কমাবার জন্য দুটি ট্যাবলেট দিচ্ছি, খেয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমুবেন।

ঠিক আছে।

জুবায়ের সাহেব ঘুমুতে গেলেন না। রাত এগারটা পর্যন্ত নিঃশব্দে থ্রিলার পড়তে লাগলেন। আমি এক বার জিজ্ঞেস করলাম–সিগারেট খেতে চান কিনা। নতুন এক প্যাকেট দামী সিগারেট দিয়ে গেছে রহমান, দিনে চারটার বেশি খাব না–এই চুক্তিতে। জুবায়ের সাহেব সিগারেটের আমন্ত্রণে সাড়া দিলেন না!

আমি চাদর টেনে ঘুমুতে গেলাম। তখন তিনি ডাকলেন।

ফরিদ সাহেব।

বলুন। লক্ষ করেছেন, এ্যানি আজ আসে নি?

জ্বি, লক্ষ করেছি।

আপনার কথাও ঠিক হতে পারে।

কিসের কথা বলছেন?

ঐ যে বলেছিলেন এ্যানি রাগ করেছে, কিন্তু জানতে দেয় নি।

আমি কোনো কথা বললাম না।

কাল আমার অপারেশন, আজ তার আসা উচিত ছিল।

ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছিল, আসতে পারেন নি।

ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে তো অনেকেই এসেছে। তাছাড়া সে আসবে গাড়িতে। ঝড়বৃষ্টিতে তার কী অসুবিধা

হয়তো মন খারাপ হবে বলে আসেন নি। কিংবা হয়ত শরীর খারাপ।

দিন একটা সিগারেট। মন খারাপের কথা যেটা বললেন, সেটাই বোধ হয়। ঠিক। ওকে আপনার কেমন লাগল?

ভালো।

শুধু ভালো? বেশ ভালো।

ও একটি একসেপশনাল মেয়ে। দূর থেকে এতটা বোঝা যায় না। ভালো করে না মিশলে আপনি বুঝবেন না।

আমি চুপ করে রইলাম। জুবায়ের সাহেব গাঢ় স্বরে বললেন, এ্যানির সঙ্গে পরিচয় হওয়াই ভাগ্যের ব্যাপার। পরিচয়টা স্থায়ী হল না।

এখনই এত নিশ্চিত হচ্ছেন কীভাবে?

তিনি থেমে থেমে বললেন, আমি নিজেও এক জন ডাক্তার। দিন, আরেকটা সিগারেট দিন। আমি প্যাকেট বাড়িয়ে দিলাম।

ফরিদ সাহেব।

জ্বি।

আপনি কি বিয়ে করেছেন?

না।

বিয়ে করেন নি কেন?

বিয়ে করার মতো সামর্থ্য কখনো হয় নি।

শুধু এই জন্যেই বিয়ে করলেন না?

হ্যাঁ, এই জন্যেই।

কোনো মেয়ের সঙ্গে কি কখনো পরিচয় হয়েছে?

আপনি যে অর্থে বলছেন, সেই অর্থে হয় নি।

ভালো লাগে নি কাউকে?

লেগেছে।

তাদের কাউকে কি তা বলেছেন?

না, বলা হয় নি।

ফরিদ সাহেব।

জ্বি।

বলেন নি কেন?

সাহস হয় নি।

বলা উচিত ছিল। এ্যানিকে কিছু বলার সাহস আমারও ছিল না। আমি মেয়েদের সঙ্গে কথা বলতে পারি না। আর দেখেছেন তো আমাকে, বাশগাছের মত ল। মেডিকেল কলেজে আমার নাম ছিল, বেঙ্গল বেধ্যে, বাংলাদেশের বাশ। তবু আমি সাহস করে বলেছিলাম।

এ্যানিও কি ডাক্তার?

হ্যাঁ, সেও ডাক্তার। আমরা একই ইয়ারেই পাশ করি।

জুবায়ের সাহেব, ঘুমিয়ে পড়েন।

আজ রাতটা আমি জেগে থাকতে চাই। আজ সারা দিন কী ভেবে রেখেছিলাম জানেন?

কী?

এ্যানিকে বলবরাতটা এখানে থেকে যেতে। গল্প করে কাটিয়ে দেওয়া যেত। আপনিও গল্প করতেন আমাদের সঙ্গে। অসুবিধা কিছু ছিল না। কি বলেন?

না, অসুবিধা কি?

ফরিদ সাহেব।

বলেন।

আপনি কি মৃত্যুর কথা ভাবেন?

হাসপাতালে আসবার আগে ভাবতাম, এখন ভাবি না।

এর কারণ কী জানেন?

না, জানি না।

চূড়ান্ত ভয়ের মুখোমুখি হলে এণ্ডেলিন নামের একটা এনজাইম প্রচুর পরিমাণে আমাদের শরীরে আসে। তখন আর ভয়টয় থাকে না। আপনার রক্তে এখন এলিন প্রচুর পরিমাণে আছে। কাজেই ভয়টয় লাগছে না। যত দিন যাবে, এণ্ডেলিনের প্রভাব কমে আসতে থাকবে। তখন আবার ভয়। আবার হতাশা।

আমি কিছু বললাম না। কথাটা হয়তো সত্যি। হাসপাতালে আমার খুব একটা খারাপ লাগছে না। এই কদিনে মৃত্যুর কথা এক বারও মনে হয় নি। যা হবার হবে–এ-রকম একটা ভাব চলে এসেছে। নাকি এরকম ভাব আমার মধ্যে সব সময়ই ছিল?

মনে হয় ছিল। সংসারে কার জন্যেই আমার কোন বিশেষ টান নেই। মা মারা যাবার তিন দিনের দিন আমি স্কুলের অন্য সব ছেলেদের সঙ্গে পিকনিকে গিয়েছিলাম। সেখানে মায়ের কথা এক বারও মনে হয় নি। আমরা সবাই বোধহয় নিজেদের জন্যেই বাঁচি। জুবায়ের সাহেব যদি সত্যি-সত্যি মারা যান, আমার কি খুব খারাপ লাগবে? সাপের মত লম্বা ফর্সা একটা মানুষ মারা গেলে আমার কী যায় আসে? শুধু আমার কেন, এ জগতের কারোরই কিছু যায় আসে না। এ্যানি নামের এই চমৎকার মেয়েটি হয়তো কিছু দিনের ভেতরই সুস্থ সবল একটি ছেলেকে বিয়ে। করবে। ছুটির দিনে নাটক দেখতে যাবে মহিলা সমিতিতে, ভালোবাসার কথা বলাবলি করবে গভীর রাতে। এদের ঘরে আসবে চমৎকার এক জন বাবু। খুব দুষ্ট হবে বাবুটি।

<

Humayun Ahmed ।। হুমায়ূন আহমেদ