সকাল বেলা সফিক আমাকে নিয়ে গেল রশীদ মিয়ার কাছে। রশীদ মিয়া তার রেজিস্ট্রি খাতায় আমার নাম তুলবেন। লোকটি ছোটখাটো। সামনের দুটি দাঁত সোনা দিয়ে বঁধানো। সেই দাঁত দুটি ছাড়া আর সমস্ত দাঁতে কুৎসিত হলুদ রঙ। আমি পান্থনিবাসে বোর্ডার হব শুনে তিনি এমন ভাব করলেন যেন এমন অদ্ভুত কথা এর আগে শোনেননি।

না। সাহেব বোর্ডার আর নেব না। শুধু শুধু ঝামেলা।

কিসের ঝামেলা?

টাকা পয়সা নিয়ে খোঁচামেচি করে।

আমি, আমি খোঁচামেচি করি?

আপনি না করেন। অন্য লোকে করে।

আমাকে নিয়ে কথা। আমি যদি না করি এও করবে না। মাসের তিন তারিখে খ্যাচাং করে টাকা ফেলে দিবে। নবী সাহেবের ঘরটা দেন তার নামে।

নবী সাহেব গেলে তবে তো দিব?

যতদিন না যান ততদিন থাকবে আমার ঘরে।

রশীদ মিয়া অনেকক্ষণ চুপ থেকে বললেন,

ঐ ঘরের ভাড়া এই মাস থেকে পাঁচ টাকা বেশি।

সফিক প্রায় তেড়ে গেল।

পাঁচ টাকা বেশি কেন? মোজাইক করে দিচ্ছেন্ন ঘরটিা?

রশীদ মিয়া নির্লিপ্ত সুরে বলল,

জানালা দুইটা। ঐ ঘরে আলো বাতাস বেশি খেলে।

একটা জানালা পেরেক মেরে বন্ধ করে দিবেন। সাফ কথা। খুলেন আপনার খাতা।

নিতান্ত গোমড়া মুখে খাতা খুললো রশীদ মিয়া।

পেশা কী?

আমি আমতা আমতা করে বললাম,

পেশা কিছু নাই – আমি ছাত্র।

ঝপাং করে খাতা বন্ধ করে রশীদ মিয়া আতংকিত স্বরে বললেন,

ছাত্র মানুষ ঘর ভাড়া পাবে কোথায়?

সফিক থমথমে গলায় বলল, যেখান থেকে পারে জোগাড় করবে। দরকার হয় চুরি করবে।

চুরি করবে?

হ্যাঁ, চুরি করবে। অসুবিধা আছে কিছু? আপনি করেন না?

আমি চুরি করি?

মালিকের পান্থনিবাস তো ফাঁকা করে দিচ্ছেন।

রশীদ মিয়ার চোখ ঠিকরে বেরিয়ে এলো।

কে, কে বলেছে?

বলা বলির তো কিছু নেই। সবাই জানে। সাধুজী তো পরিষ্কার বলেছেন, তীক্ষ্ণ চিবুক, ছোট কান এবং বর্তুলাকার চক্ষুর জাতক চোর স্বভাববিশিষ্ট হয়।

নিশানাথ এই কথা বলে?

হ্যাঁ বলবে না কেন? সাধুজী স্পষ্ট কথার লোক।

এরপর আর আমার নাম-ধাম খাতায় তুলতে অসুবিধা হয় না। রশীদ মিয়া গম্ভীর গলায় উপদেশও কিছু দেন, ঘরে মেয়ে ছেলে আনতে পারবেন না। ভদ্রলোকের মেস এইটা। ধান্ধাবাজির জায়গা না। বিশিষ্ট লোকজন থাকে।

অগ্রিম এক মাসের খাওয়া খরচের টাকা দেয় সফিক। তারপর খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে রশীদ মিয়ার পেটে হাত দিয়ে বলে, মাশআল্লাহ পেট তো আপনার আরো পােচ গিরা বড় হয়ে গেছে রশীদ মিয়া। সফিককে যতই দেখি ততই অবাক হই। এ কোন সফিক? দুবৎসরে তার এ কি পরিবর্তন!

মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল একবার। দেখি ঘরের মধ্যে লালচে আলো। সমুদ্র গর্জনের মত শাশা আওয়াজ হচ্ছে। ধরা মড় করে জেগে উঠে দেখি সফিক স্টেভ জ্বালিয়েছে।

কি ব্যাপার সফিক?

ব্যাপার কিছু না, চা খাব।

চা এই সময়? কিয়টা বাজে?

তিনটা দশ। তুই খাবি নাকি?

না।

রোজ এই সময় চা খাস নাকি?

না দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙলো, ভাবলাম একটু চা খাই।

আমি চুপ করে থাকলাম। সফিক ক্লান্ত স্বরে বলল,

বড় স্ট্রগল করতে হচ্ছে। ইউনিভার্সিটি ছেড়ে দিয়েছি জানিস না বোধ হয়?

আমি জানতাম না। স্তম্ভিত হয়ে গেলাম।

কী করে পড়ব বল? দিনে কম্পোজিটারের চাকরি। বিকালে টিউশনি আছে দুটো। এর পর আর এনার্জি থাকে না। নাইট কলেজে পাস কোর্সে নাম তোলা আছে। এই বছর আর হবে না।

সফিক দুটি কাঁপে চা ঢালল। আমি বললাম, এত রাতে চা খাব না। সফিক।

তোর জন্যে না, নিশানাথকে ডেকে আনছি।

কিছুক্ষণ পরই নিশানাথ জ্যোতির্ষিণবের গজগজানি শোনা গেল, বাত দুপুবে চা? এই সব কী শুরু করেছ? যাও চা খাব না।

সফিকের গলা আরেক ধাপ উঁচুতে, বানানো হয়েছে চা খাবেন না মানে? খেতেই হবে।

আরে হুঁকুম নাকি তোমার?

একশ বার হুঁকুম? বানালাম। এত কষ্ট করে আব্বা তিনি খাবেন না। আলবত খাবেন।

সফিকের কাণ্ড কারখানা দেখে আমি স্তম্ভিত। জ্যোতির্ষাণব অবশ্যি খবম খাট খািট কবে ঘবে এলেন। চায়ে চুমুক দিয়ে মুখ বিকৃত করলেন, চা কোথায়? ওয়াক থু। এ তো ইদুব মাবা বিষ।

সফিক সে কথার উত্তর দিল না। খানিকক্ষণ চুপ চাপ থেকে শান্ত স্বরে বলল, একটা গল্প বলুন নিশানাথ বাবু।

জ্যোতির্ষিণব চায়ের কাপ নামিয়ে বেখে উদ্বিগ স্বাবে বললেন, কী হয়েছে তোমার?

কিছু হয় নাই।

না, বল কি হয়েছে?

সফিক ক্লান্ত স্বরে বলল, একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছি। দেখলাম আমার ছোট বোন অনু মবে পড়ে আছে। সাত আটটা কাক তার পাশে বসে আছে।

নিশানাথ গম্ভীর হয়ে বললেন, শেষ প্রহরের স্বপ্ন। তার উপর এখন শুক্ল পক্ষ–স্বপ্নের কোনই মানে নেই। নাক ডাকিযে ঘুমাও।

একেবারে যে মানে নেই তা না নিশানাথ বাবু। অনুব হাসবেন্ডটা আরেকটা বিয়ে কবছে। সোমবার চিঠি পেয়েছি। মনটা বড় অস্থির। সন্ধ্যাবেলা আপনার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছি, কিছু মনে করবেন না। আমার মাথা ঠিক নাই। নিশানাথ বাবু কিছু বললেন না। চা শেষ করে নিঃশব্দে চলে গেলেন। আমি শুয়েই ছিলাম, ঘুম আসছিল না। সফিক জেগে রইল অনেকক্ষণ।

এই সফিক কী যে ক্যাবলা ছিল। একা একা স্কুলে আসতে ভয় পেত বলে রোজ তার বাবা স্কুলে দিয়ে যেতেন। টিফিনের সময় আমরা সবাই যখন ছোটাছুটি করে কুমীর কুমীর খেলি, তখন সে উদাস চোখে জানোলা দিয়ে তাকিয়ে থাকে। অংক স্যার একদিন বেগে গিয়ে বললেন, সবাই খেলছে আর তুই বসে আছিস? রহমান যা তো ওর কান মলে দে।

রহমান আমাদের ক্লাস ক্যাপটেন। সে গিয়ে কান চেপে ধরতেই সফিকের নিঃশব্দ কান্না। আমরা হোসে বাঁচি না। একদিন সফিকের বাসায় গিয়ে দেখি তার মা ভাত খাইয়ে দিচ্ছেন। ক্লাস ফোরে পড়ে ছেলে, মায়ের হাত ছাড়া খেতে পারে না! কি কাণ্ড কী কাণ্ড।

আমার ঘুম ভাঙলো খুব সকালে। বাইরে এসে দেখি একটি লোক হাফ পেন্ট পড়ে উঠ বাস করছে। আমাকে দেখে সে মনে হল একটু লজ্জা পেল। ইতস্তত করে বলল, সফিক সাহেবের বন্ধু আপনি?

জি।

আমি আজীজ। রেলে চাকরি করি। শরীরটা ঠিক রাখতে হয় ভাই। যা খাটনি।

আমি কিছু বললাম না। আজীজ সাহেব গায়ের ঘাম মুছতে মুছতে বললেন, আপনার মত রোগা পটকা হলে এত দিনে যক্ষ্মা হয়ে মরে যেতাম। শরীরের জন্যে টিকে আছি। ওয়াগন বুকিং-এর চাকরি যে কবে সেই জানে।

আমি লক্ষ্য করে দেখলাম লোকটির স্বাস্থ্য সত্যি ভাল। সচরাচর এমন চোখে পড়ে না। আমি হাসি মুখে বললাম, বেশ স্বাস্থ্য আপনার।

আর স্বাস্থ্য। খাওয়া জুটিাতে পারি না ভাই। শুধু ভিজা ছোলা খেয়ে কী স্বাস্থ্যু হয়? সারাক্ষণ ক্ষিধে লেগে থাকে। আসলাম পালোয়ান সকাল বেলা দশটা ডিম আর এক সেরা গোস্তের কিমা খাদ্য। এই সব জিনিস পাব কোথায় বলেন?

আজীজ সাহেব জোর কবে টেনে নিয়ে গেলেন বেলেব সরবত খাওয়ার জন্যে। এতে নাকি পেট ঠাণ্ডা থাকে। আজীজ সাহেবের ঘরটি বেশ বড়। তিনি এবং করিম সাহেব দুজনে মিলে থাকেন। করিম সাহেব লোকটি কংকালসার। মাথায় কোন চুল নেই। কিন্তু মুখ ভর্তি প্রকাণ্ড গোফ।

করিম সাহেব ইনি সফিক ভায়ের বন্ধু, এখানে থাকবেন।

করিম সাহেব হ্যাঁ না কিছুই বললেন না। খানিকক্ষণ গম্ভীর হয়ে থেকে নিচে নেমে গেলেন। তুমুল ঝগড়া শুরু হয়ে গেল তার পরই। কবিম সাহেব বাঁশীব মত চিকন গলায় চিৎকার করছেন, এত বড় বালতিটা চোখে পরল না?

বালতির মধ্যে নাম লেখা আছে, যে দেখলেই চিনব?

টেরা টেরা কথা বলবেন না।

টেরা কথা কে বলে, আমি না। আপনি?

যত ছোট লোকের আড়া হয়েছে।

মুখ সামলে কথা বলবেন সাহেব।

একজন অতি বৃদ্ধ লোক দেখলাম, কী বলে যেন দু’জনকেই থামাতে চেষ্টা করছেন। আজীজ

উনি নবী সাহেব। গার্লস স্কুলের এ্যাসিসটেন্ট হেড মাস্টার ছিলেন। রিটায়ার করেছেন। অবস্থাটা দেখেছেন? রাতে চোখে একেবারেই দেখতে পান না। হাত ধরে বাথরুমে নিতে হয়।

উনি নাকি ঘর ছেড়ে দিবেন, সফিক বলল।

আজীজ সাহেব গলা নিচু করে বললেন, পাগল হয়েছেন, শিকড় গজিয়ে গেছে। এই ঘর ছেড়ে যাবেন না কোথাও। দুই মেয়ে থাকে ঢাকা–জামাইরা বড় চাকুরে, তারা নেবাব চেষ্টা কম কবে নাই, নিজের চোখে দেখা। ছোট মেয়েটার কত কান্না কাটি…।

নবী সাহেব ঝগড়াটা থামিয়ে ফেললেন। তারপর নিচু গলায় ডাকতে লাগলেন, এই কাদের। এই কাদের। কাদের এই মেসের বাবুর্চি-টাবুর্চি হবে। সে এসে হাত ধরে তাকে উপরে নিয়ে এল। আজীজ সাহেব ফিসফিস করে বললেন, বুড়ার দিন শেষ হয়ে আসছে। হাঁপানি আছে, ডায়াবেটিস আছে, সারারাত খক খ্যক করে কাশে। কিন্তু তেজ কী–মেয়ের বাড়িতে গিয়ে থাকবে না। এত তেজ ভাল না রে ভাই। এখন আরাম নেয়ার সময়, কী বলেন?

তা তো ঠিকই।

বুড়া হলে বুদ্ধিাশুদ্ধি কিছু থাকে না।

সফিক ঘুম থেকে উঠে অন্য মানুষ। হাঁসি-খুশি ভাবভঙ্গি। চা খেতে খেতে বলল,

তোর কোনো চিন্তা নাই, প্রাইভেট টিউশনি ঠিক করে রেখেছি। সপ্তায় পাঁচ দিন যাবি। চোখ বন্ধ করে কলেজে ভর্তি হয়ে যা। শচারেক টাকাও জমিয়েছি। অসুবিধা হবে না। তা ছাড়া আরেকটা

বুদ্ধি বের করেছি।

কী বুদ্ধি?

ছুটির দিনে কাটা কাপড়ের ব্যবসা করব। তুইও থাকবি।

সেটা কী রকম ব্যবসা?

সস্তা দরে দোকান থেকে কাটা কাপড়ের পিস কিনে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে বিক্রি করব। লাভের ব্যবসা। লালু সব ঠিক ঠাক করে দিবে।

লালুকে?

কাটা কাপড়ের ব্যবসা করে। ধুরন্ধর লোক। আমাকে খুব খাতির করে।

আমি হাসি মুখে বললাম, তুই বদলে গেছিস খুব।

সফিক ঘর ফাটিয়ে হা হা করে হাসতে লাগলো।

বদলাবনা তো কী? তুইও বদলাবি। দুবেলা না খেয়ে থাকলেই সব উলট পালট হয়ে যায় বুঝলি। একদিন তো রাস্তায় সুচ বিক্রি করলাম। মজার ব্যাপার খুব।

সফিক সিগারেট ধরিয়ে ফুসফুস করে টানতে লাগল। ওর আগেব সেই সুন্দর চেহারা আর নেই। চোখের নিচে কালি পড়েছে, গালের চোয়ালে উঁচু হয়ে সমস্ত চেহারাটাই কেমন যেন রুক্ষ হয়ে পড়েছে। সফিক হাসি মুখে বলল, সুচ বিক্রির গল্পটা শোন। একেবারে মরণ দশা তখন। চাকরি-বাকরি কিছুই নেই। হাতে জমানে টাকা-পয়সা যা ছিল সব শেষ। পুরা একটা দিন উপোস। দরজা বন্ধ করে খানিকক্ষণ কাদলাম! সন্ধ্যাবেলা বেরিয়েছি রাস্তায়। এমনি সময় এক লোক এসে বলল, সুচ নিবেন ভাই? ছয়টা চাইর আনা। আমি অবাক হয়ে বললাম, সুচ বিক্রি করে চলে তোমার? সেই লোক আমতা আমতা করে না স্যার চলে কই? ঘবে চারজন খানেওয়ালা। সেই রাত্রেই শুরু হল আমার সুচেব ব্যবসা। মূলধন জোগাড় করলাম জ্যোতির্ষিণবের কাছ থেকে। খুব লাভের ব্যবসা। পাঁচ টাকার সুচে দশটাকা লাভ।

লজা লাগত না তোর?

না লজা লাগবে কেন?

পরিচিত কারোর সঙ্গে দেখা হয় নাই?

বেশি দিন সুচ বিক্রি করলে হয়ত হত। বেশি দিন করি নাই। তবে আমাদের ক্লাসের একটা মেয়ের সঙ্গে দেখা হয়ে গিয়েছিল একদিন। পেছন থেকে চিনতে পারিনি। যথারীতি বলেছি, আপা সুচ নেবেন, সস্তা করে দিচ্ছি। মেয়েটি ঘাড় ঘুরিয়ে আমাকে দেখে একেবারে ফ্যাকাশে হয়ে গেল। অনেক্ষণ কথাই বলতে পারল না। শেষটায় বলল, কাল সন্ধ্যায় একবার আমার বাসায় আসবেন? আসেন না। ঠিকানা রাখেন। আসবেন কিন্তু।

গিয়েছিলি?

গেলাম। রাজপ্রাসাদের মত বাড়ি। দেখলেই বুকের মধ্যে হুঁ হুঁ করে। মেয়েটিকে দেখে কে বলবে ওদের এত পয়সা। দারুণ মন খারাপ হয়ে গেল।

মেয়েটি সেই রাত্রেই কম্পোজিটারের একটা চাকরি জোগাড় করে দিল। প্রেসের মালিককে কী বলেছিল কে জানে, যাওয়া মাত্র এক মাসের এডভান্স বেতন।

মেয়েটা তো খুব ভাল।

ই ভাল মেয়ে। তোকে একদিন নিয়ে যাব।

সফিককে নিয়ে সেই দিনই কলেজে ভর্তি হয়ে গেলাম। কলেজের প্রিন্সিপাল গম্ভীর মুখে বললেন, তিন বছর লস দিয়েছ দেখছি। এই তিন বৎসর করেছ কী?

কান টান লাল হয়ে গেল আমার। নিজের অভাব অনটনের কথা আমি নিজে মুখ ফুটে কখনো বলতে পারি না।

পুরানো বইয়ের দোকান থেকে কিছু বইপত্র জোগাড় করলাম। যে বাড়িতে প্রাইভেট টিউশনি জোগাড় হয়েছে সে বাড়িতেও সফিক আমাকে নিয়ে গেল। নয় দশ বছরের একটি মেয়ে আর ক্লাস ওয়ানের একটি ছেলেকে পড়াতে হবে। এদের মা নেই। বাবা ব্যস্ততার মধ্যে সময় করতে পারেন না। ভদ্রলোক বললেন, দুটিই ভীষণ শয়তান, অস্থির হয়ে পড়েছি আমি। দেখেন ভাই যদি কিছু করতে পারেন। বাচা দুটিকে ভাল লাগল। ছোটটি দেখি একটি পেনসিল দিয়ে বোনকে খোঁচা দেয়ার চেষ্টা করছে। বড়টির মুখের ভাব এরকম যে এই সব ছেলেমানুষী ব্যাপার দেখে সে বড়ই বিরক্ত। বাচ্চা দুটির খুব মায়া কাড়া চেহারা।

পান্থ নিবাসে ফিরে এলাম অনেক রাতে। জ্যোতির্ষিণবের ঘরে প্রদীপ জ্বলছে, তার মোটা গম্ভীর গলা শোনা যাচ্ছে, আপনার রবির ক্ষেত্রে ত্রিশুল চিহ্ন আছে। অতি শুভ লক্ষণ। হাজারে একটা পাওয়া যায় না। তবে মঙ্গলের ক্ষেত্র ভাল না। গ্রহ কুপিত হয়েছেন।

আজীজ সাহেবের ঘরে হৈ হৈ করে তাস খেলা হচ্ছে। তীক্ষা গলায় কে যেন চোঁচাচ্ছে, এটা নো ট্রাম্পের কল? মাথার মধ্যে কিছু আছে আপনার? গোবর পুরা মাথায় অফিসের কাজকর্ম করেন কী ভাবে?

বারান্দায় পাটি পেতে লম্বা শুয়ে শুয়ে আছেন করিম সাহেব। কাদের তার গায়ে তেল মাখাচ্ছে। আরামে চোখ ছোট হয়ে আসছে করিম সাহেবের। আমাদের দেখে টেনে টেনে বললেন, তেল মালিশের মত উপকারী কিছু নাই। দুইটাই চিকিৎসা আছে, জলি চিকিৎসা আর তেল চিকিৎসা।

পান্থ নিবাসে আমার জীবন শুরু হল। ১১ই মার্চ উনিশশো পয়ষট্টি সন।

<

Humayun Ahmed ।। হুমায়ূন আহমেদ