মেয়ের এনগেজমেন্ট উপলক্ষে শায়লা অফিস থেকে চার দিনের ছুটি নিয়েছেন। অফিস থেকে ছুটি তিনি এর আগেও নিয়েছেন, কিন্তু এবারে ছুটির দরখাস্ত লিখতে যে আনন্দ পেয়েছেন সে আনন্দ কখনো পান নি।

ডিরেক্টর সাহেব বললেন, বিয়ে দেবার মতো বড় মেয়ে আপনার আছে তাই তো জানতাম না। আপনাকে দেখেই কলেজ্জের সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী মনে হয়। ছেলে কি করে?

শায়লা গভীর আনন্দের সঙ্গে বললেন, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার।

ডিরেক্টর সাহেব অবাক হয়ে বললেন, ভালো ছেলে পেয়েছেন তো! প্রেমের নিয়ে নাকি?

জ্বি না। আমার মেয়েরা প্রেম করা টাইপ না। ঘরোয়া ধরনের মেয়ে।

ছেলের বাবা কি করেন?

চার্টার্ড একাউন্টটেণ্ড ছিলেন। এখন রিটায়ার করেছেন। ছেলের দাদাকে আপনি হয়তো চিনবেন। সাবিহউল্লাহ খান। সোহরাওয়ার্দী সাহেবের আমলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন।

বাহা বড় গাছে দড়ি বেঁধেছেন। ভেরি গুড।

স্যার আমি খুবই খুশি হলো যদি মেয়ের এনগেজমেন্টের দিন উপস্থিত থাকেন। আমার তো তেমন কেউ নেই। ছেলে পক্ষ হলো জাহাজ আর আমরা কাগজের নৌকা।

যাব, আমি অবশ্যই যাব। বিয়ে হচ্ছে কবে?

সেপ্টেম্বরের সাত তারিখে। ছেলের আত্মীয়স্বতন বেশির ভাগই থাকে দেশের বাইরে। বড় ছেলের বিয়ে আত্মীয়স্বজন সবাই আসবে। এই জন্যেই সময় নিচ্ছে।

ভালো সংবাদ খুবই ভালো সংবাদ।

শায়লা চার দিনের ছুটি নিয়েছেন এই খবর শুনে চিত্রা হাসতে হাসতে বলল, চার দিন তুমি ঘরে বসে থেকে কী করবে? তোমার কাজ কী?

শায়লা অবাক হয়ে বললেন, কি বলিস তুই! আমার কোনো কাজ নেই?

না নেই। ওরা আসলে চা-টা খেয়ে চলে যাবে। তার জন্যে চার দিন ছুটি নিলে? চায়ের সঙ্গে নাশতা কি তৈরি করলে সেটা চিন্তা করার জন্যে দুদিন আর নাশতা বানানোর জন্যে দুদিন?

শায়লা বিরক্ত হয়ে বললেন, তুই বোকার মতো কথা বলবি না। মাথার গায়ে আমার কুত্তা পাগলের মতো অবস্থা। নিঃশ্বাস ফেলার সময় পাব কিনা সেটা পর্যন্ত বুঝতে পারছি না। পুরো সপ্তাহটাই ছুটি নেয়া উচিত ছিল।

প্রিজ্ঞা বল তো–এত কি তোমার কাজ।

শায়লা মেয়ের সামনে থেকে উঠে গেলেন। মেয়েকে না বলার মতো সময় তার নেই। এনগেজমেন্টের দিন পরার জন্যে শাড়ি কিনতে হবে। একসেট হালকা পানা বানিয়ে দেবেন। পাবার-দাবার কিছু মনে করা হবে। কিছু বাইরে থেকে কেনা হবে। এটাও ঠিক করতে হবে। এদিকে চিত্রার উত্তরার খালা টেলিফোন করে তুলেছেন একজন কাজির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে। অনেক সময় এ রকম হয় এনগেজমেন্টের পর বর পক্ষের কোনো মুরব্বি বলে বসেন–বিয়ে পড়ানো হয়ে যাক। তখন তাদের মুখের ওপর না করা যায় না।

এনগেজমেন্টের দিন কে কি দেয়া হবে বা দেয়া হবে না সেটা নিয়েও আলোচনার দরকার। ছেলে তাঁকে সালাম করলে তখন একটা আংটি তো তাকে পলাতে হলে। পনেরো টাকা দামের সস্তার আংটি কিনলে চলবে না। ওদের সম্মানের দিকে লক্ষ্য রেখে আংটি কিনতে হবে। বড় গাছে নৌকা বাঁধার সুবিধা যেমন আছে অসুবিধাও আছে। নৌকা যত ছোট অসুবিধা তত বেশি।

এদিকে কাকতালীয় ভাবে একটা ব্যাপার ঘটে গেছে। গত মাসে টিভি থেকে চিত্রা গান গাওয়ার প্রোগ্রাম পেয়েছিল। সেই গান রেকর্ড করা হয়েছে। প্রচার হয়নি। গানটা প্রচার হবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছটায়।

এরচে ভালো সংবাদ আর কি হতে পারে? বরপক্ষের আসার কথা চারটায়। ওনা নিশ্চয় সময়মতো আসবে না। আসতে আসতে পাঁচটা বাজবে। কথাবার্তা বলা, নাশতা খাওয়া, এতে ছটা বেড়ে যাবে। তখন হঠাৎ শায়লা চমকে উঠে বলবেন, আশ্চর্য ভুলেই তো গেছি আজি টিভিতে চিত্রার প্রোগ্রাম আছে। এই তোরা কেউ টিভিটা ছাড় না।

বাসার টিভিটা খারাপ। মাঝে মাঝে র চলে যায়। টিভি ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট হয়ে যায়। উত্তরার বড় আপার টিভিটা এনে লাখতে হবে। তবে মেয়ের গান নিয়ে আদিখ্যাতা করা যাবে না। গানের মাঝখানে শায়লা উঠে যাবেন নিজের জন্যে চা বানিয়ে আনতে। চা নিয়ে ঢুকবেন গান শেষ হবার পর এবং বললেন, গান শেয় হয়ে গেল নাকি? যেন টিভিতে গান গাওয়া খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার।

গানের অনুষ্ঠানের পর খুব স্বাভাবিক ভাবেই গান প্রসঙ্গে কিছুক্ষণ কথা হবে। তখন শায়লা বলবেন— ক্যাসেট কোম্পানিগুলি গানের ক্যাসেট বের করতে চায়। আমি রাজি না। মেয়ে তো একেবারেই রাজি না। তার কাছে গান হলো খুবই পার্সোনাল ব্যাপার। নিজের আনন্দের জন্যে গান করা। ক্যাসটে গান বের করা মানে মানুষের ঘরে ঘরে তার গলার স্বর পৌঁছে দেয়া–এটা নাকি চিত্রার ভালো লাগে না। আমি অবশ্যি এসব কিছু ভাবি না। তারপরেও কেন জানি ক্যাসেট বের করা আমার ভালো লাগে না।

চিত্রার কিছু বান্ধবীকে খবর দেয়া দরকার। যে কোনো উৎসবে মেয়েরা সেজেগুজে কলকল করতে থাকলেই উৎসবটা জমে। তবে খেয়াল রাখতে হবে কোনো মেয়েকেই যেন চিত্রার চেয়ে সুন্দরী না দেখায়। তখন সবার চোখ গিয়ে পড়বে ঐ মেয়ের দিকে।

কোনো একটা পার্লার থেকে চিত্রার চুলও সেট করে আনতে হবে। খুব সিম্পল ধরনের সেটিং। জবরজং দেখালে চলবে না, আবার ঘরে বসে হাত খোঁপা করে ফেলেছে এরকম মনে হলেও চলবে না।

কত সমস্যা। শালা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন। তবে এই দীর্ঘ নিঃশ্বাসে আনন্দ মিশে রইল।

 

রহমান সাহেবকে অফিসে আজ একটু অস্থির দেখাচ্ছে। এগারটা বাজে নি এর মধ্যে তিনবার চা খেয়েছেন, দুবার জর্দা দিয়ে পান গেয়েছেন। চার খিলি পান আনিয়ে গেছেন। ইচ্ছা হলে খাবেন।

অফিসে কারো সঙ্গে তাঁর তেমন সদ্ভাব নেই। তবে অফিসের বেয়ারা রতনকে তিনি খুবই পছন্দ করেন। সে যখন চা বা পান নিয়ে আসে তার সঙ্গে তিনি সংসানের কিছু টুকিটাকি কথা বলেন। আজ রাতে তিনি বড় মেয়ের সঙ্গে চাইনিজ হোটেলে খেতে যাবেন এই কথা রতনকে বলেছেন। গলা নিচু করে প্রায় ফিসফিস করে বলেছেন–

হোটেলের পাওনা আমার খুবই অপছন্দ। বড় মেয়েটা একটা শখ করেছে এই জন্যে যাওয়া। ছেলেমেয়েদের শখের দিকটা বাবা মাকে দেখতে হয়।

রতন বেশির ভাগ সময়ই আলাপ-আলোচনায় অংশ নেয় না। তবে এমন ভাবে কথা শুনে যে মনে হয় খুব আগ্রহ নিয়ে কথা শুনছে। রহমান সাহেব ঠিক করেছেন অফিস ছুটির পর রতনকে কাল রাতে মাছের ব্যাপারটা বলবেন। কি ভাবে মাছটা তাকে বলল, আজ আমাদের খাবার দেয়া হয় নি। সে অবিশ্বাস করবে না, অন্য কাউকে বলে বেড়াবে না। অফিস ছুটির পরও রহমান সাহেব বেশ কিছুক্ষণ থাকেন। ফাঁকা অফিসে কিছুক্ষণ একা বসে থাকতে তার ভালো লাগে। তখন রতন তার জন্যে লেবু চা নিয়ে আসে। এই চায়ের দাম রতন কখনোই তাকে দিতে দেয় না। রহমান সাহেবের ইচ্ছা করছে মেয়ের এনগেজমেন্টে রতনকে দাওয়াত করতে। শায়লা তো বলেছে অফিসের কোনো কলিগকে বলতে ইচ্ছা করলে তিনি বলতে পারেন। তবে যদি প্রকাশ হয়ে পড়ে তা এখন পিওন তাহলে সমস্যা হতে পারে। রতন যদি ভালোমতো সেজেগুজে ফিটফাট হয়ে যায় তাহলে তাকে পিওন মনে হবে না। রতনকে তিনি দাওয়াতের কথা কিছু বলেন নি শুধু বলে রেখেছেন— বৃহস্পতিবারটা খালি রেখ। এক জায়গায় যেতে হতে পারে। রতন ঘাড় কাত করেছে। কোথায় যেতে হবে, কি ব্যাপার কিছুই জিজ্ঞেস করে নি।

লাঞ্চের মিনিট দশেক আগে রহমান সাহেব চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। অফিসের বড় সাহেবের সঙ্গে তা বলা দরকার। লাবার সময় বড় সাহেব বাসায় লান্ত করতে যান। বেশির ভাগ সময়ই দেবেন না।

এই অফিসে সবাই বড় সাহেবের ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকে। তবে তিনি ভয় পান না। তিনি যথাসময়ে অফিসে আসেন, মন লাগিয়ে কাজ করেন, যথা সময়েরও পরে অফিস থেকে বাড়িতে যান। গত পাঁচ বছরে একদিনের জন্যেও দুটি নেন নি। তার টেবিলে কোনো পেন্ডিং ফাইল নেই। তার ভয় পাওয়ার কি আছে? তবে বড় সাহেবের চেহারা রাগী রাগী, গলার স্বরও রাগী। তিনি বড় সাহেবকে এমন কিছু বলতে যাচ্ছেন না যে বড় সাহেব রাগ করবেন এবং রাগী স্বর বের করবেন।

বড় সাহেব টেলিফোনে কথা বলছিলেন। পর্দা সরিয়ে এই দৃশ্য দেখে রহমান সাহেব ঠিক করতে পারলেন না, ঘরে ঢুকবেন নাকি ঢুকবেন না। কেউ টেলিফোনে কথা বললে হুট করে ঘরে ঢুকে পড়া ঠিক না। টেলিফোনে লোকজন অন্তরঙ্গ কথা বলে। বড় সাহেব হাতের ইশারায় রহমান সাহেবকে ঘরে ঢুকতে বললেন এবং ইশারা করলেন চেয়ারে বসার অন্যে। এটা একটা বিশেষ ভদ্রতা। বড় সাহেবের চেয়ে অনেক নিচের অফিসার সেকশনাল ইনচার্জ পরিমল বাবু এই ভদ্রতা করেন না। তার ঘরে কলে তিনি বসতে বলেন না। কেউ বসে পড়লে বিরক্ত হয়ে তাকান। বড় সাহেব টেলিফোন কানে রেগেই রাহমান সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন, কি ব্যাপার?

রহমান সাহেব বিনীত ভঙ্গিতে বললেন, স্যার আপনার কথা শেষ হোক তারপর বলি? এক সঙ্গে দুইজনের কথা শোনা মুশকিল।

বড় সাহেবের ভুরু কুঁচকে গেল। মুখের মধ্যে রাগ রাগ ভাল চলে এল। রাগ করার মতো কোনো কথা রহমান সাহেব বলেছেন কি না বুঝতে পারলেন না। বড় সাহেব টলিফোন রিসিভার নামিয়ে রেখে শুকনা মুখে বললেন, টেলিফোন নামালাম, এখন বলুন কি ব্যাপার।

রহমান সাহেব বললেন, একটা চাকরির ব্যাপারে এসেছি স্যার। বড় সাহেব বিস্মিত হয়ে বললেন, কি চাকরি?

একটা ছেলে স্যার। খুবই বিপদগ্রস্ত। অতি ভালো ছেলে। মেট্রিকে একটি ডিভিশন পেয়েছে, অংকে লেটার ছিল। ইন্টারমিডিয়েট রেজাল্ট সামান্য খারাপ হয়েছে, দশ নম্বরের জন্যে ফার্স্ট ডিভিশন পায় নাই।

বড় সাহেব কথার মাঝখানেই বললেন, হোল্ডে সেকেন্ড। আমরা কি চাকরির জন্য কোনো বিজ্ঞাপন দিয়েছি।

জ্বি না স্যার।

তাহলে আমাকে চাকরির কথা বলছেন কেন?

স্যার ছেলেটা আমাকেই চাকরির কথা বলেছে। আমি চাকরি কোথায় পাব? আপনারা বড় মানুষ, আপনাদের এত যোগাযোগ। যে কোনো চাকরি পেলেই চলবে–পিওন, দারোয়ান, টি বয়…

নাম কি ছেলের? নামটা স্যার এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। মনে পড়লেই আপনাকে জানাব।

যে ছেলের চাকরির জন্যে সুপারিশ করছেন তার নামই মনে নেই। ছেলে কি আপনার আত্মীয়?

জি না ভাড়াটের চাচাতো ভাই। স্যার ছেলেটা খুবই কষ্টে আছে একটু দেখবেন। ক্লাস টু-থ্রি পর্যন্ত ছেলেমেয়েকে সে প্রাইভেট পড়াতে পারবে।

বড় সাহেন কিছু বললেন না। বিস্মিত চোখে তাকিয়ে রইলেন। রহমান সাহেব উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললেন, নামটা মনে পড়লেই আপনাকে জানিয়ে দিব। ইনশাল্লাহ আজ দিনের মধ্যেই জানাব।

ইমার্জেন্সি কিছু নেই। আজ দিনেই যে জানাতে হবে তা না।

রহমান সাহেব নিজের সিটে ফিনের ড্রয়ারটা খুলতেই নাম মনে পড়ল—মজনু। লাইলী মজনুর মজনু। তিনি প্রায় সঙ্গে সঙ্গে উপরে উঠে গেলেন। বড় সাহেবও লাঞ্চের জন্যে বের হচ্ছিলেন। তাকে নামটা জানিয়ে দিলেন। নামটা মনে পড়ছে স্যার। মজনু। লাইলী মজনুর মজনু। বড় সাহেব কিছু বললেন না। তবে তাকে দেখে মনে হলে তিনি রহমান সাহেবের কথাবার্তায় একধরনের  মজা পাচ্ছেন।

অফিস দুটির পর রতন রং চা নিয়ে এল। রহমান সাহেব বললেন, আজ একটু তাড়াতাড়ি যেতে হবে। মেয়ে বাইরে খেতে নিয়ে যাবে, লন্ড্রি থেকে কাপড় আনতে হবে। গতকালের মতো ঝড় বৃষ্টি না হলেই হয়। বেচারী আশা করে আছে আমাকে নিয়ে যাবে— ঝড় বৃষ্টি হলে তো যেতে পারবে না। যাদের গাড়ি আছে তাদের অবশ্য কোনো সমস্যা নেই। ঝড় বৃষ্টি হলেই বরং তাদের সুবিধা। বৃষ্টি দেখতে দেখতে গাড়ি করে যাওয়া। কথা ঠিক বলেছি না রতন?

জ্বি।

তোমাকে কোনো একদিন একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নলব। মাছের বিষয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ কলা। আজই বলতাম, কিন্তু আমার আবার সকাল সকাল বাড়িতে ফেরা দরকার। কেউ আমার জন্য অপেক্ষা করে থাকবে এটা আমি চাই না। আমি সবার জন্যে অপেক্ষা করব, কিন্তু আমার জন্যে কেউ যেন অপেক্ষা না করে। এটা ভালো বুদ্ধি না?

জ্বি।

তোমাকে যে ঘটনাটা বলব এটা গতকাল রাত আনুমানিক এগারোটার সময় ঘটেছে। আমার স্ত্রী চৌবাচ্চায় গোল্ডফিশ পুষে। সেই গোল্ডফিশ নিয়ে একটা ঘটনা। কাল পরশু যে কোনো একদিন বলব। আমি যদি ভুলে যাই তুমি মনে করিয়ে দিও।

জ্বি আচ্ছা।

আর বৃহস্পতিবারটা ফ্রি রেখ। তোমার এক জায়গাত দাওয়াত। দাওয়াতটা ক্যানসেলও হয়ে যেতে পারে। ক্যানসেল হলে মনে কষ্ট নিও না।

জ্বি আচ্ছা।

 

সন্ধ্যার আগেই রহমান সাহেব লাড়ি ফিরলেন। চিত্রা বাড়িতে নেই, মার সঙ্গে শাড়ি কিনতে গিয়েছে। বিকেলে গিয়েছে এখনো ফিরে নি। রহমান সাহেব ধোপার দোকান থেকে পাঞ্জাবি ইস্ত্রী করে আনলেন। মেয়ে বাড়ি ফেরার আগেই তৈরি হয়ে থাকবেন যেন তাঁর কারণে দেরি না হয়।

মীরা বলল, বাবা তুমি এমন সেজে তে বসে আছ কেন? দেখে মনে হচ্ছে বিয়ে বাড়িতে যায়।

রহমান সাহেব বাব দিলেন না। মেয়ের দিকে তাকিয়ে হাসলেন। রাতে বাইরে খেতে যাওয়ার কথা মীনাকে বলতে পারতেন। বললেন না, কারণ মীরা খেতে যাচ্ছে না। শুধু তিনি আর চিত্রা। এতে মীরা মনে কষ্ট পেতে পারে। অল্পবয়েসী মেয়েরা খুব সহজেই কষ্ট পায়।

মীরা বলল, যত দিন যাচ্ছে তুমি যে ততই বদলে যায় এটা কি জান! মাঝে মাঝে তোমাকে দেখে মনে হয় তুমি আমাদের চিনতে পারছ না। মনে হয় তুমি এ বাড়ির কেউ না। তুমি একটা ফার্নিচার। আপার বিয়ে নিয়ে এত হৈচৈ, তুমি কিন্তু নির্বিকার। উত্তেজনায় মা রাতে ঘুমুতে পারছে না। তাকে ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমুতে হচ্ছে। আর তুমি দিব্যি নিজের মতো আছ। যে ছেলের সঙ্গে আপার বিয়ে হচ্ছে তুমি তার নাম পর্যন্ত জান না।

নাম জানব না কেন? নাম জানি।

বল নাম বল।

রহমান সাহেব বিপদে পড়ে গেলেন। তিনি নাম মনে করতে পারছেন না। তাঁর মনে ক্ষীণ সন্দেহ হলো— নামটা তাকে বলাই হয় নি। নাম মনে করার চেষ্টা করতেই একটা নাম তার মনে পড়ল লাইলী মজনুর, মজনু। কিন্তু মজনু ছেলেটার নাম না।

কি চুপ করে আছ কেন? নাম বল।

ভুলে গেছি। আমার কিছু একটা হয়েছে। নাম মনে করতে পারি না। ঐ দিন অফিসে বড় সাহেবের সঙ্গে কথা বলছি— বড়সাহেব নাম জানতে চাইলেন। আর তো দেখি নাম মনে পড়ে না। কিছুক্ষণ পরে মনে পড়েছে।

তোমার ধারণা আপার বরের নাম তোমার কিছুক্ষণ পরে মনে পড়বে?

হুঁ।

মনে পড়লে তো ভালোই। আমাকে জানিও। আর যদি মনে না পড়ে সেটাও আমাকে জানিও। মা তোমাকে ধরবে।

আমাকে ধরবে কেন?

এতক্ষণ যে আমি তোমাকে ধরলাম–সবই মার কথা। মা বলেই রেখেছে আজ তোমাকে জিজ্ঞেস করে জেনে নেবে তুমি কিছু জান কিনা।

রহমান সাহেব চিন্তিত গলায় বললেন, ছেলের নাম বল। মনে করে রাখি।

ছেলের নাম আহসান খান। মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। ছেলের বাবা জামালউদ্দিন খান। চাটার্ড একাউন্টেন্ট। এখন উনার নানান ব্যবসা আছে। আলফা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের উনি মালিক। ছেলের দাদা সাবিহউল্লাহ খান সোহরাওয়ার্দির আমলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন। মনে থাকবে?

একটা কাগজে লিখে দে। এত কিছু কি ভাবে মনে থাকবে?

সেটাই ভালো। লিখে দিচ্ছি। তুমি বসে বসে মুখস্ত কর। আজ তোমার মহাবিপদ। মা তোমার ওপর খুব রেগে আছে।

কেন?

কেনা তা যথাসময়ে জানলে এবং আমি মার সঙ্গে একমত। তোমার ওপর রাগ করার কারণ মার আছে।

রাত নটা বেজে গেছে চিত্রা তার মাকে নিয়ে এখনো ফেরে নি। রহমান সাহেবের ক্ষিধেয় নাড়ি খুলে যাচ্ছে। তিনি একটু চিন্তিত বোধ করছেন। আরো দেরি করলে তো রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যাবে। তার সময় কাটছে না। ক্ষুধার্ত অবস্থায় কোনো কিছুই ভালো লাগে না। খবরের কাগজ পড়ার চেষ্টা করলেন। খবরের কাগজ পড়তে তার সব সময়ই ভালো লাগে। সকালবেলা যে কাগজ পড়েন, সন্ধ্যাবেলাও সেই একই কাগজ পড়তে পারেন। সকালবেলায় তিনি কি পড়েছেন, সন্ধ্যাবেলায় তা তার পরিষ্কার মনে থাকে না। মীরা কাগজে সে সব তথ্য দিয়ে গেছে, সেগুলি তিনি ভালো মতো মুখস্থ করে রেখেছেন। শায়লা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে তাকে আটকাতে পারবেনা। মীরা যে তাকে ঝামেলা থেকে বাঁচানোর জন্যে এত কিছু করবে তিনি ভাবতেই পারেন নি। তার কাছে মনে হচ্ছে এ রকম একটা মেয়ে থাকা যে কোনো বাবার জন্যেই ভাগ্যের ব্যাপার।

চিত্রা ফিরল রাত সাড়ে নটায়। ফিরেই সাবান তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল। শায়লা বললেন, ভাত খেয়ে গোসলে যা। তোর গোসল তে এক ঘন্টার মামলা। এদিকে ক্ষিধায় মারা যাচ্ছি।

চিত্রা বলল, গা ঘিন ঘিন করছে। গোসল না করে খেতে পারব না।

শায়লা রহমান সাহেবের কাছে গিয়ে বললেন, তুমি সেজেগুজে বসে আছ কেন? কোথাও যাচ্ছ?

রহমান সাহেব ভীত গলায় বললেন, না।

তোমার কোনো বোনের বাসা থেকে ঘুরে আস না কেন? বোনের বাসায় চলে যাও।

কেন?

তোমার বোন আর দুপু্রে এ বাড়িতে এসেছিল। হাতে একটা আইসক্রিমের প্লাস্টিকের বাটি। বাটিতে দুই পিস ইলিশ মাছ। তুমি নাকি মাছ কিনে দিয়ে এসেছিলে। মাছ, সরিষা, কাঁচা মরিচ। তুমি যে ভাইবোনদের বাড়িতে বাজার করে দাও। তা তো জানতাম না।

রহমান সাহেব কিছু বললেন না। তিনি এমনিতেই ক্ষিধেয় অস্থির হয়ে ছিলেন। দুই পিস ইলিশ মাছের কথা শুনে ক্ষিদে আরো বেড়ে গেল।

শায়লা বললেন, তুমি নাকি তোমার বোনের ছেলেকে কম্পিউটার কিনে দিচ্ছ?

রহমান সাহেব অবাক হয়ে বললেন, কই না তো।

নিশ্চয়ই এ জাতীয় কথা বলছ–তোমার বোন তো বানিয়ে কথা বলছে না। কম্পিউটার নিয়ে তোমার বোনের সঙ্গে তোমার কোনো কথা হয়েছে, না হয় নি।

হয়েছে।

এই তো থলের বেড়াল বের হয়ে যাচ্ছে। বোনের ছেলেকে তুমি উপহার অবশ্যই দেবে। সেটা দেবে তোমার সামর্থ্য অনুযায়ী। কম্পিউটার কেনার সামর্থ্য কি তোমার আছে?

না নেই।

এক কাজ কর, রাত এমন কিছু বেশি হয় নি। তুমি তোমার বোনের বাসায় যাও। তাকে বুঝিয়ে বলে এসো–কম্পিউটার উপহার দেবার সামর্থ্য তোমার নেই। উপহার দিবে বলেছিলে, কিন্তু দিতে পারছ না।

এখনই যাব?

হ্যাঁ এখনি যাবে। তোমার বোনের দিয়ে যাওয়া ইলিশ মাছ আমি গরম করে রাখব। ফিরে এসে আরাম করে করে খাবে। বসে আছ কেন? উঠ। রহমান সাহেব উঠলেন। দিশাহারার মতো এগুলেন দরজার দিকে। শায়লা বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে। আর যাওয়া বাদ দাও। কাল অফিস ফেরত অবশ্যই বোনের কাছে যাবে। তাকে ভালোমতো বুঝিয়ে বললে।

রহমান সাহেব ঘাড় কাত করলেন। তাঁর বুক থেকে পাষাণ ভার নেমে গেছে।

শায়লার মেজাদ খুবই খারাপ। এত যন্ত্রণা করে তিনি যে শাড়ি কিনেছেন–বাসায় এসে সেই শাড়ির রঙ তার পছন্দ হচ্ছে না। শাড়ির জমিনে হলুদ এবং সোনালির মাঝামাঝি রঙ। সেই রঙ এখন কেমন যেন ময়লা দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে পুরনো শাড়ি। আঁচলের সবুজ কাজটাও ভালো লাগছে না। হিজিবিজি লাগছে।

তার মেজাজ খারাপের আরো একটি কারণ হল, বাসায় পা দিয়েই তিনি দেখেছেন মীরা টেলিফোন করছে। মাকে দেখেই সে তড়িঘড়ি করে টেলিফোন নামিয়ে রেখে দ্রুত অন্য ঘরে চলে গেল। লক্ষণ মোটেই ভালো না। প্রেমের চারাগাছ শুরুতেই উপড়ে ফেলতে হবে। চারাগাছ উপড়ানোর কাজটা তিনি রাতে ঘুমুবার আগে আগে করবেন ভেবে রেখেছিলেন। এখন মত পাল্টালেন। কোনো কিছুই ফেলে রাখতে নেই। যখনকার কাজ তখন করতে হয়। তিনি মীরার ঘরে ঢুকে বললেন, মীরা খেয়েছিস?

মীরা বলল, না। রাতে খাব না।

খালি না কেন?

তরকারি পছন্দ না। টেংরা মাছের ঝোল বেঁধেছে। টেংরা মাছ আমার দু চক্ষের বিষ।

ডিম ভেঙে দিতে বল। ডিম ভাজা দিয়ে খা।

মীরা বলল, আচ্ছা।

শায়লা মেয়ের খাটে বসতে বসতে বললেন, ইতিদের বাসা কোথায় রে?

মীরা অবাক হয়ে বলল, কোন ইতি?

তোদের সঙ্গে পড়ে যে মেয়ে।

ওর বাসা কোথায় আমি কি করে জানব?

ইতির বাবা কি করেন?

আমি জানি না মা ইতির বাবা কি করেন।

শায়লা অনেকক্ষণ মেয়ের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে রইলেন।

মীরা বলল, কি হয়েছে মা, এরকম করে তাকালে কেন?

শায়লা বললেন, আয় খেতে আয়। মীরার চোখে ভয়ের ছায়া। ইতি প্রসঙ্গ তার এখন মনে পড়েছে।

টেলিফোনে কার সঙ্গে কথা হয়?

মীরা চুপ করে রইল। শায়লা বললেন, ভাত খেয়ে তুই আমার ঘরে আসবি। কি ঘটনা আমাকে বলবি। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বলবি। ছেলের নাম, কোথায় প্রথম দেখা সব।

মীরা ক্ষীণ স্বরে বলল, শুধু টেলিফোনে কথা হয় মা। আর কিছু না।

দেখা হয় নি এখনো?

না।

না দেখেই প্রেমের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছিস? প্রেম এত সস্তা? টেলিফোনে গলার স্বর শুনে প্রেম?

প্রেম না মা।

প্রেম না তো কি?

কথা বলতে ভালো লাগে। তাই কথা বলি।

রোজ কথা হয়?

হ্যাঁ।

ছেলের টেলিফোন নাম্বার কি?

টেলিফোন নাম্বার আমি জানি না মা, আমি টেলিফোন করি না সে করে।

টেলিফোনে অশ্লীল কথা বলে?

না তো। অশ্লীল কথা বললে কেন?

বলবে কি-না সেটা তো আমি জানি না। বলে কি না সেটা বল।

না বলে না।

তুই কখনো ছেলেকে দেখতে চাস এমন কথা বলিস নি? বলিস নি যে আমি নিউ মার্কেটে যাচ্ছি অমুক দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকব। শাড়ি পরে যাব–শাড়ির কালার এই— এমন কথা বলিস নি। ঠিক মতো জবাব দে।

বলেছি।

সে দেখা করতে রাজি হয় নি?

না।

টেলিফোনটা আসে কখন? আমি যখন বাড়িতে থাকি না তখন?

হ্যাঁ।

যে ছেলে তোকে টেলিফোন করছে সে খুব ভালো করে জানে আমি কখন বাড়িতে থাকি, কখন থাকি না। তোর সঙ্গে দেখা করছে না ভয়ে। দেখা হলে তোর প্রেম চলে যাবে এই ভয়। আমার ধারণা মজনু–হারামজাদাটা এই কাজ করছে। তুই তো বোকার হদ্দ, বুঝতে না পেরে প্রেমে গড়াগড়ি খাচ্ছিস। ছেলেটা কে তোকে বলে দিলাম। এখন কায়দা করে বের কর। তারপর দেখ আমি ঐ ছোঁড়াকে কি করি। প্রথমে মা ডেকে তোর পায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়লে তারপর অন্য কথা। কত বড় সাহস। নাম মজনু টেলিফোনে লাইলী যোগাড় করে ফেলেছে। আয় ভাত খেতে আয়।

মীরা বাধ্য মেয়ের মতো ভাত খেতে গেল। মাকে খুশি করার জন্যে তার অতি অপছন্দের টেংরা মাছ ঢার পাঁচটা খেয়ে ফেলল। মীরা ভেবে ছিল খাওয়ার পর মা দ্বিতীয় অধিবেশন বসাবেন। কবে প্রথম কথা হয়েছিল। কি কি কথা সব জানতে চাইবেন। তা হলো না। শায়লার মাথা ধরেছে। তিনি রাতে খেলেন না। এক কাপ দুধ খেয়ে ঘুমুতে গেলেন। তিনি বিছানায় হয়ে থাকবেন ঠিকই তবে অনেক রাত পর্যন্ত তার ঘুম আসবে না। বিছানায় কিছুক্ষণ গড়াগড়ি করে আবারো উঠে পড়লেন।

মীরা অনেক রাত পর্যন্ত জেগে বসে রইল। মার কথা তার কাছে সত্যি বলে মনে হচ্ছে। কারণ এই ছেলে টেলিফোনে একবার বলেছিল–মীরা তুমি আজ শাড়ি পরেছ কেন? শাড়িতে তোমাকে অনেক বড় বড় লাগছে।

মীরা অবাক হয়ে বলেছে— আরে সত্যি তো। আমি আসলেই শাড়ি পরেছি। তুমি জান কি ভাবে?

ম্যাজিকের মাধ্যমে জানলাম।

বল তো শাড়ির রঙ কি। তাহলে বুঝব তুমি ম্যাজিক জান।

রঙ হচ্ছে আকাশি।

হয় নি। রঙ মেরুন সবুজ পড়ি।

মীরা বাতি নিভিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। তার ঘুম আসছে না। চাকর টাইপ একটা লোকের সঙ্গে সে দিনের পর দিন তুমি তুমি করে কথা বলেছে। নানান রকম আহ্লাদী করেছে। মজনু ভাইয়ের সঙ্গে গতকালই দেখা হলো। মীরা স্কুলে যাবার জন্যে রিকশা খুঁজছে— মজুন ভাই বাজার করে ফিরছেন। হাত ভর্তি বাজার। একটা চটের ব্যাগ— এমন ভারি যে তাকে নুয়ে পড়তে হচ্ছে। মীরা তাকে দেখেই বলল, মজনু ভাই একটা রিকশা ডেকে দিন তো। মজনু ভাই সঙ্গে সঙ্গে রিকশার খোঁজে গেল। বাজারটা রেখে যেতে পারত। তা করল না, বাজার হাতে করেই গেল। রিকশা নিয়ে ফিরে এসে বলল, মীরা রিকশা ভাড়া দিও না।

মীরা বলল, ভাড়া দেন না কেন?

রিকশা ভাড়া আমি দিয়ে দিয়েছি।

আপনি কেন দেবেন?

ভাংতি ছিল দিয়ে দিয়েছি।

মন ভাই বাজারের ব্যাগ নামিয়ে কপালের ঘাম মুছে আনন্দে হাসতে লাগলেন। যেন বিরাট একটা কাজ করেছে। রাজকন্যা স্কুলে যাবে তার জন্যে এরোপ্লেন কিনে নিয়ে এসেছেন।

মীরার প্রচণ্ড রাগ লাগছে। রাগটা কিছুতেই কমছে না। রাগ নিয়ে ঘুমুতে যাওয়া ঠিক না। ঘুম ভালো হয় না। ঘুমের মধ্যে বোবায় ধরে। স্বপ্নে মধ্যে মনে হয় বিকট কোনো জন্তু বুকের ওপর চেপে নিঃশ্বাস বন্ধ করে দিচ্ছে। জন্তুটার গায়ে বোটকা গন্ধ। জন্তুটা যে স্থির হয়ে বসে থাকে তাও না। নড়াচড়া করে। মাঝে মাঝে কপালে হাত দেয়। সেই হাত শরফের মতো শীতল এবং শিশুর হাতের মতো ছোট।

বোবার হাত থেকে বাঁচার জন্যে এক বিছানায় শোয়া যাবে না। অন্য কাউকে নিয়ে ঘুমুতে হবে। আপার সঙ্গে ঘুমানো যায়। চিত্রার সঙ্গে ঘুমুতে যাবার একটাই সমস্যা চিত্রা গুটুর গুটুর করে সারারাতই গল্প করবে। হয়তো মীরা ঘুমিয়ে পড়েছে–চিত্রা খিলখিল করে হেসে উঠে বলবে, এই মীরা আজ কি হয়েছে শোন।

আপা ঘুমে আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।

ঘুমঘুম চোখেই শোন।

প্লিজ।

না শুনলে না শুনবি। আমি বলে যাচ্ছি। তুই দুই হাতে কান চেপে পড়ে পাক। হয়েছে কি আমাদের সঙ্গে একটা ছেলে পড়ে তার নাম কামরুল হুদা। আমরা সবাই তাকে ডাকি কামরুল বেহুদা। স্মার্ট ছেলে, কাজের ছেলে, পড়াশোনাতেও ভালো। টাল্টুবাল্টু টাইপ না। সে একদিন আমার কাছে এসে বলল— চিত্রা সবাই আমাকে বেহুদা ডাকে। খুব ভালো কথা। তুমি বেহুদা ডাকবে কেন? আমি বললাম, সবাই ডাকলে যদি দোষ না হয়, আমি ডাকলেইবা দোষ হবে কেন? এই মীরা গল্পটা শুনছিস না ঘুমিয়ে পড়ছিস। আচ্ছা তারপর কি হয়েছে শোন–আমার কথা শুনে কামরুল বেহুদা কেমন যেন হয়ে গেল। তারপর আমাকে হতভম্ব করে দিয়ে ফট করে আমার হাত ধরে গদগদ গলায় বলল, চিত্রা তুমি এটা কি বললে?

মীরার ততক্ষণে ঘুম সম্পূর্ণ কেটে গেছে। সে ধড়মড় করে বিছানায় উঠে ললেছে— কি সর্বনাশ! তারপর?

তোর ঘুম কেটেছে?

হ্যাঁ। তারপর কি হয়েছে?

চিত্রা হাই তুলতে তুলতে বলল, কিছুই হয় নি। তোর ঘুম ভাঙাবার জন্যে এই গল্পটা বানালাম। কামরুল বেহুদা নামে আমাদের ক্লাসে একজন ছাত্র সত্যিই আছে। বেহুদা ডাকলে সে খুশিই হয়। দাঁত বের করে হাসে। তার প্রধান কাজ হলো ক্লাসের মেয়েদের বাসায় টেলিফোন করা এবং গম্ভীর ভঙ্গিতে বলা— আমি বেহুদা বলছি।

একটা মিথ্যা গল্প বলে আমার ঘুম ভাঙালে?

হ্যাঁ। সত্যি গল্প শুনলে কখনো কারো ঘুম ভাঙে না। উল্টা আরো ঘুম পায়। ঘুম ভাঙে মিথ্যা গল্প শুনলে। ঘুম ভাঙানোয় তোর মেজাজ খারাপ হয়েছে তো? এখন কেন ঘুম ভাঙিয়েছি সেই কারণ জানলে মেজাজ আরো খারাপ হবে।

কেন ঘুম ভাঙিয়েছ?

গান গাইতে ইচ্ছা করছে। আমি গান গাই তুই শুনবি।

অসম্ভব।

কিন্নর কণ্ঠের একজন শিল্পী নিজের ইচ্ছায় তোকে গান শুনাতে চাচ্ছে তুই শুনবি না? বল তো তুই কেমন মেয়ে? একদিন যখন সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে আমি খুবই বিখ্যাত হয়ে যাব তুই তো পড়বি মহাবিপদে।

কি বিপদে?

আমি একটা বই লিখব— আমার সঙ্গীত জীবন। সেখানে এই ঘটনার উল্লেখ থাকবে। বই পড়ে তার ছেলে-মেয়েরা রাগ করে তোকে বলবে, মা তুমি বড় খালার সঙ্গে এরকম করতে পারলে? ছিঃ মা ছিঃ।

মীরাকে বাধ্য হয়ে গান শুনতে হবে। চিত্রা তার প্রিয় গান গাইবে। একটাই গান রবীন্দ্র সঙ্গীত। নজরুল গীতির শিরীর প্রিয় গান হল রবীন্দ্র সঙ্গীত–

বধূ কোন আলো লাগল চোখে
বুঝি দীপ্তিপে ছিলে সূর্যলোকে!
ছিল মন তোমারি প্রতীক্ষা করি
যুগে যুগে দিন রাত্রি ধরি

রাজকন্যা চিত্রাঙ্গদার গান। চিত্রাঙ্গদা গিয়েছে বনে হরিণ শিকারে। সেখানে দেখা হলে অর্জুনের সঙ্গে। তখনি এই গান। এই গান গাইবার সময় চিত্রার চোখে সব সময় পানি আসে। মীরার সমস্যা হলো বোনের চোখে পানি দেখলে তার চোখেও পানি আসে। গান শুনতে গিয়ে যদি কাঁদতে হয় তাহলে সেই গান। শোনার দরকার কি?

 

মীরার ইচ্ছা করছে বোনের সঙ্গে গিয়ে ঘুমুতে, আবার মনে হচ্ছে থাক দরকার নেই। সেখানে যাওয়া মানেই রাত জাগা। ঘুম পাচ্ছে। মীরা জানে ঘুমিয়ে পড়লে আজ তাকে বোবায় ধরবেই। ধরলে ধরুক। বোবা তাকে গলা টিপে মেরে ফেলুক। তাহলেই তার উচিত শিক্ষা হবে। কি লজ্জা কি ঘেন্না। চাকর শ্রেণীর একজনের সঙ্গে গভীর আবেগে সে প্রেমের কথা বলে যাচ্ছে। তুমি তুমি করছে। মীরার বুদ্ধি কম বলে সে বুঝতে পারে নি। অন্য যে কোনো মেয়ে ব্যাপারটা চট করে ধরে ফেলত। যখন টেলিফোন নাম্বার দিয়ে না তখনই সন্দেহ করা উচিত ছিল। ছেলেরা এইসব ব্যাপারে আগ বাড়িয়ে টেলিফোন নাম্বার দেয়। অথচ এই ছেলে দিচ্ছিল না। আর মীরা বাড়ির ঠিকানা পর্যন্ত দিয়ে বসে আছে।

মীরা ঘুমুচ্ছিস?

মা দরজায় টোকা দিয়েছেন। মীরা জবাব না দিয়ে মটকা মেরে পড়ে থাকতে পারে। এটা ঠিক হবে না। কোনো না কোনো ভাবে মা ধরে ফেলবেন যে মীরা জেগে আছে। তার চেয়ে উত্তর দেয়া ভালো।

কি রে কথা বলছিস না কেন?

মীরা বিছানা থেকে দরজা খুলে বের হয়ে এল। শায়লা শান্ত গলায় বললেন, চুপি চুপি একটু বারান্দায় যা তো।

মীরা খুলল, কেন?

শুয়েছিলাম ঘুম আসছিল না। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি তোর বাবা মাছের চৌবাচ্চার পাশে বসে আছে। বিড়বিড় করে কি যেন বলছে। চুপি চুপি তোর বাবার পেছনে গিয়ে দাঁড়া, তারপর শুনতো সে কি বলে।

মীরা বলল, থাক না মা শোনার দরকার কি? সব মানুষই যখন একা থাকে তখন নিজের মনে কথা বলে। বাবাও তাই করছে।

তোকে জ্ঞানী হতে হবে না। যা করতে বলছি কর। বিড়বিড় করে কি বলছে শুনে আয়। নিঃশব্দে যাবি। আমি দরজা খুলে রেখেছি। দুই পা টিপে টিপে যাবি।

তুমি দাঁড়িয়ে থাকবে?

আমি শুয়ে পড়ল। ঘুমের ওষুধ খেয়েছি। এখন আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। তোর বাবা কি বলে শুনে রাখ। সকালে আমাকে বলবি।

 

মীরা পা টিপে টিপে গেল। সে তেমন কিছু দেখল না। তার বাবা চুপচাপ বসে আছেন। বিড়বিড় করছেন না। নিজের মনে কথা বলছেন না। দীর্ঘ নিঃশ্বাসও ফেলছেন না। মীরা ডাকল, বাবা।

রহমান সাহেব মেয়ের দিকে তাকিয়ে হাসলেন।

মীরা বলল, কি করছ?

রহমান সাহেব বললেন, বসে আছি রে মা। কিছু করছি না।

সিগারেট খাচ্ছ? অবার চৌবাচ্চায় ফেলবে। মা রাগারাগি করলেন। এরপর থেকে চৌবাচ্চার পাশে যখন বসে একটা এসট্রে নিয়ে বসবে। তুমি এসট্রে খুঁজে না পেলে আমাকে বলবে।

আচ্ছা।

মীরার হঠাৎ তার বাবার জন্যে খুব মমতা লাগল। এই বাড়িতে মানুষটা খুবই একা। কারো সঙ্গেই তার যোগ নেই। কেউ তার সঙ্গে বসে সুখ-দুঃখের কোনো কথাও বলে না। কিছু কিছু মানুষ হঠাৎ ছায়া হয়ে যায়। মানুষটার অস্তিত্ব থাকে না। শুধু ছায়া ঘুরে বেড়ায়। মানুষের সঙ্গে মানুষের ভাব হয়। ছায়া মানুষের সঙ্গে ভাব হয় ছায়া মানুষের। এ বাড়িতে আরেকজন ছায়া মানুষ থাকলে ভালো হত। দুজন দুয়া মানুষ গল্প করত।

বাবা!

কি?

একটা গল্প বল তো।

রহমান সাহেব খুবই অবাক হয়ে বললেন, কি গল্প?

মীরা বলল, যে কোনো গল্প। তোমার ছেলেবেলার গল্প, কিংবা তোমার অফিসের গল্প। শৈশবের একটা স্মৃতির গল্প বল শুনি। ইন্টারেস্টিং কোনো স্মৃতি। তুমি তোমারটা বললে। আমি বলব আমারটা।

তোরটা আগে বল।

মীরা খুব আগ্রহের সঙ্গে হাত-পা নেড়ে গল্প শুরু করল। বাবা আমি তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি। ফোর্থ পিরিয়ড চলছে। অঙ্ক মিস ক্লাস নিচ্ছেন। হঠাৎ স্কুলের দপ্তরি এসে বলল, মীরা রোল ২৬ বড় আপা ডাকেন। বড় আপা হলেন আমাদের হেড মিসট্রেস। আমরা সবাই তাকে যমের মতো ভয় পাই। ভয়ে আমার হাত পা কাঁপতে লাগল। আমি ভয়ে অস্থির হয়ে উনার সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। গিয়ে দেখি আপা খুব খুশি। আমাকে দেখে আহ্লাদী গলায় বললেন, কি রে তোর নাম মীরা! কেমন আছিস?

আমি ফিসফিস করে বললাম, ভালো।

দাঁড়িয়ে আছিস কেন? বোস।

আমি আপার সামনের চেয়ারে বসলাম। আপা আরো আল্লাদী করে বললেন, পড়াশোনা কেমন হয় রে?

আমি বললাম, ভালো।

কোন সমস্যা হলে আমাকে বলবি।

আমি বললাম, জ্বি আচ্ছা।

তোর জন্যে চকলেট আনিয়ে লেগেছি। নে খা। চকলেট খেয়ে কি কুলি করে দাঁত পরিষ্কার করতে হয়। নয়তো দাঁতে মিষ্টি লেগে থাকবে। সেখান থেকে ক্যারিজ হবে। ক্যারিজ কি জানিস তো? দাঁতের পোকা।

ভয়ে ভয়ে চকলেট হাতে নিলাম। তখন আপা তুললেন, তোর এক চাচা যে পূর্তমন্ত্রী সালেহ সাহেব সেই কথা তো তুই কখনো বলিস নি।

আমি চুপ করে আছি। আমার কোনো চাচা পূর্তমন্ত্রী না। কিন্তু আপাকে সেই কথা বলার সাহস নেই। আপা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করলেন। কপালে চুমু দিয়ে বললেন, যা ক্লাসে যা। তোকে দেখেই মনে হচ্ছে তুই খুব লক্ষ্মী মেয়ে।

আমি ক্লাসে চলে এলাম। এরপর স্কুলে আমার খুব খাতির হলো। সব আপারা আমাকে চেনে। সবাই আদর করে। পড়া না পারলেও কেউ কোনো দিন বকা দেয় নি। আমিও কখনো তাদের ভুল ভাঙাই নি। দেখলে বাবা কি অদ্ভুত ব্যাপার। আমি ক্লাসের কোনো বান্ধবীকে এখনো বলি নি যে পুরো ঘটনা মিথ্যা। সালেহ সাহেব বলে কোনো পূর্তমন্ত্রী আমার চাচা হওয়া দুরে থাকুক আমি চিনিও না। পূর্তমন্ত্রী যে গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যাপার তাও জানি না।

রহমান সাহেব বললেন, সালুকে তুই চিনলি না কেন? আমার সঙ্গে স্কুলে পড়ত। বখাটে টাইপ ছিল। মন্ত্রী হবার আগে কয়েকবার এসেছে। তোকে তো  খুবই আদর করত। মন্ত্রী হবার পরেও অফিসে টেলিফোন করে তোর খোঁজ করেছে। কোন ক্লাসে পড়িস এইসব জানেতে চেয়েছে। আমাকে বলেছিল হঠাৎ একদিন পুলিশ টুলিশ নিয়ে তোদের স্কুলে উপস্থিত হবে। তোকে চমকে দেবে।

মীরা অবাক হয়ে বলল, কই আমাকে তো কিছু বল নি।

বলার কি আছে?

আপার বিয়ের এনগেজমেন্টে তাঁকে দাওয়াত করেছ?

না।

কর নি কেন?

তোর মা বলেছে শুধু অফিসের দু-একজনকে বলতে। আমি একজনকে বলেছি।

বাবা তুমি অবশ্যই পূর্তমীকে বলবে। আমাদের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ দুএকজন তো থাকা দরকার। মা কি জানে পূর্তমন্ত্রীকে তুমি চেন?

না তাকে কিছু বলি নি।

অফিসের কাকে নিমন্ত্রণ করেছ? তোমাদের বড় সাহেবকে?

না। রতনকে বলেছি। অত্যন্ত ভালো মানুষ। আমার পিওন।

মীরা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। তার হাসি পাচ্ছে, কিন্তু সে হাসতে পারছে না। তার কাছে মনে হচ্ছে বাবার কোনো একটা সমস্যা হচ্ছে। বাবা ঠিক স্বাভাবিক না। তাঁর তাকানো, বসে থাকা, কথাবার্তা বলা সব কিছুর মধ্যে সামান্য হলেও অস্বাভাবিকতা আছে। মীরা বলল, রাত অনেক হয়েছে বাবা চল ঘুমুতে যাই।

রহমান সাহেন অবাক হয়ে বললেন, তুই না বললি তুই একটা গল্প বলবি। তারপর আমি একটা বল। আমারটা তো বললাম না।

মীরা বলল, বেশ তো বল।

মাছের একটা ব্যাপার, বুঝলি।

মাছের ব্যাপার মানে-কি?

রাতের বেলায় চেষ্টার কাছে বসেছিলাম। তোর মা তো রাতের বেলা মাছ ঘরে নিয়ে যায়। সেই রাতে নেয় নি। হয়তো নিতে ভুলে গেছে। কিংবা মনে করেছে রোজ রাতে মাছদের নাড়াচাড়া করা ঠিক না। কিছু একটা সে ভেবেছে। মাছগুলি নেয় নি। আমি ওদের পাশে বসে সিগারেট খাচ্ছি, হঠাৎ চৌবাচ্চার ভিতরে মাছ একটা ঘাই দিল। আমি তাকালাম। তারপর দেখি একটা মাছ উপরে উঠে এসে আমাকে বলল–আজ আমাদের খাবার দেয়া হয় নি। মাছদের মতোই বিজবিজ করে বলল, তবে আমি স্পষ্ট শুনলাম এবং বুঝতে পারলাম। এই হলো আমার গল্প।

মীরা অবাক হয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। রহমান সাহেব নির্বিকার ভঙ্গিতে সিগারেট নিয়েছেন। তাকে দেখে মনে হচ্ছে ঘটনাটা বলে ফেলতে পেরে তিনি স্বস্তি পাচ্ছেন।

বাবা মাছ তোমার সঙ্গে কথা বলল?

হুঁ। তোর মাকে আবার বলিস না। তোর মা শুনলে ভেবে বসবে আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। দুঃশ্চিন্তা করবে। মেয়েরা আবার দুশ্চিন্তা করতে খুবই পছন্দ করে। দুঃশ্চিন্তা করার কোনো বিষয়ই না, এমন সব নিয়েও তারা দুঃশ্চিন্তা করে। আমার নিজের মাকে দেখেছি তো বেচারী মারাই গেছেন দুঃশ্চিন্তা করতে করতে।

তোমার মা খুব দুঃশ্চিন্তা করতেন?

অতিরিক্ত করতেন। দুঃশ্চিন্তার কারণে তিনি স্থির হয়ে এক জায়গায় বসেও পাকতে পারতেন না। ছটফট করতেন। মনে কর আমি বাথরুমে গেছি। বাথরুম থেকে বের হতে দেরি হচ্ছে। মা ভাববে আমি অজ্ঞান হয়ে বাথরুমে পড়ে আছি। তখন ছুটে এসে বাথরুমের দরজায় ধাক্কা দিতে দিতে বললে—ও রহমান তোর শরীর ঠিক আছে? একটু কথা বল বাবা।

ঘুমুতে এসো বাবা।

তুই যা আমি বসি আরো কিছুক্ষণ। আমার ঘুম পায় নাই। রাত তিনটার আগে আমার ঘুম পায় না। বিছানায় শুয়ে জেগে থাকার চেয়ে এখানে বসে জেগে থাকা ভালো।

মীরা চিন্তিত মুণে ঘরে ঢুকল।

রহমান সাহেবের মনে হলো গান বলতে গিয়ে তিনি ভুল করেছেন। শৈশবের গল্প বলার কথা, তিনি সেটা না করে এই বয়সের একটা কথা বলেছেন। মোটামুটি চুক্তি ভঙ্গ করা হয়েছে। শৈশবে তার অনেক গল্প আছে। ইঁদারার গল্পটা বললে মীরা মজা পেত। গল্পটা সামান্য ভয়ের। তবে মীরার বয়সের ছেলেমেয়েরা ভয়ের গল্প শুনলে মজা পায়। মেয়েটাকে কোনো একদিন সময় করে গল্পটা বলতে হবে। সবচে ভালো হত যদি রোজ রাতে একটা করে গল্প বলতে পারতেন। রাতের খাওয়া দাওয়ার পর তিনি চৌবাচ্চার পাশে এসে বসলেন, কিছুক্ষণ পর মেয়েরা এসে পাশে বসল। তিনি গত শুরু করলেন।

বুঝলি মায়েরা, আমি তখন ছোট। কত আর বয়স ছয় সাত। তখন আমাদের বাড়িতে পেত্নীর উপদ্রপ হল। একটা খারাপ স্বভাবের পেত্নী খুব যন্ত্রণা শুরু করল…

<

Humayun Ahmed ।। হুমায়ূন আহমেদ