বসদের অফিস ঘর থাকে এক রকম, আবার সুপার ড়ুপার বসদের অফিসঘর থাকে অন্যরকম। তাদের অফিসঘরে পা দেয়া মাত্ৰই চাপা গলায় বলতে ইচ্ছা করেখাইছে রে! তারপরেই মনে হয়— আমি কোথায় ঢুকলাম? জাহাজের ইঞ্জিনাঘরের শব্দের মতন শব্দ (তবে অনেক হালকা) মাথার ভেতর পিনপিন করতে থাকে। সারাক্ষণ অস্বস্তি— শব্দটা কোথেকে আসছে? শব্দটা যে এসি থেকে আসছে এটা বোঝা যায় না। কারণ এই জাতীয় বসদের ঘরের এসি লুকানো থাকে। চোখে দেখা যায় না। ঘর থাকে অতিরিক্ত ঠাণ্ডা। চৈত্র মাসের গরমের দিনে মাঘ মাসের শীত। বিশাল সেক্রেটারিয়েট টেবিলের অন্যপ্রান্তে যিনি বসে থাকেন তার চোখও থাকে। ঠাণ্ডা। ঘরে আলো থাকে কম— চায়নিজ রেস্টুরেন্ট ধরনের আলো। দর্শনার্থীদের জন্যে সোফা থাকে। সেই সোফাও সেক্রেটারিয়েট টেবিলের মতো বিশাল। বস্যামাত্র শরীর ড়ুবে যায়। পা শুধু ভেসে থাকে। চোখের সামনে বকের ঠ্যাং-এর মতো দুটো লম্বা পা নিয়ে বসে থাকতে অস্বস্তি লাগে।

মনজু অস্বস্তি নিয়ে সোফায় বসে আছে। তার সামনের ভদ্রলোকের নাম মোতাহার হোসেন। সিনেমার বিজ্ঞাপনে যেমন থাকে মেগাস্টার, উনিও মেগাবাস। জাহাজের ব্যবসা, গার্মেন্টসের ব্যবসা, সুতার কারখানা, রঙের কারখানা… হুলুস্থল। শুধু হুলুস্থূল না, মেগা হুলুস্থূল। মনজু এই ভদ্রলোকের জন্যে সোমেশ্বর হাই স্কুলের রিটায়ার্ড হেডমাস্টার সাহেবের একটা চিঠি নিয়ে এসেছে। গত চারদিন ধরে এই চিঠি নিয়ে সে ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করছে। দেখা করা সম্ভব হচ্ছে না। অফিসের লোকজন কিছুতেই তাকে ঢুকতে দেবে না। মনজু বলেছে, ভাই, আমি কোনো চাকরির জন্যে আসি নাই। কোনো সাহায্যের আবেদনও না। হেডমাস্টার সাহেবের একটা ব্যক্তিগত চিঠি নিয়ে এসেছি। মোতাহার হোসেন সাহেব উনার ছাত্র। বিশেষ স্নেহভাজন ছাত্র। চিঠিতে উনি গোপন কিছু কথা তার ছাত্রকে লিখেছেন। প্রাইভেট কথা।

অফিসের লোক (মনে হয় মেগাবসের সেক্রেটারি) শুকনা গলায় বলল, চিঠি রেখে যান, আমরা স্যারের কাছে পৌছে দেব।

মনজু বলল, এই চিঠি আমাকে হাতে হাতে দিতে হবে। স্যারের বিশেষ নির্দেশ। চিঠি পড়ার সময় আমাকে উপস্থিত থাকতে হবে। চিঠি পড়ার পর আমাকে দুএকটা প্রশ্ন আপনার স্যার করলেও করতে পারেন।

লোক বলল, আপনার ঠিকানা রেখে যান। চিঠি পড়ার পর স্যার যদি আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান আমরা আপনাকে খবর দেব।

উনি কি কারো সঙ্গে দেখা করেন না?

না।

মনজু মেগাবসের বাড়িতে গিয়েছে। ওয়ারিতে হুলস্থূল টাইপ বাড়ি। মেগা হাউস! জেলখানার গেটের চেয়েও উঁচু দেয়াল দিয়ে বাড়ি ঘেরা। শ্বেতপাথরের নেমপ্লেটে ইংরেজিতে লেখা Maya Lodge, সব বাড়ির গেটে একজন দারোয়ান থাকে- এই বাড়ির গেটে তিনজন দারোয়ান। তাদের এক কথা, আপনি অফিসে যান। বাড়িতে কারোর ঢোকার অনুমতি নাই।

মনজু বলল, মন্ত্রী মিনিস্টাররাও তো মাঝে মধ্যে লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন।

তিন দারোয়ানের একজন। (চশমা চোখের দারোয়ান। দারোয়ানদের চোখে চশমা দেখা যায় না। ব্যাটা বোধহয় জ্ঞানী) বলল, বিরক্ত করবেন না। বিরক্ত করলে লাভ হবে না। অফিসে যান।

মনজু বলল, কোন অফিসে যাব? উনার তো অফিস অনেকগুলি।

চশমা চোখের দারোয়ান বলল, সেটা আপনার বিবেচনা। ভাই, বিরক্ত করবেন না।

কোন অফিসে গেলে দেখা করা সহজ?

জানি না।

দেখা করা আমার স্বার্থে না, উনার স্বার্থে। উনারই উপকার হবে, আমার কিছু না।

চশমাওয়ালা দারোয়ান বলল, প্যাচাল বন্ধ করেন।

মনজু প্যাচাল বন্ধ করে চলে এসেছে এবং ফন্দি ফিকির করে বাঘের খাঁচায় ঢুকেও পড়েছে। কীভাবে ঢুকল সে এক ইতিহাস। এখন মনে হচ্ছে খাঁচায় ঢুকে কোনো লাভ হবে না। গত চারদিনের পরিশ্রম বুড়িগঙ্গার ঘোলা পানিতে পড়েছে। বুড়িগঙ্গার কোনো উনিশ বিশ হয় নি। তার নিজের ব্যাটারি ডাউন হয়ে গেছে।

যে ব্যক্তিটির সামনে সে বসে আছে সেই ব্যক্তিটিকে তেমন ভয়ংকর মনে হচ্ছে না। ঘিয়া রঙের পাঞ্জাবি পরে আছে। পাঞ্জাবিতে ইস্ত্রি নেই। কাপড়টাও খুব দামি বলে মনে হচ্ছে না। সহজ মানুষ বলেই তো মনে হচ্ছে। তবে চল্লিশ মিনিট যে লোক কোনোরকম নড়াচড়া না করে ঝিম ধরে বসে থাকতে পারে সে কোনো সে কোনো সহজ পাত্ৰও না। মনজুর ধারণা ছিল অফিসে বড় সাহেবদের কাছে ক্ৰমাগত লোকজন আসতে থাকে। বড় সাহেব তাদের সবাইকে ধমকাতে থাকেন। টেলিফোন বাজতে থাকে, তিনি টেলিফোন ধরতে থাকেন। টেলিফোনেও ধমকধামক করতে থাকেন। অতি রূপবতী স্টেনোরা একটু পর পর এসে নোট নেয়। চা-কফি দিয়ে যায়। এই বড় সাহেব সে-রকম না। চল্লিশ মিনিটে কেউ তার কাছে অ্যাসে নি। কোনো টেলিফোন বাজে নি। উনাকে সম্ভবত টেলিফোন করাও নিষেধ।

মনজু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অফিসের আসবাবপত্র দেখতে থাকল। এই কাজটা সে আগেও করেছে। আরেকবার করতে ক্ষতি নেই। তার সামনে আজকের খবরের কাগজ আছে। ইচ্ছা করলে সে খবরের কাগজ পড়তে পারে। কিন্তু সেটা মনে হয় ঠিক হবে না। বড় সাহেবের সামনে বসে খবরের কাগজ পড়াটা অবশ্যই বেয়াদবি হবে। খুব বড়লোকদের মনে মনে গাল দিলে আরাম লাগে! মনজু একবার মনে মনে বলল, শালা মদারুণ! তেমন কোনো আরাম পেল না, বরং মনে হলো ব্যাটা তার মনের কথা বুঝে ফেলেছে। যখন সে শালা মদারু বলেছে তখন চট করে তাকিয়েছে।

মনজুর এখন মনে হচ্ছে হেডমাস্টার সাহেবের চিঠিটা না দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে। সোমেশ্বর হাইস্কুলের রিটায়ার্ড হেড়ম্বুষ্টার বাবু তারানাথ শীলের সঙ্গে তার দেখাই হয় নি। চিঠিটা সে নিজেই সূক্ষ্মধ্বসে লিখেছে। সে শুধু জানে এই মেগাবাস তারানাথ শীলের ছাত্র ছিলেনুষ্টিনি মোতাহার হোসেনকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। হেডমাস্টার সাহেবের চিঠিতে দুজনের গতি হয়েছে। তার যদি গতি হয় তাহলে দানে দানে তিন দান হবে।

বড় সাহেবের ডান দিকের জানালায় ভ্যানিশিং ব্লাইন্ড লাগানো। সময় কাটানোর জন্যে টুকরাগুলি গোনা যেতে পারে। যদি জোড় সংখ্যা হয় তাহলে তার গতি হবে। বেজোড় হলে হবে না। গোনার সময় মনজু মনে মনে আরেক দফা গালি দিল, এই শুয়োর, আমি যে এতক্ষণ বসে আছি তোর চোখে পড়ছে না? তুই মানুষকে মানুষ বলে গ্রাহ্য করিস না। কাপড় খুলে তোর পাছায় কচ্ছপ দিয়ে কামড় দেওয়াব।

এই, এদিকে এসো!

মনজু চমকে উঠল। তাকেই কি ডাকা হচ্ছে? হ্যাঁ, বড় সাহেব তো তার দিকেই তাকিয়ে আছেন। এখন তার কী করা উচিত? প্রথম ঘরে ঢোকার সময় সে একবার সালাম দিয়েছে। আবার কি দেওয়া উচিত? সালাম দুই-তিন বার দিলে কোনো দোষ হবে না তো?

স্যার, স্লামালিকুম।

ওয়ালাইকুম সালাম। তোমার ব্যাপার কী?

একটা চিঠি নিয়ে এসেছিলাম স্যার।

কার চিঠি?

সোমেশ্বর হাই স্কুলের রিটায়ার্ড হেডমাস্টার বাবু তারানাথ শীলের চিঠি। উনি বলেছেন চিঠিটা আপনাকে হাতে হাতে দিতে।

মোতাহার হোসেন বেশ আগ্রহ করেই চিঠি নিলেন। খাম খুলে সঙ্গে সঙ্গে পড়তে শুরু করলেন। মনজু একমনে দরুদে শেফা পড়ছে। কঠিন পরিস্থিতিতে এই দোয়া পাঠ করলে পরিস্থিতি সহজ হয়। যে ব্যক্তি ভক্তিসহ এই দরুদ পাঠ করে পরিস্থিতি তার অনুকূলে যায়। চিঠি পড়তে গাধাটার এতক্ষণ লাগছে কেন? বানান করে করে পড়ছে? লেখাপড়া জানে না না-কি?

এক পাতার চিঠিতে লেখা আছে–

বাবা মোতাহার,
পত্রবাহক আমার অক্তি প্রিয় একজন। ভদ্র পরিবারের ভালো এবং সৎ ছেলে। তাহার কর্তৃক আমি নানানভাবে উপকৃত হইয়াছি। এখন সে বড়ই দুরবস্থায় পড়িয়াছে। তাহার দুঃসময়ে আমি কিছু সাহায্য করি ঈশ্বর আমাকে সেই ক্ষমতা দেন। তোমাকে দিয়াছেন। তুমি যদি আমার এই অতি প্রিয় ছেলেটির জন্য কিছু করিতে পার তাহা হইলে আমি বৃদ্ধ বয়সে বড়ই শান্তি পাইব। শরীর ভালো যাইতেছে না। পরপারে ভ্রমণের জন্যে প্রস্তুতি নিতিছি। তুমি ভালো থাকিবে। বৌমাকে আমার স্নেহ এবং তোমার পুত্ৰ শুভ্রর প্রতি আন্তরিক শুভকামনা।
ইতি
তোমার শিক্ষক
তারানাথ শীল

মোতাহার হোসেন চিঠিটা টেবিলে রেখে অ্যাসট্রে দিয়ে চাপা দিতে দিতে বললেন, চিঠিতে লেখা তুমি স্যারের অতি প্রিয় একজন। স্যার তোমাকে দিয়ে উপকৃত হয়েছেন। তুমি কী করেছ তার জন্যে?

মনজু বলল, তেমন কিছু করি নাই স্যার। টুকটাক সেবা। পাশে বসে গল্পগুজব। উনি মহৎপ্রাণ মানুষ। আমার ছোট কাজটাকেই বড় করে দেখেছেন।

মোতাহার হোসেন বললেন, চিঠিটা কি উনার লেখা?

মনজুর বুক ধ্বক করে উঠল। সে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, স্যার, উনার প্যারালাইসিস। উনি হাতে কিছু লিখতে পারেন না। উনি ডিকটেশন দিয়েছেন, অন্য একজন লিখেছে।

অন্য একজনটা কে, তুমি?

জি স্যার।

মোতাহার হোসেন এই পর্যায়ে এসে কিছুক্ষণ সরাসরি মনজুর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। মনজু চোখের দৃষ্টি দেখেই বুঝেছে দরুদে শেফা কাজ করে নি। আজ তার খবর আছে। এই লোকের সামনে মিথ্যা কথা বলাও সম্ভব না।

তোমার নাম যেন কী?

শফিকুল করিম। ডাক নাম মনজু।

আমার তো ধারণা সোমেশ্বর স্কুলের রিটায়ার্ড কোনো হেডমাস্টারের সঙ্গে তোমার দেখাই হয় নি। আমার ধারণা কি ঠিক?

মনজু দেরি করল না। সঙ্গে সঙ্গে বলল, জ্বি স্যার ঠিক।

পড়াশোনা কী?

বিএ পরীক্ষা দিয়েছিলাম, পাশ করতে পারি নি।

পুলিশের কাছে কখনো ধরা পড়েছ? হাজত খেটেছ?

জি-না স্যার।

তুমি বাইরে যাও। অপেক্ষা করা। তোমাকে পরে ডাকব।

স্যার, আমি বরং চলে যাই?

মোতাহার হোসেন জবাব দিলেন না। অ্যাসট্রে দিয়ে চাপা দেয়া চিঠি ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটে ফেলে দিলেন। টেলিফোন তুলে কাকে যেন কী বললেন। মনজু বাঘের খাঁচা থেকে বের হয়ে এলো। ঠাণ্ডা ঘরে বসে থাকার পরেও তার কপাল ঘামছে। বুক ধরফড় করছে। এই মুহুর্তে পরপর দুটা সিগারেট খেয়ে তাকে শরীর ঠিক করতে হবে। অফিসে সিগারেট খাওয়া যাবে না। তাকে চলে যেতে হবে। রাস্তায়। রাস্তার পাশের ছোট ছোট চায়ের দোকানগুলি ভালো চা বানায়। মিষ্টি বেশি দিয়ে এক কাপ চা, সঙ্গে দুটা সিগারেট। দুটা সিগারেট পর পর খাবার আলাদা নাম আছে– মামা-ভাগ্নে সিগারেট। প্রথমটা মামা সিগারেট, এতে নেশার ক্ষেত্র তৈরি হয়। দ্বিতীয়টা ভাগ্নে সিগারেট। তখন নেশাটা জমে।

মেগাবাস তাকে থাকতে বলেছেন। কেন বলেছেন বোঝা যাচ্ছে না। কোলে বসিয়ে আদর করার জন্যে নিশ্চয়ই থাকতে বলেন নি। কিছুক্ষণ শরীরে হাত বুলিয়ে আদর করলেন। মাথার ঘাণ নিলেন। তারপর বললেন, বাবা যাও আজ থেকে চাকরিতে জয়েন কর। মাসে বেতন পাঁচ  হাজার টাকা। কোয়াটার ফ্রি, মেডিকেল ফ্রি। দুই ঈদে ফুল বোনাস। যাতায়াতের জন্যে কোম্পানি থেকে গাড়ি পাবে। আর বাবা শোন, দুপুরে আমার সঙ্গে খাও। আমি আবার একা খানা খেতে পারি না।

মনজুর ধারণা মেগাবাস তাকে থাকতে বলেছেন পুলিশের হাতে তুলে দেবার জন্যে। এইসব অতি বড়লোকদের সঙ্গে থানাওয়ালদের খুব খাতির থাকে। খবর দিলেই ওসি সাহেব হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসেন। দাত কেলিয়ে বলেন, স্যার, আপনার জন্যে কী করতে পারি? সমস্যা কী হয়েছে বলেন। ঠিক করে দিয়ে যাই।

ওসি সাহেব এই ধরনের কথা বললে মেগাবাস বলবেন, এই ছেলেটাকে থানায় নিয়ে যান। আমার সঙ্গে ফ্রিডবাজি করতে এসেছে। দুএক রাত হাজতে রেখে দেন। তাহলে ঠিক হয়ে যাবে। সমাজের একটা উপকার হবে।

থানাওয়ালারা সমাজের উপকারের জন্যে মোটেই ব্যস্ত না, তবে মেগাবসের কথা বলে কথা।

 

মনজুর চা খাওয়া হয়েছে। মামা-ভাগ্নে সিগারেট খাওয়াও হয়েছে। এখন সে কী করবে বুঝতে পারছে না। মেগাবাস তাকে থাকতে বলেছেন বলেই বোকামি করে অফিসে ঢুকে পুলিশের কাছে ধরা খাওয়ার কোনো মানে হয় না। ভদ্রলোক যে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেবেন। এটা মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তিনি জিজ্ঞেস করছিলেন, পুলিশের হাতে কখনো ধরা পড়েছি, হাজত খেটেছ? এই প্রশ্নের মানে একটাই- হাজত খেটে দেখ কেমন লাগে।

এখন সে কী করবে? যাত্রাবাড়িতে ফিরে যাবে? গত সাতদিন ধরে সে যাত্রাবাড়িতে আছে। তার মামা ইকবাল সাহেবের বাড়িতে। আপন মামা না। তার বড় মামির ছোট ভাই। লতায়পাতায় মামা। ভদ্রলোক এজি অফিসের সিনিয়ার অ্যাসিসটেন্ট। ভালো মানুষ টাইপ জিনিশ। মুখের উপর বলতে পারছেন নাএক সপ্তাহ হয়ে গেল। আর কতদিন থাকবে? মুখের উপর বলতে না পারলেও

দেশ থেকে আত্মীয়স্বজন আসলে আমার ভালো লাগে। আত্মীয়স্বজন ছাড়া বাঙালির আছে কী। এই যে কথায় আছে- এক লতায় টান দিলে দশ লতা নড়ে। চৈত্র মাসে মেঘ করে বৈশাখ মাসে পড়ে। তবে সমস্যা হলো আমার অতি ছোট বাসা। একটা বাথরুম। রুনু ইন্টারমিডিয়েট দিবে- নিরিবিলি ছাড়া পড়তে পারে না।

মনজু মামার কথা শেষ হবার আগেই বলেছে, অবশ্যই অবশ্যই। মামা, আপনি অতি ভালোমানুষ বলেই আত্মীয়স্বজনের অত্যাচার সহ্য করেন। আমি আপনার জায়গায় হলে দরজায় নোটিশ ঝুলিয়ে রাখতাম— আত্মীয়স্বজন! পথ দেখো। সিন্দাবাদের ভূতের মতো আত্মীয়স্বজন কাঁধে নিয়ে দিনের পর দিন পার করা উচিত না। একেবারেই উচিত না। এটা আসলে ক্রাইমের পর্যায়ে পড়ে। ফৌজদারি ক্রাইম।

মনজু তার নিজের ব্যাপারে ছোট্ট একটা চাল চেলেছে। সে বলেছে— সে ঢাকায় এসেছে, কারণ এম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক মোতাহার হোসেন সাহেব তাকে একটা চাকরি দিয়েছেন। মাসিক বেতন দশ হাজার টাকা। অ্যাপিয়েন্টমেন্ট টঙ্গি না চিটিাগাং এটা জানতে পারছে না বলে চাকরিতে জয়েন করতে পারছে না। কারণ মোতাহার সাহেব চলে গেছেন জাপানে। এক দুই দিনের মধ্যে তার ফেরার কথা। এই মিথ্যা বলার কারণ কিছু না, নিজের দাম সামান্য বাড়ানো। বেকার একটা ছেলেকে বাড়িতে পোষা এক কথা আর দশ হাজার টাকা বেতনের চাকরি আছে এমন একজনকে পোষা সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা।

ইকবাল সাহেবের স্ত্রী স্বামীর মতোই বোকাসোকা মানুষ। তাকে কায়দা করতে মনজুর মোটেই বেগ পেতে হয় নি। প্রথম দিন থেকেই মনজু তাকে মা ডাকছে। কারণ এই ভদ্রমহিলা না-কি অবিকল তার মৃতা মায়ের মতো।

মনজু কাঁদো কাঁদো গলায় বলেছে, মা, আপনাকে আমি তাঁর ছবি দেখাব। ছবি দেখালে বুঝবেন আমার কথা কতটুকু সত্যি কতটুকু মিথ্যা। আপনার চেহারা যে শুধু আমার মার মতো তা-না, আপনার চালচলন কথাবার্তাও আমার মার মতো। আমার মার মতোই আপনি নরম স্বভাবের। তবে আমার মা আপনার মতো সুন্দরী ছিলেন না। আপনার গায়ের রঙ তো আগুনের মতো। আমার মা ছিলেন শ্যামলা।

ভদ্রমহিলা খুবই খুশি হয়ে গেলেন। লাজুক গলায় বললেন, কী যে তুমি বলো! আমার আবার গায়ের রঙ। গায়ের রঙ ময়লা বলে বিয়েই হচ্ছিল না।

মনজু চোখ কপালে তুলে বলেছেন, ইয়া রসুলাল্লাহ! মা, আপনি এইসব কী বলেন? আপনার গায়ের রঙ ময়লা!

রঙ আরো ভালো ছিল। ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় টাইফয়েড হলো, তখন রঙ নষ্ট হয়ে গেল।

নষ্ট হবার পরে এই অবস্থা? ইয়া গাফুরুর রহিম। মা শুনেন, কাজের কথা বলি। আমি বাইরের একজন মানুষ, আপনাদের ছোট্ট সংসারে উপদ্রবের মতো উপস্থিত হয়েছি। দুএক দিনের মধ্যে আমরা পোস্টিং হবে। মনে হচ্ছে চিটাগাং নিয়ে ফেলবে। আমাদের মূল অফিস চিটাগাং-এ। এই দু একদিন আমি আপনাদের বসার ঘরের সোফায় শুয়ে থাকব। যদি অনুমতি দেন।

অবশ্যই থাকবে। অনুমতির কী আছে?

আরেকটা কথা মা— যদি চিটাগাং-এ পোস্টিং হয় তাহলে কিন্তু আমি আপনাদের সবাইকে একবার চিটাগাং নিয়ে যাব। কক্সবাজার দেখায়ে নিয়ে আসব। নিজের মায়ের কোনো সেবা তো করতে পারি নাই। মাতৃঋণ শোধ হয় নাই। দেখি আপনাকে দিয়ে যদি…।

বোকাসোকা বাবা মাদের ছেলেমেয়েরা বিছু হয়। আর ছেলেমেয়ে বলতে যদি একটাই হয় তাহলে সেটা হয় চিকন বিছু। বাইরের চেহারা থাকবে সরলটাইপ, বুদ্ধি থাকবে চিকন। মসলিনের সূতা চোখে দেখা যায় না। এমন চিকন। ইকবাল সাহেবের মেয়ে রুনু যে চিকন বুদ্ধির মসলিন এটা ধরা পড়ল চতুর্থ দিনে। সে কলেজে যাবে অ্যাডমিট কার্ড আনতে। মনজু সঙ্গে গেছে রিকশা ঠিক করে দিতে। রুনু বলল, আপনাকে আসতে হবে না। আমি রিকশা ঠিক করতে পারি।

মনজু বলেছে, রিকশাওয়ালার সঙ্গে ভাড়া নিয়ে হ্যাচোড় প্যাচোড় করা তোমার মতো মেয়ের পক্ষে সম্ভব না। আমি আছি কী জন্যে?

রুনু বলল, আপনি তো আর সারা জীবন থাকবেন না। তখন কী হবে? নাকি আপনার দীর্ঘ পরিকল্পনা?

এই বলেই মেয়ে ঠাণ্ডা চোখে তাকাল। চোখের দৃষ্টি দেখেই মনজুর খবর হয়ে গেল। এই মেয়ে সহজ পাত্র না। এর ক্যাচাল আছে। মনজু বলল, আমি আর এক দুই দিনের বেশি আছি বলে মনে হয় না। আজ ঢাকা অফিসে খোঁজ করব। বড় স্যার যদি জাপান থেকে আজ চলে আসেন তাহলে কালকেই আমাকে চিটাগাং রওনা হতে হবে।

রুনু বলল, আপনার পোস্টিং কি চিটাগাং-এ?

মনজু বলল, চিটাগাং-এ হবার সম্ভাবনাই বেশি। আমাদের কোম্পানির ইংল্যান্ডেও অফিস আছে। আবার কাছের দেশ সিঙ্গাপুরেও আছে। আমাকে তো আর শুরুতেই বিদেশে পোস্টিং দিবে না।

রুনু কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে হঠাৎ অপ্রাসঙ্গিকভাবে বলল, কেউ মিথ্যা কথা বললে আমার ভালো লাগে না।

মনজুর বুকে ধ্বক করে ধাক্কা লাগলেও সে উদাস গলায় বলার চেষ্টা করল, কোনটা মিথ্যা?

রুনু বলল, আপনি যা বলছেন সবই মিথ্যা। আপনি ঢাকায় এসেছেন চাকরির খোজে। আপনার ইচ্ছা নানান ধরনের মিথ্যা-টিথ্যা বলে যতদিন সম্ভব আমাদের বাড়িতে থাকা। যখন আর থাকতে পারবেন না। তখন আরো একটা বড় মিথ্যা বলে অন্য কোথাও যাবেন। সেখানেও মিথ্যা বলবেন।

এই তোমার ধারণা?

ধারণা না, এটাই সত্যি। বাবা-মা দুজনই সোজা সরল মানুষ বলে আপনার মিথ্যাগুলি ধরতে পারছেন না।

তুমি মহাচালাক বলে ধরে ফেলেছ?

রুনু স্পষ্ট করে বলল, হ্যাঁ। তবে আপনার ভয় নেই, আপনার মিথ্যা আমি বাবা-মাকে ধরিয়ে দেব না। আপনি তাদের ভুলিয়ে ভালিয়ে যতদিন ইচ্ছা আমাদের বাড়িতে থাকতে পারেন।

আমার প্রতি তোমার এত দয়ার কারণ কী? আপনি মহাবিপদে পড়েছেন, এই জন্যেই আপনার প্রতি আমার দয়া।

ভালো। অন্তত একজন নিজের মানুষ থাকল। মেয়েটা হৃদয়হীনা না। মায়া-মমতা আছে। মনজু সত্যি কথা বলতে শুরু করার আগেই রিকশা পাওয়া গেল। রুনু রিকশায় উঠতে উঠতে আবারো বলল, কেউ মিথ্যা কথা বললে আমার ভালো লাগে না।

মনজু মনে মনে বলল, এই পুচকি, তোর ভালো লাগার উপরে দুনিয়া চলবে না। এই দুনিয়ায় সত্য-মিথ্যা দুই ভাই। দুনিয়া চলে দুই ভাইয়ের ইশারায়। তুই আরেকটু বড় হ। প্রেমে ফ্রেমে পড়। তারপর দেখবি কী রকম হড়বড় করে মিথ্যা বলবি। তখন একটা সত্যি কথা বললে বিশটা বলবি মিথ্যা।

 

মামা-ভাগ্নে সিগারেটের পর মনজু আরেকটা সিগারেট ধরাল। এই সিগারেটের নাম চিন্তা সিগারেট। ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করার সিগারেট। চিন্তা সিগারেট এক জায়গায় বসে টানার সিগারেট না। এই সিগারেট হাঁটাহাটি করতে করতে টানতে হয়।

এখন মনজুর প্রধান চিন্তা সে কী করবে? মেগাবাস তাকে বসতে বলেছিলেন। সে কি অফিসে ফিরে যাবে? মেগাবাস যদি তাকে পুলিশে দিতে চাইতেন তাহলে তখনই দিতে পারতেন। বসতে বলতেন না। লাক ট্রাই করতে অসুবিধা কী? মেগাবাস যদি তাকে ডেকে পাঠান। তাহলে সে বলবে- স্যার, আপনার কাছ থেকে খালি হাতে যদি ফিরি। তাহলে মৃত্যু ছাড়া আমার পথ নেই। এই দেখেন স্যার, আমি বিশটা ঘুমের ট্যাবলেট কিনে পকেটে রেখে দিয়েছি। এক পাতা ঘুমের ট্যাবলেট কিনতে কত টাকা লাগবে কে জানে। তার কাছে এই মুহুর্তে আছে সাতান্ন টাকা এবং সাতটা সিগারেট। সাতটা সিগারেটে আজকের দিন চলবে না। আরেক প্যাকেট কিনতে হবে। ঘুমের ওষুধ কেনার চিন্তা বাদ দিতে হবে। মেগাবাসকে অন্য কিছু বলতে হবে। যেমন… স্যার, আপনার কাছ থেকে যদি খালি হাতে ফিরি। তাহলে চলন্ত ট্রাণের সামনে লোফ দিয়ে পড়া ছাড়া আমার পথ নেই।

 

মোতাহার হোসেন মনজুকে ডেকে পাঠিয়েছেন। মনজু এখন তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সে একমনে দোয়া ইউনুস পড়ে যাচ্ছে। মহাবিপদের সময় এই দোয়া পড়তে হয়। তার কাছে মনে হচ্ছে সে মহাবিপদেই আছে।

মনজু!

জি স্যার।

আমার ছেলের নাম তুমি জানো। শুভ্ৰ! চিঠিতে এই নামের উল্লেখ আছে। আমার ছেলেটা শারীরিক এবং মানসিক দুইভাবেই অন্য দশজনের থেকে আলাদা। তার চোখ খুব খারাপ। চশমা পরেও সে যে খুব ভালো দেখে তা আমার মনে হয় না।

মনজু মনে মনে বলল, বক্তৃতা বন্ধ করে আসল কথা বল। তোর ছেলে চোখে দেখে না তাতে আমার কী? সে আন্ধা হয়ে গেলেও কোনো সমস্যা নাই। বাপের টাকার বিছানায় হাগা-মুতা করবে। দশটা থাকবে নার্স। প্রত্যেকটা দেখতে সুন্দর। এরা তোর ছেলেকে শুচু করাবে।

মোতাহার হোসেন বললেন, চোখের সমস্যা ছাড়াও তার শরীর দুর্বল। ছোটবেলা থেকেই অসুখবিসুখে ভোগে। তার মা তাকে আলাদা করে বড় করেছেন বলে পৃথিবীর জটিলতা সে কিছুই জানে না। তার জগৎটা হলো বইপত্রের। সে দিনরাত বই পড়ে। আমি আমার ছেলের জন্যে একজন সার্বক্ষণিক চালাক চতুর সঙ্গী খুঁজছি। শুভ্র যখন বাইরে যাবে ওই সঙ্গী থাকবে তার সঙ্গে।

আমার চেহারা কি দেখতে চাকরের মতো? তুই কি আমাকে টাকার গরম দেখাস?

মনজু!

জি স্যার।

তুমি চালাক ছেলে। তোমার মতোই একজনকে আমার দরকার। করবে এই চাকরি?

স্যার, বেতন কী?

যদি চাকরি কর— তুমি থাকবে আমার ওয়ারির বাড়িতে। খাওয়াদাওয়া ফ্রি। মাসে তোমাকে ছয় হাজার করে টাকা দেয়া হবে। অফিসের অন্যান্য সুবিধা যা আছে পাবে। করতে চাও এই চাকরি?

জি স্যার। অবশ্যই করব।

তুমি আমার সঙ্গে শুরুতে যে চালাকি করেছ, সে-রকম চালাকি আমার ছেলের সঙ্গে করবে না। শুভ্র চালাকি ধরতে পারে না।

মনজু বলল, স্যার, মানুষ ভুল একবারই করে।

মোতাহার হোসেন বললেন, মানুষ বার বারই ভুল করে। তুমিও করবে। তবে মনে রেখ— আমার ছেলের সঙ্গে যদি কোনো ভুল কর আমি তোমাকে কঠিন শাস্তি দেব।

মনজু বলল, স্যার ভুল হবে না। মোতাহার হোসেন বললেন, এখন কানে ধর। মনজু হতভম্ব হয়ে তাকাল। এই শুয়োর কী বলে? আমি কানো ধরব কী জন্যে?

মোতাহার হোসেন বললেন, আমার সঙ্গে যে চালাকি করেছ তার শাস্তি হিসেবে আমি না বলা পর্যন্ত তুমি কানো ধর উঠবোস করতে থাকবে। চাকরি পাবার এটা হলো পূর্বশর্ত।

মনজু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এটা কি কোনো ঠাট্টা? কোনো রসিকতা? মোতাহার হোসেনও তাকিয়ে আছেন। তার চোখের দৃষ্টি শান্ত। শান্ত দৃষ্টি বলে দিচ্ছে মনজুকে ছয় হাজার টাকা বেতনের চাকরি নিতে হলে সত্যি সত্যি তাকে কানে ধরে উঠবোস করতে হবে। এটা কি আসলেই সম্ভব? রাস্তায় ভিক্ষুকদের সঙ্গে পড়ে থাকলেও সম্ভব না। মনজুর বাবা একজন স্কুলশিক্ষক ছিলেন। গ্রামে তিনি সম্মান নিয়ে বাস করেছেন। বাবার পুরনো ছাত্রের সঙ্গে যখন দেখা হয় তারা আন্তরিক ভঙ্গিতে বলে, তুমি জালাল সাহেবের ছেলে। তোমার বাবা তো ফেরেশতার মতো মানুষ ছিলেন।

মনজু কানে ধরে উঠবোস করছে। এর মধ্যেই মোতাহার হোসেন অফিসের ম্যানেজারকে ডেকেছেন। ম্যানেজারকে খুবই সহজ ভঙ্গিতে বলেছেন- এই ছেলেটাকে একটা অ্যাপিয়েন্টমেন্ট লেটার দাও। বেতন সব মিলিয়ে ছয় হাজার টাকা। আজ তাকে এক মাসের বেতন অ্যাডভান্স দেবে। মনে হয় টাকা তার খুবই দরকার। মাসে মাসে কেটে রাখবে।

 

মনজু যাত্রাবাড়িতে ফিরল রাত আটটায়। সে তার মামির জন্যে সবুজ রঙের একটা শাড়ি, ইকবাল সাহেবের জন্যে সিল্কের পাঞ্জাবি কিনে এনেছে। বাজারের বড় ব্যাগে করে দুই কেজি খাসির মাংস, একটা ইলিশ মাছ, পোলাওয়ের চাল এবং ঘি এনেছে। দই এবং এক কেজি কুমিল্লার মাতৃভাণ্ডারের রসমালাই এনেছে। রাতে যাতে মামার বাসায় আজ ভালো খাওয়া-দাওয়া হয়।

রুনু সব দেখে অবাক হয়ে বলল, কী ব্যাপার?

মনজু বলল, বড় সাহেব জাপান থেকে ফিরেছেন। আমার ঢাকাতেই পোস্টিং হয়েছে। আমি কাল ভোরবেলা কাজে জয়েন করব।

রুনু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।

মনজু তার মামির পা ছুঁয়ে বলল, মা, আপনার জন্যে শাড়িটা এনেছি। আমার নিজের মা আমার তিন বছর বয়সে মারা গেছেন। তাকে কিছু দিতে পারি নি। আপনাকে দিলাম।

কথাটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। মনজুর বাবা নেই, তবে মা বেঁচে আছেন। বিয়ে শাদিও করেছেন।

মনজুর মামি এতই খুশি হলেন যে তার চোখে পানি এসে গেল। তিনি বললেন, তুমি কাল সকালে চলে যাবে। এইসব কী বলছ? তুমি আমার এইখানেই থাকবে।

মনজু বলল, আমি মাঝে মাঝে এসে দেখা করে যাব। কোম্পানি আমাকে থাকার জায়গা দিয়েছে। আমাকে সেইখানেই থাকতে হবে।

বাড়িতে রান্নার বিপুল আয়োজন চলছে। ইকবাল সাহেব গেছেন দোকান থেকে ঠাণ্ডা কোক আনতে। ফিস্টটা যেন সৰ্বাঙ্গ সুন্দর হয়। নতুন পাঞ্জাবিটা গায়ে দিয়ে গিয়েছেন। পাঞ্জাবিটা সুন্দর ফিট করেছে।

মনজু বসার ঘরে একা বসে আছে। রুনু এক সময় বসার ঘরে ঢুকে অবাক হয়ে দেখল— মনজু ব্যাকুল হয়ে কাঁদছে। রুনু অবাক হয়ে বলল, কী হয়েছে?

মনজু বলল, আমি আজ খুবই মনে কষ্ট পেয়েছি। আমার মরে যেতে ইচ্ছা করছে।

রুনু বলল, ঘটনাটা বলবেন?

মনজু ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, একজন আমাকে সবার সামনে কানে ধরে উঠবোস করিয়েছে।

রুনু বলল, সেই একজনটা কে?

মনজু জবাব দিল না। শব্দ করে কাঁদতে লাগল। রুনু গিয়ে তার মাকে ডেকে নিয়ে এলো। তিনি এসে মনজুকে জড়িয়ে ধরে বসে রইলেন।

<

Humayun Ahmed ।। হুমায়ূন আহমেদ