বিকালবেলা চুপচাপ ঘরে বসে আছি, কিছুই ভালো লাগছে না। সম্ভবত জ্বর আসছে। নিঃসন্দেহ হবার উপায় হচ্ছে সিগারেট ধরান। দুটি টান দিয়ে যদি ছুঁড়ে ফেলতে ইচ্ছা হয়, তাহলে নির্ঘাত জ্বর আসছে। পরীক্ষাটা করবার উপায় নেই। সিগারেট ফুরিয়েছে। কাদের মিয়া আনতে গিয়েছে। কখন ফিরবে কে জানে!

আমি একটি চাদর গায়ে দিয়ে বারান্দায় বসলাম। বিলু এল সেই সময়। এই মেয়েটি নিঃশব্দে চলাফেরা করে। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে আসার কোনো শব্দ আমি শুনি নি।

কী ব্যাপার বিলু?

আপনাকে বাবা ডাকছেন।

আমি তো যেতে পারব না, আমার জ্বর।

আমাকে স্তম্ভিত করে দিয়ে বিলু বলল, কই দেখি? বলেই সে হাত রাখল আমার কপালে। আমি কাঠ হয়ে বসে রইলাম।

জ্বর কোথায়! আপনার শরীর নদীর মতো ঠাণ্ডা।

নিজেকে সামলে নিয়ে সহজভাবে বলতে চেষ্টা করলাম, কি জন্যে ডাকছেন আমাকে?

কি জন্যে তা আমি কী করে বলব?

বিলু রহস্যময় ভঙ্গিতে হাসতে লাগল। এই মেয়েটি খুব অদ্ভুত। এমনি আমার সঙ্গে বিশেষ কথাবার্তা বলে না। কিছু জিজ্ঞেস করলে হুঁ-হা করে জবাব দেয়। আবার কখনো আপনা থেকেই অনেক কথা বলে।

আজকে আমাদের ক্লাসে কী হয়েছে জানেন? নাজমা নামের একটা মেয়ে ফ্লাঙ্কে করে দুধ নিয়ে এসেছে, টিফিনের সময় খাবে। সেই দুধ আমরা ক্লাসের মধ্যে ঢেলে ফেললাম। তারপর কী হয়েছে জানেন?

না।

আমাদের কেমিস্ট্রির স্যার এসে বললেন—এই…

বিলুর বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে, সে কোনো কথা শেষ করবে না। হঠাৎ কথা থামিয়ে বলবে, সর্বনাশ, চুলায় রম পানি দিয়ে এসেছি, মনেই ছিল না। আমি যাই।

তোমাদের সেই কেমিস্ট্রি স্যার দুধ দেখে কী বললেন?

সে চোখ কপালে তুলে বলবে, দূর, এই সব শুনে কী করবেন?

বেশ লাগে আমার বিলুকে।

একটি গরম স্যুয়েটার গায়ে দিয়ে নামছি, হঠাৎ বিলু নিচু গলায় বলল, আমাদের বাসায় দেখবেন একটি লোক বসে আছে। ওর সঙ্গে নীলু আপার বিয়ে হবে।

আমি অবাক হয়ে বললাম, তাই নাকি?

হুঁ।

কবে হচ্ছে বিয়েটা?

খুব শিগগির।

বিলু দেখলাম বেশ গম্ভীর। যেন এই বিয়ের ব্যাপারটি তার ভালো লাগছে না।

আমি বললাম, তোমার মনে হচ্ছে মন খারাপ?

না, মন খারাপ হবে কেন? আপনি কী-যে পাগলের মতো কথা বলেন! খুব রাগ লাগে।

 

আমি ঘরে ঢুকে দেখি আজিজ সাহেবের সামনে এক জন মোটাসোটা ভদ্রলোক বসে আছেন। ভদ্রলোকের মাথাভর্তি টাকা। একটা রুমাল দিয়ে তিনি ক্রমাগত মাথার টাক মুছছেন।

আজিজ সাহেব বললেন, এই যে শফিক, আস আসা। তোমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই, এ হচ্ছে মতিনউদ্দিন। আমাদের দূরসম্পর্কের আত্মীয়। আমেরিকার নর্থ ডাকোটাতে ছিল অনেক দিন। গত সপ্তাহে হঠাৎ এসে হাজির। দেখি না কাণ্ড। মতিনউদ্দিন-এ হচ্ছে আমাদের বাড়িওয়ালা, তবে আত্মীয়ের চেয়েও বেশি।

ভদ্রলোক মিহি সুরে বললেন, আপনার কথা অনেক শুনেছি।

আমি বড়োই অবাক হলাম। আমার কথা অনেক শোনার কোনো কারণ নেই। ভদ্রলোক বিদেশ থেকে ফিরে আজই হয়তো প্রথম এখানে এসেছেন। এই সময়ের মধ্যে আমার কথা শুনে ফেলবেন, সেটা ঠিক বিশ্বাস্য নয়।

আমি হাসিমুখে বললাম, কার কাছ থেকে শুনলেন?

নীলু বলল।

আমি অবাক হয়ে তোকালাম নীলুর দিকে। নীলুর এমন এক জন বয়স্ক মোটাসোটা লোকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয় থাকবে, তা ঠিক কল্পনা করা যায় না। নীলু রূপসী এবং অহংকারী। এই জাতীয় মেয়েরা মোটাসোটা টাকওয়ালা লোকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা করে না। ভদ্রলোক কৌতূহলী হয়ে বললেন, আপনি নাকি এক বার একটা কাক পুষেছিলেন? কাকটার নাম ছিল সম্রাট কনিষ্ক।

আমাকে মানতেই হল ভদ্রলোক আমার কথা আগেই শুনেছেন। প্রথম দিনই কেউ আমার কাক পোষার কথা জানবে, তা বিশ্বাস করা কষ্টকর।

নীলু আমাকে সব কিছু লিখিত চিঠিতে।

আমি ভালোভাবে তোকালাম ভদ্রলোকের দিকে। তাঁর চোখে-মুখে এমন একটি ছেলেমানুষী ভাব আছে, যা ছেলেমানুষদের মধ্যেও সচরাচর দেখা যায় না। ভদ্রলোক চোখ বড়ো বড়ো করে বললেন, কাকটা নাকি রাত-দিন আপনার পেছনে পেছনে ঘুরঘুর করত। সত্যি?

আমার কাক পোষার ব্যাপারটির মধ্যে এতটা অতিরঞ্জন আছে, তা জানা ছিল না। ঘটনাটি খুলে বলা যাক।

কাকটির সঙ্গে আমার পরিচয় খুবই আকস্মিক। এক দিন সকালে নাশতা খাবার সময় সে রেলিংয়ের উপর এসে বসল। আমি যথারীতি একটি রুটির টুকরো ছুঁড়ে দিলাম। সে রুটির টুকরোটি স্পর্শও করল না। ঘাড় বাঁকিয়ে অত্যন্ত গম্ভীর গলায় ডাকল কা—কা। খাবার স্পর্শ করে না, এই জাতীয় কাক আমি আগে দেখি নি-কাজেই অবাক হয়ে আরো কয়েক টুকরো রুটি ছুঁড়ে দিলাম। সে যেন আমাকে

বারান্দায়। সেই তার সঙ্গে আমার পরিচয়। শেষের দিকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থাকত রেলিং-এ। আমাকে দেখতে পেলেই গম্ভীর গলায় ডাকত কা-কা। আমাদের মধ্যে কথাবার্তাও হত। যেমন আমি যদি বলতাম, কি হে কনিক, শরীর তালো তো?

কা-কা।

তাঁর মানে ভালো নেই। হুঁ। হয়েছেটা কী?

কা কা কা (গম্ভীর আওয়াজ)।

 

কাদের মিয়ার এই কাক নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না। তার ধারণা, এটা একটা অলক্ষণ। সে ঝাঁটা নিয়ে অনেক বার তাড়াতে চেষ্টা করেছে। লাভ হয় নি। ছাব্রিশে মার্চের পর এই কাকটিকে আর দেখা যায় নি। কোথায় গিয়েছে কে জানে?

মতিনউদ্দিন সাহেব বললেন, কাকটির নাম কনিষ্ক রাখলেন কেন? কনিষ্ক মানে কী?

কনিষ্ক হচ্ছে কুষাণ বংশের এক জন সম্রাট। ভারতে রাজত্ব করে গেছেন আনুমানিক ১০০ খ্রিষ্টাব্দে।

মতিনউদ্দিন সাহেব থেমে থেমে বললেন, নীলু ঠিকই বলেছে, আপনি ভাই অদ্ভুত লোক। নীলু রেগে গিয়ে বলল, আমি আবার কখন এই সব বললাম?

 

মতিনউদ্দিন সাহেবের সঙ্গে দুপুরে আমাকে ভাত খেতে হল। অন্যের বাড়িতে ভাত খেতে ভালো লাগে না। — গড়েই অস্বস্তি বোধ হয়। সেখানে ভাত মাখাতে হয় ভদ্রভাবে। লক্ষ রাখতে হয় ঠোঁটে ভাত লেগে আছে কিনা। হাত দিয়ে লবণ না নিয়ে চামচ দিয়ে নিতে হয়। সেই চামচটি আবার ধরতে হয় বা হাতে। আমি নিতান্ত প্রয়োজন না হলে অন্যের বাড়িতে খেতে বসি না। এখানেও নিতান্ত বাধ্য হয়ে বসতেই হল। যখন নীলুর মতো একটা মেয়ে নরম স্বরে বলে, আপনি না খেলে আমার খুব খারাপ লাগবে। আমি রানা করেছি আপনার জন্যেই। তখন অবাক হয়ে খেতে বসতেই হয়।

নীলু আমার সঙ্গে কথাটথা বিশেষ বলে না। মাসের প্রথম দিকে বাড়িভাড়ার টাকাটা খামে ভরে দিতে এসে টেনে টেনে বলে, টাকাটা গুনে নিন।

আমি সব সময়ই বলি, গুনতে হবে না, ঠিক আছে।

সে ঠাণ্ডা স্বরে বলে, না, গুনে নিন। আমাকে চোখ-মুখ লাল করে টাকা গুনতে হয়। রূপসী একটা মেয়ের সামনে দাঁড়িয়ে টাকা গোনা বিড়ম্বনা বিশেষ। এক সময় সে বলে, ঠিক আছে তো?

ঠিক আছে।

মতিনউদ্দিন সাহেবের সঙ্গে ভাত খেতে খেতে মনে পড়ল–এবার নীলু ভাড়া দিতে এসে টাকা গুনে নেবার কথা বলে নি। আমি যখন নিজ থেকে গুনতে যাচ্ছি, তখন বলেছে, শফিক সাহেব, আপনার যদি অস্বস্তি লাগে, তাহলে থাক–গুনতে হবে না। আমি গুনে এনেছি।

অন্য বারের মতো টাকাটা দিয়েই নিচে নেমে যায় নি, হঠাৎ করে বলেছে, আপনার বন্ধু কনিকের কোনো খোঁজ পেলেন?

না, এখনো পাই নি।

আমার মনে হয়, সে মনের দুঃখে বিবাগী হয়েছে।

নীলু খিলখিল করে হেসে উঠেই গম্ভীর হয়ে বলল, আপনি খুব সুখে আছেন শফিক সাহেব। কাজটাজ কিছু করতে হয় না। বাড়িভাড়া নেন, আর ঘুরে বেড়ান।

আমি উত্তর দিলাম না। সে দেখলাম খানিকক্ষণ ইতস্তত করে বলল, বাবা আপনাকে খুব পছন্দ করেন।

তাই নাকি?

তাঁর ধারণা, আপনার মতো ভালো ছেলে খুব কম জন্মায়।

আমি হঠাৎ বলে বসলাম, উনি আমার পা দেখতে পান না তো, তাই বলেন।

এরপর কথা আর এগোয় নি। নীলু মুখ কালো করে নিচে নেমে গেছে। আমি নিজেও ভেবে পাই নি, হঠাৎ এই প্রসঙ্গ কেন তুললাম। না ভেবেচিন্তে মানুষ অনেক কিছুই বলে। আর বলে বলেই আমরা ভালো মানুষ আর মন্দ মানুষকে আলাদা করতে পারি। এই যেমন আজ মতিনউদ্দিন সাহেব ভাত মাখতে মাখতে বললেন, মিলিটারিগুলি দেখতে বেশ লাগে। কেমন স্মাট।

ভদ্রলোকের এই কথা থেকেই বোঝা যায়, এর মনে কোনো ঘোরপ্যাঁচ নেই। এখনো মিলিটারি দেখে যে মুগ্ধ হয় সে কিছু পরিমাণে ছেলেমানুষ। স্বামী হিসেবে এ ধরনের মানুষ পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।

খাওয়া শেষ করে হাত ধুতে যাচ্ছি, তখন কাদের এসে উপস্থিত। সে আমাকে এক কোণায় নিয়ে চোখ ছোট করে বলল, ছোড ভাই, রোজ কেয়ামত।

কী হয়েছে?

রফিক সাহেবের ছোড ভাইয়ের খেল খতম।

কী বলিস।

কোনো খোঁজ নাই। তার মা ফিট হয়। আর উঠে, আবার ফিট হয়।

আমি ভালোমতো বিদায় না নিয়েই গেলাম রফিকের বাসায়। বাসায় দেখি অনেক লোকজনের ভিড়। একটি ছোটমতো নীল রঙের গাড়িও দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে ঢুকে দেখি রফিকের ছোট ভাই বসার ঘরে গম্ভীর হয়ে বসে আছে। তাকে ঘিরে বহু লোকজন।

রফিক আমাকে দেখতে পেয়ে হাসিমুখে এগিয়ে এল, খবর পেলি কার কাছে?

হয়েছেটা কী? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।

শুনিস নি কিছু?

না।

কাল বিকালে বাইরে গিয়েছিল। সারা রাত আর ফেরে নি। আমাদের অবস্থাটা তো বুঝতেই পারছিস। মা রাতে তিন বার ফিট হয়েছে।

গিয়েছিল কোথায়?

ওর এক বন্ধুর বাড়ি। দেরি হয়েছিল বলে ওরা আর আসতে দেয় নি। বুঝে দেখি আমাদের অবস্থা।

রফিকের বাড়ি থেকে বেরুবার সময় দেখি আরো লোকজন আসছে। ঢাকা শহরের সব লোকজন কি জেনে গেছে নাকি–রাফিকের ছোট ভাই কাল রাতে বাড়ি ফেরে নি?

ঘরে ফিরে দেখি মতিনউদ্দিন সাহ বা দোতলার বিপ্লান্দায় বসে সিগারেট টানছেন। জুতো-টুতো খুলে পা তুলে বসেছেন। আমাকে দেখে হাসিমুখে বললেন, সিগারেট খাবার জন্যে আসলাম। মুরুধিদের সামনে তো আর খাওয়া যায় না। কী বলেন?

তা তো ঠিকই। চা খাবেন?

তা বেশ তো। চা খেলে তো ভালোই হয়। অসুবিধা তো কিছু দেখছি না।

লোকটির মাথায় কি ছিট আছে? আমি আড়াচোখে তাকালাম তাঁর দিকে। কেমন নিশ্চিন্তে পা তুলে বসে আছেন। কোনো ভাবনা-চিন্তা নেই।

শফিক ভাই, আমি রুসে বসে এতক্ষণ আপনার কাকটার কথা ভাবছিলাম, যার নাম রেখেছিলেন কনিষ্ক।

কী ভাবছিলেন?

না, বলা ঠিক হবে না। আপনাকে।

আমি আচমকা বললাম, আমেরিকায় কী করতেন আপনি?

পড়াশোনা। পি-এইচ. ডি করেছি। এগ্রনমিতে।

আমি অবাক হয়েই তাকালাম। কে বলবে এই লোকটির একটি পি-এইচ. ডি ডিগ্ৰী আছে? কেমন নির্বোধ চোখ। দিলাঢালা ভাবভঙ্গি। মতিনউদ্দিন সাহেব বিকাল পর্যন্ত আমার বারান্দায় বসে রইলেন। সন্ধ্যার আগে আগে তাঁকে নিতে তাঁর বড়ো ভাই আসবেন গাড়ি নিয়ে। তিনি গাড়ির জন্যে অপেক্ষা করতে লাগলেন। আমার বিরক্তির সীমা রইল না। বিলু এক বার এসে বলল নিচে যেতে। তিনি গম্ভীর হয়ে বললেন, বারান্দায় বেশ বাতাস, তিনি বাতাস ছেড়ে নিচে যেতে চান না। বিলুকে এইটুকু বলতেই তাঁর কান-টান লাল হয়ে একাকার হল।

সন্ধ্যাবেলা কোনো গাড়ি এল না। শোনা গেল, ঝিকাতলা এলাকায় কী–একটা ঝামেলা হয়েছে। ঝিকাতলা থেকে ধানমণ্ডি পনের নম্বর পর্যন্ত প্রতিটি বাড়ি নাকি সার্চ করা হবে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে একটা জীপে মাইক লাগিয়ে বলা হল, এই অঞ্চলে পরবর্তী নির্দেশ না-দেওয়া পর্যন্ত কাৰ্য্য ঘোষণা করা হয়েছে। তার কিছুক্ষণ পরই কারেন্ট চলে গেল। কাদের হারিকেন জ্বলিয়ে আবার নিভিয়ে ফেলল। মিলিটারি সার্চের সময় অন্ধকার থাকাই নাকি ভালো। এতে তারা মনে করে, বাড়িতে লোকজন নেই। মতিনউদ্দিন সাহেব একেবারেই চুপ হয়ে গেলেন। বিলু যখন এসে বলল–খাবার দেওয়া হয়েছে, তিনি বললেন–তাঁর একেবারেই খিদে নেই।

গভীর রাত পর্যন্ত আমি এবং মতিনউদ্দিন সাহেব অন্ধকার বারান্দায় চুপচাপ বসে রইলাম, রাত একটায় বাসার সামনে দিয়ে একটি খোলা জীপ গেল। সেই জীপটিই আবার রাত দেড়টার দিকে ফিরে গেল!

আমি বললাম, ঘুমুবেন নাকি মতিন সাহেব? কাদের জায়গা করেছে।

মতিন সাহেব শুকনো গলায় বললেন, না, ঘুম আসছে না।

আমি বললাম ভয় লাগছে না?

জ্বি-না। বড্ড মশা।

মতিন সাহেব সিগারেট ধরিয়ে হঠাৎ বললেন, এটা বাংলা কোন মাস?

তার কথার জবাব দেবার আগেই জলিল সাহেবের স্ত্রীর কামনা শোনা গেল।

কে কাঁদে?

জলিল সাহেবের স্ত্রী। ওর স্বামীর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

কী সর্বনাশ, বলেন কী আপনি!

মতিন সাহেব এমনভাবে চেঁচিয়ে উঠলেন, যেন এ রকম ভয়াবহ কথা এর আগে শোনেন নি। সেই খোলা জীপটো এসে থামল বাসার গেটের কাছে। কাদের ফিসফিস করে বলল দোয়া ইউনুস পড়েন ছোড়া ভাই। ভয়ের কিছু নাই।

দোয়া ইউনুস কিছুতেই মনে করতে পারলাম না! কাদের মতিন সাহেবের শার্ট টেনে চাপা স্বরে বলল সিগারেট ফেলেন। আগুন দূর থাইক্যা দেখা যায়।

গাড়িটি এইখানে অনন্তকাল দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি? না, চলতে শুরু করেছে। এই তো যাচ্ছে বড়ো রাস্তার দিকে। আমার দেয়া ইউনুস মনে পড়ল। লাইলাহা ইল্লা আন্তা সোবাহানিক ইনি কুন্তু মিনায যোয়ালোমিন।

<

Humayun Ahmed ।। হুমায়ূন আহমেদ