শংকর সেন কিরীটীর কলেজের বন্ধু, একই কলেজ থেকে ওরা বি, এস-সি পাশ করেছিল।

রসায়নে এম, এস-সি পাশ করে শংকর মামার বন্ধুর কোলিয়ারীতে কাজ নিয়ে চলে যায়। সেও দীর্ঘ পাঁচ বছরের কথা। কিরিটী তার আগেই রহস্যভেদের জালে পাক খেতে খেতে এগিয়ে গেছে অনেকটা। বছর দুই আগে কলকাতায় দুজনের একবার ইষ্টারের ছুটিতে দেখা হয়েছিল।

তারপর কেউ কারো সংবাদ পায় নি। হঠাৎ শংকরের চিঠি পেয়ে কিরীটি বেশ খুশীই হলো।

জংলীকে ডেকে সব গোছগাছ করতে বলে দিল। পরের দিন তুফান মেলে যাবে সব ঠিক, এমন সময় সুব্রত এসে সব লণ্ডভণ্ড করে দিল।

একতলার ঘরে জংলীকে সব গোছগাছ করতে দেখে প্রশ্ন করলে, ব্যাপার কী জংলী?

বাবু কাঁত্রাসগড় চলেছেন। হঠাৎ? কী জানি বাবু! আপনাদের কয় বন্ধুর কি মাথার ঠিক আছে? বৰ্মা, লঙ্কা, হিল্পী, দিল্লীতে আপনারা লাফালাফি করতেই আছেন।

সুব্রত হাসতে হাসতে সিঁড়ির দিকে পা বাড়ােল। কিরীটী তার বসবার ঘরে একটা সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বুজে। চুরুট টানছিল। সুব্রতর পায়ের শব্দে মুদ্রিত চোখেই বললে।

কিবা প্রয়োজনে
এ অকিঞ্চনে
করিলে স্মরণ?

সুব্রত হাসতে হাসতে জবাব দিল :-

আসি নাই সন্ধি হেতু,
ফাটাফাটি রক্তারক্তি
খুনো খুনী,
যাহা হয় কিছু!
পোঁটলা পুঁটলি বাঁধি;
জংলীরে সাথে লয়ে
কোথায় চলেছো;
দিয়ে অভাগা আমারে ফাঁকি?

কিরীটী বললে,

করিয়াছি মন
সুদূর কাতরাসগড়
বারেক আসিব ঘুরি।

নে নে, থামা বাবা তোর কবিতা। সত্যি, হঠাৎ কাতরাসগড় চলেছিস কেন?

কিরীটি সোফার ওপরে সোজা হয়ে বসে, হাতের প্রায় নিভন্ত সিগারটা অ্যাসট্রেতে ফেলে বললে।

হৈ হৈ ব্যাপার, রৈ রৈ কাণ্ড।

অর্থাৎ!

শোন। কাতরাসগড় ও তেঁতুলিয়া হল্টের মাঝামাঝি একটা কোল্ডফিল্ড আছে! সেটার মালিক পূর্ববঙ্গের কোন এক যুবক জমিদার নন্দন।

তারপর–

কোলিয়ারী স্টার্ট করা হয়েছে; অর্থাৎ তোমার কোলিয়ারীর গোড়া পত্তন আরম্ভ করা হয়েছে মাস দুই হলো।

থামছিস কেন, বল না- ৷

কিন্তু মাস দুইয়ের মধ্যে তিন-তিনটে ম্যানেজার খুন হয়েছেন।

তার মানে!

আরে সেই মানেই তো solve করতে হবে।

বুঝলাম, তা কী করে ম্যানেজার তিনজন মারা গেলেন?

ময়না-তদন্তে জানা গেছে তাদের গলা টিপে মারা হয়েছে, এবং গলার পিছন দিকে মারাত্মক রকমের চারটি করে ছিদ্র দেখতে পাওয়া গেছে। তা ছাড়া অন্য কোন দাগ বা কোন ক্ষত পর্যন্ত নেই।

শরীরের অন্য কোন জায়গায়ও না?

না, তাও নেই!

আশ্চর্য!

তা আশ্চৰ্যই বটে। সত্যিই আশ্চর্য সেই চারটি কালো ছিদ্র। এবারকার নতুন ম্যানেজার হচ্ছেন আমারই কলেজ ফ্রেণ্ড শংকর সেন। সেও তোমার মতই গোয়ার গোবিন্দ ও একজন পাকা অ্যাথলেটু। সে সমস্ত ব্যাপার জানিয়ে আমায় সেখানে যেতে লিখেছে।

দেখ কিরীটী, সুব্রত বললে, একটা মতলব আমার মাথায় এসেছে।

যথা—

এবারকার রহস্যের কিনারার ভারটা আমার ওপরে ছেড়ে দে। এতদিন তোমার সাকরেদি করলাম, দেখি পারি কিম্বা হারি।

বেশ তো! আমার সঙ্গেই চল না।

না। তা হবে না। পুরোপুরি আমার হাতেই সব কিছু ছেড়ে দিতে হবে। এর মধ্যে তুই মাথা গলাতে পারবি না।

পুরাতন কলেজ ফ্রেণ্ড! যদি অসন্তুষ্ট হয়।

কেন? অসন্তুষ্ট হবেন কেন? আমি হালে পানি না পাই তবে না হয় তুই অবতীর্ণ হবি।

কিন্তু তখন যদি সময় আর না থাকে বিশেষ করে একজনের জীবন মরণ যেখানে নির্ভর করছে।

সব বুঝি কিরীটী। তার নিয়তি যদি ঐ কোলিয়ারীতেই থাকে। তবে কেউ তা রোধ করতে পারবে না। তুই আমি তো কোন কথা; স্বয়ং ভগবানও পারবে না!

তা বটে। তা বেশ, তুই তা হলে কাল রওনা হয়ে যা। শংকরকে একটা চিঠি ড্রপ করে দেবো সমস্ত ব্যাপার খুলে লিখে।

হ্যাঁ! তাই দে! ভয় নেই কিরীটী! সুব্রত রায়কে তুই এটুকু বিশ্বাস করতে পারিস; বুদ্ধির খেলায় না পারি দেহের সবটুকু শক্তি দিয়েও তাকে প্ৰাণপণে আগলাবই।

দেহের শক্তিতে সেও কম যায় না সুব্রত। একটু গোলমাল ঠেকলেই কিন্তু তুই আমায় খবর দিস ভাই! অবিশ্যি চিঠি থেকে যতটুকু ধরতে পেরেছি তাতে ব্যাপারটা যে খুব জটিল তা মনে হয় না! এক কাজ করিস তুই বরং প্রত্যেকদিন কতদূর এগুলি বিশদভাবে আমায় চিঠি দিয়ে জানাস, কেমন।

বেশ, সেই কথাই রইল!

Nihar Ranjan Gupta ।। নীহাররঞ্জন গুপ্ত