৪.

মলয় রায়ের বাড়ি থেকে ফিরে একেনবাবুকে রিপোর্ট করলাম।

“ভেরি ইন্টারেস্টিং। মলয় কিছু বলল, ডেডবডির প্রিলিমনারি এক্সামিনেশনে কী পাওয়া গেছে?”

“না। তবে একটা কথা বলি, আপনি ডিরেক্টলি মলয়বাবুর সঙ্গে কথা বলুন। আর প্লিজ, এরা তো আপনাকে ইন্সিডেন্টাল এক্সপেন্স দেবে আর ফি-ও দেবে বলেছে। যা খরচা করার দরকার করুন।”

একেনবাবু একটু লজ্জা পেলেন।

“আরে না স্যার, একটা ফোন করব, তাতে কী হয়েছে? আর আপনার বন্ধুর বিপদে সাহায্য করছি। এতে ফি নেওয়ার প্রশ্ন আসছে কোত্থেকে? আপনি ভাববেন না স্যার, আমি খোঁজ যা নিতে হয় নেব। কালকে আপনার টাইম রাত আটটার সময়ে স্কাইপে কথা বলব।

.

একেনবাবুর সঙ্গে কথা বলার পর অনিমেষের সঙ্গে কথা হল। অনিমেষ ভীষণ নার্ভাস। ওকে নাকি পুলিশ স্টেশনে ইনস্পেক্টর আর অ্যাসিস্টেন্ট কমিশনার মিলে প্রচণ্ড জেরা করেছে। অ্যাসিস্টেন্ট কমিশনারকে যখন আনা হয়েছে। তখন অনিমেষ কনভিন্সড যে, ওকে ফাঁসানো হবে। জিজ্ঞেস করল একেনবাবুর সঙ্গে আর কথা হয়েছে কি না।

বললাম, “হয়েছে। তবে প্রোগ্রেস কী হয়েছে জানি না।”

মলয় রায়ের ইনফরমেশনগুলো অবশ্যই চেপে গেলাম।

.

পরের দিন সকালে অনিমেষ দু’-দু’বার ফোন করল আমাকে। বললাম, “এখন শুধু শুধু ফোন করছিস, রাতের আগে একেনবাবুর সঙ্গে কথা বলতে পারব না।” ওর কাছ থেকে তৃতীয় ফোনটা পেলাম দুপুর বেলা। উত্তেজিত স্বরে বলল, “গঙ্গায় একটা বডি পাওয়া গেছে। শীলা আর শেখরদা দেখতে গেছেন ওটা ভাস্বতীর কিনা।” তারপর জিজ্ঞেস করল, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি কি না।

উত্তর না দিয়ে উলটে জিজ্ঞেস করলাম, “তুই শিওর বডি পাওয়া গেছে?”

“হ্যাঁ,” এক্ষুণি বিজয়দাকে ফোন করে জানলাম।

আমি একেনবাবুকে রাতে জিজ্ঞেস করব বলে অনিমেষকে কাটালাম।

.

রাত ঠিক আটটার সময়ে একেনবাবুই আমায় স্কাইপে ধরলেন। ওঁর গলার স্বরে একটু উৎফুল্ল ভাব। বললাম, “কী ব্যাপার, মনে হচ্ছে আপনি অনেকটা এগিয়েছেন?”

“বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি স্যার।”

এটা গুড সাইন। রহস্যের প্রায় কিনারা হয়ে এলে একেনবাবু এইসব ফিলসফি ঝাড়েন। আমি বললাম, “মনে হচ্ছে কিছু নিশ্চয় জানেন। কিন্তু এদিকে তো অনিমেষের নার্ভাস ব্রেকডাউন হবার অবস্থা।”

“ওঁকে বলবেন হি ইজ দ্য মোস্ট হেল্পফুল পার্সন ইন দিস ইনভেস্টিগেশন।”

“কী বলছেন যা-তা?”

“আমার তো স্যার যা-তা বলাই স্বভাব।”

“তার মানে আসল কারণটা আমায় বলবেন না, তাই তো?”

“কী যে বলেন স্যার, তবে আগে একটা ইম্পর্টেন্ট তথ্য আপনাকে দিই। মেয়েটার মুখে কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল, তাতে নাকটা ভেঙ্গে যায়।”

“এটা তো মলয়বাবু আমাকে বলেননি!”

“অতক্ষণ ধরে বডিটা জলে ছিল, ভালো করে এক্সামিন না করে চট করে ভুল ইনফরমেশন হয়তো দিতে চায়নি।”

“তার মানে আপনি বলছেন, শি ওয়াজ মার্ডারড?”

“আমার তাই ধারণা, মিস ভাস্বতাঁকে খুনই করা হয়েছে। ভারী কিছু দিয়ে মুখে আঘাত করে ধাক্কা দিয়ে জলে ফেলে দেওয়া হয়েছে। মুখে আচমকা ধাক্কা খেয়ে শি ওয়াজ স্টান্ড, চিৎকার করার সুযোগ মেলেনি।”

“তাহলে কি মন্টু? টাকার জন্যে?”

“পসিবল স্যার। তবে শুধু টাকার জন্যেই তো খুন হয় না।”

“অন্য আর কী দেখছেন এখানে?”

“আমার একটা থিওরি আছে স্যার,” একেনবাবু বললেন, “তাতে এখনও কয়েকটা ফাঁক রয়ে গেছে। মলয় সেগুলো ভরাতে পারবে। ওর সঙ্গে একটু আগেই কথা হয়েছে। ও আসছে আপনার বাড়িতে। স্কাইপে একসঙ্গে সবাই কথা বলব।”

“কথাটা শেষ হতে না হতেই ডোর বেল বাজল। মলয় রায় এসে উপস্থিত হয়েছেন। এঁকে নিয়ে কম্পিউটারের সামনে বসলাম।

“কেমন আছেন স্যার?”

“চমৎকার ভাই। এক্ষুনি বাপিবাবুকে বলছিলাম, কয়েকটা লুজ এন্ড আছে, তোমাকে সেগুলো দেখতে হবে।”

“তা তো দেখব, কিন্তু বলুন কী ব্যাপার? আপনার কথা মতো মন্টুকে এখনও অ্যারেস্ট করিনি দেখে অ্যাসিস্টেন্ট কমিশন তো আমার ওপরে খাপ্পা!”

“কেন করতে বলিনি সেটা নিয়ে তোমাদের সঙ্গে এখন আলোচনা করব। তার আগে আমার প্রশ্ন হচ্ছে, অনিমেষবাবুর সময় নিয়ে এত সমস্যা হল কেন? তোমার ওখানেও দশ মিনিট লেট, বাপিবাবুর বাড়িতেও। দশ মিনিট লেট অথচ ওঁর ধারণা উনি ঠিক টাইমেই এসেছেন।”

মলয় আমার দিকে একটু অবাক হয়ে তাকালেন। বোঝার চেষ্টা করলেন একেনবাবু কী বলতে চাইছেন?

একেনবাবু বললেন, “জানি মলয়, তুমি অবাক হচ্ছ, কিন্তু এটা ইম্পর্টেন্ট। আর দ্বিতীয় প্রশ্ন হল, ভাস্বতীর বইটা কোথায় গেল?”

আমি ভাবলাম, একেনবাবুর কি মাথা খারাপ হয়েছে! মলয় রায়ও আমার দিকে অবাক হয়ে তাকালেন। তারপর একেনবাবুকে বললেন, “স্যার, আপনি প্রায়ই নিজেকে কনফিউসড বলতেন, এখন কিন্তু আমিও কনফিউসড।”

“কনফিউশনের কোনও দরকার নেই, আমি আমার থিওরি বলছি। সেটা শুনে বল এরমধ্যে ফাঁক কোথায় আছে?”

“বলুন।”

“তুমি জানো কিনা জানি না মলয়, কিন্তু বাপিবাবুর কাছে আমি শুনেছি, বারীনবাবু তিন-চার হাজার টাকা দামের একটা বই ভাস্বতাঁকে উপহার দিয়েছিলেন। সেটা শুনেই আমার খটকা লেগেছিল। একটা সতেরো বছরের মেয়েকে এত দামি জিনিস কোনও বিশেষ কারণ ছাড়া কেন কেউ উপহার দেবে? ফ্যামিলি কানেকশন? হয়তো। কিন্তু খটকাটা আরও জোরদার হল যখন বাপিবাবুর কাছে শুনলাম, একটা পার্টিতে মিস ভাস্বতী পাশে-বসা বারীনবাবুকে ‘গো-এওয়ে’ বলে তাড়িয়ে দিচ্ছে, আর তার একটু পরেই বাথরুমের সামনে আড়ালে দাঁড়িয়ে গল্প করছে।” এইটুকু বলে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “ঠিক বললাম তো স্যার?”

সায় দিলাম, “হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন।”

“আরেকটা পয়েন্ট, মিস ভাস্বতাঁকে কেউ একজন হ্যারাস করছিল, আর কাউকে না বলে বারীনবাবুকেই মিস ভাস্বতী সেটা জানিয়েছেন, আর বারীনবাবুও অ্যাকশন নিয়েছেন, অর্থাৎ ওঁরা দু’জন খুবই ক্লোজ। অনিমেষবাবুর কাছে শুনলাম, হাউসবোটে মিস ভাস্বতী ওঁকে একান্তে ডেকে বলেছিলেন, একটা সারপ্রাইজ আছে, কিন্তু এখানে বলা যাবে না, তোমার বন্ধু রাগ করবে। এই বন্ধু নিশ্চয় বারীনবাবু। কিন্তু সারপ্রাইজটা কী? ওটা কি ইলোপ সংক্রান্ত, যেটা করতে যাচ্ছে বলে আগের দিন স্কুলের বন্ধুকে বলেছে? আর করতে যাচ্ছে কার সঙ্গে? বারীনবাবু?”

এবার একেনবাবু আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে চললেন, “স্যার, বয়ঃসন্ধিকালটা একটা গোলমেলে সময়। প্রেম বলুন, যৌন আকর্ষণ বলুন, এই সময়েই জাগতে শুরু করে। তার প্রাবল্যে ছেলেমেয়েরা অনেক সময়েই বোধবুদ্ধি হারিয়ে ফেলে। এই সময়ে অভিভাবদের দায়িত্ব ওদের মনকে বোঝার চেষ্টা করা এবং গাইড করা। লাগাম ছেড়ে বড় হতে দিলে পরে পস্তাতে হয়। আপনার নাকতলার পার্টির বর্ণনা থেকে যেটুকু বুঝতে পেরেছি, শিলাদেবী এই গাইডেন্সটা প্রথম দিকে দেননি। আপনার দীপাবউদির কমেন্টটা মনে আছে স্যার? আগে মেয়েকে বাড়িতে রেখে শীলাদেবীরা পার্টি করে বেড়াতেন, ইদানীং হঠাৎ নজরদারি করার জন্য সঙ্গে নিয়ে ঘুরছেন। অবশ্যই মেয়ে তাতে বিরক্ত হচ্ছে। ঠিক বললাম কি?”

“হাঁ, প্রায় সেরকমই বলেছিলেন।”

“আমার তো এটা শুনে মনে হল, মিস ভাস্বতাঁকে একা বাড়িতে রেখে ওঁরা যখন বাইরে পার্টিতে যেতেন, তখন কোনও অপ্রীতিকর ব্যাপার নিশ্চয় ঘটেছিল। তারপর থেকে শীলাদেবী যেখানেই যেতেন, ভাস্বতাঁকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন। তবে কারও পক্ষেই একজনকে সব সময়ে চোখে চোখে রাখা সম্ভব নয়। এই রকম ইমোশানাল আর ভালনারেবল মেয়েকে কেউ যদি কামনা করে, অঘটন ঠেকানো যায় না। বারীনবাবু ওয়াজ এ ফ্রেন্ড অফ দ্য ফ্যামিলি। সেই সুবাদে বারীনবাবুর সঙ্গে মিস ভাস্বতীর মেলামেশার অবাধ সুযোগ ছিল এবং ভাইস-ভার্সা।”

“আপনি কী বলতে চাইছেন, বারীনের সঙ্গে ভাস্বতীর একটা দৈহিক সম্পর্ক হয়েছিল? আর ওরা ইলোপ করার কথা ভাবছিল?”

“অসম্ভব কি স্যার?”

“দ্যাট ইজ ক্রেজি,” আমি বললাম। “সতেরো বছর বয়স, ভাস্বতাঁকে তো আইনত বিয়েও করা যায় না। ওকে নিয়ে বারীন ইলোপ করার কথা ভাববে কেন? হি ইজ নট স্টুপিড!”

“ঠিক ধরেছেন স্যার, আমার কনফ্লুশন হল, বারীনবাবু ভাস্বতাঁকে নিয়ে ফ্যাসাদে পড়েছিলেন। ভাস্বতী নিশ্চয় চাপ দিচ্ছিল।”

একেনবাবু মুখে না বললেও ফ্যাসাদটা কী বুঝতে অসুবিধা হল না।

“এবার বারীনবাবুর অবস্থাটা ভাবুন স্যার। ভাস্বতী যদি ওদের দৈহিক সম্পর্কের কথা পুলিশকে জানায়, হি উইল এন্ড-আপ ইন জেল। আইনের চোখে ভাস্বতী নাবালিকা, পালিয়ে গিয়ে তাকে বিয়ে করাও সম্ভব নয়। আর বিয়ে না করলে ভাস্বতী যদি অপমানে লজ্জায় সুইসাইড করে বসে, তাহলেও ওঁর প্রবল সমস্যা হতে পারে, যদি সুইসাইড নোটে ওঁর নাম থাকে। উনি হিসেব করলেন ওঁর সামনে দুটো পথ খোলা। এক মেয়েটাকে নিয়ে পালিয়ে গিয়ে মিথ্যে পরিচয়ে সারাজীবন কাটানো। যেটা মোটেই আজকাল সহজ নয়। অথবা মিস ভাস্বতাঁকে খুন করা। আমার ধারণা ইতিমধ্যে মিস ভাস্বতী সম্পর্কে বারীনবাবুর মোহভঙ্গও হয়েছিল। তাই উনি ভাবনা চিন্তা করছিলেন, কী ভাবে ওকে সরানো যায়। তখন এই প্রমোদতরীর আইডিয়াটা মাথায় এল। অনিমেষবাবুকে প্রায় জোর করে দলে নিলেন একটা অ্যালিবাইয়ের জন্যে। মিস ভাস্বতাঁকে বলে রেখেছিলেন রাত সাড়ে বারোটায় সবাই ঘুমিয়ে পড়লে বারীন আসবেন। নিভৃতে বসে প্রেম, পালানোর প্ল্যান বা কিছু একটা করতে। এই সময়ে উনি দুটো কাজ করলেন। একটা হল অনিমেষবাবুর মদে কিছু মিশিয়ে প্রায় বেহুশ করে দিলেন। অন্য সবাইকেও মদের মাত্রা বাড়িয়ে অল্পবিস্তর মাতাল করলেন, যাতে সবাই তাড়াতাড়ি কেবিনে চলে যায়। সবাই ডেক থেকে চলে গেলে অনিমেষবাবুর ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে বারোটা কুড়ি করলেন। তারপর জলের ঝাঁপটা দিয়ে অনিমেষবাবুকে জোর করে জাগিয়ে প্রায় ধরে ধরে ভাস্বতী বসে রয়েছে দেখালেন, তারপর কেবিনে নিয়ে এলেন। বমিটমি করার পর অনিমেষবাবু যাতে চট করে ঘুমিয়ে পড়েন, তার জন্য শরীর চাঙ্গা হবে বুঝিয়ে আর এক ডোজ ঘুমের ওষুধও অনিমেষবাবুকে দিলেন। ঘুমিয়ে পড়ার আগে অভ্যাস বশে অনিমেষবাবু ঘড়ি দেখলেন। ওঁর ধারণা হল সাড়ে বারোটা বেজেছে, আসলে নয়। অনিমেষবাবু ঘুমোতেই বারীনবাবু ভাস্বতীর কাছে। গেলেন। মিস ভাস্বতী বই পড়ছিল। বইটা পাশে রাখতেই, ওই ভারী বইটা তুলে আচমকা দড়াম করে ভাস্বতীর মুখে মারলেন। হঠাৎ ওই আঘাতেই মিস ভাস্বতী নিশ্চয় সংজ্ঞা হারায়। তখন মিস ভাস্বতাঁকে জলে ফেলে দ্রুত গতিতে নিজের কেবিনে ফিরে এলেন। বইটাও জলে ফেলে দিয়েছিলেন, সম্ভবত সেই সময়ে হ্যারিকেনটাও জলে পড়ে যায়। পুরো ব্যাপারটাই ঘটেছে সাড়ে বারোটার একটু আগে। বই দিয়ে আঘাত করার আওয়াজ আর জলে মিস ভাস্বতীর দেহ পড়ার শব্দে বিজয়বাবু বেরিয়েছিলেন। তিনি এবং মন্টু গিয়ে মিস ভাস্বতাঁকে দেখেননি। কারণ তার আগেই তাকে জলে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আরেকটা পয়েন্ট, বিজয়বাবু সোয়া বারোটার সময়ে জেগে থাকা সত্বেও অনিমেষবাবুর বমি করার শব্দ বা অনিমেষবাবু আর বারীনবাবুর কথাবার্তা শুনতে পাননি। অথচ ওঁদের দু’জনের ঘর পাশাপাশি। তার মানে বিজয়বাবু যখন ঘুমোচ্ছিলেন, তখনই অনিমেষবাবু বাথরুমে বমিটমি করছিলেন, বারীনবাবুর সঙ্গে কথা বলছিলেন। আমার ধারণা ওইসব আওয়াজেই বিজয়বাবুর ঘুমটা ভেঙে গিয়েছিল। কিন্তু উনি যখন পুরোপুরি জেগে উঠেছেন তখন অনিমেষবাবু ঘুমিয়ে পড়েছেন।

“যাই হোক, বারীনবাবুর কথায় ফিরে আসি। এইবার শুরু হল বারীনবাবুর সমস্যা। মিস ভাস্বতাঁকে জলে ফেলে ফিরে এসে অনিমেষবাবুর ঘড়ির কাঁটা পিছিয়ে দিলেন। কিন্তু সময়টা মেলালেন নিজের ঘড়ির সঙ্গে। এদিকে অনিমেষবাবু সব সময়ে ঘড়ি দশ মিনিট ফাস্ট রাখতেন। ফলে এর পরে সব জায়গাতে যেতেই ওঁর দেরি হচ্ছিল। মলয়, তুমি আর বাপিবাবু সময় নিয়ে খুব সচেতন বলে সেটা লক্ষ্য করেছ এবং বিরক্তও হয়েছ। কিন্তু অন্যরা এ নিয়ে ভাবেনি। পাঁচ-দশ মিনিটের এদিক ওদিক নিয়ে অনেকেই ভাবে না, যদি না ট্রেন বা প্লেন ধরতে হয়। তাই উনি নিজেও ধরতে পারছিলেন না সময়ের সমস্যাটা। ডাস ইট মেক সেন্স স্যার?” একেনবাবু আমায় জিজ্ঞেস করলেন।

“যা বলছেন সবই তো লজিক্যাল। কিন্তু টাকার জন্য খুনের পসিবিলিটি কিন্তু এলিমিনেট করলেন না।”

“তা করলাম না, আমি শুধু আরেকটা পসিবিলিটির কথা বললাম। মলয়ের কাজ হবে চুরির জিনিস উদ্ধার করা, আর দেখা মেয়েটার কোনও চিঠিপত্র, ডায়রি বা খাতায় বারীনবাবুর উল্লেখ আছে কি না।”

.

মলয় রায় কাজ করেন খুব দ্রুতগতিতে। পরের দুপুরের মধ্যে উদ্ধার করে ফেললেন ভাস্বতীর গলার হার আর কানের দুল। যে মাঝি ডেড বডিটা জল থেকে তুলেছিল, তার বাড়ি থেকেই মিলেছে। দুর্গাপুর থেকেই বারীনকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে জেরা করার জন্যে। ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে বা পিছিয়ে দিয়ে অ্যালিবাই সৃষ্টি করা ক্রাইম নভেলের একটা ক্লসিক মেথড। সেটা কেন আমি ভাবিনি, নিজেই অবাক হচ্ছিলাম। বেচারা ভাস্বতী… মাত্র সতেরো বছরের তরতাজা জীবনের কী শোচনীয় পরিণতি ঘটল! বারীনকে আমি অল্পই দেখেছি, কিন্তু একবারও মনে হয়নি এরকম জঘন্য কাজ সে করতে পারে! কামনার তাড়নায় মানুষ কী না করে, সেই অন্যায় ঢাকা দিতে আরও কত ঘোরতর অন্যায় করে ফেলে, এটাই বোধহয় এর থেকে শিক্ষণীয়। তবে অনিমেষ হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছে। বার বার ফোন করে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে। একদিন খেতে নিয়ে যাবে কথা হয়েছে। এগুলো সব একেনবাবুর প্রাপ্য আমার নয়।

Sujan Dasgupta ।। সুজন দাশগুপ্ত