৷৷ ১০ ৷৷

টিমদের বাড়ি থেকে ফেরার দিন কয়েক বাদে শুক্রবার কলেজে যাচ্ছি। ফল সেমিস্টার শুরু হয়ে গেছে, দুপুরে একটা ক্লাস আছে। একেনবাবু বললেন, “স্যার, আজকে একজন মহিলা আপনাকে ফোন করতে পারেন। আমি থাকব না, তাই আপনার নম্বরটা দিয়েছি।”

“কী ব্যাপার? আর আপনি থাকছেন না মানেটা কী?”

“আমি স্যার ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্টের সঙ্গে একটা কাজ করতে ব্রুকলিনে যাব, সেখানে ফোনটোন রিসিভ করা যাবে না। কিন্তু ফোনটা ইম্পর্টেন্ট। প্যারিস থেকে মিস্টার ডুবোয়া বলে একজন নিউ ইয়র্ক পুলিশের কাছে কমপ্লেন করেছেন, ওঁদের ফ্যামিলির পুরোনো ট্রেজার, রোঁদার একটা স্কাল্পচার চুরি হয়েছে বলে।”

“দাঁড়ান দাঁড়ান, এটা কি টিমের সেই ছোট্ট স্ট্যাচুর কথা বলছেন?”

“হতে পারে স্যার।”

“কিন্তু আপনি এর মধ্যে জড়ালেন কি ভাবে?”

“সে আরেক কাহিনি। কথা প্রসঙ্গে ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট বোয়ার কথাটা বলছিলেন। নিউ ইয়র্ক পুলিশ এরকম ভেইগ কমপ্লেন নেয় না। তাছাড়া চুরি হলেও হয়েছে বহু বছর আগে। কিন্তু যেহেতু আমার মনে হল সঙ্গে আমাদের বন্ধু টিম ব্যাসারাথ জড়িত থাকতে পারেন, ভাবলাম এ নিয়ে যতটা সম্ভব জানা যায় যাক না।”

“তা তো বুঝলাম কিন্তু ফোন করেউনি কী বলবেন? আর আমি তো পুলিশ নই, আমাকে বলবেনই বা কেন। তাছাড়া এই যদি সেই মিস্টার ডুবোয়া হন, তাহলে তো তিনি ইংরেজিও জানেন না।” দায়িত্বটা কাটাবার জন্যে বেশ কিছু যুক্তি দিলাম।

“আমি পুরোটা বলিনি স্যার, ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট আমাদের কথা ওঁকে বলেছেন। আমরা প্রাইভেট গোয়েন্দা হিসেবে ওঁকে সাহায্য করার চেষ্টা করব। আর ফোন করবেন ওঁর মেয়ে। ব্রিজিট ব্যুভোয়া বা ওরকম কিছু একটা নাম। তিনি ওয়ালডর্ফ অ্যাস্টরিয়াতে আছেন।”

“সে তো বুঝতেই পারছি, রিচ উয়োম্যান।”

“হ্যাঁ স্যার, আর শুনেছি খুব সুন্দরী।”

প্রমথর সঙ্গে থেকে থেকে একেনবাবুও আজকাল বেশ রসিক হয়ে উঠেছেন।

“আপনি সে খোঁজটা পেলেন কোত্থেকে?”

“অনুমান করলাম স্যার, ফ্রেঞ্চ লেডি তো!”

আমার দেরি হয়ে যাচ্ছিল, তাই আর প্রশ্ন না করে কলেজের দিকে রওনা হলাম।

দুপুরের ক্লাস শেষ করে সবে অফিসে ঢুকে নিজের চেয়ারে বসেছি। এমন সময় একটা ফোন এল। ফ্রেঞ্চ অ্যাকসেন্টে এক মহিলা আমার নামটাকে চন্দ্রবিন্দু দিয়ে মার্ডার করে খোঁজ করছেন। এমনিতেই ফ্রেঞ্চ অ্যাকসেন্টের ইংরেজি আমি ভালো বুঝি না, তার ওপর আমার অফিসে ওয়ারলেস সিগন্যাল ভালো আসে না, বেশ কেটে কেটে যাচ্ছে। মহিলার ইংরেজি জ্ঞানও ব্যাপারটা প্রাঞ্জল হতে দিচ্ছে না। যেটুকু উদ্ধার করলাম, সেটা হল উনি রাত দশটার ফ্লাইটে প্যারিস ফিরে যাচ্ছেন। কতগুলো কথা আমাদের জানা দরকার, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। কিন্তু ফোনে কথাগুলো বোঝাতে পারবেন না। পাঁচটা নাগাদ ওঁর হোটেলে এসে যেন দেখা করি।

আমার বিরক্তি লাগল। প্রথম কথা পাঁচটা নাগাদ ভিড় ঠেঙিয়ে ব্রুম স্ট্রিট থেকে পার্ক আর ফরটিনাইন্থ স্ট্রিটের মোড় পর্যন্ত যেতে হবে। আর সত্যি কথা বলতে কি, এইসব বড়োলোকদের জায়গায় একা একা যেতে আমার ভালোও লাগে না। তার ওপর ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজি শুনতে হবে ফ্রেঞ্চ অ্যাকসেন্টে! সেটা বুঝব কি না কে জানে! হঠাৎ মনে হল বেভকে যদি বলি? বেভ ভালো ফ্রেঞ্চ জানে। যদিও আমাদের অফিস সেক্রেটারি, কিন্তু ভালো বন্ধু। যদিও এর মধ্যে ওকে জড়াতে ভালো লাগছিল না। সঙ্কোচও হচ্ছিল কী ভাবে কথাটা তুলব ভেবে। হোপ সি ডাসন্ট মাইন্ড। বেভের অফিস পাশেই। ওর কাছে যাবার আগেই দেখি ও এসে হাজির।

“তোমাকে ডিটেকটিভ ফোন করেছিল। জানতে চেয়েছে ব্রিজিট ব্যুভেয়ার সঙ্গে তোমার কথা হয়েছে কি না।”

একেনবাবুকে বেভ পছন্দ করে। ডিটেকটিভ বলে ডাকে।

“হ্যাঁ, কথা হয়েছে।”

আমার মুখচোখের অবস্থা দেখে বেভ আঁচ করল একটা কিছু হয়েছে। চেয়ার টেনে বসে বলল, “সামথিং রং?”

ঠিক কি ভাবে প্রসঙ্গটা তুলব ভাবতে ভাবতে অকারণেই টেবিলের কাগজপত্রগুলো এদিক ওদিক সরালাম।

“ইউ ওয়ান্ট টু সে সামথিং, রাইট?”

“ইয়েস।”

“কী?”

“আজ সন্ধ্যায় তুমি কী করছ?”

“নট মাচ। কেন?”

“আমার সঙ্গে ডিনার খাবে?”

“ইউ আর নট ফলিং ইন লাভ উইথ মি, আর ইউ?” দুষ্টু দুষ্টু মুখে বেভ জিজ্ঞেস করল।

এতদিনে বেভকে চিনে গেছি বলে এগুলোতে তেমন লজ্জা বোধ করি না।

“নট ইয়েট, জাস্ট এ ডিনার ইনভিটেশন,” বেভকে বললাম। “তবে খাবার আগে তোমাকে আমার সঙ্গে এক জায়গায় যেতে হবে।”

“কোথায়?”

“ওয়ালড অ্যাস্টরিয়ায় ব্রিজিট ব্যুভেয়া বলে একজনের কাছে।” বেভকে ব্যাপারটা খুলে বললাম।

“নাউ আই আন্ডারস্ট্যান্ড,” বেভ হাসল, কিন্তু হাসিটা যেন একটু নিষ্প্রভ। “এটা ডেট নয়, ইউ নিড অ্যান ইন্টারপ্রেটার।”

কথাটা অসত্য নয়। কিন্তু সেটা স্বীকার না করে ডিফেন্সিভ পজিশন নিলাম। “দ্যাটস নট ট্র, অনেকদিন থেকেই ভাবছিলাম, উই শুড গো আউট ফর ডিনার। কিন্তু উইক এন্ডে তো তুমি সব সময়ই ব্যস্ত থাকো?”

“হাউ ডু ইউ নো, ইউ নেভার অ্যাস্কড মি আউট!”

সর্বনাশ এর কি উত্তর দিই? কিন্তু কিছু তো একটা বলতে হবে!

আমার শব্দ সঙ্কট দেখে বেভের বোধহয় একটু করুণা হল। বলল, “উত্তর দিতে হবে, আই উড লাভ টু হ্যাভ ডিনার উইথ ইউ টু নাইট অর এনি নাইট।”

.

প্রমথ আমায় খ্যাপায় বেভ আমার প্রতি অনুরক্ত বলে। আমি অবশ্য হেসে উড়িয়ে দিই। বেভ একটু ফ্লার্ট করতে ভালোবাসে। সেক্রেটারির চাকরি করে শুধু জেদের বসে। ও শুধু সুন্দরী নয়, ও হচ্ছে একজন এয়ারেস। ওর দাদু ছিলেন ফিদি রিচ। একজন সাধারণ লোককে বিয়ে করে ওর মা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসেছিলেন বলে বাড়ির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিন্ন হয়। প্রথমে বেভের বাবার মৃত্যু, তারপর মায়ের মৃত্যুর খবর শুনে বেভের মামা নিজের থেকেই এগিয়ে এসে একমাত্র ভাগ্নি বেভের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কিছুদিন আগে যখন একটা টিভির খোঁজ করছিলাম তখনই ব্যাপারটা শুনি। বেভ এই গরীব প্রফেসরের পয়সা বাঁচাতেই ওর মামার বিশাল দোকানে নিয়ে গিয়েছিল। দেখেই বুঝেছিলাম উনি খুব স্নেহশীল লোক। বেভের সঙ্গে গেছি বলে প্রায় নামমাত্র টাকা দিয়ে টিভিটা পেয়েছিলাম। বিক্রিবাটা হয়ে যাবার পর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনেছিলাম বেভকে চাপ দিচ্ছেন ওর মায়ের নামে যে সব জমিজমা দাদু রেখে গেছেন তাড়াতাড়ি সেগুলোর দখল নিতে। আমাকে উনি ঠিক কী ভেবেছিলেন জানি না। কিন্তু আমাকেও বারবার বলেছিলেন বেভকে বোঝাতে। অনুমান করতে পেরেছিলাম, মাল্টি-মিলিয়ন ডলারের কথা হচ্ছে। সেগুলো নিলে আর সেক্রেটারির কাজ করতে হবে না, পায়ে পা তুলে বাকি জীবন কাটাতে পারবে। এ নিয়ে আগে লিখেছি। থাক সে কথা।

.

ম্যানহাটনে পুরো একটা ব্লক জুড়ে ওয়ালডর্ফ অ্যাস্টরিয়া হোটেলটা। কোনদিক দিয়ে ঢুকব যখন ভাবছি দেখলাম বেভ এগিয়ে গেল। হাবভাবে বুঝলাম আগে একাধিক বার এখানে এসেছে। নিজেই লীড নিয়ে আমার হয়ে ব্রিজিট ব্যুভেয়ারকে লবি থেকে ফোন করল। লবিতে আমিই একমাত্র ভারতীয়। তাই চিনিতে ব্রিজিটের অসুবিধা হল না। বেশ লম্বা ডেলিকেট চেহারার ব্রুনেট মেয়ে। মেয়ে বলছি কারণ বয়স বছর তিরিশ পঁয়তিরিশের বেশি হবে না। আমি বেভের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম। বেভকে কেন সঙ্গে এনেছি জানালাম। বেভ ফ্রেঞ্চ জানে –যদি ফ্রেঞ্চে ওঁর বক্তব্য বলতে সুবিধা হয়, তাহলে বেভকে বলতে পারবেন। পাছে উনি চটেন ওঁর ইংরেজি জ্ঞানের অপমান করছি। তাই যোগ করলাম আমার নিজের ইংরেজিও একটু উইক, তাই হয়তো ওঁর সব কথা হয়তো বুঝতে পারব না। বেভ ইন্টারপ্রেটারের কাজ করবে।

ভাগ্যিস বেভ সঙ্গে ছিল। ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতে দুয়েকটা কথা বলেই উনি বোঁ করে ফ্রেঞ্চে চলে গেলেন। বেভই শ্রোতা। ইংরেজি থেমে থেমে বলেন, ফ্রেঞ্চ বলেন ঝড়ের বেগে। আমি চিন্তিত হচ্ছিলাম, বেভ ওঁর বয়ান কতটা বুঝতে পারছে। মধ্যে আমি শুধু বেভকে একবার জিজ্ঞেস করলাম যে সবকিছু বুঝতে পারছে কি না। বেভ বরাভয়ের একটা দৃষ্টি দিল। কথাবার্তা সব লবিতে বসেই হল। ব্রিজেটের আরেকটা কী কাজ ছিল, তাই আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিলেন। বেভ কিছু একটা ওকে বলল। তখন উনি একটা কার্ড বেভকে ধরিয়ে দিলেন। আমাকে ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতে বললেন, ওকে আমার কনট্যাক্ট নম্বর দিয়েছি, যদি আর কোনো প্রশ্ন থাকে। হোটেল থেকে বেরিয়ে ঘড়িতে দেখলাম সোয়া ছ’টা। একটা ট্যাক্সি নিয়ে গেলাম পেনাং রেস্টুরেন্টে। ভালো থাই আর মালয়েশিয়ান খাবার পাওয়া যায় ওখানে। আমি আগে বার দুই খেয়েছি, দু’বারই একশোয় একশো। মনে হল বেভ খুশিই হবে। লাকিলি ভিড় ছিল না। একটা কর্নারে দু’জন বসার একটা বুথ পেয়ে গেলাম। বেশ নিরিবিলি।

যে মেয়েটি আমাদের অ্যাটেন্ড করছে সে বলল, আজকে একটা স্পেশাল ড্রিঙ্ক ওরা সার্ভ করছে –টম ইয়াম সিয়াম।

আমি বললাম, “টম ইয়াম তো একটা স্যুপ!”

“হ্যাঁ স্পাইসি স্যুপ, কিন্তু তাতে ভদকা, লেমন গ্রাস, লিচি সিরাপ আর লঙ্কার গুঁড়ো দিয়ে এটা বানানো হয়েছে।”

“সর্বনাশ! ঝাল হবে তো!”

“খুব অল্প লঙ্কা, তোমাদের ভালো লাগবে।”

বেভ বলল, “আমি নেব।”

এক যাত্রায় পৃথক ফল হবে কেন। আমিও নিলাম। তারপর মেনু দেখে বেশ কয়েকটা ডিশ অর্ডার করলাম।

বেভ দেখলাম মিটিমিটি হাসছে।

“কী ব্যাপার?”

“আই গেট ড্রাঙ্ক ভেরি কুইকলি।”

“প্লিজ, আমাকে পুরো ব্যাপারটা বলার আগে ড্রাঙ্ক হয়ে যেও না, একেনবাবুকে আজ রাতে রিপোর্ট করতে হবে। গেলাসে চুমুক দেবার আগেই সবকিছু বলে ফেল, নইলে আবার ভুলে যাবে।”

ব্যাগ থেকে আই-ফোনটা বার করে বেভ বলল, “আই হ্যাভ রেকর্ডেড এভরিথিং, একদম ভেব না।”

ড্রিঙ্কটা সত্যিই চমৎকার। ঝাল-ঝাল মিষ্টি মিষ্টি একটা কিও আছে।

“সি ইজ এ রিচ এন্ড বিউটিফুল কাউন্টেস, তাই না?” বেভ গ্লাসে একটা চুমুক দিয়ে বলল।

“শি ইজ ওকে, আমি অত ভালো করে দেখিনি।”

“কাম! কাম!”

“সত্যি বলছি, আমি তোমার দিকেই তাকিয়ে ছিলাম।”

“ডু ইউ ওয়ান্ট মি টু বিলিভ দ্যাট!”

“নো, কিন্তু ও কথা থাক, কী বলল বলো?”

বেভ গ্লাসে আরেকটা চুমুক দিয়ে বাইরের দিকে একটু তাকাল। মনে হল ওর চোখের স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য একটু নিষ্প্রভ। বাইরের দিকে তাকিয়েই আমার উদ্দেশ্যে বলল, “মনে হচ্ছে তুমি মোর ইন্টারেস্টেড ইন হার স্টোরি দ্যান মি।”

এত আচ্ছা ফ্যাসাদ! হ্যাঁ বললেও ঝামেলা, না বললেও।

তারপর আমার উত্তরের অপেক্ষা না করে মুখ ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “আই গেট ইট, ইউ ডোন্ট হ্যাভ টু অ্যানসার।”

“দ্যাক্স নট টু বেভ,” আমি অন্তর থেকেই কথাটা বললাম।

“তাহলে আমাকে একটু অ্যাটেনশন দাও, তুমি ডিনারে নিয়ে এসেছ আমাকে।”

আমি ওর দিকে তাকিয়ে একটু বোকা বোকা হেসে বললাম, “আই অ্যাম অল ইয়োর্স।”

“গুড,” চোখদুটো আবার চিকচিক করে উঠল বেভের। বিজয়িনী হাসি হেসে বলল, “এখন তোমায় বলব।”

বেভের কাছে যা শুনলাম, তা টিমের কাছ থেকে আগেই শুনেছি। নতুনের মধ্যে হল ব্রিজিটের বাবা ব্রিজিটকে বলেছেন টিমের ওই স্কাল্পচারটা রোদাঁ-র হাতের কাজ। এরকম একটা স্কাল্পচার ওঁর ঠাকুরদার ছিল, যেটা চুরি হয়ে গিয়েছিল। মনে হচ্ছে এটাই সেই চুরি হওয়া জিনিস। ব্রিজিট অবশ্য বিশ্বাস করেনি। বাবা মাঝে মাঝেই স্কাল্পচার নিয়ে বেশী উত্তেজিত হয়ে যান, লজিক নিয়ে তেমন মাথা ঘামান না। এটা ঠিক, ওঁর বাবা স্কাল্পচার নিয়ে বহু পড়াশুনো করেছেন। নামিদামি সব স্থপতির কাজ ও টেকনিকের সঙ্গে উনি পরিচিত। কিন্তু একটা কিছু দেখেই কনফিডেন্টলি সেটা কার কাজ বলে দেওয়া ব্রিজিটের মনে হয়েছে একটু বাড়াবাড়ি। তবে এটা যদি রোদাঁর হয় আর চুরি হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে ক্রুজশিপের স্টাফের কাছে থাকাটা বিস্ময়কর।

যাইহোক, ক্রুজ থেকে ফিরেই ব্রিজিটের বাবা রিক স্প্রে বলে একটি লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। লোকটি কমিশন নিয়ে আর্ট কালেক্টরদের দুষ্প্রাপ্য আর্ট জোগাড় করে দিতে সাহায্য করে। ব্রিজিট একবারই লোকটিকে দেখেছে। পছন্দ হয়নি, মনে হয়েছে গোলমেলে ক্যারেক্টার। ওর একমাত্র পজিটিভ হচ্ছে, ভালো ফ্রেঞ্চ বলতে পারে। বাবার কাছে মিস্টার ব্যাসারাথের ফোন নম্বর আর ঠিকানা ছিল। রিককে সেটা দিয়ে স্কাল্পচারটা জোগাড় করে রাখতে বলেন। আরও বলেন যে এক সময়ে ওটা ওঁর ফ্যামিলিতেই ছিল, কিন্তু চুরি হয়ে যায়। তবে সেই নিয়ে ঝামেলা করার দরকার নেই। দরকার হলে টাকার অঙ্ক বাড়িয়ে দু’হাজার অফার করতে পারেন, প্রয়োজনে একটু ভয় দেখানো যেতে পারে। মোট কথা স্ট্যাচুটা ওঁর চাই-ই। অফার অ্যাকসেপ্ট করলে সঙ্গে সঙ্গে টাকাটা ব্যাঙ্ক ট্রান্সফার করে দেবেন। ইন্সিডেন্টাল খর্চার জন্যে রিককে পাঁচশো ডলার ক্যাশও দেন। স্কাল্পচারটা পেলে আরও পাঁচশো ডলার কমিশন দেবেন। এটা প্রায় মাস তিনেক আগের কথা। ব্রিজিট আরও কয়েকদিন নিউ ইয়র্কে কাটিয়ে বাড়ি ফেরে।

প্যারিসে গিয়ে ব্রিজিট শোনে যে রিক স্প্রে জানিয়েছেন টাকার অঙ্ক অনেকটা না বাড়ালে ওটা পাওয়া যাবার সম্ভবনা নেই, তবে ভয় একটু দেখিয়ে এসেছেন –তাতে যদি কিছু কাজ হয়। কিন্তু তার কয়েকদিন পর রিক স্প্রে জানান যে মূর্তিটাই চুরি হয়ে গেছে! ব্রিজিটের বাবা তখন নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা কোয়াইট আনহেল্পফুল। তবে তাদের একজন মিস্টার একেন সেনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। প্রাইভেট ডিটেকটিভ হিসেবে তিনি যদি স্কাল্পচারটা উদ্ধার করতে সাহায্য করতে পারেন। যদি মিস্টার সেন কাজটার ভার নিতে রাজি হন ফী নিয়ে তখন কথা হবে।

“আর ও হ্যাঁ, এইটে –এইটে হল সেই স্কাল্পচারটার ফোটো, যেটা ব্রিজিটের বাবা কিনতে চেয়েছিলেন।” ব্যাগ থেকে বার করে বেভ আমাকে দিল।

একটা স্বল্পবাস পরা মেয়ে পাথরের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেখে এমন কিছু আহামরি লাগল না। এর জন্যে হাজার-দুহাজার ডলার! আমি একবার ঘড়ির দিকে তাকালাম। প্রায় আটটা। এর মধ্যে খাবার এসে গেছে। বেভ আরেকটা ড্রিঙ্ক অর্ডার করল। আমি নিচ্ছি না দেখে বলল, “ইউ মাস্ট লার্ন টু রিল্যাক্স, কাল পরশু তো কলেজ নেই। হ্যাভ সাম ফান!”

টম ইয়াম সিয়াম বেশ পোটেন্ট ড্রিঙ্ক। ভাবছিলাম খাওয়াটা কি উচিত হবে! গাড়ি চালিয়ে অবশ্য আসিনি। বেভ আমার জন্যে অপেক্ষা করল না। আমার হয়ে আরেকটা ড্রিঙ্ক অর্ডার করে দিল। খেতে খেতে হাবিজাবি অনেক গল্প হল। তার বেশির ভাগই কলেজের লোকেদের নিয়ে, কিছু আমার নিজের বাড়ির কথা আর কিছু ওর নিজের জীবনের কথা, যার অধিকাংশই আমি মোটামুটি জানি। অন্যমনস্ক হয়ে জল খেতে গিয়ে আরেকটু হলেই টেবিলের ওপর রাখা ফোটোটার ওপর জল ফেলছিলাম।

বেভ তাড়াতাড়ি ফোটোটা টেবিল থেকে তুলে নিল। তারপর জিজ্ঞেস করল, “কী করবে ফোটোটা নিয়ে?”

“একেনবাবুকে দেব, ওঁর ইনভেস্টিগেশনে যদি কিছু কাজে লাগে।”

“তাহলে এটা এখানে নষ্ট হবার আগে, আমি এটাকে রেখে দিই।” মুচকি হেসে ফোটোটা আবার ব্যাগে পুরল বেভ।

ভালোই হল ফোটোটার যা সাইজ, আমার পকেটে ঢুকত না। হঠাৎ আমার মনে পড়ল বেভ বলেছিল ওর দাদু আর্ট কালেক্ট করতেন। অজস্র টাকা থাকলে বোধ হয় সেগুলোই লোকে করে। কোনো কারণ ছাড়াই প্রশ্ন করলাম, “তোমার দাদুর কালেকশনে কোনও রোদাঁ রয়েছে কি?”

বেভের মুখটা হঠাৎ কেমন জানি সিরিয়াস হয়ে গেল। বলল, “জানি না। তোমাকে তো বলেছি, দাদু বেঁচে থাকতে ওই বাড়িতে শুধু একবারই গিয়েছিলাম। তবে আঙ্কল জ্যাক হচ্ছে ডাই হার্ড রোদাঁ ফ্যান। ওর সঙ্গে কথা বললে রোদাঁ সম্পর্কে যা জানার আছে সবই জেনে যাবে।”

“তাই নাকি, তাহলে তো এটা দেখাতে হচ্ছে! থ্যাঙ্ক ইউ।”

“ইন ফ্যাক্ট, উনি তোমার খোঁজ করছিলেন?”

“আমার! কেন?”

“বলব না।”

বেভের আরেকটা টম ইয়াম সিয়াম খাবার ইচ্ছে ছিল। আমি কোনোমতে নিরস্ত করলাম। বিল চুকিয়ে বেরিয়ে দেখি, বেভ আমার হাত ভীষণভাবে আঁকড়ে ধরে আছে। অস্ফুটভাবে বলল, “টোল্ড ইউ, আই গেট ড্রাঙ্ক কুইকলি।”

“দুটো খেলে কেন?”

“ও আই হ্যাড এ লাভলি টাইম!”

অ্যালকোহলের প্রভাব আমার নিজের ওপরও একটু পড়েছিল। ওকে ব্যালেন্স করে হাঁটিয়ে নিয়ে একটা ট্যাক্সি ধরলাম। ট্যাক্সিতে উঠেও আমার হাত ছাড়ল না। সারাটা পথ কাঁধে মাথা দিয়ে রইল। রাস্তায় বেভকে একা না ছেড়ে ওর অ্যাপার্টমেন্ট পর্যন্ত গেলাম। ব্যাগ থেকে হাতড়ে হাতড়ে চাবি বার করে দরজা খুলে বলল, “তুমি ভেতরে আসবে না?”

এমনভাবে কথাটা বলল যে উপেক্ষা করা কঠিন। কিন্তু না, আজকে ঢুকলে হয়তো নিজেকেই সামলাতে পারব না। নিজেকে সংযত করে বললাম, “বেভ, ইট ইজ লেট।”

“টুমরো ইজ স্যাটারডে।”

“আই নো।”

আমার গলার স্বরে একটা কিছু ছিল। বেভ জোর করল না।

“ঠিক আছে এসো না।” পরমুহূর্তে আমার গলা জড়িয়ে বলল, “বাট ইউ মাস্ট কিস মি গুডবাই।”

বেভ চলে যেতেই খেয়াল হল ওর কাছ থেকে ছবিটা নেওয়া হয়নি।

বাড়িতে ফিরে দেখি একেনবাবু টিভি দেখছেন।

“আপনি আছেন ভালো,” আমি অনুযোগের সুরে বললাম, “আমার ঘাড়ে ফ্রেঞ্চ মহিলাকে চাপিয়ে আপনি এখানে আরাম করে টিভি দেখছেন।”

“কী যে বলেন স্যার। আপনি তো ম্যাডাম বেভের সঙ্গে ছিলেন?”

“আপনি জানলেন কি করে?”

“কেন স্যার, আমি কি গোয়েন্দা নই?”

“তা মানি, কিন্তু আপনি তো ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্টের সঙ্গে মিটিং-এ ছিলেন?”

“প্রমথবাবু তো সেখানে ছিলেন না। তিনি আপনার অফিসে গিয়ে শুনলেন আপনি বেভ ম্যাডামকে ডেটে নিয়ে গেছেন।”

“ডেট! সেই রাস্কেলটা কোথায়?”

“তিনি ম্যাডাম ফ্রান্সিস্কার সঙ্গে খেতে গেছেন।”

“চুকে গেছে। এখন শুনুন, আপনার ইনফরমেশন জোগাড় করতে আমার একশো ডলার গচ্চা গেছে!”

টাকার অঙ্কটা শুনে একেনবাবু আঁতকে উঠলেন। “সে কি! কী করে স্যার?”

“মেয়েটা তো ইংরেজি ভালো করে জানে না। তাই বেভকে নিয়ে গেলাম। খবরগুলো অন্তত পাওয়া গেল।”

“তা তো বুঝলাম স্যার, কিন্তু একশো ডলারের ব্যাপারটা আসছে কোত্থেকে?”

“আচ্ছা, একটা মেয়েকে শুক্রবার বিকেলে ইন্টারপ্রেটারের কাজ করিয়ে না খাইয়ে ছেড়ে দেওয়া যায়!”

“কখনোই না স্যার। তার ওপর ইন্টারপ্রেটার যদি বেভ ম্যাডাম হন। আমার কিন্তু স্যার বেভ ম্যাডামকে খুব পছন্দ।”

“বেশ তো পরের বার আপনিই ওকে নিয়ে যাবেন।”

“কী যে বলেন স্যার, আপনি থাকতে আমি কেন! আমি কফি বানাই স্যার, তারপর শুনি কী উদ্ধার করলেন ফ্রেঞ্চ লেডির কাছ থেকে।”

এইসব কথাবার্তার মধ্যেই প্রমথ এসে হাজির। এসেই আমাকে অ্যাটাক। “তোকে একেনবাবু একটা কাজের জন্যে পাঠালেন, আর তুই সেটা না করে বেভের সঙ্গে প্রেম করতে বেরোলি।”

“স্টুপিডের মতো কথা বলিস না!” আমি এক ধমক লাগালাম।

“না, না স্যার,”একেনবাবু আমার সমর্থনে এগিয়ে এলেন। “বাপিবাবু অনেক কিছু জেনে এসেছেন। বেভ ম্যাডাম না থাকলে খবরগুলো পাওয়াই যেত না।”

“আপনি আবার কিচেনে কী খুটখাট করছেন? আমি কফি বানাচ্ছি, আপনার কফি তো মুখে দেওয়া যায় না!” একেনবাবুকে সরিয়ে দিয়ে প্রমথ কফি তৈরির ভার নিল। তারপর আমাকে বলল, “শুনি অনেক কিছু কী জেনে এসেছিস?”

আমার কাছ থেকে সব শুনে একেনবাবু বললেন, “ভেরি ইন্টারেস্টিং স্যার!”

“কী ইন্টারেস্টিং পেলেন এর মধ্যে? একটা বুড়ো ফ্রেঞ্চম্যান একজনের গ্রেট গ্র্যান্ডফাদারের জিনিস নিজের ঠাকুরদার বলে দাবি করছে উইদাউট এ শ্ৰেড অফ প্রুফ। আর আপনার সাহায্য চাইছে সেটা কবজা করার জন্য। বলে দিন মিলিয়ন ডলার লাগবে। তার থেকে টিমকে একটা ভালো টাকা দিয়ে দিন আর বাকি জীবনটা বউদির সঙ্গে হেসে খেলে কাটান।”

“কী যে বলেন স্যার, আপনাদের ছেড়ে কোথায় যাব?”

“ও, আপনার জন্যে আমি আর বাপি বিয়ে করব না।”

“আরে না স্যার, তা বললাম কখন!”

.

।। ১১ ৷৷

বেভের আঙ্কল জ্যাক আমাকে দেখতে চেয়েছিলেন, কারণ উনি ইন্ডিয়া বেড়াতে যাবার প্ল্যান করছেন। ইচ্ছে সুন্দরবনেও একবার যাবেন। সুন্দরবন যেতে হলে কলকাতা হয়েই যেতে হবে। কিন্তু কলকাতা সম্পর্কে একটা ভীতি এদেশে অনেকের মধ্যেই দেখছি। আমার কাছে কলকাতার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে একটু জানতে চান। আঙ্কল আমার সাথে দেখা করতে চান বলে সেদিন বেভ এমন একটা সাসপেন্স সৃষ্টি করেছিল যে কী বলবেন ভেবে আমি একটু দুশ্চিন্তার মধ্যেই ছিলাম। কথাটা যে আমাদের দুজনের সম্পর্ক নিয়ে নয় সেটা জেনে নিশ্চিন্ত হলাম। দেখলাম কলকাতার ব্যাপারে উনি ইতিমধ্যেই যা খোঁজখবর নিয়েছেন, তা আমার জ্ঞানের থেকে বেশি ছাড়া কম নয়। লাভের মধ্যে আমাকে আর বেভকে লাঞ্চ খাওয়ালেন। লাঞ্চ খেতে খেতে বেভ রোদাঁর প্রসঙ্গ তুলল। ওঁর কাছে লুকোছাপার কিছু নেই, তাই ব্যাপারটা আমি খোলাখুলি ওঁকে বললাম। আঙ্কল জ্যাক সত্যিই রোদাঁর সম্পর্কে অনেক কিছু জানেন। রোদাঁর একটা মূর্তি টিম ব্যাসারাথের কাছে থাকাটা অসম্ভব নয়, সেটা বললেন। তবে সেই মূর্তি কারোর হাজার বা পনেরো-শো ডলারে কিনতে চাওয়াটা একেবারে হাইওয়ে রবারির চেষ্টা।

আমি বললাম, “এক্ষেত্রে যিনি কিনতে চাচ্ছেন, তাঁর ধারণা ওঁর ফ্যামিলিই ওটার আসল মালিক।”

“তাহলে তো উনি রিক্লেইম করবেন, কেনার চেষ্টা করবেন কেন?”

“রিক্লেইম করা যায়?” বেভ জিজ্ঞেস করল।

“নিশ্চয়, তবে সব সময়ে যে ফেরত পাওয়া যায় তা নয়। নাৎসীরা বহু দামি দামি আর্ট ইহুদিদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে অন্যদের বিক্রি করেছিল। সেগুলো নিয়ে কোর্টে বহু লড়াই হয়েছে, এখনও হচ্ছে। বিশ্বাস করে নাৎসীদের কাছ থেকে যারা কিনেছিল তাদেরও অনেক ক্ষেত্রে কেনা জিনিস ফেরৎ দিতে হয়েছে। মুশকিল হল এ ব্যাপারে কোনো ইউনিভার্সাল আইন নেই।” তারপর আমাকে বললেন, “আসলে জানো তো, রোদাঁর বহু কাজের খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে এদিক ওদিক থেকে সেগুলো মাথা চাড়া দিয়েছে। এই তো কিছুদিন আগেই পোটোম্যাক-এর একটা বাড়ি থেকে ব্রোঞ্জ আর মার্বেল তৈরি পা ভাঁজ করা নারীমূর্তি তিন-শো হাজার ডলারেরও বেশি দিয়ে নিলামে বিক্রি হয়েছে। যাঁদের বাড়িতে ওটা এতদিন ছিল তাঁরা জানতেনও না যে ওটা রোদাঁর সৃষ্টি।”

“ও মাই গড। কিন্তু জানা গেল কী করে যে ওটা রোদাঁর?”

“গুড কোয়েশ্চেন। এর কোনো নির্দিষ্ট উত্তর নেই। অনেক আর্ট এদিক ওদিক ছড়িয়ে থাকে, সেগুলো ক্যাটালগড নয়, কিন্তু প্রমাণ করার নানান উপায় আছে। ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে কাজটা একটু কঠিন। হয়তো স্কাল্পটারের সই করা কোনো চিঠি বা যারা মূর্তিটির আগের মালিক ছিল, তাদের নাম-ঠিকানা, আর্টিস্টের কাছ থেকে কেনা হলে সেই বিক্রির রসিদ, সেই মূর্তিটা সম্পর্কে পত্রিকায় কোনো লেখা বা ছবি, বা এমন কারোর সংগ্রহ থেকে মূর্তিটা পাওয়া গেছে যাঁর সঙ্গে স্কাল্পটারের বন্ধুত্ব বা যোগাযোগ ছিল। অনেক সময়ে যাঁরা সেই স্কাল্পটারের কাজের বিশেষজ্ঞ, তাঁদের সার্টিফিকেটও প্রমাণ বলে ধরা যেতে পারে। পোটোম্যাকের ক্ষেত্রে ঠিক কোনটা আমি জানি না।”

“এত টাকা দিয়ে কেনে কারা?”

আমার গলার স্বরে বিস্ময়ের প্রাবল্য দেখে মনে হল একটু মজা পেলেন, আঙ্কল জ্যাক। “এ ধরণের আর্টের ক্ষেত্রে অঙ্কটা বিরাট কিছু নয়। তবে তোমার প্রশ্নের উত্তর হল, পেপারওয়ার্ক যদি ঠিক থাকে, তাহলে মিউজিয়াম, বড়োলোকেদের প্রাইভেট ট্রাস্ট, ইন্ডিভিজুয়াল কালেক্টর। আর এখন একটা কেনার বড়ো দল হয়েছে সো কল্ড মাফিয়া। রবের্তো স্যাভিয়ানো-র গোমোরাহ বইটা পড়েছ –ইটালির মাফিয়া গ্যাং- এর কীর্তি কাহিনি?”

“না, পড়িনি।”

“পড়লে জানতে এইসব মাফিয়া গ্যাং-মেম্বারদের কাছে ক্যাশ টাকা লেনদেনের থেকে আর্ট নিয়ে কারবার করা অনেক সেফ। ব্যাঙ্কে তো এরা কালো টাকা রাখতে পারবে না, মিলিয়নস অফ ব্ল্যাক মানি জমা থাকবে এইসব দুষ্প্রাপ্য চুরি করা আর্টের মধ্যে। ঐ বইয়ের লেখক তো এখন পুলিশ প্রোটেকশনে আছে। গোপন তথ্য ফাঁস করে দেওয়ার জন্য মাফিয়া গ্যাং ওঁকে খুন করবে বলে উঠে পড়ে লেগেছে। তাছাড়া দেখো না, পৃথিবীর নানান আর্কিওলজির সাইট থেকে হরদম পুরোনো আর্টিফ্যাক্ট চুরি হচ্ছে। কোথায় যাচ্ছে সেগুলো? গুন্ডা চোরের দল যারা ওগুলো চুরি করছে, কাদের কাছে তারা বিক্রি করছে? আমাদের মতো লোকের কাছে নিশ্চয় নয়। চুরির জিনিস রাখাটা তো একটা ক্রাইম।”

এসব আমার ফিজিক্সের জগৎ নয়, সম্পূর্ণ অন্য একটা পৃথিবী। ইতিমধ্যে লাঞ্চ এসে গেছে। খেতে খেতে হঠাৎ কেন ফনীন্দ্রনাথ বসুর কথা মনে হল জানি না। জিজ্ঞেস করলাম, উনি ফনীন্দ্রনাথ বোসের কথা শুনেছেন কি না।

“হ্যাঁ, নিশ্চয় শুনেছি। কাজ শিখেছিলেন স্কটল্যান্ডে, কিন্তু রোদাঁর কাছেও কিছুদিন ছিলেন। কমবয়সেই জলে ডুবে মারা যান। কিন্তু তুমি ওঁর কথা জানলে কী করে?”

সোর্সটা বললাম। “ভাস্করদের একটা বইয়ে ওঁর নামটা ছিল। আরও একজন ইন্ডিয়ানের নাম ছিল রোদাঁর ছাত্র হিসেবে, কিন্তু নামটা মনে করতে পারছি না।”

আঙ্কল জ্যাক ভুরু কুঁচকে একটু চিন্তা করলেন, তারপর বললেন, “বুঝতে পেরেছি, তুমি বোধহয় রহমানের কথা বলছ।”

আমি বললাম, “হ্যাঁ, হ্যাঁ, রহমান!”

“রহমানের কথা যদি বইয়ে থাকে তাহলে সেটা ওর ভাস্কর্যের জন্য নয়। হি উইল ওনলি বি রিমেমবারড বিকজ অফ এ ট্র্যাজেডি। ইয়েস, রহমান রোদাঁর স্টুডিওতে কাজ করেছে এন্ড ওয়াজ ক্লোজ টু কেমিল ক্লদেল।”

আমি ক্লু-লেস বুঝে বেভ আমাকে বলল, “কেমিল আরেকজন গ্রেট স্কাল্পটার–রোদাঁর ছাত্রী-কাম-লাভার ছিলেন।”

“ও ইয়েস, দ্যাট উড বি দ্য বেস্ট ওয়ে টু ডেসক্রাইব হার।” আঙ্কল বললেন। “আমার মতে কেমিল রোদাঁকে ছাড়িয়ে যেতে পারতেন, বাট সি ওয়াজ মেন্টালি আনস্টেল এন্ড অলসো এ ভিকটিম অফ লাভ। ওঁর শকুন্তলা’ আর ‘এজ অফ ম্যাচিওরিটি’ দুটোই আমি দেখেছি। লাভার যখন পরিত্যাগ করে চলে যায়, তখন যে একাকিত্ব… নিদারুণ ভাবে ফুটে উঠেছে দুটো স্কাল্পচারে! বাই দ্য ওয়ে, শকুন্তলা তো তোমাদের দেশের গল্প, তাই না?”

“হ্যাঁ, শকুন্তলা-দুষ্মন্তের গল্প। হিন্দু এপিক মহাভারতে আছে।” আমি বললাম।

“আমাকে পরে গল্পটা বলবে,” বেভ বলল।

“শিওর।”

“কী প্রসঙ্গে কেমিলের কথা বলছিলাম বলো তো?” বুঝলাম আমার আর বেভের কথায় আঙ্কল জ্যাক হঠাৎ খেই হারিয়ে ফেলেছেন।

“আপনি রোদাঁর ভারতীয় ছাত্রের কথা বলছিলেন।”

“ও হ্যাঁ, আসলে কি জানো, রোদাঁ-কেমিলের প্রসঙ্গ এলেই আমি অন্যমনস্ক হয়ে যাই। ওঁরা ছিলেন আমার যৌবনের নেশা। পাবলিক লাইব্রেরীতে গিয়ে পুরোনো ‘লেকো দ্য প্যারি’, ‘লে পেতিত প্যারিসিয়েন’ পত্রিকাগুলো ঘেঁটে ঘেঁটে ওঁদের কথা পড়তাম। তখনই এই রহমান নামে রোদাঁর এক অ্যাসিস্টেন্টের নাম চোখে পড়েছিল। ওকে রোদাঁরই আরেক অ্যাসিস্টেন্ট গুলি করে মারে।”

“মাই গড” বেভ বলে উঠল।

“ইয়েস, হোয়াট এ ট্রেজেডি! রোদাঁ আর কেমিলের মধ্যে তখন ঝগড়াঝাঁটি শুরু হয়েছে। কেমিল চাপ দিচ্ছেন, কিন্তু রোদাঁ কেমিলকে বিয়ে করতে রাজি নন। কেমিলকে অ্যাবরশন করতে হয়েছে, ওঁরা ছাড়াছাড়ির মুখে। কেমিল নিজে আরেকটা স্টুডিও ভাড়া নিয়ে নিজের কাজগুলো একটু একটু করে সেই স্টুডিওতে নিয়ে যাচ্ছেন। সাহায্য করছেন রোদাঁর দুই অ্যাসিস্টেন্ট, যারা ছিল সুন্দরী কেমিলের ভক্ত। তাদের একজন এই রহমান। পুলিশ সন্দেহ করেছিল খুনটা হয়েছে লাভ ট্র্যাঙ্গেল থেকে। অন্য ফ্রেঞ্চ অ্যাসিস্টেন্টটি রহমানকে প্রবলভাবে ঈর্ষা করত কেমিলকে নিয়ে। কেমিল নিজেও খুব আনব্যালেন্সড ছিলেন, কখন কার দিকে ঝুঁকতেন কে জানে! একবার তো একটা পাবে কেমিলকে নিয়ে দু’জনের মধ্যে হাতাহাতি পর্যন্ত হয়েছিল। পুলিশ স্বভাবতই ফ্রেঞ্চ অ্যাসিস্টেন্টের পক্ষ নিয়ে রহমানকে লক-আপে ঢুকিয়েছিল।”

“ওহ নো, এর জন্য ওঁর শাস্তি হয়েছিল?” বেভ জিজ্ঞেস করল।

“আরে না। রহমানের রুমমেট পরদিন পুলিশ স্টেশনে গিয়ে ওকে ছাড়িয়ে আনে। এই ঘটনার কয়েকদিন বাদেই রাত্রিবেলা একটা ডিচের ধারে রহমান খুন হয়। আইডেন্টিটি ঢাকতে পেট্রল দিয়ে বডিটা জ্বালানো হয়েছিল। খুনি ওয়াজ পার্টলি সাকসেসফুল, কারণ পুলিশ বেশ কয়েকদিন বুঝতেও পারেনি মৃতদেহটা কার। শেষরক্ষা অবশ্য হয়নি, রহমানের আংটিটার কথা খুনি ভুলে গিয়েছিল।”

“সেই রুমমেটই কি বডিটা আইডেন্টিফাই করল?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।

“দ্যাটস ইন্টারেস্টিং, তুমি প্রশ্নটা করলে। সেই রুমমেটের সঙ্গে পুলিশ যোগাযোগ করতে পারেনি, কিন্তু কেমিল আংটিটা চিনতে পেরেছিলেন। অবভিয়াসলি কেমিল ওয়াজ ক্লোজড টু রহমান। রহমানের ফিউনারেলও কেমিল অ্যারেঞ্জ করেন।”

“খুনি ধরা পড়ল কী ভাবে?” বেভ প্রশ্ন করল।

“পাস্ট হিস্ট্রির জন্যে পুলিশের একটা সন্দেহ ছিল রোঁদার সেই ফ্রেঞ্চ অ্যাসিস্টেন্টের ওপরে। একজন পথচারীকে পাওয়া গেল যে সেই রাত্রে অ্যাসিস্টেন্টটিকে পিস্তল হাতে ছুটে যেতে দেখেছে। সেই পিস্তলটা উদ্ধার হল অ্যাসিস্টেন্টের বাড়ি থেকে। যে গুলিটা রহমানের পুড়ে যাওয়া শরীরে পাওয়া গিয়েছিল সেটা ওই পিস্তলেরই গুলি। রহমানকে গুলি করার কথা পুলিশি জেরায় শেষ পর্যন্ত স্বীকার করল অ্যাসিস্টেন্টটি, যদিও বলল বডিটা নাকি ও পোড়ায়নি! দ্যাট হার্ডলি ম্যাটার্স।”

“তোমার এত মনে আছে আঙ্কল জ্যাক!” বেভ সবিস্ময়ে বলল।

“কেন জানি না, কেমিল অলওয়েজ ইনট্রিগড মি। কেমিল সম্পর্কে যেখানে যা পেতাম পড়তাম। আর এই ঘটনাটা এত দাগ কেটেছিল যে প্রায় কিছুই ভুলিনি। এমন কি বছরটাও মনে আছে ১৮৯৩। দুয়েকটা ডিটেইলস হয়তো মিস করলেও করতে পারি।”

“সেগুলো তো খোঁজ করলে লাইব্রেরিতে পাওয়া যাবে।”

“তারও দরকার হবে না। লাইব্রেরির সেই কাগজগুলো কপি করে আমি একটা ফাইল ফোল্ডারে রেখে দিয়েছিলাম। এখনও হয়তো আমার অফিসেই কোথাও আছে।”

.

।। ১২ ।

বাড়ি ফিরে দেখি একেনবাবু নিবষ্টমনে একটা বই পড়ছেন।

“কী পড়ছেন?”

“ওই –যে বইটার কথা টোনি র‍্যামাডিন সেদিন বললেন। কাল লাইব্রেরি থেকে নিয়ে এলাম। ভেরি ইন্টারেস্টিং স্যার। ১৮৮৫ সাল থেকেই হুগলি জেলা থেকে বাঙালি মুসলমানদের ছোটো ছোেটো দল ট্রাঙ্ক ও বস্তাভর্তি এমব্রয়ডারি করা সিল্কের শাল, টেবিলক্লথ, বালিশের ওয়াড় ইত্যাদি নিয়ে নিউ ইয়র্কে আসা শুরু করেছিলেন। সত্যি স্যার, কীরকম এন্টারপ্রেনার ছিলেন ওঁরা! আর এখনকার বাঙালিদের দেখুন, ব্যাবসা করতেই ভুলে যাচ্ছে!”

“বুঝলাম, তা সারাদিন বসে বসে বই পড়ছিলেন?”

“না স্যার লাঞ্চও খেয়েছি। আসলে ইংরেজি বই তো, পড়তে একটু সময় লাগে। আপনি কি করলেন সারাদিন?”

আমি আঙ্কল জ্যাকের সঙ্গে দেখা হবার কথা বললাম। একেনবাবু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব কিছু শুনলেন। তারপর মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন, “ভেরি ইন্টারেস্টিং স্যার, ভেরি ইন্টারেস্টিং… তাহলে তো ঠিকই লেখা ছিল ক্রুজশিপের সেই বইটাতে!”

“হ্যাঁ, আমিও সেটা ভাবছিলাম আঙ্কল জ্যাক যখন গল্পটা করছিলেন।”

“ওই যাঃ, গল্পে গল্পে আসল কথাটাই তো ভুলে গেলাম আপনাকে বলতে!” একেনবাবু হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে বলে উঠলেন। “আরেকটা ডেভালপমেন্ট হয়েছে স্যার, এড ফাউলার সাহেবের পরিচয়টা পাওয়া গেছে।”

“কে? রিক স্প্রে?”

“আরে না স্যার, লোকটা একটা জেলখাটা আর্ট-চোর। তবে ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টার। উনি চুরি করে টাকা রোজগার করতেন না। টাকা পেলে চুরি করতেন।”

“সেটা আবার কী ধরনের প্রফেশন?”

“ক্লিন প্রফেশন স্যার। চোরাই মাল নিয়ে ভাবতে হয় না, সেটা পাচার করার ভার অন্য লোকের। উনি শুধু ওঁর চুরি করার ক্ষমতাটা ব্যবহার করতেন।”

“বাঃ, ডিভিশন অফ লেবার। কিন্তু ওঁর ক্লায়েন্ট কারা ছিল?”

“রেস্পেক্টেবল কেউ নয় স্যার। যতটুকু জেনেছি একটা মাফিয়া গ্যাং, তার বেশি কিছু জানতে পারিনি।”

“বেশ। তা ফাউলার সাহেবের এই পরিচয়টা পেলেন কী ভাবে?”

“ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট বললেন। এফবিআই-র ফিঙ্গারপ্রিন্ট ডেটাবেস থেকে ওঁর আসল পরিচয়টা চট করেই পুলিশ পেয়ে গিয়েছিল। এতদিন চুপচাপ ছিল, কারণ ওঁর নেটওয়ার্কে কারা আছে, সেটা বার করার চেষ্টা চলছিল।”

“ধরে নিচ্ছি এখন পাওয়া গেছে। কিন্তু একটা জিনিস আমার কাছে স্পষ্ট নয়। আপনি বললেন, উনি টাকা পেলে ক্লায়েন্টের জন্যে চুরি করতেন। সেক্ষেত্রে বাংলা দেশে ওঁর চিঠি পাঠানোর কারণটা তো স্পষ্ট হচ্ছে না।”

“একদম খাঁটি কথা বলেছেন স্যার। একদম খাঁটি কথা… এই রে চারটে বেজে গেছে!” ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আমাকে একটু বেরোতে হবে স্যার” বলে একেনবাবু অদৃশ্য হলেন।

টিপিক্যাল একেনবাবু, মাথায় কখন কি ঘুরছে দেবা না জানন্তি!

.

উনি ফিরলেন সেই সন্ধেবেলায়। হাতে একটা কাগজ। আমি আর প্রমথ তখন বসে চা খাচ্ছি আর প্রমথকে বেভের আঙ্কলের সঙ্গে আমাদের দেখা হবার কথাটা বলছি। প্রমথ অ্যাস ইউয়াল আমার লেগপুল করছে। “হঠাৎ কলকাতায় যাবার কথা ভাবছেন কেন, ভাগ্নির ভাবি শাশুড়ির সঙ্গে দেখা করতে?”।

“তোর চ্যাঙড়ামি মাঝে মাঝে সীমা ছাড়িয়ে যায়। যা বলছি, সেটা বোঝার চেষ্টা কর– আর্টের এই যে বিশাল মার্কেট, সেটা শুধু শিল্পের প্রেম থেকে নয়।”

“সেটা একেনবাবু দেখুন। যদিও বলি, এই কেসটায় বেগার খাটছেন, একটা পাইসও ওই ফ্রেঞ্চবুড়ো দেবে না, আর মামুদের খালু-রহমান সাহেবের কাছ থেকেও কিছু মিলবে না।”

একেনবাবুকে ঘরে ঢুকতে দেখে প্রমথ বলল, “এই যে আপনার কথাই হচ্ছিল। Pro bono কেসটা নিয়ে কদুর এগোলেন?”

‘প্রো বোনো’ মানে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করা। একেনবাবু মুচকি হেসে হাতের কাগজটা এগিয়ে দিলেন।

কাগজটাতে একটা ফোটো আর তার নীচে মনে হয় সেই ফোটোর উলটোপিঠের ছবি ফটোকপি করা।

“এটা কি?” প্রমথ জিজ্ঞেস করল।

“ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট দিলেন। অরিজিনাল ছবিটা কুইন্সের পুলিশের কাছে। এই ছবিটার সঙ্গে মিস্টার ব্যাসারাথের বাড়ির তিনটে স্ট্যাচুও পুলিশ স্টেশনে আছে। সবগুলোই উদ্ধার করা হয়েছে মিস্টার ফাউলারের ঘর থেকে।”

ছবিটা পুরোনো, বোঝা যাচ্ছে বেশ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। একজন মেমসাহেবের সঙ্গে একটি ভারতীয়। ছবির পিছনে হাতে লেখা। mon cher ami Maqbul Hossain de Gaibasa, Bengal নীচে একটা সই Camille Claudel।

“এর অর্থ?” আমি প্রমথকে জিজ্ঞেস করলাম। আমাদের মধ্যে প্রমথই যা একটু ফ্রেঞ্চ জানে।

প্রমথ উত্তর দিল, “আমার প্রিয় বন্ধু মকবুল হোসেন, গাইবাসা, বাংলা।” তারপর বিজ্ঞের মতো বলল, “পুরোনো ছবি, ১৯০৫-এর আগে তোলা।”

“কী করে বুঝলি?”

“কারণ বঙ্গভঙ্গ হয়েছিল ১৯০৫ সালে। ছবিটা তার পরে তোলা হলে পূর্ববঙ্গ লিখত।

“এক্সলেন্ট স্যার।”

“থ্যাঙ্ক ইউ, এবার বলুন, এই ছবি থেকে আমরা আর কী কী সিদ্ধান্তে আসব?”

“তার আগে এককাপ কফি হলে সুবিধা হত স্যার। আপনাদের এই চা ঠিক জমবে না।”

“এমন ক্রিটিক্যাল সময়ে অনুরোধটা করেন যে ঠিক ফেলা যায় না।” বলে প্রমথ বিরক্ত মুখে কিচেনের দিকে এগোল। ওর পেছন পেছন আমরা সবাই কিচেনে হাজির হলাম।

গ্রাইন্ডারে কফির বিন গুঁড়ো করে, কফি মেকারে জল চাপিয়ে যখন ব্রুইং চলছে, তখন একেনবাবু শুরু করলেন, “স্যার এই ছদ্মনাম নেওয়া এড ফাউলার আসলে যে একজন আর্টচোর ছিলেন সেটা তো বলেছি। একটু আগে জানলাম ওঁর ক্লায়েন্ট ছিল শিকাগোর একটা মাফিয়া গ্যাং। বিজনেস এক্সপ্যানশনের জন্যে উনি আরেকটা গ্যাং-এর হয়েও কাজ করা শুরু করেছিলেন। মাস তিনেক আগে একটা লোকাল নিউজ পেপারে দেখেছিলেন একজন ফ্রেঞ্চম্যান পনেরো-শো ডলার দিয়ে হার্লেমের এক ভদ্রলোকের কাছ থেকে একটা মূর্তি কেনার চেষ্টা করেছেন। শুধু সেই মূর্তিটা নয়, আরও কয়েকটা মূর্তি সেই ভদ্রলোকের বাড়িতে এখনও পড়ে আছে। সবগুলো মূর্তিই বাড়ির মালিকের ঠাকুরদার বাবার সম্পত্তি, অর্থাৎ বেশ পুরোনো। বুঝতেই পারছেন স্যার কোন মূর্তিগুলোর কথা বলছি?”

“না বুঝতে পারার কথা নয়।” প্রমথ একটু বিরক্ত হয়ে বলল, “অত ভনিতা না করে একটু তাড়াতাড়ি বলুন।”

“তাড়াতাড়ি বলতে গেলে স্যার, আমার গুলিয়ে যায়।”

“আঃ, ফোড়ন কাটিস না তো, প্রমথ। আপনি নিজের মতো করে বলুন।”

“থ্যাঙ্ক ইউ স্যার। হ্যাঁ, যেটা বলছিলাম, এড সাহেব বুঝতে পারলেন মূর্তিগুলো যখন এত পুরোনো, সেগুলোর একটা মূল্য থাকবে। উনি সেই বাড়িটা একবার দেখেও এলেন। ওখান থেকে কিছু চুরি করা ওঁর পক্ষে জলভাত। সুযোগও মিলল, যখন মিস্টার ব্যাসারাথরা বাইরে গেছেন। চুরি করার সময়ে স্ট্যাচুগুলো ছাড়া একটা পুরোনো ছবিও দেখলেন অ্যাটিকের ব্যাগে আছে। এই সেই ছবি যার কপি আপনারা দেখেছেন। মনে হয় এই ছবিটাই মোড়া ছিল খবরের কাগজ দিয়ে। আগেই বলেছি স্যার, এই ফাউলার যুক্ত ছিলেন শিকাগোর একটা ক্রাইম ফ্যামিলির সঙ্গে। তাদের প্রাইভেট আর্ট কলেকশনের ব্যাপারে অনেক কাজকর্ম করেছিলেন। নিজে আর্ট চোর বলে আর্ট সম্পর্কে কিছু জ্ঞানও ছিল। কেমিল ক্লদেল নামটা তাঁর কাছে নিশ্চয় অপরিচিত ছিল না। এড সাহেব হিসেব করে দেখলেন বাড়ির মালিকের ঠাকুরদার বাবা কেমিল ক্লদেলের সমসাময়িক। কিন্তু এই ছবি আর মূর্তিগুলো ওঁর কাছে এল কী করে? অ্যাস সাচ এই ছবিটা মূল্যবান, কিন্তু এর মূল্য অনেক হবে যদি প্রমাণ করা যায় যে এই মূর্তিগুলোও কেমিলের তৈরি। সেইজন্যেই তিনি একটা চিঠি পাঠিয়েছিলেন রহমান সাহেবের বাড়িতে।”

“এক সেকেন্ড,” আমি বললাম। “সময়ের হিসেবটা কি ঠিক ছিল?”

“তাই তো মনে হয় স্যার। লোকাল পত্রিকায় টিমের বয়স দেওয়া ছিল ৬০ বছর, তার মানে জন্ম ১৯৫৫ সালে। যদি ভাবা যায় অ্যাভারেজ ৩০ বছর বয়সে সন্তানদের জন্ম হয়েছে। তাহলে একটা রাফ এস্টিমেট করা যায়। টিমের বাবার জন্ম ১৯২৫, টিমের ঠাকুরদার জন্ম ১৮৯৫ আর ঠাকুরদার বাবার জন্ম ১৮৬৫ সালে। উইকিপেডিয়া অনুসারে কেমিলের জন্ম ১৮৬৪-তে। সুতরাং কোনো সন্দেহই নেই যে টিমের ঠাকুরদার বাবা ব্রায়ান ব্যাসারাথ কেমিলের সমবয়সি ছিলেন। কিন্তু প্রশ্ন হল ব্রায়ান ব্যাসারাথের কাছে এই ছবিটা এল কী করে? সেক্ষেত্রে কি ফ্রেঞ্চ লেডি ব্রিজিট ম্যাডামের বাবা দাবিয়াল সাহেবের অভিযোগ সত্যি? ব্রায়ান ব্যাসারাথ এগুলো চুরি করেছিলেন দানিয়াল সাহেবের পূর্বপুরুষের ফ্যামিলি ট্রেজার থেকে? ব্রায়ান ব্যাসারাথ নিজে নিশ্চয় করেননি, করেছিলেন তাঁর ছেলে, যেহেতু এটা চুরি হয়েছিল দানিয়েল সাহেবের ঠাকুরদার কাছ থেকে।

অঙ্কে এগুলো মিললেও দিস ডাস নট মেক এনি সেন্স। তারপরেও একটা প্রশ্ন থাকছে হু কিলড এড ফাউলার? ফ্র্যাঙ্কলি আই ওয়াজ কনফিউজড স্যার। ভেরি ভেরি কনফিউজড। আসলে স্যার আমি সবকিছু মেলাবার চেষ্টা করছিলাম, আর সেটাই ছিল আমার প্রবলেম। ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইভেন্টকে কানেক্ট করার চেষ্টা করলে অ্যাবসার্ড রেজাল্ট আসে। এড ফাউলারের মৃত্যুর সঙ্গে টিম ব্যাসারাথের মূর্তি মেলাতে গিয়েই হয়েছে যত ঝামেলা। যদি মনে করি দুই মাফিয়া গ্যাং-এর সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে উনি দু’দলেরই বিষনজরে পড়েছিলেন। আর এদের হাত থেকে বাঁচার জন্যে উনি নাম ভাঁড়িয়ে এড হয়েছিলেন এবং খুনও হয়েছিলেন এদেরই কারোর হাতে, তাহলে একটা বড়ো কনস্ট্রেইন্ট অদৃশ্য হয়। অর্থাৎ এই স্ট্যাচুগুলো বা ছবির সঙ্গে এডের মৃত্যুর কোনো যোগ নেই। বাকি রইল স্যার তিনটে স্ট্যাচু, যার একটি মিস্টার দানিয়েলের দাবি ওঁদের ফ্যামিলির ট্রেজার থেকে চুরি করা হয়েছে। তাঁর দাবিটা জোরদার হচ্ছে, কারণ যে ছবিটা ঐ মূর্তির সঙ্গে পাওয়া গেছে, সেখানে ব্যাসারাথ নেই, আছেন এক মকবুল রহমান। আর এই মকবুল রহমানকে ধরে নেওয়া যেতে পারে রোদাঁর সেই ছাত্র যিনি পরে খুন হন। এঁর কথাই আমি ক্রুজ শিপে একটা বইয়ে পড়েছি আর বাপিবাবুও এই গল্প অনেক ডিটেইলে শুনেছেন বেভ ম্যাডামের আঙ্কল জ্যাকের কাছে।

“হঠাৎ স্যার আমার মনে হল, আমরা নাম নিয়ে বিভ্রান্ত হয়েছি। নাম দিয়ে কি আসল মানুষ চেনা যায়? হ–জ–ব-র-ল’র হিজি বিজিবিজ আর তাই তো একই লোক?

“হোয়াট ডু ইউ মিন?”প্রমথ বলল।

“বলছি স্যার, তার আগে বলুন, একজন মানুষকে মেরে পুড়িয়ে দেবার অর্থ কি?”

“খুবই সিম্পল, যাকে খুন করা হয়েছে, তাকে যেন কেউ চিনতে না পারে। সেক্ষেত্রে সেই লোকটিকে খুন করার যাদের মোটিভ থাকবে, তারা পিকচারেই আসবে না।”

“ কিন্তু যে খুন করেছে সে তো খুনের কথা অস্বীকার করেনি, শুধু পোড়ানোর কথা অস্বীকার করেছে।”

“স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে কারণ ধরা পড়ে গেছে বলে।”

“কিন্তু পোড়ানোর কথা স্বীকার করলেও তো শাস্তি বেশি হতো না।”

“কিন্তু সেই যে পুড়িয়েছে, সেটাই বা আপনি ধরছেন কেন?”

“ঠিক কথা স্যার। ইন ফ্যাক্ট, এ নিয়ে তো অজস্র গল্প আছে। একটা মৃতদেহ পুড়িয়ে নিজেকে মৃত প্রমাণ করে আত্মগোপন করা।”

“আপনার পয়েন্টটা কি?”এবার আমি বললাম।

“বলছি স্যার। আসলে আমার চোখ খুলে গেল বিবেক বন্ডের বইটা পড়তে পড়তে। ঐ বইটা পড়ে জানলাম ১৮৮৫ সাল থেকে হুগলি জেলা থেকে বাঙালি মুসলমানদের নিউ ইয়র্কে আসার কথা। এঁদের সবাই প্রথমে থাকার জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন স্প্যানিশ হার্লেম, যেখানে মিস্টার ব্যাসারাথরা আছেন। আপনাদের মনে আছে কিনা জানি না স্যার, সেদিন প্রফেসর টনি র্যমাডিন মিস্টার ব্যাসারাথের বাড়িতে একটা প্ৰফাউন্ড কথা বলেছিলেন।”

“কী কথা?”

“নতুন দেশে স্বজাতীয়দের সঙ্গে থাকাটা শুধু বুদ্ধিমানের কাজ নয়, নিশ্চিন্তে বেঁচে থাকারও উপায়। সব মুসলিম বাঙালি ওখানে গিয়ে আস্তানা গড়ার প্রসঙ্গে প্রফেসর র‍্যামাডিন একটু ঠাট্টা করেই মিস্টার ব্যাসারাথকে বলেছিলেন, আপনারা হচ্ছেন হংস মধ্যে বকথা। কথাটা শুনে তখনই আমার একটু খটকা লেগেছিল… হোয়াই? মিস্টার ব্রায়ান ব্যাসারাথ ত্রিনিদাদের লোকেদের থাকার জায়গা লং আইল্যান্ড বা ব্রুকলিনে না গিয়ে স্প্যানিশ হার্লেমে গেলেন কেন? তিনি কি জাহাজের বাঙালি মুসলমানদের সঙ্গেই বেশি একাত্ম বোধ করেছিলেন, যদিও উনি নিজে চিকন ব্যবসায়ী ছিলেন না!

“জাহাজে করে যারা নিউ ইয়র্কে এসে নেমেছিলেন, তাদের রেকর্ড স্যার নেট-এ এখন পাওয়া যায়। ব্রায়ান ব্যাসারাথের এদেশে আসার কোনো রেকর্ড আমি নেট থেকে বার করতে পারিনি। ১৮৯২ থেকে ১৮৯৭ সালের বেশ কিছু রেকর্ড আগুনে পুড়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ধরে নিচ্ছি ঐ সময়ের মধ্যেই উনি এসেছিলেন। প্রশ্ন হল যে ব্রায়ান ব্যাসারাথ নিউ ইয়র্কে এসেছিলেন, তিনি সত্যিই ব্রায়ান ব্যাসারাথ কিনা। আমার থিওরি হল ব্রায়ান ব্যাসারাথ নাম নিয়ে যিনি এসেছিলেন, তিনি হলেন মকবুল রহমান।”

“দাঁড়ান, দাঁড়ান, এই থিওরির বেসিস কি?” আমি প্রশ্ন করলাম।

“এবার মুশকিলে ফেললেন স্যার। যেটা আমরা জানি, সেটা হল মকবুল রহমানের একজন রুমমেট ছিল। এই রুমমেটই মকবুল রহমানকে থানা থেকে ছাড়িয়ে এনেছিলেন। থানা থেকে ছাড়া পাওয়ার ক’দিন বাদে মকবুল রহমান যখন খুন হন। মকবুল বাড়ি ফিরছে না দেখে, সেই রুমমেট কিন্তু থানায় খোঁজ নিতে আসেননি। কয়েকদিন বডিটা মর্গে পড়ে থাকার পর আঙুলের আংটি দেখে মকবুলের বডি বলে সনাক্ত করেছিলেন কেমিল ক্লদেল। বডি আইডেন্টিফাই করার জন্য পুলিশ সেই রুমমেটকে পায়নি। এমন কি মকবুলের ফিউনারেলও কেমিল অ্যারেঞ্জ করেন। রুমমেটের এই অদৃশ্য হয়ে যাওয়াটা বদারড মি স্যার, বদারড মি এ লট। মুশকিল হল, সেই রুমমেটের নাম পত্রিকায় ছিল না। এখন এটা কি সম্ভব স্যার, মকবুল রহমানের সেই রুমমেটের নাম ছিল ব্রায়ান ব্যাসারথ। আর প্যারিসে যিনি খুন হয়েছিলেন তিনি মকবুল রহমান নন, তিনি ব্রায়ান ব্যাসারাথ। অন্ধকারে মকবুল ভেবে ওঁর লাভ–রাইভাল ব্রায়ান ব্যাসারাথকে খুন করেন। মকবুল নিশ্চয় কাছেই ছিলেন। তিনি দ্রুত নিজের আংটি ব্রায়ান ব্যাসারাথের আঙুলে পরিয়ে দিয়ে পেট্রল বা কিছু দিয়ে মৃতদেহটা জ্বালিয়ে দেন।”

“দ্যাক্স ক্রেজি! কেন?” প্রমথ প্রশ্ন তুলল।

“কারণ স্যার মকবুলের নিশ্চয় ভয় হচ্ছিল, একবার মিস হয়ে গেলেও দ্বিতীয় গুলিটা হয়তো ওঁর বুকেই লাগবে।”

“এটা বুঝলাম না,” আমি বললাম। “পুলিশে তো খবর দিতে পারতেন?”

“তা পারতেন, কিন্তু ক’দিন আগেই তো প্যারিস পুলিশ ওকে লক-আপে পুরেছিল! পুলিশের ওপর ওঁর আস্থা না থাকাটাই স্বাভাবিক। আর মনে হয় স্যার, খুব ভয়ও পেয়েছিলেন। ভেবেছিলেন রুমমেট-খুনের দায় ওই ফ্রেঞ্চ অ্যাসিস্টেন্টটি এবার ওঁর ঘাড়ে চাপিয়ে না দেন! এদিকে ব্রায়ান ব্যাসারাথও বেঁচে নেই যে ওঁকে সাহায্য করবেন! তখনই ঠিক করলেন নিজের মৃত্যু প্রচার করে ব্রায়ানের পরিচয়ে মার্কিনমুলুক পাড়ি দেবেন। সেইজন্যই স্যার ওই আংটি পরানো আর দেহ পুড়িয়ে দেওয়া।”

“এটা কিন্তু খুবই ফার ফেচড লজিক।” আমি বললাম।

প্রমথ তো আমাকে সাপোর্ট করলই না, উলটে বলল, “ইট মেকস সেন্স। সেক্ষেত্রে সবকিছুই এক্সপ্লেইন করা যায়। কেন কেমিল আর মকবুলের ছবি আর স্ট্যাচুগুলো টিমের বাড়িতে ছিল।”

“না যায় না,” আমি বললাম। “এদেশে এসে নিজের পরিচয় না দিয়ে ব্রায়ান ব্যাসারাথ হয়ে থাকার মানেটা কি?”

“তুই একটা স্টুপিড, কারণ নিজের পরিচয় দিলে হি উইল বি অ্যারেস্টেড ফর কমিটিং এ ক্রাইম। ডেডবডি পুড়িয়ে এভিডেন্স নষ্ট করা, পুলিশকে ভুলপথে নিয়ে যাওয়া… কি বলেন, একেনবাবু, ঠিক?”

“আপনি আর কবে ভুল বলেন স্যার?”

“আমি আরও একটা সাজেশন দিই।”

“দিন স্যার?”

“মনে হচ্ছে মামুদের ওই খালু, মানে রহমান সাহেবদের গ্রাম জেনেটিক্যালি স্পিকিং এখনও বেশ পিওর রয়েছে। আপনি মামুদকে বলুন রহমান সাহেবের সেই চাচার একটা স্যালাইভা স্যাম্পল নিয়ে অ্যানসেস্ট্রির খোঁজ করতে; আর এদিক থেকে আরেকটা স্যাম্পেল নিন টিম ব্যাসারাথের। যে কোনো অ্যানসেস্ট্রি ফাইন্ডিং কোম্পানি একশো দেড়শো ডলারের মধ্যেই করে দেবে কাজটা। ডিএনএ ম্যাচ হলে দু’দলই একটা ফরচুনের মালিক হবে। কিন্তু তার জন্য আমাদের বাপিকে একটা কাজ করতে হবে।”

“সেটা কী স্যার?”

“বাপি ব্যাটাকে বিয়ে করতে হবে বেভকে। তারপর বেভকে বুঝিয়ে ওর দাদুর সম্পত্তির মালিকানা নেওয়াতে হবে। তারপর তো কোনো সমস্যাই নেই– এক মিলিয়ন ডলার দিয়ে মূর্তিগুলো কিনে ফেলা।”

আমার ইচ্ছে করছিল প্রমথটাকে ধরে রান্নাঘরের মেঝেতে ফেলে হাতা দিয়ে ঠ্যাঙাই। একেনবাবুর কিন্তু কথাটা মনে ধরল। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “প্রমথবাবু কিন্তু খুব ইনসাইটফুল কথা বলেন স্যার।”

Sujan Dasgupta ।। সুজন দাশগুপ্ত