একদিন মসল-ই-পতঙ্গ-ই কাগজি,
লে কে, দিল, সর রিস্তা-ই-আজাদগি
(একদিন আমার হৃদয়, ঘুড়ির মতো
মুক্তির পথে উড়ে যেতে চেয়েছিল)

মির্জাসাবকে একটু ঘুমোতে দেওয়া দরকার। আরও আরও মৃতরা, যাঁরা আমাদের আশেপাশে শুয়ে আছেন, আমাদের দুজনের কথা আপনারা শুনছেন, চলুন এবার আমরা উড়ে যাই, বাল্লিমারোঁ মহল্লায়, কাসিম জানের গলিতে মির্জাসাবের বাড়ির আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ব আমরা, চলুন, চলুন, উঠে পড়ুন, মির্জাসাব আর কাল্লুকে দস্তানগো যে-কিস্সাটা বলছিল, লুকিয়ে লুকিয়ে তা শুনে আসা যাক। সত্যি বলতে কী, লুকনোর তো প্রয়োজন নেই আমাদের, কেই বা। আমাদের দেখতে পাবে? তবে মির্জাসাব টের পেলেও পেতে পারেন, শুনেছি সারা রাত ঘুমের মধ্যে নাকি উনি মৃতদের সাথে কথা বলতেন।

কাল্লু মির্জাসাবের হাত ধরে বলে চলেছে, বলুন হুজুর, আপনার মুখেই মানাবে ভাল।

-না। এই মিঞাই বলুক। কিন্তু তোমার নামটা তো জানা হল না মিঞা।

-জি বান্দার নাম আবিদ।

-বলো, আবিদ মিঞা। মির্জা গালিবের কিস্সাটা তোমার মুখ থেকেই শোনা যাক।

-এ হুজুর আমাদের কিস্সা।

-আসাদ?

-জি। তখনও তো মির্জা গালিব হননি। আগ্রায় সবাই তাকে আসাদ বলে ডাকত। গোস্তাকি মাফ করবেন হুজুর, নসরুল্লা বেগ খানের কথাটা

-আবার?

-কিন্তু ওয়ালিদ মরে যাবার পর চাচা নসরুল্লাই তো আসাদের সব দায় নিয়েছিলেন হুজুর। সে কথা ভুলি কী করে? হাতির পিঠ থেকে পড়ে মারা গেল আসাদের চাচা। হুজুর, আবার এতিম হল।

– কী যে আজেবাজে বকো। মির্জা গালিবের মুখ বিরক্তিতে কুঁচকে যায়। -আরে, মির্জা গালিব তো এতিম হয়েই এই দুনিয়াতে এসেছিল। নতুন করে আবার এতিম হবে কী!

-হুজুর, কথাটা বুঝলাম না।

-তাহলে একটা কিস্সা শোনো মিঞা। মির্জা গালিব হাসলেন। ধরো গিয়ে, তার নাম হামাজ। তো হামাজ একদিন তার ইশক্রের দরজায় গিয়ে টোকা দিল। অন্দর মহল থেকে কথা ভেসে এল, ‘কে বাইরে?’

হামাজ বলল, ‘আমি।‘

ভিতর থেকে শোনা গেল, এখানে তোমার-আমার জন্য কোনও ঘর নেই। দরজা খুলল না।

বছরখানেক একা একা নানা জায়গায় ঘুরে হামাজ আবার সেই দরজার সামনে ফিরে এসে টোকা দিল। ভিতর থেকে জিজ্ঞাসা ভেসে এল, বাইরে কে?

হামাজ বলল, ‘তুমি’। সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে গেল।

-তারপর হুজুর? কালু চোখ বড় বড় করে তাকায়।

-তারপর আর কিছু নেই রে। হামাজ যে-উত্তরটা দিয়েছিল, আসাদ সেই উত্তরটা দিতে পারেনি। তাই আল-মুক্তাদির তাকে এতিম করে দুনিয়ায় পাঠিয়ে দিলেন। দরজা খুলল না।

– কিস্সাটা কার কাছে শুনেছিলেন হুজুর? আবিদ মিঞা বলে।

-তোমারই মতো একজন দস্তানগোর কাছে। তবে কিস্সাটা অনেকদিন আগে বলেছিলেন শেখ জালালউদ্দিন রুমি তাঁর মসনবিতে।

নামটা শুনেই আবিদ মিঞা উঠে দাঁড়িয়ে দু’হাত তুলে কয়েক পাক ঘুরে নেয় আর হাওয়ায় ছড়িয়ে যায় সুরেলা ঝরনা, ‘মওলা…মেরে মওলা…।’

-শেমা থামাও আবিদ মিঞা। কিস্সাটা শুরু করো। মির্জা গালিব চেঁচিয়ে ওঠেন।

-জি হুজুর।

মির্জা গালিবের কদমবুশি করে আবিদ মিঞা কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে। তারপর বলে, ‘চোখে জল আসে জনাব, যখন তাকে দেখি।

-কাকে?

-আসাদ মিঞা।

-কেন, চোখে জল আসে কেন?

-সবে ন’বছর বয়স, ওয়ালিদ নেই, দেখভাল করার চাচাও কবরে চলে গেল, আসাদ মিঞা একা একা কালে মহলে ঘুরে বেড়ায়।

-একা একা?

-জি হুজুর। শুনেছি সে নাকি মহলে কারো সঙ্গে কথা বলত না। কেউ কথা বললেও উত্তর দিতে চাইত না। সে ঘুরে বেড়াত, কখন আম্মাজানের সঙ্গে দেখা হবে। একা একা আগ্রার গলির পর গলিতে দৌড়াত। তাজমহলের সামনে গিয়ে বসে থাকত। রোজ রাতে মহলের ছাদে উঠে বসে থাকত, তারা গুনে যেত।

-আসাদ তারা গুনত না, মিঞা।

-তবে? আপনি জানেন হুজুর?

-তাহলে কে জানে? কাল্লু চিৎকার করে ওঠে।-হুজুর ছাড়া কে জানে, মিঞা?

-কী করত আসাদ?

-একটা তারা খুঁজত।

-কোন তারা জি?

-যে তারা থেকে আসাদকে দুনিয়াতে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল তার ইসক।

-তারাটা চিনতে পেরেছিল আসাদ?

-না, মিঞা। তারায় একরকম জীবন, আর এই দুনিয়ায় আরেক রকম। দুনিয়ায় এলে তারাটাকে আর চেনা যায় না। কী করেই বা চেনা যাবে? তারারা কত খতরনক, তুমি জানো আবিদ মিঞা? আকাশে আজ রাতে যে -তারাটাকে তুমি জ্বলতে দেখবে, সে আসলে কয়েক। লক্ষ বছর আগে মরে গেছে। এতদিনে তার আলো এসে পৌঁছল আমাদের দুনিয়ায়। কী করে বুঝবে বলো, কোন তারায় তোমার ঘর ছিল? তুমি তার চেয়ে কিস্সাটা বলো মিঞা।

-জি হুজুর। একদিন আসাদ ঘুরতে ঘুরতে তাজমহলের পাশে যমুনার তীরে এসে বসেছে। বেশ কয়েকদিন আম্মার সঙ্গে দেখা হয় না তার। তাকে তো থাকতে হয় দিবানখানায়; মহলসরা থেকে আম্মা ডাকলে তবেই যেতে পারবে। আম্মা তাকে ডাকে না কেন? সে বেশীর ভাগ সময় মহলসরার আশেপাশে ঘুরে বেড়ায়, আর ধমক শোনে, এখানে কেন রে আসাদ? জেনানামহলের সামনে ঘুরে বেড়াস কেন? তোর আর কোনও কাজ নেই? সে মহলের ছাদে উঠে যায়, রাগে ফুসতে থাকে, একা একা কথা বলে, আব্বাজান, কোথায় তুমি, আমাকে ছেড়ে তুমি কোথায় চলে গেছ, আর কখনও ফিরবে না, আমাকে এই মহলে রেখে গেলে… আব্বাজান, ওরা তো আম্মার সঙ্গেও দেখা করতে দেয় না, কেন দেয় না আব্বাজান?

-কেন দেয় না মিঞা?

-কেন হুজুর?

-দস্তান বলছো তুমি, আর তুমিই জানো না? মির্জা গালিব হা-হা করে হেসে ওঠেন।

-ওয়ালিদ তো আসাদের জন্য কিছু রেখে যায়নি জাঁহাপনা। আবদুল্লা বেগ খানের ঘর ছিল না; ঘর থাকলে তবেই না বিবির কথা; তবেই না আসাদ তার আম্মাজানকে পাবে। কেমন যে। নিকাহ্ হয়েছিল আবদুল্লা আর আসাদের মায়ের। কে কাকে কতটুকু পেয়েছিল বলুন? আবদুল্লার তো দিন কাটত এক যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আরেক যুদ্ধক্ষেত্রে; আসাদের মা কালে মহলে শুধু অপেক্ষায় দিন কাটাতেন। তারপর একদিন আবদুল্লার মৃত্যুর খবর এসে পৌঁছল। খবরটুকু মাত্র, হুজুর। আবদুল্লা বেগ খান যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। কোথায় কোন অচেনা দেশে তাকে গোর দেওয়া হয়েছিল কে জানে! তুর্কীদের এক আজিব তরিকা ছিল হুজুর, জানেন তো? কেউ মারা গেলে তার তলোয়ার পেত ছেলে আর বাড়িঘর-সম্পত্তি পেত মেয়ে। আবদুল্লা বেগ কোথায় হারিয়ে গেল; আসাদ আর তলোয়ার পেল না। বাড়িঘর সম্পত্তি বলতে তো কিছুই ছিল না আবদুল্লার।

-আবিদ মিঞা

-হুজুর।

-সেই দিনটার কথা ভুলে গেলে?

-কোন দিন হুজুর?

-আসাদ তাজমহলের পাশে যমুনার তীরে গিয়ে বসল। তারপর কী হয়েছিল মিঞা?

-গোস্তাকি মাফ করবেন হুজুর। দস্তানের কখন যে কী মর্জি হয়, বুঝতে পারি না। হুজুর, আমার চাচা বলত, দস্তান বড় আজিব, তুমি যদি ভাবো, এই পথে যাব, একটু পরেই দেখবে, দস্তান তোমাকে অন্য পথে নিয়ে গেছে।

-ঠিকই তো বলত। মির্জা গালিব হাসেন।-গোরাদের ইতিহাসই শুধু সোজা, একটাই পথ ধরে চলে। দস্তানের তো হাজার হাজার পথ। আমির হামজার দস্তান শোনেননি?

-জি হুজুর। ওই যে বলে না

মৎ সহল হমেঁ জানো, ফিরতা হ্যয় ফলক বরসোঁ
তব খাককে পর্দেসে ইনসান নিকলতে হয়।।

-ঠিক, ঠিক মিঞা। আমরা সামান্য না কি? কত কত বছর-হাজার-লক্ষ বছর ধরে নক্ষত্রমণ্ডলী ঘুরেছে, তারপরেই না মাটির পর্দা ঠেলে মানুষের জন্ম হয়েছে। কিস্সা কি কখনও একটা সোজা পথে চলতে পারে?

-আসাদ যমুনার তীরে বসেছিল হুজুর। শুনেছি, তাজমহল নাকি আসাদের তেমন ভাল লাগত

না।

-কেন ভাল লাগবে, মিঞা?

-হুজুর

-মমতাজমহলের সমাধি কোথায় জান? বুরহানপুরে। কেউ সেখানে যায় না। ছোট একটা সমাধি। তাহলে তাজমহল বানানো কেন? এসব রাজা-বাদশার খেয়াল মিঞা। আর যদি মহলের সৌন্দর্যের কথাই বলল, তবে ফতেপুর সিক্রির পাশে তাজমহল দাঁড়ায় না। আর জামা মসজিদের কথা যদি বলো, সে তো জন্নতের ফুল। –

যমুনার নীল জল থেকে এক দরবেশ উঠে এলেন। আবিদ মিঞা চোখ বড় বড় করে বলে।

-মিঞা, তুমি কি খোয়াব দেখ? যমুনার জল থেকে দরবেশ উঠে এলেন?

-জি হুজুর। দরবেশ-ফকিররা কোথায় না থাকে, হুজুর?

-তারপর?

-দরবেশ আসাদকে বললেন, তুই একা একা ঘুরে বেড়াস কেন আসাদ? তুই পাখি হবি?

-আমাকে পাখি বানিয়ে দেবেন? আসাদ অবাক হয়ে দরবেশের দিকে তাকায়।

-দেবো। দরবেশ আসাদের মাথায় হাত রাখেন।-আশমানে উড়ে যেতে চাস না? সেই পাখিটার গল্প বলি, শোন। এক সওদাগরের খাঁচায় ছিল তার প্রিয় পাখি। একবার সওদাগর ব্যবসার। কাজে ভারতবর্ষে যাবে। পাখিটাকে এক সময় ভারতবর্ষ থেকেই এনেছিল সে। যাওয়ার আগে সওদাগর খাঁচার সামনে এসে জিজ্ঞেস করল, ‘তোর জন্য কী নিয়ে আসব, বল।

-জি আজাদি। আমার জন্য আজাদি নিয়ে আসবেন মিঞা। পাখি বলে।

-আজাদি? সওদাগর হেসে ওঠে।-তার মানে তো তোকে ছেড়ে দিতে হবে। তা কখনও হয়? অন্য কিছু বল।

-তাহলে যে বনে আমি থাকতাম সেখানে একবার যাবেন। ওখানকার পাখিদের আমার কথা বলে আসবেন। জেনে আসবেন, ওরা কেমন আছে?

-বেশ। তুই চিন্তা করিস না। সক্কলের খবর নিয়ে আসব আমি।

সওদাগর বানিজ্যে চলে গেলেন। সব কাজ শেষ হওয়ার পর মনে পড়ল, পাখির পরিজনদের খোঁজ নেওয়ার কথা। বনে বনে ঘুরতে ঘুরতে তাঁর খাঁচার পাখিরই মতো একটা পাখি দেখতে পেলেন তিনি। সওদাগর তাঁর খাঁচার পাখির কথা বলতেই বনের পাখিটা ঝপ করে নীচে পড়ে গেল। সওদাগর বুঝলেন, এতদিন পরে আত্মীয়ের খবর পেয়ে পাখিটা মারা গেছে। খুব দুঃখও হল তাঁর; ইস্, পাখিটা আমার জন্যই মারা গেল।

একদিন দেশে ফিরে এলেন সওদাগর। খাঁচার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই পাখি তাঁকে জিজ্ঞেস করল, কেমন আছে আমার বন্ধুরা? মিঞা, ওদের কথা বলুন।

-কী বলব, বল? তোরই মতো দেখতে একটা পাখিকে তোর কথা বলতেই ঝপ করে গাছ থেকে পড়ে মরে গেল।

সওদাগরের কথা শুনেই তাঁর পাখিও ডানা মুড়িয়ে, চোখ বুজে খাঁচার নীচে পড়ে গেল। আঙুল দিয়ে অনেকবার খোঁচাতেও পাখিটা নড়ল না। পাখিকে খাঁচা থেকে বার করে তার গায়ে হাত বুলোতে বুলোতে সওদাগর ভাবল, খবরটা না দিলেই ভাল হত, বন্ধুর মৃত্যুর খবর শুনে আমার পাখি তাহলে এভাবে মরত না। পাখিটাকে সে জানলার উপর রেখে দিয়ে এল।

সঙ্গে সঙ্গেই পাখি উড়ে গিয়ে বসল সামনের গাছের ডালে। সওদাগর তো অবাক, সে ছুটে গিয়ে গাছের নীচে গিয়ে দাঁড়াল, পাখিকে ডাকতে লাগল। পাখিটা তখন উড়তে উড়তে বলছিল, ‘আমার বন্ধু মরেনি মিঞা। কীভাবে আবার উড়তে পারব,সেই পথটাই সে আমাকে দেখিয়ে দিয়েছে। খবরটা আপনিই আমাকে পৌঁছে দিয়েছেন মিঞা। সালাম।

বলতে বলতে সেই পাখি অনেক দূর উড়ে গেল।

-এই কিস্যাটা শোনার পর আসাদ সেই দরবেশকে কী বলেছিল, তুমি জান আবিদ মিঞা? মির্জা গালিব বললেন। -না হুজুর।

-এই জীবন যে কী, তা আজও বুঝতে পারলাম না, আবিদ মিঞা। দস্তানও তাকে ছুঁতে পারে না। শুধু কুয়াশা-তা ছাড়া কিছু নেই। তাহলে শোনো, পরের কিস্সাটা তোমাকে বলি।

-কোন কিস্সা হুজুর?

-আসাদ সেই দরবেশকে বলেছিল, আপনার সঙ্গে আমাকে নিয়ে চলুন, খিদ্র।

-কোথায়? দরবেশ বললেন।

-আপনি যেখানে যাবেন।

তিনি অনেকক্ষণ আসাদের মাথায় হাত রেখে বিড়বিড় করে কী বললেন, সে জানে না। যমুনার তীরে, রোদুরে বসেও আসাদের বেশ ঠাণ্ডা লাগছিল। একসময় দরবেশ বললেন, ‘তুই কোথাও যাস না আসাদ। তোর ওয়ালিদ, তোর হাতে তলোয়ার তুলে দিয়ে যাননি। তুই কখনও তলোয়ার চালাতে পারবি না আসাদ। তলোয়ার চালানো বড় কঠিন কাজ; এক একটা কোপের সঙ্গে তুইও মরবি আসাদ।

-তাহলে আপনার সঙ্গে নিয়ে চলুন আমাকে। আসাদ বলে।

-কোথায়?

-আপনি যেখানে যাবেন। আমিও আপনার মতো দরবেশ হব।

-সে-পথ তোর নয় আসাদ। বলতে বলতে তিনি তাঁর ঝোলা থেকে একটা আয়না বের করে আসাদের হাতে দিলেন। আয়নায় ফুটে ওঠে আসাদের ঝাপসা মুখ।

-মোছ, ভালো করে মোছ আয়নাটা।

আসাদ আয়নাটা মুছতে থাকে। দরবেশ দুলে দুলে গানের ভিতর ডুবে যেতে থাকেন।

 -তারপর আবিদ মিঞা?

-আসাদ তো আয়নাটা মুছেই চলেছে; যত মোছে ততই ঝকঝক করতে থাকে আয়না।

একসময় দরবেশের গান থামল। তিনি বললেন, ‘আয়নায় একবার তাকিয়ে দেখ।‘

আসাদ আয়নার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল। আয়নায় তো তাকেই দেখতে পাওয়ার কথা, কিন্তু সে নেই, আয়নার ভিতরে ফুটে উঠেছে আম্মাজানের পশমিনার মতো নীল আকাশ। পশমিনাতে যেমন কতরকমের নকশা, এখানেও তাই, এই আকাশে জেগে আছে পাখিদের নকশা। একটা বড় পাখির পিছন উড়ে যাচ্ছে অগুনতি পাখি, তাদের হরেক রং আর চলনে তৈরী হয়ে উঠেছে নকশাটা। আসাদ মুখ তুলে দরবেশের দিকে তাকাল।

দরবেশ বললেন, ‘ওই পাখিটাকে চিনিস।

-না।

-ও হল গিয়ে হোদহোদ। আর ওই যে পাখিদের দেখছিস, ওরা হোদহোদের সঙ্গে চলেছে ওদের রাজার খোঁজে।

-ওদের রাজা কে?

 -সিমুর্গ।

-সে কোথায় থাকে?

-কাফ পাহাড়ে।

-সিমুর্গকে পেলে কী হবে?

-তুই পরে বুঝতে পারবি। আয়নাটা যত মুছবি, ততই দেখতে পাবি, পাখিরা একের পর এক উপত্যাকা পেরিয়ে যাচ্ছে। সাতটা উপত্যাকা পেরোতে হবে ওদের। তারপর একদিন সিমুর্গকে দেখতে পাবি। ততদিন পর্যন্ত তোকে লিখে যেতে হবে।

-কী লিখব?

ইসকের কথা। সেই ইককে তুই কখনও পাবি না, কিন্তু তার কথাই তোকে লিখতে হবে আসাদ।

-তারপর আবিদ মিঞা? মির্জা গালিবের চোখ যেন কোনও শূন্য প্রান্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেই প্রান্তর জুড়ে শুধু জেগে আছে কাঁটাঝোপ।

<

Rabisankar Bal ।। রবিশংকর বল