চোখের পলকে অবস্থাটা বুঝে নিয়েছিল কিশোরী রঙ্গময়ি। মেয়েদের বাস্তববুদ্ধি একটু বেশিই দেন বিধাতা। রঙ্গময়ি বুঝেছিল, ওই বন্ধ কপাট তার জীবনের সব সম্ভাবনার পথে খিল তুলে দিল। সে ঝাঁপিয়ে পড়ল বন্ধ দরজার ওপর। চেঁচানোর উপায় নেই, করাঘাত করা বিপজ্জনক। দরজায় মৃদু কিল দিতে দিতে সে চাপা গলায় বলতে লাগল, দরজা খোললা, পিসি, দরজা খোলো! ও পিসি…

নলিনীকান্ত বজ্রাহতের মতো বসে অবাক চোখে দৃশ্যটা দেখছিল, কিছুক্ষণ সে বোধহয় মানুষ ছিল না, পাথর হয়ে গিয়েছিল। তারপর হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বলল, কী হয়েছে বলো তো! কে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করল?

রঙ্গময়ি তখনও থরথর করে কাঁপছে। নলিনীকে তার ভয় ছিল না। সে জানত, নলিনী নারীমুখী নয়। মেয়েমানুষের প্রতি তার কোনও আগ্রহ নেই। রঙ্গময়ির ঢের বেশি ভয় সমাজকে, কলঙ্ককে। কাপতে কাপতে জ্বরগ্রস্ত রুগির গলায় সে বলল, পিসি, আমার পিসি। ওপাশে শেকল তুলে দিয়েছে।

কেন? বাইরে থেকে শেকল তুলে দেওয়ার মানে কী?

জানি না। আপনি দরজাটা খুলে দিন।

নলিনী অনুচ্চ স্বরেই কথা বলছিল। কিন্তু সেই মৃদু স্বরও রাগে থমথম করে উঠল, এত রাতে তুমিই বা আমার ঘরে এলে কেন?

রঙ্গময়ি সেই রাগের আভাস দেখেই অপরাধবোধে কেঁদে ফেলল। ভাঙা বিকৃত গলায় বলল, আমি তো আসিনি। পিসি বলল, আপনার কিছু দরকার আছে কি না জিজ্ঞেস করতে। পিসি সঙ্গে এসেছিল।

হঠাৎ নলিনীর মুখ রুদ্ধ রোষে টকটকে লাল হয়ে গেল। বলল, তোমার পিসি?

হ্যাঁ, আমি কিছু জানি না।

নলিনী রাগলেও সেই রাগ রঙ্গময়ির ওপর প্রকাশ করল না। চুপ করে দাঁড়িয়ে সম্ভবত পরিস্থিতিটা একটুক্ষণ ভেবে নিল। তারপর হঠাৎ হাসল। তার হাসি বরাবর সুন্দর। অমলিন, সরল। দাঁতের ঝিকিমিকির ভিতর দিয়ে তার হৃদয় দেখা যেত।

মাথাটা একটু নেড়ে সে বলল, এভাবে কি হয়?

রঙ্গময়ি ভীত গলায় বলল, কী হয়?

নলিনী মাথাটা আগের মতোই নাড়তে নাড়তে বলল, এভাবে হয় না। তোমার পিসিকে সুযোগমতো বোলো, এভাবে হয় না। তুমি বড় ছোট, ঠিক বুঝবে না। তোমার পিসি ভুল করেছেন।

আপনি দরজাটা খুলে দিন।

ভয় পেয়ো না রঙ্গময়ি। চেয়ারটায় বোসো। দেখি আমি কী করতে পারি।

রঙ্গময়ি আর্ত গলায় বলল, পিসি দরজা বন্ধ করে দিল কেন?

সেটা তোমার পিসিকেই জিজ্ঞেস কোরো। তিনি যদি বলতে নাও চান তা হলেও ক্ষতি নেই, রঙ্গময়ি। বয়স হলে তুমি নিজেই বুঝতে পারবে।

রঙ্গময়ি হয়তো বুঝতে পারছিল, আবার পারছিলও না। কিশোরী বয়সের বয়ঃসন্ধি। আলো-আঁধারির সময়। পিসি একটা অঘটন ঘটাতে চাইছে, টের পাচ্ছিল সে। কিন্তু কেন, তা ভেবে তার মাথা কুল-কিনারা হারিয়ে ফেলছিল। এত রাতে একা পরপুরুষের ঘরে কী করে পিসি ঠেলে দিতে পারে তাকে?

তবে নলিনীকে রঙ্গময়ি জানত। এ পুরুষ বটে, কিন্তু বিপজ্জনক নয়। না, কথাটা ঠিক হল না। নলিনী হয়তো বা বিপজ্জনকই ছিল। পরবর্তী কালে তার জীবনের একটা গোপন দিক প্রকাশ হওয়ার পর সেটা জানা গিয়েছিল। কিন্তু সেই বিপদ মেয়েদের জন্য নয়, ইংরাজদের জন্য। তাই রঙ্গময়ির সেই রাতে ভয় করেনি। লজ্জা ও আত্মগ্লানিতে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে সে গিয়ে নলিনীর টেবিলের সামনে কাঠের চেয়ারে বসল।

বুদ্ধিমান নলিনী দরজা খুলবার চেষ্টা করল না। শান্তভাবে ফিরে এসে সেও বসল নিজের চেয়ারে। রঙ্গময়ি দুহাতে মুখ ঢেকে কাঁদছে। নলিনী ধীর স্বরে বলল, দরজার পাল্লাটা খুব ভারী। জোর করে খুলতে গেলে শব্দ হবে। কাউকে তো এ অবস্থায় ডাকাও যায় না।

রঙ্গময়ি ভীত স্বরে বলল, তা হলে?

তোমার পিসি খুব নিশ্চিন্তে বসে থাকবেন না নিশ্চয়ই। এক সময়ে এসে ঠিকই দরজা খুলে দেবেন। ততক্ষণ আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।

সে কতক্ষণ?–রঙ্গময়ি আকুল গলায় প্রশ্ন করে।

নলিনী তেমনি ঝকঝকে হাসি হেসে বলে, তোমার পিসির তো মাথায় গোলমাল। বিকারগ্রস্ত লোক। তিনি কখন এসে দরজা খুলবেন তা কে জানে! হয়তো একা আসবেন না, সঙ্গে লোক জুটিয়ে আনবেন।

লোক জোটাবেন কেন?

তুমি বড় বোকা, রঙ্গময়ি। আমার যতদূর ধারণা, উনি তোমাকে আর আমাকে ফাদে ফেলতে চাইছেন।

সর্বনাশ!

নলিনী মাথা নেড়ে বলল, কিছু সর্বনাশ নয়। চিন্তা কোরো না। বসে বসে বই পড়ো বরং। কী পড়বে? বঙ্কিম?

রঙ্গময়ির বই পড়ার মতো মনের অবস্থা নয়। সে মাথা নেড়ে জানাল, বই পড়বে না।

তা হলে কী করবে?

বসে থাকব। ওই জানালাটার শিক ভাঙা যায় না?

যায়। তবে তার জন্য একটা ছোটখাটো হাতি লাগবে। দেখছ তো, কী মোটা শিক!

রঙ্গময়ি ভারী হতাশ হয়ে আবার মুখ ঢাকল। ফোঁপাতে লাগল।

নলিনী এবার আর তাকে বাধা দিল না। কাঁদতে দিল। নিজে যে বইখানা পড়ছিল সেটা ফের তুলে নিয়ে চঞ্চলভাবে পাতা ওলটাতে লাগল। কিন্তু পড়ার মতো মনের অবস্থা নয়। এক সময়ে বইটা টেবিলে রেখে শান্তভাবে রঙ্গময়ির দিকে চেয়ে বলল, মানুষের মনের নোংরামি দেখলে আমার ভারী ঘৃণা হয়। পৃথিবীতে তোমার পিসির মতো মানুষের কোনও প্রযোজন নেই, তবু এরা জন্মায় কেন বলো তো?

রঙ্গময়ি কী জবাব দেবে? তার পিসি কনকপ্রভা খারাপ না ভাল তা সে কখনও বিচার করে দেখেনি। পিসি পিসিই। কোলেপিঠে করে তাদের মানুষ করেছে। আদরে সোহাগে শাসনে। শুদ্ধাচারী বিধবা। তার বিচার রঙ্গময়ি কি করতে পারে? তাই কথাটা তার কানে লাগল। কিন্তু পিসির পক্ষ হয়ে তো কিছু বলারও নেই। তাই চুপ করে নখ দিয়ে টেবিলক্লথের এমব্রয়ডারির একটা ফেঁড় খুঁটতে লাগল সে।

নলিনী উঠে চঞ্চল পায়ে পায়চারি করতে করতে বলল, তোমার পিসি এর আগে আমার কাছে বিয়ের প্রস্তাবও এনেছেন। আমি তাকে অনেক বুঝিয়ে বলেছি, বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি কখনও নাবীচিন্তা করি না। সংসারধর্ম পালনের বিন্দুমাত্র আগ্রহ আমার নেই। তোমার পিসি সেটা শুনেছেন, কিন্তু বিশ্বাস করেননি।

একথা শুনে রঙ্গময়ির মরে যেতে ইচ্ছে করছিল লজ্জায়। পিসি তার অজান্তে এত কাণ্ড করেছে, সে জানত না। টেবিলের দিকে আরও ঝুঁকে পড়ল সে।

নলিনী বলল, তিনি ভাবলেন আমি বোধহয় গরিবের মেয়ে বলেই তোমাকে বিয়ে করতে রাজি নই। আশ্চর্য! গরিবিয়ানা তো একটা অবস্থার ভেদ মাত্র। নিত্য পরিবর্তনশীল সমাজে ধনী ও দরিদ্র কারও স্থায়ি পরিচয় তো নয়। তা ছাড়াও একটা কথা আছে রঙ্গময়ি।

রঙ্গময়ি এক পলক তাকাল নলিনীর দিকে। তারপর আবার মুখ নামিয়ে নিল।

নলিনী ধীর স্বরে বলল, তোমাকে বা আর-কোনও মেয়েকে আমার কোনওদিনই বিয়ে করার সম্ভাবনা নেই। আমি ভিন্নতর এক কাজে ব্যস্ত। কিন্তু তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাই।

রঙ্গময়ির বুক কাঁপছিল। ভয় সব সময়ই অজানাকে ঘিরে। সে তো জানে না নলিনী কী জিজ্ঞেস করবে। সে শক্ত হয়ে রইল।

নলিনী জিজ্ঞেস করল, তুমি কি কারও প্রতি আসক্ত, রঙ্গময়ি?

রঙ্গময়ি আকাশ থেকে পড়ল। আসক্ত? কই না তো! কিন্তু তবু তার মুখ রাঙা হয়ে উঠল লজ্জায়। কণ্ঠ রোধ হল। এ কী কথা! এ কেমন কথা!

নলিনী তার মুখের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে ছিল।

রঙ্গময়ি মাথা নেড়ে জানাল, না।

নলিনী মৃদু স্বরে বলল, তুমি হয়তো জানো না। বয়স কম বলে হয়তো আসক্তিটা ঠিক বুঝতেও পারছ না। এমন কি হতে পারে?

আপনি এসব কী বলছেন?–রঙ্গময়ি আর্তনাদ করে ওঠে।

তোমাকে যন্ত্রণা দেওয়ার জন্য বলছি না। আমি বলছি, কোনও মেয়ে যদি কোনও পুরুষের প্রতি আসক্ত হয় এবং বর্ণে, ধর্মে, শিক্ষায় দীক্ষায় যদি মিল থাকে তবে তাকেই তার বিয়ে করা উচিত। যদি বিবাহ সম্ভব নাও হয় তবে অন্য কোনও পুরুষকেও তার গ্রহণ করা উচিত নয়।

রঙ্গময়ি স্তব্ধ হয়ে বসে রইল। মাথা তুলতে পারল না। বুকের মধ্যে একটা ঝোড়ো বাতাসের দোলা। সেই বয়ঃসন্ধির সময়ে তার কোনও বোধবুদ্ধিই পরিণত ছিল না। মনে একটা আলো-আঁধারির আবহাওয়ায় কত চিন্তার ছবি ভেসে যেত। সত্য বটে, সেই বয়সে যখন তার বিয়ের কথা চলছে তখন সে মাঝে মাঝে তার সম্ভাব্য স্বামীর রূপ কল্পনা করেছে। কিন্তু সেই রূপ, সেই চেহারা ছিঃ ছিঃ। রঙ্গময়ি দুহাতে মুখ ঢেকে ফেলল অপ্রতিরোধ্য লজ্জায়। কিন্তু সেই গভীর গোপন কথা তো আর কারও জানা সম্ভব নয়।

নলিনী মৃদু স্বরে বলল, তোমাকে কিছু বলতে হবে না রঙ্গময়ি। কেউ কিছু জানবে না। আমি তোমাকে খুবই স্নেহ করি। মাঝে মাঝে আমার মনে ইচ্ছে হয় তোমাকে একজন আদর্শ নারী হিসেবে প্রস্তুত করে দিই। কিন্তু সেটা হয়তো আর সম্ভব নয়। এখন থেকে তোমার সংস্রবও আমাকে এড়িয়ে চলতে হবে। তবে একটা কথা বলি, বয়সকালে তোমার প্রখর ব্যক্তিত্বের স্ফুরণ ঘটবে। সেই তেজ। তোমার মধ্যে আছে। কিন্তু যার প্রতি তোমার এক রহস্যময় আকর্ষণ জন্মেছে সেই পুরুষটি ব্যক্তিত্বহীন। যদি সম্ভব হয় তবে তাকে পাহারা দিয়ে রেখো।

নলিনী সেই পুরুষটির কথা আর ভেঙে বলেনি। তবে রঙ্গময়ি অনেকক্ষণ বাদে চোখের ঢাকনা খুলে যখন টেবিলক্লথের নকশার দিকে অবোধ চোখে চেয়ে ছিল তখন তার মনে হয়েছিল, নলিনী বোধহয় অন্তর্যামী।

নলিনী তার চেয়ারে ফিরে গিয়ে বসল, অনেক শান্ত সে। স্থির। বলল, কনকপ্রভাকে বোলো আমাকে বাঁধা তার পক্ষে সম্ভব নয়, কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। নারীমাত্রই আমার কাছে মা।

একথায় চমকে উঠেছিল রঙ্গময়ি। নলিনী যুবাপুরুষ। বংশের ধারা অনুযায়ি তার চেহারাও সুন্দর ও সুঠাম। সুপুরুষ এক যুবা পৃথিবীর সব নারীকেই মা ভাবে, এ কেমন অলক্ষুনে কথা? নলিনীর সবকিছুই একটু অন্যরকম বটে, কিন্তু এতটাই যে অন্যরকম তা রঙ্গময়ির জানা ছিল না। কথাটা শুনে রঙ্গময়ি হঠাৎ নলিনীর মুখের দিকে চাইতে আর সংকোচ বোধ করল না।

নলিনী মৃদু একটু হাসি মাখানো মুখে বলল, তুমিও আমার মা।

অস্ফুট একটা শব্দ করল রঙ্গময়ি। তবে বাবা শব্দ, ভাষা ছিল না তাতে। একটা ঘোর ঘোর আচ্ছন্নভাবের ভিতর থেকে নলিনী বলল, মাতৃভাব হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত না হলে স্ত্রীলোককে ছুঁতে নেই। যত দূরে থাকা যায় ততই ভাল, এমনকী মুখদর্শন না করা আরও ভাল। কিন্তু এইভাবে ভাবিত হওয়া খুব সহজ নয়। বুকের জোর চাই। ফল পাকলেই যেমন পাখিতে ঠোকরাতে শুরু করে আমার এখন তেমন অবস্থা। কেন এত জ্বালায় বলো তো সবাই! আমাকে তিষ্ঠোতে দিচ্ছে না।

রঙ্গময়ি তার রুদ্ধ কণ্ঠে অতি কষ্টে বলল, কারা জ্বালায় আপনাকে?

নলিনী ঘোর-ঘোর আচ্ছন্ন ভাব থেকে জেগে উঠে মৃদু হেসে বলল, যে সুযোগ পায় সে-ই। এই তো দেখো না, তোমার পিসি কী কাণ্ডটাই করে গেছে। কনকপ্রভার মাথার ঠিক নেই। কত কাণ্ডই যে সে কর।

রঙ্গময়ি উদগ্রীব হয়ে বলল, কী কাণ্ড?

নলিনী একথার জবাব দিল না, শুধু মৃদু মৃদু রহস্যময় হাসতে লাগল। অনেক পরে বলল, বালবিধবার বড় কষ্ট।

রঙ্গময়ি বোকা নয়। নলিনীর কথার মধ্যে যে গভীরতার ইঙ্গিত ছিল তা বুঝল সে। কিন্তু আর প্রশ্ন করল না। তবে নিজের পিসি সম্পর্কে যে কৌতূহলহীন নির্বিকারত্ব ছিল, সেটা কেটে গেল। কনকপ্রভাকে সুন্দরী বলা চলে না। তবে পূর্ণ যুবতী এই মহিলার মধ্যে যৌবনোচিত আকর্ষণ কিছু কম ছিল না। সে থান পরে, নিরামিষ সামান্য কিছু ব্যঞ্জন দিয়ে অবেলায় পাথরের থালায় দিনে একবার মাত্র ভাত খায়, আচার-বিচার মেনে চলে। সে রূপটান মাখে না, সাজে না। কিন্তু তবু তার দুকূল ছাপানো যৌবনও তো ক্রিয়াশীল। তার খাজনা মেটাতে পিসি কোনও পন্থা নিয়েছে কি? রঙ্গময়ি উদগ্রীব হল জানতে। তবে সরাসরি প্রশ্ন করল না। মৃদু স্বরে বলল, পিসি আজ খুব খারাপ কাজ করেছে।

নলিনী হেসে হেসেই বলল, হ্যাঁ, খুব খারাপ। যদি আমি ইচ্ছে করি তবে এর জন্য তোমাদের হয়তো এই বাড়ি থেকে তাড়িয়েও দিতে পারি। অন্তত কনকপ্রভাকে তো বটেই।

রঙ্গময়ি এই দিকটা ভেবে দেখেনি। নলিনী পরোপকার করে বেড়ায়, দেশের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে, কখনও জমিদারের মতো ব্যবহার করে না কারও সঙ্গে। এ সবই ঠিক। কিন্তু তবু সে তো এই বংশেরই ছেলে। ইচ্ছে করলে সামান্য পুরোহিতকে উচ্ছেদ করা তার পক্ষে অতি তুচ্ছ ব্যাপার। রঙ্গময়ি তাই ভয়ে একটু জড়োসড়ো হয়ে গেল। মৃদু স্বরে বলল, আমাদের তো কোনও দোষ নেই। পিসি…।

নলিনী মাথা নেড়ে বলল, আমাকে কিছু বলতে হবে না রঙ্গময়ি। আমি তোমাদের তাড়াব না। কনকপ্রভাও যেমন আছে থাকুক। তবে আমাকেই হয়তো দূরে সরে যেতে হবে।

রঙ্গময়ি ব্যাকুল হয়ে বলল, আপনি যাবেন কেন? আপনি যাবেন না। এরকম আর হবে না। আমি পিসিকে বলব।

বলে লাভ নেই। বললাম না, তোমার পিসির মাথার ঠিক নেই। হুট করে আবার হয়তো আর-একটা বিপজ্জনক কাণ্ড করে বসবে।

হঠাৎ অত্যন্ত দুঃসাহসভরে বুদ্ধিমতী রঙ্গময়ি প্রশ্ন করল, আপনি তো সবাইকেই মা বলে ভাবেন, পিসিকে ভাবতে পারেন না?

কেন এই কথাটা সে বলল তা রঙ্গময়ি আজও সঠিক জানে না। মানুষের মন বড়ই রহস্যময়। কোনও গন্ধে গন্ধে তার অনুভূতিশীল মনের মধ্যে এইরকম একটা সন্দেহের বীজ অংকুরিত হয়ে উঠেছিল হঠাৎ।

নলিনী গম্ভীর হয়ে উঠতে পারত, রেগেও যেতে পারত। কিন্তু হল ঠিক উলটো। সামান্য শব্দ করে হেসে ফেলল সে, চোখে হঠাৎ একটু বিস্ময়বোধও ফুটে উঠল তার। সে বলল, তুমি বড় পাজি মেয়ে। বুদ্ধিও রাখো।

রঙ্গময়ি বায়না ধরার গলায় বলল, না। আগে বলুন, আপনি যাবেন না!

নলিনী বলল, শুধু এই কারণই তো নয়। আমাকে যে অন্য কাজের জন্যও দূরে চলে যেতে হতে পারে।

রঙ্গময়ি কথাটা বিশ্বাস করল না। বলল, না, আপনি আমাদের জন্যই চলে যেতে চাইছেন। আমি পিসির কথা বাবাকে বলে দেব। বাবা বকে দেবে।

নলিনী বলল, অত কিছু করতে হবে না।

তা হলে বলুন, আপনি যাবেন না।

আগে তুমি একটা কথার জবাব দাও। তোমার পিসিকে আমি মা বলে ভাবতে পারি না একথা তোমার মনে হল কেন?

রঙ্গময়ি লজ্জায় অপোবদন হয়ে বলল, আমি সেভাবে বলিনি।

তা হলে কীভাবে বলেছ?

আমি কিছু ভেবে বলিনি। হঠাৎ কথাটা মুখ দিয়ে বেরিয়ে পড়ল।

নলিনীর উজ্জ্বল চোখে কৌতুক খেলা করছে। সে লঘু গলায় বলল, না কি আমার কথাটা তোমার বিশ্বাস হয়নি! আমি পৃথিবীর সব মেয়েকেই মা বলে ভাবতে পারি এটা অবশ্য অনেকেরই কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয়।

রঙ্গময়ি তখন শীতের মধ্যেও ঘামতে শুরু করেছে।

নলিনী অবশ্য আর ঘাঁটাল না। একটা হাই তুলে বলল, কনকপ্রভাও তাই ভাবে। মেয়েদের প্রতি মাতৃভাবটা একটা ভড়ং মাত্র। কনকপ্রভা মা ডাক শুনতে ভালবাসে না।

রঙ্গময়ি চুপ।

নলিনী বলল, এবার ঘরে গিয়ে শুয়ে থাকো গে যাও।

রঙ্গময়ি বলল, যাব? দরজা যে বন্ধ।

নলিনী মৃদু হেসে বলল, বন্ধ ছিল। এখন আর নেই। তোমার পিসি বোধহয় দরজায় শিকল তুলে এতক্ষণ কান পেতে আমাদের কথা শুনছিল। তার উদ্দেশ্য সফল হয়নি দেখে এইমাত্র শিকল খুলে চলে গেছে। তুমি শব্দ পাওনি, কিন্তু আমি পেয়েছি। খালি পায়ে সে যে বারান্দা পেরিয়ে চলে গেল তাও টের পেয়েছি।

রঙ্গময়ি উঠে দাঁড়াল। দরজার কাছে গিয়ে পাল্লা টানতেই সেটা খুলে এল। রঙ্গময়ি একটু দ্বিধাজড়িতভাবে দাঁড়িয়ে রইল। তারপর বলল, যাই?

যাও।

আর আসব না কখনও?

আসবে না কেন? তবে রাতবিরেতে নয়।

রঙ্গময়ি ধীর পায়ে বেরিয়ে আস্তে আস্তে চলে এল ঘরে। পিসিব সঙ্গেই এক বিছানায় সে শোয়। বিছানায় পিসি ওপাশ ফিরে শুয়ে ছিল। রঙ্গময়ি লেপ দিয়ে মুখ ঢেকে চুপ করে জেগে পড়ে রইল বিছানায়। ঘুম আসার কথা নয় সহজে। শুয়ে শুয়ে টের পেল, পিসি কাঁদছে। ফুলে ফুলে।

রঙ্গময়ি কোনও প্রশ্ন করল না। তার চোখও তখন ভেসে যাচ্ছে জলে।

 

আজ ঘোড়ার গাড়িতে হেমকান্তর মুখোমুখি বসে রঙ্গময়ির সেই রাতের কথা মনে পড়ে। শুধু আজ নয়, এতদিন ধরে প্রায় রোজই কখনও না কখনও সেই অদ্ভুত রাত্রিটির স্মৃতি এসে হানা দিয়েছে।

নির্জন সন্ধ্যা। ব্রহ্মপুত্রের ওপর প্রগাঢ় কুয়াশা জমে আছে। নদীর ধার দিয়ে ইট-বাঁধানো এবড়ো-খেবড়ো রাস্তায় ঘোড়ার গাড়ি চলেছে। কুয়াশায় মাঝে মাঝে রাস্তার পাশে বড় বড় গাছের ভুতুড়ে চেহারা দেখা দিয়েই মিলিয়ে যায়। জোনাকি পোকার ফুলঝুরির মতো থোকা থোকা আলো ছাড়া নদীর দিকটায় আর কোনও আলো নেই। কুয়াশা না থাকলে নদীর ওধারে শম্ভুগঞ্জের পতিত জলা জমিতে দপদপিয়ে উঠতে দেখা যেত আলেয়ার অদ্ভুত আলো। জলে পাট ও মুলি বাঁশ পচছে। তার কটু গন্ধে বাতাস মন্থর। এই ব্রহ্মপুত্রেরই কোনও বাকে নলিনীর প্রাণহীন দেহ পাওয়া গিয়েছিল। সেও কবেকার কথা। তবু মনে পড়ে।

রঙ্গময়ি তার পাশের জানালাটা তুলে দিল। উত্তরে ভয়ংকর বাতাস আসছে। হেমকান্ত জানালা তুলবেন না। বন্ধ কপাট, বন্ধ জানালা হেমকান্তর সহ্য হয় না। অস্থির বোধ করেন তিনি। আজ অস্থিরতা কিছু বেশি। যদিও তার দেহখানি নিস্পন্দ এবং স্থির, চোখ বাইরের কুয়াশাচ্ছন্ন অন্ধকার নিসর্গে মগ্ন, তবু তার অস্থিরতা টের পায় রঙ্গময়ি। বড় বেশি স্বাবলম্বী এবং ততটাই অসহায় এই একটি মানুষ।

কালীবাড়ির গায়ে কতগুলো দোকানের আলো ঝলমলিয়ে মিলিয়ে গেল। গাড়ি বাঁক ফিরছে। নদী চলে গেল চোখের আড়ালে।

হেমকান্ত মুখ ফেরালেন। বললেন, না এলেই ভাল হত।

রঙ্গময়ি মাথা নেড়ে বলে, ভাল হত না। তুমি শক্ত হও।

হেমকান্ত শক্ত হলেন কি না বলা শক্ত। তবে চুপ করে বসে রইলেন। নর্দমার গন্ধের সঙ্গে ঘোড়ার গায়ের গন্ধ মিশে বাতাসটা কিছু ঘোলা। ওডিকোলোনে ভেজানো রুমালটা পকেট থেকে বের করে নাকে চেপে ধরলেন হেমকান্ত।

অন্ধকারে হেমকান্তকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। তবু রঙ্গময়ি মাঝে মাঝে অস্পষ্ট হেমকান্তর মুখের দিকে চাইছে। বড় দুর্বল এই মানুষটি। আবার খুবই আত্মনির্ভরশীল। রঙ্গময়ি আর কোনও পুরুষমানুষ দেখেনি হেমকান্তর মতো, যার চরিত্রে এমন বিপরীত সব গুণাবলী আছে।

সে বলল, আমরা এসে গেছি। শোনো, আমি গাড়িতেই চুপ করে বসে থাকব। তুমি গিয়ে কোকাবাবুকে দেখে এসো।

একা?

একা কেন? ও বাড়িতে এখন গিজগিজ করছে লোক।

তুমি তো যাবে না।

আমি সঙ্গে না গেলেই কি তুমি একা?

তা বটে।

রঙ্গময়ি মৃদু শব্দে হেসে ফেলে। বলে, লোকে হয়তো কিছু বলবে। আমার না যাওয়াই ভাল।

সহিস নেমে এসে দরজাটা খুলে ধরে আছে। হেমকান্ত ধীরে ধীরে নামলেন।

কোকাবাবুদের বাড়িটা প্রকাণ্ড। সামনে মস্ত ফটক, নহবতখানা। ভিতরে বাগান। তারপর পুরনো আমলের দুই মহলা বাড়ি। ফটক আজ হাঁ হাঁ করছে খোলা। ভিতরে অনেক গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু ভিতরে গাড়ি ঢোকাতে আগে থেকে সহিসকে বারণ করে রেখেছিলেন হেমকান্ত। কিন্তু এখন গাড়ি থেকে নেমে তার দ্বিধা এবং জড়তা দেখা দিল।

গাড়ির জানালা দিয়ে নির্নিমেষ চোখে দৃশ্যটা দেখতে থাকে রঙ্গময়ি। ফটক দিয়ে হেমকান্ত ভিতরে ঢুকছে। এক হাতে কোঁচাটি ধরা। ঢুকবার আগে বার দুই ফিরে তাকালেন। হাতে ছড়িটা অনির্দিষ্টভাবে কয়েকবার আস্ফালন করলেন। গলা খাঁকারি দিলেন। যদিও কারুকাজ করা শালে দিব্যকান্তি হেমকান্তকে খুবই অভিজাত দেখাচ্ছে, তবু তার ভাবভঙ্গিতে আজ সহজ স্বাভাবিক ভাবটি নেই। বড় বড় গাছপালায় ভরা বাগানটার মধ্যে মিলিয়ে গেলেন হেমকান্ত।

রঙ্গময়ি তবু যাত্রাপথের দিকে চেয়ে রইল। চোখে কোনও দৃষ্টি নেই। চোখ স্মৃতিভারাক্রান্ত। বহুদিন আগেকার একটা দৃশ্য দেখছে।

সুনয়নী বাপের বাড়ি যাবে বলে ঘাটে বজরা তৈরি। সাজ শেষ করে সুনয়নী এসেছে বিগ্রহ প্রণাম করতে। অনেকক্ষণ উপুড় হয়ে বিড় বিড় করে কী যেন বলো। তারপর উঠে চরণামৃতের জন্য অভ্যাসবশে হাত বাড়াল। তামার পাত্রটি হাতে দাঁড়িয়ে ছিল রঙ্গময়ি। দিতে গিয়ে কী কারণে কে জানে এক ঝলক পড়ে গেল মেঝেয়।

সুনয়নী উপুড় হয়ে আঁচলে মেঝেটা মুছে নিয়ে বলল, হাত কেঁপে গেল ঠাকুরঝি?

রঙ্গময়ি তটস্থ হয়ে পড়ল। সে জানে তার হাত কঁপেনি। যদি কেঁপে থাকে তবে তা সুনয়নীরই হাত। কিন্তু সে কিছু বলল না।

সুনয়নী উঠে দাঁড়িয়ে রঙ্গময়ির চোখে চোখে স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে রইল একটুক্ষণ। বলতে নেই, সুনয়নী ডাকের সুন্দরী। চোখ দুখানা বড় বড়। অনেকক্ষণ সেই দুখানা বড় বড় চোখে চেয়ে নিঃশেষ করে দেখল সে রঙ্গময়িকে। তারপর একটা শ্বাস ফেলে বলল, তোমার সঙ্গে পারলাম না।

কী পারলে না?

তোমার সঙ্গে কি পারা যায়? রঙ্গময়ি কত রঙ্গই জানে।

রঙ্গময়ি হতবাক, বিব্রত, কুণ্ঠিত। বলল, কী বলছ তুমি?

বেরোবার সময় কর্তাকে বললাম, ওগো যাচ্ছি, ভালমতো থেকো। উনি কী বললেন জানো? বললেন, ও নিয়ে ভেবো না। রঙ্গময়ি তো আছে।

রঙ্গময়ি অপ্রতিভ হয়ে একটু হাসল, এই কথা!

এই কথাটুকু বড় কম নয়। অন্য বউ হলে এই ব্যাঙের গর্ত থেকেই চ্যাং মাছ বের করত। যাই, দুজনে রইলে কিন্তু।

এই রহস্যময় ইঙ্গিত সেই প্রথম নয়। আগেও শুনেছে রঙ্গময়ি। বহুবার, নানা প্রসঙ্গে। গায়ে মাখেনি।

সেদিন মাখল। বড় লজ্জা হল, ঘেন্না এল নিজের ওপর।

সেইদিনই বিকেলবেলা হেমকান্ত একা বসে ছিলেন তার কুঞ্জবনে ভাঙা গাড়িটার পাদানিতে। রঙ্গময়ি হানা দিল সেখানে।

শোনো, তোমার সঙ্গে আমার কথা আছে।

বলো রঙ্গময়ি, বলো। হৃদয়ের অবারিত দ্বার খুলে দাও।

তখন হেমকান্ত ওরকমই ছিলেন। কখনও কখনও তরল আবেগ বেরিয়ে আসত, চটুল ইয়ার্কিও করতেন মাঝে মাঝে।

রঙ্গময়ি ভ্রু কুঁচকে বলল, হঠাৎ এত খুশি-খুশি ভাব কেন? বউ বাপের বাড়ি গেছে, এখন তো তোমার বিরহদশা চলার কথা।

হেমকান্ত মৃদু হেসে বললেন, তা বটে। তবে কী জানো, মাঝে মাঝে একটু বিরহ ভাল। বউ সবসময়ে কাছে থাকলে কেমন একঘেয়ে লাগে।

তা তো বুঝলাম। কিন্তু আমার জীবনটাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করছ কেন তুমি?

আমি!–হেমকান্ত বিস্মিত, ব্যথিত।

তুমি নও তো আর কে? বউঠান আজ বাপের বাড়ি যাওয়ার সময় সেইসব ইশারা ইঙ্গিত করে গেল।

কোন সব?

তোমাকে আমাকে নিয়ে মাঝে মাঝে যা রটে।

সুনয়নী তো সেরকম নোংরা মনের মেয়ে নয়।

আহা গো। তোমার বউকে নোংরা মনের মেয়ে বলেছি নাকি? সে কেমন তা আমি ভালই জানি। সেভাবে সে বলেওনি। একটু রসিকতা করেছে। কিন্তু কথাটা আমার আজ লাগল খুব।

হেমকান্ত বিব্রত মুখ করে বলে, কিন্তু আমি তার কী করব বলো তো? সুনয়নী এলে বরং-~-

কী বুদ্ধি! বউয়ের কাছে বলবে যে রঙ্গময়ি তার নামে নালিশ করেছে? বললে আমার মুখ খুব বাড়বে বুঝি?

তা হলে কী করব?

আমাকে দূর করে দাও। সেটাই ভাল হবে।

তোমাকে দূর করার আমি কে? দূর করবই বা কেন?

লোকে মিথ্যে রটাবে আর আমি তাই মুখ বুজে সয়ে যাব চিরকাল? আমার নামে কেন এত মিথ্যে রটনা হবে বলো তো!

হেমকান্তর মুখ শুকিয়ে গেল ভয়ে। তিনি আমতা আমতা করে বললেন, রাগ কোরো না রঙ্গময়ি। লোকের কথা ধরতে নেই।

রঙ্গময়ির সেদিন বড় জ্বালা করছিল বুক। নলিনীর ঘবে পিসি কনকপ্রভা সেই যে ঠেলে ঢুকিয়ে দিয়েছিল এক রাত্রে তার জের সহজে থামেনি। কিছু কান ও চোখ জেগে ছিল ঠিকই। নলিনী যে তাকে না বলে ডেকেছিল তা কে বিশ্বাস করবে? কেবল যুবকের ঘরে নিশুতিরাতে এক কিশোরীর অভিসারটাই ধরে নিয়েছিল লোকে। পাঁচকান হয়ে সে কথা রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে গেল। বিনোদচন্দ্র বহু চেষ্টা করেও মেয়ের বিয়ের সম্বন্ধ জোগাড় করতে পারলেন না আর। টাকার জোর থাকলে কলঙ্কের ওপর চুনকাম করা যেত। দুর্ভাগ্যবশে বিনোদচন্দ্রের তাও নেই। নলিনীর মৃত্যুর পর রঙ্গময়িকে আজকাল জড়ানো হয় হেমকান্তর সঙ্গে।

রঙ্গময়ি বলল, লোকের কথা না ধরলে তোমাদের চলে, আমি গরিবের মেয়ে, আমার চলে না। আমি কাল থেকে আর তোমাদের ঘরদোরে যাব না।

যাবে না?

না। যতদিন বউঠান নেই ততদিন না।

লোকে কী বলে রঙ্গময়ি? তোমার আর আমার মধ্যে ভালবাসা আছে?

তাই বলে, লোকে তো জানে না যে, কথাটা কত বড় মিথ্যে!

ব্যথিত ও বিমর্ষ হেমকান্ত উঠে দাঁড়ালেন। শরবিদ্ধ হরিণের মতো কাতর একটা শব্দ করে বললেন, আমার বুকের বাঁ দিকটা বড় ব্যথা করছে, রঙ্গময়ি। আমাকে একটু ধরে নিয়ে ঘরে পৌঁছে দাও।

<

Shirshendu Mukhopadhyay ।। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়