মালদা থেকে গভীর রাতে দার্জিলিং মেল ধরল সরিৎ। ট্রেনে অসম্ভব ভিড়। এই শীতে সাধারণত ভিড় এত হয় না কলকাতা-যাত্রীদের। তার কপালে হল। টিকিট কেটে ট্রেনে ওঠবার অভ্যাস বহুকাল হল তার নেই। দরকার হয় না। সব লাইনেই আজকাল রেলের রানিং স্টাফ একটা প্যারালেল ব্যবস্থা চালু রেখেছে। সেকেন্ড ক্লাস টিকিটের প্রায় অর্ধেক খরচে দিব্যি যাতায়াত করা যায়। মালদার রেলের লোকেরা প্রায় সবাই সরিতের চেনা বা মুখচেনা। স্টেশনের চ্যাটার্জিদাকে ধরতেই রেটটা আরও কিছু কমে গেল। চ্যাটার্জিদা বললেন, থ্রি টায়ারে উঠে কন্ডাক্টর গার্ডকে দুটো টাকা দিয়ে, আরামে শুয়ে যেতে পারবে।

কিন্তু সরিতের কাছে দুটো টাকাও অনেক টাকা। দু’ প্যাকেট চারমিনার আর দেশলাই হয়েও বেশি থাকবে। ফালতু ঘুমোনোর জন্য উঠতে হল। পাঁচ-সাতজন বন্ধু তুলে দিতে এসেছিল স্টেশনে। তারাও বলল, ওঠ।

কন্ডাক্টর লোকটা মহা ফ্যাচালে পার্টির। কেবল খ্যাচ খ্যাচ করে যাচ্ছিল, নেমে যান, নেমে যান। আজ কোনও অ্যাকোমোডেশন নেই।

বলে লোকটা মালদা স্টেশনেই জি আর পি ডেকে আনল। মহা ঝামেলা!

সরিৎ বেগতিক দেখে নেমে পড়েছিল। পিছন দিকে একটা মিলিটারি কামরা মোটামুটি ফাঁকা এবং দরজা খোলা দেখে আরও দশ বারোজন যাত্রীর সঙ্গে সেটাতে উঠে পড়ে সরিৎ। ঘুমন্ত আধ-ঘুমন্ত মিলিটারিরা প্রথমে কিছু বলেনি। তারপরই হঠাৎ দশ-বারোটা কালো কালো গেঞ্জি আর হাফপ্যান্ট পরা জওয়ান তেড়ে এসে হুমহাম করে ভারতের অচেনা কোনও ভাষায় প্রচণ্ড ধমক চমক দিতে লাগল। ধমক শুনে ভয় খেলেও ট্রেন ছাড়ার সেই শেষ মুহূর্তে কারও নামবার ইচ্ছে ছিল না। তখনই হঠাৎ বিনা নোটিশে মিলিটারিগুলো কিল চড় আর লাথি চালাতে শুরু করে। কে মার খেল আর কে খেল না তা দেখার জন্য দাঁড়ায়নি সরিৎ। মালদা শহরে সে মস্তানি করে বেড়ায় বটে, কিন্তু মিলিটারি কামরায় হুজ্জতি করলে যে জল কত দূর গড়াবে তার ঠিক নেই বলে ঝট করে নেমে। পড়ল। কিন্তু অপমানটা পুরো এড়াতে পারল না। নামবাব মুহূর্তে পাছায় একটা কেডস পরা পায়ের প্রবল লাথি হজম করতে হল।

বন্ধুরা দৃশ্যটা হয়তো দেখেনি, এই যা ভরসা। ট্রেন তখন চলতে শুরু করেছে, সরিৎ দৌড়ে গিয়ে ফের থ্রি টায়ারে উঠে পড়ল। আবার কন্ডাক্টরের খ্যাচ খ্যাচ, ভীতি প্রদর্শন এবং যাত্রীদের দিক থেকেও প্রবল প্রতিবাদ।

সরিৎ জানে, বোবার শত্রু নেই। তাই চুপ করে কিটব্যাগটা কাধে ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে রইল দরজা ঘেঁষে। কন্ডাক্টরকে দুটো টাকাই দিতে হবে, না কি কিছু কম-সম দিলেও হবে তা বুঝতে পারছিল না। দু’জন আর্মড পুলিশও কামরা পাহারা দেওয়ার জন্য উঠেছে। ডাকাত উঠলে আটকাবে। তবে তারা সরিৎকে কিছু বলল না। আরও জনা তিন-চার সরিতের মতোই ফালতু যাত্রী বাথরুমের গলিতে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কন্ডাক্টর অবশ্য আর বেশি খ্যাচ খ্যাচ করল না। খানিক বাদে যাত্রীরা যে যার ঘুমিয়ে পড়লে দরজার প্যাসেজে দাঁড়িয়ে একটা কাগজের দিকে খুব আনমনে চেয়ে থেকে গম্ভীর গলায় বলল, কোথায় যাবেন?

সরিৎ পকেট থেকে একটা আধুলি বের করল। কন্ডাক্টর আড়চোখে আধুলিটা দেখে বলল, ওতে হবে না। এক টাকা।

সরিৎ পয়সা বাঁচানোর জন্য মরিয়া হয়ে বলল, জায়গা করে দিতে পারলে দু টাকা দিতাম। জায়গা তো নেই, মেঝেয় বসে যাব না হয়।

আবার খ্যাচ খ্যাচ। তবে কন্ডাক্টর তার নিজের বরাদ্দ লম্বা বেঞ্চটায় সিপাইদের পাশাপাশি সব ক’জন ফালতু যাত্রীর বসার ব্যবস্থা করে দিয়ে এক টাকা করেই নিল। কিছুক্ষণ বাদে সিগারেট-টিগারেট দেওয়া-নেওয়া এবং গল্পসল্পও হতে লাগল।

সরিৎ অবশ্য বুড়ো কন্ডাক্টর বা বয়স্ক যাত্রীদের সঙ্গে জমাল না। একা বসে চোখ বুজে রইল, ঘুম আসবে না জানা কথা। মিলিটারির লাথিটা মাজায় জমে টনটন করছে। ফালতু ঝামেলা যত সব। ভাবতে গেলে অপমানে গায়ের ভিতরে জ্বালা ধরে যায়। তবু এত অপমান-অনাদরের পরেও যে বসার জায়গা পেয়েছে সেটাই একমাত্র তৃপ্তি।

সেজদি এতকাল তাদের বিশেষ পাত্তা দেয়নি। পয়সা হলে কে কাকে পাত্তা দেয়? সেজদি অবশ্য উলটো কথা বলে। তার যখন পয়সা ছিল না তখন নাকি বাপের বাড়ির লোকেরাই তাকে তেমন পাত্তা দিত না। সংসারের এইসব কূটকচালে ব্যাপার অবশ্য সরিৎ অত তলিয়ে বোঝে না। এতকাল পরে সেজদি যে তার বেকার ছোট ভাইকে ডেকে পাঠিয়েছে সেইটেই ঢের। সেজদির গোরু চরাতেও সে রাজি আছে, পয়সা পেলে। তারপর কলকাতায় একটা কিছু জুটে যাবে ঠিকই। কলকাতা তো আর মালদা নয়।

বড়দা মালদার সিভিল হাসপাতালের ডাক্তার। কান, নাক আর গলার স্পেশালিস্ট। কিন্তু ই এন টি-র ডাক্তারের তেমন প্রাইভেট প্র্যাকটিস থাকে না। বড়দারও নেই। তার ওপর লোকটা ঘরকুনো এবং ব্রিজ খেলার পাগল। যেখানেই বদলি হয়ে যায় সেখানেই ঠিক তার ব্রিজের বন্ধু জুটে যাবেই। ওই খেলাই বড়দার কাল হয়েছে। ডাক্তারির ব্যাপারটাকে আদৌ গুরুত্ব না দিতে দিতে রুগিদের কাছে এখন আর তার আদর নেই। পসার না থাকায় বাঁধা মাইনেয় সংসার চালাতে হয়। মধ্যপ্রদেশে মেজদার কাছে মা বাবা থাকে, সরিৎ আর তার ছোড়দি পড়ে আছে বড়দার ঘাড়ে। বউদি প্রথম-প্রথম খারাপ ব্যবহার করত না। ছোড়দি এই সংসারে রান্নাবান্না থেকে যাবতীয় কাজ বুক দিয়ে করে। তবু ইদানীং বউদি বস্তিবাড়ির মেয়েদের মতো জঘন্য সব গালাগাল দিয়ে ছোড়দির ভূত ভাগিয়ে দিচ্ছে। মুশকিল হল, ছোড়দিটার বিয়ে হওয়ার চান্স খুব কম। ওর কী একটা মেয়েলি রোগ থাকায় ডাক্তার বিয়ে দিতে বারণ করেছে। তবু হয়ে যেত হয়তো, কিন্তু ছোড়দি দেখতে খুব খারাপ। রোগা, কালো, তার ওপর মুখটা এমন ভাঙাচোরা যে, বুড়ির মতো দেখায়। সুতরাং ছোড়দির আর গতি নেই বড়দার আশ্রয় ছাড়া। সেইটে সার বুঝে বড় বউদি ছোড়দির ওপর সাত জন্মের শোধ তুলে নিচ্ছে। নিক, তাতে সবিতের তেমন আপত্তি নেই। ছোড়দিও বড় কম যায় না, যখন মুখ ছোটায় তখন দিনকে রাত করে দিতে পারে। কিন্তু সরিতের বিপদ নিজেকে নিয়ে। বি এস-সি পাশ করে বহুদিন বসে আছে। বয়স ছাব্বিশের কাছাকাছি। বড়দাবউদি খাওয়াচ্ছে বটে, কিন্তু খুশিমনে নয়। সরিৎ সংসারে বাজার হাট করা থেকে জল তোলা পর্যন্ত সবই করে দেয়, তবু হাতখরচ চালাতে তিন-চারটে টিউশানি করতে হয় তাকে। বড়দা খাওয়া ছাড়া আর কিছু দেয় না। ইচ্ছে থাকলেও বউদির জন্য দেওয়া সম্ভব নয়।

বেকার জীবনের একটা শূন্যতা আছে। সর্বদাই একটা খাঁ-খাঁ করা ভাব বুকের মধ্যে। মনে হয়, ভিতরের অনেক আগুন কাজে না লেগে আস্তে আস্তে নিভে আসছে। চাকরির জন্য সরিৎ পলিটিক্স করেছে, এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জে নাম লেখানো থেকে শুরু করে নানাবিধ পোস্টাল ট্রেনিং নিয়েছে, শর্টহ্যান্ড আর টাইপ শিখে রেখেছে। কিছুতেই কিছু হয়নি। সরকারি চাকরির বয়স পার হতে চলল। এখন কেমন যেন একটা নেতিয়ে পড়া ভাব, কিছু হবে না’ গাছের একটা ধারণার কাছে আত্মসমর্পণের ঝোক এসেছে। শুনেছিল তার গরিব সেজদির অনেক টাকা হয়েছে, ভাসুরের সম্পত্তি পেয়েছে বিস্তর, তাছাড়া নগদ টাকাও। কিন্তু তখন তার কাছে যাওয়া বা তার সাহায্য চাওয়াটা ভারী লজ্জার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কারণ সম্পত্তি পাওয়ার কিছুকাল আগেই সেজো জামাইবাবুর প্লুরিসির চিকিৎসার জন্য ভাইদের কাছে কিছু টাকা হাওলাত চেয়েছিল সেজদি। কেউই টাকাটা দেয়নি। ঘরের ঘটিবাটি গয়না বিক্রি করে সেজদিকে সে যাত্রা সামাল দিতে হয়। অভাবের সংসার থেকে বড় মেয়ে চিত্রাকে পাচার করতে হয়েছিল সেদিকে মেজদির কাছে, এলাহাবাদে। তখন সেজদিকে সবাই সাহায্য করার ভয়ে এড়িয়ে চলত। সেই সেজদি হঠাৎ বড়লোক হওয়ার পর তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে যাওয়াটা কি লজ্জার নয়?

বহুকাল বাদে সেজদি হঠাৎ একটা চিঠিতে সরিৎকে তার কাছে যেতে লিখেছে। সরিৎ বড়দার সংসার থেকে পালাতে পারলে বাঁচে। সেজদির কাছেও হয়তো তেমন আদর হবে না। না হোক। আদর ভালবাসা কেমন তা ভুলেই গেছে সরিৎ। মধ্যপ্রদেশে মেজদার কাছেও আর আশ্রয় নেই। মেজদা একটা খনিতে কাজ করে। সামান্যই পায়। মা বাবা তার ঘাড়ে থাকায় সে আর কোনও দায়িত্ব নিতে নারাজ। বড়দি কেরানির ঘর করে নিউ কুচবিহারে। কারও সঙ্গে সম্পর্ক রাখে না। মেজদি অবশ্য বড়লোক। কিন্তু বাপের বাড়ির সঙ্গে তারও বিশেষ সম্পর্ক নেই। মেজদিকে ভাল করে চোখেই দেখেনি সরিৎ। বড়লোক বলে ভয়ও পায়। সরিতের কাছে সব দরজাই বন্ধ ছিল। এখন হঠাৎ সেজদির দরজাটা খুলেছে। আদরের কথা সে আর ভাবে না, শুধু একটা আশ্রয়ের কথা ভাবে।

গাড়ি ফরাক্কা ব্যারেজ পার হচ্ছে গুমগুম শব্দ করে। প্রচণ্ড শীত। মাফলারের অভাবে সরিৎ রুমালটা দু’ভঁজ করে কান ঢেকে কপালে গেরো দিয়ে বসল। পুরনো পুলওভারে শীত মানতে চায় না। হাত-পা অবশ করা শীত থেকে পরিত্রাণ পেতে সে অনেক হিসেব করে একটা সিগারেট ধরাল। টাকার অভাব তো অনেক বড় জিনিস, তার চেয়েও ছোট জিনিস আধুলিটা সিকিটা নিয়ে সরিৎকে অনবরত মাথা ঘামাতে হয়। ছোট জিনিস নিয়ে মাথা ঘামাতে ঘামাতে ভিতরের মানুষটাও কি ছোট হয়ে যায় না?

বাঁপাশে দুটো পুলিশ, ডানধারে ফালতু যাত্রীরা। যাত্রীদের মধ্যে ঠিক পাশে বসা লোকটাকে সরিৎ মালদার বাজার-হাটে দেখেছে। সঠিক পরিচয় না জানলেও মুখচেনা। লোকটা হঠাৎ বলল, আপনি ডাক্তারবাবুর ভাই না?

হুঁ।—গম্ভীর গলায় আওয়াজ দেয় সরিৎ।

কলকাতায় যাচ্ছেন কি ইন্টারভিউ দিতে নাকি?

না। দিদির বাড়ি বেড়াতে।

অ। মলিনকে চেনেন? মলিন সাহা?

মলিনকে চেনে সরিৎ। তারই বয়সি ছেলে। খুব ফাঁটে একটা স্কুটার হাঁকিয়ে বেড়ায়, পরনে সবসময়ে দারুণ সব জামা প্যান্ট। শুনেছে বড়লোকের ছেলে। মলিনের বোন মলিনা বিখ্যাত সুন্দরী। তার জন্য কলেজের পথে বিস্তর ছেলে লাইন দেয়। সরিৎ দিয়েছে। সরিৎ বলল, চিনি। কেন বলুন তো!

আমি মলিনের বাবা।

শুনে সিগারেটটা ফেলে দেওয়া উচিত হবে কি না ভাবছিল সরিৎ। ভারী অবাকও হচ্ছিল সে। মলিনের বাপ বলে লোকটাকে বিশ্বাসই হয় না। কালো একটা তুসের চাদর আর মাফলার জড়িয়ে দানহীনের মতো বসে আছে। কিন্তু দীনেন সাহা যে ডাকের বড়লোক, এ সবাই জানে। লোকটা মালদায় স্থায়ীভাবে থাকে না। থাকলে চিনতে পারত সরিৎ। শুনেছে, লোকটার চারটে মিনিবাস চালসা, শিলিগুড়ি, ফাঁসিদেওয়া অঞ্চলে চালু আছে। আর আছে হরিশ্চন্দ্রপুরে আমরাগান, শিলিগুড়িতে ঠিকাদারি। লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক দীনেন সাহা বিনা টিকিটে এইভাবে যাচ্ছে দেখে ভারী অবাক হল সে।

সরিৎ ভেবেচিন্তে সিগারেটটা হাতের আড়াল করেই ফেলল। উঠে বাথরুমে গিয়ে খেয়ে আসবে।

দীনেন সাহা কিন্তু নিজেই পকেট থেকে বিড়ি বের করে বলল, আপনার ম্যাচিসটা একটু দিন তো!

দেশলাইটা দিতে পেরে আর সংকোচ রইল না সরিতের। মুখটা একটু নিচু করে সিগারেটে আর-একটা টান দিল।

দীনেন সাহা ম্যাচটা ফিরিয়ে দিয়ে বলল, ট্রেন লেট আছে।

হুঁ। —আওয়াজ দেয় সরিৎ। মনে মনে বলে, হাঁ বে শালা শ্বশুর, লেট আছে।

খুব বিষয়ী চোখে সরিৎকে আর-একবার দেখে নিয়ে দীনেন সাহা বলল, রেলগাড়ির যা অবস্থা হয়েছে আজকাল, বলার নয়। গত দশ বছর আমি টিকিট কেটে কোথাও যাইনি। ব্যবস্থা যখন আছে, টিকিট কেটে যাবই বা কেন? যাদের ফালতু পয়সা আছে তারা যাক।

সরিৎ সিগারেটটা শেষ করে বাঁচল। লোকটা যদি সত্যিই কোনওদিন তার শ্বশুর হয়?

দীনেন সাহা জিজ্ঞেস করে, আপনি চাকরি-বাকরি করেন নাকি?

না। চেষ্টা করছি।

মলিনটার তো কাজকারবারে মন নেই। খুব বাবুগিরিব দিকে নজর।

সরিৎ একটু হাসে মাত্র। মনে মনে বলে, আমাকে জামাই করলে তোমার কাজকারবারে বিনে মাইনেয় খাটব, বুঝলে হে শ্বশুরমশাই?

দিদির বাড়ি কলকাতার কোথায়?—দীনেন জিজ্ঞেস করে।

কলকাতায় ঠিক নয়। কাছেই রতনপুর নামে একটা জায়গা। হাওড়া থেকে যেতে হয়।

অ। তা হলে আপনি বর্ধমান নেমে হাওড়ার লোকাল ধরবেন তো? আমিও তাই। আমি যাব দাশপুরে। জামাইবাবু কী করে?

চাকরি।

সংক্ষেপে জবাব দেয় সরিৎ। খামোখা ভ্যাজর ভ্যাজর করতে ভাল লাগে না। বয়স্ক লোকরা বড় বেশি হাঁড়ির খবর নেয়। তবু এ লোকটা মলিনার বাবা বলেই জবাব দিয়ে যাচ্ছে সরিৎ।

দীনেন সাহা বলে, আজকালকার ছেলেমেয়েগুলো হয়েছে তঁাদড়। কথাবার্তা শুনতে চায় না। দাশপুরে গিয়ে মালটা নিয়ে আসতে বাবুর কোনও অসুবিধেই ছিল না। তা বলে কী জানেন? ফাস্ট ক্লাসের ভাড়া চাই, আর কলকাতায় সাতদিন থাকার জন্য পাঁচশো টাকা হাতখরচা। শুনেছেন কখনও এমন তাজ্জব কথা! এই তো আমি ছ’ টাকায় ম্যানেজ করছি। শীল লেনে বোনের বাড়িতে থাকব। সব মিলিয়ে পঞ্চাশ-ষাট টাকার বেশি খরচ নয়। মলিনের সঙ্গে দেখা হলে ওকে একটু বুঝিয়ে বলবেন তো, এভাবে চললে দুর্দিনের বাজারে পথে গিয়ে দাঁড়াতে হবে।

সরিৎ ঢুলছিল। তবু মনে মনে বলল, তোমার টাকায় মলিন একদিন পেচ্ছাপ করবে, শ্বশুরমশাই। তার চেয়ে আমাকে জামাই করো, সব দেখেশুনে রাখব। আজ মেলা বোকো না আর। গুড নাইট ফাদার-ইন-ল।

 

স্টেশন থেকে রতনপুর আধ মাইলের ওপর রাস্তা! রিকশা যায়। কিন্তু সরিৎ রিকশার কথা ভাবতেও পারে না।

স্টেশনের কাছে চায়ের দোকানে জিজ্ঞেস করে রাস্তাটা বুঝে নিয়ে হাঁটা দিল। মনের মধ্যে নানারকম হচ্ছে। সেজদি কেন ডেকে পাঠিয়েছে, কেমন ব্যবহার পাবে, আশেপাশে ফুটফুটে মেয়েরা আছে কি না, চাকরির সুবিধে হবে কি না, দিদিরা কতটা বড়লোক এইসব ভাবছিল।

রাস্তা ফুরিয়ে গেল কয়েক মুহূর্তে। বিশাল বাগান আর গাছে ঘেরা বাড়ির ফটকে ঢুকতেই খাউ খাউ করে তেড়ে এল একটা কুকুর। কুকুরের পিছনেই এক কাপালিক।

ভয় পেয়ে সরিৎ ফটকের বাইরে ফিরে এল আবার। গেটটা চেপে ধরল সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে।

কাপালিকটা বলল, কাকে চাই?

শ্রীনাথ ব্যানার্জি।

এই বাড়ি। সোজা ভিতরে ঢুকে যান। কুকুর কিছু বলবে না।

খুব ভয়ে ভয়ে, দুশ্চিন্তায়, অনিশ্চয় এক মন নিয়ে সেজদির বাড়ির সীমানায় ঢুকল সরিৎ।

 

মুড়ি চিবোতে একদম উদাস লাগছে নিতাইয়ের। রোজ মুড়ি কি ভাল লাগে?

যতদিন জ্ঞান হয়েছে ততদিন থেকে এই এক মুড়িই দেখে আসছে সে। শুকনো খাও, ভিজিয়ে খাও। তরকারি বা তেল মেখে খাও। তাও যে বরাবর জুটেছে ঠিকঠাক তাও নয়। প্রায়ই তার মুড়িটায় ভাতটায় টান পড়েছে। টান পড়লেই আদর বাড়ে। দু’দিন ফাঁক গেল তো তিনদিনের দিন এক কেঁচড় মুড়ি পেলে মনে হয়, এর কাছে অমৃত কোথায় লাগে!

আজ তবু মুড়ি বড় উদাস লাগে।

নিতাইয়ের মন ভাল নেই। অমল নন্দী গুসকরায় তার শ্বশুরবাড়ি থেকে ঘুরে এসে কালই খবর দিয়েছে পুতুলরাণী ইয়া মোটাসোটা হয়েছে। দুটো ছেলেপুলের মা। অমল নন্দী নিতাইয়ের কথা তুলেছিল। তাতে নাকি পুতুলরাণী বলেছে, ওটা তো বদ্ধ উন্মাদ।

সে কারণে নয়। আসলে মন খারাপ তার বাণ বশীকরণে, মারণ উচাটনে কাজ হচ্ছে না বলে। প্রতিদিন যাকে মোক্ষম মোক্ষম বাণ মারা হচ্ছে সে মোটা হয় কী করে?

যে তান্ত্রিকটা শিখিয়েছিল সেটা আসলে চারশো বিশ। সব কিছুতেই যখন ভেজাল তখন তান্ত্রিকই বা ভেজাল হবে না কেন?

আজ সকাল থেকে নিতাই ভাবছে, হিমালয়ে চলে যাবে। সেখানে পাহাড়ে করে খুঁজে আসল সিদ্ধাই কাউকে খুঁজে বের করবে। যদি আসল লোককে পেয়ে যায় তবে আর ফিরবে না নিতাই। যেমন তেমন করে হোক পুতুলরাণীর গলা দিয়ে রক্ত তুলতেই হবে।

পালপাড়ার সদর রাস্তার ধারে বাড়ি হাঁকড়াচ্ছে রঘু কর্মকার। শালারা দুনিয়াটাই শান বাঁধিয়ে ফেলছে আস্তে আস্তে। একদিন কি লোকে ঘরের মধ্যেই হালচাষ করবে বাবা? না হলে জমিই বা পাবে কোথায়?

রঘু হাঁটুর ওপর কাপড় তুলে রাজমিস্ত্রিদের কাজ দেখছে। নতুন বাড়ির লাগোয়া তার পুরনো টিনের ঘর। রঘুর মেয়ে এসে বাপকে এক কাপ চা দিয়ে গেল। রঘু রোদে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে।

নিতাইয়ের এখন একটু চা-তেষ্টা পেয়েছে ঠিকই। সে দাঁড়িয়ে গেল। ইস্পাত একটু এগিয়ে রঘুর দিকে মুখ তুলে ধমকমক করছে। কুকুরটা লোক চেনে। সোনা চুরি করে রঘুর পয়সা হয়েছে, এ কে না জানে!

নিতাই বলল, চা খাচ্ছ নাকি রঘুবাবু? বাড়িটা তো খুব সুন্দর হচ্ছে গো। তা তোমার বুদ্ধির বলিহারি যাই, পশ্চিমমুখো সদর করে কেউ? এ বাড়ি যে গরম হবে খুব।

রঘু ফিরে দেখে বলল, তাই নাকি? তবে তো বড় ভুল হয়েছে রে সম্বন্ধীর পুত!

তা একটু হয়েছে। অত গরম চা খেয়ো না। ফুয়ে ঠান্ডা করে খাও। বেশি গরম খেলে পেটে ক্যানসার হয়।

বলে নিতাই ঘুরে ঘুরে বাড়িটা দেখে। বলে, তিনতলার ভিত গেঁথেছ মনে হয়।

তাতেও কোনও ভুল হল নাকি?

না, ভাবছি রঘু স্যাকরার কত পয়সা হয়েছে।

রঘু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, আমার আবার পয়সা! আর পয়সাটাই সব রে, নিতাই? তোর মতো মারণ উচাটন শিখতে পারলে কত কাজের কাজ হত! তা শুনলাম তোর বউটা এখনও নাকি মরেনি?

নিতাই মৃদু হেসে বলে, আস্তে আস্তে মরবে। ভুগে ভুগে। পট করে মরে গেলে কর্মফল ভোগ হবে কী করে বলো!

তা বটে। তবে আমি বলি কী, তুই একদিন গুসকরায় গিয়ে সামনাসামনি বাণ মেরে আয় না। তাতে অনেক কাজ হবে।

ও বাবা! পুলিশে ধরবে না? ফাঁসি হয়ে যাবে।

তখন পুলিশ বশীকরণ করবি।

ইয়ারকি হচ্ছে?

রঘুর বউ বেরিয়ে এসে উঁকি দিয়ে দেখে বলল, এই সাত-সকালে খ্যাপাকে রাগাচ্ছ কেন? কু বাক্যি বলবে যে নামতা পড়ার মতো!

রঘু বউকে বলে, কু-বাক্যি না বলছে কে? তোমারটা তো পুরনো হয়ে গেছে, এর কাছে একটা নতুন রকম শুনি না হয়।

আহা, আমার কথা আলাদা। আমি ঘরের লোক বলি সে একরকম। তা বলে নিতাই বলবে কেন?

রঘু খুব ভাবুকের মতো বলে, কুবাক্যি শোেনা কিছু খারাপ নয়। তাতে মন মেজাজ পরিষ্কার হয়ে যায়, মনের ময়লা কেটে যায়, শরীরটাও চনমনে হয়ে ওঠে। বলরে, নিতাই!

জিভ কেটে রঘুর বউ ঘরে ঢুকে যায়।

নিতাই এখন সেয়ানা হয়েছে। কোমরে হাত দিয়ে রঘুকে বলে, আমাকে দিয়ে মেহনত করাবে তো বাপ! তোমার চালাকি জানি। তুমি হচ্ছ সেই স্যাকরা যে নিজের মায়ের সোনা চুরি করে। আগে বলল চা খাওয়াবে, তবে বলব।

খাওয়াব।–রঘু বলল। তারপর সামনের একটা মস্ত জামরুল গাছের তলায় গিয়ে ঠ্যাং ছড়িয়ে গুঁড়িতে ঠেসান দিয়ে বলল, শুরু করে দে।

নিতাই অমনি শুরু করল, তুমি শালা শুয়োরের বাচ্চা…

এমন মুখ চোটাল নিতাই যে রাজমিস্ত্রিরা পর্যন্ত কাজ থামিয়ে হাঁ করে শুনছিল। বাপ-মা চৌদ্দপুরুষ ধরে সে কী গালাগাল! রঘু চোখ বুজে বসে মাথা নাড়ে আর মিটিমিটি হাসে। মাঝে মাঝে বলে ওঠে, হোত আচ্ছা। চালাও।

নিতাই একটু ঝিমিয়ে পড়েছিল। আবার চনমনে হয়ে রঘুর বউ মেয়ে থেকে শুরু করে মা মাসির কেচ্ছা গাইতে শুরু করে দিল।

আধ ঘণ্টাখানেক ঝিম ধরে বসে শুনল রঘু।

ঠোঁটের কোণে ফেনা তুলে নিতাই থেমে দম নিতে নিতে বলল, এবার চা খাওয়াও মাইরি। রোজ রোজ বিনিমাগনা তোমার ভূত ঝেড়ে দিই, কিছু চেয়েছি কখনও?

রঘু তার মেয়েকে ডেকে নিতাইকে চা দিতে বলে দেয়। ফুড়ুক ফুড়ুক হাসছে রঘু। একটু আগের ম্যাড়ম্যাড়ে চেহারাটায় এখন যেন একটু জলুস খুলেছে। বলল, আহা, কী শোনালি রে নিতাই! এমন বহুকাল শুনিনি।

এক গ্লাস চা রোজগার করে ভারী খুশি হয় নিতাই। গাছের তলায় বসে রক্তাম্বরে পেঁচিয়ে গরম পেতলের গ্লাসটা ধরেছে সাপটে। ইস্পাত মাঝে মাঝে কোলে লাফিয়ে উঠে গ্লাসের গন্ধ শুকছে।

রঘু মিস্ত্রিদের কাজ দেখতে দেখতে বলে, ও বাড়ির খবরটবর আছে নাকি রে কিছু?

নিতাই উদাস গলায় বলে, খবর আর কী? বাবু আর গিন্নির মুখ দেখাদেখি নেই।

সে তো পুরনো কেচ্ছা।

আজ এইমাত্র একটা নতুন ছোকরা এসে ঢুকল। কাঁধে ব্যাগ। দেখে মনে হয়, বাড়িতে সেঁধিয়ে গেল পাকাপাকি। ছোট মামাবাবুর আসার কথা ছিল। বোধহয় সে-ই।

মামাবাবু কাকাবাবু অনেক আসবে এখন। নরক গুলজার হবে। চোখ কান খোলা রাখিস। কাল রাতে বাবু বাড়ি ফিরেছিল?

ফিরেছিল।

কদিন ফিরছে না খেয়াল রাখিস।

চায়ে চিনি কম হয়েছে রঘুবাবু। তোমার মেয়েকে একটু চিনি দিয়ে যেতে বলো।

চিনি সস্তা দেখলি? এক ডেলা গুড় নে বরং।

তাই দাও। হাত আসুক।

এক জায়গায় বসে থাকলে নিতাইয়ের কাজ চলে না। গুড়ের ডেলাটা মুড়ির কোঁচড়ে ভরে চা-টা তলানি পর্যন্ত খেয়ে উঠে পড়ল নিতাই।

পথে নামতেই মুখোমুখি কালো এবং গম্ভীর প্রকৃতির মদন ঠিকাদারের সামনে পড়ে গেল। এ লোকটাকে কেন যেন একটু ভয় খায় নিতাই। মাঝে মাঝে মদনকেও বাণ মারে সে।

মদন ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর গলায় বলে, এতক্ষণ ওসব অসভ্য কথা বলে কাকে গালাগালি করছিলি?

তা আমি কী করব? স্যাকরা শুনতে চায় যে।

শখ করে কেউ গালাগাল শোনে?

শোনে কি না রঘুকেই জিজ্ঞেস করে না! দেখা হলেই আমাকে খোঁচায় বলার জন্য।

মিছে কথা বলবি তো মুখ ভেঙে দেব।

বলতে বলতে মদন ঘুসি পাকিয়ে এক পা এগোতেই ভারী আত্মসম্মানে ঘা লাগে নিতাইয়ের। এটা কেমন কথা যে, যার তার হাতে সে বরাবর মারধর খাবে, আর অপমান সহ্য করবে?

নিতাই দু পা পিছিয়ে গেল বটে, কিন্তু আঙুল তুলে শাসিয়ে বলল, খবরদার মদন! বদন বিগড়ে দেব কিন্তু।

কিন্তু মদটা চিরকেলে ডাকাবুকো। লাফিয়ে এসে এক খামচায় জটা ধরে ফেলল। নিতাই দেখল, গায়ের জোরে পারবে না। টানতে গেলে জটাও ছিড়বে। সুতরাং সে দু’হাত ওপরে তুলে নাচতে নাচতে বিকট সুরে চেঁচাতে থাকে, ব্যোম কালী! ব্যোম কালী! মহাকালী প্রলয়ংকরী! ভাসিয়ে দে মা! ড়ুবিয়ে দে মা! জ্বালিয়ে দে মা! কানা করে দে। ঠ্যাং ভেঙে দে। শেষ করে দে মা!

মদন ঠিকাদার কালী দুর্গা মারণ উচাটনে বিশ্বাসী নয়। নিতাইয়ের জটা আর দাড়ির কিছু ক্ষয়ক্ষতি হল। মদনের কিলগুলো সাংঘাতিক, চড়ও ভয়ংকর। ফলে নিতাইয়ের কষের দাঁতের গোড়া টনটন করতে লাগল, মাজায় বিষফেঁড়ার যন্ত্রণা। আরও ব্যথা পেত, কেবল নাচানাচির ফলে মদন তেমন জমিয়ে মারতে পারেনি বলে।

মার দেখতে কিছু লোক জুটে গিয়েছিল। শেষমেশ তাদের মধ্যেই দু-একজন এসে ছাড়িয়ে দিল। মদন শাসিয়ে গেল, শ্রীনাথের ছেলেকে তুইই তা হলে অসভ্য গালাগাল শেখাচ্ছিস। কোনওদিন আর মুখ খারাপ করতে শুনলে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারব।

মদন চলে গেলে হি হি করে হাসে নিতাই খ্যাপা। সকলের দিকে চেয়ে বলে, লাগেনি মোটেই। বাহুবন্ধ বাণ চালিয়ে দিয়েছিলাম তো, মদনের হাতে আর শক্তি ছিল না। মারগুলো যেন বাতাসে। ভেসে গেল।

মুখে যাই বলুক, নিতাইয়ের চুলের গোড়া থেকে মাজা পর্যন্ত জ্বালা আর ব্যথা করছে খুব। ভাল করে হাটতে পারছে না। দিনটা ভাল করে গড়ায়নি, এর মধ্যেই যে যার বরাদ্দ তুলে নিচ্ছে। বিড়বিড় করে নিতাই বলতে থাকে, একটাই তো নিতাই বাপ, রয়েসয়ে মারলেই হয়। এই নিতাই হিমালয়ে চলে গেলে কেরানিটা কার ওপর দেখাবে।

মদন শালা লোকও অদ্ভুত। মল্লিবাবুর সে ছিল জিগির দোস্ত। দু’জনের একই সঙ্গে খানাপিনা, একই মেয়েমানুষের কাছে যাতায়াত। মদন ঠিকাদার ছাড়া মল্লিনাথ কারুকে চোখেও দেখতে পেত না। আর মদন ছিল মল্লিনাথের পোষা জীব, এই যেমন ইস্পাত হল খ্যাপা নিতাইয়ের। মল্লিনাথেরও এরকম হঠাৎ হঠাৎ রাগের পারদ লাফিয়ে একশো দশ ডিগ্রিতে উঠে যেত। মল্লিবাবু কত লোককে যে ঠেঙিয়েছে! কিন্তু মদন ঠিকাদার নিজে কখনও মারপিট করত না। তার হয়ে মারপিট করার লোক আছে। কিন্তু আজ হঠাৎ মদনার কী যে হল! নিতাই সহসা বাড়ি ফিরতে সাহস পেল না। মদন যদি গিন্নিমার কাছে গিয়ে লাগিয়ে থাকে যে, সে সজলখোকাকে খারাপ কথা শেখায়?

আসলে দোষ তো নিতাইয়ের নয়। সজলখোকাবাবু নিজেই এসে শিখতে চায় যে। খারাপ কথা শুনলে খুব খুশি হয়, হেসে গড়িয়ে পড়ে। এই যেমন রঘু স্যাকরা। নিতাইয়ের তা হলে দোষটা হল কোথায়?

নদী পেরিয়ে গোরুবাথানের জঙ্গলে গিয়ে ইস্পাতকে নিয়ে অনেক ঘোরাফেরার পর বেলা গড়িয়ে নিতাই ফিরে আসে। কোঁচড়ের মুড়ি যেমন কে তেমন থেকে নিউড়ে গেছে। গুড়ের ডেলাটা বের করে খেয়ে জল খেল নিতাই। তারপর কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়ল।

টের পেল, জ্বর আসছে। ব্যথার তারসে আসে ওরকম। শুয়ে শুয়ে সে পুতুলরাণীর কথা ভাবে।

ভারী নাকি মোটাসোটা হয়েছে। তা হলে দেখতে এখন ভালই লাগে নিশ্চয়ই। মহাকালী ভয়ংকরী! শক্তি দে মা। শক্তি দে। মন্ত্রের জোর দে।

যন্ত্রণায় পাশ ফিরে শোয় নিতাই। হিমালয়ে যেতেই হবে। আসল বিদ্যে শিখে আসতে হবে।

<

Shirshendu Mukhopadhyay ।। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়