০৮.

ট্যাক্সিতে বসে গগন কিছুক্ষণ মাথা এলিয়ে চোখ বুজে রইল। মাথাটা বড্ড গরম, গা-ও গরম। মনের মধ্যে একটা ধাঁধা লেগে আছে।

গোলপার্কের কাছ বরাবর এসে ট্যাক্সিওয়ালা জিজ্ঞেস করল, কোন দিকে যাবেন?

কোন চুলোয় যাবে তা গগনের মাথায় আসছিল না। কলকাতায় তার আত্মীয়স্বজন বা চেনাজানা লোক হাতে গোনা যায়। কালীঘাটে এক পিসি থাকে। কিন্তু পিসির অবস্থা বেশি ভাল নয়। ছেলের বউয়ের সংসারে বিধবা পিসি কোল ঘেঁষে পড়ে থাকে, তার কথার দাম কেউ বড় একটা দেয় না। তা ছাড়া আপন পিসিও নয়, বাবার মামাতো বোন।

আর এক যাওয়া যায় ছটকুর কাছে। বহুকাল দেখাসাক্ষাৎ হয় না বটে কিন্তু ছটকু একসময়ে গগনের সবচেয়ে গা-ঘেঁষা বন্ধু ছিল।

গগনের বন্ধু মানেই গায়ের জোরওলা, পেশিবহুল মনুষ। ছটকু ঠিক তা নয়। আড়েবহরে ছটকু খুব বেশি হবে না। সাড়ে পাঁচ ফুটিয়া পাতলা গড়নের ছিমছাম চেহারা। তবে কিনা ছটকু একসময়ে বালিগঞ্জ শাসন করত। আর সেটা করত বুদ্ধির জোরে। মারপিট করতে ছটকুকে কম লোকই দেখেছে। তবে দারুণ তেজি ছেলে, দরকার পড়লে দুহাজার লোকের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যাবে। ফেদার ওয়েটে ভাল বক্সার ছিল কলেজে পড়ার সময়। গগন যখন কলেজে পড়তে আসে ওই ছটকু ছিল তার ক্লাসের বন্ধু, পরে জিমনাশিয়ামে গায়ের ঘাম ঝরাতে গিয়ে পরিচয়টা আরও গাঢ় হয়।

বক্সিং ছটকু খুব বেশি দিন করেনি, কলেজের প্রথম দিকে খুব লড়ালড়ি করল কিছুদিন। ফোর্ট উইলিয়ামে এক কমপিটিশনে জিতেও গিয়েছিল। কিন্তু তারপরেই পড়াশুনোর তাগিদে সে সব ছেড়ে ভাল ছাত্র হয়ে গেল। কেমিস্ট্রিতে অনার্স নিয়ে পড়ত। ফার্স্টক্লাস পেল, এম এসসিতেও তাই। কিছুদিন বোম্বাই গিয়ে চাকরি করল। সেখান থেকে গেল বিলেত, বিলেতে নিউমোনিয়া বাঁধিয়ে কিছুদিন ভুগে ছমাস বাদে ফিরে এল। বলল, বিলেত কি আমাদের পোষায়! টাকাটাই গচ্চা।

ছটকু বড়লোকের ছেলে। তার বাবা সরকারি ঠিকাদার, জাহাজের মাল খালাস করার ব্যবসাও আছে। এলাহি বাড়ি, এলাহি টাকা। বিলেত থেকে ফিরে এসে ছটকু কলকাতায় চাকরি নেয়। গগন কিছুদিন আগে খবর পেয়েছে যে ছটকু চাকরি ছেড়ে ব্যাবসা করছে, খুব বড়লোকের সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করেছে এবং বউয়ের সঙ্গে তার বনিবনা হচ্ছে না।

কোনও মানুষই নিখাদ সুখে থাকে না। পৃষ্ঠব্রণ একটা না একটা থাকবেই। ভেবে গগন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ট্যাক্সিওলাকে বলল, ম্যান্ডেভিল গার্ডেনস।

.

ছটকুদের বাড়িটা এত রাতেও জেগে আছে। পুরোটা জেগে আছে বললে ভুল হবে। দোতলা-তেতলার বেশির ভাগই অন্ধকার। তবু দুচারটে জানালায় আলো জ্বলছে। দোতলার বাঁ-দিকের কোণের ঘরটা ছটকুর। তাতে আলো দেখা যাচ্ছে। সদরটা খোলা। দুটো দারোয়ান বসে কথা কইছে।

গগন ট্যাক্সি ছেড়ে নেমে সদরে উঠতেই দারোয়ানদের একজন বলে ওঠে, কাকে চাইছেন?

ছটকু আছে?

আছে।

একটু ডাকবে ওকে? বড় দরকার। বলো গগন এসেছে।

 দেখি– বলে দারোয়ান ভিতরে গেল।

কয়েক মুহূর্ত মাত্র অপেক্ষা করতে হল। হঠাৎই পায়জামা আর স্যান্ডো গেঞ্জি পরা ছটকু দরজায় দেখা দিয়ে অবাক হয়ে বলে, তুই কোত্থেকে রে?

কথা আছে। রাতের মতো একটু থাকতে দিবি?

হোল লাইফ থেকে যা না। আয় আয়।

গগন শ্বাস ফেলে বাঁচল। ছটকুর বউকে সে চেনে না। সে মহিলা কেমন হবে কে জানে! যেখানে মহিলারা সুবিধের নয় সেখানে থাকা জ্বালা। তার ওপর ছটকুর সঙ্গে তার বউয়ের বনিবনা নেই বলে শুনেছে। তাই স্বস্তির মধ্যেও একটু কাটা বিধে রইল মনে। নিখাদ সুখ বলে তো কিছু নেই।

ছটকুর পিছু পিছু দোতলায় উঠে এল গগন। এ বাড়িতে সে আগেও এসেছে। বড়লোকদের বাড়ি যেমন হয় তেমনি সাজানো। যেখানে কার্পেট পা নেই সেখানকার মেরে এত তেলতেলে আর ঝকঝকে যে পা পিছলে যেতে পারে।

ছটকুর ঘর তিনটে। কোণেরটা শোওয়ার। কইে বিশাল একটা বার ঘর। বাঁ দিকেরটা স্টাডি। বরাবর নিখানা ঘর ষ্টকু এক ভোগ করেছে। এ সব দেখে নিজের গ্যারেজের ঘরখানার কথা ভাবলে গগনের হাসি পায়। মানুষে মানুষের পার্থক্য কী বিপুল অমান-জমিন!

বসবার ঘরে মেঝে-ঢাকা পু উলের গলচে। গাঢ় নরপি রঙের। দারুণ সব সোফা আর কৌচ, বিশাল রেডিয়োগ্রাম, টি ভি সেট, বুকে,কের সে। দরজায় দার বদলে লম্বা। হয়ে ঝুলছে সুতোয় গাঁথা বড় বড় পুঁতির মালা।

ছটকু তাকে বসিয়ে একটা চাকা লাগানো পোর্টেবল রুম এয়ারকন্ডিশনারকাছে টেনে এনে চালু করল। হিমঠান্ডা হাওয়ার ঝাপটা লাগল গগরে শরীরে। বড় ভাল হওয়াটা।

ক্যাম্বিসের ব্যাগটা মেয়ে রেখে গগন একটা আরামের আ শব্দ করে চোখ বুজে থাকে। মুখোমুখি বসা ছটকু কিন্তু একটা প্রশ্নও করেনি। চুপরে বসে একটা পাইল ধরিয়ে টানতে লাগল, সময় দিল গগনকে।

গগন খানিক বসে থেকে হঠাৎ বুঝতে পারল যে এবার তার কিছুকলা উচিত। ছটকুকী ভাবছে?

গগন বলে, তোর বউ ঘুমিয়েছে।

 কেন?- ছটকুর মুখে দুষ্টুমির হাসি।

না, বলছিলাম কী পাশের ঘরে উনি এখন ঘুমিয়ে আছে আর আমরা কথাবার্তা বলছি, এতে ওঁর ডিসটার্ব হতে পারে।

নিভন্ত পাইপটা আবার ধরিয়ে ছটকু মৃদুস্বরে বলে, ঘুমোয়নি, একটু আগেই কথা হচ্ছিল।

গগন আড়চোখে দেখে পাশের ঘরে আলো জ্বলছে। জোরালো আলো নয়, মিষ্টি একটা হলুদ আভার বাতি। শোওয়ার ঘরের দরজায় ফুটফুটে সাদা জালি পরদা ঝুলছে। ওপাশে যে মহিলা আছেন তিনি গগনকে কী চোখে দেখবেন সেইটাই সমস্যা।

 গগন বলল, একটু বিপদে পড়ে তোর কাছে এসেছি।

 ছটকু হেসে বলে, গগ, বিপদটা একটু নয়। একটু বিপদে পড়ে এত রাতে তুই আসিসনি।

বরাবরই ছটকু তাকে গগ বলে ডাকে। প্রথম জীবনে ছটকু তার নাম দিয়েছিল গগ্যা। গগন থেকে গগ্যাঁ, বিশ্ববিখ্যাত আঁকিয়ে গগ্যাঁর সঙ্গে নান মিলিয়ে। পরে আর-এক আর্টিস্টের নামের সঙ্গে মিলিয়ে গগ বলে ডাকত। ই ওই স্বভাব, যে অরও নাই খানিকটা পালটে বা বিকৃত করে ডাকবে।

গগন রুমালে মুখ-গলা মুছে বলল, বিপদটা কঠিন বলে মনে হয় না। তবে আমার একজন হিতৈষিণী আমাকে পালানোর পরামর্শ দিয়েছে।

হিতৈষিণীটি কে?

ল্যান্ডলর্ডের বউ। নাথিং রোমানটিক।

অ। আর বিপদটা?

একটা খুনের ব্যাপার।

খুন! বলে ভ্রূ তোলে ছটকু

গগনের হাসি আসে না, তবু দাঁত দেখিয়ে গগন বলে, খুন কি না জানি না। তবে কেউ কেউ বলছে খুন। আর তাতে আমাকে ফাঁসানোর একটা চেষ্টা হয়েছে।

ছটকু কী একটা বলতে গিয়েও হঠাৎ উৎকর্ণ হয়ে সামলে গেল। কিছু একটা টের পেয়েছিল ছটকু। কারণ কথাটা গগন শেষ করার পরপরই শোয়ার ঘর থেকে একটি মেয়ে বাতাসে ভেসে আসবার মতো এ ঘরে এল। ভারী উদাসীন নিশব্দ আর অনায়াস হাটার ভঙ্গি;

এত সুন্দর মেয়ে সচরাচর দেখা যায় না। যেমন গায়ের রং, তেমনি ফিগার আর মুখখানা। এইসব মুখের জন্য দুই রাষ্ট্রে যুদ্ধ বেধে যেতে পারে। লম্বাটে, পুরস্ত, ধারালো সুন্দর সেই মুখশ্রী, ভারী দুখানা চোখের পাতা আধবোজ। অল্প একটু লালচে চুলের ঢল ঘাড় পর্যন্ত ছাঁটা, পরনে একটা রোব।

ঘরে ঢুকে গগনের দিকে দু-এক পলক নিস্পৃহ চোখে চেয়ে থাকে মেয়েটি। ঘরটা এক সুগন্ধে ভরে যায়।

ছটকু ওর দিকে পিছন ফিরে বসে ছিল। ঘাড় না ঘুরিয়েই বলল, লীনা, এ আমার বন্ধু গগন চৌধুরী।

লীনা কথা বলল না। তবে একটু কুঁচকে বলল, নাইস টাইম ফর এ ফ্রেন্ড টু কল।

 ছটকু সামান্য বিরক্তির সঙ্গে বলে, লিভ ইট।

লীনা বসবার ঘরের পিছনে বড় পরদার ওপাশে আড়ালে চলে যায়।

ছটকু আবার পাইপ ধরিয়ে বলে, কী খাবি? খাব?

–গগন অবাক হয়ে বলে, খাব কী রে?

না খেয়ে থাকবি নাকি? না কি লজ্জাটজ্জা পাচ্ছিস?

 বাস্তবিক গগন লজ্জা পাচ্ছিল। সঙ্গে আবার একটু ভয়ও। এইমাত্র ছটকুর বউ লীনা অ্যায়সা দারুণ অ্যাকসেন্টে ইংরিজি বুলি বেড়েছে যে তাতেই গগন থমকে গেছে, ইংরিজিটা তো মেমসাহেবের মতো বলেই, তার ওপর মেজাজও সেই পরদায় বাঁধা। তাই গগন বড় ভিতু সিতু হয়ে পড়েছে।

ছটকু একটু হাসল। বরাবর ছটকুর মাথা ক্ষুরের মতো ধারালো। টক করে অনেক কিছু বুঝে নেয়। গগনের ব্যাপারটাও বুঝে নিয়ে বলল, ঘাবড়াচ্ছিস? কিন্তু ঘাবড়াবার কিছু নেই। আমার ঘর এটা, আমিই মালিক। তোর কে কী করবে?

গগন বলে, আরে দূর! ও সব নয়। আমার খিদেও নেই।

অত বড় শরীরটায় খিদে নেই কী রে? দাঁড়া, ফ্রিজে কিছু আছে কি না লীনাকে দেখতে বলছি।

এই বলেই বেশ গলা ছেড়ে দাপটে হাক দিল ছটকু, লীনা! এই লীনা–

অত্যন্ত ভয়াবহ মুখে লীনা পরদা সরিয়ে দেখা দেয়। চুলের একটা ঝাপটা তার অর্ধেক মুখ ঢেকে রেখেছে, চোখে সাপের চাহনি, মাথাটা এক বার ঝাঁকিয়ে বলে, চেঁচিয়ে কি নিজেকে অ্যালার্ট করতে চাইছ? কী বলবে বলো।

ছটকু সুখে নেই তা গগন নিজের দুঃখ-দুশ্চিন্তার মধ্যেও বুঝতে পারে। মেয়েছেলেরা অ্যায়সা হারামি হয় আজকাল!

ছটকু গম্ভীর মুখে কিন্তু ঠান্ডা গলায় বলে, গগনকে কিছু খেতে দাও।

লীনা খুব অবাক হয়ে গগনের দিকে তাকায়। এত রাতে একটা উটকো লোক এসে খেতে চাইবে এটা যেন কল্পনার বাইরে।

গগন মিন মিন করে বলল, না,না, আমার কিছু লাগবে না।

 লাগবে- ছটকু ধমক দেয়।

লীনা অবাক ভাবটা সামলে নিয়ে খুব চাপা সরু গলায় বলে, তা সেটা আমাকে হুকুম করছ কেন? বেল বাজালেই সামু আসবে। তাকে বলো।

বেলটা তুমিই হয় বাজালে!

গগন না থাকলে লীনা আরও ঝামেলা করত। সেটা গগন ওর চোখের ঋজালো কটাক্ষেই বুঝল। কিন্তু মুখে কিছু না বলে দেয়ালের একটা বোম একবার টিপে দিয়ে শোয়ার ঘরে চলে গেল।

ছটকু গগনের দিকে তাকিয়ে একটু যেন জয়ের হাসি হাসে। তবে হাসিটাতে বিষ মেশানো। আবার নিভে যাওয়া পাইপ ধরায়। বলে, বেশ আছি।

গগন একটু ঘামে। এয়ারকুলার যথেষ্ট ঠান্ডা হাওয়া দিয়ে তাকে জমিয়ে তোলার চেষ্টা করছে। তবু গগন ঠান্ডা হচ্ছে না তেমন। পকেটে একগোছা নোট ভরে দিয়েছে শোভা। কেন দিয়েছে, কত দিয়েছে তা ভাববার বা দেখবার সময় পায়নি গগন। তবে দিয়েছে ঠিকই। এই টাকায় গগন বরং গিয়ে একটা হোটেলে উঠলে ভাল করত। এখানে এসে উপরি ঝামেলা পোয়াতে হত না। দুটো মানুষের লড়াইয়ের মাঝখানে পড়ে তখন তার ফাপর অবস্থা।

ধোপদুরস্ত পায়জামা আর শার্ট পরা চাকর সামু এল। ছটকুর হুকুমে তক্ষুনি গিয়ে কোত্থেকে খাবার এনে ডাইনিং হলে সাজিয়ে দিল।

ছটকুর তাড়ায় গিয়ে খেতে বসল গগন। বড়লোকের বাড়ি বটে কিন্তু এরা অখাদ্য ইংরেজি খানা খায়। এক পট সাদা মাংস দেখে সরিয়ে রাখল গগন। মাংস খায়ইনা সে। দুটো চিজ স্যান্ডউইচ ছিল মস্ত মস্ত। একখানা কামড়ে তার তেমন ভাল লাগল না। তবে টমেটো, আর চিলি সস দিয়ে কোনওক্রমে গিলল সেটা। দ্বিতীয়টা ছুঁল না। এক বাটি সবজি দিয়ে রান্না ডাল ছিল, সেটা খেল চুমুক দিয়ে।

ছটকু উলটো দিকে বসে তার খাওয়া দেখছে। সামু সম্ভ্রম নিয়ে আঁড়াল।

 গগন বেসিনে হাত ধুয়ে বলল, তুই বুঝছিস না ছটকু, খাওয়া নিয়ে মাথা ঘামানোর অবস্থা নয়।

ছটকু জবাব দেয় না। গগনকে নিয়ে ড্রয়িংরুম পার হয়ে স্টাডিতে ঢোকে। দরজা থেকেই ফিরে সামুকে হুকুম দেয়, এই সাহেবের বিছানা লাগিয়ে দাও স্পেয়ার রুমে।

স্টাডির দরজা বন্ধ করে ছটকু মস্ত সেকরেটারিয়েট টেবিলটার ওপাশে রিভলভিং চেয়ারে গিয়ে বসে। টেবিলবাতি জ্বলছিল বলে ঘরটা আবছা। দুটো এয়ারকুলার চালু আছে বলে বেশ ঠান্ডা। নিঝুমও বটে। এত নিস্তব্ধ ঘর গগন আর দেখেনি। মনে হয় খুব ভাল ভাবে সাউন্ডপ্রুফ করানো আছে। তা-ই হবে। দেয়ালে ছোট ছোট অজস্র ছিদ্র। রেডিয়ো স্টেশনের স্টুডিয়োতে গগন এরকম দেখেছে। একবার আকাশবাণীর বিদ্যার্থী মণ্ডলে সে স্বাস্থ্যের বিষয়ে বলেছিল, তখন দেখেছে সাউন্ডপ্রুফ স্টুডিয়োর দেয়ালে এ রকম ফুটো থাকে। কথা বললে কোনও প্রতিধ্বনি হয় না।

এখানেও হল না। গগন বলল, তোকে খুব জ্বালাচ্ছি।

 ছটকু মাথা নেড়ে বলল, না। বরং এসে আমাকে বাঁচালি। ওই ভ্যাম্পটার কাছ থেকে খানিকক্ষণ সরে থাকতে পারছি।

গগন চুপ করে থাকে। এ প্রসঙ্গটা কটু। না মন্তব্য করাই ভাল।

ছটকু বলল, এবার তোর কথা বল।

 গগন কোনও ব্যাপারেই তাড়াহুড়ো করে না। ও জিনিসটাই তার নেই। যা করে বা বলে তা ভেবেচিন্তে গুছিয়ে। তাই খুব আস্তে আস্তে সে ঘটনাটা ছটকুর কাছে ভাঙতে লাগল।

খুব বেশি সময় লাগল না। মিনিট কুড়ি বড় জোর। ঘটনা তো বেশি নয়।

 ছটকু যতক্ষণ শুনছিল ততক্ষণ তার দিকে তাকায়নি, মাথা নিচু করে ছিল। গগন থামতেই চোখ তুলে বলল, সব বলা হয়ে গেল? কিছু বাদ যায়নি তো?

না। গগন বলে।

ছটকু মাথা নেড়ে চিন্তিত মুখে বলে, ঘটনার দিন খুনের সময়ে তুই কোথায় ছিলি?

গগন এটা ভেবে দেখেনি। তাই তো! কোথায় ছিল? অনেক ভেবে বলল, সন্ধের একটু পরে জিমনাশিয়ামে ছিলাম।

আর তার আগে?

একটু বোধহয় কেনাকাটা করতে গিয়েছিলাম বাজারে।

 কোন বাজারে?

 গগন একটু চমক খেয়ে বলল, সাঁজবাজার।

সেটা তো স্পটের কাছেই।

গগনের গলা হঠাৎ শুকনো লাগছিল। নাড়ির গতি বাড়ল হঠাৎ। সে কেমন ভ্যাবলার মতো বলল, হ্যাঁ।

ছটকু একটু চিত হয়ে আবার পাইপ ধরিয়ে বলে, আবার ভাল করে ভেবে দ্যাখ। কিছু একটা লুকোচ্ছিস।

না না।– গগন প্রায় আঁতকে ওঠে। আর তার পরেই নির্জীব হয়ে যায়।

 বলে ফেল গগন। ছটকু ছাদের দিকে চেয়ে বলে।

ঠান্ডা ঘরে হঠাৎ আরও ঠান্ডা হয়ে যায় গগন। উদভ্রান্ত বোধ করে। বেগমের কথা সে ছটকুকে বলেনি। নিজের চরিত্রদোষের কথা কে-ই বা কবুল করতে যায় আগ বাড়িয়ে।

গগন কথা বলে না।

ছটকু পাইপ পরিষ্কার করতে করতে সম্পূর্ণ অন্য এক প্রসঙ্গ তুলে বলে, তুই তো জানিস না, আমার হাতে এখন কোনও কাজ নেই। মানে বাবা আমাকে কোনও কাজ দিচ্ছে না, মোর অর লেস তার একটা ধারণা হয়েছে যে আমি খুব অপদার্থ, বউয়ের সঙ্গে ইচ্ছে করেই গোলমাল করছি। ফলে বাড়িতে এখন দারুণ অশান্তি, লীনা নাকি টের পেয়েছে যে আমি একজন বিগতযৌবনা ফিল্ম-অ্যাকট্রেসের সঙ্গে শোয়াবসা করে থাকি। বাড়িতে বলেছে সে কথা।

গগন নড়ে বসে। সে সাহস পাচ্ছে।

পাইপে তামাক ভরে জ্বালিয়ে ছটকু বলে, কথাটা মিথ্যেও নয়। তবে কিনা সে মহিলাটির যৌবন এখনও যায়নি। বছর পঁয়ত্রিশ বয়স, শরীরের সম্পর্ক হয়নি এমন নয়, তবে কোনও সেন্টিমেন্টাল অ্যাটাচমেন্ট নেই। প্রেম-ট্রেম তো নয়ই। জাস্ট এ সর্ট অফ ফ্রেন্ডশিপ। উঁচু সমাজে খুব চলে এটা। নাক সিঁটকোবার কিছু নেই। তা ছাড়া বিয়ের পর মেয়েটির সঙ্গে দেখা প্রায় হয়ইনি। কিন্তু লীনা সেটাকে ঘুলিয়ে তুলছে।

মেয়েটি কে?

তুই চিনবি না, পঞ্চাশের ডিকেডে ফিল্মে নামত। তেমন নাম-টাম করেনি। যা বলছিলাম, এ সব কারণে আমার অবস্থাটা খুব খারাপ ফ্যামিলিতে। অলমোস্ট জবলেস ভ্যাগাবন্ড, বউয়ের সঙ্গে শুই না। কিছুদিন মদ খাওয়ার চেষ্টা করলাম, কিন্তু ওটা আমার স্যুট করে না একদম। বদহজম আর অ্যাসিড হয়ে অসম্ভব কষ্ট পাই। একজন বন্ধু জুটে কিছুদিন ড্রাগের নেশা করাল, খুব জমেছিল নেশাটা, বাবা নার্সিংহোমে ভরতি করিয়ে কিওর করাল। শেষ পর্যন্ত দেখলাম সুকুমার রায়ের সেই অবস্থা। হাতে রইল পেনসিল। বউয়ের সঙ্গে বনে না, বাপের সঙ্গে বনে না, মদের সঙ্গে বা ড্রাগের সঙ্গেও বনে না, কিছু নিয়ে থাকতে তো হবে।

বলে পাইপটা দেখিয়ে একটু হেসে চোখ টিপে বলে, এর মধ্যে যে টোব্যাকো রয়েছে, তাতে আছে অল্প গাঁজার মিশেল। গন্ধ পাচ্ছিস না?

না!

 কিন্তু আছে। আজকাল নানা রকম নেশার এক্সপেরিমেন্ট করি। সময় কাটে না। বুঝলি গগন?

বুঝলাম।

তাই বলছিলাম তোর সব কথা আমাকে বল। তোকে নিয়ে আর তোর প্রবলেম নিয়ে একটু ভাবি। সময় কাটবে।

ছটকুকে গগন খুব চেনে। ও কুকুরের মতো বিশ্বাসী, কম্পিউটারের মতো মাথা ওর। ছটকুকে বক্সিং অভ্যাস করতে দেখেছে গগন। অজস্র মার খেত, মারত। রোখ ছিল সাংঘাতিক। ভিতু নয়, লোভী নয়। ওকে বিশ্বাস করতে বাধা নেই।

কিন্তু গগনের লজ্জা করছিল।

 ছটকু হাই তুলে বলল, তোকে আমার সব কথা বললাম কেন জানিস? যাতে আমাকে তোর অবিশ্বাস না হয়। বিশ্বাস কর, আমার তোকে হেলপ করতে ইচ্ছে করছে।

গগন চোখ বুজে এক দমকায় বলে উঠল, ফলির মায়ের সঙ্গে আমার প্রেম ছিল।

 ঠান্ডা মুখে কথাটা শুনল ছটকু। একটু সময় ছাড় দিয়ে ঠান্ডা গলাতেই প্রশ্ন করে, ফলির মা কে?

 ও, সে একজন সোসাইটি লেডি।-গগন আবার চোখ বুজে বলে।

 সোসাইটি লেডি? তার সঙ্গে তোর দেখা হল কোথায়?

হয়ে গেল।

 হয়ে গেল মানে? তোর কাছ থেকে সে পাবে কী? সোসাইটি লেডি বলতে আমরা অন্য রকম বুঝি। একটু নাক-উঁচু স্বভাবের, সিউডো ইনটেলেক্ট-ওলা মহিলা। এরা জেনারেলি হাই ফ্যামিলির মেয়ে। যেমনটা একদিন লীনা হবে।

গগন নিজের হাতের ঘাম প্যান্টে মুছে বলে, এও অনেকটা সে রকম, তবে হাই ফ্যামিলির নয়, স্বামী সামান্য চাকরি করে।

খদ্দের ধরে পয়সা নেয় নাকি?

না বোধহয়। তবে প্রেজেন্টেশন নেয়, সুবিধে আদায় করে, ধারও নেয়।

 ছটকু হেসে বলে, তা হলে হাফ-গেরস্ত বল। ও সব মেয়েকে আমরা তাই বলি। সোসাইটি লেডি অন্য রকম, যদিও জাত একই। তোর কাছ থেকে কী নিত?

কী নেবে? আমার আয় তো জানিস। চাইলেও দিতে পারতাম না। তবে চায়নি।

শুধু শরীর?

 শুধু তাই।- গগন লজ্জা পেয়ে বলে।

ছটকু চিন্তিত হয়ে বলে, ও সব মেয়ে তো ভাল তেজি পুরুষ বড় একটা পায় না। যারা আসে তারা প্রায়ই বুড়ো-হাবড়া কামুক,নইলে নভিস। তাই তেমন পুরুষ পেলে বিনা পয়সায় নেয়। নিতান্ত শরীরের স্বার্থে। তারপর কী হল?

কিছুদিন পর ফলির মা বেগম আমাকে রিজেক্ট করে দেয়। গেলে আর খুশি হত না আগের মতো। আমি কিন্তু ওকে দারুণ ভালবেসে ফেলেছিলাম।

বুঝেছি।

মনে মনে বেগমের জন্য খুব ছটফট করেছি বহু দিন। এখনও করি। যাই হোক, ফলি যেদিন মারা যায় তার দিন দুই আগে বেগমের একটা চিঠি পাই। তাতে ও লিখেছিল, একটা বিশেষ দিনে সন্তোষপুরের একটা ঠিকানায় গিয়ে যেন দেখা করি ওর সঙ্গে। খুব জরুরি কথা, যেদিনের কথা লিখেছিল সেটা ছিল খুনের তারিখটাই।

 বেগমের সঙ্গে দেখা হয়েছিল?

না। সে ঠিকানায় গিয়ে আমি বুড়বাক। সেখানে বউ-বাচ্চা নিয়ে এক প্রাইমারি স্কুলের মাস্টার দিব্যি সংসার করছে। বেগমের কথা তারা জানে না।

বেগমের হাতের লেখা তুই চিনিস?

না।

তবে বুঝলি কী করে যে বেগম লিখেছিল?

 অবিশ্বাসের তো কিছু ছিল না!

যাক গে। তারপর কী হল?

কী হবে? ওকে না পেয়ে ফিরে এলাম।

কারও সঙ্গে দেখা হয়নি আসবার পথে?

গগন চুপ করে থাকে। বলা উচিত হবে কি? অথচ নাবলেই বা গগন পারে কী করে? এত দুর এগিয়ে আবার পিছোবে?

গগন চোখ বুজে বলে, ফলির সঙ্গে দেখা হয়েছিল।

এ কথায় ছটকুও যেন চমকে যায়। তবে গলার স্বরটা খুবই ঠান্ডা রেখে বলে, কোথায়?

বাজারের কাছে একটা চায়ের দোকানে বসে আড্ডা মারছিল। আমাকে দেখে উঠে আসে।

কথা যা হয়েছিল তা মিঠে বা মোলায়েম নয়। একসময়ে সে আমাকে একলব্যের মত ভক্তি করত, কথায় কান দিয়ে দিতে পারত। কিন্তু সেদিন সে হুট করে বেরিয়ে এসে আমার রাত আটকে বলল, গগনদা, আপনার সঙ্গে কথা আছে। তার মুখ-চোখ দেখে আর গলার স্বর ওনে আমি চমকে গিয়েছিলাম। একটু যে ভয়ও খাইনি তা নয়। কে-জায়গায় হঠাৎ ও রকম সিচুয়েশন হলে যা হয়। আমতা আমতা করছিলাম, কারণ মনে পাপ। আমি এসেছিলাম ওর মার চিঠি পেয়ে দেখা করতে, সেটা তো ভুলতে পারছি না। ও আমাকে একটা দোকানঘরের পিছনে নিয়ে গিয়ে সোজাসুজি বলল, আমার মার সঙ্গে আপনার খারাপ রিলেনি আছে আমি জানি, আপনাকে জবাবদিহি করতে হবে। ঠিক এ ভাষায় বলেনি, তবে সেটা এই রকমই। তখন আর গগনদা বলে ডাকছিল না।

মারধর করার চেষ্টা করেছিল?

হ্যাঁ, দু-চারটে কথা চালাচালি হল। আমি দুম করে বলে বসলাম, বেগম কি আমার জন্যই নষ্ট? ওর তো অনেক খদ্দের, খোঁজ নিয়ে দেখোগে। আমি আবার মিথ্যে কথাটথা বানিয়ে গুছিয়ে বলতে পারি না। বেগমের সঙ্গে আমার রিলেশনটা যে অন্য রকম যে কোনও লোক হলে তা দিব্যি বানিয়ে-ছানিয়ে বলত। আমি পারিনি। যা হোক, এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে বেমক্কা একটা পিস্তল বের করল পকেট থেকে। ওর চোখ দুটো তখন পুরো খুনির। দোকানের পিছনের সেই জায়গাটা আবছা অন্ধকার মতো। সেই আবছায়ায় দু-চারজন যে গা-ঢাকা দিয়ে দেখছে তা বুঝতে পারছিলাম। তাদেরই একজন এ সময়ে বলে উঠল, ফলি, চালাস না। স্টিল ভরে দে। ফলি তাতে দমেনি। পিস্তলটা তুলে বলল, তোমাকে এইখানে নাকখত দিতে হবে, থুতু চাটবে, জুতো কামড়ে ঘুরবে, তারপর তোমার পাছায় লাথি মারব। বুঝলাম খুন না করলেও ফলি এবং তার বন্ধুরা আমাকে বেদম পেটাবে। তার আগে নানা রকম ভাবে অপমান করবে। ফলি আর আগের ফলি নেই।

তুই কী করলি?

 খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। অতটা ভয় না পেলে আমি ফলিকে মারতাম না।

মেরেছিলি?

 গগন অবাক হয়ে বলে, তুই কি বলিস, মারা উচিত হয়নি।

 ছটকু দাতে দাঁত চেপে বলে, তা বলিনি। শুধু জানতে চাইছি।

গগন একটু অন্যমনে চেয়ে থেকে বলে, আমিও ভেবে দেখেছি মারাটা উচিত হয়েছে কি না, কিন্তু আমার আর কী করার ছিল? বুঝি যে মায়ের নষ্টামির জন্য ছেলের অপমানবোধ হয়, হতেই পারে। কিন্তু ফলির মাকে তো আমি নষ্ট করিনি, কোনও দিনই আমি মেয়েমানুষের পিছনে দুরি না, কিন্তু বেগম আমাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়েছিল। তার জন্য ফলি খামোখা আমার উপর শোধ নেবে আর আমি দাঁড়িয়ে মার খাব নাকি? তা ছাড়া তখন প্রাণের ভয়।

কী করলি?

 ফলি চোখেই দেখতে পেল না কী ওর মুখে গিয়ে লাগল, খুব কুইক ঝেড়েছিলাম ঘুষিটা। ফলি অ্যাই জোয়ান। সহজে কাবু হওয়ার মাল নয়, তার ওপর হাতে পিস্তল ছিল। কাজেই সে ছিল নিশ্চিন্ত। আশেপাশে বন্ধুবান্ধুবও রয়েছে। ভয় কী? তাই অপ্রস্তুত অবস্থায় আচমকা ঘুসি খেয়েই টলে পড়ল সামারসল্ট হয়ে। আমি দুই লাফে বেরিয়ে বাজার ধরে দৌড়ে পালিয়ে আসি।

তা হলে তোকে অনেকে দেখেছিল তখন।

 দেখাই স্বাভাবিক। দোকানে লোক ছিল, বাজারে তো তখন গিজগিজ করছে।

 কেউ তোর পিছু নেয়নি?

না।

 তারপর কী করলি?

সোজা জিমনাশিয়ামে চলে যাই।

ছটকু আবার পাইপ ভরে বলে, রিকশাওয়ালা কালুকে টাকাটা কে দিয়েছিল গগন?

গগন অনেকক্ষণ চুপ করে থাকে, তারপর যেন ছিপি খুলে সোডার বোতলের গ্যাস বের করে দেয়, আস্তে করে বলে, জানি না।

এমনিতেই শব্দহীন ঘর। তার ওপর যেন আরও ভারী এক নিস্তব্ধতা নেমে এল।

 ছটকু গগনের চোখে চোখ রেখে চোখাদৃষ্টিতে কী একটু দেখে নেয়। তারপর গম্ভীর মুখেই বলে, ঠিক বলছিস?

গগন ভাবছে, ছটকু শালা কি আমাকেই সন্দেহ করছে? করারই কথা অবশ্য। ঘটনা যা ঘটেছে তার সবকিছুই আঙুল তুলে তাকেই দেখাচ্ছে।

গগন ছটকুর চোখের দিকে আর না-তাকিয়ে বলে, আমি টাকা দিইনি। তবে ঝামেলা এড়ানোর জন্য হয়তো কখনও কালুকে টাকাটা দেব। যদি তাতে মেটে!

মিটবে না। ছটকু বলে।

গগন বলে, বিশ্বাস কর, ফলিকে একটা ঘুসি মারা ছাড়া আর-কিছু করিনি। এক ঘুসিতে মরার ছেলে ফলি নয়। পরে আর-কেউ লাইনের ধারে ফলিকে মারে।

ছটকু খুব বড় একটা শ্বাস ছেড়ে বলে, দ্যাখ গগন, যে মানুষ জীবনে একটাও খুন করেছে তাকে চোখে দেখেই আমি চিনতে পারি। আমার একটা অদ্ভুত ইনস্টিংট আছে। এ ব্যাপারে কখনও ভুল হয় না আমার। তুই যদিও কখনও ইচ্ছেয় বা অনিচ্ছেয় কাউকে খুন করে থাকিস, তবে তোকে প্রথম দেখেই বুঝতে পারতাম। কিন্তু এটা খুবই সত্যি কথা যে তোর চেহারায় খুনির সেই অবশ্যম্ভাবী ছাপটা নেই।

গগন নিশ্চিন্ত হল কি? বলা যায় না, তবে সে এবার কিছুক্ষণ স্বাভাবিক ভাবে দম নিল। বলল, আমি যে খুন করিনি তা আমার চেয়ে ভাল আর কে জানে! কিন্তু লোকে কি তা বিশ্বাস করবে? সকলের তো আর তোর মতো ইনস্টিট নেই।

ছটকু একটু হাসে। হাই তুলে আড়মোড়া ভেঙে বলে, ফলি যে লাইফ লিড করত তাতে যে-কোনও সময়ই তার খুন হওয়ার বিপদ ছিল। এ নিয়ে ভাবিস না। কাল থেকে আমি তোর ব্যাপারটা নিয়ে অ্যাকশনে নামব। সকালে কটায় উঠিস?

খুব ভোরে। চারটে-সাড়ে চারটে।

 ছটকু একটু ভেবে বলে, আমি উঠি ছটায়, কিন্তু কাল থেকে আমি তোর মতো সকালে উঠব। মনে হচ্ছে, একটু একসারসাইজ দরকার। সকালে উঠে দৌড়োবি?

নয় কেন?

 দৌড়ের পর দুজনে একটু কসরতও করা যাবে, কী বলিস?

 গগন হাসে। বলে, ঠিক আছে।

Shirshendu Mukhopadhyay ।। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়