খুব সকালবেলা দরজায় ধাক্কা শুনে ঘুম ভাঙল শ্যামের। উঠে দরজা খুলে দেখল, ইতু।

ইতু!

শ্যাম!

এক ঝলক সাদার মধ্যে ইতু দাঁড়িয়ে আছে। তার শাড়ি সাদা, ব্লাউজ সাদা, হাতের ব্যাগটি সাদা, এমনকী তার কপালেও শ্বেত চন্দনের টিপ। শ্যামের ঘুম-জড়ানো চোখে সেই সাদা রং কট কট করে। লাগে। চোখ পিট পিট করে সে হেসে বলল, হাতের বীণাটি কোথায় রেখে এলে!

জানালা দিয়ে ঘরে আসছে রোদ, তার আভায় ইতুকে সুন্দর এবং গম্ভীর দেখায়। ইতু দরজার চৌকাঠ ডিঙোয় না, ওপাশ থেকেই বলে, তোমার ঘরটা একটু গুছিয়ে নাও, শ্যাম। এই বিশ্রী ঘরে কোনও ভদ্রমহিলা আসতে পারে না।

শ্যাম তাড়াতাড়ি তার বসবার চেয়ারটা একটু টেনে আনে ঘরের মাঝখানে, পা দিয়ে সরিয়ে দেয় কয়েকখানা বই, বিছানার লেপটা জড়ো করে রাখে পায়ের দিকে, বলে, তুমি আসবে জানলে আগে থেকেই গুছিয়ে রাখতুম। চেয়ারটা দেখিয়ে বলে, বোসো ইতু।

ইতু চেয়ারে বসে না। হাতের ব্যাগটা ছুড়ে ফেলে বিছানায়, তারপর বালিশ টেনে নিয়ে কনুইয়ের ভর রেখে আধশোয়া হয়। বলে, মুখটুখ যা বোয়ার ধুয়ে এসো, আমি আজ সারাদিন থাকব এখানে।

শ্যাম হাসে।

ভ্রূ কুঁচকে ইতু বলে, তুমি টেলিফোনে আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলে শ্যাম?

শ্যাম মাথা নাড়ে, হ্যাঁ।

আমি রাজি হয়েছিলুম?

শ্যাম আবার মাথা নাড়ে, হ্যাঁ।

আর কথার মাঝখানে তুমি টেলিফোন রেখে দিয়েছিলে?

শ্যাম লাজুক গলায় বলে, হুঁ।

সামান্য দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে ইতু, তুমি কী চাও?

কথা না বলে শ্যাম তাক থেকে তার টুথব্রাশ তুলে নেয়। বাথরুমের দরজায় পা দিয়ে বলে, বোসো ইতু, আমি তোমাকে চা করে খাওয়াব। তারপর দরজা বন্ধ করে দেয়।

বাথরুমে ঢুকে সে খানিকক্ষণ শূন্য চোখে সামনের সাদা দেয়ালটার দিকে চেয়ে থাকে। সারা শরীরে এখন গভীর আলস্য, কোনওখানে এতটুকু উত্তেজনা নেই, আশ্চর্য! সে কল খুলে ঠান্ডা জলের মধ্যে হাত রাখে, হাসে, মনোযোগ দিয়ে জল পড়ার কলকল শব্দ শোনে কিছুক্ষণ, তারপর মন্থর হাতে পেস্টের টিউব খুলতে থাকে।

আধঘণ্টা পর বেরিয়ে এসে সে নীরবে স্টোভ জ্বালো, এতকাল ব্যবহার না করা চিনির কৌটো নামায় তাক থেকে। জমানো দুধের কৌটোয় কঁকানি দিয়ে দেখে, তারপর কৌটোর ফুটোয় চোখ রেখে ভিতরটা দেখে নিয়ে ইতুর দিকে চেয়ে হেসে মাথা নাড়ে, চা হবে না। দুধ শুকিয়ে গেছে।

কী শুকিয়ে গেছে?

শ্যাম কৌটো দেখিয়ে বলে, দুধ।

ইতু সামান্য হাসে, দি মিল্ক অব হিউম্যান কাইন্ডনেস?

খুব জোরে হেসে উঠতে গিয়েও হাসে না শ্যাম, শুধু স্মিতমুখে বলে, আঃ! ইতু, তোমার বুদ্ধি বেড়ে গেছে।

তোমাকে চা করতে হবে না শ্যাম। তুমি আমার কাছে এসো।

শ্যাম কৌটোটা মেঝের ওপর খটাস করে ফেলে দিয়ে ঘুরে দাঁড়ায়, আস্তে আস্তে জানালার দিকে সরে যেতে থাকে।

এসো শ্যাম। শান্ত গলায় ইতু বলে।

শ্যাম জানালার চৌকাঠে হাত রেখে রোদে পিঠ আর ইতুর দিকে মুখ রেখে পঁাড়ায়। হেসে বলে, ইতু, তোমাকে খুব পবিত্র দেখাচ্ছে।

আমি তা জানি।

আরও কিছুক্ষণ তোমাকে পবিত্র দেখাক। তারপর—

ইতু দাঁতে দাঁত চেপে বলে, তারপর কী?

শ্যাম মৃদু হাসে, তারপর সারাদিন তো তুমি থাকবেই!

ইতু মাথা নাড়ে, না। দি মর্নিং শোজ দি ডে। কাছে এসো শ্যাম। আমি তোমার সমস্ত ব্যাপারটা বুঝতে চাই।

শ্যাম মৃদু মন হাসি হাসে, তোমার বুদ্ধি বেড়ে গেছে ইতু।

কাছে এসো শ্যাম। তোমাকে একবার ছুঁলেই আমি বুঝতে পারব তোমার কী হয়েছে।

যেন নিজের ছেলেকে কাছে ডাকছে এমনি মায়ের মতো আদুরে শোনায় ইতুর গলা। চোখে মুখে বলতে চাইছে, তোমার সব দুষ্টুমি ধরে ফেলেছি।

শ্যাম কাছে আসে না, জানালার কাছ থেকেই বলে, কী করে বুঝলে!

কাছে এসো, আমাকে ছুঁতে দাও। তারপর দ্যাখো বলতে পারি কি না!

শ্যাম ধীরে ধীরে দু’পা এগোয়, হাসিমুখে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে, ছোঁও।

ইতুর হাত এগিয়ে আসতেই শ্যাম হাত সরিয়ে নিয়ে অন্যখানে রেখে বলে, ছোঁও।

আঃ শ্যাম! বলতে বলতে ইতু হাত বাড়ায়।

শ্যাম হাত সরিয়ে নিয়ে অন্য দিকে বাড়িয়ে বলে, এবার ছোঁও।

কী হচ্ছে? বলে ঠোঁটে হাসি চেপে উঠবার উপক্রম করে ইতু।

উঠো না ইতু। শ্যাম এক পা এগিয়ে আসে, বলে, ছোঁও।

হাতের নাগালে শ্যামকে পেয়ে ইতু আবার বসে পড়ে, তারপর ঝুঁকে পড়ে হঠাৎ শ্যামের শার্টটা ধরার চেষ্টা করে।

তড়িৎগতিতে লঘু পায়ে সরে যায় শ্যাম, হাসে, ধরবে? তারপর জানালার আরও কাছে সরে গিয়ে বলে, ধরো তো দেখি?

আঃ শ্যাম! কাছে এসো।

তুমি এসো ইতু। শ্যাম গা ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

তোমার ভয় কী শ্যাম! তুমি অনেক মেয়েকে ছুঁয়েছো। তুমি পাকা লম্পট।

শ্যাম মাথা নাড়ে, ঠিক।

আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ায় ইতু, ভয় কী শ্যাম।

ইতু কাছে আসে, তার কাঁধের দিকে হাত বাড়ায়। শ্যাম মৃদু হাসিমুখে আস্তে আস্তে নুইয়ে দেয় কঁধ। ইতু ফিসফিস করে বলে, ভয় কী শ্যাম! ভয় কী!

ইতুর হাত নরমভাবে কাঁধের ওপর নেমে আসছে, এক্ষুনি ছুঁয়ে ফেলবে তাকে, শ্যাম আরও নিচু হয়, তারপর পিছল গতিতে ইতুর হাতের তলা থেকে সরে যায় ঘরের মাঝখানে। ইতুর হাত খানিকটা শূন্য থেকে ধপ করে নেমে আসে, দু’টো কাচের চুড়ির ঝনাৎ শব্দ হয়। সে ঘুরে ভ্রূ কুঁচকে শ্যামের দিকে তাকায়।

ধরো তো দেখি! শ্যাম হাসে। ইতুর দিকে খেলার ছলে একখানা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে, ছোঁও তো দেখি!

কিছুক্ষণ ভ্রূ কুঁচকে চেয়ে থেকে হঠাৎ মৃদু হাসে ইতু। বলে, তুমি খেলতে চাও?

শ্যাম মাথা নাড়ে, হ্যাঁ।

ঠিক আছে। ইতু পলকের মধ্যে তার শাড়ির আঁচল কোমরে জড়িয়ে নেয়, ছুঁতে পারলে আমার জিত!

জিত!

শ্যাম দরজা বন্ধ করে দেয়।

মুখোমুখি দু’জন একটুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। ইতুর শরীর ভারী হয়ে গেছে অনেক। কোমরে আঁচল জড়ানোর পর এখন দেখা যাচ্ছে তার তলপেটে চর্বির একটু ঢিবি। হাতে গলায় মাংসের খাঁজ। তবুশ্যাম জানে, ইতু নাচ শিখত। তাই সে সতর্ক হয়।

ইতু সোজা এগোয় না, হালকা পায়ে দেয়ালের দিকে সরে গিয়ে ঘুরে আসতে থাকে। হাসে। শ্যাম চটুল পায়ে উলটো দিকে ঘুরে যায়, বলে, বা আপ, ইতু।

ইতু হাসে। ঘুরতে থাকে। শ্যাম ঘুরতে থাকে। ঘরের সবকিছুই শ্যামের চেনা। দরজার দিকে গেলে তার ডান ধারে চৌকি, মাঝখানে চেয়ার, বাঁ ধারে স্টোভ জ্বলছে। জানালার দিকে গেলে ঠিক উলটো। এক ধারে তূপ হয়ে থাকা বই। একটা মোটা বই মেঝের ভিতরে এগিয়ে আছে। শ্যাম বইটা পেরিয়ে যায়, চৌকির পাশ দিয়ে মন্থর গতিতে সরে যায়, চেয়ারটায় একবার হাত রাখে। ডান ধারে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ থেমে বিদ্যুৎগতিতে সোজা এগিয়ে আসে। সাপের ছোবলের মতো তার হাত ছুটে আসে শ্যামের বুকের দিকে। অল্পের জন্য এড়িয়ে যায় শ্যাম, লাফিয়ে উঠে যায় চৌকিতে, দরজার দিকে লাফ দিয়ে নামে। হাসে। বাঁ দিকে ঘুরতে থাকে। ইতু হাসে। বাঁ দিকে ঘুরতে থাকে।

ইতু দাঁড়িয়ে পড়ে হঠাৎ, এই, কী হচ্ছে ছেলেমানুষি!

শ্যাম দাঁড়ায়, দূর থেকে বলে, ছুঁতে পারলে তোমার জিত।

আমি জিত চাই না। তুমি কাছে এসো।

খেলার নিয়ম ভেঙো না ইতু। শ্যাম বলে, খেলে জেতো।

ইতু বিছানায় বসে পা নাচায়, আচ্ছা, ছুঁতে চাই না তোমাকে।

শ্যাম দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরায়। চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। ইতু ঠোঁট টিপে হাসে, অন্য দিকে চোখ রাখে, তারপর হঠাৎ লাফিয়ে উঠে এগিয়ে আসে। শ্যাম চমকে সরে যেতে গিয়ে কষ্টে স্টোভটার ওপর পড়ে যাওয়া থেকে নিজেকে বাঁচায়। জানালার চৌকাঠে ভর দিয়ে সরে যায়, বলে, আঃ ইতু, তোমার বুদ্ধি বেড়ে গেছে। তোমার উন্নতির আর দেরি নেই।

সিগারেটটা পড়ে গিয়েছিল মুখ থেকে, ইতু সেই জ্বলন্ত সিগারেট তুলে নিয়ে তার দিকে ছুড়ে মারে। বিছানায় পড়লে শ্যাম সেটাকে তুলে নিয়ে বলে, থ্যাঙ্ক ইউ।

ইতু বেপরোয়াভাবে চেয়াবটাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়, কপালের ওপর থেকে কুঁচো চুল সরায়, সোজা এগিয়ে আসে। শ্যাম নিচু হয়ে তার পাশ দিয়ে, খুব কাছে দিয়ে উলটো দিকে চলে যায়, বলে, ঠান্ডা মাথায় খেলো, রেগে গেলে শুধু ঘুরে মরতে হবে।

ইতু সে-কথা শোনে না। সে লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে এগিয়ে আসবার চেষ্টা করে। অন্ধের মতো সে পর পর চেয়ার চৌকি এবং দেয়ালে ধাক্কা খায়, মেঝের মোটা বইটাতে হোঁচট খেয়ে সামলে যায়। রাগে দাঁত দিয়ে ঠোঁট চাপে। তার মুখ লাল হয়ে আসে, মুখে ঘাম চিকমিক করে ওঠে।

অল্প একটু উত্তেজনা বোধ করে শ্যাম। খেলা তাকে পেয়ে বসে। হালকা গলায় সে বলে, খেলো ইতু, খেলো। তোমাকে এখন আরও সুন্দর দেখাচ্ছে।

বিছানার কাছে ইতু একটু থেমে যায়। হাত-ব্যাগটা তুলে নিয়ে ছুড়ে মারে শ্যামের দিকে। শ্যাম মাথা নিচু করলে সেটা দেয়ালে লাগে, তারপর সোজা নেমে এসে স্টোভের ওপর থেকে কেটলিটা উলটে দেয়। দপ করে স্টোভের আগুন ওপরে ওঠে, কেটলির জল মেঝে ভাসিয়ে দিতে থাকে। শ্যাম তার চেনা ঘরের নিরাপদ কোণে সরে যায়।

ইতু একটানে চেয়ারটাকে সরিয়ে দেয়, মেঝের গরম জল লাফ দিয়ে পার হতে যায়। পুরো টাল সামলাতে পারে না। দেয়াল ধরে দাঁড়িয়ে হাঁফায়, বলে, শ্যাম, আমাকে আর কষ্ট দিয়ো না।

ইতুকে হঠাৎ খুব বিবর্ণ দেখাচ্ছিল। কোমরের আঁচল খুলে স্টোভের ওপর ঝুলছে।

শ্যাম বলে, থেমো না ইতু, খেলো৷ খেলে যাও। তারপর হাত বাড়িয়ে বলে, এই তো আমি। ছোঁও!

শ্যাম হাসে, দূরে সরে যায়, লাফ দিয়ে ওঠে চৌকির ওপর, এসো ইতু, খেলো,নইলে এক্ষুনি আবার আমি ঝিমিয়ে পড়ব।

ইতু তবু দাঁড়িয়ে থাকে, বলে, আমি আর পারছি না, শ্যাম।

পারবে। শ্যাম হাসে, ঠান্ডা হয়ে বসে থেকে কী লাভ! খেলো।

ইতু শ্লথ পায়ে এগোয়। শ্যাম সরে সরে যায়। তারপর চেয়ারটার চার দিকে তারা ঘুরপাক খায়। বড় বড় শ্বসের শব্দে ভরে ওঠে ঘর। তবু শ্যাম হাসে, ইতুকে থামতে দেয় না। ইতু প্রাণপণে চেষ্টা করে। শ্যাম ঘুরে ঘুরে চৌকির ওপর ওঠে, জানালার ধারে চলে যায়, দেয়ালের দিকে সরে আসে, গরম জলের স্রোত লাফিয়ে পার হয়। লক্ষ করে, ইতু দু’হাত বাড়িয়ে অন্ধের মতো ঘুরছে, শ্যাম যেদিকে তার উলটো দিকে যাচ্ছে। শ্যাম শিস দিয়ে জানিয়ে দেয় সে কোন দিকে আছে।

শ্যাম হাসে, শ্বাসের সঙ্গে বিড়বিড় করে বলে, খেলো ইতু, খেলো। তোমাকে একটু ভাল লাগতে দাও। আমার শরীর গরম হচ্ছে না ইতু, বহুকাল ধরে আমি ঠান্ডা হয়ে আছি। খেলো ইতু, খেলে আমাকে ছোঁও। তারপর তোমার জিত।… আঃ ইতু, তুমি মোটা হয়ে গেছ একটু, পেটে চর্বি জমছে, বয়সও হয়ে এল। সময় থাকতে থাকতে খেলে নাও… বুড়ো হয়ে যাওয়ার আগে খেলে নাও… মরে যাওয়ার আগে খেলে নাও…সবকিছু সহজে পেতে নেই, পাওয়া উচিত নয়… এতকাল তোমাকে বড় সহজেই পেয়ে যেতুম, তাই তুমি আমাকে সবচেয়ে কম লাভবান করেছ।… আঃ হাঃ ইতু, ওদিকে নয়, আমি জানালার কাছে সরে এসেছি… আঃ ইতু, পড়ে যেয়ো না, খেলা মাটি হবে…অত সহজে হাল ছেড়ে দিয়ো না… থেমো না… থামলেই তুমি দুয়ো…থামলেই তুমি বুড়ো… থামলেই তুমি মাটির ঢেলা…ঘোরো, ঘুরতে থাকো… ঘুরতে ঘুরতে ছায়া হয়ে যাও ইতু,… মায়াবিনী হয়ে যাও… রহস্যময়ি হয়ে যাও… দুষ্প্রাপ্য হয়ে যাও… আমি যেন ভিখিরির মতো তোমাকে কামনা করি… আমি যেন হাঁটু গেড়ে বসি তোমার জন্য… আমি যেন তোমার জন্য পাগল হতে পারি… আঃ হাঃ ইতু, তুমি স্টোভের বড় কাছে গেছ… ধীর হয়ে গেছে তোমার পা… আবার তোমার আঁচল খুলে দুলছে আগুনের ওপর… ওঃ ইতু!

বড় হতাশ হয় শ্যাম। থেমে যায়। দাঁড়িয়ে দেখে, ইতুর আঁচল দপ করে জ্বলে উঠল।

ওঃ শ্যাম। হাঁফাতে হাফাতে কেঁদে ওঠে ইতু, আমি কী করব শ্যাম!

ইতু তার আঁচল আলগা করে ধরে শ্যামের দিকে আসতে থাকে। শ্যাম সরে যায়।

ওঃ শ্যাম!

শ্যাম মাথা নাড়ে, আমি খেলার নিয়ম ভাঙি না ইতু।

কী করব শ্যাম!

শ্যাম বিছানা থেকে লেপটা তুলে নিয়ে ছুড়ে দিয়ে বলে, এটা দিয়ে চাপা দাও।

ইতু মেঝেতে উবু হয়ে বসে। লেপ চাপা দিয়ে আগুন নেভায়। আঁচলটা সবে ধরেছিল, নেভাতে কষ্ট হয় না। শ্যাম দূরে দাঁড়িয়ে দেখে।

ধীরে ধীরে মুখ তোলে ইতু। শূন্য চোখে চেয়ে থাকে। তারপর পোড়া আঁচল কুড়িয়ে নিয়ে শ্যামের বিছানায় এসে বসে। হাঁফায়।

ব্যাগটা তুলে নিয়ে বিছানায় ছুড়ে দেয় শ্যাম। ইতু চমকে ওঠে। তারপর যেন ঘুম এবং স্বপ্ন থেকে জেগে উঠে ব্যাগটা হাতে তুলে নিয়ে উঠে দাঁড়ায় ইতু। দরজার কাছে গিয়ে একটু থামে, বলে, তোমার বিছানাটা স্যাঁতস্যাঁতে শ্যাম, রোদে দিয়ে।

শ্যাম মাথা নাড়ে, আচ্ছা।

তুমি অনেক দিন দাড়ি কামাওনি।

শ্যাম মাথা নাড়ে, হ্যাঁ।

তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছ।

শ্যাম হাসে, হ্যাঁ।

চলি শ্যাম।

আচ্ছা।

শ্যাম দেখে, ছোট্ট প্যাসেজটা পার হয়ে সিঁড়ির দিকে চলে যাচ্ছে ইতু। পিঠে পোড়া আঁচল। একবার তার ইচ্ছে হয় ইতুকে ডেকে বলে, কাপড়টা ফিরিয়ে পরে যাও। পরমুহূর্তেই ভাবে, থাক। কেননা তার মনে হয়, ইতুকে বড় সুন্দর দেখাচ্ছে।

<

Shirshendu Mukhopadhyay ।। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়