কাটুসোনা

আমার সর্বনাশ চৌকাঠের ওপাশে এসে দাঁড়িয়ে আছে। যে কোনও মুহূর্তে ঘরে ঢুকবে। বুকের মধ্যে অলক্ষনে টিকটিকি ডাকছে সব সময় টিক টিক টিক টিক।

আমার জন্ম এই শহরে। আমি এখানে রাজহাঁসের মতো অহংকারে মাথা উঁচু করে হাঁটি। রাজ্যের মেয়ে আমাকে হিংসে করে। আমার বড় সুখের বাঁধানো জীবন ছিল। সেই সব কিছু লন্ডভন্ড করতে কেন এল পাগলা দাশু?

শঙ্কুদার রেস্টুরেন্টের বন্ধুদের কারও মুখই আমি ভাল করে দেখিনি। এতদিনে কারও মুখই মনে থাকার কথা ছিল না। কিন্তু আশ্চর্য, এই একটা মুখ কী করে যেন খুব অস্পষ্ট জলছাপের মতো থেকে গিয়েছিল মনের মধ্যে। লিচুদের বাড়িতে সেদিন পাগলা দাশু গেরুয়া পাঞ্জাবি পরে না গেলে হয়তোবা কোনওদিনই মনে পড়ত না।

অমিতের সঙ্গে বিয়ে না হলেও আমার তেমন কিছু যাবে আসবে না, ওর সঙ্গে তো আমার ভাব ভালবাসা ছিল না। শুধু জানি লোকটার সঙ্গে আমার বিয়ে হবে। মনটাকে সেইভাবে তৈরি রেখেছি। কিন্তু সেই মন ভেঙে আবার গড়ে নিতে কষ্ট হবে না তেমন, যেটা সবচেয়ে ভয়ের কথা তা হল শঙ্কুদার সঙ্গে আমার সেই ঘনিষ্ঠতা যা আজ পর্যন্ত খুব কম লোক জানে। বলতে গেলে দু’জন, মা আর বড়মামা।

বহুদিন বাদে শঙ্কুদার সুঙ্গে সেই ঘটনাটার গা ঘিনঘিনে স্মৃতি, তার লজ্জা তার ভয় নিয়ে ফিরে এল পরিষ্কার মনে পড়ছে টেবিলের বাঁ ধারে মুখোমুখি অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে বসে ছিল পাগলা দাশু। কথা বলছিল খুব কম। তবে মাঝে-মাঝে খুব বড় বড় চোখে চেয়ে দেখছিল আমাকে। যেন বিশ্বাস করতে পারছিল না ব্যাপারটা।

আর কিছু মনে নেই। শুধু ওইটুকু। পাগলা দাশুরও তেমন করে মনে রাখার কথা নয় আমাকে, কিন্তু তবু কী করে যেন মনে রেখেছে ও। একটু আলোছায়া রয়েছে এখনও, কিন্তু একদিন হঠাৎ মনে পড়বে হয়তো, তক্ষুনি লাফিয়ে উঠবে। বলবে, আরে! সেই মেয়েটা না?

কী লজ্জা!

বড় বেশি পাগল হয়েছিল শঙ্কুদা। রাত্রে হোটেলের ঘরে যখন আমাদের মরণপণ লড়াই চলছে। তখন একবার পাগলের মতো হেসে উঠেছিল, আমার বরা জানে যে তুমি আজ আমার সঙ্গে হোটলে রাত কাটাবে। এই হোটেলের মালিকও ওদেরই একজন। সব জানাজানি হয়ে গেছে কাটু। এখন পিছিয়ে গিয়ে লাভ নেই।

সেই কথাটা এত দিন গুরুতর হয়ে দেখা দেয়নি, আজ বিষ বিছের হল হয়ে ফিরে এল। তার মানে পাগলা দাশুও সব জানে। জানে, কিন্তু মনে পড়ছে। যতক্ষণ মনে পড়ে ততক্ষণসাশ চৌকাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবে।

ইদানীং আমাদের সম্পর্কটা দাঁড়িয়েছে রক্তকরবীর নন্দিনী আর রাজার মতো। আমি খুব ভোরে উঠে পড়ি। রাতে ঘুমই হয় না। সারা রাত বুকে টিকটিকির ডাক! ঘুমাই কী করে?

প্রায়ই সন্তর্পণে গিয়ে মল্লিকবাড়ির জানলার ধারে দাঁড়াই।

শুনছেন?

পাগলা দাশুও জেগে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে উঠে আসে জানলার ধারে, মুখে বিষ হাসি, বলে, ফুলচোর!

ও হয়তো ভাবে, আমি ওর প্রেমে পড়ে গেছি। ভাবুক, যা খুশি ভাবুক, শুধু যেন মনে না পড়ে আমাকে। আমি ওর মাথা আরও গুলিয়ে দেব। মেয়েরা তো পারে ওই সব। আমি কিছু বেশিই পারি।

একদিন মৃদু মোলায়েম স্বরে বলে ফেলি, চুরি করতে নয়, আমি আজকাল ধরা দিতে আসি।

 ঠাট্টা করছেন?

কেন, আমি সব সময়ে কি শুধু ঠাট্টাই করি? আমার মন বলে কিছু নেই?

 ফাজিল মেয়েরা কতভাবে পুরুষকে নাচায়।

 আপনি আর নাচছেন কই?

আমার কথা আলাদা। আমি আর স্বাভাবিক নই। কিছু মনে পড়ছে না। যতদিন না সব ঠিকঠাক মনে পড়ে, ততদিন আমি আর স্বাভাবিক নই।

মনে করতেই হবে এমন কোনও কথা নেই। খামোকা চেষ্টা করছে কেন? ওতে মাথা আরও গুলিয়ে যায়।

পাগলা দাশু ইদানিং বড় অস্থির, দু হাতে মাথার চুল খামচে বড় বড় আনমনা চোখে দূরের অন্ধকার পাহাড়ের দিকে চেয়ে থাকে। বলে, মানুষ আসলে কিছুই ভোলে না, সব তার মস্তিষ্কের কোষে সাজানো থাকে থরে থরে। কিন্তু সব কথা সে মনে রাখতে চায় না। কিছু ঘটনাকে সে বাতিল করে দেয়, ভুলতে চায়। তাই ভুলে যায়। কিন্তু আমি কেন ভুলতে চাইছি?

আমি কথাটা ঘুরিয়ে দিই। জিজ্ঞেস করি, আপনি কলকাতায় কবে কেন?

শিগগিরই যাব। অফিস ছুটি দিতে চাইছে না। যেদিন দেবে সেদিনই রওনা হব।

সায়ন্তনী আপনাকে চিঠি দেয় না?

দেয়। খুব ভাল চিঠি লেখে সায়ন্তনী।

 আপনাদের বিয়ে কবে?

আসছে শীতে।

আমি করুণ মুখ করে বলি, আপনি কলকাতায় গেলে এই জানলাটা আমার কাছে একদম ফাঁকা লাগবে ক’দিন।

পাগলা দাশু হাসে। বলে, চিরকালের জন্যও ফাঁকা লাগতে পারে, আমি কলকাতায় লি চেয়ে দরখাস্ত করেছি।

শুনে আমার মনে খুশির জোয়ার এল। জানলার গ্রিল প্রবলভাবে আঁকড়ে ধরে প্রায় চেঁচিয়ে বলে ফেলি, কবে?

পাগলা দাশু একটু যেন অবাক হয় আমার উৎসাহ দ্যাখে, বলে কে জানে! হয়তো হবেই না, ইনএফিসিয়েন্সি আর ডিসওবিডিয়েন্স-এর জন্য আমাকে কলকাতা থেকে ট্রানসফার করা হয়েছিল, ওরা আমাকে হয়তো ফেরত নেবেনা।

আমি নিভে যাই। বলি, ও

খুশি হলেন না তো!

 আমি আবার কথা ঘোরানোর জন্য বলি, সায়ন্তনী আনাকে চিঠিতে কী লেখে?

কী আর লিখবে? আমরা প্রায় ছেলেবেলা থেকে দুজনে দুজনকে ভালবাসি। তাই দু’জনের মধ্যে নতুন কথা তো কিছু নেই। আমাকে ও ভাল থাকতে লেখে, সাবধানে চলতে বলে, মন দিয়ে চাকরি করতে কম দেয়, ঠিক প্রেমের চিঠি নয়। কিন্তু ভাল চিঠি।

সায়নী আপনাকে কখনও সন্দেহ করে না?

না, কেন করবে?আমি তো অবিশ্বাসের কিছু করিনি!–বলেই হঠাৎ থমকে যায় পাগলা দাশু। সঙ্গে সঙ্গে বলে, না, করেছি, নিশ্চয়ই করেছি। নইলে আমি ভুলতে চাইছি কেন?

আমিও অনেক কিছু ভুলে যেতে চাই। আপনার মতো যদি ভুলতে পারতাম।

কী ভুলতে চান আপনি?

ধরুন এই জানলাটা, এই বাগান, এই কয়েকটা ভোরবেলার কথা। সবচেয়ে বেশি ভুলতে চাই আপনাকে।

ফাজিল।-বলে মুখ ঘুরিয়ে নেয় পাগলা দাশু।

আমি গভীর স্বরে বলি, সত্যি। বিশ্বাস ফুলচোর, এটা ইয়ারকির কথা নয়। আমার সমস্যা অনেক জটিল।

আমি অভিমান করে বলি, লিচুর জন্য আপনার যে দরদ সেটুকুও কি আমার জন্য নেই?

পাগলা দাশু কেমন যেন ভ্যাবলা হয়ে যায়, হাঁ করে খানিকক্ষণ চেয়ে থাকে অন্ধকারের দিকে। তারপর একটু হেসে বলে, লিচু আপনার মতো ফাজিল নয়।

আমি অভিমানের সুরটা বজায় রেখে বলি, এ বাগানে সাপ আছে পোকামাকড় আছে। এই অন্ধকার ভোরে সাপখোপের ভয়কে তুচ্ছ করে শুধু ফাজলামির জন্য কেউ আসে?

ইচ্ছে হয় বলি, রাধা কি কৃষ্ণের কাছে ফাজলামি করতে যেত? কিন্তু সেটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে বলে, আর পাগলা দাশু সেটাকে আরও ফাজলামি ভাববে বলে চেপে যাই।

পাগলা দাশু সাপের কথায় ভয় পেয়ে বলল, একটা টর্চ নিয়ে আসতে পারেন না!

ও বাবা! ‘তা হলে দরদও তো আছে দেখছি।

 আছে। বোধ হয় আছে। কিন্তু আমি জানি আপনি অভিসারে মোটেই আসেন না ফুলচোর, আপনার অন্য কোনও মতলব আছে।

 কী করে বুঝলেন?

আপনার মুখ অনেক কথা বলে, চোখ বলে না, আপনি আমাকে জ্বালাতে আসেন। আজও তাই আমাকে আপনার নামটাও বলেননি।

আমার নাম কৃষ্ণা।

 হতে পারে। নাও হতে পারে।

বিশ্বাস হয় না আমাকে?

না। কী করে বোঝাই বলুন তো!

এ সব বোঝাতে হয় না ফুলচোর। আপনা থেকেই বোঝা যায়।

ভোর হয়ে আসে। আমি পালিয়ে আসি।

খেলাটা খুবই বিপজ্জনক, এই মফসসল শহরে একবার যদি পাগলা দাশুর সঙ্গে আমার জানালার আজ্ঞার কথা লোকে জেনে যায় তবে সারা শহরে ঢি ঢি পড়ে যাবে। এ তো কলকাতা নয় যে, কারও খবর কেউ রাখে না। তবু আমি বুকিটা নিই বড় আর এক সনাশ ঠেকাতে।

মা একদিন জিজ্ঞেসই করল, সকালে আজকাল গলা সাধতে বসিস না?

 ইচ্ছে করে না।

কত দামি হারমোনিয়ামটা কোলি, কালীবাবু গুচ্ছের টাকা নিচ্ছেন, বলচিকে দিতে হচ্ছে। এ তোর কেমন উড়নচণ্ডী স্বভাব?

ভাল লাগে না, কী করব?

তা হলে রোজ ভোরবেলায় উঠে করিস কী?

মাঝে মাঝে বেড়াতে যাই।

মা মুখের দিকে তাকিয়ে আর কিছু বলে না।

আমি আবার একদিন পাগলা দাশুর জানলায় হানা দিয়ে বলি, আপনি কলকাতার কোথায় থাকেন?

গ্রে স্ট্রিট।

সেটা কোথায়?

উত্তর কলকাতায়। কেন, গ্রে স্ট্রিট চেনেন না? বিখ্যাত জায়গা।

আমি এবার সন্তর্পণে একটা টোপ ফেলি। বলি, আমি কখনও কলকাতায় যাইনি।

 যাননি!-বলে খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে লোকটা। বেশ কিছুক্ষণ বাদে বলে, তা হলে আগে আমি আপনাকে কোথায় দেখেছি? কলকাতায় নয়? তবে কোথায়?

আপনি আমাকে আগে কখনও দ্যাখেননি।

পাগলা দাশু মাথা নাড়ে, দেখেছি। ভীষণ চেনা মুখ। ভেবেছিলাম কলকাতায় গেলেই আপনাকে আমার ঠিক মনে পড়ে যাবে। তা নয় তা হলে?

না। আমি কলকাতায় যাইনি। যেতে খুব ইচ্ছে করে। বলতে বলতেও টের পাই, আমার বুকের ভিতরটা ভীষণ ঢিবঢিব করছে। কলকাতায় গেলে মনে পড়বে? তা হলে আমার সর্বনাশ যে চৌকাঠ ডিঙোবে!

পাগলা দাশু বলে, কখনও কলকাতায় যাননি? সত্যি?

না। আমি গম্ভীর মুখে বলি, আপনি কবে যাচ্ছেন?

 ছুটি পেলেই।

পাননি এখনও?

না, দিচ্ছে না। বন্যার সময় আমি বিনা নোটিসে কামাই করায় খুব গণ্ডগোল চলছে।

 তা হলে?

 যেতে পারছি না। কিন্তু যাওয়াটা দরকার।

.

একদিন দুপুরে ম্লানমুখী লিচু এসে বলল, আমাদের হারমোনিয়ামটা আজ পশুপতিবাবু নিয়ে গেল। মাত্র পঁচাত্তর টাকায়।

বলেই আমার নির্জন ঘরের বিছানায় বসে আঁচলে মুখ ঢেকে কাঁদতে লাগল।

বড় কষ্ট হল বুকের মধ্যে। পুরনো ভাঙা একটা হারমোনিয়াম নিয়েই ওর কত সাধ আহ্লাদ!

পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম, কাঁদছিস কেন? আমার নতুন স্কেল চেঞ্জারটা পড়েই থাকে। তুই যখন খুশি এসে গান গাস।

একটু কেঁদে ও চোখ মুছে বলল, সে কি হয়?

কেন হয় না? এ বাড়িতে তোর কোন ভাসুর থাকে?

তা নয় রে! নিজের হাতের কাছে একটা জিনিস থাকা, ভাঙা হোক, পুরনো হোক, সেটা তবু আমাদের নিজস্ব ছিল।

মাসিমাই বা কেন হারমোনিয়ামটা বিক্রি করেই ছাড়লেন? এটা অন্যায়। আমি রাগ করে বলি।

লিচু বলে, কর্ণবাবু হারমোনিয়ামটা কেনায় আমাদের বদনাম হয়েছিল। সেই থেকে ওটার ওপর মায়ের রাগ। তা ছাড়া টাকাটাও শোধ দিতে হবে।

লিচুর সমস্যা আমি কোনও দিনই ঠিক বুঝতে পারব না। ওর এক রকম, আমার লড়াই আর এক রকম।

পর দিন ভোরবেলা আমি গিয়ে পাগলা দাশুর জানালায় হানা দিই।

 শুনেছেন লিচুদের হারমোনিয়ামটা বিক্রি হয়ে গেল?

 শুনেছি।

আমি শ্বাস ফেলে বললাম, মাত্র পঁচাত্তর টাকায়। আপনি কত ঠকে গিয়েছিলেন এবার ভেবে দেখুন।

পাগলা দাশু খুব অপ্রতিভ হেসে বলল, তা বটে। তবে দ্বিতীয়বার দামটা আরও বেশি পড়ে গেল আমার।

তার মানে?

ঘটনাটা ভারী মজার। কাল রাতে পশুপতি এসে হঠাৎ বলল, বলেছিলাম কি না পঁচাত্তর টাকাতেই দেবে! আমি অবাক হয়ে বললাম, কী! পশুপতি বলল, সেই যে লিচুদের হারমোনিয়ামটা! আপনি তো না-হক দুশো টাকা দিয়ে বাজারটাই খারাপ করে দিয়েছিলেন। সেই হারমোনিয়াম আজ আমি পচাত্তর টাকায় রফা করে নিয়ে এলাম। শুনে মনটা ভারী খারাপ হয়ে গেল। লিচুরা হারমোনিয়ামটাকে বড় ভালবাসে। তাই আমি তখন পশুপতিকে বললাম হারমোনিয়ামটা আমি আবার কিনতে চাই। শুনে পশুপতি আকাশ থেকে পড়ে বলল, আবার! আমি বললাম, হ্যাঁ আবার! তখন পশুপতি মাথা চুলকে বলল, আপনার তো দেখছি হারমোনিয়ামটার জন্য বিস্তর খরচা পড়ে যাচ্ছে। আমি দর জিজ্ঞেস করায় পশুপতি খুব দুঃখের সঙ্গে বলল, আপনি কিনবেন জানলে কেনা-দামটা আপনাকে বলতাম না। তা কী আর করা যাবে, ওই দুশোই দেবেন, যা ওদের দিয়েছিলেন।

আমি অবাক হয়ে বলি, আবার কিনলেন?

আবার কিনলাম।

 কিন্তু লিচুরা কিছুতেই ওই হারমোনিয়াম আপনার কাছ থেকে নেবে না।

জানি। তাই পশুপতিকে সেই ভার দিয়েছি। সে হারমোনিয়ামটা ওদের বাসায় দিয়ে বলে আসবে যে ওর বাড়িতে জায়গা হচ্ছে না, জায়গা হলে হারমোনিয়াম নিয়ে যাবে।

আমি খুশি হতে পারলাম না কেন কে জানে। হঠাৎ মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল, লিচুকে আপনি খুব ভালবাসেন?

বাসলে কি আপনার হিংসে হবে?

জানি না। আমি থমথমে মুখে বলি।

খুব হাসে পাগলা দাশু। বলে, খুব ভাল পার্ট করছেন আপনি। একদম আসলের মতো। ভীষণ হিংসুটে দেখাচ্ছে আপনাকে।

জবাব না দিয়ে চলে আসি। বুকের মধ্যে বার বার আক্রোশে হুল বিধিয়ে দিচ্ছে একটা কাকড়াবিছে, এমন জ্বালা।

পাগলা দাশু পিছন থেকে বলল, শুনুন। আমার সাত দিনের ছুটি মঞ্জুর হয়েছে। কাল কলকাতা যাচ্ছি।

ফটকের কাছ বরাবর এসে পড়েছিলাম। হঠাৎ এই বাঘাতে থমকে দাঁড়াই, তারপর পাথর বাধা দুই পা ঠেলে ঠেলে ফিরে আসি নিজের ঘরে।

কাঁদতে বড় সুখ। তাই বালিশে মুখ গুঁজে ভিতরকার পাগলা ঝোরা খুলে দিই।

Shirshendu Mukhopadhyay ।। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়