মধ্যরাতে রেস্তোরাঁয় কজন যুবক বসে আছে একটি
টেবিল ঘিরে। ওদের সঙ্গী একজন নিশ্চুপ বসে আছেন বহুক্ষণ।
বয়সের ভারে ঈষৎ ন্যুজ তিনি, অথচ চোখ দুটো জ্বলজ্বলে,
তার দৃষ্টি যুগ-যুগান্তরে প্রসারিত। যুবকেরা রেস্তোরাঁকে
আপন করেছে, রেস্তোরাঁ ওদের আপন বিশেষত এই মধ্যরাতে।
যুবকদের কেউ তাত্ত্বিক, কেউ কথাসাহিত্যিক, এবং কেউ কেউ নয়
অনেকেই কবি। আর বয়সের ভারে যিনি ঈষৎ ন্যুজ তিনি
একদা ছিলেন কাব্যক্ষেত্রে অধিরাজ। আজকাল উপেক্ষিত
পাঠকসমাজে, শুধু ক’জনা যুবা তাকে আমল দেয় মধ্যরাতের
রেস্তোরাঁয়। তার কোনও কোনও বাক্যে চমকে ওঠে ওরা।

রাত্রি ডাগর হলে আরও, রেস্তোরাঁয় বেয়ারাদের কেউ কেউ
টুলে বসে ঝিমোয়। টেবিল ঘিরে-বসা আড্ডাধারীদের
টুকরো টুকরো কথা, ঈষৎ ন্যুজ বয়সী লোকটার নীরবতা
ফিকে আলোকে কেমন যেন বাঙ্ময় করে তোলে সবার অজান্তে।
হঠাৎ অনেকগুলো নক্ষত্র আশরফির মতো টেবিলে নৃত্যপর!
যুবকেরা নক্ষত্রগুলো পুঁজি করে অবোধ আহ্লাদে মাতে জুয়োয়।
নির্লিপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি মৃদু হেসে দেখেন ওদের খেলা নক্ষত্র নিয়ে। তিনি
জানেন এই খেলা ক্ষণস্থায়ী; নক্ষত্রেরা নেচে নেচে যুবকদের হাতছাড়া
হবে, ফিরে যাবে নিজ নিজ স্থানে, সাঙ্গ হবে জুয়োখেলা। ওদের
চেতনায় মাথা তুলে ডুবে যাবে বিষাদগীতি। ব্যথিত যুবারা
ঈষৎ ঝুঁকে-বসা প্রবীণের দিকে তাকাবে করুণায়, তারপর যে যার
ধরনে কিছু হরিণসদৃশ পঙ্‌ক্তি খুঁজবে ভাবনার বশে, যেমন একদা
তিনি করতেন সফল সন্ধান যৌবনে। এই মুহূর্তে মধ্যরাতের
রেস্তোরাঁয় চেয়ার ছেড়ে তন্ন তন্ন করে খুঁজবেন মানস-হ্রদতীরে হাঁস?
১২.১২.২০০০

Shamsur Rahman।। শামসুর রাহমান