একজন মানুষকে নিয়ে কত গল্প করা যায়
চায়ের আসরে।
যে মানুষ খায় দায় এবং ঘুমায়, ক্যামেরায় 
ছবি তোলে, দিনে
অন্তর কয়েকবার চুল আঁচড়ায়, রাত জেগে বই পড়ে,
একা একা বারান্দায় করে পায়চারি, ঘন ঘন
ডাকঘরে যায়, কথা বলে পাথরের কানে কানে,
তার হাতে গোধূলির রঙ ক্রীড়াপরায়ণ হ’লে
চকিতে নিজস্ব হাত তার ভিন্ন হাত হ’য়ে যায়,
কবিতা সহজে মেলে চোখ।
একজন মানুষকে নিয়ে এরকম কিছুউ গল্প হ’তে থাকে।

অথবা আলাদাভাবে বললে দাঁড়ায় এইমতো-
একজন মানুষের মগজের কোষে নিরিবিলি
ফুলের কেয়ারি থাকে, থাকে
পলকে কোমল ঢেকে মুখ পাখির সুনিদ্রা,
চেয়ারে বৃদ্ধের ব’সে-থাকা,
তরুণীর চুল-মেলে-দেয়া, তরুশ্রেণী, বনশোভা,
আবছায়া থাকে, যা’ সৃজনে উন্মুখর।
একজন মানুষের মগজের কোষে থাকে প্রাচীনকালের
চিত্রিত সুনীল জালা, জালার ভেতরে মৃতদেহ।
করিণের মাথা
ভেসে আসে তার কাছে কোন্‌ দূর থেকে, বালিহাঁস
আঁধারে উদ্ধৃতি দ্যায় চরের জ্যোৎস্নার,
তার প্রত্যাবর্তনের পথে গেট খুলে রাখে স্বপ্নমগ্ন বাড়ি।
একজন মানুষের এরকম কিছু গল্প থাকে এলেবেলে।
এরকম গল্প থেকে নিভৃতে বেরিয়ে এসে একটি মানুষ 
বারবার নগ্ন হয় নিজের কাছেই, কখনো সে
নীলকাশে গর্ত খোঁড়ে নখে,
কখনো আবার মেঘে মেঘে
কতিপয় কালো
পুরোনো কবর দ্যাখে, হাতের লোমের মতো ঘাস
দীপ ঢেকে দ্যায়,
স্বপ্নে দ্যাখে বৃষ্টিপাত, দ্যাখে
ছুরির মতন
একটি আঙুল দ্রুত কী নগ্ন প্রবেশ করে মাথার ভেতয়ে।
একজন মানুষের মগজের কোষে জেগে থাকে
অন্তহীন ধূলিরঙ পথ, নাম যার ‘মনে রেখো।

Shamsur Rahman।। শামসুর রাহমান