বিকেলবেলা
আমি একা বসে আছি তোমাদের ড্রইং রুমে
সময় কাটতে চায় না, মুহূর্তগুলি
বিকল ট্যাপের পানির মতো চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছে।

সাপ্তাহিক টাইমের পাতা উল্টিয়ে এলেবেলে
আমি সময় কাটাতে চাইলাম,
সময় কাটে না। দেয়ালে চোখ রেখে কবিতার
ভুলে-যাওয়া পংক্তি মনে করতে চাই, অনেকক্ষণ
তাকিয়ে থাকি টেরাকোটার যুগল মূর্তির দিকে, দীর্ঘস্থায়ী
শিল্পির চুম্বনে অপেক্ষার ক্লান্তি মুছে ফেলার আশায়।

দরজার পর্দা সরিয়ে তুমি এলে;
পরনে তোমার টাঙ্গাইলের শাড়ি, খোলা চুল
আশ্রয় নিয়েছে পিঠে, সারা মুখে
দুপুরের ঘুমের লাবণ্যময় ছাপ। তোমার যৌবনের তরঙ্গ
মেরুন রঙের সোফায়।

গৃহভৃত্য চায়ের সরঞ্জাম রেখে যায়, তুমি
আমার দিকে বাড়িয়ে দিলে সধূম চায়ের কাপ।
‘আমি চা খাইনা’, বললাম এখানে আমি চা খেতে আসিনি,
উচ্চারণ করি মনে মনে।

আরেক বিকেলে তুমি তোমার উদ্যানের
একটি ফুল উপহার দিলে আমাকে। ফুল আমি ভালোবাসি,
কিন্তু বাগানের ফুল নিতে আমি আসিনি, এ-কথা
আমার ঠোঁটে স্তব্ধ হয়ে রইলো।
একদিন আমি দ্বিধায় উথাল-পাথাল স্বরে
তোমাকে বললাম, ‘আমি তোমার বুকের ভেতরকার
ঘ্রাণ নিতে চাই’। তুমি নিরুত্তর; সোফার
হাতলে আঙুলে তাল বাজাচ্ছিলে, যেমন পিয়ানিস্ট
রিডে রিডে আঙল নাচায়।

আমার জীবন কবরের মোমবাতির মতো
দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে, অথচ উত্তর আজো পাইনি।

Shamsur Rahman।। শামসুর রাহমান