যখন একা বসে থাকি ঘরে, হঠাৎ

চেয়ার, টেবিলে, বুক-শেল্‌ফ দাঁত খিঁচিয়ে
আমার দিকে এগিয়ে
আসতে থাকে। বারান্দার রেলিং
ভীষণ ভেংচি কাটে আর চার দেয়াল
নোংরা বমি উগরে দেয় ঘন ঘন।
গা গুলিয়ে আসে আমার।

তৎক্ষণাৎ ঘর ছেড়ে চলে যাবো অন্য কোথাও,
তার জো নেই, পা দুটো যেন কেউ বেজায়
শক্ত করে আটকে দিয়েছে মেঝেতে।
নিরুপায় আমি নিজেকেই খুব ধিক্কার
দিতে থাকি। আমি কি অভিশপ্ত কেউ? নইলে এমন বেহাল
কেন আমার? কত আর নিজের চুল ছিঁড়বো এভাবে?
আচমকা দেখি, সিঁড়ি বেয়ে উঠছি, উঠছি, উঠছি,
কিন্তু কোথায়? জানা নেই। এখুনি
পা ফসকে নিচে ধুলো আর বিকট কাঁটাময় বিরান অঞ্চলে
অচেতন পড়ে থাকবো কি ক্ষতবিক্ষত শরীরে?

এই তো নিজেকে দেখতে পাচ্ছি পুষ্পময় বাগানে
তিনজন রূপসীর সঙ্গে আলাপরত। আমার
দিকে ওরা ছুড়ে দিচ্ছে অজস্র রক্তগোলাপ। তৎক্ষণাৎ নিজেকে
প্রশ্ন করি- এ কি বাস্তব না কি ছলনাময় মায়াবীর চমক?
হঠাৎ এক লহমায় গলা-ডোবনো কুৎসিত কাদা আমাকে
গ্রাস করছে অট্রহাসিতে মশগুল হয়ে, আমি ডুবছি, ডুবছি, ডুবছি।

দুঃস্বপ্নের জাল থেকে ছিটকে পড়ি সুশান্ত
জমিনে। দেখি, আমার দিকে প্রসারিত দুয়ালু
এক হাত আশ্বাসে ঝলসিত। নিজের
হাত রাখি সে-হাতে। চৌদিকে সঙ্গীত ধ্বনিত
হতে থাকে। প্রসারিত তিরস্করণী হাতে শুশ্রূষায় এখন
আমি সুস্থতায় প্রফুল্ল, সমুদ্র পাড়ি দিতে প্রস্তুত।
১৯-১০-২০০৩

Shamsur Rahman।। শামসুর রাহমান